নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি সেটা নই যেটা আপনি ভাবছেন..!! আমি সেটাই যেটা আপনি ভাবছেন না.!! আমাকে ভাবা যায় না..!! বুঝতে হয়.!!

আর. এন. রাজু

আমি একদিন মারা যাব, এই সত্যটা নিয়ে আমার খুব বেশি আক্ষেপ নেই। তবে, আমার মৃত্যুর পর আরও অসংখ্য অসাধারণ সব বই লেখা হবে, গান সৃষ্ট হবে, চলচিত্র নির্মিত হবে। কিন্তু আমি সে সব পড়তে, শুনতে কিংবা দেখতে পারবো না। এই সত্যটা আমাকে খুব যন্ত্রণা দেয়।

আর. এন. রাজু › বিস্তারিত পোস্টঃ

“প্রতিশ্রুতি”- পর্ব- ০৩

০২ রা এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:৫৪

“প্রতিশ্রুতি”- পর্ব- ০৩

-
না আমি সেদিন তোমার পিছু গিয়েছিলাম । আর না প্রতিদিনকার মতো তোমার বাসার সামনে গেলাম । তুমি আমাকে অপদস্থ করেছো; যা ছিল পুরোই ভিত্তিহীন । আমি কখনোই তা তোমার থেকে আশা করিনি । তুমি সেদিন হয়তো ভাবছিলে ছেলেটা হয়তো শুধরে গিয়ে আমার পিছু হাঁটে নি এবং বাসার সামনেও আসেনি । না, তুমি সেদিন ভুল ভেবেছিলে । তোমার মাথায় এ কথা একবারও আসলো না যে তোমাকে আমি কীভাবে বিরক্ত করেছিলাম । আমি নিজেও এই প্রশ্নের উত্তর পাচ্ছি না । তুমি কি থেকে কি ভেবে আমাকে বলে দিলে, আমার মতো ছেলেদের তোমার চেনা আছে । আচ্ছা আমি কি ধরনের ছেলে ?
-
আমি অসুস্থ্য থাকায় মাথাটা প্রচন্ড ব্যথা করছিল । মনে হচ্ছে মাথার ভিতরে সবাই ঝগড়া শুরু করে দিয়েছে তোমার বলা কথাগুলো নিয়ে । ঝগড়া করবেই তো । ওরা বুঝতে পেরেছিল যে আমি তোমার সাথে খারাপ বা ভুল কিছুই করিনি । ওরা বুঝতে পারলেও তুমি কিন্তু অবুঝের মতোই সেদিন আমাকে ওসব কথা বলেছিলে ।
-
শীতের দিন । তাও আমি অঝোর ধারায় ঘামছি । মা আমাকে নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেলেন । ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে চাইলেন । কিন্তু আমি যেতে অনিচ্ছুক পোষণ করলে মা রেগে যান । রেগে গিয়েও আমাকে কিছু বলতে পারেন না । যে মা তার ছেলেকে কোলেপিঠে করে মানুষ করেছেন, যে মা তার ছেলেকে নিজের শাসন দিয়ে মানুষ করেছেন । সেই ছেলেই মার সাথে কথার উপর কথা বললো ? মা এসব দেখে অনেক কষ্ট পেলেন । এক সময় মা ডাক্তারের কাছ থেকে মুখে বলে ঔষুধ নিয়ে আমাকে খাওয়ালেন । আমার জ্বর তারপরেও কমছে না । ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া হয়ে না বলে আমি অনেকাংশে শুকিয়ে গেছি । মা উনার কাজকর্ম রেখে আমার মাথার পাশেই বসে থাকেন, আর লুকিয়ে লুকিয়ে চোখের জল ফেলছেন ।
-
বেশ কয়েকদিন এভাবে কেটে গেল । একদিন তুমি প্রিয়াঙ্কার কাছে জানতে চাইলে আমার নাম এবং বাসার ঠিকানা । ও দিতে না চাইলেও জোরপূর্বক ওর কাছ থেকে নাম, ঠিকানা নিয়ে আমার বাসায় এসেছিলে । সেদিন কি ভেবে আমার বাসায় এসেছিলে আমি সে প্রশ্নের উত্তর আজও জানিনা । অনেক কষ্টে তুমি আমার বাসা পেলে । তোমাদের বাসা থেকে প্রায় ৪-৫ কিলোমিটার দূরে । তুমি প্রাইভেট যাওয়ার কথা বলে আমাদের বাসায় এসেছিলে আমাকে দেখার জন্য । আমি এতটাই অসুস্থ্য ছিলাম যে এক পর্যায়ে আমি আমার জ্ঞান হারাই । আমার মা আমাকে সব বলেছেন । তুমি আমার মাথার পাশে বসে আমার কথা মার কাছে জানতে চাইলে । মা বললেন,
“মা, তুমি রাজুর কি হও আমি জানিনা । তুমি তাকে দেখতে এসছো এতে আমি অনেক খুশি হয়েছি । আমার ছেলের লাইফে এমনও কেউ আছে যে আমার ছেলের অসুস্থ্যতার কথা শুনে দেখতে এসছে । এই দুঃখের দিনেও আজ অনেক খুশি । কারণ তার আর কোনো বন্ধুবান্ধর ওকে দেখতে আসে নি, কিন্তু তুমি এসেছো । মা জানো, আমার ছেলে এর আগেও অনেকবার অসুস্থ্য হয়েছে । কিন্তু এমন অসুখ ওর কখনো হয়নি । যে অসুখ সারতেই চাচ্ছে না । ওকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে চাইলে ও যেতে চায় না । ওর কি হয়েছে কিছুই বুঝতে পারছি না । ও আমার একমাত্র সন্তান । ওর কোনো ভাই-বোন নেই । ওর কিছু একটা হয়ে গেলে আমি বাচঁতে পারব না ।
-
তুমি সেদিন মাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলে । মার চোখের জল মুছে দিয়েছিলে তোমার ওরনা দিয়ে । আমার জ্ঞান ফিরছে না শুনে তুমিও কিছুটা ভয় পেয়েছিলে । তুমিও আমার মায়ের মতো আমার মাথার পাশে বসে আছো । তোমার প্রাইভেটের সময় পার হয়ে যাচ্ছে সেদিকে তোমার খেয়াল নেই । তোমার বাবা-মা প্রিয়াঙ্কাকে ফোন করলো যে তুমি কোথায় । তুমি সেদিন প্রাইভেট আসোনি বলে ও কিছু আঁচ করতে পেরেছিলো যে তুমি আমার সাথে দেখা করতে আসছো । তাই সে তোমার মা-বাবা কে মিথ্যে বলেছিলো এই যে, তুমি প্রাইভেট শেষে প্রিয়াংকাদের বাড়ি চলে আসছো । অনেক বেলা হয়ে গেছে । অনেক বেলা হয়ে গেছে তাই মা বললেন তোমাকে খেয়ে যেতে । খেতে তোমার অনিচ্ছা থাকলেও মার খুশির জন্য সেদিন তোমাকে খেতে হয়েছিল ।
-
প্রায় তিনদিনের মাথায় আমার জ্ঞান ফিরছে । মা আমাকে তোমার কথা বলেছেন । আমি তোমাকে চিনতে পারছিলাম না । কারণ আমি নিজেও জানতাম না যে তোমার নাম কি । আর মা ও তোমাকে তোমার নাম জিজ্ঞেস করতে ভুলে গিয়েছিলেন । তাই আমি জানতেও পারলাম না কে আমাকে দেখতে আসছিল ।
-
আজ শনিবার । আমি স্কুলে উদ্দ্যেশে রওনা দিলাম । আজ অনেকদিন পর সুস্থ্য হয়ে স্কুলে যাচ্ছি । স্যার কে ইনফর্ম করা হয়নি যে আমি অসুস্থ্যতার জন্য স্কুলে আসতে পারিনি । এই কারণ নিয়ে স্যার আমাকে মারলেন । আমার সেদিন খুব কষ্ট হচ্ছিল । কেনোনা কেন জানি কেউ আমাকে বুঝতে চায় না । কেন বুঝতে চায় না?
-
আমি সেদিন তিন রাস্তার মোড়ে দাড়াইনি তোমাকে দেখার জ্ন্য । তুমি হয়তো চেয়েছিলে আমি তোমার জন্য সেই জায়গাটায় দাঁড়িয়ে থাকি । তোমাকে এক পলক দেখার জন্য আমি অবশ্যই দাড়াতাম । কিন্তু সেদিনকার তুলনার কথা আমার অনেক খারাপ লেগেছে । আমি কেন তিন রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে নিজেকে অন্য ৫ টা খারাপ ছেলের সাথে নিজেকে তুলনা করব?
-
আমি সেদিন ৫ টায় তোমার বাসার সামনে গেলাম না তোমাকে দেখতে । তুমি সেদিন অপেক্ষা করছিলে আমার আসার । কিন্তু আমি আসিনি । তুমি নিজেকে অনেক গালি দিচ্ছো । আর বলছো , “কেন ছেলেটাকে ভিত্তিহীন দোষারোপ করেছি । আমার ওমনটা না করলেও হতো । ওর হঠাৎ অসুস্থতার জন্য আমিই দায়ী । সেদিন ওকে ওমন ভাবে না বললে হয়তো তার এমন পরিবর্তন হতো না” । নিজেকে এও বলছো যে, “ছেলেটাকে আমি চিনিনা জানিনা কেন তাকে এতটা মিস করছি । এই ঘুর অসুস্থ্যতার মধ্যে কি ছেলেটাও আমাকে মিস করছে? আচ্ছা ছেলেটা কি ইচ্ছে করেই আমাকে দেখতে আসছে না, নাকি অসুস্থ্যতার জন্য? ও কেন আসেনি একথা জিজ্ঞেস করতে কি কাল ওর বাসায় যাব? না গেলে যদি ওর মা আমাকে জিজ্ঞেস করে আমি আজও কেন এসছি? নাহ মনে হয় না এভাবে বলবেন উনি । আমি মানুষ চিনতে বা বুঝতে ভুল করিনা । উনি এমন করবেন না ।
-
আমি কিছুটা সুস্থ্য হয়েছি । মাথাটা আগের চেয়ে অনেকাংশে হালকা লাগছে । এই কদিনে আমি অনেকটা শুকিয়ে গেছি । জ্বরে ভোগায় এতদিন আয়নার সামনে যাওয়া হয়নি । আজ আয়নার সামনে নিজেকে দেখে নিজেই চিনতে পারছি না । আমি অনেকটা শুকিয়ে গেছি । আজ তুমি আসলে আমাকে দেখতে । আমি তোমাকে দেখে অবাক । যে মেয়ের সামনে আমি সেদিন ভুল করে তার সামনে চলে যাওয়াতে যা রেগে গিয়েছিল, আজ সেই মেয়েই আমার বাসায় উপস্থিত!! ভাবতে অবাক লাগলেও তাইই সত্যি ছিল ।
-
ও দাঁড়িয়ে আছে । আমি ওকে বিছানায় বসতে বললাম । বাধ্য মেয়ের মতো ও বসলো । আমার আদেশ যেভাবে মানলো মনে হলো সে আমার পরিচিত । আমি ওকে বসিয়ে মা কে ডাকতে গেলাম । মা গেছেন পাশের বাড়ি মাসির সাথে দেখা করতে । উনি অনেকদিন থেকে বলছেন যাতে মা গিয়ে উনাকে দেখে আসেন । মা খবর পেলেও যাওয়ার সাহস পান নি । কেনোনা তাঁর নিজের ছেলেই এতদিন অসুস্থ্য ছিল । এমতাবস্তায় কীভাবে অন্যের বাড়ি যেতে পারি । আমি রুম থেকে যেই বেরুবে তখুনি ও আমাকে বললো –
_ “এই যে কোথায় যান? (শুনে মনে হলো আমার স্ত্রী ডাক দিচ্ছে) আমি আপনার বাসায় এসছি, কই আপনি বসিয়ে চা, বিস্কুট খাওয়াবেন, তা না হুট করেই বেড়িয়ে যাচ্ছেন । বলি কিসের এত দেমাগ?”
_ আমি – “আশ্চর্য!! আমি আবার কোথায় যাব । আমি মাকে ডাকতে যাচ্ছি । মা গেছেন পাশের বাড়ির মাসির বাসায় । তাই উনাকে আনতে যাচ্ছি । আপনি বসুন, আমি এই যাব আর এই আসব” ।
_ ও বললো – “না আপনাকে যেতে হবে না । আপনি এখানে আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকুন । (ওর কথা শুনে মনে হচ্ছে আমার সাথে ওর আগে থেকেই অনেক কথাবার্তা হতো । যে শাসন করছে ।)
_আমিও বাধ্য ছেলের মতো দাঁড়িয়ে থাকলাম ।
-
আমি অনেক্ষণ থেকে অপেক্ষা করছি কখন সে আমার নাম জিজ্ঞেস করবে, আর আমিও জিজ্ঞেস করব । কিন্তু নাহ! ও আমার নাম জিজ্ঞেস না করেই বলে উঠলো –
_ “আচ্ছা রুদ্র, আপনি কি সেদিন আমার ওমন কথায় রাগ বা অভিমান করেছেন?”
_ আমি বললাম – “নাহ । আমি আপনার সাথে রাগ করতে যাব কেন? তার আগে এটা বলুন যে, আপনি আমার নাম জানলেন কি করে? আমি তো আপনাকে আমার নাম জিজ্ঞেস করিনি ।”
_ “বাহ রে! নাম জানতে হলে জিজ্ঞেস করতে হবে বুঝি । অন্যভাবে জানা যায় না নাকি?”
_ “হ্যাঁ তা অবশ্য যায় । তারপরেও বলুন আপনি আমার জানলেন কীভাবে?”
আমাকে অবাক করিয়ে দিয়ে বললো –
_ “ঐ যে আপনার স্কুল আইডি কার্ড আছে না । ওখানেই দেখুন আপনার নাম লিখা আছে” ।
_ “ওহ হ্যাঁ” ।
_ “এখন তো আমি আমার করা প্রশ্নের জবাবটা পাব নাকি না?”
_ “না আমি আপনার সাথে কোনো রাগ করিনি । তবে আপনার বলা ভিত্তিহীন কথাগুলো আমার খুব খারাপ লেগেছে” ।
_ “ওমন ভাবে বলার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত । আচ্ছা আপনি প্রতিদিনের ন্যায় এখন আর আমাদের বাসার সামনে যান না কেন?”
_ “আশ্চর্য!! আমি আপনার বাসার সামনে এখন আর যাব কেন? আপনি কে যে আপনার বাসার সামনে আমাকে যেতেই হবে” ।
-
আমি পরিস্কারভাবে দেখতে পাচ্ছি মেয়েটার চোখের কোণে জল টলমল করছে । তারপর ও আর কিছু না বলেই চলে গেল আমাদের বাসা থেকে ।
-
চলবে...

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৫:১৫

রোকনুজ্জামান খান বলেছেন: কেন চলবে না =====

২| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১০:৫২

আর. এন. রাজু বলেছেন: ধন্যবাদ উৎসাহ দেওয়ার জন্য । :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.