নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তানজীনা

আমি একজন বাংলাদেশী মুসলিম। জাপানে গবেষনায় আছি। জাপানে আমার চাকরী গবেষনা সবই জাপানী উন্নত প্রযুক্তি উন্নয়নশীল দেশের সাধারণ মানুষের কাছে সুলভে কিভাবে পৌঁছে দেয়া যায় তাই নিয়ে। এ কাজ করতে করতে দেখেছি আমার দেশের অনেক অনেক ক্ষেত্রে অনেক কাজ বাকী রয়ে গেছে এবং আমার দেশের এই গরীব মানুষগুলির ট্যাক্সের পয়সায় আমি পড়াশোনা করে এ পর্যায়ে এসেছি। তাই, আমি জানি এই দেশের প্রতি, এই মানুষগুলির প্রতি “আমার অনেক ঋণ আছে”। তারই একটা ধাপ এই ব্লগে লেখা।

তানজীনা › বিস্তারিত পোস্টঃ

যুদ্ধপরবর্তী প্রজন্মের জন্য এটি একটি চরম পত্র

২২ শে নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১৬

“---এর ফাঁসী হলে সরকারী দলের ওমুক রাজাকারকে কেন ফাঁসী দেয়া হবেনা?”
আমি বলছিনা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা ঘোষনার মানদন্ডের বাইরে যেই ১৬০০ যুদ্ধ অপরাধী বন্দী ছিল, যাদের প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান মুক্ত করেছিলেন, তারা কেউই ক্ষমার যোগ্য। অবশ্যই জার্মানীর নাৎসিদের বিচারের মত হলোকাস্ট আইনে প্রশ্নাতীত ভাবেই সবাইকে কাঠগড়ায় দাড় করানো দাবী এই বাংলায় শেষ দিন পর্যন্ত জাগ্রত থাকবে।

আলোচিত এই ১২ জনকে দ্রুত বিচারের আওতায় আনা মূলত একটি “প্রতীকি বিচার” । এর মাধ্যমে এই বার্তা পৌঁছে দেয়া , যে, শীর্ষস্থানীয় ক্ষমতাধর এই আলোচিত ব্যাক্তিদেরও বিচার কার্যকর করা হচ্ছে, কাজেই কেউই এই বিচারের বাইরে নয়। অবশ্যই সরকারী দলের উচ্চ পর্যায়ের কেউ সমানভাবে দায়ী হয়েও দ্রুত বিচারের আওতার বাইরে থাকলে তা বিচার কার্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।
বিচার কার্যে পর্যাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহে ত্রুটিও নজর এড়িয়ে যায়না। এক্ষেত্রেও জার্মানীর উদাহরন টানতে হয়। হিটলারে নাৎসি বাহিনী প্রতিটি কন্সান্ট্রেশন সেলে সুনির্দিষ্টভাবে যেসকল ইহুদীদের হত্যা করেছিল তাঁদের নাম, ঠিকানা যাবতীয় তথ্য নথিভুক্ত করে রেখেছিল নাৎসি বাহিনী নিজেদের সৌর্য বীর্যের দম্ভ দেখাতে। ভাগ্যের ফেরে যুদ্ধে আকস্মিক ভাবে হেরে যাওয়ায় নাৎসি বাহিনী সেই সব নথিপত্র নিয়মমাফিক ধংস্ব করে যেতে পারেনি যা তাদের জন্য কালসাপ হয়ে পাশবিকতার সাক্ষী দিয়ে গেছে। কিন্তু, আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে যুদ্ধচলাকালীন কোন নথিকরণ সেভাবে হয়নি যুদ্ধপরবর্তী দলীল ছাড়া এবং যুদ্ধের ৪০ বছর পর বিচার কার্যে চাক্ষুস সাক্ষী, অকাট্য নথিপত্র জোগাড় নিঃসন্দেহে সহজসাধ্য নয়।

একজন মানুষের জীবনের বিভিন্ন ভূমিকা থাকে, কুখ্যাত খুনী, দাগী আসামী, নীতিহীন কর্মকর্তাও খুব ভাল বাবা বা স্বামী হতেই পারেন। শেষ বিদায়ে তারা পরিবারকে জড়িয়ে ধরে যে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিলেন তাতে অবশ্যই কোন খাঁদ ছিলনা। কিন্তু তাঁদের সন্তানদের আত্মবিশ্বাস বা দম্ভোক্তি আমাকে বিস্মিত করছে! সরকারী দলে নেই বলে তাদের বিচার হচ্ছে বলে তাদের বিশ্বাস বা ক্ষেধোক্তি? তার মানে কি তারা মনে প্রানে বিশ্বাস করছে তাদের জনক নিষ্পাপ? নাকি লৌকিকতা বা সমাজে বাস করার জন্য নিজেদের নকল এক ভাবমুর্তির মুখোশ ধারণ! কাক যেমন নিজে চোখ বুজে সর্বসম্মুখে ডিম পেড়ে ভাবে কেউ দেখতে পাচ্ছেনা!

কিন্তু একবার শুধু ভাবুন বাংলার ৩০ লক্ষ শহীদ পরিবারের কথা, জাতিকে মেধাশূন্য করার প্রক্রিয়ায় দেশের সূর্য সন্তানদের হত্যার কথা যাঁদের বাড়ি থেকে তাঁদেরই অনেকের প্রিয় ছাত্রদের দিয়ে ডাকিয়ে বের করে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে, শহীদ আজাদের মা’র কথা যিনি তাঁর জীবনের একমাত্র বাঁচার সম্বল ছেলের শুধু একটু ভাত খাবার শেষ ইচ্ছা পূরন করতে পারেন নি বলে সারাজীবন ভাত মুখে তুলেন নি , ছেলে টর্চার সেলে মাটিতে শুতে হয়েছে বলে আজীবন তিনিও বিছানায় সজ্জা নেন নি। শহীদ সেই সব পরিবারের বিধবা মা ৮/৯ টি পর্যন্ত শিশুসন্তান নিয়ে সরকারের দানে পাওয়া বাড়িতে কি মানবেতর বেঁচে থাকার সংগ্রামে ৪৪ বছর পাড় করছেন ( শহীদ পরিবার সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের “আমি” উপন্যাস উল্লেখ্য) । আর সেখানে তাঁদের বুকের উপর দিয়ে স্বাধীন দেশের পতাকা শোভিত গাড়িতে সদম্ভে দেশ কাঁপিয়ে বেড়িয়েছে তাঁদের পিতার খুনীরা যারা এই দেশকেই যারা অস্বীকার করেছিল।

এমনকি আজকের স্বাধীন দেশেও একেকটি বিচার কার্যকর করতে কতশত সাধারন মানুষের বলি চড়তে হচ্ছে! আমাদের মত যুদ্ধপরবর্তী প্রজন্মের জন্যও এটি একটি চরম পত্র যে কত নৃশংস বিবেকবর্জিত এরা ছিল!
শহীদ জননী জাহানারা ইমাম এই বিচার দেখে যেতে পারলেন না। কিন্তু তিনি যেই আন্দোলন সেই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে ৭২ সালে শুরু করেছিলেন তাঁর আজ বিজয় সূচিত হচ্ছে।
“আজকের পতাকা শোভিত গাড়ীতে চড়ার দম্ভই শেষ নয়- এই বাংলায় ফাঁসী কাষ্ঠে ঝুলেই তোমার প্রাপ্যের অবসান” - এই নজীর সকল যুদ্ধাপরাধীর অত্যন্ত জরুরী ছিল।
সকলের শুভবুদ্ধির উদয় হোক।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫০

চাঁদগাজী বলেছেন:

ঠিক ভাবনা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.