নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

নতুন নকিব

যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।

নতুন নকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

পার্থিব মোহ ও দারিদ্রতার মাহাত্ম্য

০৬ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৩:৩৬



পার্থিব মোহ মানুষের সহজাত প্রবৃত্তির অংশ। মোহমুক্ত মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। শরীয়তের হুকুম আহকাম পরিপূর্নভাবে পালনের মাধ্যমে মোহকে কন্ট্রোলে রাখতে সক্ষম হন কেউ কেউ। পৃথিবীতে তারাই সফল মানুষ। পরকালেও এরাই হবেন সফলকাম। পাশাপাশি দারিদ্র্যকে বরন করে নেয়া, অল্পে তুষ্টির গুন অর্জন করা ইত্যাদি জীবনের সফলতার পেছনে চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

إِنَّمَا مَثَلُ ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَا كَمَآءٍ أَنزَلۡنَـٰهُ مِنَ ٱلسَّمَآءِ فَٱخۡتَلَطَ بِهِۦ نَبَاتُ ٱلۡأَرۡضِ مِمَّا يَأۡكُلُ ٱلنَّاسُ وَٱلۡأَنۡعَـٰمُ حَتَّىٰٓ إِذَآ أَخَذَتِ ٱلۡأَرۡضُ زُخۡرُفَهَا وَٱزَّيَّنَتۡ وَظَنَّ أَهۡلُهَآ أَنَّہُمۡ قَـٰدِرُونَ عَلَيۡہَآ أَتَٮٰهَآ أَمۡرُنَا لَيۡلاً أَوۡ نَہَارً۬ا فَجَعَلۡنَـٰهَا حَصِيدً۬ا كَأَن لَّمۡ تَغۡنَ بِٱلۡأَمۡسِ‌ۚ كَذَٲلِكَ نُفَصِّلُ ٱلۡأَيَـٰتِ لِقَوۡمٍ۬ يَتَفَڪَّرُونَ

“বস্তুতঃ পার্থিব জীবনের দৃষ্টান্ত তো বৃষ্টির মত, যা আমি আসমান হতে বর্ষণ করি। অতঃপর তার দ্বারা উৎপন্ন হয় ভূপৃষ্টের উদ্ভিদগুলো অতিশয় ঘন হয়, যা থেকে মানুষ ও পশুরা ভক্ষণ করে। অতঃপর যখন ভূমি তার শোভা ধারণ করে ও নয়নাভিরাম হয়ে ওঠে এবং তার মালিকরা মনে করে যে, তারা এখন তার পুর্ন অধিকারী, তখন দিনে অথবা রাতে তার উপর আমার (আযাবের) আদেশ এসে পড়ে, সুতরাং আমি তা এমনভাবে নিশ্চিহ্ন করে দেই, যেন গতকাল তার অস্তিত্বই ছিল না। এরুপেই আয়াতগুলোকে আমি চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য বিশদরূপে বর্ণনা করে থাকি”।(সূরা ইউনুস ২৪)

তিনি আরও বলেন,

وَٱضۡرِبۡ لَهُم مَّثَلَ ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَا كَمَآءٍ أَنزَلۡنَـٰهُ مِنَ ٱلسَّمَآءِ فَٱخۡتَلَطَ بِهِۦ نَبَاتُ ٱلۡأَرۡضِ فَأَصۡبَحَ هَشِيمً۬ا تَذۡرُوهُ ٱلرِّيَـٰحُ‌ۗ وَكَانَ ٱللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَىۡءٍ۬ مُّقۡتَدِرًا (٤٥) ٱلۡمَالُ وَٱلۡبَنُونَ زِينَةُ ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَا‌ۖ وَٱلۡبَـٰقِيَـٰتُ ٱلصَّـٰلِحَـٰتُ خَيۡرٌ عِندَ رَبِّكَ ثَوَابً۬ا وَخَيۡرٌ أَمَلاً۬

“তাদের কাছে পেশ কর উপমা পার্থিব জীবনের; এটা পানির ন্যায় যা আমি বর্ষণ করি আকাশ হতে, যার দ্বারা ভূমির উদ্ভিদ ঘন সন্নিবিস্ট হয়ে উদগত হয়। তারপর তা বিশুষ্ক হয়ে এমন চূর্ন-বিচূর্ন হয় যে, বাতাস ওকে উড়িয়ে নিয়ে যায়। আর আল্লাহ সর্ব বিষয়ে শক্তিমান। ধনঐশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের শোভা। আর সৎকার্য, যার ফল স্থায়ী, ওটা তোমার প্রতিপালকের নিকট পুরস্কার প্রাপ্তির জন্য শ্রেষ্ঠ এবং আশা প্রাপ্তির ব্যাপারেও উৎকৃষ্ট।” (সূরা কাহফ ৪৫-৪৬ )

আরো অন্য জায়গায় তিনি বলেছেন,

ٱعۡلَمُوٓاْ أَنَّمَا ٱلۡحَيَوٰةُ ٱلدُّنۡيَا لَعِبٌ۬ وَلَهۡوٌ۬ وَزِينَةٌ۬ وَتَفَاخُرُۢ بَيۡنَكُمۡ وَتَكَاثُرٌ۬ فِى ٱلۡأَمۡوَٲلِ وَٱلۡأَوۡلَـٰدِ‌ۖ كَمَثَلِ غَيۡثٍ أَعۡجَبَ ٱلۡكُفَّارَ نَبَاتُهُ ۥ ثُمَّ يَہِيجُ فَتَرَٮٰهُ مُصۡفَرًّ۬ا ثُمَّ يَكُونُ حُطَـٰمً۬ا‌ۖ وَفِى ٱلۡأَخِرَةِ عَذَابٌ۬ شَدِيدٌ۬ وَمَغۡفِرَةٌ۬ مِّنَ ٱللَّهِ وَرِضۡوَٲنٌ۬‌ۚ وَمَا ٱلۡحَيَوٰةُ ٱلدُّنۡيَآ إِلَّا مَتَـٰعُ ٱلۡغُرُورِ

“তোমার জেনে রাখো যে, পার্থিব জীবন তো ক্রীড়া-কৌতুক, জাঁকজমক, পারষ্পরিক অহংকার প্রকাশ, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি প্রাচুর্য লাভের প্রতিযোগিতা ব্যতীত আর কিছুই নয়। এর উপমা বৃষ্টি; যার দ্বারা উৎপন্ন ফসল কৃষকদেরকে চমৎকৃত করে, তারপর তা শুকিয়ে যায়, ফলে তুমি তা পীতবর্ন দেখতে পাও, অবশেষে তা টুকরো-টুকরো (খড়-কুটায়) পরিণত হয় এবং পরকালে রয়েছে কঠিন শাস্তি এবং আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। আর পার্থিব জীবন ছলনাময় ভোগ ব্যতীত কিছুই নয়।” (সূরা হাদীদ ২০ আয়াত)

অন্যএ আল্লাহ তাআলা বলেন,

زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ ٱلشَّهَوَٲتِ مِنَ ٱلنِّسَآءِ وَٱلۡبَنِينَ وَٱلۡقَنَـٰطِيرِ ٱلۡمُقَنطَرَةِ مِنَ ٱلذَّهَبِ وَٱلۡفِضَّةِ وَٱلۡخَيۡلِ ٱلۡمُسَوَّمَةِ وَٱلۡأَنۡعَـٰمِ وَٱلۡحَرۡثِ‌ۗ ذَٲلِكَ مَتَـٰعُ ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَا‌ۖ وَٱللَّهُ عِندَهُ ۥ حُسۡنُ ٱلۡمَـَٔابِ

“নারী, সন্তান-সন্ততি, জমাকৃত সোনা-রূপার ভাণ্ডার, পছন্দসই (চিহ্নত) ঘোরা, চতুষ্পদ জন্তু ও ক্ষেত-খামারের প্রতি আসক্তি মানুষের নিকট লোভনীয় করা হয়েছে। এ সব ইহজীবনের ভোগ্য বস্ত। আর আল্লাহর নিকতেই উওম আশ্রয়স্থল রয়েছে”। (আলে ইমরান ১৪)
তিনি আরো বলেন,

يَـٰٓأَيُّہَا ٱلنَّاسُ إِنَّ وَعۡدَ ٱللَّهِ حَقٌّ۬ۖ فَلَا تَغُرَّنَّكُمُ ٱلۡحَيَوٰةُ ٱلدُّنۡيَاۖ وَلَا يَغُرَّنَّكُم بِٱللَّهِ ٱلۡغَرُورُ

” হে মানুষ! আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য; সুতরাং পার্থিব জীবন যেন কিছুতেই তোমাদেরকে প্রতারিত না করে এবং কোন প্রবঞ্চক যেন কিছুতেই আল্লাহ সম্পর্কে প্রবঞ্চিত না করে”। (সূরা ফাত্বির ৫ আয়াত)

আল্লাহ তাআলা অন্য জায়গায় বলেন,

أَلۡهَٮٰكُمُ ٱلتَّكَاثُرُ (١) حَتَّىٰ زُرۡتُمُ ٱلۡمَقَابِرَ (٢) كَلَّا سَوۡفَ تَعۡلَمُونَ (٣) ثُمَّ كَلَّا سَوۡفَ تَعۡلَمُونَ (٤) كَلَّا لَوۡ تَعۡلَمُونَ عِلۡمَ ٱلۡيَقِينِ

“প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছে। যতক্ষণ না তোমরা (মরে) কবরে উপস্থিত হও। কখনও নয়, তোমরা শীঘ্রই জানতে পারবে। আবার বলি, কখনও নয়, তোমরা শীঘ্রই জানতে পারবে। সত্যিই, তোমরা নিশ্চিত জ্ঞান থাকলে অবশ্যই তোমরা জানতে (ঐ প্রতিযোগিতার পরিণাম)” (সূরা তাকাসুর ১-৫ আয়াত)

তিনি আরও বলেন,

وَمَا هَـٰذِهِ ٱلۡحَيَوٰةُ ٱلدُّنۡيَآ إِلَّا لَهۡوٌ۬ وَلَعِبٌ۬‌ۚ وَإِنَّ ٱلدَّارَ ٱلۡأَخِرَةَ لَهِىَ ٱلۡحَيَوَانُ‌ۚ لَوۡ ڪَانُواْ يَعۡلَمُونَ

“এ পার্থিব জীবন তো খেল-তামাশা ছাড়া কিছুই নয়। আর পরলৌকিক জীবনই তো প্রকৃত জীবন; যদি ওরা জানত”। (সূরা আনকাবূত ৬৪ আয়াত)

এ বিষয়ে কুরআনুল কারিমে আরো অনেক আয়াত রয়েছে। হাদিসেও রয়েছে বিশদ আলোচনা। কয়েকখানা হাদিস বর্ণনা করা হল-

এক. আবূ সাইদ খুদরী রাদিআল্লাহু তাআ'-লা আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরে বসলেন এবং আমরা তাঁর আশেপাশে বসলাম। তারপর তিনি বললেন, “আমি তোমদের উপর যার আশঙ্কা করছি তা হল এই যে, তোমাদের উপর শোভা ও সৌন্দর্য (এর দরজা) খুলে দেওয়া হবে।” (সহীহুল বুখারী ১৪৬৫,৯২২, মুসলিম ১০৫২)

দুই. আমর ইবনে আউফ আনসারী রাদিআল্লাহু তাআ'-লা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার আবূ উবাইদাহ ইবনুল জাররাহ রাদিআল্লাহু তাআ'-লা আনহুকে জিযিয়া (ট্যাক্স) আদায় করার জন্য বাহরাইন পাঠালেন। তারপর তিনি বাহরাইন থেকে (প্রচুর) মাল নিয়ে এলেন। আনসারগন তাঁর আগমনের সংবাদ শুনে ফজরের নামাযে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে শরীক হলেন। যখন তিনি নামায পড়ে (নিজ বাড়ি) ফিরে যেতে লাগলেন, তখন তারা তাঁর সামনে এলেন। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে দেখে হেসে বললেন, “আমার মনে হয়, তোমরা আবূ উবাইদাহ বাহরাইন থেকে কিছু (মাল) নিয়ে এসেছে, তা শুনেছ।” তারা বলল, ‘জী হ্যাঁ ।’ তিনি বললেন, “সুসংবাদ গ্রহণ কর এবং তোমরা সেই আশা রাখ, যা তোমাদেরকে আনন্দিত করবে। তবে আল্লাহর কসম! তোমাদের উপর দারিদ্র্য আসবে আমি এ আশংকা করছি না.বরং আশংকা করছি যে, তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতের ন্যায় তোমাদেরও পার্থিব জীবনে প্রশস্তুতা আসবে। আর তাতে তোমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে, যেমন তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছিল।।” (সহীহুল বুখারী ৩১৫৮,৪০১৫, মুসলিম ২৯৬১)

তিন. আবূ সাইদ খুদরী রাদিআল্লাহু তাআ'-লা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “দুনিয়া হচ্ছে সুমিষ্ট ও সবুজ শ্যামল এবং আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে তাতে প্রতিনিধি করেছেন। তারপর তিনি দেখবেন যে, তোমরা কিভাবে কাজ কর। অতএব তোমরা দুনিয়ার ব্যাপারে সাবধান হও ও নারীজাতির ব্যাপারে।” (মুসলিম ২৭৪২, তিরমিযী ২১৯১)

চার. আনাস রাদিআল্লাহু তাআ'-লা আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “হে আল্লাহ! আখেরাতের জীবনই প্রকৃত জীবন।” (সহীহুল বুখারী ২৮৩৪,২৮৩৫ মুসলিম ১৮০৫)

পাঁচ. উক্ত রাবী থেকেই বর্ণিত, নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তিনটি জিনিস মৃত ব্যক্তির অনুসরণ করে (সঙ্গে যায়) দাফনের পর দুটি ফিরে আসে, আর একটি তার সাথেই থেকে যায়। সে তিনটি হল, (এক) তার পরিবারবর্গ, (দুই) তার মাল, (তিন) তার আমল। দাফনের পর তার পরিবারবর্গ ও মাল ফিরে আসে। আর তার আমল তার সাথেই থেকে যায়।” (সহীহুল বুখারী ৬৫১৪, মুসলিম ২৯৬০)

ছয়. উক্ত রাবী থেকেই বর্ণিত, নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কিয়ামতের দিন জাহান্নামীদের মধ্যে হতে এমন এক ব্যক্তি নিয়ে আসা হবে, যে দুনিয়ায় সবচেয়ে সুখী ও বিলাসী ছিল। তারপর তাকে জাহান্নামে একবার (মাত্র) চুবানো হবে, তারপর তাকে বলা হবে, ‘হে আদম সন্তান! তুমি কি কখনো ভাল জিনিস দেখেছ? তোমার নিকটে কি কখনো সুখ-সামগ্রী এসেছে?’ সে বলবে, ‘না। আল্লাহর কসম! হে প্রভু!’ আর জান্নাতীদের মধ্যে হতে এমন এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হবে, যে দুনিয়ায় সবচেয়ে দুখী ও অভাবী ছিল। তাকে জান্নাতে (মাত্র একবার) চুবানোর পর বলা হবে, ‘হে আদম সন্তান! তুমি কি দুনিয়ায়তে কখনো কষ্ট দেখছ? তোমার উপরে কি কখনো বিপদ গেছে?’ সে বলবে, ‘না। আল্লাহর কসম! আমার উপর কোনদিন কষ্ট আসেনি এবং আমি কখনো কোন বিপদও দেখিনি।” (মুসলিম ২৮০৭, আহমাদ ১২৬৯৯,১৩২৪৮)

সাত. মুস্তাওরিদ ইবনে শাদ্দাদ রাদিআল্লাহু তাআ'-লা আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আখিরাতের মুকাবেলায় দুনিয়ার দৃষ্টান্ত ঐরূপ, যেমন তোমাদের কেউ সমুদ্রে আঙ্গুল ডুবায় এবং (তা বের করে ) দেখে যে, আঙ্গুলটি সমুদ্রে কতটুকু পানি নিয়ে ফিরেছে।” (মুসলিম ২৮৫৮, আহমাদ ১৭৫৪৭,১৭৫৪৮)

আট. জাবির রাদিআল্লাহু তাআ'-লা আনহু হতে বর্ণিত,একদা রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাজারের পাশ দিয়ে গেলেন। এমন অবস্থায় যে, তাঁর দুই পাশে লোকজন ছিল। তারপর তিনি ছোট কানবিশিষ্ট একটি মৃত ছাগল ছানার পাশ দিয়ে গেলেন। তিনি তার কান ধরে বললেন, “তোমাদের কেউ কি এক দিরহামের পরিবর্তে এটাকে নেওয়া পছন্দ করবে?” তারা বললেন, ‘আমরা কোন জিনিসের বিনিময়ে এটা নেওয়া পছন্দ করব না এবং আমারা এটা নিয়ে করবই বা কি?’ তিনি বললেন, “তোমরা কি পছন্দ কর যে, (বিনামুল্যে) এটা তোমাদের হোক?” তারা বললেন, ‘আল্লাহর কাসম! যদি এটা জীবিত থাকত তবুও সে ছোট কানের কারনে দোষযুক্ত ছিল। এখন সে মৃত (সেহেতু একে কে নেবে)?’ তিনি বললেন, “আল্লাহর কসম! তোমাদের নিকট এই মৃত ছাগল ছানাটা যতটা নিকৃষ্ট, দুনিয়া আল্লাহর নিকট তার চেয়ে বেশি নিকৃষ্ট।” (মুসলিম ২৯৫৭, আবূ দাউদ ১৮৬, আহমাদ ১৪৫১৩)

নয়. আবূ যার রাদিআল্লাহু তাআ'-লা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি (একবার) নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর সাথে মদীনার কালো পাথুরে যমীনে হাঁটছিলাম। উহুদ পাহাড় আমাদের সামনে পড়ল। তিনি বললেন, “হে আবূ যার! এতে আমি খুশী নই যে, আমার নিকট এই উহুদ পাহাড় সমান স্বর্ণ থাকবে, এ অবস্থায় তিনদিন অতিবাহিত হবে অথচ তার মধ্যে থেকে একটি দীনারও আমার কাছে অবশিষ্ট থাকবে। অবশ্য টা থাকবে যা আমি ঋণ আদায়ের জন্য বাকী রাখব অথবা আল্লাহর বান্দাদের মাঝে এইভাবে এইভাবে এইভাবে ডানে, বামে ও পিছনে খরচ করব।”

তারপর (কিছু আগে) চলে তিনি বললেন, “প্রাচুর্যের অধিকারীরাই কিয়ামতের দিন নিঃস্ব হবে। অবশ্য সে নয় যে সম্পদকে (ফোয়ারার মত) এইভাবে এইভাবে এইভাবে ডানে, বামে ও পিছনে খরচ করে। কিন্ত এরকম লোকের সংখ্যা খুবই কম।”

তারপর তিনি আমাকে বললেন, “তুমি এখানে বসে থাক, যতক্ষণ না আমি তোমাদের কাছে (ফিরে) আসছি।” এরপর তিনি রাতের অন্ধকারে চলতে লাগলেন, এমনকি শেষ পর্যন্ত তিনি অদৃশ্য হয়ে গেলেন। হঠাৎ, আমি এক জোর শব্দ শুনলাম। আমি ভয় পেলাম যে কোন শত্রু হয়তো নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সামনে পড়েছে। সুতরাং আমি তাঁর নিকট যাওয়ার ইছা করলাম, কিন্ত তাঁর কথা আমার স্মরণ হল, “তুমি এখানে বসে থাক, যতক্ষণ না আমি তোমাদের কাছে (ফিরে) আসছি।” সুতরাং আমি তাঁর ফিরে না আসা পর্যন্ত বসে থাকলাম। (তিনি ফিরে এলে) “আমি বললাম,আমি এক জোর শব্দ শুনলাম, যাতে আমি ভয় পেলাম ।” সুতরাং যা শুনলাম আমি তা তাঁর কাছে উল্লেখ করলাম।

তিনি বললেন, “তুমি শব্দ শুনেছিলে?” আমি বললাম, “জী হ্যাঁ” , তিনি বললেন, “তিনি জিবরাঈল ছিলেন। তিনি আমার কাছে এসে বললেন, “আপনার উম্মাতের মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক না করে মরবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” আমি বললাম, “যদিও সে ব্যভিচার করে ও চুরি করে তবুও কি?” তিনি বললেন, “যদিও সে ব্যভিচার করে ও চুরি করে।” (সহীহুল বুখারী ৬২৬৮,১২৩৭,২৩৮৮,৩২২২, মুসলিম ৯৪)

দশ. আবূ হুরাইরা রাদিআল্লাহু তাআ'-লা আনহু থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যদি আমার নিকট উহুদ পাহাড় সমান সোনা থাকত, তাহলে আমি এতে আনন্দিত হতাম যে, ঋণ পরিশোধের পরিমাণ মত বাকী রেখে অবশিষ্ট সবটাই তিন দিন অতিবাহিত না হতেই আল্লাহর পথে খরচ করে ফেলি।” (সহীহুল বুখারী ২৩৮৯,৬৪৪৫,৭২২৮, মুসলিম ৯৯১)

এগারো. আবূ হুরাইরা রাদিআল্লাহু তাআ'-লা আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “(দুনিয়ার ধন-দৌলত ইত্যাদির দিক দিয়ে) তোমাদের মধ্যে যে নীচে তোমরা তার দিকে তাকাও এবং যে তোমাদের উপরে তার দিকে তাকিয়ো না। যেহেতু সেটাই হবে উৎকৃষ্ট পন্থা যে, তোমাদের প্রতি যে আল্লাহর নিয়ামত রয়েছে তা তুচ্ছ মনে করবে না।” (সহীহুল বুখারী ৬৪৯০,মুসলিম ২৯৬৩)

বার. বুখারীর বর্ণনায় আছে, “তোমাদের কেউ যখন এমন ব্যক্তির দিকে তাকায়, যাকে সম্পদে ও দৈহিক গঠনে তার থেকে বেশি শ্রেষ্ঠত্ব দেওয়া হয়েছে, তখন সে যেন এমন ব্যক্তির দিকে তাকায়, যে এ বিষয়ে তার চেয়ে নিম্নস্তরের।”

তের. আবূ হুরাইরাহ রাদিআল্লাহু তাআ'-লা আনহু হতে বর্ণিত, নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “ধ্বংস হোক দীনারের গোলাম, দিরহামের গোলাম ও উওম পোশাকের গোলাম (দুনিয়াদার)! যদি তাকে দেওয়া হয়, তাহলে সে সন্তুষ্ট হয়। আর না দেওয়া হলে অসন্তুষ্ট হয়। (সহীহুল বুখারী ২৮৮৭, ৭৪৩৫, তিরমিযী ২৫৭৫)

চৌদ্দ. আবূ হুরাইরাহ রাদিআল্লাহু তাআ'-লা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘সওরজন (আহলে সুফফাকে) এই অবস্থায় দেখেছি, তাদের কারো কাছে (গা ঢাকার) জন্য চাদর ছিল না, কারো কাছে লুঙ্গী ছিল এবং কারো কাছে চাদর, (এক সঙ্গে দুটি বস্ত্রই কারো কাছে ছিল না) তারা তা গর্দানে বেঁধে নিতেন। তারপর সেই বস্ত্র কারো পায়ের অর্ধগোছা পর্যন্ত হত এবং কারো পায়ের গাঁট পর্যন্ত। সুতরাং তাঁরা তা হাত দিয়ে জমা করে ধরে রাখতেন, যেন লজ্জাস্থান দেখা না যায়!’ (সহীহুল বুখারী ৪৪২)

পনের. আবূ হুরাইরাহ রাদিআল্লাহু তাআ'-লা আনহু থেকে বর্নিত, তিনি বললেন, নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “দুনিয়া মু’মিনের জন্য জেলখানা এবং কাফেরের জন্য জান্নাত।” (মুসলিম ২৯৫৬, তিরমিযী ২৩২৪)

ষোল. ইবনে উমার রাদিআল্লাহু তাআ'-লা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একদিন) আমার দুই কাঁধ ধরে বললেন, “তুমি এ দুনিয়াতে একজন মুসাফির অথবা পথচারীর মত থাক।” আর ইবনে উমার রাদিআল্লাহু তাআ'-লা আনহু বলতেন, ‘তুমি সন্ধ্যায় উপনীত হলে আর ভোরের অপেক্ষা করো না এবং ভোরে উপনীত হলে সন্ধ্যার অপেক্ষা করো না। তোমার সুস্থতার অবস্থায় তোমার পীড়িত অবস্থার জন্য কিছু সঞ্চয় কর এবং জীবিত অবস্থায় তোমার মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ কর।” (সহীহুল বুখারী ৬৪১৬, তিরমিযী ২৩৩৩)

*এই হাদিসটির ব্যাখ্যায় উলামাগন বলেন, দুনিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়ো না এবং তাকে নিজের আসল ঠিকানা বানিয়ে নিও না । মনে মনে এ ধরনা করো না যে, তুমি তাতে দীর্ঘজীবী হবে। তুমি তার প্রতি যত্নবান হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করো না। তার সাথে তোমরা সম্পর্ক হবে ততটুক, যতটুক একজন প্রবাসী তার প্রবাসের সাথে রেখে থাকে। তাতে সেই বিষয়-বস্ত নিয়ে বিভোল হয়ে যেও না, যে বিষয়-বস্ত নিয়ে সেই প্রবাসের ব্যক্তি হয় না, যে স্বদেশে নিজের পরিবারের নিকট ফিরে যেতে চায়। আর আল্লাহই তওফীক দাতা।

সতের. আবুল আব্বাস সাহল ইবনে সা’দ রাদিআল্লাহু তাআ'-লা আনহু বলেন, এক ব্যক্তি নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর কাছে এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনি আমাকে এমন কর্ম বলে দিন, আমি তা করলে যেন আল্লাহ আমাকে ভালবাসেন এবং লোকেরাও আমাকে ভালবাসে।’ তিনি বললেন, “দুনিয়ার প্রতি বিতৃষ্ণা আনো, তাহলে আল্লাহ তোমাকে ভালবাসবেন। আর লোকদের ধন-সম্পদের প্রতি বিতৃষ্ণা আনো, তাহলে লোকেরা তোমাকে ভালবাসবে।” (ইবনু মাজাহ ৪১০২)

আঠারো. নু’মান ইবনে বাশীর রাদিআল্লাহু তাআ'-লা আনহু বলেন, উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিআল্লাহু তাআ'-লা আনহু (পূর্বেকার তুলনায় বর্তমানে) লোকেরা যে দুনিয়ার (ধন-সম্পদ) অধিক জমা করে ফেলেছে সে কথা উল্লেখ করে বললেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –কে দেখেছি, তিনি সারা দিন ক্ষুধায় থাকর ফলে পেটের উপর ঝুঁকে থাকতেন (যেন ক্ষুধার জ্বালা কম অনুভব হয়) তিনি পেট ভরার জন্য নিকৃষ্ট মানের খুরমাও পেতেন না।’ (মুসলিম ২৯৭৭,২৯৭৮, তিরমিযী ২৩৭২)

উনিশ. আয়েশা রাদিআল্লাহু তাআ'-লা আনহু বলেন, “রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই অবস্থায় ইন্তেকাল করলেন যে, তখন একটা প্রানীর খেয়ে বাঁচার মত কিছু খাদ্য আমার ছিল না। তবে আমার তাকের মধ্যে যৎসামান্য যব ছিল। এ থেকে বেশ কিছুদিন আমি খেলাম। কিন্ত যখন একদিন মেপে নিলাম, সেদিনই তা শেষ হয়ে গেল।” (সহীহুল বুখারী ৩০৯৭, তিরমিযী ২৪৬৭)

বিশ. উম্মুল মু’মিনীন জুয়াইরিয়্যাহ বিন্তে হারেসের ভাই আমর ইবনে হারেস রাদিআল্লাহু তাআ'-লা আনহু বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মূত্যুর সময় কোন দীনার, দিরহাম, ক্রেতদাসী এবং কোন জিনিসই ছেড়ে যাননি। তবে তিনি ঐ সাদা খচ্চরটি ছেড়ে গেছেন, যার উপর তিনি সওয়ার হতেন এবং তাঁর হাতিয়ার ও কিছু জমি; যা তিনি মুসাফিরদের জন্য সাদকাহ করে গেছেন।’ (সহীহুল বুখারী ৪৪৬১,২৭৩৯,২৮৭৩)

একুশ. খাব্বার ইবনে আরাও রাদিআল্লাহু তাআ'-লা আনহু বলেন, ‘আমরা আল্লাহর চেহেরা (সন্তোষটি) লাভের উদ্দেশ্যে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে (মদীনা) হিজরত করলাম। যার সওয়াব আল্লাহর নিকট আমাদের প্রাপ্য। এরপর আমাদের কেউ এ সওয়াব দুনিয়াতে ভোগ করার পূর্বেই বিদায় নিলেন। এর মধ্যে মুসআব ইবনে উমাইর রাদিআল্লাহু তাআ'-লা আনহু তিনি উহুদ যুদ্ধে শহীদ হলেন এবং শুধুমাএ একখানা পশমের রঙিন চাদর রেখে গেলেন। আমরা (কাফনের জন্য) তা দিয়ে তাঁর মাথা ঢাকলে তাঁর পা বেরিয়ে গেল। আর পা ঢাকলে তাঁর মাথা বেরিয়ে গেল। তাই রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নির্দেশ দিলেন যে, “তা দিয়ে তাঁর মাথা ঢেকে দাও এবং পায়ের উপর ‘ইযখির’ ঘাস বিছিয়ে দাও।” আর আমাদের মধ্যে এমনও লোক রয়েছেন, যাঁদের ফল পেকে গেছে। আর তাঁরা তা সংগ্রহ করছেন।’ (সহীহুল বুখারী ১২৭৬, ৩৮৯৭,৩৯১৪,৪০৪৭)

বাইশ. সাহল ইবনে সা’দ রাদিআল্লাহু তাআ'-লা আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যদি আল্লাহর নিকট মাছির ডানার সমান দুনিয়া (মূল্য বা ওজন) থাকত, তাহলে তিনি কোন কাফেরকে তাঁর (দুনিয়ার) এক ঢোক পানিও পান করাতেন না।” (তিরমিযী ২৩২০, ইবনে মাজাহ ৪১১০)

তেইশ. আবূ হুরাইরা রাদিআল্লাহু তাআ'-লা আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –কে বলতে শুনেছি, “শোনো ! নিঃসন্দেহে দুনিয়া অভিশপ্ত। অভিশপ্ত তাঁর মধ্যে যা কিছু আছে (সবই) তবে আল্লাহর যিকর এবং তাঁর সাথে সম্পৃক্ত জিনিস, আলেম ও তালেবে-ইলম নয়।” (তিরমিযী ২৩২২, ইবনে মাজাহ ৪১১২)

চব্বিশ. আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাদিআল্লাহু তাআ'-লা আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা জমি-জায়গা, বারি-বাগান ও শিল্প-ব্যবসায়ে বিভোর হয়ে পড়ো না। কেননা, (তাহলে) তোমরা দুনিয়ার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়বে।” (তিরমিযী ২৩২৮, আহমাদ ৩৫৬৯,৪০৩৮,৪২২২)

পচিশ. আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রাদিআল্লাহু তাআ'-লা আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আমাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন। এমন অবস্থায় যে, আমরা আমাদের একটি কুঁড়েঘর সংস্কার করছিলাম। তিনি বললেন, “এটা কী?” আমরা বললাম, ‘কুঁড়ে ঘরটি দুর্বল হয়ে ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছিল, তাই আমরা তা মেরামত করছি।’ তিনি বললেন, “আমি ব্যাপারটিকে (মৃত্যুকে) এর চাইতেও নিকটবর্তী ভাবছি।” (তিরমিযী ২৩৩৫, আহমাদ ৬৪৬৬)

ছাব্বিশ. কা’ব ইবনে ইয়ায রাদিআল্লাহু তাআ'-লা আনহু বলেন, আমি আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি; “প্রত্যেক উম্মাতের জন্য ফিতনা রয়েছে এবং আমরা উম্মাতের ফিতনা হচ্ছে মাল।” (তিরমিযী ২৩৩৬, আহমাদ ১৭০৭)

সাতাশ. আব্দুল্লাহ ইবনে শিখখীর রাদিআল্লাহু তাআ'-লা আনহু বলেন, আমি নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর নিকট এলাম, এমন অবস্থায় যে, তিনি ‘আলহাকুমুত তাকাসুর’ অর্থাৎ, প্রাচুর্য্যের প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছে। (সূরা তাকাসুর) পড়ছিলেন। তিনি বললেন, “আদম সন্তান বলে, ‘আমার মাল, আমার মাল।’ অথচ হে আদম সন্তান! তোমার কি এ ছাড়া কোন মাল আছে, যা তুম খেয়ে শেষ করে দিয়েছ অথচ যা তুমি পরিধান করে পুরাতন করে দিয়েছ অথবা সাদকাহ করে (পরকালের জন্য) জমা রেখেছ।” (মুসলিম ২৯৫৮)

আটাশ. আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন একটি লোক নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –কে বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহর কসম! আমি নিঃসন্দেহে আপনাকে ভালবাসি।’ তিনি বললেন, “তুমি যা বলছ, তা চিন্তা করে বল।” সে বলল, ‘আল্লাহর কসম! আমি নিঃসন্দেহে আপনাকে ভালবাসি।’ এরূপ সে তিনবার বলল। তিনি বললেন, “যদি তুমি আমাকে ভালবাসো, তাহলে দারিদ্রের জন্য বর্ম প্রস্তুত রাখো। কেননা, যে আমাকে ভালবাসবে স্রোত তার শেষ প্রান্তের দিকে যাওয়ার চাইতেও বেশি দ্রতগতিতে দারিদ্র তার নিকট আগমন করবে।” (তিরমিযী ২৩৫০)

উনত্রিশ. কা’ব ইবনে মালেক রাদিআল্লাহু তাআ'-লা আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “ছাগলের পালে দুটি ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘকে ছেড়ে দিলে ছাগলের যতটা ক্ষতি করে, তার চেয়ে মানুষের সম্পদ ও সম্মানের প্রতি লভ-লালসা তার দ্বীনের বেশী ক্ষতিকারক।” (তিরমিযী ২৩৭৬, আহমাদ ১৫৩৫৭, ১৫৩৬৭)

ত্রিশ. আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাদিআল্লাহু তাআ'-লা আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন চাটাই –এর উপর শুলেন। তারপর তিনি এই অবস্থায় উঠলেন যে, তাঁর পার্শ্বদেশে দাগ পড়ে গিয়েছিল। আমরা বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! যদি (আপনার অনুমতি হয়, তাহলে) আমরা আপনার জন্য নরম গদি বানিয়ে দিই।’ তিনি বললেন, “দুনিয়ার সাথে আমার কি সম্পর্ক? আমি তো এ জগতে ঐ সওয়ারের মত যে ক্লান্ত হয়ে একটু বিশ্রামের জন্য গাছের ছায়ায় থামল। পুনরায় সে চলতে আরম্ভ করল এবং ঐ গাছটি ছেড়ে দিল।” (তিরমিযী ২৩৭৭, ইবনু মাজাহ ৪১১৬৯)

একত্রিশ. আবূ হুরাইরাহ রাদিআল্লাহু তাআ'-লা আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “গরীব মুমিনরা ধনীদের পাঁচশত বছর পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (তিরমিযী ২৩৫৩,২৩৫৪, ইবনু মাজাহ ৪১২২)

বত্রিশ. ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআ'-লা আনহু ও ইমরান ইবনে হুসাইন রাদিআল্লাহু তাআ'-লা আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আমি বেহেশ্তের মধ্যে তাকিয়ে দেখলাম, তার অধিকাংশই গরীব লোক। আর দোযখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, তার অধিকাংশ অধিবাসীরাই মহিলা।” (সহীহুল বুখারী ৩২৪১,৫১৯৮,৬৪৪৯,৬৫৪৬, মুসলিম ২৭৩৮) ইমাম বুখারী উক্ত হাদিসকে ইমরান ইবনে হুসাইন রাদিআল্লাহু তাআ'-লা আনহু থেকেও বর্ণনা করেছেন।

তেত্রিশ. উসামাহ ইবনে যায়েদ রাদিআল্লাহু তাআ'-লা আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আমি জান্নাতের দুয়ারে দাঁড়িয়ে দেখতে পেলাম, সেখানে অধিকাংশ নিঃস্ব লোক রয়েছে। আর ধনবানরা তখনো (হিসাবের জন্য) অবরুদ্ধ রয়েছে। অথচ দোযখীদেরকে দোযখের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়ার আদেশ দেওয়া হয়ে গেছে।” (সহীহুল বুখারী ৫১৯৬, ৬৫৪৭, মুসলিম ২৭৩৬)

চৌত্রিশ. আবূ হুরাইরাহ রাদিআল্লাহু তাআ'-লা আনহু কর্তৃক বর্ণিত, নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “সবচেয়ে সত্য কথা কোন কবি বলেছেন, তা হল লাবীদ (কবীর) কথা, (তিনি বলেছেন,) ‘শোনো, আল্লাহ ছাড়া সব কিছুই বাতিল।” (সহীহুল বুখারী ৩৮৪১, ৬১৪৭,৬৪৮৯ মুসলিম ২২৫৬)

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'-লা আমাদের এই বিষয়ে তাঁর প্রিয় হাবিব মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রেখে যাওয়া সুন্নাত অনুধাবন করে তার উপরে আমল করার তাওফিক দান করুন। জান্নাতের চির শান্তির পথে পরিচালিত করুন।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৩:৪২

রাজীব নুর বলেছেন: ইহকালটা ক্ষনিকের। পরকালটাই আসল।
কিন্তু আমরা ক্ষনিকের কালটা নিয়েই সবাই ব্যস্ত।

০৬ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৬

নতুন নকিব বলেছেন:



ইহকালটা ক্ষনিকের। পরকালটাই আসল।
কিন্তু আমরা ক্ষনিকের কালটা নিয়েই সবাই ব্যস্ত।


-অনেক সুন্দর বলেছেন। মোবারকবাদ। পাঠ এবং মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা।

২| ০৬ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৩

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: কিছুটা পড়লাম বাকিটুকু পরে পড়ছি!
ভাল একটি পোষ্ট দিয়েছেন তার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে গেলাম।

০৬ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৭

নতুন নকিব বলেছেন:



মোবারকবাদ। আপনার উপস্থিতি বরাবর প্রেরনার। অনেক ভাল থাকবেন।

৩| ০৬ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৪:৫৩

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: বর্তমানে দুনিয়ার প্রতি অতিরিক্ত মোহই আমাদেরকে ভ্রান্ত পথে নিয়ে যাচ্ছে।
মহান আল্লাহ আমাদে সবাইকে সঠিক বুঝ বোঝার তৌফিক দান করুন।
আজকাল সবাই দুনিয়াবী প্রতিযোগীতায় লিপ্ত।দুনিয়ার সফলতাকেই আসল সফলতা মনে করছে।

০৭ ই মে, ২০১৮ সকাল ৯:৩৬

নতুন নকিব বলেছেন:



বর্তমানে দুনিয়ার প্রতি অতিরিক্ত মোহই আমাদেরকে ভ্রান্ত পথে নিয়ে যাচ্ছে।
মহান আল্লাহ আমাদে সবাইকে সঠিক বুঝ বোঝার তৌফিক দান করুন।
আজকাল সবাই দুনিয়াবী প্রতিযোগীতায় লিপ্ত।দুনিয়ার সফলতাকেই আসল সফলতা মনে করছে।


-সহমত। মাত্রাতিরিক্ত পার্থিব মোহ আমাদের ধোঁকায় ফেলে রেখেছে। মহান আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন। সেইভাবে জীবন যাপন করার তাওফিক দান করুন। সুন্দর মন্তব্যে অভিনন্দন এবং কৃতজ্ঞতা।

৪| ০৬ ই মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০০

প্রামানিক বলেছেন: অনেক গুরুত্বপূর্ণ পোষ্ট। ধন্যবাদ

০৭ ই মে, ২০১৮ সকাল ৯:৩৭

নতুন নকিব বলেছেন:



মোবারকবাদ। পাঠ এবং মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা অশেষ। অনেক ভাল থাকুন।

৫| ০৬ ই মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১২

সনেট কবি বলেছেন: হেদায়েতী পোষ্ট। আল্লাহ সবাইকে এর শিক্ষা গ্রহণের তাওফিক দিন-আমিন।

০৭ ই মে, ২০১৮ সকাল ৯:৩৮

নতুন নকিব বলেছেন:



প্রিয় কবি, মুগ্ধতা আপনার আগমনে। অনেক ভাল থাকার প্রার্থনা।

৬| ০৬ ই মে, ২০১৮ রাত ১০:০৩

পবন সরকার বলেছেন: গুরুত্বপূর্ণ পোষ্ট।

০৭ ই মে, ২০১৮ সকাল ৯:৩৯

নতুন নকিব বলেছেন:



মোবারকবাদ। কৃতজ্ঞতাসহ অভিনন্দন মন্তব্যে।

৭| ১০ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১:৩৫

নীল মনি বলেছেন: আলহামদুলিল্লাহ্‌। আল্লাহ্‌ আমাদের সত্য ও সঠিক পথের চলার তাওফিক দান করুন।আমিন।পোস্ট ভালো হয়েছে।পড়ার সময় দীর্ঘ মনে হল।দুই পর্ব করে দিলে কেমন হয়?

১০ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৪:২৫

নতুন নকিব বলেছেন:



মোবারকবাদ।

আপনার দুআ আল্লাহ পাক কবুল করুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.