নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তানজীনা

আমি একজন বাংলাদেশী মুসলিম। জাপানে গবেষনায় আছি। জাপানে আমার চাকরী গবেষনা সবই জাপানী উন্নত প্রযুক্তি উন্নয়নশীল দেশের সাধারণ মানুষের কাছে সুলভে কিভাবে পৌঁছে দেয়া যায় তাই নিয়ে। এ কাজ করতে করতে দেখেছি আমার দেশের অনেক অনেক ক্ষেত্রে অনেক কাজ বাকী রয়ে গেছে এবং আমার দেশের এই গরীব মানুষগুলির ট্যাক্সের পয়সায় আমি পড়াশোনা করে এ পর্যায়ে এসেছি। তাই, আমি জানি এই দেশের প্রতি, এই মানুষগুলির প্রতি “আমার অনেক ঋণ আছে”। তারই একটা ধাপ এই ব্লগে লেখা।

তানজীনা › বিস্তারিত পোস্টঃ

জাপান কেন এডুকেশন সিস্টেমে বিশ্বসেরা

০৩ রা জুন, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৮

Online News Portal “Bangla Tribune” এ ২০১৫ র ২১শে জানুয়ারী মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী বরাবর খোলা চিঠি লিখেছিলাম। তাতে জাপান কেন এডুকেশন সিস্টেমে বিশ্বসেরা তার একটা চালচিত্র তুলে ধরেছিলাম। সংগের ভিডিওটা উপলব্ধিটা সহজতর করবে। এখানে মূলতঃ প্রাইমারী এডুকেশন সিস্টেমটাই তুলে ধরলাম মূল কলাম থেকে।

“ প্রথমেই বলি পরীক্ষার কথা যা আমাদের শিশুদের মূর্তিমান আতঙ্ক।

জাপানে বাচ্চাদের হাই স্কুলে (১০ম শ্রেণীতে) ভর্তি হবার মান যাচাই পরীক্ষাই “প্রথম পরীক্ষা”।
এখানে প্রথম পরীক্ষা বলতে “ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা” কিংবা প্রথম “বোর্ড পরীক্ষা” শুধু না, স্রেফ বার্ষিক/ অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার প্রথম বড় পরীক্ষাও সেই প্রথম।

এর আগে প্রাইমারী লেবেলে ( ১ম ~ ষষ্ঠ শ্রেণী) পর্যন্ত কোন পরীক্ষাই নেই।

স্কুলে বাচ্চারা একটি কোরাস গায় যার কথাগুলো বাংলায় সাজালে দাঁড়ায় ,

“প্রতিটি শিশুই এক একটি ফুল, তার স্বতন্ত্র মহিমায় ভাস্বর। গোলাপকে যেমন রজনীগন্ধার সাথে তুলনা করা যাবে না, তেমনি গাঁদার সাথে শাপলার তুলনা চলেনা । তাই গোলাপকে গোলাপের মতই প্রস্ফুটিত হতে দাও, শাপলাকে শাপলার মত। প্রতিটি শিশুকে তার নিজস্ব রূপ, রস, গন্ধের সম্পূর্ণতায় বিকশিত হতে দাও!”

নিয়মিত ক্লাসের পড়ার পাশে আদব কেতা, সামাজিক রীতি –নীতি, আইন মেনে চলা, ঘড় ঝাড়ু মোছা, টয়লেট ক্লিনিং, মাঠ- জিমনেশিয়াম পরিষ্কার, রান্না- বাড়া, সূচীকর্ম, কাঠের কাজ, ফুলদানী- পাত্র রং করার কাজ থেকে শুরু করে পিয়ানো, বাঁশি, বাস্কেটবল, সকার ইত্যাদি- সব সেখানো হয়।

প্রথম যেদিন আমার ছেলেদের প্রাইমারী স্কুলে দাপ্তরিক এক প্রয়োজনে গিয়ে ক্লাস ওয়ানের ( ৬ বছর) বাচ্চাকে দেখলাম জানুয়ারীর কনকনে তুষারপাতের মধ্যে ঠাণ্ডা পানিতে ভেজানো ন্যাকড়া দিয়ে বারান্দা মুচছে – বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম! আরো অবাক হয়েছিলাম দেশে যেই কাজ আমি নিজে কোনদিন করিনি— এখানে আমার ছেলেরা এই কাজ করছে অথচ একদিনও বাসায় গিয়ে কোন অভিযোগ অনুযোগের কথা তাদের মনেও হয়নি! এজন্যই কিনা বলে বাঁশ কাচা থাকতেই নোয়াতে হয়। কাজেই আমি অবশ্যই আশা রাখি আজকে এইসব নিয়ম বাংলাদেশে প্রতিটি স্কুলে চালু হলে বাচ্চারা আমার ছেলেদের মতই এসব কাজ তাদের দায়িত্ব হিসেবেই মেনে নেবে।
নিয়মের প্রতি আশৈশব গড়ে ওঠা শ্রদ্ধাবোধ অনেক পত্র –পত্রিকায় ২০১১ সালে আঘাত হানা সূনামীর আশ্রয়কেন্দ্রের অভুক্ত , শীতার্ত, পরিবার বিচ্ছিন্ন শিশুদের একা একা খাবারের লাইনে দাড়িয়ে খাবার সংগ্রেহের জন্য ধৈর্য ও সততার কথা অনেকেই জেনেছেন। শপিং মল খালী পরে ছিল—ওয়েষ্টার্ন দেশে এমন ক্ষেত্রে ব্যাপক লুটতরাজে সয়লাব হয়ে যায়। টোকিওর ফুকুশিমার সব দোকানের সব কিছু তেমনি পরে ছিল- অভুক্ত, শীতার্ত মানুষও তাতে হাত দেয়নি!

এখানে বাচ্চাদের টয়লেট ক্লিনিং এর একটা বিশেষ দিক না উল্লেখ করলেই নয়- পুরাতন টুথব্রাশ দিয়ে ইউরিনাল , কমোডের কোনায় লুকোন ময়লাও পরিষ্কার করানো হয় যেন সে নিজে কোনদিন টয়লেট অপরিচ্ছন্ন রেখে অর্থাৎ টয়লেট টিস্যু দিয়ে সব পরিষ্কার না করে টয়লেট ত্যাগ না করে।

ক্লাস টীচারদের তদারকিতেই সব কাজ তারা করে—টীচার দেখবেন সব ঠিক মত হলো কিনা, কিন্তু টীচার হাত লাগাবেন না। তাতে শিশুর আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি তৈরি হবে।

টিফিন পিরিয়ডে রোস্টার ডিউটিতে বাচ্চারা কিচেন থেকে বিশাল বিশাল ট্রলী ঠেলে খাবার ক্লাস রুমে নিয়ে গিয়ে পরিবেশন এবং খাবার শেষে শ্রেণীকক্ষ পরিষ্কার করে ট্রলী কিচেনে ফেরত দিয়ে যায়। বয়স অনুযায়ী একেবারে ডায়েট চার্ট মেনে সুষম খাদ্য সঠিক ব্যালান্স করে লাঞ্চের মেন্যু সেট করা হয়।

জুনিয়র হাই স্কুলে ( ষষ্ঠ – নবম শ্রেণী) সারা বছর ৩ মাসে একবার করে সব বিষয়ে ক্লাস টেস্ট জাতীয় পরীক্ষা। তাতে পাশ- ফেলে কিছুই যায় আসেনা। রিপোর্ট কার্ড বাসায় যাবে- অভিভাবক বাচ্চার মেধার মান উন্নত করতে চাইলে বাচ্চাকে আবার পরীক্ষা দেয়াবে কিংবা স্পেশাল কোচিং ক্লাসে (জুকো) পাঠাবে।

সব প্রাইমারী স্কুল (১ম~ ৬ষ্ঠ শ্রেনী) , সব জুনিয়র হাই স্কুল ( ৭ম ~ ৯ম শ্রেনী) একই মানের ।
নির্দিষ্ট এলাকার বাচ্চা সংশ্লিষ্ট এলাকার স্কুলে পড়তে বাধ্য এবং সেটা ২০/২৫ মিনিটের হাটার দূরত্বের ভেতরে হতে হবে। কারণ, জুনিয়র হাই স্কুল পর্যন্ত হেটে স্কুলে যাওয়াই বাধ্যতামূলক।
কাজেই আমাদের দেশের মত উত্তরায় থাকা বাচ্চাকে ২ ঘন্টা ধরে গভর্ম্যান্ট ল্যাবরেটরি যেতে হবে না, একটা ছোট্ট প্রাইমারী লেবেলের ইংরেজী স্কুলেও ১০০ টা বাচ্চার জন্য রোজ ১০০ গাড়ীর জ্যাম লেগে যাবেনা। আর ছোট্ট বেলা থেকেই ওমুক স্কুলে চান্স পেতেই হবে- এই জোড় জবরদস্তি, কোচিং এ ছুট—আর চান্স না পেলে তুলাধুনোর আতঙ্কের বালাইও নেই।

স্কুলে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় সমস্ত স্কুলের সব বাচ্চাকে ৪টি গ্রুপে র‍্যানডমলি ভাগ করা হয়। সবাইকে অংশগ্রহন করতেই হবে। কিন্তু প্রতিটি ইভেন্টেই গ্রুপে অংশগহন—হারা জেতা গ্রুপ পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে। ব্যাক্তিগত অর্জন দিয়ে একজনকে আঙ্গুল দিয়ে “ও সেরা” “ ও দুর্বল” এমন ক্লাসিফিকেশনের যেন সুযোগই না থাকে। এভাবে ছোট থেকেই টীম ওয়ার্কে অভ্যস্ত করে তোলা হয়, যেন কর্মক্ষেত্রেও একজন দুর্বল হলে টীম জেতানোর স্বার্থেই তাকে অন্যরা সাহায্য করবে কিভাবে তার ইম্প্রুভাইজেশন করা যায়।

The Last Samurai ছবিটিতে জাপানীদের উৎকর্ষতার উদ্দেশ্যে US Captain Algren চরিত্রটির উক্তি ছিল “From the moment they wake they devote themselves to the perfection of whatever they pursue. I have never seen such discipline! ””

https://www.facebook.com/permalink.php?story_fbid=10154320809882566&id=622942565¬if_t=like¬if_id=1464871078450256

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা জুন, ২০১৬ দুপুর ১:০৩

বিষন্ন পথিক বলেছেন: জাপানের গল্প বাংলাদেশে দিয়ে লাভ নেই, অবকাঠামো, অর্থনীতি সবকিছু দরকার, সবচেয়ে বেশী দরকার মোরাল গড়া যেটা আমাদের খুব অভাব

২| ০৩ রা জুন, ২০১৬ দুপুর ১:৪৩

ঢাকাবাসী বলেছেন: এখান আবার ঐ মাথা মোটা আমলারা ক্লাশ এইট থেকে পিএসসি তমঘা দিবে! সোয়া লাখের মত জিপি্এ ৫ পেয়ে ছাত্ররা 'আমি জিপিএ ৫ পেয়েছি' এর ইংরেজী বলে 'আই এম জিপিএ ৫'!! জাপানে শিক্ষামন্ত্রীরা আমলারা অনেক দেশ প্রেমিক আর শিক্ষিত হয়।

৩| ০৩ রা জুন, ২০১৬ দুপুর ১:৪৮

অপ্‌সরা বলেছেন: প্রিয়তে রাখছি!

পরে আসছি এই পোস্টে আবারও আপু।

৪| ০৩ রা জুন, ২০১৬ দুপুর ২:২৫

বিজন রয় বলেছেন: আস্তে আস্তে আমরাও ভালর দিকে যাবো।

লেখায় ++++

৫| ০৩ রা জুন, ২০১৬ বিকাল ৩:১২

গেম চেঞ্জার বলেছেন: কত সুন্দর ও আদর্শিক!!!!!! :) আমাদের দেশেও এমন চিন্তা করা উচিত!!!

৬| ০৩ রা জুন, ২০১৬ বিকাল ৫:০৩

বটপাকুড় বলেছেন: জাপানের থেরাপি বাংলাদেশে দিয়ে কোন লাভ নেই। এঁর বাস্তব একটা উদাহরণ দেই, বাংলাদেশে প্রজেক্টের কাজে এসেছিলাম। বিদেশে যেহেতু ছোট বড় কোন পজিশন কোন ফ্যাক্ট না, তাই, দেশে এসে প্রজেক্টে ড্রাইভার কে নিয়ে তিন তারকা হোটেলে একই টেবিলে লাঞ্চ খাওয়ালাম, কারণ লজিকাল্যালি সেও একজন প্রোজেক্ট মেম্বার। তাঁর পরে দেখা গেল, সেই টাইম মত আসে না, কোন কাজের কথা বললে, ইচ্ছে মত দেরি করে। কারণ তাঁর মাথায় ঢুকে গেছে, বস তো অনেক নরম একে এতো ভয় পাওয়ার কিছু নাই। চিন্তা করে দেখেন তো তখন কেমন লাগে

দেখেন, সব দেশে সব নিয়ম খাটে না গভ ল্যাবের কিংবা ভিএনসি এঁর অনেক ছেলেমেয়ে দের বাবা মা সরকারের বড় আমলা। তাদের যদি দলে বলে স্কুলের কমোড পরিষ্কার করতে বলেন, পরদিনই স্কুলে ফোন আসবে, হেড মাস্টারের আবার কান ধরা লাগতে পারে, কারণ যা দিন কাল পরছে ;)

বিদেশে আমরা অনেক কাজই করি, কারণ আমাদের উপায় থাকে না, না হলে বাঙ্গালি সেইখানেও চৌধুরী সাহেব :p

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.