নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

নতুন নকিব

যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।

নতুন নকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মিরাজ এবং সে রাতে তাঁর দেখা কিছু অপরাধীর শাস্তিঃ

১৪ ই অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১২:৩৪

ছবিঃ অন্তর্জাল।

রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মিরাজ এবং সে রাতে তাঁর দেখা কিছু অপরাধীর শাস্তিঃ

মিরাজ বা স্বশরীরে উর্ধ্বারোহন অথবা উর্ধ্বগমন রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবনের বিস্ময়কর মুজিজাগুলোর অন্যতম। মিরাজ শব্দটি 'আল আরজ' মূল ধাতু থেকে উদ্ভূত। এর অর্থ- উর্ধ্বারোহন বা উর্ধ্বগমন। মিরাজের বিষয়টি পবিত্র কুরআনের আয়াত দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমানিত বিধায় বিস্ময়কর এই ঘটনাকে অবিশ্বাস করার নূন্যতম কোনো সুযোগ নেই। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা কুরআনে হাকিমে ইরশাদ করেন-

سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَى بِعَبْدِهِ لَيْلاً مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ البَصِيرُ

পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রি বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম (বাইতুল্লাহ শরিফ, মক্কাতুল মুকাররমা) থেকে মসজিদে আকসা (বাইতুল মুকাদ্দাস, জেরুজালেম, ফিলিস্তিন) পর্যান্ত- যার চার দিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি যাতে আমি তাঁকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই। নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল। -সূরা ইসরা, আয়াত-০১

Glory to ((Allah)) Who did take His servant for a Journey by night from the Sacred Mosque to the farthest
Mosque, whose precincts We did bless,- in order that We might show him some of Our Signs: for He is the One Who heareth and seeth (all things).

মিরাজের পরিভাষাগত অর্থঃ

পরিভাষায় মিরাজ হলো, মহানবী হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক সশরীরে সজ্ঞানে জাগ্রত অবস্থায় হজরত জিবরাইল (আ.) ও হজরত মিকাইল (আ.) এর সঙ্গে বিশেষ বাহন বোরাকের মাধ্যমে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা হয়ে প্রথম আসমান থেকে একে একে সপ্তম আসমান এবং সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত এবং সেখান থেকে একাকী রফরফ বাহনে আরশে আজিম পর্যন্ত ভ্রমণ; মহান রাব্বুল আলামিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ লাভ ও জান্নাত-জাহান্নাম পরিদর্শন করে পুনরায় পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তন করে চলে আসা।

মিরাজকে 'ইসরা' বলা হয়েছে কুরআনের ভাষায়ঃ

মিরাজ বুঝাতে কুরআনে হাকিমে যে শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে তা হচ্ছে 'ইসরা'। 'ইসরা' অর্থ রাত্রিকালীন ভ্রমণ। যেহেতু নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মিরাজ রাত্রিকালে হয়েছিল, তাই এটিকে 'ইসরা' বলা হয়। বিশেষত বায়তুল্লাহ শরিফ থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত সফরকে ইসরা বলা হয়ে থাকে।

যখন যেভাবে সংঘটিত হয়েছিল মিরাজঃ

নবুওয়াতের ১১তম বছরের (৬২০ খ্রিষ্টাব্দ) রজব মাসের ২৬ তারিখ দিবাগত রাতে সংঘটিত হয়েছিল পবিত্র মিরাজ। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বয়স সে সময় ৫১ বছর। প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রথমে কাবা শরিফ থেকে জেরুজালেমে অবস্থিত বায়তুল মুকাদ্দাস বা মসজিদুল আকসায় গমন করেন এবং সেখানে তিনি নবীদের জামায়াতে ইমামতি করেন। অতঃপর তিনি বোরাক নামক বিশেষ বাহনে আসীন হয়ে ঊর্ধ্বলোকে গমন করেন। সফরসঙ্গী জিবরাইল আলাইহিস সালামকে সাথে নিয়ে সিদরাতুল মুনতাহায় উপনীত হন। অতঃপর সেখান থেকে, অনন্ত শুন্যতার সেই অচিন্ত্যনীয় নূরের জগতে তাঁর একাকি পথচলার পালা। কারণ, নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতাদেরও এরপরে আর উপরে যাওয়ার অনুমতি নেই যে! তাই আল্লাহ তাআ'লার হাবিব একাকি রওনা দিলেন। সিদরাতুল মুনতাহা থেকে। এই পর্যায়ে তাঁর বাহনেও পরিবর্তন আসে। বোরাকের চেয়ে আরও উর্ধ্বগতির, আরও বিমলিন আলোক প্রভায় দেদীপ্যমান, আরও তেজদীপ্ত, আরও জাঁকজমকপূর্ণ রফরফ নামক বিশেষ বাহন আসে তাকে বহন করে নিয়ে যাওয়ার জন্য। মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার দীদার লাভের উদ্দেশ্যে রফরফে আসীন হয়ে তিনি পৌঁছে যান আরশে আজীমে। মোলাকাতলাভে ধন্য হন কুল কায়েনাতের স্রষ্টার। মহান মালিকের দীদারলাভে তৃপ্ত-পরিতৃপ্ত-প্রশান্ত হয় তাঁর পিপাসার্ত অন্তর।

মিরাজ হয়েছিল সশরীরে এবং প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জাগ্রত অবস্থায়ঃ

মিরাজ সংঘটিত হয়েছিল সশরীরে এবং প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জাগ্রত অবস্থায়। এর প্রকৃষ্ট প্রমাণ হচ্ছে- কাফের, মুশরিক ও মুনাফিকদের মিরাজের ঘটনাকে অবিশ্বাস করা এবং এ ঘটনাকে অস্বীকৃতি জানানো। যদি আধ্যাত্মিক বা রুহানিভাবে অথবা স্বপ্নযোগে মিরাজের ঘটনা সংঘটিত হওয়ার কথা বলা হতো, তাহলে তাদের অবিশ্বাস করার কোনো কারণ ছিল না। স্বাভাবিকভাবেই তারা এটিকে মেনে নিতেন। কারণ, তখন তাদের কাছে মনে করা স্বাভাবিক ছিল যে, স্বপ্নে তো মানুষ অবিশ্বাস্য, অলৌকিক বা অসম্ভব কোনো কাজ করার ঘটনা দেখতেই পারে। সুতরাং, এটিও এমনই একটি ঘটনা মাত্র। কিন্তু তাদের অবিশ্বাস এবং অস্বীকারের ঘটনা প্রমান করে যে, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্বশরীরে জাগ্রত অবস্থায় মিরাজকে তারা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি।

পবিত্র কুরআন এবং সহি হাদিসে মিরাজ প্রসঙ্গঃ

মিরাজের বিবরণ পবিত্র কুরআনের সুরা নাজম এবং সুরা ইসরার পূর্বোক্ত আয়াতে বিবৃত হয়েছে। হাদিস শরিফ, বুখারি শরিফ, মুসলিম শরিফ, সিহাহ সিত্তাসহ অন্যান্য কিতাবে এই ইসরা ও মিরাজের বিষয়টি নির্ভরযোগ্য বিশুদ্ধ সূত্রে বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে। সূরা নাজমে আল্লাহ তাআলা বলেন:

وَالنَّجْمِ إِذَا هَوَى

‘শপথ নক্ষত্রের যখন তা বিলীন হয়।

By the Star when it goes down,-

مَا ضَلَّ صَاحِبُكُمْ وَمَا غَوَى

তোমাদের সাথি (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিপথগামী হননি এবং বিভ্রান্ত হননি।

Your Companion is neither astray nor being misled.
(
وَمَا يَنطِقُ عَنِ الْهَوَى

এবং প্রবৃত্তির তাড়নায় তিনি নিজে থেকে কোনো কথা বলেন না।

Nor does he say (aught) of (his own) Desire.

إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَى

(বরং তিনি যা বলেন) তা প্রদত্ত ওহি (ভিন্ন অন্য কিছু) নয়।

It is no less than inspiration sent down to him:

عَلَّمَهُ شَدِيدُ الْقُوَى

তাকে শিখিয়েছেন মহাশক্তিধর (জিবরাইল আ.)।

He was taught by one Mighty in Power,

ذُو مِرَّةٍ فَاسْتَوَى

তিনি (জিবরাইল আ.) পাখাবিশিষ্ট, তিনি স্থিত হয়েছেন।

Endued with Wisdom: for he appeared (in stately form);

وَهُوَ بِالْأُفُقِ الْأَعْلَى

উর্ধ্ব দিগন্তে,

While he was in the highest part of the horizon:

ثُمَّ دَنَا فَتَدَلَّى

অতঃপর নিকটবর্তী হল ও ঝুলে গেল।

Then he approached and came closer,

فَكَانَ قَابَ قَوْسَيْنِ أَوْ أَدْنَى

তারপর হলো দুই ধনুকের প্রান্তবর্তী বা আরও নিকট।

And was at a distance of but two bow-lengths or (even) nearer;

فَأَوْحَى إِلَى عَبْدِهِ مَا أَوْحَى

পুনরায় তিনি ওহি করলেন তাঁর বান্দার প্রতি যা তিনি ওহি করেছেন।

So did ((Allah)) convey the inspiration to His Servant- (conveyed) what He (meant) to convey.

مَا كَذَبَ الْفُؤَادُ مَا رَأَى

রসূলের অন্তর মিথ্যা বলেনি যা সে দেখেছে।

The (Prophet's) (mind and) heart in no way falsified that which he saw.

أَفَتُمَارُونَهُ عَلَى مَا يَرَى

তোমরা কি সন্দেহ করছ তাকে, যা তিনি দেখেছেন সে বিষয়ে।

Will ye then dispute with him concerning what he saw?

وَلَقَدْ رَآهُ نَزْلَةً أُخْرَى

আর অবশ্যই দেখেছেন তিনি তাকে দ্বিতীয় অবতরণ স্থলে;

For indeed he saw him at a second descent,

عِندَ سِدْرَةِ الْمُنْتَهَى

সিদরাতুল মুন্তাহার নিকটে,

Near the Lote-tree beyond which none may pass:

عِندَهَا جَنَّةُ الْمَأْوَى

তার নিকটেই জান্নাতুল মাওয়া।

Near it is the Garden of Abode.

إِذْ يَغْشَى السِّدْرَةَ مَا يَغْشَى

যখন ঢেকে গেল সিদরা যা ঢেকেছে;

Behold, the Lote-tree was shrouded (in mystery unspeakable!)

مَا زَاغَ الْبَصَرُ وَمَا طَغَى

তাঁর দৃষ্টিবিভ্রম হয় নি এবং সীমালংঘনও করেনি।

(His) sight never swerved, nor did it go wrong!

لَقَدْ رَأَى مِنْ آيَاتِ رَبِّهِ الْكُبْرَى

অবশ্যই তিনি দেখেছেন তাঁর রবের বড় বড় নিদর্শনসমূহ।’ -সুরা আন নাজম, আয়াত: ১-১৮

For truly did he see, of the Signs of his Lord, the Greatest!

রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিরাজ রজনীতে যেসব অপরাধীর শাস্তি প্রত্যক্ষ করেনঃ

মিরাজ রজনীতে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নানা শ্রেণির অপরাধীর করুণ পরিণতি বা শাস্তি প্রত্যক্ষ করেন, যার বিবরণ বিশ্বস্ত সূত্রযোগে কুতুবে হাদিস এবং সীরাত গ্রন্থগুলোতে বিদ্যমান। এখানে আমরা রসূলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রত্যক্ষ করা কয়েক শ্রেণির জঘন্য পাপীদের শাস্তি স্বয়ং প্রিয় নবীজীর জবানীতে হাদিস থেকে শুনবো ইনশাআল্লাহ।

সুদখোরদের ভয়ঙ্কর যে শাস্তি প্রত্যক্ষ করলেনঃ

হযরত সামুরা বিন জুন্দুব রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বর্ণনা করেছেন, হযরত নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘মিরাজ রজনীতে আমি দেখতে পেলাম যে, একটি রক্তের নদী প্রবাহিত হচ্ছে। তার মধ্যে জনৈক ব্যক্তি হাবুডুবু খাচ্ছে। লোকটি মাঝে মাঝে সাতরে তীরে আসার চেষ্টা করলে তীরে দন্ডায়মান এক ব্যক্তি তার প্রতি প্রস্তর নিক্ষেপ করে তাকে পুনরায় নদীর দিকে তাড়িয়ে দিচ্ছে। তার এই অবস্থা দেখে আমি জিব্রাইল আলাইহিস সালামকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, এ কোন ব্যক্তি? জিবরাইল আলাইহিস সালাম বললেন, এ ব্যক্তি আপনার সুদখোর উম্মত।’ -বুখারী

সুদখোরদের করুন পরিনতি বর্ণনায় কিছু হাদিসঃ

হযরত আবু হুরাইরা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘সুদখোর ধ্বংস প্রাপ্তদের মধ্যে পরিগণিত।’ -মুত্তাফাকুন আলাইহি

এই হাদিসে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কতগুলি বিষয়কে মানুষের ইহকাল ও পরকাল ধ্বংসকারী ‘কবীরা গুণাহ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। সুদ তার মধ্যে অন্যতম।

হযরত ইবনে মাসউদ রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বর্ণনা করেছেন, হুজুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘সুদখোর ও সুদদাতা উভয়ের উপরই আল্লাহর অভিশাপ পতিত হোক।’ -মুসলিম, নাসায়ী

হযরত আবু হুরাইরা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু কর্তৃক বর্ণিত হজরত সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘চার ব্যক্তিকে বেহেশতে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না, তারা হলো: (১) নিত্য মদ্যপায়ী, (২) সুদখোর, (৩) এতিমদের মাল আত্মসাৎকারী এবং (৪) পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান।’

হযরত আউফ ইবনে মালেক রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বর্ণনা করেন যে, হুজুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘কেয়ামতের দিন অজ্ঞান ব্যক্তির যেভাবে হাশর হবে, ঠিক তেমনি অবস্থায় সুদখোরের হাশর হবে। অর্থাৎ, সে পাগলের ন্যায় নীত হবে।’ -আহমদ

হযরত আবু হুরাইরা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বর্ণনা করেন, নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘এমন এক সময় আসবে যখন কোনো ব্যক্তিই সুদ হতে দূরে থাকতে পারবে না, যদি কেউ সুদ নাও নেয় তথাপি তার প্রভাব হতে কেউ মুক্ত থাকতে পারবে না। সকলের উপরই সুদের কিছু না কিছু প্রভাব পড়বেই।’ -আবু দাউদ

হযরত আমর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু কর্তৃক বর্ণিত মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে জাতির মধ্যে সুদের প্রচলন হবে, সঙ্গে সঙ্গেই সে জাতিকে দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন হতে হবে। যে জাতির মধ্যে ঘুষ বিস্তৃতি লাভ করবে, সে জাতি নৈতিক দিক দিয়ে দুর্বল হয়ে পড়বে। -আহমদ

হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘সুদখোর, সুদদাতা, সুদ সম্পর্কিত বিষয়ের লেখক ও সাক্ষী সকলেই সমান অপরাধী। আল্লাহ সকলের ওপর যেন অভিসম্পাত করেন।’ -মুসলিম

হযরত ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বর্ণনা করেন যে, হুজুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘যখন কোনো অঞ্চলে সুদ খাওয়া ও জেনা (ব্যাভিচার) ব্যাপকভাবে চলতে থাকে, তখন সেই অঞ্চলের জন্য আল্লাহর গজব নাজিল হওয়া হালাল হয়ে যায়।’ -হাকেম

হযরত ইবনে মাসুউদ রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বর্ণনা করেন, হুজুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘কেয়ামতের পূর্বে সুদ খাওয়া, মদ্য পান ও জেনা অধিক বৃদ্ধি পাবে।’ -তিবরানী

আমলহীন বিভ্রান্ত আলেমদের যে শাস্তি দেখলেন প্রিয় নবীজিঃ

বেআমল আলেমদের শাস্তি সম্পর্কে হযরত আনাস রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘আমি মেরাজের রাত্রে জাহান্নামে এমন কতিপয় লোককে দেখলাম যাদের ঠোঁট কাঁচি দ্বারা কাটা হচ্ছিল, একবার কাটার পর সেগুলো মিলিয়ে যেতে থাকে, আবার তাদের ঠোঁট কর্তন করা হতে থাকে। এরূপে তারা আল্লাহর শাস্তি পাচ্ছিল। আমি হজরত জিবরাইল আলাইহসি সালামকে তাদের পরিচয় জিজ্ঞাসা করলে উত্তরে তিনি বলেন: তারা আপনার উম্মতের সেসব আলেম, যারা লোকদের অন্যায় কাজ হতে বিরত রাখতো এবং আল্লাহর দিকে আহ্বান করতো, অথচ তারা স্বয়ং আমল করতো না।’

আলেমদের সতর্কতায় কিছু হাদিসঃ

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘তোমাদের মধ্যে কোনো ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত খাঁটি মোমেন হতে পারবে না, যতক্ষণ না তার সমস্ত আশা আকাঙ্খা আমার শরীয়ত মোতাবেক হবে।’

অর্থাৎ মুমিন মুসলমানের কোনো কাজকর্ম ইসলামী শরীয়তের পরিপন্থী হলে চলবে না। মুমিনের আমল যে পর্যন্ত শরীয়ত অনুযায়ী হবে না, আল্লাহর দরবারে তার ইসলাম অপূর্ণ বলে গণ্য হবে। আমল করার নির্দেশ কেবল জনসাধারণের জন্য সীমাবদ্ধ নয়, আলেম সমাজের প্রতিও সমানভাবে প্রযোজ্য।

হুজুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন: ‘কেয়ামত দিবসের সবচেয়ে কঠিন শাস্তি সেই আলেমকে দেয়া হবে, যার এলেম দ্বারা জনসাধারণ উপকৃত হতে পারেনি।’

হযরত ইবনে মাসউদ রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: আমার পূর্বে যে উম্মতের জন্য যেসব নবীকে প্রেরণ করা হয়েছিল, সেই উম্মতের মধ্যে তাদের অনুসারী এবং সঙ্গীরা থাকতেন এবং তারা উক্ত নবীদের সুন্নতের অনুসরণ করতেন ও তাঁদের নির্দশাবলি মেনে চলতেন। অতঃপর তাদের এমন সব প্রতিনিধি হতে লাগলেন, যাদের কথা ও কাজ পরস্পরবিরোধী, যা তারা মুখে বলতেন, বাস্তব ক্ষেত্রে তার বিপরীত কাজই করতেন, লোক তাদের কথা অনুযায়ী চলত। এ ধরনের লোকদেরকে যারা সঠিক পথে পরিচালিত করার চেষ্টা করবে, তারাই সত্যিকারের মুমিন, এরূপ যারা করবে না, তাদের মধ্যে বিন্দু পরিমাণও ঈমান নেই।

বহু হাদীসে খাঁটি আলেমদের উচ্চ মর্যাদার কথা যেখানে বলা হয়েছে, সেখানে ‘উলামা সু’-এর করুণ পরিণতির কথাও বলা হয়েছে। সে ‘উলামা সু’-এর পরিচয় রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মেরাজে হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম প্রদান করেছেন। ‘উলামা সু’-এর পরিচয়ের এ মাপকাঠি যুগেযুগে সর্বত্র দর্পণ হিসেবে কাজ করবে। সরল ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত ও পথভ্রষ্ট করে থাকে, মেরাজে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সে জাহান্নামীদের পরিচয় জানানো হয়েছে। আল্লাহতাআলা সকলকে ‘উলামা সু’-এর খপ্পর হতে হেফাজত করেন, যাদেরকে প্রখ্যাত ইমামগণ ‘লুচুছুদ দীন’ বা ধর্মচোর নামে আখ্যায়িত করেছেন।

পরিশেষেঃ

সমাজের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়া সর্বগ্রাসী সূদ এবং আমলহীনতার বদ স্বভাব থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক কামনা করছি মহান মালিকের নিকট। এসব দলের অনুগামী হওয়া থেকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদের হেফাজত করুন।

মন্তব্য ৩০ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (৩০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১২:৪৬

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: রসূল (সাঃ) কিছু অপরাধীর শাস্তি নমুনা হিসাবে দেখে এসেছেন। আল্লাহ্‌ যদি সাধারন মানুষকে এগুলি একবার দেখার সুযোগ দিতেন পৃথিবীতে কোন পুলিশ, গোয়েন্দা, জেলখানা, আদালত আর বিচারকের প্রয়োজন হতো না।

১৪ ই অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৩:৫৫

নতুন নকিব বলেছেন:



সঠিক বলেছেন। শুকরিয়া। জাজাকুমুল্লাহ।

২| ১৪ ই অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১২:৪৬

চাঁদগাজী বলেছেন:



মিরাজের পুরো ঘটনা ঘটতে কতক্ষণ সময় লেগেছে?

১৪ ই অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৪:১৮

নতুন নকিব বলেছেন:



প্রশ্নের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার শরীর এখন কেমন?

'মেরাজে নবীজীর সাতাশ বছর সময় লেগেছিল' এমন একটি কথা অনেকের মুখে শোনা যায়। এটি আসলে হাদীস নয়। মিরাজ সম্পর্কে এক ওয়ায়েজকে বলতে শুনেছি যে, তাতে নাকি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাতাশ বছর সময় ব্যয় হয়েছিল।

আরেক ওয়ায়েজ এই কথাটি বললেন আরো চটকদার করে। তার ভাষায়, ইন্তেকালের সময় যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে জিবরীল ও মালাকুল মাওত হাজির হল, তখন তিনি মালাকুল মাওতকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি এত তাড়াতাড়ি কেন এলে? আল্লাহ তো আমাকে নববই বছর হায়াত দিয়েছিলেন।

তখন জিবরীল বললেন, আপনার জীবনের সাতাশ বছর তো মিরাজের রাতেই অতিবাহিত হয়ে গেছে!

উপরোক্ত বর্ণনার কোনো ভিত্তি আমরা পাইনি। মিরাজের সহীহ ও নির্ভরযোগ্য রেওয়ায়েতগুলোর কোথাও বলা হয়নি যে, মিরাজে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কতটুকু বা কি পরিমান সময় অতিবাহিত হয়েছিল। কুরআন মজীদ এবং সহীহ ও নির্ভরযোগ্য হাদীসে বলা হয়েছে যে, এই ঘটনাটি একটি রাতে সংঘটিত হয়েছিল। তাতে পুরো রাত লেগেছিল, না কি রাতের কিছু অংশ, না চোখের পলকেই ঘটে গিয়েছিল তা সহীহ হাদীসে নেই। হাদীসে এমন কোনো কথারও উল্লেখ পাওয়া যায় না যে, আল্লাহ তাআলা তখন সময় ও সৃষ্টিজগতকে স্থির রেখেছিলেন।

অতএব মিরাজের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ এবং তার রহস্য ও তাৎপর্য আলোচনার সময় এইসব অমূলক কথাবার্তার আশ্রয় নেয়া খুবই নিন্দনীয় ও সর্বোতভাবে পরিত্যাজ্য। কোনো দায়িত্বশীল ও আমানতদার ব্যক্তি এ ধরনের কথা বলতে পারেন না। কুরআনে কারিমে আল্লাহ তাআলার স্পষ্ট নির্দেশনা হচ্ছে-

ولا تقف ما ليس لك به علم

‘যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই এর পিছনে পড়ো না।’

এরপরও শুধু অনুমান ও ধারণার উপর ভিত্তি করে বলা, বিশেষত মানুষের সামনে বর্ণনা করা বড়ই অন্যায়। উপরন্তু তা যখন হয় আল্লাহ ও রাসূলের সাথে সম্পর্কিত তখন তো এর ভয়াবহতা বলারই অপেক্ষা রাখে না। আল্লাহ তাআলা আমাদের হেফাযত করুন। আমীন।

এছাড়া মিরাজ অবিশ্বাসী জনৈক ব্যক্তির বিষয়ে প্রচলিত আরেকটি মজাদার গল্প রয়েছে। তবে যতটুকু জেনেছি, সেটিও কোনো নির্ভরযোগ্য ঘটনা নয়। বরং বানানো। ইচ্ছে করলে দেখে আসতে পারেন-

পবিত্র মিরাজের সময় সংক্রান্ত প্রচলিত গল্পটি সত্যি নয় অলীক : জনৈক লোক স্ত্রীকে মাছ কাটতে দিয়ে গোসল করতে যায়...

৩| ১৪ ই অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১:৪৬

নেওয়াজ আলি বলেছেন: মাঝে মাঝে ইউটিউবে হুজুরদের বয়ান শুনি । তবে রাগ হয় হাসিও আসে । উনারা আরবীর একজন একরকম অর্থ করে নিজেকে জ্ঞানী বানাতে ব্যস্ত। এইজন্য কুয়াকাটা হুজুরকে বাটপার বলে ও আমির হামজকে জুতা মারতে দেখি। আর প্রতিনিয়ত একজন আরেককের বিরুদ্ধে বলে।

১৪ ই অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৪:২৩

নতুন নকিব বলেছেন:



মিডিয়ার কারও বক্তব্য শুনতে হলে অবশ্যই জেনেবুঝে শুনতে হবে। কারও কারও বক্তব্য ইসলাম ধর্মের স্বার্থে নয়, ব্যক্তি বা দলীয় ফায়দার জন্য হয়ে থাকে। সত্যিকার আল্লাহওয়ালা মানুষের সংখ্যা অতি নগন্য। খুবই সতর্কতার বিষয়। মিডিয়া তালাশ করলে অনেক আত্মবিক্রিত বক্তার সন্ধান পাওয়া যায়, যারা অন্যদের ঈমান আকিদা ধ্বংসের চক্রান্তে লিপ্ত।

৪| ১৪ ই অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১:৪৭

রাজীব নুর বলেছেন: অত্যন্ত সুন্দর।
আল্লাহর লীলাখেলা সাধারণ মানুষের বুঝা দায়। ধর্ম থেকেই কি রুপকথা সৃষ্টি?

১৪ ই অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৪:২৬

নতুন নকিব বলেছেন:



আপনাকে আমার অসাধারণ মানুষ মনে হয়। আপনি দেশের জন্য, গরিবদের জন্য ভাবেন। কয়জন এই কাজটা করে?

৫| ১৪ ই অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ২:০৩

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: বিশ্বাসের ঘর ঠিক করতে হবে সবার আগে।
আরবীতে যাকে বলে ঈমান।

আমি কি বিশ্বাস করবো?
কেন বিশ্বাস করবো?
আলটিমেট ট্রুথ কি?

বিশ্বাস না করলে আমার কি হবে?
বিশ্বাস আমাকে কিভাবে পরিত্রান দেবে এই জীবনে এবং অনন্ত জীবনে?

বিষয়গুলো স্বচ্ছ না জানলে স্বচ্ছ ভাবে জানানো যায় না। আর যখন অস্বচ্ছতা আসে তখনই গোজামিল আসে।
তখনই বিশ্বাস দুর্বল হয়ে পড়ে। তখনই কর্ম বা আমল হয়ে পড়ে আচার সর্বস্ব। লোক দেখানো!
সকলের বিশ্বাস সত্যে উপনীত হোক। দৃঢ়তায়। গভীর সত্যের ছোঁয়ায়।

১৪ ই অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৪:২৮

নতুন নকিব বলেছেন:



জ্বি, সেটাই। বিশ্বাসের ঘর ঠিক তো করতেই হবে। ঈমানের চেয়ে দামী আর কিছু নেই। কারণ, এই ঈমান গ্রহণ করেই তো মহান স্রষ্টার সাথে পরিচয়ের সূচনা।

মূল্যবান মন্তব্য। অসংখ্য কৃতজ্ঞতা।

শুভকামনা সবসময়।

৬| ১৪ ই অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ২:৩৯

চাঁদগাজী বলেছেন:



@বিদ্রোহী ভৃগু ,
আপনি বলেছেন, "আমি কি বিশ্বাস করবো? কেন বিশ্বাস করবো? আলটিমেট ট্রুথ কি? "

-২০০০ বছর আগে মানুষ বিশ্বাস করতেন যে, পৃথিবী সমতল; আজকের জ্ঞানীরা বিশ্বাস করছেন যে, পৃথিবী গোলাকার; জ্ঞানীরা যা বিশ্বাস করেন, সেটাই আলটিমেট ট্রুথ।

১৪ ই অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৪:৩০

নতুন নকিব বলেছেন:



কথাটা যেহেতু বিদ্রোহী ভৃগু ভাইকে বলেছেন, আপনার প্রশ্নের উত্তরও তিনিই দিবেন, আশা করছি।

৭| ১৪ ই অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৩:১৩

নীল আকাশ বলেছেন: খুব সুন্দর পোস্ট।
নাস্তিকরা এই মিরাজের ব্যাপারটা নিয়ে সবচেয়ে নোংরা কথা বলে বেড়ায়।
রসুল্লুল্লাহ হবে না রাসুলুল্লাহ হবে?
সল্লাল্লাহু হবে না সাল্লাল্লাহু হবে?

১৪ ই অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৩:৫৪

নতুন নকিব বলেছেন:



খুব সুন্দর পোস্ট।
নাস্তিকরা এই মিরাজের ব্যাপারটা নিয়ে সবচেয়ে নোংরা কথা বলে বেড়ায়।
রসুল্লুল্লাহ হবে না রাসুলুল্লাহ হবে?
সল্লাল্লাহু হবে না সাল্লাল্লাহু হবে?


-শুকরিয়া। জাজাকুমুল্লাহ।

মিরাজ নিয়ে সে কালের আবু জাহল, উতবা শাইবা নামক দুর্বৃত্তগণও বাজে কথা বলেছিল। এখনও তাদের উত্তরসূরী হিসেবে কেউ কেউ একই দায়িত্ব পালন করে থাকতে পারেন। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

মূলতঃ তাজবীদের নিয়মানুসারে শুদ্ধভাবে পড়তে হলে 'রসুল্লুল্লাহ' শব্দটির 'র' অক্ষরটিতে া (আ-কার) না দিয়ে মোটা করে অর্থাৎ রসূলুল্লাহ পড়াটাই সঠিক। একইরকম 'সল্লাল্লাহু' শব্দটিতে যবরযুক্ত 'ছোয়াদ' অক্ষরটি মোটা করে পড়ার নিয়ম। সেই কারণে এর সহি উচ্চারণ সাল্লাল্লাহু না হয়ে সল্লাল্লাহু হবে।

অনেক আরবি শব্দের ক্ষেত্রে একটি সমস্যা পরিলক্ষিত হয় যে, এগুলো আমাদের সমাজে ভুলভাবে উচ্চারিত হয়। যেমন, উদাহরণ তঃ আমরা অনেকেই নামের পূর্বে মোহাম্মদ শব্দটি ব্যবহার করি। এই শব্দটির সঠিক উচ্চারণ কিন্তু মুহাম্মাদ। কারণ, আরবি ভাষায় 'হ্রস্ব-উ কার' থাকলেও 'ও-কার' এর কোনো স্থান নেই। 'হ্রস্ব-উ কার' এর কাজটি করে আরবির যে হরকত তাকে বলে 'পেশ'। 'মুহাম্মাদ' শব্দটির ক্ষেত্রে 'পেশযুক্ত মীম' এর উচ্চারণ কোনোভাবেই 'মো' হতে পারে না বরং 'মু' হবে।

ভুলটাই প্রচলিত হয়ে যাওয়ার কারণে এবং দীর্ঘকাল যাবত ব্যবহৃত হয়ে আসার ফলে এসব শব্দের সঠিক উচ্চারণ জানার পরেও প্রাকটিসে আনা যাচ্ছে না। তবে আগের তুলনায় ইদানিংকার অবস্থা ভালো। অনেকটা পরিবর্তন এসেছে আলহামদুলিল্লাহ। বাকিটাও আশা করি হবে।

৮| ১৪ ই অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৩:৪৭

চাঁদগাজী বলেছেন:


@নীল আকাশ,
আপনি বলেছেন, "নাস্তিকরা এই মিরাজের ব্যাপারটা নিয়ে সবচেয়ে নোংরা কথা বলে বেড়ায়। "

-খৃষ্টান ও ইহুদী "আস্তিকেরা" মিরাজ নিয়ে কি বলেন?

১৪ ই অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৪:৩৬

নতুন নকিব বলেছেন:



ইহুদি বা খৃস্টান জাতির সত্যায়নের উপরে মিরাজের সত্যাসত্য নির্ভরশীল বিষয়টি এমন নয়। এর সত্যায়ন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে করে দিয়েছেন। যেমনটা ব্লগার নীল আকাশ ভাইও এই পোস্টে তার ৯ নং মন্তব্যে বলেছেন। মূল কথা হচ্ছে, যারা আল্লাহ তাআলাকেই বিশ্বাস করে না, তাদের কাছে মিরাজ আবার কোথায় থাকে?

৯| ১৪ ই অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৪:০৬

নীল আকাশ বলেছেন: @ চাঁদগাজীঃ
তারা এটা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেবার চেষ্টা করেছে। কিন্তু সব কিছুর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হয় না, হবেও না। যেখানে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নিজেই এটার সত্যতা ঘোষনা করেছেন সেটা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা খুঁজে দেখার কোন কারণ নেই।

@ নকীব ভাইঃ বানান শুদ্ধ করে দেয়ার ব্যাখ্যা দেবার জন্য ধন্যবাদ। এখন থেকে আমিও এই শুদ্ধ বানান ব্যবহার করবো।


১৪ ই অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৪:৩৬

নতুন নকিব বলেছেন:



সুন্দর প্রতিমন্তব্যে ধন্যবাদ আপনাকেও।

১০| ১৪ ই অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৪:৪০

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

অবিশ্বাসী ও নাস্তিকেরা এই ঘটনা
বিশ্বাস করেনা। পাল্টা যুক্তি দিবে।
তার পরেও জানিয়ে যেতে হবে
যদি কোন দিন তারা বিশ্বাস করে।
আপনাকে ধন্যবাদ সুন্দর লেখাটির জন্য।

১৪ ই অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৫:০৬

নতুন নকিব বলেছেন:



শুকরিয়া প্রিয় নূরু ভাই।

১১| ১৪ ই অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১৫

সত্যপীরবাবা বলেছেন: @লেখক
কেয়ামত হইল না, হাশরের ময়দানে বিচার হইল না, আমলনামা ডান-বাম হাতে ধরায় দেয়া হইল না, তার আগেই অপরাধীদের শাস্তি শুরু হইয়া গেল? নবী প্রত্যক্ষ করার নিশ্চয়ই আরো আগে থেকেই শাস্তি শুরু হইসে। সুদখোর ব্যাটা (ড: ইউনুস নাকি?) আর উল্টা-পাল্টা বলা আলেমরা নবীর উত্তর-প্রজন্ম হওয়াই স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে তাদের জন্মের আগেই তাদের বিচার শেষ করে শাস্তিপর্ব শুরু হইয়া গেল? সুদখোর জন্মাইলো না, সুদ খাইল কখন? হাশরের ময়দানে আবারো নতুন করে দ্বিতীয় দফা বিচার করা হবে এদের?

১৫ ই অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১০:৪০

নতুন নকিব বলেছেন:



প্রিয় সত্যপীরবাবা, অসংখ্য ধন্যবাদ আপনি এই ব্লগে আসায়। ইসলাম ধর্মে সূদকে স্পষ্টভাবে, দ্ব্যর্থহীন ভাষায় হারাম ঘোষনা করা হয়েছে। সূদ দেয়া, নেয়া, সাক্ষী থাকা অথবা সূদের কারবারের সাথে কোনোভাবে যুক্ত থাকা হারাম বা নিষিদ্ধ জেনেও যারা এই গর্হিত অন্যায়ে লিপ্ত হবে, তাদের জন্য ভয়াবহ শাস্তির ঘোষনাও দেয়া হয়েছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, সূদের ব্যাপারে ইসলাম ধর্মে এমন কঠোর সতর্কবাণী কেন দেয়া হল?

এর উত্তর হচ্ছে, সূদের ভয়াবহ ক্ষতিকর প্রভাব একটি সমাজ ও জাতির সুস্থ সুন্দর জীবনের অন্তরায়। এর অপকারিতা সুদূরপ্রসারি এবং অবর্ণনীয়। চলুন, সূদের ক্ষতিকর কিছু দিক দেখি প্রথমে-

মানবজীবনে সূদের ক্ষতিকর দিকসমূহঃ

সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য সূদ একটি মারাত্মক অভিশাপ। সূদের কারণে পারস্পরিক সহানুভূতি দূর হয়ে জন্ম নেয় সীমাহীন অর্থলিপ্সা ও স্বার্থপরতা। অতিরিক্ত লোভ-লালসার কারণে সূদী কারবারীরা মানুষের জান-মাল ও ইয্যত নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। সূদের কারণে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ জনগণ। সূদের ইহকালীন ক্ষতি যেমন রয়েছে তেমনি পরকালীন ক্ষতিও রয়েছে। সুতরাং সূদের ক্ষতিকে দুইভাগে ভাগ করা যায়। যথা- পার্থিব জীবনের ক্ষতি ও পরকালীন জীবনের ক্ষতি।

পার্থিব জীবনের ক্ষতিঃ

সূদের ক্ষতি এতই মারাত্মক যে, এর আসলে পরিমাপ করা সম্ভব নয়। পার্থিব ও পারলৌকিক দুই দিকেরই ক্ষতি জড়িত এই অন্যায়মূলক কাজটিতে। পার্থিব ক্ষতির কিছু হচ্ছে-

পার্থিব জীবনে নিঃস্বতাঃ

সূদের মাধ্যমে বাহ্যত প্রবৃদ্ধি দেখা গেলেও তার পরিণাম নিঃস্বতা। আল্লাহ বলেন,

يَمْحَقُ اللهُ الْرِّبَا وَيُرْبِي الصَّدَقَاتِ

‘আল্লাহ সূদকে সংকুচিত করেন ও ছাদাক্বাকে প্রবৃদ্ধি দান করেন।’ -বাক্বারাহ ২/২৭৬)

রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

إِنَّ الرِّبَا وَإِنْ كَثُرَ فَإِنَّ عَاقِبَتَهُ تَصِيْرُ إِلَى قُلٍّ

‘সূদ যতই বৃদ্ধি পাক, এর পরিণতি হ’ল নিঃস্বতা’। -আহমাদ হা/৩৭৫৪, ইবনু মাজাহ হা/২২৭৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৫১৮; মিশকাত হা/২৮২৭

সূদী লেনদেনে আল্লাহ ও রাসূলের নাফরমানীঃ

সূদ খেতে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল নিষেধ করেছেন। তারপরেও সূদ খেলে তা হবে তাঁদের অবাধ্যতা। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যতার শাস্তি অত্যন্ত ভয়াবহ। আল্লাহ বলেন,

وَمَنْ يَعْصِ اللهَ وَرَسُولَهُ وَيَتَعَدَّ حُدُوْدَهُ يُدْخِلْهُ نَارًا خَالِدًا فِيْهَا وَلَهُ عَذَابٌ مُهِيْنٌ-

‘পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যতা করবে এবং তাঁর সীমাসমূহ লংঘন করবে, তিনি তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। সেখানে সে চিরদিন থাকবে। আর তার জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি।’ -নিসা ৪/১৪

সূদ খাওয়া আল্লাহ ও রাসূলের সাথে যুদ্ধের শামিলঃ

সূদ খাওয়াকে আল্লাহ তাঁর বিরুদ্ধে ও রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধের শামিল বলে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُواْ اتَّقُوْا اللهَ وَذَرُوْا مَا بَقِيَ مِنَ الرِّبَا إِنْ كُنْتُم مُّؤْمِنِيْنَ، فَإِن لَّمْ تَفْعَلُوْا فَأْذَنُوْا بِحَرْبٍ مِّنَ اللهِ وَرَسُوْلِهِ وَإِنْ تُبْتُمْ فَلَكُمْ رُؤُوْسُ أَمْوَالِكُمْ لاَ تَظْلِمُوْنَ وَلاَ تُظْلَمُوْنَ-

‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সূদের বাকী পাওনা ছেড়ে দাও যদি তোমরা মুমিন হও। কিন্তু যদি তোমরা তা না কর, তাহ’লে তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা কর। অতঃপর যদি তোমরা তওবা কর, তাহ’লে তোমরা (সূদ ব্যতীত) কেবল আসলটুকু পাবে। তোমরা অত্যাচার করো না এবং অত্যাচারিত হয়ো না।’ -বাক্বারাহ ২/২৭৮-৭৯

সূদ খাওয়া অভিশাপের কারণঃ

সূদের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের উপরে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অভিশাপ করেছেন। জাবের (রাঃ) বলেন,

لَعَنَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم آكِلَ الرِّبَا وَمُوْكِلَهُ وَكَاتِبَهُ وَشَاهِدَيْهِ وَقَالَ هُمْ سَوَاءٌ.

‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সূদ ভক্ষণকারী, সুদদাতা, সূদের লেখক ও সাক্ষীদ্বয়কে অভিসম্পাত করেছেন’। -মুসলিম হা/ ৯৮৭; মিশকাত হা/১৭৭৩

সূদ খাওয়া ধ্বংস ও বিনাশ হওয়ার কারণঃ

হাদীছে বর্ণিত ধ্বংসাত্মক বিষয়গুলির অন্যতম হচ্ছে সূদ খাওয়া। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

اجْتَنِبُوا السَّبْعَ الْمُوْبِقَاتِ. قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ، وَمَا هُنَّ قَالَ الشِّرْكُ بِاللهِ، وَالسِّحْرُ، وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِى حَرَّمَ اللهُ إِلاَّ بِالْحَقِّ، وَأَكْلُ الرِّبَا، وَأَكْلُ مَالِ الْيَتِيمِ، وَالتَّوَلِّى يَوْمَ الزَّحْفِ، وَقَذْفُ الْمُحْصَنَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ الْغَافِلاَتِ

‘সাতটি ধ্বংসকারী বিষয় থেকে তোমরা বিরত থাকবে। ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সেগুলো কী? তিনি বললেন, (১) আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা (২) যাদু (৩) আল্লাহ তা‘আলা যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন, শরী‘আত সম্মত কারণ ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করা (৪) সূদ খাওয়া (৫) ইয়াতীমের মাল গ্রাস করা (৬) রণক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাওয়া এবং (৭) সরল স্বভাবা সতী-সাধ্বী মুমিনাদের অপবাদ দেয়া’। -বুখারী হা/৫৭৬৪, ৬৮৫৭; মুসলিম হা/৮৯; মিশকাত হা/৫২

পরকালীন জীবনের ক্ষতিঃ

সূদের পারকালিন জীবনের কিছু ক্ষতি-

সূদ আল্লাহর আযাবকে অবধারিত করেঃ

সূদ খেলে আল্লাহর আযাব বা শাস্তি অবধারিত হয়ে যায়। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

إِذَا ظَهَرَ الزِّنَا وَالرِّبَا فِي قَرْيَةٍ، فَقَدْ أَحَلُّوا بِأَنْفُسِهِمْ عَذَابَ اللهِ

‘যখন কোন জনপদে ব্যভিচার ও সূদ ব্যাপকতা লাভ করে তখন সেখানকার বাসিন্দারা নিজেদের জন্য আল্লাহর আযাব বৈধ (অবধারিত) করে নেয়’। -হাকেম হা/২২৬১; ত্বাবারাণী হা/৪৬০; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৭৯

কবরে আযাব হবেঃ

বারযাখী জীবনে বা কবরে সূদের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শাস্তি দেওয়া হবে, যা ক্বিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। রাসূল (ছাঃ)-কে ফেরেশতাদ্বয় বললেন, ‘আর ঐ ব্যক্তি যাকে (রক্তের) নহরে দেখেছেন, সে হ’ল সুদখোর’। -বুখারী, হা/১৩৮৬, ১০৭৫

সূদখোর ব্যক্তি কিয়ামতের দিন শয়তানের আছর করা রোগীর ন্যায় দাঁড়াবেঃ

আল্লাহ বলেন,

الَّذِيْنَ يَأْكُلُوْنَ الرِّبَا لاَ يَقُوْمُوْنَ إِلاَّ كَمَا يَقُوْمُ الَّذِيْ يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُوْا إِنَّمَا الْبَيْعُ مِثْلُ الرِّبَا وَأَحَلَّ اللهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا فَمَنْ جَاءهُ مَوْعِظَةٌ مِّن رَّبِّهِ فَانتَهَىَ فَلَهُ مَا سَلَفَ وَأَمْرُهُ إِلَى اللهِ وَمَنْ عَادَ فَأُوْلَـئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ-

‘যারা সূদ খায় তারা (ক্বিয়ামতের দিন) শয়তানের স্পর্শে আবিষ্ট রোগীর মত দন্ডায়মান হবে। এটা এজন্য যে, তারা বলে, ব্যবসা তো সূদের মতই। অথচ আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সূদকে হারাম করেছেন। অতএব যার নিকট তার পালনকর্তার পক্ষ হ’তে উপদেশ পৌঁছে যায়, অতঃপর সে বিরত হয়, তার জন্য রয়েছে ক্ষমা, যা সে পূর্বে করেছে। আর তার (তওবা কবুলের) বিষয়টি আল্লাহর উপর ন্যস্ত। কিন্তু যে ব্যক্তি পুনরায় (সূদী কাজে) ফিরে আসবে, সে হবে জাহান্নামের অধিবাসী। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।’ -বাক্বারাহ ২/২৭৫

সূদখোরের ইবাদত কবুল হয় নাঃ

ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য উপার্জন হালাল হওয়া যরূরী। সূদখোরের উপার্জন যেহেতু হালাল নয়, তাই তার ইবাদতও কবুল হয় না। রাসূল (ছাঃ) বলেন,

إِنَّ اللهَ طَيِّبٌ لاَ يَقْبَلُ إِلاَّ طَيِّبًا

‘আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র। তিনি পবিত্র জিনিস ব্যতীত কিছু কুবুল করেন না’। -মুসলিম হা/১০১৫; তিরমিযী হা/২৯৮৯; মিশকাত হা/২৭৬০

সূদখোরের পরিণাম হচ্ছে জাহান্নামঃ

সূদখোর পরকালীন জীবনে জাহান্নামের অধিবাসী হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,

إنَّهُ لاَ يَرْبُوْ لَحْمٌ نَبَتَ مِنْ سُحْتٍ إلاَّ كَانَتِ النَّارُ أوْلَى َبِهِ

‘অবৈধ খাদ্যে যে গোশত বৃদ্ধি পায় জাহান্নামই তার জন্য উত্তম বাসস্থান’। -তিরমিযী হা/৬১৪, সনদ হাসান

সুদ সম্পর্কে কুরআনের আরও কিছু আয়াতঃ

يَمۡحَقُ اللّٰهُ الرِّبٰوا وَيُرۡبِىۡ الصَّدَقٰتِ‌ؕ وَاللّٰهُ لَا يُحِبُّ كُلَّ كَفَّارٍ اَثِيۡمٍ﴾

আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দানকে বর্ধিত ও বিকশিত করেন। আর আল্লাহ‌ অকৃতজ্ঞ দুষ্কৃতকারীকে পছন্দ করেন না। সূরা বাক্বারা আয়াত ২৭৬

﴿ يٰۤاَيُّهَا الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا اتَّقُوۡا اللّٰهَ وَذَرُوۡا مَا بَقِىَ مِنَ الرِّبٰٓوا اِنۡ كُنۡتُمۡ مُّؤۡمِنِيۡنَ﴾

হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় করো এবং লোকদের কাছে তোমাদের যে সুদ বাকি রয়ে গেছে তা ছেড়ে দাও, যদি যথার্থই তোমরা ঈমান এনে থাকো। সূরা বাক্বারা আয়াত ২৭৮

﴿ فَاِنۡ لَّمۡ تَفۡعَلُوۡا فَاۡذَنُوۡا بِحَرۡبٍ مِّنَ اللّٰهِ وَرَسُوۡلِهٖ‌ۚ وَاِنۡ تُبۡتُمۡ فَلَكُمۡ رُءُوۡسُ اَمۡوَالِكُمۡ‌ۚ لَا تَظۡلِمُوۡنَ وَلَا تُظۡلَمُوۡنَ﴾

কিন্তু যদি তোমরা এমনটি না করো তাহলে জেনে রাখো, এটা আল্লাহ‌ ও তাঁর রসূলের পক্ষ থেকে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা। এখনো তাওবা করে নাও (এবং সুদ ছেড়ে দাও) তাহলে তোমরা আসল মূলধনের অধিকারী হবে। তোমরা জুলুম করবে না এবং তোমাদের ওপর জুলুম করাও হবে না। সূরা বাক্বারা আয়াত ২৭৯

يٰۤاَيُّهَا الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَاۡكُلُوۡا الرِّبٰٓوا اَضۡعَافًا مُّضٰعَفَةً‌ وَاتَّقُوۡا اللّٰهَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ‌ۚ﴾

হে ঈমানদারগণ! এ চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খাওয়া বন্ধ করো এবং আল্লাহকে ভয় করো, আশা করা যায় তোমরা সফলকাম হবে। সূরা আল ইমরান আয়াত ১৩০

يٰۤاَيُّهَا الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنَّمَا الۡخَمۡرُ وَالۡمَيۡسِرُ وَالۡاَنۡصَابُ وَالۡاَزۡلَامُ رِجۡسٌ مِّنۡ عَمَلِ الشَّيۡطٰنِ فَاجۡتَنِبُوۡهُ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ﴾

হে ঈমানদারগণ! এ মদ, জুয়া, মূর্তি পূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণায়ক শরসমূহ এ সমস্তই হচ্ছে ঘৃণ্য শয়তানী কার্যকলাপ। এগুলো থেকে দূরে থাকো, আশা করা যায় তোমরা সফলতা লাভ করবে। সূরা মায়িদাহ আয়াত ৯০

পবিত্র কুরআনে বহু ধরনের গুনাহের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছে। সেসবের জন্য কঠোর শাস্তি ও ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। কিন্তু সূদের ক্ষেত্রে যত কঠোর ভাষা প্রয়োগ করা হয়েছে অন্য কোন গুনাহের ব্যাপারে এমনটি করা হয়নি। এজন্যই সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বস্তরে সূদ বন্ধ করার উদ্দেশ্যে রাসূলে করীম (ছাঃ) সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। উদাহরণস্বরূপ নাজরানের খৃষ্টানদের সাথে তিনি যে সন্ধিপত্র সম্পাদন করেন তাতে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় লিখে পাঠান- ‘যদি তোমরা সূদী কারবার করো তাহ’লে তোমাদের সাথে চুক্তি ভেঙ্গে যাবে এবং আমাদেরকে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে’। বনু মুগীরার সূদী লেনদেন সমগ্র আরবে প্রসিদ্ধ ছিল। মক্কা বিজয়ের পর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদের প্রাপ্য সমুদয় সূদ বাতিল করে দেন এবং মক্কায় তাঁর নিযুক্ত তহসীলদারদেরকে লিখে পাঠান, যদি তারা (বনু মুগীরা) সূদ গ্রহণ করা বন্ধ না করে তাহ’লে তাদের সাথে যুদ্ধ করো।

রিবার অবৈধতা আল-কুরআনের সাতটি আয়াত (বাক্বারাহ ২৭৫-২৭৬, ২৭৮-২৮০; আলে ইমরান ১৩০ এবং রুম ৩৯) এবং চল্লিশটিরও বেশী হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত।

এখানে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ হাদীছ তুলে ধরা হ’ল-

(১) আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, اَلرِّبَا سَبْعُوْنَ جُزْءًا، أَيْسَرُهَا أَنْ يَّنْكِحَ الرَّجُلُ أُمَّهُ- ‘সূদের (পাপের) সত্তুরটি স্তর রয়েছে। যার নিম্নতম স্তর হ’ল মায়ের সাথে যেনা করার পাপ’। -মুসলিম, মিশকাত হা/২৮০৭; বঙ্গানুবাদ মিশকাত ৬/১৯ পৃঃ হা/২৬৮৩

(২) আব্দুল্লাহ ইবনে হানযালা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, دِرْهَمُ رِبًا يَأْكُلُهُ الرَّجُلُ وَهُوَ يَعْلَمُ، أَشَدُّ مِنْ سِتَّةٍ وَّثَلاَثِيْنَ زِنِيَّةً، ‘কোন ব্যক্তি যদি এক দিরহাম (রৌপ্যমুদ্রা) রিবা বা সূদ জ্ঞাতসারে গ্রহণ করে, তাতে তার পাপ ছত্রিশবার ব্যভিচার করার চেয়েও অনেক বেশী হয়’। -ইবনু মাজাহ, হা/২২৭৪, সনদ ছহীহ; মিশকাত হা/২৮২৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২৭০২

(৩) কূফার ক্বাযী খ্যাতনামা তাবেঈ আবু বুরদা বিন আবু মূসা বলেন, আমি মদীনায় এলাম এবং ছাহাবী আব্দুল্লাহ বিন সালাম (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাত করলাম। তখন তিনি বললেন, তুমি এমন এক এলাকায় বাস কর, যেখানে সূদ ব্যাপকহারে প্রচলিত। অতএব যদি কারু নিকট তোমার কোন পাওনা থাকে, আর সে যদি তোমার নিকট এক থলে ভূষি বা যব কিংবা এক অাঁটি ঘাসও উপঢৌকন দেয়, তবুও তুমি তা গ্রহণ করো না। কেননা ওটা হবে ‘রিবা’ বা সূদ’। -বুখারী, মিশকাত হা/২৮৩৩

(৪) আলী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত যে, أَنَّهُ سَمِعَ رَسُوْلَ اللهِ صَلىَّ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَعَنَ آكِلَ الرِّبَا وَمُوْكِلَهُ وَكَاتِبَهُ وَمَانِعَ الصَّدَقَةِ، وَكَانَ يَنْهَى عَنِ النَّوْحِ، ‘তিনি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে অভিশাপ করতে শুনেছেন সূদখোরের প্রতি, সূদ দাতার প্রতি, সূদের প্রমাণপত্র লেখকের প্রতি ও ছাদাক্বা প্রদানে বাধাদানকারীর প্রতি। আর তিনি নিষেধ করতেন মৃতের জন্য বিলাপ করা হ’তে’। -নাসাঈ, মিশকাত হা/২৮২৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২৭০৫, শাওয়াহেদ-এর কারণে হাদীছ ছহীহ

(৫) আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) বলেন, إِنَّ الرِّبَا وَإِنْ كَثُرَ فَإِنَّ عَاقِبَتَهُ تَصِيْرُ إِلَى قُلٍّ، ‘সূদের দ্বারা সম্পদ যতই বৃদ্ধি পাক না কেন তার শেষ পরিণতি হ’ল নিঃস্বতা। -ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/২৮২৭, সনদ ছহীহ; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২৭০৩, ৬/২৭ পৃঃ

উপরোল্লিখিত হাদীছসমূহ থেকে সূদ সম্পর্কে বেশ কিছু তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় সুস্পষ্টভাবে উঠে আসে। এসবের মধ্যে রয়েছে সূদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা মহাপাপী বলে গণ্য হবে। সামান্য বিষয় এমনকি ঋণদাতাকে উপহার প্রদানও সূদ হিসাবে বিবেচিত হবে। সূদের শেষ পরিণতি হবে নিঃস্বতা। সূদ বহু প্রকারের হ’তে পারে। এক সময়ে সূদ বিশ্বব্যাপী বিস্তৃতি লাভ করবে এবং তা থেকে কারো রেহাই থাকবে না। সূদের গুনাহ (যা কবীরা গুণাহ) অতীব নিকৃষ্ট ধরনের ইত্যাদি। তাই সূদ প্রসঙ্গে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা যেমন প্রয়োজন তেমনি সমাজদেহ হ’তে সূদ উচ্ছেদ ও রহিত করার জন্য সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণও সমান প্রয়োজন।

বিশ্বমানবতার সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধু রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁর জীবনের সর্বশেষ ভাষণেও এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে ভুলেননি। তিনি যে প্রকৃতই রহমাতুল্লিল আলামীন, তাঁর বিদায় হজ্জের ঐতিহাসিক ভাষণেও তার পরিচয় রেখে গেছেন। অবিস্মরণীয় সেই ভাষণে তিনি একটিমাত্র ঘোষণার মাধ্যমে শোষণের বিষদাঁত চিরতরে ভেঙ্গে দিলেন। অবিচল কণ্ঠে তিনি ঘোষণা করলেন, ‘জাহেলী যুগের সমস্ত সূদ বাতিল করা হ’ল। সবার আগে আমাদের গোত্রের আববাস ইবনু আব্দিল মুত্তালিবের সব সূদ আমিই রহিত করে দিলাম’। -তারীখে ত্ববারী; সীরাতে ইবনে হিশাম

সেই ঘোষণার ফল হয়েছিল সূদূরপ্রসারী। উমাইয়া ও আববাসীয় খিলাফত পরবর্তী যুগেও বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশী বিশাল ভূখন্ডে দীর্ঘ নয়শত বছর ইসলামী হুকুমত বহাল থাকাকালীন কোথাও সূদ বিদ্যমান ছিল না। সূদের মাধ্যমে কোন লেনদেন ও ব্যবসা-বাণিজ্য হয়নি। পরবর্তীতে মুসলমানদের ভোগবিলাস ও আত্মবিস্মৃতির সুযোগে সাম্রাজ্যবাদী ইউরোপীয় শক্তিসমূহ তাদের পরাভূত করে ধ্বংস করে দেয় তাদের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড। ব্যবসা-বাণিজ্য ও উৎপাদনের উপায়-উপকরণের উপর আধিপত্য বিস্তার করে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসমূহ। বিপরীতে মুসলিম দেশ ও সমাজ কোন প্রতিরোধ তো গড়তে পারেইনি বরং ধীরে ধীরে পিছিয়ে পড়ে যোজন যোজন পথ। এই সময়েই ইউরোপে সংঘটিত শিল্প বিপ্লবের পথ ধরে নতুন আঙ্গিকে সূদ পুনরায় ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে বিশ্বের সকল দেশে, সমাজের সর্বস্তরে। ব্যাংকিং পদ্ধতির বিকাশ ঘটে শিল্প বিপ্লবের হাত ধরেই। ব্যাংকিং পদ্ধতির মাধ্যমেই সমাজে সূদের সর্বনাশা শোষণ ও ধ্বংস আরও গভীর ব্যাপ্তি লাভ করে। একদিকে পুঁজি আবর্তিত হ’তে থাকে শুধু ধনীদের মধ্যেই, যা পবিত্র কুরআনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অন্যদিকে সূদের কারণে আরও নতুন নতুন অর্থনৈতিক নির্যাতন ও শোষণ বিস্তৃতি লাভ করে সমাজের তৃণমূল পর্যায়ে, যার হাত থেকে পরিত্রাণ লাভ আজ আর সহজসাধ্য নয়।

আসলে ঠান্ডা মাথায় একটু চিন্তা করলেই বুঝা সম্ভব যে, অন্যান্য কঠিন অনেক অপরাধের শাস্তি প্রত্যক্ষ না করে সূদের শাস্তি তাকে কেন দেখানো হয়েছিল।

সূদ যে কতটা মারাত্মক আশা করি, উপরোক্ত আলোচনা থেকে কিছুটা ধারণা নেয়া সম্ভব। উত্তর বেশি বড় হওয়ায় দুঃখিত। আপনার এই মন্তব্যের অন্যান্য প্রসঙ্গ অর্থাৎ, আমলহীন বাকসর্বস্ব আলেমদের নিয়ে সময় পেলে আলোচনায় আসার ইচ্ছে।

অনেক অনেক ভালো থাকবেন, প্রার্থনা।

১২| ১৪ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ৯:১৭

করুণাধারা বলেছেন: যখন সংঘটিত হয়েছিল মিরাজ- মাসের নাম দিতে ভুলে গেছেন। পোস্টে লাইক।

১৫ ই অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১০:৪৩

নতুন নকিব বলেছেন:



অশেষ মোবারকবাদ ভুলটি ধরিয়ে দেয়ার জন্য। প্রকৃত বন্ধুর কাজটি করলেন। পোস্ট ভালো লেগেছে বলে কৃতজ্ঞতা।

আপনার হায়াতে আল্লাহ পাক বরকত দান করুন। পরিবার পরিজন নিয়ে দুনিয়া আখিরাতে সুখী হোন।

১৩| ১৪ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১০:৩৯

নূর আলম হিরণ বলেছেন: মিরাজের সাথে বোরাক নামের ঘোড়ার সম্পর্ক আছে কি? থাকলে এই রকম ঘোড়া থাকার সম্ভাবনা কতটুকু?

১৫ ই অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১১:০৩

নতুন নকিব বলেছেন:



এটার অস্তিত্ব কল্পনা করতে পারেন তবে, পৃথিবীতে এরকম কোনো ঘোড়া যদি দেখার ইচ্ছে করেন, সেটা সম্ভব নয় বলেই মনে হয়। কারণ, এটির বর্ণনায় যতটুকু জানতে পেরেছি, বোরাক কোনো সাধারণ বাহন ছিল না।

বিস্ময়কর মিরাজের বিস্ময়কর বাহনঃ

মিরাজ তথা উর্ধ্বারোহনের প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রতিটি অংশ তাৎপর্যপূর্ণ। অলৌকিক এই ভ্রমণের বাহন ও মাধ্যমসমূহও বিস্ময়কর। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ইচ্ছে করলে যে কোনো বাহনের মাধ্যম ব্যতিত রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সপ্তাকাশ পরিভ্রমন করাতে পারতেন, কিন্তু তিনি পার্থিব নিয়ম অনুযায়ী বাহনের মাধ্যমে তাকে ঊর্ধ্বজগতে পরিভ্রমণ করিয়েছেন। মিরাজের বাহন হিসেবে অন্যতম হলো বোরাক।

বোরাক কাকে বলে?

যে বাহনে করে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিরাজের রাতে ঊর্ধ্বজগত পরিভ্রমণ করেছেন তাকেই বোরাক বলে।

ইমাম নববী (রহ.) লিখেছেন, ‘আরবি শব্দ 'বারক' বা 'বারকুন' অর্থ বিজলি, বোরাক যেহেতু বিজলির মতো ধবধবে সাদা এবং ততোধিক গতিসম্পন্ন ছিল, তাই বাহনটিকে বোরাক বলা হয়।’ -শরহে নববি : ২/২১০

হাদিসের প্রসিদ্ধ কিতাবে বোরাকের বর্ণনায় এসেছে- ‘রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমার কাছে বোরাক আনা হলো। তা হলো শুভ্র বর্ণের চতুষ্পদ একটি প্রাণী, যা গাধার চেয়ে হালকা লম্বা, খচ্চরের চেয়ে খাটো। সে পা ফেলে দৃষ্টিসীমার ওপারে।’ -বোখারি : ৩২০৭; মুসলিম : ১৬২

আরেক হাদিসে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আমি বোরাকে আরোহণ করলাম আর বাইতুল মোকাদ্দাস চলে গেলাম।’ -ইবনে খুজাইমা : ৩০১

হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আমাকে যে রাতে পরিভ্রমণ করানো হলো সে রাতে আমার কাছে বোরাক আনা হলো, তার মুখে লাগাম বাঁধা ছিল, তা বেশ আলোকোজ্জ্বল ছিল, বোরাকের ওপর আরোহণ করলে তার অনেক কষ্ট হচ্ছিল, দরদর করে ঘাম ঝরছিল তার, তখন জিবরাইল আলাইহিস সালাম বললেন, তুমি কি মুহাম্মাদের কারণে এমন করছো? তোমার ওপর তো আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় ও মর্যাদাবান ব্যক্তি আরোহণ করেছে।’ -তিরমিজি; আলবানি হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন

কারো মতে, মেরাজের বাহন ছিল তিনটি। প্রথম বাহন বুরাক, যা মক্কা থেকে বাইতুল মোকাদ্দাস পর্যন্ত এবং ফিরে আসার পরে ভ‚পৃষ্ঠে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বহন করেছে। দ্বিতীয় বাহন মিরাজ বা সিঁড়ি, যার মাধ্যমে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সপ্ত আকাশ পরিভ্রমণ করেছেন। তৃতীয় বাহন ছিল রফরফ, যা সিদরাতুল মুনতাহা থেকে আরশে আজিম পর্যন্ত রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বহন করেছে।

আবার কারও মতে মিরাজের রাতে পাঁচটি বাহন ছিল। তাফসিরে রুহুল মায়ানির গ্রন্থকার আল্লামা মাহমুদ আলুসি (রহ.) লিখেছেন, ‘নভোমন্ডল ও ঊর্ধ্বজগৎ পরিভ্রমণে আল্লাহর রাসুল মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সে রাতে বাহন হিসেবে পাঁচটি জিনিস ব্যবহার করেছিলেন। যেমনঃ

১. বোরাকঃ মক্কা থেকে বাইতুল মোকাদ্দাস পর্যন্ত।
২. মেরাজ বা সিঁড়িঃ প্রথম আসমান পর্যন্ত।
৩. ফেরেশতাদের ডানাঃ সপ্তম আসমান পর্যন্ত।
৪. জিবরাইল (আ.) এর ডানাঃ সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত।
৫. রফরফঃ মাকামে কাবা কাউসাইন (দুই ধনুকের নিকটবর্তী স্থান) পর্যন্ত। -রুহুল মায়ানি : ১৫/১৬, সুরা বনি ইসরাইলের ১ম আয়াতের তাফসির

সঠিক বিষয়ে একমাত্র মহান আল্লাহ তাআলাই সম্যক অবগত। আমাদের জানার ভেতরে ভুল থাকলে তাঁর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। তিনি আমাদের মার্জনা করুন।

ভালো থাকবেন, প্রার্থনা সবসময়।

১৪| ১৫ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১২:০২

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: জনশ্রুতি যে নবী মোহাম্মদ (সঃ)ডোম অব দ্য রক যেখানে অবস্থিত সেখান থেকে মেরাজে যান।এবং এই ডোম অব দ্য রক(স্মৃতি স্তম্ভ )সেই জন্য খলিফা আব্দুল মালিক ইবনে মারওয়ান তৈরি করেন।সেখানে একটি কালো পাথরে কয়েক লাইনের বড় একটি লিখা আছে। কিন্তু কোথাও লিখা নাই মিরাজের স্মৃতি হিসাবে এটি নির্মিত।

১৫ ই অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১১:০৬

নতুন নকিব বলেছেন:



খলিফা আব্দুল মালিক ইবনে মারওয়ানের তৈরিকৃত ডোম অব দ্য রক এর ওখানে আপনার যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল?

১৫| ১৫ ই অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১১:৪৯

নতুন বলেছেন: গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) | অধ্যায়ঃ ৩৫/ কিয়ামাত ও মর্মস্পর্শী বিষয় (كتاب صفة القيامة والرقائق والورع عن رسول الله ﷺ) | হাদিস নাম্বারঃ ২৪৪৬
১৬. (এই উম্মাতের সত্তরহাজার বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে)
২৪৪৬। ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিরাজের রাত্রিতে যখন উর্ধারোহণ করলেন, তখন তিনি নাবী ও নাবীগণের দলের পাশ দিয়ে যান। তিনি তখন দেখতে পেলেন তাদের সাথে আছে তাদের উম্মাতগণ। কোথাও বা একজন নাবী ও তার সাথে আছে ছোট একটি দল। আর কোন কোন নাবীর সাথে কেউ নেই।

অবশেষে তিনি একটি বিরাট দলের পাশদিয়ে এগিয়ে গেলেন। তিনি বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম, এ বিরাট দলটি কারা? বলা হলো, মূসা (আঃ) ও তার উন্মাতগণ। আপনি আপনার মাথা তুলে দেখুন। তিনি বলেন, তখন আমি মাথা তুলে দেখলাম, অসংখ্য মানুষের একদল যারা আকাশের এই দিগন্ত ও সেই দিগন্ত পূর্ণ করে আছে। বলা হলো, এরা আপনার উম্মাত। আপনার উম্মাতের মধ্যে এরা ছাড়াও সত্তরহাজার লোক বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

একথা বলার পর তিনি ঘরের ভিতর ঢুকলেন, কিন্তু এ ব্যাপারে তারা তাকে প্রশ্ন করেনি এবং তিনিও এর ব্যাখ্যা করে বলেননি। তারা নিজেদের মধ্যে বলাবলি শুরু করলেন। কেউ বলেন, আমরাই সেই দলের, যারা বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। কেউ বলেন, তারা আমাদের সন্তান যারা ইসলামী ফিতরাতে জন্মগ্রহণ করেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইতোমধ্যে বেরিয়ে এসে বলেন, যারা গায়ে গরম লোহার দাগ দেয় না, ঝাড়ফুঁক করে না, ফাল অর্থাৎ শুভাশুভ লক্ষণ নির্ণয় করে না এবং তাদের প্রভুর উপর পূর্ণ নির্ভরশীল থাকে, তারা হবে বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশকারী দল। একথা শুনার পর উক্কাশা ইবনু মিহসান (রাঃ) দাড়িয়ে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। আমি কি সেই দলের অন্তর্ভুক্ত? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তারপর আরেকজন এসে বলল, আমিও কি সেই দলের অন্তর্ভুক্ত? তিনি বললেন, উক্কাশা তোমার অগ্রবর্তী হয়ে গেছে।

সহীহ, বুখারী, মুসলিম।

আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। ইবনু মাসউদ ও আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে।


https://www.hadithbd.com/hadith/

এখানে নবী এবং নবীদের উম্মতরা উদ্ধাকাশে আছে। মৃত মানুষেরা কবরে থাকবে কেয়ামত পযন্ত তাই না?

তাহলে নবীরা আকাশে কিভাবে এলো?

আর রাসুল সা: সম্ভবত নবী এবং রাসুলগনের জামাতের ইমামতী করছিলো জেরুজালেমে, তারপরে উদ্ধাকাশে গমন করেছিলেন।

মেরাজের রাতে সকল নবী/রাসুল দের কি জেরুজালেমে একত্রিত করা হয়েছিলো?

রাসুল সা: বোরাকে, রফরফে করে ভ্রমন করেছিলেন। নবীরা কিভাবে ভ্রমন করেছিলো? তারা কবরে শায়িত থাকলে সেখান থেকে স্বসরীরে জেরুজালেম গিয়েছেলেন? এবং আবার বিভিন্ন আকাশে চলে গিয়েছিলেন?

যেকোন কিছু বিশ্বাস করতেই পারেন। কিন্তু যদি মেরাজের ঘটনাটা ৩৬০ ডিগ্রি দেখার চেস্টা করেন তবেই বুঝতে পারবেন এটার সাথে কতগুলি অলৌকিক ঘটনা যুক্ত। এত কিছু করার চাইতে রাসুল সা: এর স্বপ্নে মেরাজে গেলে দুনিয়ার এত গুলি নিয়ম ভাঙতে হয় না। এতো গুলি অলৌকিক ঘটনা ঘটাতে হয় না।

সম্ভবত মেরাজ রাসুলের স্বপ্নই ছিলো।

১৬| ১৫ ই অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১:৩৮

রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন: আপনাকে আমার অসাধারণ মানুষ মনে হয়। আপনি দেশের জন্য, গরিবদের জন্য ভাবেন। কয়জন এই কাজটা করে?

সবার জন্যই ভাবি। কিন্তু কিছু করতে তো পারি না। ভাবা আসলে অলস লোকের কাজ। এতে মঙ্গল কিছু হয় না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.