নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

নতুন নকিব

যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।

নতুন নকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

যৌবনের গান / কাজী নজরুল ইসলাম

১২ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৯:৫৬



কাজী নজরুল ইসলাম প্রেমের কবি, দ্রোহের কবি। সাম্য, মানবতা, বিদ্রোহ তাঁর রচনাসম্ভারের ভাঁজে ভাঁজে ছড়িয়ে। শোষিত বঞ্চিত মানুষের মুক্তির কবি কাজী নজরুল ইসলাম। আশৈশব কবিকে পেয়েছি প্রেরনার সতত সরোবর হিসেবে। কি গানে, কি গজলে, কি কবিতায়, কি ছন্দে নিবন্ধে তাঁর কাছে, তাঁর দ্রোহের কাছে, তাঁর প্রেমের কাছে, তাঁর অনুভব-অনুভূতির কাছে বরাবর ঋনী। প্রাইমারির গন্ডি পেরুতে না পেরুতেই নজরুলকে পড়ার সৌভাগ্য হয়। সম্ভবত: সেই কচি বয়সেই পড়েছিলুম প্রিয় কবির অনবদ্য ‘যৌবনের গান’ -নিবন্ধটি। দাগ কেটেছিল মনের গহীনে। আজও দাগ কাটে। ধারনা করতে কষ্ট হয় না, বাংলা ভাষা যতদিন থাকবে, এই অমর কথামালা বোদ্ধা পাঠক শুভানূধ্যায়ী মাত্রেরই হৃদয়ে আঁচড় কেটে যাবে। আজ প্রিয় কবির ‘যৌবনের গান’ -এর অংশবিশেষ পাঠক বন্ধুদের জন্য তুলে দেওয়া হলো। নজরুল এখনো প্রাসঙ্গিক, নজরুল এখনো আমাদের সময়ের দাবি পূরণ করছেন। করে যাবেন অনাগত কালের দিনগুলোতেও।

''বার্ধক্য তাহাই—যাহা পুরাতনকে, মিথ্যাকে, মৃত্যুকে আঁকড়িয়া পড়িয়া থাকে, বৃদ্ধ তাহারাই—যাহারা মায়াচ্ছন্ন নব মানবের অভিনব জয় যাত্রার শুধু বোঝা নয়, বিঘ্ন; শতাব্দীর নব যাত্রীর চলার ছন্দে ছন্দ মিলাইয়া যাহারা কুচকাওয়াজ করিতে জানে না, পারে না; যাহারা জীব হইয়াও জড়; যাহারা অটল সংস্কারের পাষাণস্তূপ আঁকড়িয়া পড়িয়া আছে। বৃদ্ধ তাহারাই যাহারা নব অরুণোদয় দেখিয়া নিদ্রাভঙ্গের ভয়ে দ্বার রুদ্ধ করিয়া পড়িয়া থাকে। আলোক-পিয়াসী প্রাণ চঞ্চল শিশুদের কল কোলাহলে যাহারা বিরক্ত হইয়া অভিসম্পাত করিতে থাকে, জীর্ণ পুঁতি চাপা পড়িয়া যাহাদের নাভিশ্বাস বহিতেছে, অতি জ্ঞানের অগ্নিমান্দ্যে যাহারা আজ কঙ্কালসার—বৃদ্ধ তাহারাই। ইহাদের ধর্মই বার্ধক্য। বার্ধককে সব সময় বয়সের ফ্রেমে বাঁধা যায় না। বহু যুবককে দেখিয়াছি যাহাদের যৌবনের উর্দির নিচে বার্ধক্যের কঙ্কাল মূর্তি। আবার বহু বৃদ্ধকে দেখিয়াছি যাঁহাদের বার্ধক্যের জীর্ণাবরণের তলে মেঘলুপ্ত সূর্যের মতো প্রদীপ্ত যৌবন। তরুণ নামের জয়-মুকুট শুধু তাহারই যাহার শক্তি অপরিমাণ, গতিবেগ ঝঞ্ঝার ন্যায়, তেজ নির্মেঘ আষাঢ় মধ্যাহ্নের মার্তণ্ডপ্রায়, বিপুল যাহার আশা, ক্লান্তিহীন যাহার উৎসাহ, বিরাট যাহার ঔদার্য, অফুরন্ত যাহার প্রাণ, অটল যাহার সাধনা, মৃত্যু যাহার মুঠিতলে। তারুণ্য দেখিয়াছি আরবের বেদুইনদের মাঝে, তারুণ্য দেখিয়াছি মহাসমরে সৈনিকের মুখে, কালাপাহাড়ের অসিতে, কামাল-করিম-মুসোলিনি-সানইয়াৎ লেনিনের শক্তিতে। যৌবন দেখিয়াছি তাহাদের মাঝে—যাহারা বৈমানিকরূপে অনন্ত আকাশের সীমা খুঁজিতে গিয়া প্রাণ হারায়, আবিষ্কারকরূপে নব-পৃথিবীর সন্ধানে গিয়া আর ফিরে না, গৌরীশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার শীর্ষদেশ অধিকার করিতে গিয়া যাহারা তুষার-ঢাকা পড়ে, অতল সমুদ্রের নীল মঞ্জুষার মণি আহরণ করিতে গিয়া সলিলসমাধি লাভ করে, মঙ্গলগ্রহে, চন্দ্রলোকে যাইবার পথ আবিষ্কার করিতে গিয়া নিরুদ্দেশ হইয়া যায়। পবন-গতিকে পশ্চাতে ফেলিয়া যাহারা উড়িয়া যাইতে চায়, নব নব গ্রহ-নক্ষত্রের সন্ধান করিতে করিতে যাহাদের নয়ন-মণি নিভিয়া যায়—যৌবন দেখিয়াছি সেই দুরন্তদের মাঝে। যৌবনের মাতৃরূপ দেখিয়াছি—শব বহন করিয়া যখন সে যায় শ্মশানঘাটে, গোরস্থানে, অনাহারে থাকিয়া যখন সে অন্ন পরিবেশন করে দুর্ভিক্ষ বন্যা-পীড়িতদের মুখে, বন্ধুহীন রোগীর শয্যাপার্শ্বে যখন সে রাত্রির পর রাত্রি জাগিয়া পরিচর্যা করে, যখন সে পথে পথে গান গাহিয়া ভিখারী সাজিয়া দুর্দশাগ্রস্তদের জন্য ভিক্ষা করে, যখন দুর্বলের পাশে বল হইয়া দাঁড়ায়, হতাশের বুকে আশা জাগায়।

ইহাই যৌবন, এই ধর্ম যাহাদের তাহারাই তরুণ। তাহাদের দেশ নাই, জাতি নাই, অন্য ধর্ম নাই। দেশ-কাল-জাতি-ধর্মের সীমার ঊর্ধ্বে ইহাদের সেনানিবাস। আজ আমরা—মুসলিম তরুণেরা— যেন অকুণ্ঠিত চিত্তে মুক্তকণ্ঠে বলিতে পারি—ধর্ম আমাদের ইসলাম, কিন্তু প্রাণের ধর্ম আমাদের তারুণ্য, যৌবন। আমরা সকল দেশের, সকল জাতির, সকল ধর্মের, সকল কালের। আমরা মুরিদ যৌবনের। এই জাতি-ধর্ম-কালকে অতিক্রম করিতে পারিয়াছে যাঁহাদের যৌবন, তাঁহারাই আজ মহামানব, মহাত্মা, মহাবীর। তাহাদিগকে সকল দেশের সকল ধর্মের সকল লোক সমান শ্রদ্ধা করে।

পথ-পার্শ্বের ধর্ম-অট্টালিকা আজ পড় পড় হইয়াছে, তাহাকে ভাঙিয়া ফেলিয়া দেওয়াই আমাদের ধর্ম, ঐ জীর্ণ অট্টালিকা চাপা পড়িয়া বহু মানবের মৃত্যুর কারণ হইতে পারে। যে-ঘর আমাদের আশ্রয় দান করিয়াছে, তাহা যদি সংস্কারাতীত হইয়া আমাদেরই মাথায় পড়িবার উপক্রম করে, তাহাকে ভাঙিয়া নতুন করিয়া গড়িবার দুঃসাহস আছে একা তরুণেরই। খোদার দেওয়া এই পৃথিবীর নিয়ামত হইতে যে নিজেকে বঞ্চিত রাখিল, সে যত মোনাজাতই করুক, খোদা তাহা কবুল করিবেন না। খোদা হাত দিয়াছেন বেহেশত ও বেহেশতি চিজ অর্জন করিয়া লইবার জন্য, ভিখারীর মতো হাত তুলিয়া ভিক্ষা করিবার জন্য নয়। আমাদের পৃথিবী আমরা আমাদের মনের মতো করিয়া গড়িয়া লইব। ইহাই হউক তরুণের সাধনা।''

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৯:৫৭

বিজন রয় বলেছেন: তীব্র!!

১২ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১০:০২

নতুন নকিব বলেছেন:



ধন্যবাদ। কিন্তু তীব্র কী? প্রতিবাদ না সহমত? না কি ভালবাসা? না অন্যকিছু, কবি দা?

আপনি নিশ্চয়ই ভাল আছেন। অনেক অনেক শুভকামনা।

২| ১২ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১০:০৭

বিজন রয় বলেছেন: হা হা হা ....... নজরুল আমার কাছে তীব্র আবেগ। আমার বেঁচে থাকায় তিনি ভীষণ আবেগে প্রবাহমান।
এবার মনে হয় বোঝাতে পেরেছি।

তবে আফসোস এই, আজকাল ক'জন আর নজরুল পড়ে!!

আমি ভাল আছি।
এই পোস্টের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

১২ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১০:১৭

নতুন নকিব বলেছেন:



দ্বিতীয়বার আপনাকে মন্তব্যে টেনে আনার জন্য দু:খিত! ক্ষমাপ্রার্থী!

এক শব্দের সংক্ষিপ্ত মন্তব্যে সারতে চেয়েছিলেন হয়তো। সেটা পারলেন না আমার যন্ত্রনায়। যার জন্য এত টান, এতটা আবেগ আর ভালোবাসা যাকে কেন্দ্র করে হৃদয়জুড়ে, নিছক একটি শব্দে এত বিশাল ভাব-অনুভব ব্যক্ত করতে চাইলেও কি পারা যায়, দাদা! হয়তো যায়, কিন্তু আমাদের মত সাধারনদের পক্ষে কি আর ইশারা ইঙ্গিতে সবটা বুঝে নেয়া সম্ভব!

আপনার আফসোসের সাথে সহমত শতভাগ! নজরুল ছিলেন প্রেরনার অনন্ত প্রস্রবন! ঘুমন্ত জাতিকে জাগিয়ে তুলতে নজরুলের মত কারও হুঙ্কার প্রয়োজন আবারও।

কৃতজ্ঞতা অনি:শেষ।

৩| ১২ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১০:৩৩

রাজীব নুর বলেছেন: কি জানি কিসেরও লাগি
প্রাণ ও করে হায় হায় !!!


কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে আমার একটা ১০০ পর্বের ধারাবাহিক লেখা লেখার ইচ্ছা আছে।

এর আগে আমি রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে লিখেছি ১০০ পর্ব।

১২ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১০:৩৮

নতুন নকিব বলেছেন:



আপনার ইচ্ছেটা পূরন হোক। শুরু করে দিন অচিরেই।

অপেক্ষায় থাকলুম। শুভকামনা।

৪| ১২ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১১:০২

বিজন রয় বলেছেন: আরে কি বলেন!!
প্রয়োজনে আরও অনেকবার আসবো আপনার এখানে।

আপনার জন্য শুভকামনা রইল।

১২ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১১:৪৪

নতুন নকিব বলেছেন:



আপনার প্রতিও শুভকামনা অশেষ। আবারও এলে নিশ্চয়ই খুশি হব। আপনি অনেক বিনীত বলেই আবারও এসে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে গেলেন।

আপ্লুত!

৫| ১২ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:৫১

রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন:
আপনার ইচ্ছেটা পূরন হোক। শুরু করে দিন অচিরেই।
অপেক্ষায় থাকলুম। শুভকামনা।

সময়ের অভাবে শুরু করতে পারছি না।
ইনশাল্লাহ শুরু করে দিব।

১৩ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১০:৪২

নতুন নকিব বলেছেন:



ইনশা-আল্লাহ আমরা অচিরেই তা পড়তে পারবো।

আবারও শুভাশীষ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.