নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

নতুন নকিব

যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।

নতুন নকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিস্ময়কর কুরআনুল হাকিম : অনিঃশেষ আলোর ভূবন.....

০৭ ই মে, ২০২০ সকাল ১১:০৭

ছবি: অন্তর্জাল।

বিস্ময়কর কুরআনুল হাকিম : অনিঃশেষ আলোর ভূবন.....
মহিমান্বিত গ্রন্থ আল কুরআনকে আল্লাহ তাআ'লা গোটা মানবজাতির জন্য গাইডলাইন হিসেবে প্রেরণ করেছেন। মহান আল্লাহ তাআ'লার সম্মান মর্যাদা যেমন তুলনা ও উপমার নিগড়ে বাধা যায় না ঠিক তেমনি তাঁর অমীয় বাণী এই কিতাবও সুউচ্চ মর্যাদায় আসীন আর সকল বাণীর উপরে।

কুরআনুল হাকিম ও তার সুমহান মর্যাদাঃ
আলহামদুলিল্লাহিল আকরামিল্লাজি খালাক্কাল ইনসানা ওয়া কাররামাহু ওয়া আল্লামাহু মিনাল বায়ানি মা লাম ইয়া'লাম। ফাছুবহানাল্লাজি লা ইউহছ- ইমতিনানুহূ বিল্লিসানি ওয়ালা বিল ক্কলাম। অনাশহাদু আল্লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু ওয়া নাশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়ারাসূলুহু।

প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার, যিনি তাঁর বান্দার উপর কিতাব নাযিল করেছেন এবং তাতে কোনো বক্রতা রাখেননি।
অগনিত দরূদ ও সালাম প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর- যিনি গোটা বিশ্ববাসীর জন্য পথপ্রদর্শক ও রহমত হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা তাঁর উপর ও তাঁর পরিবার পরিজন, সাহাবায়ে কিরাম আযমায়ীন ও কিয়ামত পর্যন্ত তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণকারী সকলের উপর অন্তহীন রহমত বর্ষন করুন। সৎপথের পথিক, কুরআনের আলোয় আলোকিত সকলকে ক্ষমা করুন। তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করুন।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা তাঁর সৃষ্টিকূলের উপর বিশেষ করে মু’মিনের উপর অনুগ্রহ দান করেছেন যে, তিনি তাদের মধ্য থেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণ করেছেন। তিনি তার সাথে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, যা অন্যান্য সব কিতাবের রক্ষক। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ

﴿ لَقَدۡ مَنَّ ٱللَّهُ عَلَى ٱلۡمُؤۡمِنِينَ إِذۡ بَعَثَ فِيهِمۡ رَسُولٗا مِّنۡ أَنفُسِهِمۡ يَتۡلُواْ عَلَيۡهِمۡ ءَايَٰتِهِۦ وَيُزَكِّيهِمۡ وَيُعَلِّمُهُمُ ٱلۡكِتَٰبَ وَٱلۡحِكۡمَةَ وَإِن كَانُواْ مِن قَبۡلُ لَفِي ضَلَٰلٖ مُّبِينٍ ١٦٤ ﴾ [ال عمران: ١٦٤]

“অবশ্যই আল্লাহ মুমিনদের উপর অনুগ্রহ করেছেন, যখন তিনি তাদের মধ্য থেকে তাদের প্রতি একজন রাসূল পাঠিয়েছেন, যে তাদের কাছে তাঁর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করে আর তাদেরকে কিতাব ও হিকমাত শিক্ষা দেয়। যদিও তারা ইতঃপূর্বে স্পষ্ট ভ্রান্তিতে ছিল।” [সূরা আলে-ইমরান: ১৬৪]

সহীহ মুসলিমে এসেছে:

عَنْ عِيَاضِ بْنِ حِمَارٍ الْمُجَاشِعِيِّ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ ذَاتَ يَوْمٍ فِي خُطْبَتِهِ: «أَلَا إِنَّ رَبِّي أَمَرَنِي أَنْ أُعَلِّمَكُمْ مَا جَهِلْتُمْ، مِمَّا عَلَّمَنِي يَوْمِي هَذَا، كُلُّ مَالٍ نَحَلْتُهُ عَبْدًا حَلَالٌ، وَإِنِّي خَلَقْتُ عِبَادِي حُنَفَاءَ كُلَّهُمْ، وَإِنَّهُمْ أَتَتْهُمُ الشَّيَاطِينُ فَاجْتَالَتْهُمْ عَنْ دِينِهِمْ، وَحَرَّمَتْ عَلَيْهِمْ مَا أَحْلَلْتُ لَهُمْ، وَأَمَرَتْهُمْ أَنْ يُشْرِكُوا بِي مَا لَمْ أُنْزِلْ بِهِ سُلْطَانًا، وَإِنَّ اللهَ نَظَرَ إِلَى أَهْلِ الْأَرْضِ، فَمَقَتَهُمْ عَرَبَهُمْ وَعَجَمَهُمْ، إِلَّا بَقَايَا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ، وَقَالَ: إِنَّمَا بَعَثْتُكَ لِأَبْتَلِيَكَ وَأَبْتَلِيَ بِكَ، وَأَنْزَلْتُ عَلَيْكَ كِتَابًا لَا يَغْسِلُهُ الْمَاءُ، تَقْرَؤُهُ نَائِمًا وَيَقْظَانَ...... »

সহীহ মুসলিমে ‘ইয়াদ ইবন হিমার আল-মুজাশি‘য়ী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর খুতবায় বলেছেন, জেনে রাখো, আমার রব আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, তোমরা যা কিছু জানো না তা যেন তোমাদেরকে শিখিয়ে দেই, যে ইলম আল্লাহ তা‘আলা আমাকে আজ পর্যন্ত জানিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, যেসব সম্পদ আমি আমার বান্দাহকে দান করেছি তা হালাল এবং নিশ্চয়ই আমি আমার সকল বান্দাহকে জন্মগতভাবেই নিষ্কলুষ তথা সরল সঠিক পথের অনুসারী করে সৃষ্টি করেছি। এরপরে শয়তান তাদের নিকট এসে তাদেরকে বিভ্রান্ত করে সঠিক পথ থেকে সরিয়ে দিয়েছে এবং আমি যা তাদের জন্য হালাল করেছি শয়তান তা তাদের উপর হারাম করে দিয়েছে। তদুপরি শয়তান আমার সাথে এমন কিছুকে শরীক করতে আদেশ দেয় যে সম্পর্কে আমি কোনো দলিল প্রমাণ অবতীর্ণ করি নি। আর আল্লাহ তা‘আলা জমিনের অধিবাসীদের প্রতি দৃষ্টিপাত করে আরব অনারব সবার প্রতি (তাদের কার্যকলাপের কারণে) ক্রোধান্বিত হলেন। কেবল আহলে কিতাবের কিছু সংখ্যক লোক যারা সঠিক পথকে ধরে রেখেছে (তারা স্রষ্টার রোষ থেকে রক্ষা পেলো)। আর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, নিশ্চয় আমি আপনাকে পরীক্ষা করা ও আপনার দ্বারা সৃষ্টিকুলকে পরীক্ষা করা এ দু’উদ্দেশ্যে আপনাকে জগতে প্রেরণ করেছি। এবং আমি আপনার উপর এমন কিতাব নাযিল করেছি যা পানি ধুয়ে মুছে ফেলতে পারে না। তা আপনি শয়নে জাগরণে সর্বাবস্থায় তিলাওয়াত করতে পারেন।

আল কুরআন অন্যান্য আসমানি কিতাবের সত্যায়ণকারীঃ
এ কিতাব পূর্ববর্তী সকল আসমানি কিতাবের সত্যায়ণকারী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَأَنزَلۡنَآ إِلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ بِٱلۡحَقِّ مُصَدِّقٗا لِّمَا بَيۡنَ يَدَيۡهِ مِنَ ٱلۡكِتَٰبِ وَمُهَيۡمِنًا عَلَيۡهِۖ ٨ ﴾ [المائ‍دة: ٤٨]

“আর আমি তোমার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি যথাযথভাবে, এর পূর্বের কিতাবের সত্যায়নকারী ও এর উপর তদারককারীরূপে।” [সূরা আল-মায়েদা: ৪৮]

অর্থাৎ এটি পূর্ববর্তী সব কিতাব থেকে সুউঁচু ও মর্যাদাবান। অন্যান্য কিতাবের রক্ষাকারী, ফয়সালাকারী, সাক্ষ্যদানকারী ও মূল্যায়ণকারী।
ইবন জারীর রহ. বলেন, আল কুরআন পূর্ববর্তী সব কিতাবের আমানতদার ও নিরাপত্তাদাতা। সুতরাং যা কিছু কুরআনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে তা সঠিক, আর যা কুরআনের সাথে বিরোধপূর্ণ হবে তা বাতিল।

সব মুসলিমের অন্তরে আল কুরআনের রয়েছে বিশেষ মর্যাদা। এটি নিজেই মহিমান্বিত, সম্মানিত, মর্যাদাবান ও শক্তিশালী।

অত্র নিবন্ধে সংক্ষেপে এ বিষয়ে আলোকপাত করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। প্রত্যাশা রাখবো, মহান আল্লাহ তা‘আলা এর দ্বারা আমাদেরকে উপকৃত করবেন। সম্মানিত পাঠক-পাঠিকাগণসহ যাদের নিকট এ বাণী পৌঁছবে সকলেই উপকৃত হবেন। নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা সর্বশ্রোতা, দুআ কবুলকারী এবং মহাক্ষমাশীল।

শুরু করছি মহান আল্লাহ তাআ'লার নাম নিয়ে:

القرآن 'আল কুরআন' শব্দটি قرأ মূল ধাতুর মাসদার। এ শব্দ থেকেই আল্লাহর বাণী:

﴿ إِنَّ عَلَيۡنَا جَمۡعَهُۥ وَقُرۡءَانَهُۥ ١٧ فَإِذَا قَرَأۡنَٰهُ فَٱتَّبِعۡ قُرۡءَانَهُۥ ١٨ ثُمَّ إِنَّ عَلَيۡنَا بَيَانَهُۥ ١٩ ﴾ [القيامة: ١٧، ١٩]

“এর সংরক্ষণ ও পাঠ আমাদেরই দায়িত্ব। অতঃপর আমরা যখন তা পাঠ করি, তখন আপনি সেই পাঠের অনুসরণ করুন। এরপর বিশদ বর্ণনা আমারই দায়িত্ব”। [সূরা আল-কিয়ামাহ: ১৭-১৮]

পঠিত বাক্যকে কুরআন বলা হয়, যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী-

﴿ فَإِذَا قَرَأۡتَ ٱلۡقُرۡءَانَ فَٱسۡتَعِذۡ بِٱللَّهِ مِنَ ٱلشَّيۡطَٰنِ ٱلرَّجِيمِ ٩٨ ﴾ [النحل: ٩٨]

“অতএব, যখন আপনি কুরআন পাঠ করেন তখন বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করুন।” [সূরা আন-নাহল: ৯৮]
আল-কুরআন প্রকৃতভাবেই আল্লাহর বাণী, এর শব্দাবলী ও অর্থও আল্লাহ তা‘আলার তরফ থেকেই এসেছে। তিনি তা তাঁর বান্দা মুহাম্মদ ইবন আব্দুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর ওহী আকারে নাযিল করেছেন।

এটা নাযিলকৃত কিন্তু মাখলুক নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ تَنزِيلُ ٱلۡكِتَٰبِ مِنَ ٱللَّهِ ٱلۡعَزِيزِ ٱلۡحَكِيمِ ١ ﴾ [الزمر: ١]

“কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় আল্লাহর পক্ষ থেকে।” [সূরা আয-যুমার: ১]

﴿ قُلۡ نَزَّلَهُۥ رُوحُ ٱلۡقُدُسِ مِن رَّبِّكَ ١٠٢ ﴾ [النحل: ١٠٢]

“বলুন, একে পবিত্র ফেরেশতা আপনার রবের পক্ষ থেকে নাযিল করেছেন”। [সূরা আন-নাহল: ১০২]

﴿ حمٓ ١ تَنزِيلُ ٱلۡكِتَٰبِ مِنَ ٱللَّهِ ٱلۡعَزِيزِ ٱلۡعَلِيمِ ٢ ﴾ [غافر: ١، ٢]

“হা-মীম। কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে, যিনি পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ”। [সুরা গাফির: ১-২]

﴿ تَنزِيلٞ مِّنَ ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ ٢ ﴾ [فصلت: ٢]

“এটা অবতীর্ণ পরম করুণাময়, দয়ালুর পক্ষ থেকে”। [সূরা ফুসসিলাত: ২]

﴿وَقُرۡءَانٗا فَرَقۡنَٰهُ لِتَقۡرَأَهُۥ عَلَى ٱلنَّاسِ عَلَىٰ مُكۡثٖ وَنَزَّلۡنَٰهُ تَنزِيلٗا ١٠٦﴾ [الاسراء: ١٠٦]

“আর আমরা কুরআনকে নাযিল করেছি কিছু কিছু করে, যেন আপনি তা মানুষের কাছে পাঠ করতে পারেন ধীরে ধীরে এবং আমরা তা নাযিল করেছি যথাযথভাবে।” [সূরা বনী ইসরাঈল: ১০৬]

এ ব্যাপারে অনেক আয়াত রয়েছে। উম্মতের সকল উলামায়ে কিরামের এ বিষয়ের উপর ঐকমত্য রয়েছে।

কুরআনের নামসমূহের মধ্যে অন্যতম কিছু নামঃ
আল্লাহ তা‘আলা এ কিতাবকে বিভিন্ন নামে নামকরণ করেছেন। বিশেষায়িত করেছেন নানা বিশেষণে। এর দ্বারাই এ কিতাবের সুমহান সম্মান ও মর্যাদা প্রমাণিত হয়। কুরআনের নামসমূহের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে: আল কুরআন, আল-ফুরকান, আল-কিতাব, আল-হুদা (হিদায়েতের পথ প্রদর্শনকারী), নূর (আলো), শিফা (আরোগ্যকারী), বায়ান (বর্ণনাকারী) মাও‘য়েযা (সুপদেশ), রহমত, বাসায়ের (অন্তর্দৃষ্টি দানকারী), বালাগ (প্রজ্ঞাপন), আরবী, মুবীন (স্পষ্টকারী), কারীম (অতি সম্মানিত), আযীম (মহান), মাজীদ (সম্মানিত), মুবারক (বরকতময়), তানযীল (অবতীর্ণ), সিরাতুম-মুসতাকিম (সরল সঠিক পথ), যিকরুল হাকীম (প্রজ্ঞাময় বাণী), হাবলুল্লাহ (আল্লাহর রশি), যিকরা (উপদেশ), তাযকিরা (স্মরণিকা), বুশরা (সুসংবাদ), পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যায়নকারী, পূর্ববর্তী কিতাবের রক্ষাকারী, মাসানী, সব বিষয়ের ব্যাখ্যাকারী, সব বিষয়ের বর্ণনাকারী, সন্দেহাতীত ও বক্রহীন কিতাব ইত্যাদি নামে পরিচিত।

এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ

﴿ قُرۡءَانًا عَرَبِيًّا غَيۡرَ ذِي عِوَجٖ لَّعَلَّهُمۡ يَتَّقُونَ ٢٨ ﴾ [الزمر: ٢٨]

“আরবী ভাষায় এ কুরআন বক্রতামুক্ত, যাতে তারা সাবধান হয়ে চলে।”[ সূরা যুমার:২৮]

﴿ تَبَارَكَ ٱلَّذِي نَزَّلَ ٱلۡفُرۡقَانَ عَلَىٰ عَبۡدِهِ ﴾ [الفرقان: ١]

“পরম কল্যাণময় তিনি, যিনি তাঁর বান্দার প্রতি ফয়সালার গ্রন্থ অবতীর্ণ করেছেন।” [সূরা আল-ফুরকান: ১]

﴿ الٓمٓ ١ ذَٰلِكَ ٱلۡكِتَٰبُ لَا رَيۡبَۛ فِيهِۛ هُدٗى لِّلۡمُتَّقِينَ ٢ ﴾ [البقرة: ١، ٢]

“আলিফ লাম মীম, এ সেই কিতাব যাতে কোনোই সন্দেহ নেই। পথ প্রদর্শনকারী মুত্তাকীদের জন্য।” [সূরা আল-বাকারা: ১-২]

﴿ قُلۡ مَن كَانَ عَدُوّٗا لِّـجِبۡرِيلَ فَإِنَّهُۥ نَزَّلَهُۥ عَلَىٰ قَلۡبِكَ بِإِذۡنِ ٱللَّهِ مُصَدِّقٗا لِّمَا بَيۡنَ يَدَيۡهِ وَهُدٗى وَبُشۡرَىٰ لِلۡمُؤۡمِنِينَ ﴾ [البقرة: ٩٧]

“আপনি বলে দিন, যে কেউ জিবরাঈলের শত্রু হয়-যেহেতু তিনি আল্লাহর আদেশে এ কালাম আপনার অন্তরে নাযিল করেছেন, যা সত্যায়নকারী তাদের সম্মুখস্থ কালামের এবং মুমিনদের জন্য পথপ্রদর্শক ও সুসংবাদদাতা।” [সুরা বাকারা: ৯৭]

﴿ ذَٰلِكَ نَتۡلُوهُ عَلَيۡكَ مِنَ ٱلۡأٓيَٰتِ وَٱلذِّكۡرِ ٱلۡحَكِيمِ ٥٨ ﴾ [ال عمران: ٥٨]

এটা তো তা-ই যা আমরা আপনাকে পড়ে শুনাই, আয়াত এবং প্রজ্ঞাময় যিকির থেকে।” [সূরা আলে-ইমরান: ৫৮]

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ قَدۡ جَآءَكُم بُرۡهَٰنٞ مِّن رَّبِّكُمۡ وَأَنزَلۡنَآ إِلَيۡكُمۡ نُورٗا مُّبِينٗا ١٧٤ ﴾ [النساء: ١٧٤]

“হে লোকসকল, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট দলীল-প্রমাণাদি পৌঁছে গেছে। আর আমরা তোমাদের প্রতি প্রকৃষ্ট আলো অবতীর্ণ করেছি।” [সূরা আন-নিসা: ১৭৪]

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ قَدۡ جَآءَتۡكُم مَّوۡعِظَةٞ مِّن رَّبِّكُمۡ وَشِفَآءٞ لِّمَا فِي ٱلصُّدُورِ وَهُدٗى وَرَحۡمَةٞ لِّلۡمُؤۡمِنِينَ ٥٧ ﴾ [يونس: ٥٧]

“হে লোকসকল, তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে উপদেশবাণী এবং অন্তরের রোগের নিরাময়, হেদায়েত ও রহমত মুসলিমদের জন্য।” [সূরা ইউনুস: ৫৭]

﴿ إِنَّ هَٰذَا ٱلۡقُرۡءَانَ يَهۡدِي لِلَّتِي هِيَ أَقۡوَمُ وَيُبَشِّرُ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٱلَّذِينَ يَعۡمَلُونَ ٱلصَّٰلِحَٰتِ أَنَّ لَهُمۡ أَجۡرٗا كَبِيرٗا ٩ ﴾ [الاسراء: ٩]

“নিশ্চয় এ কুরআন প্রদর্শন করে সর্বাধিক সরল পথের দিকে এবং সৎকর্ম পরায়ণ মুমিনদেরকে সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্যে রয়েছে মহা পুরস্কার।” [সূরা বনী ইসরাঈল: ৯]

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ ٱلَّذِيٓ أَنزَلَ عَلَىٰ عَبۡدِهِ ٱلۡكِتَٰبَ وَلَمۡ يَجۡعَل لَّهُۥ عِوَجَاۜ ١ قَيِّمٗا لِّيُنذِرَ بَأۡسٗا شَدِيدٗا مِّن لَّدُنۡهُ وَيُبَشِّرَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٱلَّذِينَ يَعۡمَلُونَ ٱلصَّٰلِحَٰتِ أَنَّ لَهُمۡ أَجۡرًا حَسَنٗا ٢ ﴾ [الكهف: ١، ٢]

“সব প্রশংসা আল্লাহর, যিনি তাঁর বান্দার উপর কিতাব নাযিল করেছেন এবং তাতে রাখেন নি কোনো বক্রতা। সরলরূপে, যাতে সে তাঁর পক্ষ থেকে কঠিন আযাব সম্পর্কে সতর্ক করে এবং সুসংবাদ দেয়, সেসব মুমিনকে, যারা সৎকর্ম করে, নিশ্চয় তাদের জন্য রয়েছে উত্তম প্রতিদান।” [সূরা কাহাফ, আয়াত ১-২]

﴿ بَلۡ هُوَ قُرۡءَانٞ مَّجِيدٞ ٢١ فِي لَوۡحٖ مَّحۡفُوظِۢ ٢٢ ﴾ [البروج: ٢١، ٢٢]

“বরং এটা মহান কুরআন, লওহে মাহফুযে লিপিবদ্ধ”। [সূরা বুরূজ, আয়াত ২১-২২]

﴿ إِنَّهُۥ لَقُرۡءَانٞ كَرِيمٞ ٧٧ فِي كِتَٰبٖ مَّكۡنُونٖ ٧٨ لَّا يَمَسُّهُۥٓ إِلَّا ٱلۡمُطَهَّرُونَ ٧٩ تَنزِيلٞ مِّن رَّبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٨٠ ﴾ [الواقعة: ٧٧، ٨٠]

“নিশ্চয় এটা সম্মানিত কুরআন, যা আছে এক গোপন কিতাবে, যারা পাক-পবিত্র, তারা ব্যতীত অন্য কেউ একে স্পর্শ করবে না, এটা সৃষ্টিকুলের রবের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ।” [সূরা ওয়াক্বি‘আ, আয়াত ৭৭-৮০]

এগুলো ছাড়াও আরো অনেক আয়াতে এই মহাগ্রন্থের নানা নাম ও গুণাবলীর কথা উল্লেখ হয়েছে, যা এর সুমহান মর্যাদা, সর্বোচ্চ সম্মানের প্রমাণিত হয়। কেনইবা হবে না? এর কথক হলেন স্বয়ং মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন, যিনি গোপন ও প্রকাশ্য সব বিষয়ের সর্বজ্ঞানী। তিনি বলেনঃ

﴿ وَلَوۡ أَنَّمَا فِي ٱلۡأَرۡضِ مِن شَجَرَةٍ أَقۡلَٰمٞ وَٱلۡبَحۡرُ يَمُدُّهُۥ مِنۢ بَعۡدِهِۦ سَبۡعَةُ أَبۡحُرٖ مَّا نَفِدَتۡ كَلِمَٰتُ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٞ ٢٧ ﴾ [لقمان: ٢٧]

“পৃথিবীতে যত বৃক্ষ আছে, সবই যদি কলম হয় এবং সমুদ্রের সাথেও সাত সমুদ্র যুক্ত হয়ে কালি হয়, তবুও তাঁর বাক্যাবলী লিখে শেষ করা যাবে না। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়”। [সূরা লোকমান, আয়াত ২৭]

﴿ إِنَّا نَحۡنُ نَزَّلۡنَا ٱلذِّكۡرَ وَإِنَّا لَهُۥ لَحَٰفِظُونَ ٩ ﴾ [الحجر: ٩]

“নিশ্চয় আমরা স্বয়ং এ উপদেশ গ্রন্থ অবতারণ করেছি এবং আমরা নিজেই এর সংরক্ষক”। [সূরা হিজর, আয়াত ৯]

এখানে উল্লেখযোগ্য যে, কুরআনের যে সব নাম বা সিফাত রয়েছে তার প্রত্যেকটি বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। আলোচনা দীর্ঘ হওয়ার আশঙ্কায় বাকী নামসমূহের বিস্তারিত আলোচনা করা থেকে বিরত থাকছি।

আল কুরআন সংরক্ষণের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন স্বয়ং মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনঃ
এ সম্মানিত কিতাবের সবচেয়ে বড় মহত্ব হলো এর সংরক্ষণের দায়িত্ব স্বয়ং মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নিজেই নিয়েছেন। কোনো সৃষ্ট জীবের কাছে এর হিফাযতের দায়িত্ব দেননি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ بَلۡ هُوَ قُرۡءَانٞ مَّجِيدٞ ٢١ فِي لَوۡحٖ مَّحۡفُوظِۢ ٢٢ ﴾ [البروج: ٢١، ٢٢]

“বরং এটা মহান কুরআন, লওহে মাহফুযে লিপিবদ্ধ”। [সূরা বুরুজ, আয়াত ২১-২২]

ইবনুল কাইয়্যেম (রহ.) বলেছেন: আল্লাহ তা‘আলা নিন্মোক্ত আয়াতে

﴿ بَلۡ هُوَ قُرۡءَانٞ مَّجِيدٞ ٢١ فِي لَوۡحٖ مَّحۡفُوظِۢ ٢٢ ﴾ [البروج: ٢١، ٢٢]

“আমি স্বয়ং এ উপদেশ গ্রন্থ অবতারণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক।” [সূরা হিজর, আয়াত ৯] কুরআনের সংরক্ষণ ও সূরায়ে বুরুজে সংরক্ষণের জায়গা সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা কুরআনকে কোনো ধরণের সংযোজন ও বিয়োজন থেকে মুক্ত রেখেছেন, এর অর্থ বিকৃতি, শব্দ পরিবর্তন ও সংরক্ষণ করেছেন। এর হরফসমূহ সব ধরণের বাড়ানো বা কমানো থেকে এবং অর্থসমূহ বিকৃতি ও পরিবর্তন থেকে হেফাযত করেছেন।

কুরআনের বিস্ময় শেষ হবার নয়, এর উপদেশ চিরন্তনঃ
আল্লাহর কিতাব আল কুরআন সব ফিতনা ফাসাদ থেকে মুক্ত, তা মু’মিনের নিত্যসঙ্গী, অন্তরের আলো, হৃদয়ের বসন্ত, দুঃশ্চিন্তা দুর্ভাবনা দূরকারী। আল্লাহর কিতাব আমাদের পূর্ববর্তীদের ও পরবর্তীদের সংবাদদাতা, পরস্পরের মাঝে ফয়সালাকারী। তা চিরন্তন ফয়সালা, কোনোরূপ হাসি তামাশার জিনিস নয়। যেসব আল্লাহদ্রোহীরা তাকে ত্যাগ করেছে আল্লাহ তার প্রতিশোধ নিয়েছেন, কেউ তাকে বাদ দিয়ে অন্য কোথাও হিদায়াত অন্বেষণ করলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, তা আল্লাহ তা‘আলার শক্ত রজ্জু, প্রজ্ঞাময় উপদেশবাণী, সরল সঠিক পথ, যা কখনো পথভ্রষ্ট করে না, কাউকে দ্বিধা সংকোচে ফেলে না, উলামায়ে কিরামগণ কখনো এর মহাজ্ঞান বিজ্ঞান অর্জনে পরিতুষ্ট হতে পারবে না (তারা আরো বেশি বেশি অর্জন করতে চাইবে), অধিক উত্তর প্রদানের পরও তা পুরাতন হয় না। এর বিস্ময় শেষ হবার নয়, এর উপদেশ চিরন্তন। তা জ্বীন সম্প্রদায়কে বিরত রাখতে পারেনি যখন তারা এর তিলাওয়াত শ্রবন করেছিল, তখন তারা বলেছিল,

﴿ إِنَّا سَمِعۡنَا قُرۡءَانًا عَجَبٗا ١ ﴾ [الجن: ١]

“আমরা (জ্বিন জাতি) বিস্ময়কর কুরআন শ্রবণ করেছি।” [সূরা আল জিন: ১]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَا مِنَ الْأَنْبِيَاءِ مِنْ نَبِيٍّ إِلَّا قَدِ اُعْطِيَ مِنَ الْآيَاتِ مَا مِثْلُهُ آمَنَ عَلَيْهِ الْبَشَرُ، وَإِنَّمَا كَانَ الَّذِي أُوتِيتُ وَحْيًا أَوْحَى اللهُ إِلَيَّ، فَأَرْجُو أَنْ أَكُونَ أَكْثَرَهُمْ تَابِعًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ»

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “প্রত্যেক নবীকে তাঁর পূর্ববর্তী নবীদের প্রায় অনুরূপ মু‘জিযা দেওয়া হয়েছিল। অতঃপর লোকেরা তাঁর উপর ঈমান এনেছে। কিন্তু আমাকে যে মু‘জিযা দেওয়া হয়েছে তা হলো অহী (আল কুরআন), যা আল্লাহ তা‘আলা আমার উপর নাযিল করেছেন। আমি আশা করি কিয়ামতের দিবসে তাঁদের অনুসারীদের তুলনায় আমার অনুসারীর সংখ্যা সর্বাধিক হবে।”[2]

কুরআনের শব্দ ও বর্ণনার অলৌকিকতা:
আল্লাহ তা‘আলা কুরআনের শব্দ ও বর্ণনার বিস্ময়করতা সম্পর্কে বলেন,

﴿وَإِن كُنتُمۡ فِي رَيۡبٖ مِّمَّا نَزَّلۡنَا عَلَىٰ عَبۡدِنَا فَأۡتُواْ بِسُورَةٖ مِّن مِّثۡلِهِۦ وَٱدۡعُواْ شُهَدَآءَكُم مِّن دُونِ ٱللَّهِ إِن كُنتُمۡ صَٰدِقِينَ ٢٣ ﴾ [البقرة: ٢٣]

“এতদসম্পর্কে যদি তোমাদের কোনো সন্দেহ থাকে যা আমরা আমাদের বান্দার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, তাহলে এর মত একটি সূরা রচনা করে নিয়ে এস আর তোমাদের সেসব সাহায্যকারীদেরকে সঙ্গে নাও-এক আল্লাহকে ছাড়া, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকো।” [সূরা আল-বাকারা: ২৩]

কুরআনের তিলাওয়াতের ক্ষেত্রে অলৌকিকতাঃ

﴿ وَلَقَدۡ يَسَّرۡنَا ٱلۡقُرۡءَانَ لِلذِّكۡرِ فَهَلۡ مِن مُّدَّكِرٖ ١٧ ﴾ [القمر: ١٧]

“আমি কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি বোঝার জন্যে। অতএব, কোন চিন্তাশীল আছে কি?”। [সূরা ক্বামার, আয়াত ১৭]
পূর্ববর্তীদের ঘটনা সম্পর্কে আলোচনা কুরআনের বিস্ময়, যাতে আমরা উপদেশ গ্রহণ করতে পারি,

﴿ نَحۡنُ نَقُصُّ عَلَيۡكَ أَحۡسَنَ ٱلۡقَصَصِ بِمَآ أَوۡحَيۡنَآ إِلَيۡكَ هَٰذَا ٱلۡقُرۡءَانَ وَإِن كُنتَ مِن قَبۡلِهِۦ لَمِنَ ٱلۡغَٰفِلِينَ ٣ ﴾ [يوسف: ٣]

“আমরা আপনার নিকট উত্তম কাহিনী বর্ণনা করেছি, যেমনিভাবে আমরা এ কুরআন আপনার নিকট অবতীর্ণ করেছি। আপনি এর আগে অবশ্যই এ ব্যাপারে অনবহিতদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।” [সূরা ইউসুফ : ৩]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেনঃ

﴿ لَقَدۡ كَانَ فِي قَصَصِهِمۡ عِبۡرَةٞ لِّأُوْلِي ٱلۡأَلۡبَٰبِۗ مَا كَانَ حَدِيثٗا يُفۡتَرَىٰ وَلَٰكِن تَصۡدِيقَ ٱلَّذِي بَيۡنَ يَدَيۡهِ وَتَفۡصِيلَ كُلِّ شَيۡءٖ وَهُدٗى وَرَحۡمَةٗ لِّقَوۡمٖ يُؤۡمِنُونَ ١١١ ﴾ [يوسف: ١١١]

“তাদের কাহিনীতে বুদ্ধিমানদের জন্য রয়েছে অনেক শিক্ষণীয় বিষয়, এটা কোনো মনগড়া কথা নয়, কিন্তু যারা ঈমান আনয়ণ করে তাদের জন্যে পূর্বেকার কালামের সমর্থন এবং প্রত্যেক বস্তুর বিবরণ রহমত ও হেদায়াত।” [সূরা ইউসুফ: ১১১]

কুরআনে বর্ণিত আক্বীদা ও ধর্মীয় বিধিবিধানের অলৌকিকতা:
আর তা এ জন্য যে, যাতে আমরা অনুসরণ করতে পারি। আল্লাহ তা‘আলা এসম্পর্কে বলেন,

﴿الٓرۚ كِتَٰبٌ أَنزَلۡنَٰهُ إِلَيۡكَ لِتُخۡرِجَ ٱلنَّاسَ مِنَ ٱلظُّلُمَٰتِ إِلَى ٱلنُّورِ بِإِذۡنِ رَبِّهِمۡ صِرَٰطِ ٱلۡعَزِيزِ ٱلۡحَمِيدِ ١ ﴾ [ابراهيم: ١]

“আলিফ-লাম-রা; এটি একটি গ্রন্থ, যা আমি আপনার প্রতি নাযিল করেছি, যাতে আপনি মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন-পরাক্রান্ত, প্রশংসার যোগ্য রবের নির্দেশে তাঁরই পথের দিকে।” [সূরা ইবরাহীম: ১]

﴿وَنَزَّلۡنَا عَلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ تِبۡيَٰنٗا لِّكُلِّ شَيۡءٖ وَهُدٗى وَرَحۡمَةٗ وَبُشۡرَىٰ لِلۡمُسۡلِمِينَ ٨٩ ﴾ [النحل: ٨٩]

“আমরা আপনার প্রতি গ্রন্থ নাযিল করেছি যেটি এমন যে তা প্রত্যেক বস্তুর সুস্পষ্ট বর্ণনা, হেদায়েত, রহমত এবং মুসলিমদের জন্যে সুসংবাদ।” [সূরা নাহল, আয়াত ৮৯]

﴿إِنَّآ أَنزَلۡنَآ إِلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ بِٱلۡحَقِّ فَٱعۡبُدِ ٱللَّهَ مُخۡلِصٗا لَّهُ ٱلدِّينَ ٢﴾ [الزمر: ٢]

“আমরা আপনার প্রতি এ কিতাব যথার্থরূপে নাযিল করেছি। অতএব, আপনি নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর ইবাদত করুন।” [সূরা যুমার, আয়াত ২]

﴿ وَهَٰذَا كِتَٰبٌ أَنزَلۡنَٰهُ مُبَارَكٞ فَٱتَّبِعُوهُ وَٱتَّقُواْ لَعَلَّكُمۡ تُرۡحَمُونَ ١٥٥ ﴾ [الانعام: ١٥٥]

“এটি এমন একটি গ্রন্থ, যা আমরা অবতীর্ণ করেছি, খুব মঙ্গলময়, অতএব, তোমরা এর অনুসরণ কর এবং তার তাকওয়া অবলম্বন কর, যাতে তোমরা করুণাপ্রাপ্ত হও।” [সূরা আন‘আম, আয়াত ১৫৫]

কুরআনে গায়েবী বিষয় সম্পর্কে যা এসেছে সেগুলোও অলৌকিক:
যাতে আমরা ঈমান আনি ও আত্মসমর্পন করি: আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ الٓمٓ ١ ذَٰلِكَ ٱلۡكِتَٰبُ لَا رَيۡبَۛ فِيهِۛ هُدٗى لِّلۡمُتَّقِينَ ٢ ٱلَّذِينَ يُؤۡمِنُونَ بِٱلۡغَيۡبِ وَيُقِيمُونَ ٱلصَّلَوٰةَ وَمِمَّا رَزَقۡنَٰهُمۡ يُنفِقُونَ ٣ ﴾ [البقرة: ١، ٣]

“আলিফ লাম মীম। এ সেই কিতাব যাতে কোনোই সন্দেহ নেই। পথ প্রদর্শনকারী মুত্তাকীদের জন্য। যারা গায়েবের উপর ঈমান আনে, সালাত প্রতিষ্ঠা করে। আর আমরা তাদেরকে যে রিযিক দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে।” [সূরা আল-বাক্বারাহ, আয়াত ১-৩]

মহাগ্রন্থ আল কুরআন নবীজির নবুওয়াত লাভের শুরু থেকে কিয়ামত পর্যন্ত একটি স্পষ্ট নিদর্শন ও অকাট্য প্রমাণ:
আল্লাহ তা‘আলা সকল অধিকতর শুদ্ধভাষীদেরকে চ্যালেঞ্জ করছেন (এর অনুরূপ কিছু বানাতে), বরং তিনি জীন ও ইনসান সকলকে চ্যালেঞ্জ করেছেন, কিন্তু সকলেই অক্ষম ও ব্যর্থ হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ

﴿ قُل لَّئِنِ ٱجۡتَمَعَتِ ٱلۡإِنسُ وَٱلۡجِنُّ عَلَىٰٓ أَن يَأۡتُواْ بِمِثۡلِ هَٰذَا ٱلۡقُرۡءَانِ لَا يَأۡتُونَ بِمِثۡلِهِۦ وَلَوۡ كَانَ بَعۡضُهُمۡ لِبَعۡضٖ ظَهِيرٗا ٨٨ ﴾ [الاسراء: ٨٨]

“বলুন, যদি মানব ও জ্বিন এই কুরআনের অনুরূপ রচনা করে আনয়নের জন্যে জড়ো হয় এবং তারা পরস্পরের সাহায্যকারী হয়; তবুও তারা কখনও এর অনুরূপ রচনা করে আনতে পারবে না।” [সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত ৮৮]

আল্লাহ তা‘আলা এর দ্বারা আমাদের নবীজীকে অনুগ্রহ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ وَلَقَدۡ ءَاتَيۡنَٰكَ سَبۡعٗا مِّنَ ٱلۡمَثَانِي وَٱلۡقُرۡءَانَ ٱلۡعَظِيمَ ٨٧ ﴾ [الحجر: ٨٧]

“আমি আপনাকে সাতটি বার বার পঠিতব্য আয়াত এবং মহান কুরআন দিয়েছি।” [সূরা হিজর, আয়াত ৮৭]

কুরআন সরল সঠিক পথ ও বিশুদ্ধ পদ্ধতির সন্ধান দেয়:
আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ

﴿ إِنَّ هَٰذَا ٱلۡقُرۡءَانَ يَهۡدِي لِلَّتِي هِيَ أَقۡوَمُ ٩ ﴾ [الاسراء: ٩]

“এই কুরআন এমন পথ প্রদর্শন করে, যা সর্বাধিক সরল।” [সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত ৯]

কুরআন তিলাওয়াতকারীর জন্য অসংখ্য সাওয়াব ও মহাপ্রতিদান:
আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ

﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَتۡلُونَ كِتَٰبَ ٱللَّهِ وَأَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَأَنفَقُواْ مِمَّا رَزَقۡنَٰهُمۡ سِرّٗا وَعَلَانِيَةٗ يَرۡجُونَ تِجَٰرَةٗ لَّن تَبُورَ ٢٩ لِيُوَفِّيَهُمۡ أُجُورَهُمۡ وَيَزِيدَهُم مِّن فَضۡلِهِۦٓۚ إِنَّهُۥ غَفُورٞ شَكُورٞ ٣٠ ﴾ [فاطر: ٢٩، ٣٠]

“যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, সালাত কায়েম করে এবং আমরা যা দিয়েছি, তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসা আশা করে, যাতে কখনও লোকসান হবে না। পরিণামে তাদেরকে আল্লাহ তাদের সওয়াব পুরোপুরি দিবেন এবং নিজ অনুগ্রহে আরও বেশী দিবেন। নিশ্চয় তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, অতীব গুণগ্রাহী।” [সূরা ফাতির, আয়াত ২৯-৩০]

وعن ابن عمر -رضي الله عنهما- عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «لَا حَسَدَ إِلَّا فِي اثْنَتَيْنِ: رَجُلٌ آتَاهُ اللهُ الْقُرْآنَ فَهُوَ يَقُومُ بِهِ آنَاءَ اللَّيْلِ، وَآنَاءَ النَّهَارِ، وَرَجُلٌ آتَاهُ اللهُ مَالًا، فَهُوَ يُنْفِقُهُ آنَاءَ اللَّيْلِ، وَآنَاءَ النَّهَارِ » رواه البخاري ومسلم.

ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “দু’টি ব্যাপারে ছাড়া ঈর্ষা পোষণ করা যায় না। একটি হলো এমন ব্যক্তি যাকে আল্লাহ কুরআনের জ্ঞান দান করেছেন, সে তদনুযায়ী রাত-দিন আমল করে। আরেক ব্যক্তি হলো যাকে আল্লাহ অর্থ-সম্পদ দান করেছেন, সে রাত-দিন তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে।”

وعن ابن مسعود - رضي الله عنه- قال: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ قَرَأَ حَرْفًا مِنْ كِتَابِ اللهِ فَلَهُ بِهِ حَسَنَةٌ، وَالحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا، لاَ أَقُولُ الْم حَرْفٌ، وَلَكِنْ أَلِفٌ حَرْفٌ وَلاَمٌ حَرْفٌ وَمِيمٌ حَرْفٌ»

ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার কিতাবের একটি হরফ পাঠ করবে তার জন্য একটি নেকী, আর একটি নেকী দশ গুণ হবে। আমি এ কথা বলব না যে, আলিফ লাম মীম একটি হরফ, বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মীম একটি হরফ।”

কুরআন ধারণকারী দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জাহানেই সম্মানিত ও অগ্রগামী:

عن عمر بن الخطاب -رضي الله عنه-: أن النبي -صلى الله عليه وسلم- قال: «إِنَّ اللَّهَ يَرْفَعُ بِهَذَا الْقُرْآنِ أَقْوَامًا وَيَضَعُ بِهِ آخَرِينَ»

উমর ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আল্লাহ তা‘আলা এ কিতাবের (কুরআন) দ্বারা এক সম্প্রদায়কে সম্মানিত করেন, আর অন্য সম্প্রদায়কে অপদস্থ করেন।”

عن أبي مسعود الأنصاري البدري -رضي الله عنه-، أن رسول الله -صلى الله عليه وسلم- قال: «يَؤُمُّ الْقَوْمَ أَقْرَؤُهُمْ لِكِتَابِ اللهِ »

আবু মাসউদ আনসারী আল-বদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “জাতির নেতৃত্ব সে ব্যক্তি দিবে যে আল্লাহর কিতাব অধিক পাঠ করে (আল্লাহর কিতাব সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞাত)।”

وقال ابن عباس رضي الله عنهما: «كَانَ الْقُرَّاءُ أَصْحَابَ مَجْلِسِ عُمَرَ وَمُشَاوَرَتِهِ، كُهُولًا كَانُوا أَوْ شُبَّانًا»

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, “ক্বারীগণই (আলিমগণ) উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর পরামর্শ মজলিশে সভাসদ ও পরামর্শদাতা ছিলেন, চাই তারা বয়ঃবৃদ্ধ হোক কিংবা যুবক।”

عَنْ أَبِي مُوسَى الْأَشْعَرِيِّ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ مِنْ إِجْلَالِ اللَّهِ إِكْرَامَ ذِي الشَّيْبَةِ الْمُسْلِمِ، وَحَامِلِ الْقُرْآنِ غَيْرِ الْغَالِي فِيهِ وَالْجَافِي عَنْهُ، وَإِكْرَامَ ذِي السُّلْطَانِ الْمُقْسِطِ»

আবু মূসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহকে যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা দেওয়া হয়, যখন কেউ শুভ্র কেশধারী (বয়স্ক) মুসলিমকে সম্মানিত করে, অনুরূপভাবে যখন কেউ কুরআনের এমন হাফেযকে যে সম্মান করে, যে কুরআন নিয়ে বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি কোনোটাই করে না। তদ্রূপ যখন কেউ ন্যায়পরায়ণ ক্ষমতাশীনকে সম্মান প্রদর্শন করবে।”

عن أبي موسى الأشعري -رضي الله عنه- قال: قال رسول الله -صلى الله عليه وسلم-: «مَثَلُ المُؤْمِنِ الَّذِي يَقْرَأُ القُرْآنَ كَمَثَلِ الأُتْرُجَّةِ، رِيحُهَا طَيِّبٌ وَطَعْمُهَا طَيِّبٌ، وَمَثَلُ المُؤْمِنِ الَّذِي لاَ يَقْرَأُ القُرْآنَ كَمَثَلِ التَّمْرَةِ، لاَ رِيحَ لَهَا وَطَعْمُهَا حُلْوٌ، وَمَثَلُ المُنَافِقِ الَّذِي يَقْرَأُ القُرْآنَ مَثَلُ الرَّيْحَانَةِ، رِيحُهَا طَيِّبٌ وَطَعْمُهَا مُرٌّ، وَمَثَلُ المُنَافِقِ الَّذِي لاَ يَقْرَأُ القُرْآنَ كَمَثَلِ الحَنْظَلَةِ، لَيْسَ لَهَا رِيحٌ وَطَعْمُهَا مُرٌّ»

আবু মূসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কুরআন তিলাওয়াতকারী মু’মিনের উদাহরণ (উতরুজ্জা তথা) জাম্বীর ফলের মতন, এর গন্ধ ও স্বাদ দু’টোই সুস্বাদু। আর যে মু’মিন কুরআন তিলাওয়াত করে না তার উদাহরণ খেজুরের মত, যার সুগন্ধ না থাকলেও স্বাদ মিষ্ট। কুরআন তিলাওয়াতকারী মুনাফিকের উদাহরণ হলো সুগন্ধি ফুলের ন্যায়, এর গন্ধ খুবই সৌরভময়, কিন্তু স্বাদ তিক্ত। আর যে মুনাফিক কুরআন তিলাওয়াত করে না তার উদাহরণ হলো হানযালা (লেবু জাতীয় ফল) ফলের মত, তার কোনো গন্ধ নেই, আর এর স্বাদ হলো তিক্ত।”

এ হলো দুনিয়ার প্রতিদান,

কুরআন অনুযায়ী আমলকারীকে আখেরাতে মহাপ্রতিদান প্রদান করা হবে:

عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْمَاهِرُ بِالْقُرْآنِ مَعَ السَّفَرَةِ الْكِرَامِ الْبَرَرَةِ، وَالَّذِي يَقْرَأُ الْقُرْآنَ وَيَتَتَعْتَعُ فِيهِ، وَهُوَ عَلَيْهِ شَاقٌّ، لَهُ أَجْرَانِ»

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কুরআন সম্পর্কে অভিজ্ঞ ব্যক্তি সে সব ফেরেশতাদের সাথে থাকবে যারা আল্লাহর অনুগত, মর্যাদাবান ও লেখক। আর যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করে এবং তার জন্য কষ্টকর হওয়া সত্ত্বেও বারবার পড়ে সে ব্যক্তির জন্য রয়েছে দুটি পুরস্কার।”

وعن أبي أمامة الباهلي -رضي الله عنه- قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «اقْرَءُوا الْقُرْآنَ فَإِنَّهُ يَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ شَفِيعًا لِأَصْحَابِهِ»

আবু উমামা আল-বাহেলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, “তোমরা কুরআন তিলাওয়াত করো, কেননা কিয়ামতের দিন তার তার তিলাওয়াতকারীর জন্য শাফায়াতকারী হিসেবে আসবে।”[11]

কুরআনের ধারকবাহকগণ আখেরাতে সুউচ্চ মর্যাদায় ভূষিত হবেনঃ
যেমন হাদীসে এসেছে,

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَجْمَعُ بَيْنَ الرَّجُلَيْنِ مِنْ قَتْلَى أُحُدٍ فِي ثَوْبٍ وَاحِدٍ، ثُمَّ يَقُولُ: «أَيُّهُمْ أَكْثَرُ أَخْذًا لِلْقُرْآنِ؟»، فَإِذَا أُشِيرَ لَهُ إِلَى أَحَدِهِمَا قَدَّمَهُ فِي اللَّحْدِ»

জাবের ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদের শহীদগণের দু’ দু’ জনকে একই কাপড়ে (কবরে) একত্র করতেন। অতঃপর জিজ্ঞেস করতেন, তাঁদের উভয়ের মধ্যে কে কুরআন সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত? দু’জনের মধ্যে এক জনের দিকে ইশারা কর হলে তাকে কবরে আগে রাখতেন।

কুরআন ধারণকারীর কাছে যে পরিমাণ কুরআন রয়েছে সে অনুযায়ী জান্নাতের উচ্চ আসনে সমাসীন হবেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-

عن أبي أمامة الباهلي - رضي الله عنه- أن النبي -صلى الله عليه وسلم- قال: «يُقَالُ لِصَاحِبِ الْقُرْآنِ اقْرَأْ وَارْتَقِ وَرَتِّلْ كَمَا كُنْتَ تُرَتِّلُ فِي الدُّنْيَا، فَإِنَّ مَنْزِلَتَكَ عِنْدَ آخِرِ آيَةٍ تَقْرَؤُهَا»

আবু উমামা আল-বাহেলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “কুরআন বহনকারীকে কিয়ামতের দিনে বলা হবে তুমি কুরআন পড়তে থাক এবং উপরে উঠতে থাক, তারলীলসহকারে পড়তে থাক, যেমনিভাবে দুনিয়াতে তারলীলসহকারে তিলাওয়াত করতে। কেননা তোমার সর্বশেষ আসন হবে সেখানে তোমার আয়াত তিলাওয়াত শেষ হবে।”

নিঃসন্দেহে কুরআনের সংরক্ষণের এতো গুরুত্ব এর বিশেষ মর্যাদার জন্যই, কেননা এর তিলাওয়াতে রয়েছে অপরিসীম প্রতিদান। পূর্ববর্তী কিতাবসমূহে এ উম্মতের গুণাবলী হিসেবে উল্লেখ ছিল যে, আল্লাহ তা‘আলা তাদের (এ উম্মতের) কিতাব মানুষের অন্তরে সংরক্ষিত রাখবেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন,

﴿ وَمَا كُنتَ تَتۡلُواْ مِن قَبۡلِهِۦ مِن كِتَٰبٖ وَلَا تَخُطُّهُۥ بِيَمِينِكَۖ إِذٗا لَّٱرۡتَابَ ٱلۡمُبۡطِلُونَ ٤٨ بَلۡ هُوَ ءَايَٰتُۢ بَيِّنَٰتٞ فِي صُدُورِ ٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡعِلۡمَۚ وَمَا يَجۡحَدُ بِ‍َٔايَٰتِنَآ إِلَّا ٱلظَّٰلِمُونَ ٤٩ ﴾ [العنكبوت: ٤٨، ٤٩]

“আর আপনি তো এর পূর্বে কোনো কিতাব তিলাওয়াত করেন নি এবং আপনার নিজের হাতে তা লিখেন নি যে, বাতিলপন্থীরা এতে সন্দেহ পোষণ করবে। বরং যাদেরকে জ্ঞান দেওয়া হয়েছে, তাদের অন্তরে তা সুস্পষ্ট নিদর্শন। আর যালিমরা ছাড়া আমার আয়াতসমূহকে কেউ অস্বীকার করে না।” [সূরা আল-‘আনকাবূত, আয়াত ৪৮-৪৯]

আল্লাহ তা‘আলা এখানে ঘোষণা দিয়েছেন যে, তিনি এ কুরআন উলামাদের অন্তরে সংরক্ষিত রেখেছেন, নিন্মোক্ত হাদীসে কুদসীতে এর প্রমাণ মিলে,

«إِنَّمَا بَعَثْتُكَ لِأَبْتَلِيَكَ وَأَبْتَلِيَ بِكَ، وَأَنْزَلْتُ عَلَيْكَ كِتَابًا لَا يَغْسِلُهُ الْمَاءُ، تَقْرَؤُهُ نَائِمًا وَيَقْظَانَ...... »

“আর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, নিশ্চয় আমি আপনাকে পরীক্ষা করা ও আপনার দ্বারা সৃষ্টিকুলকে পরীক্ষা করা এ দু’উদ্দেশ্যে আপনাকে জগতে প্রেরণ করেছি এবং আমি আপনার উপর এমন কিতাব নাযিল করেছি যা পানি ধুয়ে মুছে ফেলতে পারে না”।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে ব্যক্তি কুরআনের কিছুই মুখস্থ করেনি তাকে বিরান (ধ্বংস প্রাপ্ত) ঘরের সাথে তুলনা করেছেন।

عن ابن عباس -رضي الله عنهما- قال: قال رسول الله -صلى الله عليه وسلم-: «إِنَّ الَّذِي لَيْسَ فِي جَوْفِهِ مِنَ الْقُرْآنِ شَيْءٌ كَالْبَيْتِ الْخَرِبِ».

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যার অন্তরে কুরআনের কিছুই নেই তা একটা বিরান (ধ্বংস প্রাপ্ত) ঘরের মত।”

সাধারণ মুসলিমের জন্য কুরআনের কতটুকু মুখস্ত করা প্রয়োজন?
সাধারণভাবে যে কোনো মুসলিমের জন্য সম্পূর্ণ কুরআন মুখস্থ করা মুস্তাহাব, তবে দৈনন্দিন জীবনে নামাজ ও অন্যান্য ইবাদত সহীহ হওয়ার জন্য যতটুকু প্রয়োজন সে পরিমাণ মুখস্থ করা ফরয বা অত্যাবশ্যক। আল্লামাহ ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেন, “সম্পূর্ণ কুরআন মুখস্থ করা, সব অর্থ বুঝা, এবং সব হাদীস জানা প্রত্যেক মুসমানের জন্য ওয়াজিব নয়। কিন্তু নিত্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ হিফয করা, অর্থ বুঝা ও হাদীস জানা ফরয”।

কুরআনের পাঠক এবং ধারক বাহকদের যেসব বিষয়ে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবেঃ
প্রথমত: সে যে কাজ করছে সে কাজে একমাত্র আল্লাহর জন্যই নিষ্ঠা সহকারে হওয়া, তাতে দুনিয়ার কোনো স্বার্থ না থাকা, কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿ مَن كَانَ يُرِيدُ ٱلۡحَيَوٰةَ ٱلدُّنۡيَا وَزِينَتَهَا نُوَفِّ إِلَيۡهِمۡ أَعۡمَٰلَهُمۡ فِيهَا وَهُمۡ فِيهَا لَا يُبۡخَسُونَ ١٥ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ لَيۡسَ لَهُمۡ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ إِلَّا ٱلنَّارُۖ وَحَبِطَ مَا صَنَعُواْ فِيهَا وَبَٰطِلٞ مَّا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٦ ﴾ [هود: ١٦-١٥]

“যে ব্যক্তি দুনিয়ার জীবন ও তার জৌলুস কামনা করে, আমরা সেখানে তাদেরকে তাদের আমলের ফল পুরোপুরি দিয়ে দেই এবং সেখানে তাদেরকে কম দেয়া হবে না। এরাই তারা, আখিরাতে যাদের জন্য আগুন ছাড়া আর কিছুই নেই এবং তারা সেখানে যা করে তা বরবাদ হয়ে যাবে আর তারা যা করত, তা সম্পূর্ণ বাতিল।” [সূরা হূদ, আয়াত ১৫-১৬]

﴿ مَن كَانَ يُرِيدُ حَرۡثَ ٱلۡأٓخِرَةِ نَزِدۡ لَهُۥ فِي حَرۡثِهِۦۖ وَمَن كَانَ يُرِيدُ حَرۡثَ ٱلدُّنۡيَا نُؤۡتِهِۦ مِنۡهَا وَمَا لَهُۥ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِن نَّصِيبٍ ٢٠ ﴾ [الشورا: ٢٠]

“যে আখিরাতের ফসল কামনা করে, আমরা তার জন্য তার ফসলে প্রবৃদ্ধি দান করি, আর যে দুনিয়ার ফসল কামনা করে আমরা তাকে তা থেকে কিছু দেই এবং আখিরাতে তার জন্য কোনো অংশই থাকবে না।” [সূরা আশশুরা, আয়াত ২০]

শেষের ফরিয়াদঃ
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা আমাদের মহাগ্রন্থ আল কুরআনের পঠন, পাঠন, অনুধাবন এবং বাস্তব জীবনে তা পূর্ণ অনুশীলনের তাওফিক দান করুন। এই গ্রন্থের আলোয় আলোকিত করুন আমাদের ইহপারকালীন জীবন।

মন্তব্য ১৭ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৭) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই মে, ২০২০ সকাল ১১:৩০

ভুয়া মফিজ বলেছেন: গুরুত্বপূর্ণ পোষ্ট।

১০ ই মে, ২০২০ সকাল ৯:৩৪

নতুন নকিব বলেছেন:



জজাকুমুল্লাহ। কথা ঠিক বলেছেন, এই পোস্ট আমাদের জন্য অতিব গুরুত্বপূর্ণ হলেও সকলের জন্য নয়। কারও কারও নিকট এসব বিষয় স্রেফ খেল তামাশা।

অনেক ভালো থাকুন, দুআ নিরন্তর।

২| ০৭ ই মে, ২০২০ সকাল ১১:৫৫

চাঁদগাজী বলেছেন:



আপনি আরবী ও ইংরেজী বুঝেন?

১০ ই মে, ২০২০ সকাল ৯:৪৬

নতুন নকিব বলেছেন:



পোস্টের সাবজেক্ট এর সাথে যায় না এমন অপ্রাসঙ্গিক এবং পারসোনাল বিষয়ের মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকলে খুশি হব। কারণ, আপনার সাথে পারসোনাল কনভারসেশন চালিয়ে শান্তি নেই। দু'এক কথায় আপনি নির্ঘাত চটে যান। দু'একবার মন্তব্য করেই আপনি ক্ষেপে গেলে আশ্চর্য্য হওয়ার কিছু নেই।

ধর্মীয় পোস্টে আপনার উল্টোপাল্টা আচরণ সুবিদিত, যা খুবই আপত্তিকর। এই কারণে, আপনার এই পোস্টেও আসার কথা নয়। ধর্মীয় পোস্ট দেখে এসেছেন হয়তো একটু মজা নিতে। কিন্তু দুঃখিত! আপনি একটু পরেই হয়তো আমাকে ম্যাওপ্যাও, প্রশ্ন ফাঁস জেনারেশন, ডোডো পাখি, জিংজিং, মরুচারী গুহাবাসী ইত্যাদি উপাধিতে বিভূষিত করে সম্মানিত করবেন!

দুঃখিত! আপনার সেই অযস্র সম্মান আমি নিতে পারছি না। আপনার উপর্যুপরি গালি শোনার আগেই ক্ষান্ত দিচ্ছি। ক্ষমা চাচ্ছি এই অপ্রিয় কথাগুলো বলার জন্য।

ভালো থাকুন অনেক।

৩| ০৭ ই মে, ২০২০ দুপুর ১:৪২

রাজীব নুর বলেছেন: এত বড় পোষ্ট দেন কেন। একটু ছোট দিলে কি হয়!

১০ ই মে, ২০২০ সকাল ৯:৪৭

নতুন নকিব বলেছেন:



সেটাই, বড় হয়ে যায়। পরবর্তীতে ছোট করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

শুকরিয়া।

৪| ০৭ ই মে, ২০২০ দুপুর ২:২৩

নেওয়াজ আলি বলেছেন: বাংলা অর্থসহ পড়ি কোরান। আরো কম করে লিখবেন

১০ ই মে, ২০২০ সকাল ৯:৪৯

নতুন নকিব বলেছেন:



জ্বি, শুকরিয়া। অর্থসহ কুরআন পাঠ করা খুবই প্রয়োজন। চালিয়ে যান। আল্লাহ পাক কবুল করুন।

পরবর্তীতে ছোট করে পোস্ট দেয়ার চেষ্টা থাকবে ইনশাআল্লাহ।

৫| ০৭ ই মে, ২০২০ বিকাল ৫:৫৬

জাফরুল মবীন বলেছেন: কুরআনের বিষ্ময় আমি হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি।

১০ ই মে, ২০২০ সকাল ৯:৫২

নতুন নকিব বলেছেন:



কুরআনের বিষ্ময় আমি হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি।

-মা-শাআল্লাহ। এই বিষয়ে আপনার বাস্তব কোনো অভিজ্ঞতা, পর্যবেক্ষন বা উপলব্ধি দয়া করে যদি বিস্তারিত লিখেন, আমরাও জেনে উপকৃত হতে পারবো ইনশাআল্লাহ।

৬| ০৭ ই মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:১০

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: চমৎকার পোষ্ট। অসাধারণ। আল-কোরআন চলার পথে প্রধান নির্দেশিকা। ইসলাম কমপ্লিট কোড অফ লাইফ।
আপনাকে অশেষ কৃতজ্ঞতা এমন একখানি পোস্টের জন্য।

১০ ই মে, ২০২০ সকাল ৯:৫৩

নতুন নকিব বলেছেন:



আলহামদুলিল্লাহ। দারুন মন্তব্যে অভিনন্দন।

কল্যানের দুআ সবসময়।

৭| ০৮ ই মে, ২০২০ সকাল ৭:৫৪

রাফা বলেছেন: আল-কোরআন নিয়ে লিখে শেষ করা যাবেনা। কোরআনে ৬ হাজার আয়াতের মধ্যে এক হাজারেরও অধিক আয়াত আছে বিজ্ঞান নিয়ে।কোরআনকে প্রথম শ্রেনী থেকে দ্বাদশ শ্রেনী পর্যন্ত বিভক্ত করে বাধ্যতা মুলক করে দেওয়া উচিত।দশ পারা করে।ইংরেজি মাধ্যমে ট্রান্সেলট করা কোরআন প্রচলন করে দেওয়া উচিত বলে মনে করি।

কোরআন'কে প্যাকেট করে সকাল বিকাল সালাম করা'কে আমি কোনভাবেই সন্মান করা মনে করিনা।বরং বাংলা অনুবাদ ও অর্থ সহ অধিকতর পড়ার সুযোগ করে দেওয়া উচিত।যাতে অন্ততপক্ষে কোরআনের দোহাই দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা না যায়।

কোরআন নাজিল করা হয়েছে,কিন্তু মখলুকাত নয় বলতে কি বুজিয়েছেন যদি একটু ব্যাখ্যা করতেন?

পরিশেষে আল-কোরআন রক্ষার দায়িত্ব যেহেতু সয়ং আল্লাহ তায়লা নিজেই নিয়েছেন শুধু এই কারনটাই যথেষ্ট এটা বাধ্যতামুলক করা।

ধন্যবাদ,ন.নকিব।

১০ ই মে, ২০২০ সকাল ৯:৫৬

নতুন নকিব বলেছেন:



দীর্ঘ মূল্যবান মন্তব্যে শুকরিয়া।

কোরআনকে প্রথম শ্রেনী থেকে দ্বাদশ শ্রেনী পর্যন্ত বিভক্ত করে বাধ্যতা মুলক করে দেওয়া উচিত।দশ পারা করে।ইংরেজি মাধ্যমে ট্রান্সেলট করা কোরআন প্রচলন করে দেওয়া উচিত বলে মনে করি।

-সঠিক পরামর্শ। সহমত।

কোরআন'কে প্যাকেট করে সকাল বিকাল সালাম করা'কে আমি কোনভাবেই সন্মান করা মনে করিনা।বরং বাংলা অনুবাদ ও অর্থ সহ অধিকতর পড়ার সুযোগ করে দেওয়া উচিত।যাতে অন্ততপক্ষে কোরআনের দোহাই দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা না যায়।

-আপনার অনুভূতির প্রতি পরিপূর্ণভাবে একমত।

১০ ই মে, ২০২০ সকাল ১০:৪৮

নতুন নকিব বলেছেন:







কোরআন নাজিল করা হয়েছে,কিন্তু মখলুকাত নয় বলতে কি বুজিয়েছেন যদি একটু ব্যাখ্যা করতেন?

-উপরোল্লেখিত প্রশ্নটির জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। এটি আল কুরআনের প্রতি বিশ্বাসের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রসঙ্গ।

কুরআন সৃষ্টি ও লিখিত নয়। বরং আল্লাহ তাআ'লার সত্তার অবিচ্ছেদ্য অংশ বা সিফাত। এটা আল্লাহ তাআ'লার বাণী বা কালাম।

কুরআন আল্লাহ তাআ'লার কালাম। তা আল্লাহ তাআ'লার সৃষ্টি জগতের অন্তর্ভুক্ত নয় বরং এটি তার যাত বা স্বত্বার এক অবিচ্ছেদ্য সিফাত বা বৈশিষ্ট্য। সিফাত বা গুণ-বৈশিষ্ট্য কখনো যাত বা স্বত্বা থেকে আলাদা হয় না। আল্লাহ তাআ'লার কোনো গুণ কখনো তার সৃষ্টি হতে পারে না, বরং তার যাত বা স্বত্বা যেমন অনাদি ও অবিনশ্বর তাঁর প্রতিটি সিফাতও (যেমন কথা বলা, দেখা, শোনা, হাত, চোখ ইত্যাদি) অনুরূপ।

সুতরাং আল্লাহ তাআ'লার কালাম বা কথাকে আল্লাহ তাআ'লার অন্যান্য সৃষ্টি জগতের মত একটি সৃষ্টি বস্তু বলার মানে হল, আল্লাহ তাআ'লার কথা বলার সিফাতকে অস্বীকার করা।

আবার আল্লাহ তাআ'লার কালামকে সৃষ্টি বলা হলে তাতে তার অর্থ হল, আল্লাহ তাআ'লার সকল সৃষ্টি যেমন এক দিন ধ্বংস হয়ে যাবে আল্লাহ তাআ'লার কালামও একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে! নাউযুবিল্লাহ। এটি একটি কুফরি বিশ্বাস- তাতে কোন সন্দেহ নাই।
যা হোক, 'কুরআন আল্লাহ তাআ'লার কালাম এবং তা আল্লাহ তাআ'লার সৃষ্টি নয়।'

এ ব্যাপারে সালাফদের মাঝে কোন দ্বিমত ছিল না এবং এখনো হকপন্থীদের মাঝে কোন দ্বিমত নেই। আলহামদুলিল্লাহ।

ইতিহাস বলে, সর্বপ্রথম কতিপয় বাতিল ফিরকা ও বিদআতি গোষ্ঠী যেমন মুতাযিলা, জাহমিয়া এবং আহলুল কালাম বা যুক্তিবিদরা ‘কুরআন আল্লাহ তাআ'লার সৃষ্টি’ বলে বিতর্ক সৃষ্টি করে। এ মতবাদ দ্বারা তারা আল্লাহ তাআ'লার সকল সিফাতকে অস্বীকার করতে চায়।

এ মতবাদকে কেন্দ্র করে আব্বাসীয় ও উমাইয়া খেলাফত চলাকালীন সময় মুসলিমদের মাঝে এক চরম ফিতনা-ফ্যাসাদের
সৃষ্টি হয়। বিদআতিদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আব্বাসীয় খলীফা মামুন (আব্বাসীয় খেলাফতের ৭ম খলীফা হারুনুর রশিদ এর ছেলে। তার প্রকৃত নাম আব্দুল্লাহ - মৃত্যু ২১৮ হিজরি) এই মতবাদে বিশ্বাসী হওয়ায় সমগ্র মুসলিম বিশ্বে তা ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করে এবং যারা এ মতবাদকে গ্রহণ করতে রাজি হয়নি তাদেরকে অনেক জুলুম-নির্যাতন করে। বিরোধী মতের সকল কাজী বা বিচারকদেরকে পদচ্যুত করে। আহলুস সুন্নাহর মহান ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহ. সহ অনেক আলেমের প্রতি নিষ্ঠুর অত্যাচার চালায়। অবশেষে খলীফা মুতাওয়াক্কিল ক্ষমতায় এসে এই ফিতনার সমাপ্তি ঘটান এবং জেলবন্দিদেরকে বের করে আনেন।

‘কুরআন আল্লাহ তাআ'লার সৃষ্টি নয়’- এ ব্যাপারে ইসলামী স্কলারদের অভিমত:

১. ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-

والقرآن كلام الله، ليس بمخلوق، فمن زعم أن القرآن مخلوق فهو جهمي كافر ومن زعم أن القرآن كلام الله عز وجل ووقف ولم يقل مخلوق ولا غير مخلوق: فهو أخبث من الأول،

'কুরআন আল্লাহ কালাম (বাণী); মাখলুক বা সৃষ্ট নয়। যে ব্যক্তি মনে করে যে, কুরআন আল্লাহর মাখলুক (সৃষ্ট) সে জাহমী-কাফির। আর যে ব্যক্তি কুরআন আল্লাহর কালাম বলে চুপ থাকে- মাখলুক না কি মাখলুক নয় সে ব্যাপারে কোন মন্তব্য করে না- সে ১ম ব্যক্তির থেকেও নিকৃষ্ট।'

২. আক্কিদাতুত তাহাবীয়া গ্রন্থের ভাষ্যকার ইমাম ইবনে আব্দুল ইয আল হানাফি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-

فأهل السنة كلهم من أهل المذاهب الأربعة وغيرهم من السلف والخلف متفقون على أن كلام الله غير مخلوق

'চার মাযহাবসহ পূর্বসূরি ও পরবর্তী মনিষীদের সকলেই একমত যে, আল্লাহ তাআ'লার কালাম মাখলুক নয়।'

৩. এই বিষয়ে ইমাম ইবনে তাইয়িমা রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর অত্যন্ত দৃঢ়তাপূর্ণ বক্তব্য রয়েছে। তিনি ‘কুরআন আল্লাহ তাআ'লার সৃষ্টি’ মতবাদে বিশ্বাসীদেরকে অত্যন্ত শক্তিশালী ভাষায় জবাব দিয়েছেন।

৪. শায়খ হাফেয আল হাকামী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-

'কুরআন প্রকৃত অর্থেই আল্লাহ তাআ'লার কালাম বা বাণী। অক্ষরসমূহ এবং তার অর্থ উভয়ই আল্লাহ তাআ'লার পক্ষ থেকে এসেছে। এ নয় যে, আল্লাহ তাআ'লার কালাম বলতে শুধু কুরআনের শব্দগুলোকে বুজায়। এমনিভাবে শব্দ ছাড়া শুধু অর্থগুলোর নাম আল্লাহ তাআ'লার কালাম নয়। আল্লাহ তা’আলা কুরআনের মাধ্যমে কথা বলেছেন এবং তাঁর নবীর উপর অহি আকারে তা নাযিল করেছেন। মুমিনগণ তা বিশ্বাস করেছে।'

সুতরাং আঙ্গুলের মাধ্যমে কুরআন লিখা, জবানের মাধ্যমে তা তেলাওয়াত করা, অন্তরের মাধ্যমে তা মুখস্থ করা, কান দিয়ে শুনা এবং চোখ দিয়ে দেখলেই তা আল্লাহ তাআ'লার কালাম থেকে বের হয়ে যায় না। আঙ্গুল, কালি, কলম এবং কাগজ এগুলোর সবই আল্লাহ তাআ'লার সৃষ্টি। কিন্তু এসব দিয়ে যা লেখা হয়েছে তা সৃষ্টি নয়। ঠিক তেমনি জবান এবং আওয়াজ আল্লাহ তাআ'লার সৃষ্টি। কিন্তু জবান দিয়ে তা তেলাওয়াত করা হচ্ছে তা মাখলুক তথা সৃষ্টি নয়। বক্ষসমূহ আল্লাহ তাআ'লার সৃষ্টি, কিন্তু তাতে যে কুরআন সংরক্ষিত আছে, তা মাখলুক নয়। কানসমূহ আল্লাহ তাআ'লার সৃষ্টি কিন্তু কান দিয়ে কুরআন আমরা শুনছি, তা মাখলুক নয়।

পবিত্র কুরআনে বর্ণিত বিষয় সংশ্লিষ্ট কতিপয় আয়াতঃ

১. আল্লাহ তা’আলা বলেন,

إِنَّهُ لَقُرْآنٌ كَرِيمٌ فِي كِتَابٍ مَّكْنُونٍ

'নিশ্চয় এটা সম্মানিত কুরআন, যা আছে সুরক্ষিত কিতাবে।' -সূরা আল ওয়াকিয়া, আয়াত-৭৭-৭৮

২. আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা আরও বলেন,

وَاتْلُ مَا أُوحِيَ إِلَيْكَ مِن كِتَابِ رَبِّكَ لَا مُبَدِّلَ لِكَلِمَاتِهِ وَلَن تَجِدَ مِن دُونِهِ مُلْتَحَدًا

'আপনার প্রতি আপনার পালনকর্তার যে কিতাব প্রত্যাদিষ্ট করা হয়েছে তা পাঠ করুন। তাঁর বাক্য পরিবর্তন করার কেউ নাই। তাঁকে ব্যতিত আপনি কখনই কোন আশ্রয়স্থল পাবেন না।' -সুরা কাহাফ, আয়াত-২৭

৩. তিনি আরও বলেন,

وَإِنْ أَحَدٌ مِّنَ الْمُشْرِكِينَ اسْتَجَارَكَ فَأَجِرْهُ حَتَّى يَسْمَعَ كَلاَمَ اللّهِ

'আর মুশরিকদের কেউ যদি আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তবে তাকে আশ্রয় দিবেন, যাতে সে আল্লাহর কালাম শুনতে পায়।' -সূরা আততাওবা, আয়াত- ০৬

সুতরাং, কেউ যদি বলে যে, কুরআন বা কুরআনের কোন অংশ মাখলুক, তাহলে সে কাফির। তার কুফরি এত বড় যে, তাকে সম্পূর্ণ ইসলাম থেকে বের করে দিবে। কেননা কুরআন হচ্ছে আল্লাহ সুবহানাহু ওয় তাআ'লার কালাম। তা আল্লাহ সুবহানাহু ওয় তাআ'লার পক্ষ থেকে এসেছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয় তাআ'লার কাছে তা পুনরায় ফেরত যাবে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয় তাআ'লার কালাম তাঁর সিফাতের অন্তর্ভুক্ত।

সুতরাং, যে বলবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয় তাআ'লার কোন সিফাত বা গুণ মাখলুক, সে কাফের ও মুরতাদ। তাকে তাওবা করে পুনরায় ইসলামে ফেরত আসতে হবে। -উত্তর প্রদানে সহায়তা নেয়া হয়েছে জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব এর ওয়েব সাইট থেকে। কৃতজ্ঞতা তাদের প্রতি।

আরও বিস্তারিত দেখতে পারেন-

কুরআন কি আল্লাহর সৃষ্টি

৮| ১০ ই মে, ২০২০ সকাল ১১:০২

রাফা বলেছেন: Oops! That page can’t be found ..।লিংক কাজ করছেনা।তার অর্থ দাড়াচ্ছে সকল কিছু ধ্বংস হওয়ার পুর্বে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার কালাম উঠিয়ে নিবেন। এটা মনে ঠিকই জানা আমাদের ?

ধন্যবাদ,ন.নকিব -বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করে দেওয়ার জন্য।আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন।

১০ ই মে, ২০২০ সকাল ১১:৫৭

নতুন নকিব বলেছেন:



পুনরায় এসে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে দুআ রেখে যাওয়ায় আপনার প্রতি শ্রদ্ধা অনিঃশেষ। পরিবার-পরিজন সকলকে নিয়ে আল্লাহ পাক ভালো রাখুন আপনাকে। কল্যানের দুআ সবসময়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.