নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভালো লাগে তাই সামান্য একটু হাবিজাবি লিখি এই আর কি !

নির্বাক রাজপূত্র

খুব কম কথা বলি। কিন্তু কিছু হাবিজাবি লেখার চেস্টা করি । রিয়েল লাইফে কম কথা বলি বলে বন্ধুরা নির্বাক বলে ডাকে। তাই ভারচুয়াল লাইফে এই নামটাই বেশিরভাগ ব্যাবহার করি।

নির্বাক রাজপূত্র › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমাকে কেউ খেলায় নিত না: লিওনেল মেসি (মেসির ছোটবেলা)

০৯ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:৪০

আমার জন্ম রোজারিও শহরে। এই শহরটি আর্জেন্টিনার সান্তা ফে প্রদেশের সবচেয়ে বড় শহর। আমরা এই শহরের উত্তর দিকের ব্যারিও লাস হেরাসে খুব সাধারণ কিন্তু সুন্দর একটি বাড়িতে বাস করি। আমার থেকে বয়সে বড় পাঁচ ভাই আর কাজিনদের সঙ্গে আমি ছোটবেলায় খেলতাম। আমার এখনো মনে পড়ে, আমাদের ছেলেদের সেই ছোট দলটি প্রতি সপ্তাহের শেষে নিয়ম করে ফুটবল খেলত।
আমি অনেক ছোটবেলায় প্রথম ফুটবল উপহার পেয়েছিলাম। তখন আমি অনেক ছোট; আমার বয়স মনে হয় তিন কিংবা চার হবে। সেটি আমার জন্য সবচেয়ে বড় উপহার ছিল। তার পর থেকে ক্রিসমাস হোক আর জন্মদিনই হোক না কেন, আমি সব সময়ই একটি উপহার চাইতাম সবার কাছে; সেটি হলো ফুটবল। আমি আমার উপহারগুলো জমিয়ে রাখতাম। আমি ফুটবল নিয়ে রাস্তায় খেলতে যেতাম না। যদি ফুটবল ফেটে যায় বা ফুটবলের গায়ে ময়লা পড়ে; এই ভয় ছিল আমার। মাঝেমধ্যে বল নিয়ে মাঠে যেতাম, তখন থেকেই আমি ফুটবলের প্রেমে পড়ি। আমাদের বাড়ির চারপাশে সবুজ উদ্যান ছিল। কিন্তু ফুটবল খেলার জন্য কোনো মাঠ ছিল না। আমাদের বাড়ি থেকে খুব কাছেই একটি পরিত্যক্ত সামরিক ক্যাম্প ছিল, যেটি আমাদের কাছে ব্যাটালন নামেই পরিচিত ছিল। সেই ক্যাম্পে বেশ কটি বড় সবুজ ঘাসের উদ্যান ছিল। আমরা তারের বেড়া ডিঙিয়ে চুপি চুপি চোরের মতো সেই ক্যাম্পে চলে যেতাম। তারপর সারা দিন ফুটবল নিয়েই পড়ে থাকতাম। আমরা বেশির ভাগ সময়ই রাস্তায় ফুটবল খেলতাম। বাড়ির বাইরে যেখানেই সুযোগ পেতাম, সেখানেই আমরা ফুটবল খেলতাম। যদিও সে সময় রাস্তাঘাট এবড়োখেবড়ো ছিল। আমরা খুব ছোট একটি পরিবেশের মধ্যে থাকতাম। যার কারণে সেখানে আমরা একে অন্যকে বেশ ভালোভাবেই চিনতাম। আমরা বাড়ির সামনেই ফুটবল খেলতাম বলে আমার মা আমাকে নিয়ে তেমন চিন্তা করতেন না।
আমি পাঁচ বছর বয়স থেকে ফুটবল খেলা শুরু করি। প্রথম দিকে আমি বড়দের সঙ্গে খেলার অনুমতি পেতাম না। এটা আমার জন্য ছিল সত্যিই হতাশার। আমার পাড়ার বড় ভাইয়েরা আমাকে রাস্তার সেই ফুটবল ম্যাচে নিতে চাইত না। আমি ছোট ছিলাম বলেই তারা আমাকে নিত না, ব্যাপারটা আসলে এ রকম ছিল না। বড় ভাইয়েরা বলত, তারা নাকি শুধু বড়দের সঙ্গেই ফুটবল ম্যাচ খেলতে চায়। আমার বড় ভাই আমাকে নিয়ে বেশ চিন্তা করতেন। আমার কাছ থেকে অন্য ছেলেরা যখন বল নিতে পারত না, তখন যদি সেই ছেলেরা রেগে গিয়ে আমাকে মারধর করে। এই নিয়েই ছিল তাদের যত দুশ্চিন্তা।
আমি যখন রাস্তায় ফুটবল খেলা শুরু করি, তখনই আমি আমাদের এলাকার ছোট ফুটবল ক্লাব গ্র্যান্ডোলিতে যোগ দিই। শুধুই আমি না, আমাদের পুরো পরিবার সেই ক্লাবে খেলত। মা ছাড়া বাসার সবাই বয়স অনুসারে সেই ক্লাবে খেলতাম আমরা। আমার বাবা তো সেই ক্লাবের কোচদের একজন ছিলেন। আমরা প্রতি রোববার সারা দিন ক্লাবের মাঠে দৌড়াদৌড়ি করতাম।
ক্লাবে যোগদানের শুরু থেকেই আমরা সেভেন-অ্যা সাইডের ম্যাচ খেলতাম। আমাদের শহরের উত্তর অংশের দল রোজারিওর ছোট দলের বিপক্ষে আমরা নিয়মিত খেলতাম। আমি আমার দাদির জন্য প্রথম সেই বড়দের ম্যাচে খেলার সুযোগ পাই। গ্র্যান্ডোলি ক্লাবে আমার বয়সী ছোট ছেলেদের নিয়ে ফুটবল দল ছিল না। এক রোববার আমার থেকে একটু বয়সে বড় দলের এক খেলোয়াড় খেলার জন্য প্রস্তুত ছিল না। আমার দাদিমা আমাকে জোর করে সেই ম্যাচে খেলতে নামিয়ে দেয়। তার পীড়াপীড়িতে আমি মাঠে নামি। আমাদের কোচ আমাকে মাঠে নামাতে চাচ্ছিলেন না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি আমাকে পুরো খেলা খেলতে দিয়েছিলেন। সেটাই ছিল আমার বড়দের সঙ্গে খেলা প্রথম ক্লাব ম্যাচ। আমি যখন আমার বয়সী খেলোয়াড়দের সঙ্গে মাঠে নামতাম, তখন আমাদের কোচিং করাতেন স্বয়ং আমার বাবা। আমি প্রতিদিন ঘণ্টা ধরে মাঠে ফুটবল প্র্যাকটিস করতাম।
আমি প্রতিদিন স্কুলে যেতাম। কিন্তু স্কুল থেকে বাড়ি ফিরেই সোজা ফুটবল নিয়ে দৌড় দিতাম। কিছু একটা মুখে পুরেই আমি রাস্তায় দৌড় দিতাম। আমি সব সময় রাস্তায় ফুটবল খেলার জন্য মুখিয়ে থাকতাম। প্রায় সব সময় আমার সঙ্গে একটি বল রাখতাম। বার্সেলোনায় আসার পরেই আমার সব বদলে যায়। আমি আমার সব বন্ধু, পরিবার আর আমার দেশ থেকে দূরে চলে আসি। আমার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্যই আমি স্পেনে পাড়ি জমাই। আমি মাত্র ১৫ বছর বয়স থেকে বার্সেলোনার যুব দলের সঙ্গে প্র্যাকটিস শুরু করি।
আমি সৌভাগ্যবান যে আমি একটি সাধারণ পরিবারে জন্মেছি। কিন্তু স্রষ্টার কৃপায় আমাদের তেমন কিছুর অভাব ছিল না। আমার বাবা সারা দিন পরিশ্রম করে আমাদের জন্য সবকিছু নিয়ে আসতেন। আমাদের তিন ভাইয়ের যা যা লাগে তা আমার বাবাই নিয়ে আসেন। আমি কখনোই কোনো কিছুর অভাব বোধ করিনি।
যখন ছোট ছিলাম তখন আমার বাবা ও চাচা সব সময় বিশ্বাস করতেন আমি নাকি বড় ফুটবলার হব। এটা সত্যি হতে শুরু করে যখন আমি বার্সেলোনার উদ্দেশে রওনা দিই। আমি যখন রোজারিওতে বয়স্ক দলের সঙ্গে প্রথম প্র্যাকটিস করি তখন আমার কোচ বার্সেলোনা যাওয়ার জন্য সব ব্যবস্থা করেন। তিনি তখন তাঁর মনের প্রশান্তির জন্য আমার জন্য একটি চুক্তিপত্র রেডি করেন। ন্যাপকিনের ওপর লেখা সেই চুক্তিপত্রে আমি স্বাক্ষর করি। প্রথম প্রথম বার্সেলোনায় এসে অনেক মন খারাপ করতাম। আমার একা একা লাগত। কান্নাকাটি করতাম। কিন্তু আমি তো স্বেচ্ছায় আমার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমার স্বপ্ন ছিল বার্সেলোনার প্রধান দলের হয়ে ফুটবল খেলা।
আমি শিশুদের বলব, তোমরা ফুটবল খেলাকে উপভোগ করার জন্য খেলো। ফুটবল খেলা সত্যিই আনন্দদায়ক। এর মাধ্যমে তুমি নতুন নতুন অনেক বন্ধু বানাতে পারবে। ফুটবল তোমাকে ব্যক্তি হিসেবে দায়িত্ব বুঝে নিতে সহায়তা করবেই। কিন্তু সবার আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো খেলাধুলার আগে পড়াশোনা। তোমার পড়াশোনা শেষ করতে হবে।
তথ্যসূত্র: ২০০৯ সালে প্রকাশিত সাংবাদিক টম ওয়াটের অ্যা বিউটিফুল গেম: ফুটবল থ্রু দ্য আইস অব দ্য ওয়ার্ল্ড গ্রেটেস্ট প্লেয়ার্স গ্রন্থ ও ২০১১ সালের ২০ জুন সাংবাদিক পলা আলভারিনাসকে দেওয়া টেলিভিশন সাক্ষাৎকার অবলম্বনে লেখা। (সংগ্রহীত)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১২:২৭

ডি মুন বলেছেন:
শেয়ার করার জন্যে ধন্যবাদ

++ +

২৩ শে মে, ২০১৫ রাত ১:৪৬

নির্বাক রাজপূত্র বলেছেন: :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.