নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কথক

The world's biggest power is the youth and beauty of a woman.

নাজিমুদ্দিন পাটোয়ারী

I am very simple, complaisant

নাজিমুদ্দিন পাটোয়ারী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইউনিয়ন পরিষদের আধুনিকায়ণ এবং কিছু বাস্তবতা

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৪২


ইউনিয়ন পরিষদ বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সর্বনিম্ন প্রশাসনিক ইউনিট। বাংলাদেশের গ্রাম উন্নয়নের জন্য প্রায় এক শতকের বেশি সময় ধরে ইউনিয়ন পরিষদ কাজ করে যাচ্ছে।সাধারণত প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার লোক অধ্যুষিত কয়েকটি গ্রাম নিয়ে গঠিত হয় এক একটি ইউনিয়ন ৷স্থানীয় সম্পদকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নের পাশাপাশি ছোট-খাট বিরোধ-মামলার নিষ্পত্তি এবং আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যই ইউনিয়ন পরিষদের সৃষ্টি ৷ কেন্দ্রীয় সরকারের নানামুখী কর্মকান্ডের সুফল তৃণমুল পর্যায়ে সাধারন মানুষের নিকট পৌছে দেয়ার কাজ করেন ইউনিয়ন পরিষদ। এজন্য সরকারের নিকট ইউনিয়ন পরিষদের ভূমিকার গুরুত্ব বেশী। ইউনিয়ন পরিষদ একজন চেয়ারম্যান ও ১২ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হবে ৷ এর মধ্যে ৩টি আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত৷ পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ প্রাপ্ত বয়স্কদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হবেন৷

স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) অধ্যাদেশ ১৯৮৩ মূলে ইউনিয়ন পরিষদ প্রতিষ্ঠিত হয়। তৎপরবর্তী কালে উন্নয়ন সম্ভবনাকে বাস্তবায়িত করার ক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদের সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি, জনমুখী, অংশগ্রহনমুলক , উন্নততর তথ্য প্রযুক্তির ব্যাবহার এবং সেবা প্রক্রিয়া সহজতর এবং আর্থিক শৃংখলাসহ কার্যকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার মানসে দলীয় সরকার ইউনিয়ন পরিষদ অর্ডিন্যান্স ১৯৮৩ বাতিল করে (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯ তৈরির পক্রিয়া শুরু করে এবং ২০১১ সালে এই আইনটি সংসদে অনুমোদন লাভ করে।
এই আইনের মাধ্যমে পরিষদের নিয়মিত কার্যাবলী পাশাপাশি ক্ষমতা এবং ব্যাবস্থাপনায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। কিন্তু এই আইনে মাধ্যমে অল্পতর কিছু পরিবর্তন আনলেও আশানুরূপ কোন পরিবর্তন আনা হয়নি যাহা স্থানীয় লেভেলে সুশাসনের বৃত্তি স্থাপন করবে। অনেকের মতে এ আইনটি বাস্তবিক প্রেক্ষাপটের চেয়েও অনেক প্রসাধনিক।


কিন্তু পরিবর্তন যা করা হয়েছে, বাস্তবে তার প্রকৃত চিত্র কেমন? এই পরিবর্তন সাধনে ইউনিয়ন পরিষদের সক্ষমতা এবং বাধা কতটুকু?


একাডেমিক উদ্দেশ্যে রামগঞ্জের তিনটি ইউনিয়ন অধ্যয়নের সুযোগ হয় আমার। আমাকে পাঠানো হয়েছিল আমার এলাকার অন্তত তিনটি ইউনিয়ন পর্যবেক্ষন করার জন্য। আমার অধ্যয়নের বিষয় ছিল “ইউনিয়ন পরিষদ আইন ২০০৯ বাস্তবায়নের মাত্রা”।

আমার এই অধ্যায়নের পদ্ধতি ছিল চেয়ারম্যান, সদস্য ও সচিবদের সাক্ষাৎকার, নিজস্ব পর্যবেক্ষন এবং ইউনিয়ন নাগরিকদের মতামত। রামগঞ্জের ৪ নং ইছাপুর ইউনিয়ন, চন্ডিপুর ইউনিয়ন এবং লামচর ইউনিয়ন কে বেচে নেই আমি।

এবার আসুন যেনে নেয়া যাক ২০০৯ সালের আইন অনুযায়ী যেসব উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হয়েছে এবং উল্লিখিত তিনটি ইউনিয়নে তার বাস্তব চিত্র।

১। সিটিজেন সার্টার বা নাগরিক সনদঃ নাগরিক সনদ (Citizen Charter) হচ্ছে সেবার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে কোন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রণীত এমন একটি দলিল (document) বা ঘোষনাপত্র (declaration) যাতে উক্ত সেবা প্রদানকরারী প্রতিষ্ঠান কাদের কি ধরণের সেবা প্রদান করবে, কি পরিমাণ প্রদান করবে, কত সময়ের মধ্যে প্রদান করবে, কোন ধরণের সেবা পেতে কি পরিমান খরচ হবে এবং যথাযথভাবে সেবা না পেলে তার প্রতিকারের জন্য জনগন কোথায় ও কি প্রক্রিয়ায় অভিযোগ দাখিল করবে তার বিস্তারিত বিবরণ লিপিবদ্ধ করা হয়। অন্য কথায়, নাগরিক সনদ হচ্ছে সরকারী সেবার মান সম্পর্কে জনগণ ও সেবা প্রদানকারীদের মধ্যে এক ধরণের সমঝোতা স্বারক (understanding) যাতে জনগণের প্রত্যাশা ও সেবা প্রদানকারীদের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন ঘটে থাকে।
২০০৯ আইনের অনুচ্ছেদ ৪৯ এর মাধ্যমে নাগরিক সনদ ব্যাবস্থা চালু করার কথা বলা হয়েছে। নাগরিক সনদ প্রনয়নের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগনের জন্য সরকারি সেবা প্রাপ্তি সহজতর করা এবং সেবার মানোন্নয়ন করা। জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাদের প্রত্যাশার সাথে সংগতি রেখে সেবার মান নির্ধারণ এবং তাদের মতামত নিয়ে নির্দিষ্ট সময় অন্তর নিয়মিত তা পুনঃনির্ধারণ, যাতে করে অব্যহতভাবে সেবার মানোন্নয়ন এবং সেবাকে জনবান্ধব করা সম্ভবপর হয়। জনগনকে তাদের প্রাপ্য অধিকার সম্পর্কে তথ্য প্রদানের মাধ্যমে ক্ষমতায়িত করা যাতে করে তারা সেবা প্রদানকারীদের কাছে সেসব অধিকার দারি করতে পারে এবং বিভিন্ন পদ্ধতিতে (যেমন, অভিযোগ নিস্পত্তির ব্যবস্থা) সেবা প্রদানকারীদের সামাজিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। সেবা প্রদানকারীদের সামর্থ বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন উদ্যোগের (যেমন, সহায়তা কাউন্টার প্রতিষ্ঠা) মাধ্যমে তাদের আচরণের উন্নয়ন এবং প্রতিষ্ঠানে এক ধরণের সৌজন্যতার সংস্কৃতির বিকাশ ঘটানো। সেবার মানোন্নয়ন, জনগনের অংশগ্রহণ, অভিযোগ নিস্পত্তি প্রভৃতি উদ্যোগের মাধ্যমে জনগনের আস্থা অর্জন।

কিন্তু অত্যান্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, উল্লেখিত তিনটি পরিষদের কোনটিতেই নাগরিক সনদ দেখা যায়নি। নাগরিক সনদের বোর্ড মূলত পরিষদ প্রাঙ্গনের দেয়ালে টাঙ্গানো থাকে। চেয়ারম্যান মেম্বাররা নাগরিক সনদ ছাড়াই ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। ফলে স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের নিকট জনগন কাংখিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তবে নাগরিক সনদ প্রকাশের বিষয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও জনগণের কোন ধারনা নেই। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বররা জানেন না নাগরিক সনদ কি? এছাড়া এলাকার নানা পেশার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, নাগরিক সনদ বা সিটিজেন চার্টার বিষয় সম্পর্কে তাদের কোন ধারনা নেই। তবে বিষয়টি অবগত করার পর তারা সেবা গ্রহনের ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

২। উন্নত তথ্য প্রযুক্তির ব্যাবহারঃ বিদ্যমান আইনের ৫০ অনুচ্ছেদ উল্লেখ্য আছে প্রত্যেক ইউনিয়ন সুশাসন নিশ্চিত করিবার লক্ষ্যে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে উন্নত তথ্য প্রযুক্তি ব্যাবহার করিবে। অবাধ তথ্য প্রবাহ এবং প্রযুক্তির ব্যাবহার জনগনের ক্ষমতায়নের অন্যতম পূর্বশর্ত। এই লক্ষ্যে পুরনে স্থানীয় সরকার বিভাগ ইউনিয়ন পর্যায়ে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের পরিচালনায় ‘ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্র (ইউআইএসসি)’ স্থাপন প্রক্রিয়া শুরু করেন।

আমার অনুসন্ধানে উপরিলিক্ষিত তিনটি ইউনিয়নে তথ্য সেবা কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। তথ্য সেবা কেন্দ্র প্রায় ১৩ টি সেবা প্রধান করে।যেমন- কম্পিউটার কম্পোজ, ই-মেইল ইন্টারনেট, ছবি তোলা, কম্পিউটার প্রশিক্ষন, বিভিন্ন সরকারী ফরম, জমির খতিয়ানের জন্য আবেদন ও সরবরাহ, মোবাইল ব্যংকিং, ফটোকপি, জীবন বীমা, প্লাস্টিক আইডি কার্ড, ছাপার কাজ ও বিদ্যুত বিল গ্রহণ।

৩। ওয়ার্ড সভা গঠনঃ বিদ্যামন এ আইনে ইউনিয়ন পরিষদের সাংগঠনিক অবকাঠামো বিস্তত করনে ওয়ার্ড পর্যায়ে ওয়ার্ড কমিটি গঠন এবং বাৎসরিক নূন্যতম ২ বার ওয়ার্ড সভা আহবানের বিধান রাখা হয়েছে। এতে করে ওয়ার্ড সভায় সরাসরিভাবে স্থানীয় ভোটারগনের মতামত, উন্নয়ন প্রস্তাবনা সমূহ ক্ষেত্রভিত্তিক স্থায়ী কমিটিতে যাচাই বাছাই অন্তে সুস্পষ্ট সুপারিশ সহ ইউনিয়ন উন্নয়নের সমন্বয় সভার মাধ্যামে অনুমোদন এবং বাস্তাবায়ন করা সম্ভব হবে। তৃনমূল পর্যায়ের জনসাধারনের সরাসরি অংশগ্রহনের এ কাঠামো গণতান্ত্রিক উন্নয়ন ব্যবস্থাপনার উৎকৃষ্ট নির্দশন।

কিন্তু ইছাপুর, চণ্ডীপুর এবং লামচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং মেম্বারগন দ্বারা ওয়ার্ডগুলোতে ওয়ার্ড সভা গঠনের কোন উদ্যোগ লক্ষ্য করা হয় নি। সচিবদের সাথে কথা বলে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়।

৪। উন্মুক্ত বাজেটঃ প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদকে ওয়ার্ড সভার চাহিদা এবং কে আমলে নিয়ে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে আর্থিক বছরেরে ৬০ দিন পুর্বে উক্ত অর্থ বৎসরেরে আয় এবং ব্যয় বিবরন সংবলিত একটি বাজেট তৈরী করতে হয়। ইউনিয়ন পরিষদ সংশ্লিষ্ট স্থায়ী কমিটি এবং জনসাধারনের উপস্থিতিতে প্রকাশ্য বাজেট অধিবেশন আয়োজন করবে।

উপরোক্ত তিনটি ইউনিয়নে উন্মক্ত বাজেট হয় তবে তা ইউনিয়ন পরিষদ প্রান্তরে স্থানীয় ১৫-২০ জন প্রভাবশালী লোকদের আমন্ত্রনের মধ্যে সীমাবদ্ধ। স্থানীয় জনসাধারনের এ ব্যাপারে কোন অবগতি নেই।

৫। স্থায়ী কমিটিঃ স্থানীয় সরকারকে আরও গতিশীল, জনমূখী এবং পরিষদের কার্যক্রম আরো সুচারূপে বাস্তবায়ন করতে ১৩টি স্থায়ী কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেয় সরকার। নিয়মানুযায়ী পাঁচ-সাত সদস্য বিশিষ্ট একেকটি স্থায়ী কমিটির সভাপতি হবেন একজন ইউ.পি সদস্য। শুধু ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বিষয়ক কমিটির সভাপতি হবেন।

উল্লেখিত ইউনিয়ন পরিষদের স্থায়ী কমিটিসমূহ কাগজে কলমে থাকলেও বাস্তবে কোন কার্যক্রম দেখা যায় না। তাদের নিয়মিত কোন বৈঠক বা সভা হয়না এমনকি বেশ কিছু সদস্যবৃন্দ তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য ও কমিটিতে তার অবস্থান সম্পর্কেও অবহিত নয় বলেই ইউনিয়নের স্থায়ী কমিটিসমূহের সম্পৃক্ততা প্রায়ই থাকেনা। অনেক চেয়ারম্যান মেম্বার জানেন না স্থায়ী কমিটি সম্পর্কে।
ইউনিয়ন পরিষদ বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সর্বনিম্ন প্রশাসনিক ইউনিট। বাংলাদেশের গ্রাম উন্নয়নের জন্য প্রায় এক শতকের বেশি সময় ধরে ইউনিয়ন পরিষদ কাজ করে যাচ্ছে।সাধারণত প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার লোক অধ্যুষিত কয়েকটি গ্রাম নিয়ে গঠিত হয় এক একটি ইউনিয়ন ৷স্থানীয় সম্পদকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নের পাশাপাশি ছোট-খাট বিরোধ-মামলার নিষ্পত্তি এবং আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যই ইউনিয়ন পরিষদের সৃষ্টি ৷ কেন্দ্রীয় সরকারের নানামুখী কর্মকান্ডের সুফল তৃণমুল পর্যায়ে সাধারন মানুষের নিকট পৌছে দেয়ার কাজ করেন ইউনিয়ন পরিষদ। এজন্য সরকারের নিকট ইউনিয়ন পরিষদের ভূমিকার গুরুত্ব বেশী। ইউনিয়ন পরিষদ একজন চেয়ারম্যান ও ১২ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হবে ৷ এর মধ্যে ৩টি আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত৷ পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ প্রাপ্ত বয়স্কদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হবেন৷

স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) অধ্যাদেশ ১৯৮৩ মূলে ইউনিয়ন পরিষদ প্রতিষ্ঠিত হয়। তৎপরবর্তী কালে উন্নয়ন সম্ভবনাকে বাস্তবায়িত করার ক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদের সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি, জনমুখী, অংশগ্রহনমুলক , উন্নততর তথ্য প্রযুক্তির ব্যাবহার এবং সেবা প্রক্রিয়া সহজতর এবং আর্থিক শৃংখলাসহ কার্যকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার মানসে দলীয় সরকার ইউনিয়ন পরিষদ অর্ডিন্যান্স ১৯৮৩ বাতিল করে (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯ তৈরির পক্রিয়া শুরু করে এবং ২০১১ সালে এই আইনটি সংসদে অনুমোদন লাভ করে।
এই আইনের মাধ্যমে পরিষদের নিয়মিত কার্যাবলী পাশাপাশি ক্ষমতা এবং ব্যাবস্থাপনায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। কিন্তু এই আইনে মাধ্যমে অল্পতর কিছু পরিবর্তন আনলেও আশানুরূপ কোন পরিবর্তন আনা হয়নি যাহা স্থানীয় লেভেলে সুশাসনের বৃত্তি স্থাপন করবে। অনেকের মতে এ আইনটি বাস্তবিক প্রেক্ষাপটের চেয়েও অনেক প্রসাধনিক।


কিন্তু পরিবর্তন যা করা হয়েছে, বাস্তবে তার প্রকৃত চিত্র কেমন? এই পরিবর্তন সাধনে ইউনিয়ন পরিষদের সক্ষমতা এবং বাধা কতটুকু?


একাডেমিক উদ্দেশ্যে রামগঞ্জের তিনটি ইউনিয়ন অধ্যয়নের সুযোগ হয় আমার। আমাকে পাঠানো হয়েছিল আমার এলাকার অন্তত তিনটি ইউনিয়ন পর্যবেক্ষন করার জন্য। আমার অধ্যয়নের বিষয় ছিল “ইউনিয়ন পরিষদ আইন ২০০৯ বাস্তবায়নের মাত্রা”।

আমার এই অধ্যায়নের পদ্ধতি ছিল চেয়ারম্যান, সদস্য ও সচিবদের সাক্ষাৎকার, নিজস্ব পর্যবেক্ষন এবং ইউনিয়ন নাগরিকদের মতামত। রামগঞ্জের ৪ নং ইছাপুর ইউনিয়ন, চন্ডিপুর ইউনিয়ন এবং লামচর ইউনিয়ন কে বেচে নেই আমি।

এবার আসুন যেনে নেয়া যাক ২০০৯ সালের আইন অনুযায়ী যেসব উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হয়েছে এবং উল্লিখিত তিনটি ইউনিয়নে তার বাস্তব চিত্র।

১। সিটিজেন সার্টার বা নাগরিক সনদঃ নাগরিক সনদ (Citizen Charter) হচ্ছে সেবার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে কোন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রণীত এমন একটি দলিল (document) বা ঘোষনাপত্র (declaration) যাতে উক্ত সেবা প্রদানকরারী প্রতিষ্ঠান কাদের কি ধরণের সেবা প্রদান করবে, কি পরিমাণ প্রদান করবে, কত সময়ের মধ্যে প্রদান করবে, কোন ধরণের সেবা পেতে কি পরিমান খরচ হবে এবং যথাযথভাবে সেবা না পেলে তার প্রতিকারের জন্য জনগন কোথায় ও কি প্রক্রিয়ায় অভিযোগ দাখিল করবে তার বিস্তারিত বিবরণ লিপিবদ্ধ করা হয়। অন্য কথায়, নাগরিক সনদ হচ্ছে সরকারী সেবার মান সম্পর্কে জনগণ ও সেবা প্রদানকারীদের মধ্যে এক ধরণের সমঝোতা স্বারক (understanding) যাতে জনগণের প্রত্যাশা ও সেবা প্রদানকারীদের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন ঘটে থাকে।
২০০৯ আইনের অনুচ্ছেদ ৪৯ এর মাধ্যমে নাগরিক সনদ ব্যাবস্থা চালু করার কথা বলা হয়েছে। নাগরিক সনদ প্রনয়নের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগনের জন্য সরকারি সেবা প্রাপ্তি সহজতর করা এবং সেবার মানোন্নয়ন করা। জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাদের প্রত্যাশার সাথে সংগতি রেখে সেবার মান নির্ধারণ এবং তাদের মতামত নিয়ে নির্দিষ্ট সময় অন্তর নিয়মিত তা পুনঃনির্ধারণ, যাতে করে অব্যহতভাবে সেবার মানোন্নয়ন এবং সেবাকে জনবান্ধব করা সম্ভবপর হয়। জনগনকে তাদের প্রাপ্য অধিকার সম্পর্কে তথ্য প্রদানের মাধ্যমে ক্ষমতায়িত করা যাতে করে তারা সেবা প্রদানকারীদের কাছে সেসব অধিকার দারি করতে পারে এবং বিভিন্ন পদ্ধতিতে (যেমন, অভিযোগ নিস্পত্তির ব্যবস্থা) সেবা প্রদানকারীদের সামাজিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। সেবা প্রদানকারীদের সামর্থ বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন উদ্যোগের (যেমন, সহায়তা কাউন্টার প্রতিষ্ঠা) মাধ্যমে তাদের আচরণের উন্নয়ন এবং প্রতিষ্ঠানে এক ধরণের সৌজন্যতার সংস্কৃতির বিকাশ ঘটানো। সেবার মানোন্নয়ন, জনগনের অংশগ্রহণ, অভিযোগ নিস্পত্তি প্রভৃতি উদ্যোগের মাধ্যমে জনগনের আস্থা অর্জন।

কিন্তু অত্যান্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, উল্লেখিত তিনটি পরিষদের কোনটিতেই নাগরিক সনদ দেখা যায়নি। নাগরিক সনদের বোর্ড মূলত পরিষদ প্রাঙ্গনের দেয়ালে টাঙ্গানো থাকে। চেয়ারম্যান মেম্বাররা নাগরিক সনদ ছাড়াই ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। ফলে স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের নিকট জনগন কাংখিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তবে নাগরিক সনদ প্রকাশের বিষয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও জনগণের কোন ধারনা নেই। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বররা জানেন না নাগরিক সনদ কি? এছাড়া এলাকার নানা পেশার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, নাগরিক সনদ বা সিটিজেন চার্টার বিষয় সম্পর্কে তাদের কোন ধারনা নেই। তবে বিষয়টি অবগত করার পর তারা সেবা গ্রহনের ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

২। উন্নত তথ্য প্রযুক্তির ব্যাবহারঃ বিদ্যমান আইনের ৫০ অনুচ্ছেদ উল্লেখ্য আছে প্রত্যেক ইউনিয়ন সুশাসন নিশ্চিত করিবার লক্ষ্যে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে উন্নত তথ্য প্রযুক্তি ব্যাবহার করিবে। অবাধ তথ্য প্রবাহ এবং প্রযুক্তির ব্যাবহার জনগনের ক্ষমতায়নের অন্যতম পূর্বশর্ত। এই লক্ষ্যে পুরনে স্থানীয় সরকার বিভাগ ইউনিয়ন পর্যায়ে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের পরিচালনায় ‘ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্র (ইউআইএসসি)’ স্থাপন প্রক্রিয়া শুরু করেন।

আমার অনুসন্ধানে উপরিলিক্ষিত তিনটি ইউনিয়নে তথ্য সেবা কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। তথ্য সেবা কেন্দ্র প্রায় ১৩ টি সেবা প্রধান করে।যেমন- কম্পিউটার কম্পোজ, ই-মেইল ইন্টারনেট, ছবি তোলা, কম্পিউটার প্রশিক্ষন, বিভিন্ন সরকারী ফরম, জমির খতিয়ানের জন্য আবেদন ও সরবরাহ, মোবাইল ব্যংকিং, ফটোকপি, জীবন বীমা, প্লাস্টিক আইডি কার্ড, ছাপার কাজ ও বিদ্যুত বিল গ্রহণ।

৩। ওয়ার্ড সভা গঠনঃ বিদ্যামন এ আইনে ইউনিয়ন পরিষদের সাংগঠনিক অবকাঠামো বিস্তত করনে ওয়ার্ড পর্যায়ে ওয়ার্ড কমিটি গঠন এবং বাৎসরিক নূন্যতম ২ বার ওয়ার্ড সভা আহবানের বিধান রাখা হয়েছে। এতে করে ওয়ার্ড সভায় সরাসরিভাবে স্থানীয় ভোটারগনের মতামত, উন্নয়ন প্রস্তাবনা সমূহ ক্ষেত্রভিত্তিক স্থায়ী কমিটিতে যাচাই বাছাই অন্তে সুস্পষ্ট সুপারিশ সহ ইউনিয়ন উন্নয়নের সমন্বয় সভার মাধ্যামে অনুমোদন এবং বাস্তাবায়ন করা সম্ভব হবে। তৃনমূল পর্যায়ের জনসাধারনের সরাসরি অংশগ্রহনের এ কাঠামো গণতান্ত্রিক উন্নয়ন ব্যবস্থাপনার উৎকৃষ্ট নির্দশন।

কিন্তু ইছাপুর, চণ্ডীপুর এবং লামচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং মেম্বারগন দ্বারা ওয়ার্ডগুলোতে ওয়ার্ড সভা গঠনের কোন উদ্যোগ লক্ষ্য করা হয় নি। সচিবদের সাথে কথা বলে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়।

৪। উন্মুক্ত বাজেটঃ প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদকে ওয়ার্ড সভার চাহিদা এবং কে আমলে নিয়ে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে আর্থিক বছরেরে ৬০ দিন পুর্বে উক্ত অর্থ বৎসরেরে আয় এবং ব্যয় বিবরন সংবলিত একটি বাজেট তৈরী করতে হয়। ইউনিয়ন পরিষদ সংশ্লিষ্ট স্থায়ী কমিটি এবং জনসাধারনের উপস্থিতিতে প্রকাশ্য বাজেট অধিবেশন আয়োজন করবে।

উপরোক্ত তিনটি ইউনিয়নে উন্মক্ত বাজেট হয় তবে তা ইউনিয়ন পরিষদ প্রান্তরে স্থানীয় ১৫-২০ জন প্রভাবশালী লোকদের আমন্ত্রনের মধ্যে সীমাবদ্ধ। স্থানীয় জনসাধারনের এ ব্যাপারে কোন অবগতি নেই।

৫। স্থায়ী কমিটিঃ স্থানীয় সরকারকে আরও গতিশীল, জনমূখী এবং পরিষদের কার্যক্রম আরো সুচারূপে বাস্তবায়ন করতে ১৩টি স্থায়ী কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেয় সরকার। নিয়মানুযায়ী পাঁচ-সাত সদস্য বিশিষ্ট একেকটি স্থায়ী কমিটির সভাপতি হবেন একজন ইউ.পি সদস্য। শুধু ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বিষয়ক কমিটির সভাপতি হবেন।

উল্লেখিত ইউনিয়ন পরিষদের স্থায়ী কমিটিসমূহ কাগজে কলমে থাকলেও বাস্তবে কোন কার্যক্রম দেখা যায় না। তাদের নিয়মিত কোন বৈঠক বা সভা হয়না এমনকি বেশ কিছু সদস্যবৃন্দ তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য ও কমিটিতে তার অবস্থান সম্পর্কেও অবহিত নয় বলেই ইউনিয়নের স্থায়ী কমিটিসমূহের সম্পৃক্ততা প্রায়ই থাকেনা। অনেক চেয়ারম্যান মেম্বার জানেন না স্থায়ী কমিটি সম্পর্কে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.