নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তানজীনা

আমি একজন বাংলাদেশী মুসলিম। জাপানে গবেষনায় আছি। জাপানে আমার চাকরী গবেষনা সবই জাপানী উন্নত প্রযুক্তি উন্নয়নশীল দেশের সাধারণ মানুষের কাছে সুলভে কিভাবে পৌঁছে দেয়া যায় তাই নিয়ে। এ কাজ করতে করতে দেখেছি আমার দেশের অনেক অনেক ক্ষেত্রে অনেক কাজ বাকী রয়ে গেছে এবং আমার দেশের এই গরীব মানুষগুলির ট্যাক্সের পয়সায় আমি পড়াশোনা করে এ পর্যায়ে এসেছি। তাই, আমি জানি এই দেশের প্রতি, এই মানুষগুলির প্রতি “আমার অনেক ঋণ আছে”। তারই একটা ধাপ এই ব্লগে লেখা।

তানজীনা › বিস্তারিত পোস্টঃ

উন্নত দেশের মেয়েরা কত উন্নত??

০৮ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ১১:৪০

৬ই জুলাই প্রথম আলোয় একটা খবরে আমি একেবারে বিস্ময়ে হতবাক, “সাবেক বিশ্বসুন্দরী যুক্তামুখী সম্প্রতি তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে মামলা “ বিশেষত পরের লাইন “স্বামীর পাশাপাশি শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের বিরুদ্ধেও যৌতুকের জন্য গায়ে হাত তোলার অভিযোগ করেছেন” ।

এখন একজন বিশ্বসুন্দরী যদি যৌতুকের জন্য শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়, তাহলে তো এই উপমহাদেশের মেয়ে হিসেবে আমি যে এমন কোন নির্যাতনের শিকার হইনাই, মাশাল্লা, এই জন্যই তো আমার দিনের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে ২ রাকাত করে অতিরিক্ত নফল নামাজ পড়ার কথা!! একটু মজা করলাম, কারণ আমার স্বামী আমার বিয়ের সময় এই একটা ব্যাপারেই খুব কঠিন ছিল যে “একমাত্র মেয়েকে খুশী হয়ে দিলাম” ফর্মেও যেন এমন কোন কিছু তাদের বাড়িতে না ঢুকে। তবে, হ্যা যৌতুক ভারতেই সবচেয়ে চরম ভাবে আছে বলেই জানি। এই জন্যই তো ভারতে মেয়ে শিশুর ভ্রুণ হত্যা এখনও প্রকট ভাবেই হয়, যেটা আমাদের দেশেও হয় না মাশাল্লাহ, তা সেটা রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম এবং ইসলামে ভ্রুণ হত্যা নিষিদ্ধ বলেই হয়ত । তবে এই বাংলা, ভারত, পাকিস্থান সহ আরো অনেক দেশে যৌতুক এখনো ভালভাবেই প্রচলিত আছে -এইটাই হতাশাজনক।আমি অনেক খুজে বের করতে চেষ্টা করলাম এই উপমহাদেশে পারিবারিক নির্যাতনের প্রকৃত স্ট্যাটিস্টিক্স, পেলাম না।

এখন আমার দেশের একটি মেয়ের মনে হতে পারে, আহা উন্নত বিশ্বে মেয়েরা কত সুখে আছে, যৌতুক ই নাই, তো আর নির্যাতন। তাদের উদ্দেশ্যে বলি, হ্যা আমাদের দেশে মেয়েরা রাস্তা ঘাটে চলতে পারে না যে নোংরা দৃষ্টির জন্য, তা আমি জাপানে কখনই দেখি নাই, রাত সাড়ে ১২টায় নিশ্চিন্তে হেটে “7-11” থেকে সদাই কিনেছি, রাত ১০টা/১১টায় সান্ধ্যাভ্রমণে যাই। জীবনে প্রথম মনে হয় মেয়েরাও সমানভাবে বাঁচে। ছেলেবেলা থেকে স্কুলে, সোসাইটিতে মেরে ধরে যেভাবে হোক তাদের কারো প্রাইভেসী অনতিক্রম্যতার ব্যপারটা মনের মধ্যে গেঁথে দিয়েছে। অথচ এই দেশে কিন্ত বেশীর ভাগ লোকেরই কোন ধর্ম নাই। ওরা যখন জানে যে, আমাদের দেশের সবারই কোন না কোন ধর্মের অনুসারী, ওরা ভাবে আমাদের দেশে তাহলে কোন অপরাধ হয়না। চিরসুখী দেশ!! খুব বিদ্রুপাত্মক মনে হয় ওদের এসব কথা। কারণ আমরা জানি যে, ধর্মের কি ভাবার্থ- উপলব্ধি আমাদের কাছে!! ভাষাগত বিভেদের কারণে আমরা কোরান যথাযথভাবে বুঝিনা, নেয়ামুল কোরান আকড়ে ধরি। কোরান বুঝতে হলে সাধারণত অর্ধ শিক্ষিত মাওলানার তফসীরে বিশ্বাস করি, যারা বেশীর ভাগই তাদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে বানানো থিসিস আলোচনা করেন। আ্মাদের কাছে তাই কোরান ,তাই ইসলাম । যেমন, পর্দা ফরজ, এ ব্যাপারে কোন দ্বিমত নাই, কিন্তু পর্দাটা আসলে কি? শুধু একটা মেয়েকে আপাদমস্তক বোরখায় ঢেকে দিলাম, ব্যাস??? “পর্দা হবে তোমার মনের, তোমার চোখের এবং সেটা নারী পুরুষ উভয়ের”। শুধু একটা মেয়েকে এই উপলব্ধি না দিয়ে বোরখা দিয়ে ঢেকে দিলেও সে ব্যাভিচার করবেই। আবার এর উপলব্ধি থাকলে একজন আধুনিক হেজাববিহীন পোশাকের মহিলাও একজনের প্রতি শতভাগ বিশ্বস্ত থাকবে। আর মেয়েটাকে ঢেকে দিলাম, কিন্তু ছেলেটাকে এসব কোন উপলব্ধি না দিয়ে ছেড়ে দিলাম, তখন? সেই ছেলে ইভ টিজিং করে বেড়াতে লাগলো। কারণ “তার মনের ও চোখের পর্দা পরেনি যে নারীকে সে অধিকার করেনা, তার থেকে”। আমরা আমাদের মেয়েকে পর্দা করালাম, ছেলেকে না, এটা কি ডাবল স্ট্যান্ডার্ড না? কাজেই এমন বাংলা কোরান এবং এমন হুজুরদের তফসীর ই আমাদের কাছে আল কোরানের প্রতিনিধিত্ব করে। উগ্রতা, ধর্মান্ধতা ছাড়া আমরা আর কি ই আশা করতে পারি? আমি মনে করি এইসব রুট লেভেলে কাজ করতে হবে, এইসব শিক্ষা শুরু হবে স্কুল থেকে। আমাদের দেশের মেয়েরা পারবে তা আমি জাপানীদের দেখে বুঝেছি। এতো প্রতিকুলতার মাঝেও আমাদের মেয়েরা কত এগিয়ে। অথচ, জাপানে কিন্তু মেয়েরা এতো উন্নত সুরক্ষিত নিশ্চিন্ত জীবনের সুবিধা ও প্রিভিলেজ পেয়েও কিছুই অগ্রসর হয়নি।??বিশ্বর তৃতীয় বৃহৎ অর্থনীতির এই দেশেও মেয়েরা মনে করে “লেখনং পড়নং বিবাহের কারণং”, হায়ার সেকেন্ডারী শেষ করে বেশীর ভাগ মেয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে না পড়ে জুনিয়র কলেজ পড়ে।পাশ করে সেক্রেটারীয়াল জব করে আর বিয়ের অপেক্ষায় ছেলে দেখতে থাকে। বিয়ে হলে ব্যাস, ঘরকন্না। কেঊ কেউ একদম শেষ সন্তান হাই স্কুলে উঠে গেলে জব এ ফিরে যান। কিন্ত্ সেটাও আন্সকিল্ড ম্যানুয়াল কাজ এবং পার্ট টাইম।অনন্যসাধারণ কোন ঘটনা ছাড়া এর ব্যাতিক্রম কোন মেয়েই চিন্তা করতে পারে না,স্বামীর চিন্তা করা তো অনেক পরের প্রসঙ্গ ! এমনকি রেগুলার চাকরীতে, অর্থাৎ অফিস জবে নারী- পুরুষের বেতন স্ক্লেলেও প্রচুর তফাৎ। কাঙ্গালিনী সুফিয়ার “বুড়ি হইলাম তোর কারণে” গানটার ভিডিও টা মনে পরে? গানে একই কাজে ময়নার বাপ পেল সুফিয়ার চেয়ে পেল অনেক বেশী পারশ্রমিক কারণ সুফিয়া মেয়ে? আমি বাংলাদেশে অন্তত কোন অফিসে এমন দেখিওনাই, শুনিওনাই।

জাপানে একান্নবর্তী পরিবার বলতে গেলে নেই ই, তবু শাশুড়ীরা নাতি নাতনীকে ফোন করে খোঁজ নেন ”মা তোদের ঠিকমত যত্ন নিচ্ছে তো? কি কচু রাঁধে তোর মা? রাধতাম আমি!” আর একসাথে থাকলে শুনেছি কোথাও কোথাও বউয়ের শুকনো তয়লায় গা মোছাটাও শাশুড়ীর সহ্য হয় না, দৌড়ে গিয়ে তয়লা হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে নিজের না মোছা পিঠ মুছে ভিজিয়ে এরপর ওটা বউকে দেবে। এমনকি তার পরও যখন এদের মেয়েরা সমধিকার নিয়ে বলে, আমার বলতে ইচ্ছা হয় “তোমাদের তো অধিকার ই নাই, তো আবার সম অধিকার” !!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.