নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবন সংগ্রামে হেরে যাওয়ার মাঝে কোনো বীরত্ব থাকেনা; তাই জীবনের এই যুদ্ধ ক্ষেত্রে সাহসীকতার সাথে লড়াই করার মাঝেই জীবনের প্রকৃত বীরত্ব লুকিয়ে থাকে, আর ভাগ্য সবসময় সাহসীদের পক্ষেই কাজ করে।

নৈশ শিকারী

আমার এই জন্মভূমিকে খুব ভালোবাসি আর এমন দেশের স্বপ্ন দেখি যে দেশে দারিদ্র্যতা, ক্ষুধা আর পথশিশু থাকবেনা। আর এই প্রকল্প বাস্তবায়নে আমৃত্যু কাজ করে যাবো ইনশাআল্লাহ।

নৈশ শিকারী › বিস্তারিত পোস্টঃ

পবিত্র কোরআনের আলোকে বিজ্ঞান। (পর্ব:৬-III) সৃষ্টির মাঝে মহান স্রষ্টা আল্লাহ পাকের অস্তিত্ব ও বিজ্ঞান।

০১ লা জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০৭

দুই পর্বে সপ্ত আকাশ সৃষ্টিঃ
১৯২৯ সালে G. Lemaiter এবং Hubble আবিষ্কার করেন যে, মহাকাশের সাতটি স্তর এবং জ্যোতিষ্ক সমূহ দুটি পর্বে সৃষ্টি হয়েছে বিগব্যাং এর পর আদি অগ্নিবল বিস্ফোরিত হয়ে দ্রুত প্রসারিত হতে থাকে এবং শীতল হয়ে ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন কণাগুলো গ্যাস মেঘের সৃষ্টি করে। প্রথম দিকে বিকিরণের চাপের দ্বারা স্বাভাবিক বিস্তৃতি বজায় ছিল। কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ে কিছু হিলিয়াম সহ হাইড্রোজেন পরমানু দ্বারা বস্তু কেন্দ্রীভূত হতে থাকে। গ্যাসের এ কেন্দ্রীভূত পিণ্ড বিচ্ছিন্নভাবে একে অপর থেকে দূরত্ব বজায় রেখে ছুটে বেড়ায়। এ সময় দুটি বিপরীত শক্তি এই পিণ্ডের উপর ক্রিয়া করে। Force of Gravitation যা সঙ্কুচিত করার চেষ্টা করে এবং Force of Expansion, যা দূরত্ব সৃষ্টি করে।কিন্তু সম্প্রসারণ শক্তির উন্মক্ত গতিবেগের জন্য সংকোচনশীল গ্যাসপিন্ড (Gas Blob) বিভিন্ন আকৃতি ধারন করে। যথা- বৃত্তাকার, উপবৃত্তাকার ও সর্পিলাকার বা পেঁচানো ইত্যাদি। এগুলোর নাম গ্যালাক্সি গঠিত হয় এবং আকাশ সৃষ্টির কাজ সম্পন্ন হয়। সৃষ্টির এ পর্বে প্রায় ১৫০ মিলিয়ন বছর সময় অতিবাহিত হয়। কোরআনে এ ১৫০ মিলিয়ন বছর সময়ের ব্যাপ্তিকে ‘ইওম’ বলা হয়েছে। অর্থাৎ ১ দিন।

২য় পর্যায়ে গ্যালাক্সিপুঞ্জ বা সংকোচনশীল গ্যাস বলয়গুলো ভেঙ্গে গিয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এ অংশগুলো যতবেশী সংকোচিত হলো তত দ্রুতগতিতে আবর্তিত হতে লাগল। এভাবে আবর্তিত হতে হতে চ্যাপ্টা আকার ধারন করলো এবং জমাট বেঁধে আরও ছোট ছোট বলয়ে বিভক্ত হয়ে পড়লো। ধীর গতিতে পরিবর্তনের মাধ্যমে নক্ষত্র ও সৌরজগত গঠিত হলো। গ্যস এবং ধূলিকণার গোলাকার মেঘপুঞ্জকে বলা হয় নীহারিকা। নীহারিকাসমূহ ঘূর্ণন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংকুচিত হতে লাগল এবং তাদের পশ্চাতে রেখে গেল গোলাকার বস্তুপিণ্ড। এ বস্তুপিণ্ড গুলো অবশেষে গ্রহ, উপগ্রহ ও গ্রহাণুতে পরিণত হলো। সুতরাং সৌরমণ্ডল, গ্রহ-উপগ্রহগুলো ২য় পর্বে সৃষ্টি হয়েছিল এবং এরপর মহাবিশ্বের গোলাকার আবেষ্টনীতে আকাশের সাতটি বলয় গড়ে উঠল। সৃষ্টির ২য় পর্বে সময় লেগেছিল ১ বিলিয়ন বছর। ২ পর্বের সময়কালকে কোরআনের আয়াতে বলা হয়েছে ‘ইউমাইনে’।

"তারপর তিনি দু’দিনের মধ্যে সাত আসমান বানালেন এবং প্রত্যেক আসমানে তিনি তাঁর বিধান নির্দিষ্ট করলেন। ( ৪১:১২)"

আরবি ‘ইওম’ অর্থ দিন। এ আয়াতে দ্বিবচন ‘ইওমাইনে’ ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু যে আয়াতে সৃষ্টি তত্ত্ব আলোচনা করা হয় সেখানে পৃথিবীর নিজ অক্ষে আবর্তনকালের সময়কালকে নির্দেশ করেনা। যেমন, সূরা হজ্বের ৪৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে ১ দিন = ১০০০০ বছর। সূরা মা’আরেজের ৪ নং আয়াতে ১ দিন = ৫০০০০০ বছর বলা হয়েছে। এসব থেকে বুঝা যায় যে আল্লাহতাআলার নিকট ১ দিনের অর্থ একটি সময়কাল। এ সময়কাল দীর্ঘ হতে পারে ক্ষুদ্রও হতে পারে। অর্থাৎ একটি সৃষ্টিকর্মকে পূর্ণতা দান করতে যতটুকু সময় লাগে ‘দিন’ বলতে তিনি সে সময়কে বুঝিয়েছেন। তাই ‘ইওম’ এর আরও অনেক অর্থ হতে পারে, যেমন দিন, কাল, কালের ব্যাপ্তি, phase, Era ইত্যাদি।

মহাকাশের পরিনতিঃ
বিজ্ঞানীদের ধারনা অনুযায়ী, এমন একটি সময় আসবে যখন মহাকাশের সম্প্রসারণ গতি ক্রমান্বয়ে থেমে যাবে এবং মহাকর্ষ শক্তির প্রাবল্য বৃদ্ধি পাবে। এ প্রসঙ্গে যতগুলো তাত্ত্বিক ধারনা উপস্থাপন করা হয়েছে তার মধ্যে একটি হচ্ছে গ্রহ উপগ্রহ সমূহের ওজন বৃদ্ধি এবং নক্ষত্র সমূহের ওজন হ্রাস। যেমন পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। সংখ্যা বাড়া মানেই ওজন বৃদ্ধি পাওয়া । ২০০০ সালে পৃথিবীতে লোকসংখ্যা ছিল ৬০০ কোটি এবং বর্তমানে প্রায় ৭০০ কোটি। লোকসংখ্যা বৃদ্ধির এ হার অব্যাহত থাকলে ৫০০০ সালে মানুষের ওজন পৃথিবীর ওজনের সমান হবে। আবার প্রতি মুহূর্তে পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহ উপগ্রহে মহাজাগতিক ধূলিকণা (Cosmic Dust) এসে পড়ছে। বিজ্ঞানীদের সমীক্ষায় জানা গেছে যে পৃথিবীতে প্রতিবছর ১০ হাজার টন মহাজাগতিক ধূলিকণা পতিত হয় তাতে খুব স্বাভাবিক ভাবে পৃথিবীসহ অন্যান্য গ্রহের ওজন বেড়েই চলছে।

এভাবে যত ওজন বাড়বে মহাকর্ষ শক্তিও তত প্রবল হবে অপরপক্ষে নক্ষত্রগুলোর হাইড্রোজেন গ্যাস পুড়ে হিলিয়ামে রূপান্তরিত হওয়ার ফলে এদের ওজন হ্রাস পাচ্ছে। যেমন আমাদের সূর্য প্রতি সেকেন্ডে ৪ মিলিয়ন টন ওজন হারাচ্ছে। এভাবে সকল নক্ষত্র একটি পরিণত দশায় এগিয়ে যাচ্ছে। অতএব, মহাকাশের স্বতাড়িত সম্প্রসারণ গতি সংকোচনের দিকে ধাবিত হওয়ার জন্য মহাজাগতিক বস্তুর গর ঘনত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে আকাশী বস্তুগুলোর(Celestial Body)মহাকর্ষ শক্তি ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। একসময় এরা একে অপরের কাছাকাছি এসে গেলে মহাকাশের সাতটি অঞ্চল ভেঙ্গে একাকার হয়ে যাবে এবং গ্রহ, নক্ষত্রের মধ্যে পারস্পরিক সংঘর্ষ শুরু হবে। মহাকাশের পরিণতি সম্পর্কে আল কোরআন এর মাধ্যমে আল্লাহ্ বহু তথ্য আমাদের অবহিত করেছেন। তার মধ্যে নিন্মে কয়েকটি উল্লেখ করা হল,

"সেদিন আকাশ মেঘমালাসহ বিদীর্ণ হবে এবং সেদিন ফেরেশতাদের নামিয়ে দেয়া হবে,(২৫:২৫) অতএব আপনি সেই দিনের অপেক্ষা করুন, যখন আকাশ ধূয়ায় ছেয়ে যাবে। (৪৪:১০)"

এ কথার অর্থ হল আকাশে গ্যাসীয় মেঘ দেখা দেবে এবং ঐ গ্যাসীয় মেঘে সূর্য ঢাকা পড়ে যাবে। আমরা জানি দুটি বিপরীত সূর্য তথা নক্ষত্রসমূহের উপর কাজ করছে। একটি হলো অভিকর্ষ বল এবং অপরটি বিকিরন চাপের দরুন প্রসারন বল। বর্তমানে এ দুটি শক্তির মধ্যে সাম্যাবস্থা রয়েছে যার কারনে নক্ষত্র সমূহ ভারসাম্যতা লাভ করেছে। যখন সূর্যের মোট হাইড্রোজেনের ১০% তখন সূর্যের ভেতরের সাম্যাবস্থা বিঘ্নিত হবে। বিকিরণ চাপের আধিক্যের ফলে সূর্যের বহিঃগ্যাসীয় অংশ বিরাট আকারে বিস্তার লাভ করবে এবং ধুম্ররাশিতে ঢাকা পড়ে যাবে আকাশের বিশাল অংশ।

রেফারেন্সঃ
১। A chain of miracles by Harun Yahya.
২। আল কোরআন দ্য চ্যালেঞ্জ মহাকাশ পর্ব – ১
ও ২ – কাজি জাহান মিয়া।
৩। বিজ্ঞানময় কোরআন- মুহাম্মদ আবু তালেব।

সূর্য একটি গতিশীল নক্ষত্র। পূর্বে ধারণা করা হতো এটি স্থির। কিন্তু আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞান এর মাধ্যমে জানা যায় যে সূর্য নিজস্ব কক্ষপথে আবর্তন করে এবং সাথে সাথে এটি গোটা সৌর পরিবার নিয়ে দৈনিক ২৫৫৬০০০০ কিমি বেগে এক অজানা দিগন্তে সন্তরণ করে চলছে। এ দিগন্তের সীমা সৌর চুড়া (Solar Apex) নামে পরিচিত। বিজ্ঞানীদের মতে সূর্য দৈনিক ২০৮৬৫৬০০০০ কি.মি বেগে তার অক্ষপথে ঘুরে এবং এই কক্ষপথ একবার ঘুরে আসতে সময় লাগে ২৫০০০০০০০০ বছর। তাহলে সূর্যের কক্ষপথের ব্যাপ্তি হবে ২০৮৬৫৬০০০০ x ২৫০০০০০০০ x ৩৬৫.২৫ কিমি। মহান আল্লাহতাআলা ই ভাল জানেন এই গাণিতিক হিসাবটি কতটুকু যথার্থ। বর্তমানে সূর্যের ২ টি গতি আবিষ্কৃত হয়েছে, ১/ Forward movement, ২/Orbital movement।

১। Forward movement :- ১৯২৭ সালে Shapley সূর্যের গতিবিধির উপর পরীক্ষা চালিয়ে একটি তত্ত্ব আবিষ্কার করেন এবং তত্ত্বটির নাম দেন “Solar Apex”। এতে তিনি বলেন “ The sun is moving towards an appointed goal”। অর্থাৎ সূর্য একটি নির্ধারিত মঞ্জিলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এ তত্ত্বটি আল কোরআন ৭ম শতাব্দীতে ঐশী ভাষায় বর্ণনা করেছে।

"আর সূর্য, সে তার নির্ধারিত গন্তব্যের দিকে ধেয়ে চলছে৷ এটি প্রবল পরাক্রমশালী জ্ঞানী সত্তার নিয়ন্ত্রিত হিসেব। ( ৩৬:৩৮)"

২। Orbital movement:- ছায়াপথ গ্যালাক্সিতে অবস্থিত আমাদের সূর্য ঘুরে নিজস্ব উপবৃত্তাকার কক্ষপথে। কক্ষপথে একবার ঘুরে আসতে সূর্যের মোট সময় লাগে ২৫ কোটি বছর। এই বিশাল ভ্রমণ ব্যবস্থাপনায় কোন প্রকার বিচ্যুতি ঘটবার অবকাশ নেই এবং একটি সুশৃঙ্খল নীতিমালা অনুসরণ করে সূর্য ঘুরে। আল কোরআনে সূর্যের এই Orbital movement সম্পর্কে বলা হয়েছে,

"তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিন এবং সূর্য ও চন্দ্র। সবাই আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে।(২১:৩৩) সূর্য ও চন্দ্র একটি হিসেবের অনুসরণ করছে। ( ৫৫:০৫)"

তাত্ত্বিক গবেষণা থেকে জানা যায় সূর্যের বর্তমান বয়স ৫০০ কোটি বছর থেকে কিছু বেশী। এটি তার প্রথম পর্বের অস্তিত্বগত বয়সের অর্ধেক। অর্থাৎ মোট ১০০০ কোটি বছর অতিক্রান্ত হলে তার প্রথম পর্ব সমাপ্ত হবে। সূর্যের ওজন নির্ণয় করা হয়েছে 2 x 1030 Kg. বর্তমান অবস্থায় এটি ওজন হারাচ্ছে ৪ মিলিয়ন টন। কেননা সূর্যে প্রতিনিয়ত হাইড্রোজেন গ্যাস দগ্ধ হয়ে হিলিয়াম গ্যাসে রূপান্তরিত হয়ে থাকে। এটি প্রতি সেকেন্ডে ৫০৮০০০ বিলিয়ন অশ্বশক্তি পরিমিত হারে বিকিরণ করে। যার মোট ওজন ৫০০০০০০ টন। সূর্যের ব্যাস ১৩৮৬৪০০ কিঃমিঃ ।

কিন্তু এ ব্যাস ক্রমশই হ্রাস পাচ্ছে। ১৭১৫ সাল থেকে ১৯৯৯ সালের মধ্যবর্তী সময়ে পূর্ণগ্রাস- সূর্যগ্রহণ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে ২৭৬ বছরে এর বয়স কমেছে প্রায় ০.৩৯ সেকেন্ড। এসব তথ্য থেকে সূর্যের এক অবধারিত পরিণতির ইঙ্গিত পাওয়া যায়। অবস্য সূর্যের ২য় পর্বের বয়স কত হতে পারে তা হিসাব করা সুকঠিন হলেও সকল বিজ্ঞানী একযোগে বলেছেন সূর্য পৃষ্ঠে মউজুদ সকল হাইড্রোজেন গ্যাস একদিন শেষ হবেই। তখন সে একটি নিস্প্রভ নক্ষত্রে পরিণত হবে। সূর্যের পরিণতি সম্পর্কে আল কোরআন এ বলা আছে,

"আল্লাহই আকাশসমূহ স্থাপন করেছেন এমন কোন স্তম্ভ ছাড়াই যা তোমরা দেখতে পাও৷ তারপর তিনি নিজের শাসন কর্তৃত্বের আসনে সমাসীন হয়েছে৷ আর তিনি সূর্য ও চন্দ্রকে একটি আইনের অধীন করেছেন৷ এ সমগ্র ব্যবস্থার প্রত্যেকটি জিনিস একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চলে৷ আল্লাহই এ সমস্ত কাজের ব্যবস্থাপনা করছেন৷ তিনি নিদর্শনাবলী খুলে খুলে বর্ণনা করেন, সম্ভবত তোমরা নিজের রবের সাথে সাক্ষাতের ব্যাপারটি নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করবে৷ [আল কোরআন (১৩:০২)] যখন সূর্য আলোহীন হয়ে যাবে, [আল কোরআন (৮১:০১)]"

সূর্য যখন তার পরিণত দশায় উপনীত হবে তখন সে কোন এক সময়ে স্ফীত হতে থাকবে। স্ফীত হতে হতে একসময় তার আয়তন ভীষণভাবে বেড়ে যাবে। তখন তার চেহারা দেখাবে লাল রঙের অতিকায় একটি গোলকের মত। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন Red Giant। এরুপ দশায় উপনীত হওয়ার পর সূর্য তথা সকল নক্ষত্র তাদের নাক্ষত্রিক চরিত্র হারিয়ে ফেলবে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের ধারণা মহাজাগতিক গ্যাস সংকুচিত হয়ে সূর্য নামের নক্ষত্রটি তৈরি হতে সময় লেগেছিল প্রায় ৩ কোটি বছর।

কোন নক্ষত্রের গাসের জ্বলন কত কাল চলবে তা সেটা অবশ্য নির্ভর করে তার ভরের উপর। যেমন সূর্যের বর্তমান বয়স ৫০০ কোটি বছরের কিছু বেশী। তার কেন্দ্রীয় অঞ্চলে যে পরিমান হাইড্রোজেন রয়েছে তা নিয়মিত জ্বলনের পর নিঃশেষ হতে সময় লাগবে ১০০০ কোটি বছর। এভাবে হাইড্রোজেন নিঃশেষিত হওয়ার পর নক্ষত্রের কেন্দ্রীয় অঞ্চল মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে আবার সংকুচিত হতে থাকে। তার বাহিরের অংশ যাকে সপ্রসারিত হতে শুরু করে। দ্রুত সম্প্রসারণের দরুন তাপমাত্রা কমতে থাকে। এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় অঞ্চলে থাকে অবশিষ্ট হাইড্রোজেন। বাহিরে হিলিয়াম। এ নিয়ে তৈরি হয় কোর। প্রচণ্ড সংকোচনের দরুন এ কোর এর তাপমাত্রা দারুনভাবে বাড়তে থাকে। ফলে বহুগুণ উজ্জ্বল হয়। এ অবস্থায় আমরা এনভেলাপ বা নক্ষত্রের বহিরাংশটিই শুধু দেখতে পাব দৈত্যাকার অবস্থায়। অভ্যন্তরের উজ্জ্বল কেন্দ্রীয় অঞ্চল আমাদের চোখের আড়ালে থাকে। সেটি তখন লাল বর্ণ ধারণ করে। তাই এ অবস্থায় নক্ষত্রটিকে বলা হয় রেড জায়ান্ট বা লাল দৈত্য।

বলা হয়েছে এমন দশা আমাদের সূর্যের ক্ষেত্রে অবশ্যই ঘটবে। অন্তত ৫০০ কোটি বছর পর তার কেন্দ্রীয় অঞ্চলের ঔজ্জ্বল্য বেড়ে দাঁড়াবে এখনকার চেয়ে ১০০০ গুন বেশী। ঐ অবস্থায় পৃথিবীর তাবৎ জীবজগত ভস্মীভূত হয়ে যাবে। বর্তমানে সূর্যের বাইরের অংশের তাপমাত্রা ৬০০০ ডিগ্রি k. তখন তার তাপমাত্রা হ্রাস পেয়ে দাঁড়াবে ৩০০০ ডিগ্রি এবং ব্যাসার্ধ এখনকার চেয়ে প্রায় ১০০ গুন বেশী হবে। এ অবস্থায় সে বুধ ও শুক্র গ্রহকে গিলে ফেলবে। তারপর ২য় পর্যায়ে সূর্যের কেন্দ্রীয় অঞ্চলের হিলিয়াম সংযোজনের দরুন যখন নিঃশেষিত হতে থাকবে, তার বহিরাংশের আয়তন আরো বেড়ে যাবে। তখন এগিয়ে আসবে পৃথিবীর দিকে,

"যেদিন আকাশ বিদীর্ণ হবে তখন সেটি রক্তবর্ণে রঞ্জিত চামড়ার মত হয়ে যাবে। [আল কোরআন (৫৫:৩৭)]"

পৃথিবী সৃষ্টির পর্যায় সমুহঃ
বিগ ব্যাং সংগঠিত হওয়ার পর ঘটনা বহুল পক্রিয়ায় মহাবিশ্বের উন্মেষ ঘটে। বিস্তীর্ণ মহাকাশ ( Heavens) ও আকাশী বস্তুসমুহ (Celestial Bodies) যেভাবে সৃষ্টি হয়েছে সৃষ্টি তত্ত্ববিদরা দুটি পর্বে এবং চার অধিযুগে বিভক্ত করেছেন।

প্রথম পর্বঃ- সৃষ্টির প্রারম্ভে মহাজগৎ এমন দ্রুত সম্প্রসারণ হতে থাকে যার ফলে মহাকর্ষীয় শক্তি অপর তিনটি শক্তি ( সবল নিউক্লীয়, দুর্বল নিউক্লীয় এবং বিদ্যুৎ চুম্বকীয়) থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। হাইড্রোজেনের ও হিলিয়াম গ্যাসের বিরাট মেঘমালা মহাকর্ষীয় ভাঙ্গনের ফলে বস্তুপিণ্ডে পরিণত হয়। এসব গ্যাস গঠিত বস্তুপিণ্ড স্থানান্তরিত হতে থাকে যা প্রকারান্তরে নক্ষত্র রুপ ধারণ করে। নক্ষত্র সমূহ মহাকর্ষীয় শক্তির তানে কখনো গোলাকার, কখনো শঙ্কিল, কখনো উপবৃত্তাকার গ্যালাক্সি গঠন করে। এ পর্বে সৃষ্টি সমূহ সম্পন্ন হতে প্রায় ২৫০ মিলিয়ন সময় অতিবাহিত হয় এবং এটাকে গ্যালাক্সি গঠনের পর্বও বলা হয়।

দ্বিতীয় পর্বঃ- নক্ষত্রের আভ্যন্তরীণ চাপ গ্যাসীয় বস্তুর cracking system – কে ত্বরান্বিত করে। কোন কোন নক্ষত্রে ব্যাপক বিস্ফোরণ ঘটে এবং ভারী মৌলিক পদার্থ ছিটকে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে, যা থেকে নেবুলা গঠিত হয়। নেবুলাগুলো মহাকাশে ইতস্ততঃ ভ্রমণ শুরু করে এবং পরস্পরের কাছাকাছি আসলে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। যার দরুন ভারী পদার্থ বিচ্যুত হয়ে অবশেষে তা গ্রহ, উপগ্রহে পরিণত হয়। গ্রহ উপগ্রহ গুলো নির্দিষ্ট নক্ষত্রের চারপাশে ঘুরতে থাকে এবং নক্ষত্রের দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে একটি সংগঠন গড়ে তোলে। এভাবেই আমাদের সৌর জগত গঠিত হয়েছে। সৃষ্টির এ পর্যায়কে ২য় পর্ব হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। উপরোক্ত ২ পর্বের মাধ্যমে আমাদের পৃথিবী গঠিত হয়। বিজ্ঞানীদের গবেষণার মাধ্যমে জানা গেছে যে, পৃথিবীর আভ্যন্তরীণ সমূদয় সৃষ্টি চার পর্বে সমাপ্ত হয়েছে। এ সকল পর্বকে ভূতাত্ত্বিক অধিযুগ বা Geological Eras হিসেবে বিবৃত করা হয়েছে।

১ম অধিযুগ:- এ অধিযুগ শুরু হয়েছিল ৪.২৫ বিলিয়ন বছর পূর্বে এবং এর স্থায়িত্ব ছিল ৩.৬৫ বিলিয়ন বছর। এ সময় পৃথিবীর ধারাবাহিক রূপান্তর ঘটতে থাকে। এ সময় বিভিন্ন গ্যাস মিশ্রিত উত্তপ্ত গ্যাসীয় মণ্ডল পৃথিবী জুড়ে বিস্তৃত ছিল। ক্রমান্বয়ে তাপ বিকিরনের ফলে তা তরল পদার্থে পরিণত হয় এবং এদের মধ্যে ক্রিয়া বিক্রিয়ার এক পর্যায়ে H2 ও O2 এর রাসায়নিক বিক্রিয়ায় জলীয় বাষ্প গঠিত হয়। তাপমাত্রা আরও হ্রাস পেলে বাষ্প কণা জল কণায় পরিণত হয়ে বৃষ্টিধারায় তা মাটিতে নেমে আসে। এভাবে ১০০ কোটি বছরের মধ্যে বায়ু মণ্ডলের উন্নতি ঘটে। যার ফলে পৃথিবীতে একাধারে বৃষ্টিপাতের ঘটনা ঘটে এবং সাগর মহাসাগর নদ নদি ইত্যাদি সৃষ্টি হয়। সৃষ্টির এই পর্যায়কে বলা হয়, Proterozoic Era।

২য় অধিযুগ (2nd Era):-এটাকে পরজীবীয় (Paleozoic) অধিযুগ বলা হয়। এ সময়ে ক্রমাগত ধারায় ভূপৃষ্ঠের রুপান্তর ঘটতে থাকে। মৎস্য প্রাণী উভচর প্রাণী এবং সরীসৃপ প্রাণী এ অধিযুগে আবির্ভূত হয়। এ অধিযুগ শুরু হয়েছিল ৬০০ মিলিয়ন বছর পূর্বে এবং স্থায়িত্বকাল ছিল প্রায় ৩৮০ মিলিয়ন বছর।

৩য় অধিযুগ(3rd Era):- এ পর্যায়ের নামকরণ করা হয়েছে মধ্যজীবীয় অধিযুগ ( Mesozoic Era) । এ সময় মাটির উর্বরতা সৃষ্টি হয়। মরুভূমি, বনাঞ্চল, পর্বতমালা এবং সামুদ্রিক অঞ্চল সপ্রসারিত হতে থাকে। স্তন্যপায়ী জীব প্রথমবারের মত আবির্ভূত হয় এবং বিরল প্রাণী ডাইনোসর এ কালে আবির্ভূত হয়ে প্রাধান্য বিস্তার করে।এ যুগের স্থায়ী কাল ছিল প্রায় ১৫০ মিলিয়ন বছর।

৪র্থ অধিযুগ (4th Era):- এ পর্বের নাম Cenozoic Era বা নবজীবীয় অধিযুগ। এতি এমন একটি কাল যা শুরু হয়েছে প্রায় ৭০ মিলিয়ন বছর পূর্বে এবং তা এখনো অব্যাহত রয়েছে। ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়েছে এ যুগে এবোঞ মোহাণ আল্লাহতালা সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি ‘মানুষ’ এ যুগে সৃষ্টি হয়েছে।

"হে নবী, এদের বলো , তোমরা কী সেই আল্লাহর সাথে কুফরী করছো এবং অন্যদেরকে তাঁর সাথে শরীক করছো যিনি দুদিনে পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন ? তিনিই বিশ্ব জাহানের সবার রব৷ তিনি (পৃথিবীকে অস্তিত্ব দানের পর) ওপর থেকে তার ওপর পাহাড় স্থাপন করেছেন এবং তাতে বরকত দান করেছেন৷ আর তার মধ্যে সব প্রার্থীর জন্য প্রত্যেকের চাহিদা ও প্রয়োজন অনুসারে সঠিক পরিমাপে খাদ্য সরবরাহ করেছেন৷ এসব কাজ চার দিনে হয়েছে।" [ আল কোরআন (৪১:৯,১০)]

"আল্লাহই আকাশ মণ্ডলী ও পৃথিবী এবং এদের মাঝখানে যা কিছু আছে সব সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে এবং এরপর আরশে সমাসীন হয়েছেন ৷ তিনি ছাড়া তোমাদের কোন সাহায্যকারী নেই এবং নেই তার সামনে সুপারিশকারী, তারপরও কি তোমরা সচেতন হবে না?" [আল কোরআন (৩২:০৪)]

(আরবি ‘ইওম’ অর্থ দিন। এ আয়াতে দ্বিবচন ‘ইওমাইনে’ ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু যে আয়াতে সৃষ্টি তত্ত্ব আলোচনা করা হয় সেখানে পৃথিবীর নিজ অক্ষে আবর্তনকালের সময়কালকে নির্দেশ করেনা। যেমন, সূরা হজ্বের ৪৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে ১ দিন = ১০০০০ বছর। সূরা মা’আরেজের ৪ নং আয়াতে ১ দিন = ৫০০০০০ বছর বলা হয়েছে। এসব থেকে বুঝা যায় যে আল্লাহতাআলার নিকট ১ দিনের অর্থ একটি সময়কাল। এ সময়কাল দীর্ঘ হতে পারে ক্ষুদ্রও হতে পারে। অর্থাৎ একটি সৃষ্টিকর্মকে পূর্ণতা দান করতে যতটুকু সময় লাগে ‘দিন’ বলতে তিনি সে সময়কে বুঝিয়েছেন। তাই ‘ইওম’ এর আরও অনেক অর্থ হতে পারে, যেমন দিন, কাল, কালের ব্যাপ্তি, phase, Era ইত্যাদি।)

এসব তথ্য আমরা বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে জানতে পেরেছি কিছু বছর আগে। কিন্তু পবিত্র কোরআনে তা বলা হয়েছে ১৪০০ বছর পূর্বে। এসব জিনিস ই প্রমান করে যে আল কোরআন মহান আল্লাহতাআলা এর বানী যা মানুষের জন্য একটি দিক নির্দেশক। এই মহাবিশ্ব, পৃথিবী, জীব জন্তু, মানুষ ইত্যাদি সবকিছুই আল্লাহর সৃষ্টি এবং তাঁর বেঁধে দেয়া নিয়ম অনুসারে চলমান। কোন দুর্ঘটনা বা coincidence এর মাধ্যমে এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি হতে পারে না। যদি তাই হত তাহলে সবকিছু এত নিয়ম মাফিক হতো না। এই মহাবিশ্ব আপনাআপনি সৃষ্টি হয়নি। এটাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এটি মহান আল্লাহ তা'আলার সৃষ্টি এবং তিনিইএর পরিচালক।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৮

মৃত্যুর পথযাত্রী বলেছেন: অনেক ভাল লাগল , Nice Collection ,ThanX :#)

২০ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১:৩৭

নৈশ শিকারী বলেছেন: you are most welcome

২| ০১ লা জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪০

নৈশ শিকারী বলেছেন: কষ্ট করে পড়ার জন্য আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।

৩| ০২ রা জুন, ২০১৫ দুপুর ১:৩২

নৈশ শিকারী বলেছেন: আল্লাহ পাক আমাদেরকে পবিত্র কোরান সঠিক ভাবে বোঝার এবং আমল করার তৌফিক দান করুক। (আমিন)

৪| ০২ রা জুন, ২০১৫ দুপুর ১:৩৫

নৈশ শিকারী বলেছেন: আল্লাহ পাক আমাদেরকে পবিত্র কোরান সঠিক ভাবে বোঝার এবং আমল করার তৌফিক দান করুক। আমিন

৫| ০২ রা জুন, ২০১৫ দুপুর ১:৩৭

নৈশ শিকারী বলেছেন:

৬| ০২ রা জুন, ২০১৫ দুপুর ২:১৪

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: আমরা সত্যকে কত দেরীতে বুঝতে পারি!!!!

আর মিথ্যুক অবিশ্বসাীরা এই সময়টাতেই বিভ্রান্তি ছড়ায় তাদের মনের ভবনা দিয়ে!

নিশ্চয়ই সত্য সমাগত- মিত্যা দূরিভূত হবে।

++++++++++++++++++++++

২০ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১:৩৯

নৈশ শিকারী বলেছেন: "আর মিথ্যুক অবিশ্বসাীরা এই সময়টাতেই
বিভ্রান্তি ছড়ায় তাদের মনের ভবনা দিয়ে!
নিশ্চয়ই সত্য সমাগত- মিত্যা দূরিভূত হবে।"

সহমত।

৭| ০২ রা জুন, ২০১৫ দুপুর ২:৩৮

নৈশ শিকারী বলেছেন: আপনার মন্তব্যের সাথে সহমত,সত্য চিরকাল ই সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে এটাই নিয়ম, কয়েকজন অবিশ্বাসীর মিথ্যাচারের জন্য কখনোই সত্য চাপা থাকতে পারেনা! আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক সত্য অনুসন্ধান ও বোঝার তৌফিক দান করুক। (আমিন) জনাব, @বিদ্রোহী

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.