নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খেলতেপড়তেদেখতেশুনতেগুনতে ভালোবাসি

নাছির84

বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র

নাছির84 › বিস্তারিত পোস্টঃ

মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাণে, ক্রিকেটের টানে

২১ শে মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৩

মোট হতাহতের সংখ্যা ৩ কোটি ৭০ লাখেরও বেশি ! এর মধ্যে ১ কোটি ৬০ লাখ মৃত। আহত কিংবা পঙ্গুত্ব বরণকারীর সংখ্যা আরও দুই কোটি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। মানব ইতিহাসের অন্যতম প্রাণঘাতী বিপর্যয়গুলোর একটি।
সেই অভিশপ্ত চার বছরে পৃথিবীর বুক থেকে শুধুই রক্ত ঝরেছে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মৃতের সংখ্যা। তাদের মধ্যে ক্রিকেটারের সংখ্যাও নেহায়েত কম ছিল না। ১৯১৫ সালে যেসব ক্রিকেটার মারা যান, পরের বছর তাদের একটি তালিকা প্রস্তুত করে উইজডেন। ৭৭ পৃষ্ঠার সেই তালিকাটি ছিল, গোটা অ্যালমানাকের এক-চতুর্থাংশ জায়গার সমান। বেশিরভাগই যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ দেন। ওই বছর ভিক্টর ট্রাম্পার ও ডব্লি জি গ্রেসও মারা যান। ট্রাম্পারের মৃত্যুর কারণ ছিল দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা। গ্রেস হার্ট অ্যাটাকের শিকার হন। ক্রিকেটের ইতিহাসে ১৯১৫ সাল, এ দুই গ্রেটের মৃত্যুর বছর হিসেবেই বেশি আলোচিত।
গ্রেস কিংবা ট্রাম্পারের মতো গ্রেট ক্রিকেটার ছিলেন না হ্যারী লি। খেলতেন ইংল্যান্ডের প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে। ১৫ বছর বয়সে মেরিলিবোর্ন ক্রিকেট ক্লাবের গ্রাউন্ডস্টাফ হিসেবে খেলাটির সঙ্গে তার আনুষ্ঠানিক পরিচয় ঘটে। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার পাঁচবছর পর ১৯১১ সালে। মিডলসেক্সের তরুণ অলরাউন্ডার। তিন বছর পর লর্ডসে প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পান হ্যারী লি। কিন্তু গোটা ইংল্যান্ডের মনযোগ তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধে। সংবাদপত্রগুলো ম্যাচ রিপোর্ট ছাপতে থোড়াই কেয়ার করতো! মৌসুম শেষে বেশিরভাগ ক্রিকেটারই যোগ দেন বিট্রিশ রেজিমেন্টে। সতীর্থদের পথটাই অনুসরণ করেন হ্যারী লি। ১৯১৪ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর লন্ডন রেজিমেন্টে যোগ দেন তিনি।
পরের বছর মার্চের শুরুতে ফ্রান্সে উড়াল দেন লি। যোগ দেন ন্যূঁভে চ্যাপেলের যুদ্ধক্ষেত্রে। সেখানে ‘অবার্স রিজ’ যুদ্ধের প্রথম দিনেই গুলিবিদ্ধ হন। উর্বস্থি ভেঙ্গে যায়। আহত অবস্থায় ‘নো ম্যানস ল্যান্ডে’ পরে ছিলেন টানা তিনদিন! ওখানেই থেমে যেতে পারতো তার জীবনের ইনিংস। কিন্তু জার্মান সৈন্যদের কৃপায় সে যাত্রায় বেঁচে যান। ভ্যালেন্সিয়েসের হাসপাতালে পাঠানো হয় তাকে। সেখানে ছয় সপ্তাহ ধরে ডাক্তারদের আপ্রাণ চেষ্টায় যমের দুয়ার থেকে ফিরে আসেন হ্যারি লি। কিন্তু কিছুতেই হারানো স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার করতে পারছিলেন না। এ কারণে হাওয়া বদলের জন্য তাকে পাঠানো হয় হ্যানোভারে অবস্থিত কয়েদীদের হাসপাতালে। সেখানে তার মতোই এক ব্রিটিশ বন্দীর বুদ্ধিতে দেশে ফেরার রাস্তাটা খুঁজে পান হ্যারি লি।
সেই ব্রিটিশ বন্দী হ্যারি লি’কে পরামর্শ দিয়েছিলেন, নিজের আঘাত যতটা পারো গুরুতর করো! এতে জার্মানদের হূদয় কিছুটা আর্দ্র হতে পারে। স্বদেশভূমিতে ফেরত্ পাঠানো হতে পারে তাকে। সেই ব্রিটিশ বন্দীর পরামর্শ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিলেন হ্যারি লি। তারই সুবাদে ১৯১৫ সালের অক্টোবরে আবারও জন্মভূমির মাটি স্পর্শের সুযোগ পান তিনি। ব্রিটেনে ফিরে আসেন হ্যারি লি। কিন্তু ততোদিনে ক্ষতি যা হওয়ায় হয়ে গেছে। গুলিবিদ্ধ হওয়ায় তার উরুর অস্থি ভেঙ্গে গিয়েছিল। ডাক্তারদের অস্ত্রোপচার সফল হলেও হ্যারী লি’র দুই পা আর কখনোই সমান হয়নি। গুলি খাওয়া পা’টি অপরটির তুলনায় ছোট হয়ে যায়। পরিণামে ব্রিটিশ সামরিক বাহীনি থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয় ও বলে দেয়া হয়—আর কখনোই পেশাদার ক্রিকেট খেলতে পারবেন না তিনি।
জার্মানদের হাতে বন্দী থাকাকালিন হ্যারি লি’র কোন খোঁজ বের করতে পারেনি ব্রিটিশ সেনাবাহীনি। অগ্যতা হ্যারি লি’র পরিবারকে জানানো হয়, তিনি সম্ভবত যুদ্ধক্ষেত্রেই মারা গেছেন। পরিবারের হস্তক্ষেপে তখন পালিত হয় হ্যারি লির অন্তোষ্টিক্রিয়াও!
এদিকে দেশে ফিরে কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠার পর ব্রিটিশ যুদ্ধ পরিচালনা অফিসে কেরানী গোছের একটি চাকুরী জুটিয়ে নেন হ্যারি লি। কিন্তু ক্রিকেটকে ছাড়েননি। মেরিলিবোর্ন ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে আবারও নিয়মিত ম্যাচ খেলা শুরু করেন তিনি। ১৯১৭ সালে তার পরিচয় ঘটে মিডলসেক্সের সাবেক সতীর্থ ফ্রাঙ্ক ট্যারান্টের সহধর্মীনির সঙ্গে। সেই মহত্প্রাণ নারীর তদবিরেই জুটে যায় কলকাতায় ক্রিকেট দীক্ষা দেয়ার চাকুরী, অর্থাত্ কোচিং। জীবনের এ অধ্যায়েও ভাগ্যদেবী তাকে আরও একবার প্রাণ ফিরিয়ে দেন। ব্রিটেন থেকে মুম্বাইগামী (তত্কালিন বোম্বে) ‘নায়াঞ্জা’ নামক জাহাজে কলকাতায় যাওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু যাত্রার একেবারে শেষ মুহুর্তে, কি ভেবে সিদ্ধান্ত পাল্টে সরাসরি কলকাতাগামী একটি জাহাজে চড়ে বসেন হ্যারি লি। পরে খবর আসে, মুম্বাই যাওয়ার পথে ডেভন কোষ্ট উপকূলে জার্মানদের ছোঁড়া টর্পেডোর আঘাতে সলিল সমাধি ঘটে নায়াঞ্জার। ৪৯ জন যাত্রী প্রাণ হারান।
ভারতীয় উপমহাদেশে পা রাখার পর কুচবিহারের মহারাজার নেক নজর লাভ করেন হ্যারি লি। রাজার ফুটবল ও ক্রিকেট দলকে কোচিং করানোর দায়িত্ব এসে পড়ে তার কাঁধে। ১৯১৮ সালের মার্চে একেবারে অপ্রত্যাশিতভাবে আবারও প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেটে ফিরে আসেন হ্যারি লি। ব্রিটিশ সেনাবাহীনি র্কতৃক অফিসিয়ালি ‘মৃত’ ঘোষণার তিন বছর পর !
কুচবিহারের মহারাজার একাদশের হয়ে লর্ড উইলিংডন একাদশের মুখোমুখি হন হ্যারি লি। ততোদিনে শরীরে আগের মতো দম নেই। বোলিংয়ে আগুন ঝড়াবেন কি, এক পা তো ছোট ! কিন্তু সেই ম্যাচে দুই ইনিংসে হ্যারি লি’র বোলিং পারফরম্যান্স ছিল—৫/১১ ও ৩/৪১। অলৌকিক নয় কি ?
সে বছরেরই নভেম্বরে ইংল্যান্ডের হয়ে একটি ম্যাচে ভারতের মুখোমুখি হন তিনি। ১২ জনের স্কোয়াড বিশিষ্ট প্রীতি ম্যাচটা অনুষ্ঠিত হয়েছিল মুম্বাইয়ে। সেখানকার কাঠফাটা গরমকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ৩২ ওভার বোলিং করে ১৭৭ রানের বিনিময়ে ৪ উইকেট তুলে নেন হ্যারি লি। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, গরমের কারণে অতিথি দলকে টুপি উপহার দেয়ার রেওয়াজ থাকলেও ভারতিয় ক্রিকেট দল এ সৌজন্যতাবোধের প্রয়োজন মনে করেনি। হাল আমলের ইতিহাসে ঘটনাটির কারণ ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে —ভারত তখনো টেস্ট আঙিনায় প্রবেশ করা থেকে ১৪ বছর পিছিয়ে ছিল।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয় ১৯১৮ সালে। পরের বছর ইংল্যান্ডে ফের চালু করা হয় কাউন্টি ক্রিকেট লিগ। ক্রিকেটের টানেই জন্মভূমিতে ফিরে যান লি। মানুষ সত্যিই এক আশ্চর্য সত্তা ! স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ববরণ করা কেউ যদি ইংল্যান্ডের প্রথম শ্রেনীর লিগে খেলার স্বপ্ন দেখেন, তবে তাকে আশ্চর্য সত্ত্বা না বলাটাই দোষের। কাউন্টি ক্রিকেটে ফেরার সেই মৌসুমে হ্যারির ব্যাট থেকে বেরিয়ে আসে রুপকথা—ওপেনিংয়ে নেমে ১২ ইনিংসে পেরিয়ে যান ১০০০ রান ! এরমধ্যে সেঞ্চুরি ৪টি ! পরের মৌসুমে মিডলসেক্সের চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের নেপথ্য নায়ক ছিলেন ব্যাট-বলে সব্যসাচীর ভূমিকা নেয়া হ্যারি লি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষে প্রায় দেড় যুগ ধরে মিডলসেক্সের জার্সিতে কাউন্টি ক্রিকেট খেলেন তিনি। তখন শীতের ছুটিতে চলে যেতেন দক্ষিন আফ্রিকায়। সেখানে কোচিং করাতেন। এজন্য ১৯২৩/২৪ মৌসুমে কাউন্টি ক্রিকেট খেলা হয়নি তার।
ছয় বছর পরের কথা।
চল্লিশে পা রেখেছেন হ্যারি লি। ১৯৩০-৩১ মৌসুমের শীতে লি তখন দক্ষিন আফ্রিকায়। এবার আর শুধু কোচিং নয়, পাশাপাশি দক্ষিন আফ্রিকার গ্রাহামসটাউন শহরে একটি কাজও জুটিয়ে নেন তিনি। ঠিক সেই সময়ই দক্ষিন আফ্রিকা সফরে যায় ইংল্যান্ড দল। পার্সি চ্যাপম্যান তখন ইংলিশ অধিনায়ক। ইনজুরির থাবায় টেস্ট একাদশ সাজানো নিয়ে হিমশিম খাচ্ছিলেন চ্যাপম্যান। ভাগ্যের এমন লীলাখেলায় কপাল খুলে যায় হ্যারি লি’র। ওই সফরে চ্যাপম্যান তাকে কোচিং ছেড়ে ইংল্যান্ড টেস্ট দলের হয়ে খেলার প্রস্তাব দেন। বিনাবাক্যে রাজি হয়ে যান হ্যারি লি। চ্যাপম্যানের দলের হয়ে তিনি মোট পাঁচটি ম্যাচ খেলেন। এরমধ্যে জোহানের্সবার্গে যে টেস্টটি ড্র হয়েছিল, সে ম্যাচটাই ছিল ইংল্যান্ডের জার্সিতে হ্যারি লি’র খেলা একমাত্র টেস্ট ম্যাচ।
দুনিয়াতে সব রুপকথার শেষটা সুখকর হয়না। জোহার্নেসবার্গে সেই টেস্ট ম্যাচ চলাকালিন হ্যারি লি’র ব্যাপারে দক্ষিন আফ্রিকায় খোঁজ-খবর নেয় মেরিলিবোর্ন ক্রিকেট ক্লাব (এমসিসি)। তারা জানতে পারে, যে স্কুলে হ্যারি লি কোচিং করাতেন সেখানকার ছাড়পত্র না নিয়েই তিনি ইংল্যান্ডের হয়ে টেস্ট খেলছেন ! অভিযোগটা বেমালুম অস্বীকার করে যান হ্যারি লি। এমসিসি শর্ত জুড়ে দেয়, কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা না চাইলে হ্যারি লি’কে ইংল্যান্ড টেস্ট দলের ব্লেজার ও টুপি প্রদান করা হবে না। লি ক্ষমা চাওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি। মৃত্যুকে জয় করে তিনি ততোদিনে অন্য ধাতে গড়া মানুষ। কিন্তু এটাও সত্য যে, ইংলিশ ক্রিকেটের এমন অদম্য প্রাণকে সেই ঘটনার পর জাতীয় দলের ব্লেজার ও টুপি প্রদান করা হয়নি !
এরপর আরও চারবছর মিডলসেক্সের হয়ে কাউন্টি ক্রিকেট খেলেন হ্যারি লি। তারমধ্যে ১৯৩১ সালটা স্মরণীয়। সে বছর দুটি সেঞ্চুরির দেখা পান লি। তার দুই সহোদর জ্যাক আর ফ্রাঙ্কও সমারসেটের হয়ে সেঞ্চুরি তুলে নেন। এক মৌসুমে তিন ভাইয়ের সেঞ্চুরি ছিল প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেটে সেবারই প্রথম। দুই বছর পর লর্ডসে অনুষ্ঠিত এক ম্যাচে পরিসংখ্যানবিদদের রসিকতার খোরাক যোগান দেন তিন ভাই—হ্যারি লি ক্যাচ ফ্রাঙ্ক লি বল জ্যাক লি !
১৯৩৪ সালের শেষ নাগাদ হ্যারি লি’র সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে মিডলসেক্স। এখানেই শেষ হতে পারতো তার ক্যারিয়ার। কিন্তু যুদ্ধ মানুষকে যেমন খোলনলচে পাল্টে দেয়, তেমনি লড়াই করতেও শেখায়। ব্যাট-বল ছেড়ে হ্যারি লি তাই মাঠে নেমে পড়েন আম্পায়ারের ভূমিকায়। দীর্ঘ এক যুগ আম্পায়ারিংয়ের দায়িত্ব পালনের পর সমারসেটের একটি স্কুলে কোচিংয়ের চাকুরী নেন। দায়িত্বটি পালন করে চলেন ১৯৫৩ সালে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নেয়ার আগ পর্যন্ত। কিন্তু ক্রিকেট কি তাকে সত্যিই অবসর দিতে পেরেছিল ? ১৯৮১ সালে না ফেরার দেশে প্রস্থানের আগ পর্যন্ত লর্ডসে অনুষ্ঠিত প্রায় সব ম্যাচেই দর্শক গ্যালারীতে দেখা যেত তাকে।
৬৬ বছর আগেই যাকে অফিসিয়ালি মৃত বলে ঘোষনা করা হয়েছিল, শেষ পর্যন্ত সে মানুষটাই জীবনের উইকেটে কাটিয়ে দেন ৯০ বছর !

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে মে, ২০১৫ রাত ৮:১৭

হাসান মাহবুব বলেছেন: দারুণ এক কাহিনী।

২৩ শে মে, ২০১৫ দুপুর ২:৪৮

নাছির84 বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ হাসান ভাই।

২| ২১ শে মে, ২০১৫ রাত ৯:৫৭

এলা বলেছেন: অসাধারন পোস্ট আর অসাধারন সেই মানুষটি যিনি ক্রিকেটকে ভালোবেসে শারীরিক অসঙ্গতিকে পাত্তাই দেননি।
পোস্টে + . . .

২৩ শে মে, ২০১৫ দুপুর ২:৪৮

নাছির84 বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.