নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি সেটা নই যেটা আপনি ভাবছেন..!! আমি সেটাই যেটা আপনি ভাবছেন না.!! আমাকে ভাবা যায় না..!! বুঝতে হয়.!!

আর. এন. রাজু

আমি একদিন মারা যাব, এই সত্যটা নিয়ে আমার খুব বেশি আক্ষেপ নেই। তবে, আমার মৃত্যুর পর আরও অসংখ্য অসাধারণ সব বই লেখা হবে, গান সৃষ্ট হবে, চলচিত্র নির্মিত হবে। কিন্তু আমি সে সব পড়তে, শুনতে কিংবা দেখতে পারবো না। এই সত্যটা আমাকে খুব যন্ত্রণা দেয়।

আর. এন. রাজু › বিস্তারিত পোস্টঃ

"অনুতপ্ত"

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১:০৪

“অনুতপ্ত”
..
প্রতিদিন ছেলেটা ক্লাসে দেরী করে আসতো । প্রতিদিন তার শিক্ষক তাঁকে মারতো ।
দেরী করে আসাতে স্যার রেগে গিয়ে তার গালে আস্তে করে এক থাপ্পড় দিলেন । এতে ছেলেটি কিছু মনে করেনি । সেই একই অবস্থা । ছেলেটি প্রতিদিন দেরী করে আসছে । তার কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না । আজো ছেলে্টি দেরী করে আসছে । স্যার ক্ষেপে গিয়ে তার হাতে বেত দিয়ে মেরে লাল করে দিলেন । ছেলেটি মুখ বুঝে সহ্য করে নিত । স্যার যদি জিজ্ঞ্যেস করতেন সে দেরী করে কেন এসছে । ছেলেটি কোনো কথা বলতো না । এতে স্যার আরও রেগে যেতেন । তাই প্রতিদিন নানা শাস্তি দিতেন তাকে ।
..
স্যার তাকে মারতে মারতে নিজেই বিরক্ত হয়ে যান । কিন্তু এরপরও ছেলেটির মধ্যে কোনো পরিবর্তন দেখতেন না । একদিন স্যার এতটাই রেগে গেলেন যে ছেলেকে ইচ্ছেমতো পিঠালেন । ছেলেটা অনেক কাঁদলো । ছাত্রভর্তি ক্লাসে ছেলেটি অনেক লজ্জা পেল । সেদিন স্যার তাকে বলে দিয়েছেন আজকের পর থেকে যেন তাকে আর এই ত্রিসীমানায় না দেখা যায় । ছেলেটি অনেক কষ্ট পেল এবং স্যারের কথা রাখতে গিয়ে স্কুল থেকে চলে গেল ।
..
আজ অনেক দিন হয়ে গেল ছেলেটি স্কুলে আসছে না । স্যারেরও মন খারাপ হলো । তিনি নিজেকে বলতে লাগলেন, “ক্ষেপে গিয়ে এতটা করা আমার ঠিক হয় নি । সেদিন ছেলেটাকে এতটা না মারলেই হতো” । সে স্কুলেও আসে না । ক্লাসের কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তাঁরা ছেলেটির বাসা চিনে কি না” উত্তরে তারাও না বলে দিল । স্যার নিজেকে এই কাজের জন্য দোষী মনে করছেন ।
..
স্যার হাই প্রেসারের রোগী । তাই তাঁকে প্রতিদিন সকালে দৌড়াতে হয় । সকাল ৮ টা বাজে । স্যারের এলাকার গলিতে ডুকলেন । হঠাৎ তিনি লক্ষ্য করলেন তার ক্লাসের সেই ছেলেটা। যে কি না প্রতিদিন ক্লাসে দেরী করে আসতো । তিনি নিজেকে বললেন “ছেলেটিকে আজ বলবেনই পরেরদিন থেকে যেন সে প্রতিদিন স্কুলে আসে” । বলার জন্য তিনি তার কাছে যেতে চাইলেন । কিন্তু যেতে পারছিলেন না । কারণ ছেলেটা একটা ভাঙ্গা সাইকেল করে পেপার বিক্রি করে । ছেলেটা বুঝতে পারেনি যে তার স্যার তার পিছনে তাকে অনুসরণ করছে ।
..
স্যার তার পিছু পিছু যাচ্ছেন । আর মনে মনে বলছেন “এতটুকু ছোট ছেলে পেপার বিক্রি করে” তিনি আরও এগুতে লাগলেন । এখন বাজে ০৯:৩০ । স্যার এখনও ছেলেটার পিছনে আছেন । ছেলেটা এখনও ঠের পাচ্ছে না । একসময় স্কুলের সময়টাও পার হয়ে গেল । ছেলেটা এখনও পেপার বিক্রি করে যাচ্ছে । সেদিন স্যার আর স্কুলে যাননি ।
..
পরেরদিন স্যার যখন স্কুলে গেলেন তখন গিয়েই প্রথমে দেখলেন সেই ছেলেটি এসছে কি না । না, ছেলেই আজও আসেনি । তার মানে কি সে আজও পেপার..? না তিনি আর কিছু না ভেবে বাকি শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছেন ।
..
১১ টা বাজে, ছেলেটি এসে ডুকলো ক্লাস রুমে । স্যার আজ তাকে মারেননি । ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি প্রতিদিন পেপার বিক্রি করে স্কুলে আসো তা আগে বলোনি কেন? বললে তোমাকে আমি এত মারতাম না এবন্নগ স্কুল আসতেও মানা করতাম না” । ছেলেটি উত্তর দিল “স্যার ভয়ে এবং লজ্জায় বলার সাহস পাইনি” । স্যার বললেন “ তুমি কেন পেপার বিক্রি করো? তোমার বাবা কি কাজ করেন?” ছেলেটি একনাগারে বলতে লাগলো,
“স্যার, আমার যখন বয়স ৮ বছর । তখন আমার বাবা মারা যান । আমার বাবা রিক্সা চালাতেন । একদিন একটা দূঘটনায় বাবা সেখানেই মারা যান । বাবা মুখ থুবড়ে পড়ে যান রাস্তায় । এখনও আমার চোখে ভেসে উঠে সেই মর্মান্তিক দৃশ্য । স্যার, এখন আমাদের পরিবার বলতে আমি আমার ছোট একটা ভাই ও আমার মা । পরিবারে সকল খরচাদি আমাকেই চালাতে হয় । আমি প্রতিদিন সকালে ভোরে উঠে অসীম বাবুর দোকান থেকে পেপার নিয়ে এসে সাইকেল করে মানুষের বাড়ি বাড়ি দিয়ে আসি পেপার । সেই পেপার বিক্রি করে আসতে আসতে প্রতিদিন আমার দেরী হতো । স্কুল পড়ে বাসায় গিয়ে কিছু খেতে পেতাম না। এমন দিন গেছে মা ও ভাই দুজনে না খেয়ে থাকতেন । বিকেল বেলা আমি এক হোটেলে টেবিল মুছার কাজ করতাম । দোকানের মালিক ছিল খুব খারাপ ও ভয়ংকর । পান থেকে চুন খসলেই পিঠে দুগা বসিয়ে দিত । মা ও ছোটভাইটার কথা ভেবে মুখ বুঝে সেই কষ্ট সহ্য করতাম । হোটেল বন্ধ হয় রাত ১০ টায় । তখন দোকানে কিছু পরিত্যাক্ত রুটি এবং সিঙ্গারা পরে থাকতো । মালিককে বলে ওগুলো কিনে নিতাম , টাকা কাটতো আমার বেতন থেকে । স্যার, আমি একদিনও রাতে পড়তে পারতাম না । কারণ আমরা যে বাসায় থাকি সেটা মায়ের কাকাতো ভাইয়ের বাসা । থাকার জন্য আমাদের দিয়েছে । তার বিনিময়ে মাকে সেই বাসার যাবতীয় কাজ করতে হয় । আমাদের বাসায় বিদ্যুৎ নেই, তাই একদিনও পড়তে পারতাম না । হোটেলের কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে ১১টা বেজে যেত । তাই আমাকে রাত জেগে পড়তে হতো রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের আলো দিয়ে । স্যার জানেন, আমার অনেক ভয় করতো পড়তে । মাঝে মাঝে কয়েকটা কুকুর মরা কান্নার মতো ডেকে উঠে । যা আমার ভেতর কে নাড়িয়ে দেয় । স্যার, আমি জীবনে অনেক বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম । আমার ইচ্ছা ছিল আমি একজন ডাক্তার হব । কিন্তু আমার স্বপ্ন আমি বাস্তবায়িত করার কোনো উপায় পাচ্ছিলাম না । কেনোনা একজন মৃত রিকশাওয়ালার ছেলে কিইবা করতে পারে । আমি তারপরেও আমার প্রবল প্রতিজ্ঞা ভাঙ্গতে নারাজ নই । এত কষ্টের মাঝেও আমি আমার পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি । স্যার, আপনি যখন প্রতিদিন আমার হাতে লাটি দিয়ে মারতেন তখন আমার খুব লাগতো । কাঁদতে ইচ্ছে করতো, কিন্তু কাঁদতে পারতাম না । আমার চোখের জল যেন বের হতে চায় না । বাসায় গিয়ে প্রতিদিন ঠান্ডা পানির স্যাক দিতাম । কিন্তু আমি কোনোদিনই আপনার উপর রাগ হইনি স্যার । স্যার, আপনার হোমওয়ার্ক আমি প্রতিদিন করার চেষ্টা করতাম, কিন্তু পারতাম না । স্যার, আপনার হোমওয়ার্ক যদি আনতে না পারতাম তাহলে আপনি আমাকে অনেক বকাঝকা করতেন । স্যার, আমি খাতা কিনতে পারিনা । খাতা কিনার টাকাটা আমার কাছে থাকতো না । আপনি একদিনও আমার মনের কথা বুঝেন নি । আমি কেন দেরী করে আসতাম, আর কেন হোমওয়ার্ক করতে পারতাম না । স্যার, আমি যখন দরিদ্র তহবিল থেকে সাহায্য পাওয়ার জন্য আবেদন করি তখন আপনারা একটা স্বাক্ষরের জন্য আমাকে বিতাড়িত করেছেন । স্যার, সুপারিশ স্বাক্ষরের জন্য যখন চাওয়া হতো নিজ এলাকার কমিশনার বা চেয়ারম্যান/মেম্বারের সিগন্যাচার ও শীল, তখন সেটা আনতে গিয়ে তাঁদের দোয়ারে কড়া নাড়তে হতো । অনেক সময় বলে দিত “যা পরে আসিস” । স্যার, আমার প্রতি অনেক মানুষ অবিচার করেছে । কিন্তু তাতে আমি কিছুই মনে করিনি । আমি ধরে নিয়েছি এটাই আমার আশির্বাদ” ।
..
ছেলেটির কথা শুনে স্যার কেঁদে ফেললেন এবং শেষে তাকে বুকে জরিয়ে নিয়ে বললেন, আমাকে ক্ষমা করে দিস । আমি না জেনে তোর উপর অনেক অত্যাচার করেছি ।
ছেলেটি বললো, “এ কি করছেন স্যার!? আপনার কর্তব্য আপনি পালন করেছেন” । স্যার বললেন, “আমার কর্তব্য আমি পালন করতে গিয়ে তোর মতো একজন কিশোর কে অত্যাচার করেছি” ।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৩:২৮

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: বাস্তবে হয় এরকম...

০২ রা এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:৪০

আর. এন. রাজু বলেছেন: হ্যাঁ..

২| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১১:৫২

চশমান্বেষী বলেছেন: অনেক ভালো হয়েছে। আপনার ফেসবুক ওয়ালে আগেই পড়ে নিছিলাম । :-)

০২ রা এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৯

আর. এন. রাজু বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ..

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.