নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন মানুষ ।

দুর্গম পথের যাত্রী

দুর্গম পথের যাত্রী › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুক্তিযুদ্ধ =বাংলাদেশ পাকিস্তান যুদ্ধ নাকি ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ......?

১০ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ২:৫৮

কিছু দিন আগে জাতীয় একটি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকীয় কলাম পড়েছিলাম । কলাম টি পড়ার পর থেকে কয়েকটি প্রশ্ন আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে ।
1971 সালের 16 ডিসেম্বর পাক বাহিনী যৌথ বাহিনীর প্রধান ভারতীয় সেনা কমান্ডারের কাছে আত্মসমর্পণ করেন । কিন্তু কেন আতাউল গনি ওসমানী র কাছে নয় ??
স্বাধীনতার পরে বন্দি পাক সেনা গুলোকে ভারতে নিয়ে গিয়েছিল । এবং সেখান থেকেই মুক্তি দেয়া হয় সিমলা চুক্তির মাধ্যমে ।এই চুক্তিটি লেখা ছিল নাকি এভাবে,,,, ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ হয়েছে এবং আটক পাক সেনাদের ভারত থেকেই মুক্তি দেয়া হয় । .......কিন্তু কেন আটক সেনাদের ভারতেে নিয়ে যাওয়া হল...কেনই বা সিমলা চুক্তিতে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ উল্লেখ করা হল ???
প্লিস কেউ যদি সঠিক ইতিহাস জানেন নিরপক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আন্সার দিবেন । ধন্যবাদ

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৬ ভোর ৫:৫৮

আশাবাদী অধম বলেছেন: এসব বিষয়ে প্রশ্ন করার ওপর বর্তমানে ১৪৪ ধারা জারি আছে।

২| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৬ ভোর ৬:৫০

এ কে এম রেজাউল করিম বলেছেন:
অবশ্যই পাইক্কাদের সাথে বাংলাদেশের যুদ্ধ,
কিন্তু মালু'রা বলে- তারা নাকি যুদ্ধ কইরা গুপ্তস্থানের চুল ফালাইয়া তাল গাছে উঠাইয়া দিছে।

৩| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৭:০৫

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: মহান মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, ইতিহাস বিকৃতি এবং তার কুশীলবগন। প্রসঙ্গঃ পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণ এবং এম এ জি ওসমানীর অনুপস্থিতি
মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিপক্ষে বিজয় আমাদের জাতিয় জীবনে সবচেয়ে বড় অর্জন। আমাদের অর্জনের ইতিহাস হবার কথা ছিল অত্যন্ত গৌরবের। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের হীনমন্যতা এই অর্জনকেও করেছে বিতর্কিত। আমাদের সামান্য রাজনৈতিক সুবিধা পাওয়ার জন্য এই ইতিহাসকেও করেছি বিতর্কিত। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে বিরোধিতা করা রাজাকারের দল যতটা না ইতিহাস বিকৃত করেছে তার চেয়ে বেশি করেছে স্বাধীনতার পক্ষের লোকগুলো। স্বাধীনতার জন্য লড়াই করা এই লোকগুলোর ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টাকেই শত সহস্র গুন বাড়িয়ে প্রচার করছে স্বাধীনতার বিপক্ষের লোকগুলো। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কিংবা স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে যেভাবে মনের মাধুরী মিশিয়ে সত্যের সাথে মিথ্যা মিলিয়ে একটি বিতর্কিত ইতিহাস রচনা করেছেন, তাতে করে অদূর ভবিষ্যতে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কোন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়াবে তা নিয়ে শঙ্কিত হতেই হয়।
১৬ ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কাদের কাছে আত্ম সমর্পণ করেছিল এই ইস্যুটা নিয়ে ইদানিং এক শ্রেণির লোক বিতর্ক সৃষ্টি করার পায়তারা করছে। আর আমাদের সাধরন নাগরিকদের একটা অংশ কিছু না বুঝেই সেই বিতর্কটা উস্কে দিচ্ছে। পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের দলিলটা পড়ে দেখলেই এই বিতর্কের অবসান হয়। কিন্তু আমরা তো চিলে কান নিয়ে গেছে শুনলেই চিলের পিছে দৌড়ানো শুরু করা লোক। তাই এত কিছু পড়ে দেখার সময় কই! চলুন দেখা যাক কি ছিল আত্মসমর্পণ দলিলে-
Instrument of Surrender
The PAKISTAN Eastern Command agree to surrender all PAKISTAN Armed Forces in BANGLA DESH to Lieutenant-General JAGJIT SINGH AURORA, General Officer Commanding in Chief of Indian and BANGLA DESH forces in the Eastern Theater. This surrender includes all PAKISTAN land, air and naval forces as also all para-military forces and civil armed forces. These forces will lay down their arms and surrender at the places where they are currently located to the nearest regular troops under the command of Lieutenant-General JAGJIT SINGH AURORA.
The PAKISTAN Eastern Command shall come under the orders of Lieutenant-General JAGJIT SINGH AURORA as soon as the instrument has been signed. Disobedience of orders will be regarded as a breach of the surrender terms and will be dealt with in accordance with the accepted laws and usages of war. The decision of Lieutenant-General JAGJIT SINGH AURORA will be final, should any doubt arise as to the meaning of interpretation of the surrender terms.
Lieutenant JAGJIT SINGH AURORA gives a solemn assurance that personnel who surrender shall be treated with dignity and respect that soldiers are entitled to in accordance with provisions of the GENEVA Convention and guarantees the safety and well-being of all PAKISTAN military and para-military forces who surrender. Protection will be provided to foreign nationals, ethnic minorities and personnel of WEST PAKISTANI origin by the forces under the command of Lieutenant-General JAGJIT SINGH AURORA.
(JAGJIT SINGH AURORA)
Lieutenant-General
General Officer Commanding in Chief
India and BANGLA DESH Forces in the
Eastern Theatre
16 December 1971
(AMIR ABDULLAH KHAN NIAZI)
Lieutenant-General
Martial Law Administrator Zone B and
Commander Eastern Command
(Pakistan)
16 December 1971
এই আত্মসমর্পণ দলিলে লেফটেন্যান্ট জগজিৎ সিং অরোরা কি ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছে নাকি ভারত এবং বাংলাদেশের যৌথ বাহিনীর প্রতিনিধিত্ব করেছেন?
আত্মসমর্পণের পর যুদ্ধবন্দীদের নিরাপত্তার বিষয়টি চলে আসে। জেনেভা কনভেনশন এর আওতায় যুদ্ধবন্দীদের নিরাপত্তার বিধান নিশ্চিত করা হয়। ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ জেনেভা কনভেশন এর স্বাক্ষরকারী দেশ নয়। তাই যুদ্ধবন্দীদের নিরাপত্তা দেয়ার আইনি কোন বাধ্যবাধকতা বাংলাদেশ এর উপর বর্তায় না। এই কারণে পাকিস্তান বাহিনী একক ভাবে ভারতের সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে ইচ্ছুক ছিল। কিন্তু সেই সময় ভারত একক ভাবে তাদের কাছে আত্মসমর্পণ না করিয়ে যৌথ বাহিনীর কাছেই আত্মসমর্পণ করতে হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। যার প্রমাণ পাওয়া যায় পাকিস্তানি জেনারেলদের স্মৃতিচারণমূলক লেখায়।
পাকিস্তানি মেজর সিদ্দিক সালিক এর ' উইটনেস টু সারেন্ডার' বইয়ে এভাবেই উল্লেখ করেন সেই ঘটনা -
"মেজর জেনারেল জেকব আত্মসমর্পণের চুক্তিনামা নিয়ে এলেন। যাকে জেনারেল নিয়াজী আর তার চিফ অফ স্টাফ ' যুদ্ধ বিরতির খসড়া চুক্তি' বলতেই বেশি পছন্দ করেন। জেকব কাগজ পত্র বকরের কাছে হস্তান্তর করলেন, তিনি সেগুলো মেজর জেনারেল রাও ফরমানের সামনে রাখলেন। জেনারেল ফরমান একটি অংশ নিয়ে আপত্তি তুললেন যেখানে " ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ নেতৃত্ব" প্রসঙ্গে বলা হয়েছে। জেকব বললেন, কিন্তু এটা তো দিল্লী থেকে এভাবেই এসেছে। ভারতীয় সামরিক গোয়েন্দা বিভাগের কর্নেল খেরা পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন, তিনি যোগ করলেন,' আরে সেটা তো ভারত আর বাংলাদেশের নিজেদের মধ্যকার ব্যাপার।"
রাও ফরমান আলী তার ' হাউ পাকিস্তান গট ডিভাইড' বইতে লিখেন -
" ব্রিগেডিয়ার সিদ্দিকি ও একজন শিখ কর্নেল ঘরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে কোনো বিষয়ে আলোচনা করছিলেন। আমি বসার পর আমার হাতে একটি কাগজ দিয়ে বকর বললেন, ' এগুলো আত্মসমর্পণের শর্ত।' আমি সেটা পড়লাম এবং দেখলাম যে, যে বাহিনীর কাছে পাকিস্তান আর্মিকে আত্মসমর্পণ করতে হবে, সেখানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনীকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আমি বকরকে বললাম,' এটা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা আত্মসমর্পণ করছি না, আমরা আলোচনা করছি। ঘটনা যা-ই হোক না কেন, দয়া করে মুক্তিবাহিনী শব্দ দুটি মুছে ফেলুন।' এ সময় পাইপ মুখে নিয়ে জেনারেল জেকব প্রবেশ করলেন এবং বললেন, ' এটা এভাবেই দিল্লী থেকে এসেছে। আপনি এটা মেনে নিন কিংবা ছেড়ে দিন।' আমি বললাম, ' এটা কম্যান্ডারের ব্যাপার, তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন।' নিয়াজী আত্মসমর্পণের শর্তাবলী অনুমোদন করে মাথা নাড়লেন।"
১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে এম এ জি ওসমানীর অনুপস্থিতির কারণেও অনেক জল ঘোলা করা হয়। ওসমানীর অনুপস্থিতির সঠিক কারণ না জেনেই অনেকেই অনেক ধরনের তত্ত্ব হাজির করেছেন বিতর্কের জন্য। হাস্যকর কিছু গালগল্পও প্রচলিত আছে উনার অনুপস্থিতির কারণে। ভারতীয় বাহিনীও চাচ্ছিল ওসমানী যেন এই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন। যার প্রমাণ পাওয়া যায় ভারতীয় ইস্টার্ন কম্যান্ডের লেফটেন্যান্ট জেনারেল জে এফ আর জেকব এর 'সারেন্ডার অ্যাট ঢাকা - একটি জাতির জন্ম' বইতে।
" সেথনাকে ব্রিফ করে তাঁকে ভারতীয় ও বিদেশী সাংবাদিকদের জন্য হেলিকপ্টারের ব্যবস্থা করতে বললাম। তাঁকে আরও বললাম যে, ইস্টার্ন কম্যান্ডের সেনাবাহিনী প্রধান ছাড়াও নৌ বাহিনী ও বিমানবাহিনীর প্রধানরা এতে যোগদান করছেন। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী থেকে কর্নেল ওসমানী এবং উইং কম্যান্ডার খন্দকার যেন উপস্থিত থাকেন, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।"
" দুর্ভাগ্যবশত কর্নেল ওসমানী এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি। তাঁর জন্য পাঠানো হেলিকপ্টার পথিমধ্যে শত্রুর গুলির আঘাতে ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং সময়মত সেটা মেরামত করে তোলা সম্ভব হয় নি। তাঁর অনুপস্থিতির ভুল ব্যাখ্যা করা হয় এবং পরবর্তীতে তা অনেক সমস্যার জন্ম দেয়।"
আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ বাহিনীর প্রতিনিধিত্ব করা মুক্তিবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ উইং কম্যান্ডার এ কে খন্দকার এর ১৯৭১ঃ ভেতর বাইরে বইতে।
ভারতীয় সামরিক বাহিনীর লিয়াজো অফিসার কর্নেল পি দাস অস্থায়ী সরকারের প্রধান্মন্ত্রিকে তাঁর ব্যক্তিগত সচিব ফারুক আজিজ খানের মাধ্যমে ১৬ ডিসেম্বর বিকেলে অনুষ্ঠেয় পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের খবর জানান। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ বাহিনীর প্রধান সেনাপতি কর্নেল এম এ জি ওসমানীর খোঁজ করতে গিয়ে জানতে পারেন যে কর্নেল ওসমানী, ব্রিগেডিয়ার উজ্জ্বল গুপ্ত ( ভারতীয় বাহিনী ) এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুর রব মুক্ত এলাকা পরিদর্শনে সিলেট গেছেন। কর্নেল ওসমানী ১৩ ডিসেম্বর সিলেটের মুক্তাঞ্চল পরিদর্শনে সিলেট গেছেন। যাত্রার আগে আমি তাঁকে বলেছিলাম," স্যার, আপনার এখন কোথাও যাওয়া ঠিক হবে না। দ্রুতগতিতে যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। যে কোন সময় যেকোনো পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে।" কর্নেল ওসমানী তাঁর পরিকল্পনা পরিবর্তন না করে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যান।
মুক্তিবাহিনীর সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম 'একাত্তরের রণাঙ্গন অকথিত কিছু কথা' নামে স্মৃতিচারণমূলক বইতে তিনি তুলে ধরেছেন এর বিষদ বিবরণ। ১৮ ডিসেম্বর সদর দপ্তরে ফিরে তাকে নিয়ে এসব গুজব শুনে ভীষণ ক্ষুব্ধ হন ওসমানী।
"দেখুন আমরা স্বাধীনতা অর্জন করতে যাচ্ছি। কিন্তু দুঃখ হলো স্বাধীন জাতি হিসেবে আমাদের মধ্যে আত্ম-মর্যাদাবোধ সম্পর্কে কোনো চেতনা এখনও জন্ম হয়নি। আমাকে নিয়ে রিউমার ছড়ানোর সুযোগটা কোথায়? কোনো সুযোগ নেই। তার অনেক কারণ রয়েছে। নাম্বার ওয়ান- পাকিস্তানী সেনাবাহিনী কবে আত্মসমর্পণ করবে আমি জানতাম না। আমি কলকাতা ছেড়ে চলে যাওয়ার পর তাদের আত্মসমর্পণের প্রস্তাব এসেছে।
নাম্বার টু- ঢাকায় আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে আমার যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কারণ এই সশস্ত্র যুদ্ধ ভারত-বাংলাদেশের যৌথ কমান্ডের অধীনে হলেও যুদ্ধের অপারেটিং পার্টের পুরো কমান্ডে ছিলেন ভারতীয় সেনাপ্রধান লেফট্যানেন্ট জেনারেল স্যাম মানেকশ। সত্যি কথা হচ্ছে আমি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কোনো নিয়মিত সেনাবাহিনীর সেনাপ্রধানও নই। আন্তর্জাতিক রীতিনীতি অনুযায়ী পাকিস্তান সেনাবাহিনী আমার কাছে আত্মসমর্পণ করতে পারে না। কারণ বাংলাদেশ জেনেভা কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী কোনো দেশ নয়।
আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে জেনারেল মানেকশকে রিপ্রেজেন্ট করবেন লে.জে অরোরা। জেনারেল মানেকশ গেলে তার সঙ্গে যাওয়ার প্রশ্ন উঠতো। সার্বভৌম সমতার ভিত্তিতে আমার অবস্থান জেনারেল মানেকশর সমান। সেখানে তার অধীনস্থ আঞ্চলিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল অরোরার সফরসঙ্গী আমি হতে পারি না। এটা দেমাগের কথা নয়। এটা প্রটোকলের ব্যাপার। আমি দুঃখিত, আমাকে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। আমাদের মধ্যে আত্মমর্যাদাবোধের বড় অভাব।
ঢাকায় ভারতীয় বাহিনী আমার কমান্ডে নয়। জেনারেল মানেকশর পক্ষে জেনারেল অরোরার কমান্ডের অধীন। পাকিস্তানী সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করবে যৌথ কমান্ডের ভারতীয় বাহিনীর কাছে। আমি সেখানে (ঢাকায়) যাবো কি জেনারেল অরোরার পাশে দাড়িয়ে তামাশা দেখার জন্য? হাও ক্যান আই!
আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করবেন জেনারেল মানেকশর পক্ষে জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা আর পাকিস্তানী বাহিনীর পক্ষে জেনারেল নিয়াজী। এখানে আমার ভূমিকা কি? খামোখা আমাকে নিয়ে টানা হ্যাচড়া করা হচ্ছে।"
এবার একটু বিকৃত ইতিহাসের দিকে চোখ ফেরানো যাক। না কোন স্বাধীনতা বিরুধিদের রেফারেন্স দিচ্ছি না। এম আর আখতার মুকুল স্বাধীন বাংলা বেতারের অন্যতম ব্যক্তিত্ব। চরমপত্রের লেখক এবং পাঠক। উনি তার " আমি বিজয় দেখেছি" বইতে রচনা করেছেন এক বিকৃত ইতিহাস। যার কোন ভিত্তিই খুঁজে পাওয়া যায় না।
" ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বরের দুপুর প্রায় বারোটা নাগাদ কোলকাতাস্থ থিয়েটার রোডে মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদের কাছে এ মর্মে খবর এসে পৌঁছালো যে, ঢাকায় হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণে সম্মত হয়েছে। এই মুহূর্তে মিত্র বাহিনীর অন্যতম অধিনায়ক মেজর জেনারেল নাগারা এবং কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান কাদের সিদ্দিকী তাদের জনাকয়েক সহকর্মী নিয়ে ঢাকায় পাকিস্তান ইস্টার্ন কম্যান্ড হেড কোয়ার্টারে রয়েছেন। হানাদার বাহিনীর প্রধান লেঃ জেনারেল আমীর আব্দুল্লাহ খান নিয়াজী এবং মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী তাঁদের অভ্যর্থনা জানিয়েছেন। মুজিবনগরে তুমুল উত্তেজনা। তাজউদ্দীন আহমেদ প্রতি মুহূর্তের খবরের জন্য উদগ্রীব। এমন সময় খবর এলো যে, আজ বিকালেই আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকায় আত্মসমর্পণ হবে। মুজিবনগর সরকারের পক্ষ থেকে এই অনুষ্ঠানে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য উচ্চ পদস্থ কাউকে উপস্থিত থাকতে হবে। তাজউদ্দীন আহমেদ ধীর পদক্ষেপে তাঁর ছোট্ট অফিস কক্ষ থেকে বেরিয়ে সচিবালয়ের অন্য পার্শ্বে অবস্থিত প্রধান সেনাপতি তৎকালীন কর্নেল ( অবঃ ) আতাউল গণি ওসমানীর সুরক্ষিত অফিসের দিকে এগিয়ে গেলেন। পিছনে আমরা কয়েকজন। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীনকে কিছুটা চিন্তিত দেখাচ্ছিল। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী তাঁর কক্ষের দিকে এগিয়ে আসছেন জানতে পেরে সামরিক পোশাক পরিহিত সৌম্য চেহেরার ওসমানী সাহেব নিজের অফিস থেকে বেরিয়ে এলেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁকে দেখেই আনন্দে এক রকম চিৎকার করে উঠলেন, ' সি-ইন-সি সাহেব ঢাকার সর্বশেষ খবর শুনেছেন বোধ হয়? এখন তো আত্মসমর্পণের তোরজোড় চলছে...' প্রধানমন্ত্রী বাকি কথা শেষ করতে পারলেন না। ওসমানী সাহেব তাঁকে করিডোরের আর এক কোণায় একান্তে নিয়ে গেলেন। দুজনের মধ্যে মিনিট কয়েক কি কথাবার্তা হলো আমরা তা শুনতে পেলাম না। এরপর দুজনেই আবার আমাদের দিকে ফিরে এলেন। পিছনে প্রধান সেনাপতির এডিসি শেখ কামাল। ওসমানী সাহেবের শেষ কথাটুকু আমরা শুনতে পেলাম। ' নো, নো প্রাইম মিনিস্টার, মাই লাইফ ইজ ভেরি প্রেসাস, আই কান্ট গো'।
মূল লেখাঃ প্রবাসী পাঠক ভাই

৪| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৭:৩৩

চাঁদগাজী বলেছেন:



আপনি যেভাবে জানেন, যেভাবে অনুধাবন করেন, সেটাই মুক্তিযুদ্ধ

৫| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৯:২৯

নির্ঝরের_স্বপ্ন বলেছেন: যুদ্ধের স্ট্র্যাটেজি অনুযায়ী ৭১ এর যুদ্ধে শুরু থেকেই ভারতের উচিৎ ছিল বাংলাদেশের নিপীড়িত মানুষের পাশে এসে দাঁড়ানো, এ ব্যাপারে সেক্টর কমান্ডারেরা বারংবার ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর দ্বারস্থ হলেও তারা সহযোগিতা করতে গড়িমসি করে। এর কারণ ছিল মূলত দুটিঃ
১ - ১৯৬৩ সালে চীনের সাথে এবং ১৯৬৫ সালে পাকিস্তানের সাথে দুটি ভয়ানক যুদ্ধে জড়িয়ে ভারতের জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়, তাই ৭১ এর যুদ্ধে কোনরকমভাবে জড়িত হবার ব্যাপারে ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতি মেলেনি।
২ - দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধত্তোর স্নায়ু যুদ্ধের আড়ালে বিশ্বব্যাপী যে রাজনৈতিক মেরুকরণ ঘটে, তাতে ভারত আমেরিকার মত প্রবল প্রতাপশালীকে প্রতিপক্ষরূপে দেখার সাহস অর্জন করতে পারেনি।

তাই তারা অপেক্ষায় ছিল পাকিস্তান তাদের আভ্যন্তরীণ সমস্যা খুব শিঘ্রি সমাধান করে ফেলবে (যেহেতু এদেশের ভুখা নাঙ্গা দরিদ্র কৃষকদের সাধ্য নেই একটি শক্তিশালী সাম্রিক বাহিনীর মুখোমুখি টিকে থাকার) তাই ভারত শুধু শুধু ঝামেলায় না জড়িয়ে বরং এ থেকে ক্রেডিট নিয়ে আমেরিকার সহমর্মিতা অর্জন করার ব্যাপারেই বেশি মনোযোগী ছিল।

কিন্তু অক্টোবরের দিকে ঘটনার মোড় যখন পাল্টে যেতে থাকে, ভারতের অনুমান যখন মিথ্যা প্রমাণিত করে পাকিস্তানি হানাদাররা মার খেতে থাকে, তখন ভারত দেখে যে তার সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। তখন সীমান্তে গোলাগুলির একটা ফালতু অজুহাত তুলে স্বাধীন হবার দেড় মাস আগে তারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং তারপরেই 'মওকা মিলেগি' টাইপ পরিস্থিতির সুযোগ ভারত গ্রহণ করে।

৬| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১০:০৬

এ কে এম রেজাউল করিম বলেছেন:
ইতিহাস থেকে জানা যায় একটি দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বন্ধু আরেকটি দেশ সহযোগীতা করে।
তাই বলে ইনডিয়ার এক গোয়ার মন্ত্রীর মত বলেনা
"আমরা বাংলাদেশ স্বাধীন করিয়া তোমাদের দিয়াছি, যেমন রাম লংকা মুকত করিয়া তার ভাইকে দিয়াছিল"
একেই বলে ঔদ্বদ্ধ!

৭| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১১:১৮

হাসান জাকির ৭১৭১ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ রুপক বিধৌত সাধু ভাইকে, অপনার লেখা থেকে অনেক কিছু জানতে পারলাম। আপনার লেখাটিই একটি পুরো পোষ্ট হিসেবে আসতে পারত।

৮| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১১:২৫

দুর্গম পথের যাত্রী বলেছেন: ধন্যবাদ সবাইকে মন্তব্যের জন্য ।স্পেশলি রুপক বধৌত..

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.