নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তানজীনা

আমি একজন বাংলাদেশী মুসলিম। জাপানে গবেষনায় আছি। জাপানে আমার চাকরী গবেষনা সবই জাপানী উন্নত প্রযুক্তি উন্নয়নশীল দেশের সাধারণ মানুষের কাছে সুলভে কিভাবে পৌঁছে দেয়া যায় তাই নিয়ে। এ কাজ করতে করতে দেখেছি আমার দেশের অনেক অনেক ক্ষেত্রে অনেক কাজ বাকী রয়ে গেছে এবং আমার দেশের এই গরীব মানুষগুলির ট্যাক্সের পয়সায় আমি পড়াশোনা করে এ পর্যায়ে এসেছি। তাই, আমি জানি এই দেশের প্রতি, এই মানুষগুলির প্রতি “আমার অনেক ঋণ আছে”। তারই একটা ধাপ এই ব্লগে লেখা।

তানজীনা › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভাষা দিবসের জন্য নয়- বাংলা ভাষাকে জানাতে লিখছি।

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৩২

"বাংলা ট্রিবিওন" অনলাইন নিউজ পোর্টালে গত ভাষা দিবসে প্রকাশিত এই কলামটি আর্কাইভে আর নেই।
কিন্তু লেখাটি আবারো শেয়ার করলাম, কারণ, আমার সব লেখার মতোই অনেক পড়ে, গবেষণালব্ধ এই লেখাটিও - তথ্যগুলি যাঁদের অজানা তাঁরা যদি জানতে চান এই ভেবে।

দিবস ভিত্তিক এই লেখা নিয়ে অনেক আক্ষেপ, খেদোক্তিও দেখেছি। কিন্তু আজ আমি নিজেই লিখতে বসেছি, যার কারণটা কেবলই বাংলা ভাষার জন্য লেখা- ভাষা দিবস মাথায় রেখে নয়।
এর পেছনের মূল প্রণোদন ছিল এবার একুশে বইমেলায় প্রথম উপন্যাস লিখতে বসে কিছু একান্ত উপলব্ধি; আর ছিল বছর খানেক ধরে সামাজিক মাধ্যমে (social media) দেখা কিছু ভিডিও ক্লিপ।

“একুশে ফেব্রুয়ারীর তাৎপর্য কি”, “এইদিনে কি হয়েছিল” – এমন মৌলিক কিছু প্রশ্নে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া থেকে বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের বেদনাহতাহত হবার মত উত্তর! যতদূর মনে পড়ে, ভিডিওটি একুশে ফেব্রুয়ারীর দিনেই শহীদ মিনারে অথবা এ দিবসের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আগতদেরকেই প্রশ্ন করা হয়েছিল।
তবে, সবচেয়ে স্পর্শিত হয়েছিলাম বাংলা ভাষায় আমদের দৈনতা উন্মোচন করে দেয়া এক ক্লিপে, যেখানে একজন বিদেশিনী খুব অনবদ্য ভাবে নির্ভেজাল বাংলায় বলেছিলেন ইংরেজী বা অন্য বেশীর ভাগ দেশের ভাষায় কথা বলবার ক্ষেত্রে কিন্তু অন্য ভাষার কোনরকম মিশেল দেয়া হয়না। তাহলে বাংলা ভাষাভাষীদের ক্ষেত্রে বাংলায় এমনটা কেন হয়? দৈনন্দিন কথায় ব্যবহৃত সেই অন্য ( সাধারণত ইংরেজী) ভাষার কোন বাংলা প্রতিশব্দ কি নেই?

এই ভিডিও ক্লিপটি দেখার পর যারা কোন রকম অন্য ভাষার মিশেল ছাড়া মোটামুটি শুদ্ধ উচ্চারণে প্রমিত বাংলায় কথা বলেন তাদের প্রতি আমার দৃষ্টিভঙ্গি আরো অধিক উচ্চতায় উন্নীত হয়। আদতেই যে কোন ভাষা শুদ্ধভাবে জানাই একটা দক্ষতা। এবং যিনি একটি ভাষা বিশুদ্ধভাবে জানেন—তিনিই জানেন “বিশুদ্ধ ভাষাজ্ঞান” শব্দটার তাৎপর্য কি এবং কতটুকু জানা হলে একটা ভাষা আদতে “জানি” বলতে পারি। তখন তিনি অন্য যে ভাষাই রপ্ত করবেন বা ব্যবহার করবেন সে ভাষার বিশুদ্ধ রূপটাই ব্যবহার করবেন।
আমরা অনেকেই জানি, ভাষার জন্য জীবন দান শুধু বাঙ্গালীরাই দিয়েছি যার ফলশ্রুতিতে ইউনেস্কো আমাদের ভাষা দিবসকে “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা” দিবসের মর্যাদা দিয়েছে ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর; যার পেছনে অবদান ছিল কানাডার একটি সংগঠন “মাদার লেনগুয়েজ লাভার অব দা ওয়ার্ল্ড” এর ২ জন বাঙ্গালী সদস্য - রফিকুল ইসলাম এবং আব্দুস সালাম এর অপরিসীম চেষ্টার!

কিন্তু আরও কতটা মহিমান্বিত ও বাগ্ময় এর ইতিহাস তা এই মাসে একটু ইতিহাসের ঝাঁপি খুলে দেখি!

ব্রিটিশ রাজ থেকে পাকিস্তান জন্ম নিল পাঞ্জাব, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ (আফগানী প্রদেশ), কাশ্মীর, সিন্ধু, বেলুচিস্তান নিয়ে। দেশগুলির নামের আদ্যক্ষর নিয়ে নাম হয়েছিল PAKSTAN. পরে এটাকে অর্থবোধক ব্যাঞ্জনাপূর্ণ করতে পাকিস্থান নামাকরণ হলো যার অর্থ হলো পূন্যভূমি।
পাঁচ প্রদেশের বাসিন্দা কারোর ভাষাই উর্দূ ছিলনা। পাঞ্জাবের- পাঞ্জাবী ভাষা, আফগানীর ( খাইবার পাখতুন) ভাষা পাশ্তুন, আজাদ কাশ্মীরের বিভিন্ন স্থানীয় ভাষা ( পাহাড়ি,পাশ্তুন,পাঞ্জাবী ইত্যাদি) সিন্ধুদের সিন্ধী, বেলুচিস্তানের বেলুচী।
এদিকে উর্দূর জন্ম হিন্দী থেকে। একই ভাষা ধর্মের ভিত্তিতে ব্যবহারে ভিন্নতা আনতে ভারতে হিন্দু ধর্মালম্বীদের জন্য হিন্দী ভাষায় সাংস্কৃত ভাষা থেকে শব্দ গ্রহন করে সমৃদ্ধ করা হয় এবং পরবর্তীতে একে রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে আরোপিত করা হয়। আর উর্দূতে এই সমৃদ্ধি আনা হয় ফার্সী এবং আরবী ভাষা থেকে শব্দ গ্রহন করে। হিন্দী লেখা হয় দেবনাগরী লিপিতে (স্ক্রিপ্টে) । উর্দু আরবী লিপিতে। উল্লেখ্য, এক্ষেত্রে লিপিতেও সামান্য পরিবর্ত আনতে হয়েছে। যেমন, আরবীতে পে হরফ / অক্ষর নেই। কাজেই, আলীফ বে তে’র পর ফার্সী লিপিতে পে যুক্ত করা হয়েছে যা উর্দুতেও একি ভাবেই ব্যবহৃত।

ধর্মভিত্তিক এক অসম্পূর্ণ দেশ ভাগের মাধ্যমে ভারত – পাকিস্তানের জন্ম ১৯৪৭ সালে। ৫০% মুসলমানকে ভারতে রেখে হাজার মাইলের ব্যবধানে পূর্ব পাকিস্থান – পশ্চিম পাকিস্তানের যেই দেশ জন্ম নিয়েছিল তাতে পাকিস্তানের স্থপতি মোঃ আলী জিন্নাহসহ প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান, ডঃ জিয়াউদ্দীন আর অন্যান্য যারাই রাষ্ট্রগঠনে ক্ষমতাধর ছিলেন তারা সবাই ছিলেন পাকিস্তানে মোহাজের, অর্থাৎ অভিবাসী ( Immigrant) এবং তাদের ব্যবহৃত ভাষা ছিল উর্দূ। কাজেই, পাকিস্তানের স্থপতি ও গভর্ণর জেনারেল মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ্ খুব সহজেই আধিপত্য বিস্তারের প্রথম হাতিয়ার হিসেবে নিজের ভাষাকেই রাষ্ট্রভাষা হিসেবে আরোপ করতে চাইলেন।
ডঃ জিয়াউদ্দিন আহমেদ, যিনি ছিলেন ভারতের আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য, তিনি উর্দূকে ভবিষ্যৎ পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার জন্য প্রস্তাব করেন।
প্রদুত্তরে তখন ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, "আমাদের যদি একটি দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা নির্ধারণ করার প্রয়োজন হয়, তবে আমরা উর্দুর কথা বিবেচনা করতে পারি।“ প্রকৃতপক্ষে তার এই উক্তির পর-ই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বিষয়ে মতভেদ তৈরি হয়।
ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’র সাথে প্রায় একই সময় সাহিত্যিক আবুল মনসুর আহমেদ বলেন, উর্দুকে যদি রাষ্ট্রভাষা করা হয় তবে পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষিত সমাজ 'নিরক্ষর' এবং সকল সরকারী পদের ক্ষেত্রেই 'অনুপযুক্ত' হয়ে পড়বে।
১৯৪৭ সালের ডিসেম্বরের শেষের দিকে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার সমর্থনে প্রথম রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। পাকিস্তান

গণপরিষদে সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়ার দাবি তোলেন।
এই গণপরিষদ গঠনের মাধ্যমে এই যে ভাষা আন্দোলন, এটা যেমন স্বাধীন বাংলাদেশের আন্দোলনের প্রথম সুতিকাগার ছিল, তেমনিই ছিল মোঃ আলী জিন্নাহর অযৌক্তিক ক্ষমতালোভের প্রতি প্রথম তীব্র উচ্চারনের মুখে চরম আঘাত।
এমতাবস্থায়, ভারত ভাগের পর মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ্ তার প্রথম পূর্ব পাকিস্তান সফরে রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান) গণ-সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভাষা আন্দোলনকে পাকিস্তানের মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করেন। যদিও তিনি বলেন পূর্ববঙ্গের প্রাদেশিক ভাষা নির্ধারিত হবে প্রদেশের অধিবাসীদের ভাষা অনুযায়ী; কিন্তু দ্ব্যর্থহীন চিত্তে ঘোষণা করেন - "উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা, অন্য কোনো ভাষা নয় (Urdu & Urdu shall be the only & only state language)।
এরই ধারাবাহিকতায় ২৭ জানুয়ারি, ১৯৫২ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী, খাজা নাজিমুদ্দিন (ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহর নাতী), পল্টন ময়দানের এক জনসভায় মূলত জিন্নাহ্'র কথারই পুনরুক্তি করে বলেন, পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু।
তিনি আরো উল্লেখ করেন যে, কোনো জাতি দু'টি রাষ্ট্রভাষা নিয়ে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে পারেনি। বস্তুত, এই বক্তব্যের পর-ই ভাষা আন্দোলনের পুনরায় জোরালো হয়ে উঠে।

অতঃপর ৩১ জানুয়ারি, ১৯৫২ সাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বার লাইব্রেরী হলে অনুষ্ঠিত সভায় মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ৪০ সদস্যের সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মী পরিষদ গঠিত হয়। সভায় আরবি লিপিতে বাংলা লেখার সরকারি প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করা হয় এবং ২১ ফেব্রুয়ারি হরতাল, সমাবেশ ও মিছিলের বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে।
সর্বজনজ্ঞাত ভাষা শহীদ বরকত, সালাম, রফিক, জব্বার ২১শে ফেব্রুয়ারীতে গুলীবিদ্ধ হন এবং শফিউর রহমান , আব্দুল আউয়াল, ওহিউল্লাহ ২২শে ফেব্রুয়ারী (আগের দিন নিহত ভাষা শহীদদের স্মরণে অনুষ্ঠিত জনসমাবেশে) গুলীবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।
আন্দোলন অব্যহত থাকার মুখে অবশেষে ২৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৬ সাল, বাংলাকে পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে সংবিধানে পরিবর্তন আনা হয় । সংবিধানের ২১৪(১) অধ্যায়ে রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কে লেখা হয়: 214(1) The state language of Pakistan shall be Urdu and Bengali. ২১৪. (১) উর্দু এবং বাংলা হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা।
উল্লেখ্য, রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দূকে স্বীকৃতির ক্ষোভ কিন্তু মুখ্য ছিলনা! ভারতেও হিন্দী রাষ্ট্রভাষা!
কিন্তু, সমস্যা ছিল “ Only & only state language” অংশটি নিয়ে। ভারতে সব প্রদেশেই প্রাদেশিক ভাষাই ব্যবহৃত হচ্ছে, রাষ্ট্রভাষা হিন্দী হলেও। কিন্তু পাকিস্তানে আরোপিত হলো অন্য সব ভাষার ব্যবহারের অবলুপ্তি। সব অঞ্চলে শুধুমাত্র আরবী লিপিতে উর্দূ লেখাই গৃহীত হবে। অন্য কোন ভাষা বা লিপি ব্যবহার করাই যাবেনা। অজানা কারনে অন্য প্রদেশ থেকে কোন অনাপত্তি উত্থাপিত না হলেও সংখ্যাগুরু বাঙালী জাতি এই অন্যায় আরোপ মেনে নেয়নি। তাদের দাবী ছিল, বাংলাও অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হতে হবে এবং পূর্ব পাকিস্তান বাংলাই ব্যবহার করবে। এখানেই আমরা বাঙ্গালীরা অনন্যতা প্রমাণ করেছি!

সামান্য ব্যাখ্যা করছি, কতটা অন্যায্য এবং অসার ছিল মুসলমানদের জন্য এই স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের এই প্রহসন।
জিন্নাহ সাহেবের স্ত্রী মারিয়াম জিন্নাহ ছিলেন ( প্রথম স্ত্রী বিয়োগের পর ২য় স্ত্রী) , স্যার দিনশও পেটিটের মেয়ে ছিলেন যিনি Zoroastrianism (অগ্নি উপাসক) থেকে বিবাহ সূত্রে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন। কিন্তু তাদের একমাত্র কন্যা দীনা জিন্নাহ লন্ডনে বেড়ে ওঠাকালীন সময়ে জিন্নাহ তাঁর বোন ফাতিমা জিন্নাহর কাছে মেয়েকে ইসলামে দিক্ষীত করার অভিপ্রায় উল্লেখ করলেও দীনা জিন্নাহ বাবার অমতেই জীবন সঙ্গী বেঁছে নেন অগ্নি উপাসক নেভিল ওয়াদিয়াকে ( চ্যায়ারম্যান, বোম্বে ডাইং) এবং তাঁর ধর্ম হিসেবেও সবখানে অগ্নি উপাসক উল্লেখই আছে। দীনা জিন্নাহ প্রপৌত্ররাও ভারতের অত্যন্ত সুপরিচিত মুখ, নেস ওয়াদিয়া ( ভারতীয় অভিনেত্রী প্রীতি জিন্তা’র সাবেক বন্ধু) , জাহাঙ্গীর ওয়াদিয়া—যারা কেউই পার্সিয়ান ধর্ম ছেড়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেননি।

নিজের একমাত্র সন্তানকে কৈশোরেই যেই ধর্ম গ্রহন করাতে এবং কৈশোরেই একজন বিধর্মীকে বিয়ে করা থেকে ফেরাতে পারেননি, সেই ধর্মের ধ্বজা ধরে জিন্নাহ সাহেবের স্বাধীন রাষ্ট্রের রাষ্ট্র প্রধান হবার নেশা থেকে দেশ ভাগের উন্মাদনা লাখ লাখ মানুষের রক্ত গঙ্গা, খান্ডবদাহন, বৈষম্য সেই থেকে শুরু করে ১৯৭১ পর্যন্ত ঠেকেছে!
সেদিন বাঙ্গালী তাঁর , তাদের এই অন্যায় দাবী মেনে নিলে আজ আমাদের ভাষা হারানো দিয়ে শুরু করে জাতিস্বত্তা, স্বাধীনতা সব বিলীন হয়ে যেত। যেমন বিলীন হয়ে গেছে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত প্রদেশগুলির জাতিস্বত্তা!

সেজন্যেই গোপাল কৃষ্ণা গোখলে’র বিখ্যাত উক্তি ছিল “ What Bengal thinks today India thinks tomorrow।“ এর প্রমাণ অবিভক্ত ভারতে দুটো প্রধান রাজনৈতিক দল মুসলীম লীগ (ঢাকার নবাব বাড়িতে) এবং কংগ্রেস ( কলকাতায়) বাঙ্গালীদের দ্বারাই সৃষ্টি।
যা দিয়ে লেখাটি শুরু করেছিলাম, পৃথিবীতে জীবন দিয়ে যেই ভাষা প্রতিষ্ঠিত করতে হয়েছে, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতিপ্রাপ্তি হয়েছে- তার এহেন দৈন দশা অবশ্যই খুবই মর্মন্তুদ!
বাংলার দরবারী রূপটা বাংলায় চালু হবার পর দেশ বন্টনে ওপার বাংলার অংশে গিয়ে পড়েছে মাত্র। বাংলার দরবারী রূপ, অর্থাৎ প্রমিত বাংলা কারোরই দেশভিত্তিক সম্পত্তি হয়ে যায়নি। বিশেষ করে, যেখানে বাংলাদেশ বাংলা ভাষীদের একমাত্র দেশ! পশ্চিমবঙ্গ নেহাতই ভারতের একটি প্রদেশ মাত্র!

আমাদের দেশে ব্যবহৃত বাংলায় অঞ্চল ভেদে যে আঞ্চলিকতা আছে তার আবেদন দুর্দান্ত—এতে কোন সন্দেহ নেই। এবং নিজ অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষা জানাটা অবশ্যই গর্বের বিষয় এবং বিশেষ যোগ্যতা! কিন্তু চলিত বাংলার যেই বাঙ্গাল রূপটা আমরা ব্যবহার করি সেই রূপটা থেকে অন্তত কি প্রমিত বাংলায় উন্নীত করা যায়না? বিশেষ করে অনেক কীর্তিমান ব্যাক্তিবর্গ যা নিয়ে বর্তমানে কিছুটা সোচ্চার , আমি তাঁদের অসংখ্য সাধুবাদ জানাই যে, বাঙ্গাল ভাষা মিডিয়াতে কিছুতেই উঠে আসতেই পারেনা। ক্রমেই ব্যাস্ত থেকে ব্যাস্ততর হয়ে ওঠা জীবনে আজকের বাবা- মার শিশুরা ভাষা শেখে ঘরে টিভি দেখে। একেই হিন্দী চ্যানেলের আগ্রাসনে এবং পাশাপাশি বিজ্ঞাপন প্রাচুর্য আর টক শোতে ভরপুর আমার দেশী চ্যানেল শিশুদের আকৃষ্ট করার কোন দাবীই রাখে না। তার উপর দেখবার মতন ভীষণ সুন্দর জীবনঘনিষ্ট নাটক – টেলিফিল্ম যা নির্মিত হচ্ছে তাতেও বাঙ্গাল ভাষা চর্চার এই আগ্রাসন একেবারে সর্বনাশের শেষ পেড়েক ঠোকা।
সাড়ে ৭ বিলিয়ন মানুষের পৃ্থিবীতে ৩০০ মিলিয়ন মানুষের ভাষা। ৬০০০ ভাষার মধ্যে ৫ম (মতান্তরে ৬ষ্ঠ) সর্ব্বোচ্চ ব্যবহৃত এই ভাষা।
শহীদ মিনারে খালী পায়ে প্রভাত ফেরীতে ফুল, মোমবাতি জ্বালিয়ে ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর চেয়ে “কেন এই দিবস, কি এর মাহাত্ম” তা সামান্য একটু ঝালাই করে নেয়া হলে এবং আজ থেকে মিশেল ছাড়া প্রমিত বাংলার চর্চা করার একটু চেষ্টা শুরু হলে কিন্তু নাম জানা- অজানা ভাষা শহীদ এবং এই ভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের হাজারো নেতা- কর্মীদের তীব্র বীরত্ত্বপূর্ণ এই প্রয়াস অনেক বেশী সন্মানিত হতো!

জীবনে একবার অন্তত ভাষা দিবস যাপনটা সত্যিই স্বার্থক আর তাৎপর্যপূর্ণ হতো।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৫০

নুরএমডিচৌধূরী বলেছেন: সুনদর
++++++++্

২| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৩৯

আব্দুল্লাহ তুহিন বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন,

একুশ নিয়ে আমার এ পোস্টটা পড়ার জন্য অনুরোধ রইল,
পোস্ট লিংক

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:৪৬

তানজীনা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। পড়বো আপনার পোস্ট।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.