নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিঃসঙ্গ অভিযাত্রিক

Never lose hope...., Never Stop Expedition....

নিঃসঙ্গ অভিযাত্রিক

ঘুরে বেড়ানো আমার একটা ভয়ংকর মাত্রার নেশা। আর আমার এই নেশার যোগানদাতা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সব দুঃসাহসিক অভিযাত্রিকেরা। ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ডের বিয়ার গ্রাইলস তাদের লিডার। এই মানুষটার জন্যই আমার মাথাটা খারাপ হয়ে গেছে। ঘোরার নেশা আমাকে গ্রাস করে বসেছে। একা পথচলা আমার খুব পছন্দ। একা চলায় কষ্ট আছে সত্য, কিন্তু তা আনন্দের কাছে চাপা পড়ে যায়।The one who follows the crowd will usually get no further than the crowd. The one who walks alone is likely to find himself in places no one has ever been.

নিঃসঙ্গ অভিযাত্রিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাকে নিয়ে...

০৭ ই জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫৭

মৃত্যুর ১৫ কি ২০ দিন আগে থেকেই কিভাবে যেন আম্মা আমাদের থেকে আলাদা হয়ে যাচ্ছিলেন... বিশেষ করে আমার থেকে। মা-ছেলের অচ্ছেদ্য বন্ধনে তৈরি হচ্ছিলো এক অনিবার্য বিচ্ছেদ। কি মুম্বাই আর কি মিরপুর... ডাক্তারদের বেঁধে দেওয়া আনুমানিক জীবনসীমার নির্মম সত্যের বিপরীতে আম্মার জন্যে ছিল তাঁর বেঁচে থাকা তিন সন্তানের প্রাণান্ত প্রচেষ্টা। কিন্তু দিন যায় আর ফিকে হয়ে আসতে থাকে সেই প্রচেষ্টার ফসল। তাদের আম্মা ধীরে ধীরে চলে যেতে থাকেন সেই জীবনসীমার দ্বারপ্রান্তে। এক দুর্লভ টাইপের ক্যান্সারের অবর্ণনীয় যন্ত্রণায় মাঝে তাঁকে প্রস্তুতি নিতে হয় ওপারে যাওয়ার জন্যে..

আম্মার শেষদিনগুলোতে আমি আর রাশেদ (আমার ছোট ভাই) রাতে পালা করে ডেল্টা হসপিটালের এক কোণার ক্যাবিনে থাকতাম। দিনের বেলা অনেকে থাকলেও রাতে আমি বা রাশেদের থাকা মাস্ট ছিল। কারণ, ঐ কোণার বেডের মানুষটা আমাদের মা। এক রাত আমি তো অন্য রাত রাশেদ। আমি রাতে ঘুমাতাম না। কারণ, হঠাৎ করে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গেলে কিংবা বা কিডনির উপর চেপে বসা টিউমারের অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হলে এই আধার রাতের নিস্তব্ধতায় সেটা আম্মা কাউকে বলবেন না। অসহ্য যন্ত্রণায়ও আম্মার এই চুপ করে সয়ে যাবার স্বভাবটা অন্যরা কতটুকু জানতো তা আমি জানি না; কিন্তু তাঁর সন্তানদের এটা জানার ক্ষমতা আল্লাহ্‌ তায়ালা কিছুটা হলেও দিয়েছিলেন। এরকমই এক রাতে যেদিন আমার থাকার পালা... শুনতে পেলাম আম্মা বিড়বিড় করে কথা বলতেছেন। কাছে গিয়ে শুনতে পেলাম, আম্মা দেয়ালের দিকে মুখ করে ঘুমের মধ্যে বলতেছেন, "আর কোন আশা নাই। ঐ যে, আব্বা চলে আইছেন। আমার যাওয়ার সময় হয়ে গেছে।" আমার নানা ২০০৮ সালের জানুয়ারি মাসে ইন্তেকাল করেন।

আম্মাকে আস্তে করে এদিক ফিরিয়ে দেখি তাঁর দুই চোখের কোণ অসহ্য ব্যথায় বেরিয়ে আসা পানিতে চিকচিক করতেছে। আবার ঘুম পাড়াতে যাবো এমন সময় আম্মা বললেন, "যা ঘুমাতে যা। অবশ্য তোরে কয়ে লাভ কি... তুই তো রাতে ঘুমাইস না।"... আম্মার একেক বারের ঘুম হতো আধা ঘণ্টা কি এক ঘণ্টার। সব মিলায় সারা দিনে দুই কি তিন ঘণ্টা। একটা বাচ্চার হাতের মুঠিতে যেটুকু ভাত আসে জাস্ট সেটুকু খেতে পারতো আম্মা।

আম্মাকে শেষবারের মতো রক্ত দিই আমি। সেই রক্ত রাতে আম্মাকে দেওয়া হয়। গভীর রাত... আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ কি মনে করে জেগে গেলাম। দূর থেকে দেখলাম আম্মা কি যেন একটা করার চেষ্টা করতেছেন। তাড়াতাড়ি কাছে গিয়ে দেখি... রক্ত যাওয়ার পাইপ খুলে গেছে। আম্মা নিজেই সেটা তাঁর অতি দুর্বল হয়ে যাওয়া অন্য হাত দিয়ে ঠিক করতে চাচ্ছেন। আমি আবার নলটা ঠিকমতো লাগাতে গিয়ে দেখি আমার রক্তে আম্মার হাত, মাথা লাল হয়ে গেছে। জীবনের এক অতিকঠিন অভিজ্ঞতা আমাকে অর্জন করতে হয়েছে ২০১১ সালের বর্ষা থেকে বসন্তে... না পেরেছি পালায় যেতে, না পেরেছি আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষটার টেন অন টেনের কষ্ট নিবারণ করতে... পারি নাই কিচ্ছুই...

মহান আল্লাহ্‌ তায়ালা আমাকে পায়ে হেঁটে সারা বাংলাদেশ ঘুরে বেড়ানোর অবিরাম সুযোগ দিয়েছেন। কিন্তু আমি এতোই অভাগা যে, আম্মাকে আমি ঘুরিয়ে দেখাতে পারিনি এই পৃথিবীর নিসর্গসকাশের অপার সৌন্দর্য। পুরাতন মুম্বাইয়ের ছায়াঘেরা সেউড়ি আর টাটা হসপিটালের জীবন-মৃত্যুর আখড়ায় কিছুদিন রাখতে পেরেছিলাম। তাও সেটা অশেষ যন্ত্রণার মূল্যে...আম্মা সুস্থ হলে আমি পণ করেছিলাম, তাঁকে নিয়ে তাঁর চিরআরাধ্য হজে যাবো... যাবোই। কিন্তু সেই পণও আমি পূরণ করতে পারিনি। কিছুই করতে পারিনি... অপদার্থের মতো আম্মার ছেড়ে যাওয়া এই দুনিয়ায় বেঁচে থাকা ছাড়া...

অবিরাম আর অবিশ্রাম দিয়ে যান আমাদের মায়েরা। সৃষ্টির এক অপার বিস্ময় তাঁরা। অসহ্য যন্ত্রণায়ও তাঁরা হাসিমুখে থাকেন আবার অক্লান্ত পরিশ্রমেও হন না বিরক্ত... সামনে ঈদ আসছে... আমরা অনেকেই অনেক কিছু করার প্ল্যান করেছি... সব বাদ দিয়ে একটা প্ল্যান করেন... আপনার আম্মাকে নিয়ে কোথাও থেকে ঘুরে আসেন। আবর্তনসঙ্কুল অথচ বিবর্তনহীন জীবনধারার এই মানুষগুলোকে একবারের জন্য হলেও নিয়ে যান না রাতারগুলে... জোঁকের কামড় খাইয়ে আনুন... কিংবা লোনা পানি পেরিয়ে সর্বদক্ষিণের ক্ষণে জোড়া ক্ষণে বিচ্ছিন্নের ছেঁড়া দ্বীপে... রোদের তাপে গায়ের চামড়া পুড়িয়ে আনুন... অথবা মেঘালয় সীমান্তের পিয়াইন নদীর বিছানাকান্দি থেকে... পাথরে পা কেটে আনুন...

কথায় বলে, মানুষ নাকি দাঁত থাকতে দাঁতের গুরুত্ব বোঝে না। আসলে হবে, মানুষ মা থাকতে মায়ের গুরুত্ব (ঠিকমতো) বোঝে না। আমার এতো ভালো মাকে আমি সেভাবে দেখে রাখতে পারিনি। আল্লাহ্‌ মানুষকে অতি দামি জিনিস দেন তাঁকে পরীক্ষা করার জন্যে... সে সেইটাকে কিভাবে যত্নে রাখে এইটা দেখার জন্যে। আমি ফেইল করছি সেই পরীক্ষায়। আপনারা কইরেন না... যেই মানুষটার পায়ের নিচে পরম আরাধ্য বেহেশতের সন্ধান আছে... সে দামি না তো কে দামি???

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ১০:০৫

ইমতিয়াজ ১৩ বলেছেন: যেই মানুষটার পায়ের নিচে পরম আরাধ্য বেহেশতের সন্ধান আছে... সে দামি না তো কে দামি???



সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেই ফেললাম,

২| ০৮ ই জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১৫

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: অসম্ভব দামী একটা কথা বলেছেন। আসলেই দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বুঝতে পারা উচিত। আল্লাহ্‌ সবার বাবা-মাকে সুস্থ রাখুন, সাথে রাখুন, ভালবাসায় বাঁচিয়ে রাখুন। আর যাদের বাবা-মা তাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন, তাদের শান্তিতে রাখুন, বেহেশত নসীব করুন। আপনার লেখাটা হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। আপনার আম্মার জন্য দোয়া রইল, আপানাদের দুই ভাইয়ের জন্যও। ভালো থাকুন সবসময়, শুভকামনা রইল।

৩| ০৯ ই জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৮

রাতুলবিডি৫ বলেছেন: ডেল্টার কথা মেন পরে। মাকে নিয়ে প্রতিদিন যেতাম রেডিও থেরাপী দিতে ।
আমার মাকে নিয়ে এখন আর কোথাও যেতে হবে না ।

৪| ২৩ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ২:৫৫

আহসানের ব্লগ বলেছেন: আপনার আম্মা যেখানেই থাকুন ভাল থাকুন সে আশা করছি ।

৫| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:৫৩

ইলা বলেছেন: অসাধারন! মা যখন বেচে ছিল- তাকে একজন পরিবারের সাধারন সদস্য মনে হত। চলে যাওয়ার পর বুঝলাম কত দামী, কত মহা মূল্যবান মা। অনেক নতুন নতুন রিলেশনসীপ গড়ে উঠবে কিন্তু মা- সম্পর্ক কেউ হবে ন। মাকে নিয়ে আমার একটা লেখা আছেব্লগে। দেখতে পারেন।




আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.