নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তানজীনা

আমি একজন বাংলাদেশী মুসলিম। জাপানে গবেষনায় আছি। জাপানে আমার চাকরী গবেষনা সবই জাপানী উন্নত প্রযুক্তি উন্নয়নশীল দেশের সাধারণ মানুষের কাছে সুলভে কিভাবে পৌঁছে দেয়া যায় তাই নিয়ে। এ কাজ করতে করতে দেখেছি আমার দেশের অনেক অনেক ক্ষেত্রে অনেক কাজ বাকী রয়ে গেছে এবং আমার দেশের এই গরীব মানুষগুলির ট্যাক্সের পয়সায় আমি পড়াশোনা করে এ পর্যায়ে এসেছি। তাই, আমি জানি এই দেশের প্রতি, এই মানুষগুলির প্রতি “আমার অনেক ঋণ আছে”। তারই একটা ধাপ এই ব্লগে লেখা।

তানজীনা › বিস্তারিত পোস্টঃ

কিভাবে খেলার ফর্ম ধরে রাখি?

০৮ ই জুন, ২০১৪ সকাল ১০:৪৫

কনিষ্ঠ পুত্রের বাস্কেটবলের গুরুত্ত্বপূর্ণ একটা Tournament দেখতে গত রোববার গেলাম “নাগাসাকি”র কাছে। আমাদের শহর থেকে গাড়ীতে ঘন্টা দুয়েক লাগে।

ভোর ৭ টায় গেলাম- রাত ৮:৩০ এ ফিরলাম।

বাসায় অপেক্ষা করছে স্তূপীকৃত কাজ- পরদিন সাপ্তাহিক কর্মদিবসের শুরু।

সমস্ত শরীর মটর নিউরনে আক্রান্তের মত বোধশূণ্য নিস্তেজ মনে হচ্ছে।

দিনগুলি এতো over occupied যায় যে, বন্ধের ১ টা দিনের কয়েক ঘন্টা বিশ্রামও মরুচারীর তৃষ্ণার পানির মতই কাংখিত।

কিন্তু সব ছেলে মেয়েরই তার বাবা- মার’ কাছে চাওয়া সমান। সেই মা প্রধানমন্ত্রীই হোক , কিংবা ছুটা বুয়াই হোক! তবে, গিয়ে এক অভিজ্ঞতাই হল বটে!

জাপানীরা খাটো হয়- এটা যে ২য় বিশ্বযুদ্ধের আগের জেনেরেশনের জন্যই প্রযোজ্য তা এতদিনে খুব ভালই জানি। সর্বনিম্ন উচ্চতা কোন মেয়ের ৫’১’’ র নীচে দেখিনি- ছেলে ৫’৫’’র নীচে দেখিনি। আর বাস্কেটবল তো লম্বাদেরই খেলা।

গিয়ে দেখি ১৪ বছরের ছেলে কয়েকটা ৬’২’’ ইঞ্চির উপর লম্বা। গায়ে অসুরের শক্তি –যেটাও এই খেলায় খুবই দরকার।

আমার ছেলের সারাদিনের যে এক জিকির , “মা , আমাকে বেশী করে দোয়া পড়ে –ঠিক ঠিকটা খুজে রান্না করে খাওয়ায় লম্বা বানায়ে দাওনা কেন?? তুমি নিজে বাট্টু- আবার আরেক বাট্টুকে বিয়ে করছো কেনো? কেনো?? ” ইত্যাদি ভ্যান ভ্যানগুলি যে কত হতাশা থেকে বলে তা বুঝতে পারলাম।

ওর ১২ বছর, উচ্চতা ৪’১১” ছুঁই ছুঁই - আর মূল দলের সবচেয়ে খাটো ছেলেটাও ৫’২’’! হরমোন স্পেশালিষ্ট থেকে শুরু করে কোন চেষ্টাই বাদ রাখিনি- কিন্তু জাপানে unnatural কিছু করতে দেবে না- ডাক্তারদের সাফ কথা- “লম্বা তো ওর থেমে যায়নি- তোমাদের জিন থেকে যা পেয়েছে সেই হারেই লম্বা তো হচ্ছেই- ওর growth থেমে গেলে- বামন হলে হরমোন থেরাপীতে যেতাম।“ চুড়ান্ত হতাশ হয়েছিলাম – যে কেন চীন/ কোরিয়ায় থাকি না- থাকলে পা কেটে হাড্ড লাগিয়েও হাইট বাড়িয়ে দিত!

জুনিয়র হাই স্কুলে ও first grade এখন আছে- মূল দলে ওদের গ্রেডের একটা ছেলেই replacement player হিসেবে ঢুকতে পারছে- এছাড়া বাকী সবার কাজ রেগুলার খেলোয়ারদের খেদমত করা।

আমরা খুব ভালই বুঝলাম- ও তীব্র অনিচ্ছা নিয়ে খাদেমের কাজগুলি করছে। কারণ, সে এলিমেন্টারী লেবেলে এই শহরে ২য় শ্রেষ্ঠ খেলোয়ার হয়েছিল- সবার প্রশংসা আর মুগ্ধতার দৃষ্টি দেখেই অভ্যস্ত ছিল গত মার্চ পর্যন্ত।

আমরা আন্দাজ করতে পারলাম যে আসলে “ কতটা পথ পেরুলে তবে পথিক হওয়া যায়”- অর্থাৎ জাপানের জুনিয়র হাইস্কুলের মধ্যে এই নাম্বার 1 টীমে রেগুলার খেলোয়ার হতে হলে ওর আসলে কতটা কষ্ট করতে হবে এবং আমাদেরও ওকে কিভাবে complement করতে হবে।

কোচটাও জাপানের সেরা- প্রচন্ড বদরাগী এক আধবুড়া, ৫৪ বছর বয়সে লাল টকটকা প্যান্ট, সাদা ফুল শার্ট আর চক্রাবক্রা কোট পরে কোটের বাইরে দাঁড়িয়ে ক্রমাগত চিৎকার করতে করতে পুরা ত্রাসের রাজত্ত্ব কায়েম করে আছে ( হার্ট অ্যাটাক হয়না কেম্নে বুঝলাম না!) । এক পর্যায়ে কোটও ছুড়ে ফেললো । কারো একবারের বেশী ২ বার কোন ভুল হলেই একেবারে গলার হালাকু থেকে গগনবিদারী চিৎকার করে তাকে বসিয়ে দিয়ে অপেক্ষমানদের একটার মাথায় ঠকাশ করে চাটি মেরে “ উঠ, যা” বলে নামিয়ে দিচ্ছে। মাঝে মাঝে খেলার মাঝখানেও খেলা থামিয়ে ডেকে গিয়ে সেইরকম “সামুরাই ঝাড়ী” শুরু করছে । ১২ থেকে ১৫ বছরের সব বাচ্চা- ক্রমাগত গালীর উপর ঘেমে নেয়ে পর পর ৩টা ম্যাচ খেলল এবং চ্যাম্পিয়ন হল, মাশাল্লাহ! এই পরিমাণ চাপ নিয়ে বাচ্চাগুলি খেলে বছরের ৩৬৫ দিন round the clock- কোন ছুটি নাই- তাতে নাকি ফর্ম পরে যাবে!

আর আমাদের জাতীয় দলের খেলোয়াররা বলে “ ফর্ম খারাপ হলেই, বাজে খেললেই টীম থেকে বাদ পরার সম্ভাবনা- এইসব চাপ নিয়ে ভাল খেলবো কিভাবে?” আরেব বাবা !! কি তামশা——জাতীয় দল কি তোমার শ্বশুড়বাড়ী যে মেয়ের বিয়ে দিসে- এখন ফর্ম খারাপ হলেও “জামাই মানুষ” - সারাজীবন কোলে নিয়ে বসে থাকবে?

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই জুন, ২০১৪ সকাল ১১:০৭

ঢাকাবাসী বলেছেন: ভাল লিখেছেন। হ্যাঁ দুনিয়াতে সবচাইতে দুর্নীতিবাজ দেশের খেলার কর্তাদের দ্বারা খামোখা বাদ পড়ার সম্ভাবনাই বেশী কারন যার কাছ থেকে বেশী ঘুষ পাবে তাকেই এরা রাখবে! খেলা ফেলা গোল্লায় যাক!

০৮ ই জুন, ২০১৪ সকাল ১১:২৮

তানজীনা বলেছেন: খেলার মধ্যে যখন রাজনীতি আর আত্বীয়করণ ঢোকানো তখন বুঝতে পারা যায় যে দেশ দুর্নীতির শীর্ষে এমনি এমনি ঊঠে আসে না। কারণ,বিশ্বের কাছে আমাদের অভাগা দেশের ২/১ টা পজিটিভ ভাবমূর্তির একটা হল আমরা এখন টপ র‍্যাঙ্কিং “ Cricket playing nation” । এই ইমেজের তোয়াক্কাও যদি কর্তা ব্যাক্তিরা না করেন তাহলে সত্যিই মন্তব্যের ভাষা হারিয়ে ফেলি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.