নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনিরুদ্ধ বুলবুল

একাধিক মানুষের মেধা রুচি ও মত কখনোই এক হতে পারেনা।

নির্বোধ পাঠক

আসুন - সত্য বলি, সত্য খুঁজি, সত্যকে প্রকাশ করি।

নির্বোধ পাঠক › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাজনীতিকদের ধর্ম ব্যবসা, হেফাজতী আন্দোলন – স্বরূপ ও পরিনতি

১০ ই মে, ২০১৩ ভোর ৪:৫৯

অনেকেই বলে থাকেন হেফাজতীদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল। কী উদ্দেশ্য ছিল? এই আন্দোলনের মাধ্যমে কি তারা ক্ষমতায় যেতে পারতেন? আর তাদেরকে ক্ষমতায় বসালেই কী তারা রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারতেন? সেই অভিজ্ঞতা মেধা দূরদর্শীতা বা ক্ষমতা এর কোনটাই নেই তাদের। যুগ যুগ ধরে যে কওমী শিক্ষা ব্যবস্থা সমাজ বাস্তবতার যাবতীয় শিক্ষা ও অভিজ্ঞতাকে পাশ কাটিয়ে একমাত্র পারলৌকিক পরিত্রাণের লক্ষ্যকে সামনে নিয়েই পরিচালিত হয়ে আসছে, সেই কওমী আলেমরা ধর্মীয় আধ্যত্নিক জ্ঞানের অধিকারী হলেও রাষ্ট্র পরিচালনার মত কোন ক্ষমতাই যে রাখেন না তারই বাস্তব প্রমাণ গত ৫ মে’র সমাবেশ – আয়োজন ও পতন। যে কওমী শিক্ষাব্যবস্থায় যুগ যুগ ধরে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পর্যন্ত নেয়া হয়না তারা ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত হলেও যুগ বাস্তবতার আলোকে বিবেচনা করলে সেটা এমন একটা খন্ডিত শিক্ষা যা দিয়ে কোন ইহজাগতিক কাজই সম্পাদন করা সম্ভব নয়।



স্বাধীনতা পূর্ব সময় থেকেই এদেশে ধর্ম রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার হয়ে আসছে। বিস্তীর্ণ দূরত্বের ভিন্ন দু’টি ভূখন্ড; যার মাঝে একটা তৃতীয় দেশ বিদ্যমান তেমন ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতার বাস্তবতায়ও তখন পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র সৃষ্টির গোড়ায়ও ছিল ধর্মীয় আবেগ। সেই থেকেই শুরু; মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে স্বাধীনতা সংগ্রামের চরম বিরোধীতাকারী তৎকালীন ইসলামী দলগুলো মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেই ক্ষান্ত হয়নি। নিছক ধর্মীয় জিগির তুলেই বাঙালী নিধন সহ ধর্ষণ লুটপাট জ্বালাও পোড়াও সবই করেছে। পরবর্তীকালে দেশ স্বাধীন হলেও রাষ্ট্রীয় নীতির দূর্বলতায়ই হোক বা শাসক শ্রেণীর উদারতার জন্যই হোক অথবা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্যই হোক - প্রায় সকল নির্বাচিত সরকারই সেই ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়েছে। অর্থাৎ - প্রকারান্তরে প্রায় সকল রাজনৈতিক দলই জামাতের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে।



তার সবই ছিল রাজনৈতিক স্বার্থে। তাই গত ৪১ বছর যাবত মানবতাবিরোধীদের কোন বিচার হওয়া দূরে থাক এরা এদেশের রাজনীতিতে বেশ গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই পূনর্বাসিত হয়েছে। স্বাধীনতা উত্তর প্রায় সব সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েই তারা রাজনৈতিক ইমেজ তৈরী করতে সক্ষম হয়েছে - এমপি হয়েছে, মন্ত্রী হয়েছে, চাকরি বাকরী সহ ব্যবসা বানিজ্য ইত্যাদির মাধ্যমে মূল অর্থনৈতিক স্রোতধারায় বেশ শক্ত শিকড়ও গেড়ে বসেছে। একথা আর অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে তারা এখন আমাদের মূল জনগোষ্ঠীরই একটা অংগ। তাই এটাকে এখন আর বেবচ্ছেদের কোন উপায়ও নেই।



মন্দের ভাল, দেরীতে হলেও মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে। আর একটু এগিয়ে না হয় জামাতের রাজনীতিকেও নিষিদ্ধ বা বাতিল করা হল। কিন্তু সমাজের মূলস্রোতে মিশে থাকা লাখ লাখ জামাতী ভাবধারার জনগোষ্ঠীর বিশ্বাস আকিদা ও দৃষ্টিভংগী কি করে বদলাবে? তেমন কিছু করতে হলে সরকারকে খুব সতর্কতার সাথেই ভেবেচিন্তে আগাতে হবে। নইলে তা বিধ্বংসী ক্যান্সারের মরণব্যাধির মতই সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে আঘাত হানতে থাকবে যার ফল কখনোই শুভ হতে পারেনা।



এদেশে সরলপ্রাণ ধর্মবিশ্বাসী মানুষকে ধর্মের কথা শুনিয়ে যতটা কনভিন্স করা যায় আর কিছুতেই ততটা সম্ভব নয় বলেই প্রায় সকল রাজনৈতিক দলই সুযোগমত ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করার সুযোগ নেয়, সময় বুঝে জামাতীদেরও ব্যবহার করে। এটা নতুন কিছু নয়; অধূনা হেফাজতে ইসলাম প্রথমে কোন রাজনৈতিক ব্যানারে না এলেও তাদেরকে নিয়ে সব দলই টানাটানি করেছে, ইন্দন যুগিয়েছে। তাদের শক্তিকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে চেয়েছে। তাই কেউবা তাদের আস্থা অর্জনের জন্য তাদের সমাবেশের অনুমতি দেয়, কেউবা পাশে থেকে সমর্থন যোগায় কেউবা একধাপ এগিয়ে মদিনা সনদে দেশ পরিচালনার প্রত্যয়ও ঘোষনা করে। আর এই নিয়ে চলে এক ধরণের ‘টাগ অব ওয়্যর’। সেই টানাটানিতে 'হেফাজতী দড়ি' ছিঁড়ে যায়। অতঃপর ঘটনার আকিস্মিকতায় সুবিধা আদায়কারী গোষ্ঠী বেসামাল হয়ে একে অপরকে দোষারূপে মগ্ন হয়। মাঝখানে সরকারী দলের সুবিধাই হয়েছে; হেফাজতী ইস্যূর কারণে ইতোমধ্যে সৃষ্ট অনেকগুলো ‘বার্নিং ইস্যূ’ অনেকটাই ধামাচাপা পড়ে যায়। দৃশ্যতঃ বল এখন ক্ষমতাশীন দলেরই কোর্টে। তাই তারা বেশ ফুরফুরে মেজাজেই আছে।



সবাই জানি; হোফাজতীরা কোন রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ নিয়ে মাঠে নামেননি। কিন্তু ঘটনা চক্রে তারা ধোকা খেয়ে বোকা সেজেছেন, হতাশ হয়েছেন পরিণামে নিজেদের আত্নাহুতি দিয়েছেন। তাই অরাজনৈতিক অহিংস ভাবধারা সত্বেও তারা সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগ এনেছেন, সরকার পতনের মত হুমকি দিয়েছেন। আর এখানেই কুট রাজনৈতিক বিষয়টা লুকিয়ে আছে – তারা বুঝতে পারেননি যে সবাই তাদের কথা দিয়ে নাচিয়েছে মাত্র। আসলে কেউই কথা রাখেনি; যারা পাশে থাকার ভরসা দিয়েছিল দুঃসময়ে পাশে দাঁড়ায়নি, যারা সমাবেশের অনুমতি দিয়ে নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছিল শেষ পর্যন্ত তারাই চড়াও হয়েছে (অবশ্য হেফাজতীরা সার্থক হলে তার সুফলটুকুই কেবল তারা নিতো)। নোংরা বাস্তবের কুট কৌশল না বুঝা সিরাতুম্মুস্তকীমে বিশ্বাসী সরল সোজা হুজুররা ওই সব মিথ্যা আশ্বাসে বিশ্বাস করে হঠাৎই নিজেদেরকে বেশ ক্ষমতাশালী ভেবে উদ্দীপ্ত হয়ে উঠেন আর রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে শুরু করেন। অবশেষে তারা বলির পাঁঠায় রুপান্তর হয়ে নিজেদের বিতর্কিত করেছেন।



তাই আমরা অনেকেই ভাবছি; এরা কোরানও পুড়িয়েছেন? কোরান যে পুড়ানো হয়েছে এটাও সত্য। কিন্তু ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষ এটা কোনভাবেই বিশ্বাস করার মত যুক্তিও খুঁজে পায়না। যাদের কোন ক্ষমতা দখলের রাজনৈতিক অভিলাষ নেই, যারা ধর্ম তথা কোরান ও আল্লাহ রসুলের নির্দেশিত পথের বাইরে জাগতিক চিন্তা করাটাকেও হারাম মনে করেন তারা কোন উদ্দেশ্যে এমন জঘন্য কাজ করে ধর্মের অবমাননা করবেন। তারা তো ধর্ম রক্ষা করতেই নিজের জীবন উৎসর্গ করে প্রয়োজনে শহীদ হওয়ার প্রত্যয় নিয়েই এসেছেন। বরং যে সব রাজনৈতিক দল প্রয়োজন মত অহরাহই ধর্মকে ব্যবহার করে মানবতাবিরোধী কাজ করতেও দ্বিধা বোধ করেনা; কোরান/জায়নামাজ পুড়ানো কেবল তাদের পক্ষেই সম্ভব।



যদি তারা সহিংসই হবেন তাহলে কেবল সুন্নতি লাঠি আর চিড়ামুড়ির পোটলা হাতেই আসতেন না! তা হলে কেবল পড়ে পড়ে নিজেরাই মরতেন না, সাথে দুই চারটি নিয়েই মরতেন আর তেমন প্রস্তুতি নিয়েই আসতেন! বরং বড় হুজুরের নির্দেশে - চিড়ামুড়ি সাথে নিয়ে কয়েকদিনের জন্য দ্বীনি কাফেলায় শরীক হয়ে পরকালের সওয়াব হাসিল করাই ছিল তাদের মূল আকিদা। তারা যে রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছেন তা বুঝতে দেরী হয়েছে। তাদের ইমাম - শফি সাহেব নিজেও ঠিক বুঝতে পারছিলেন না যে, কাকে বিশ্বাস করবেন। তাই এতবড় সমাবেশ ঘটিয়েও সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে পারেছিলেন না। তাই, কোন বিবেচনা প্রসূত সিদ্ধান্তও নিতে পারেননি। অবশেষে তাঁকে বিমানে তুলে দিলে - চলে যেতে বাধ্য হলেন। আর সমাবেশের হুজুররা বড় হুজুরের পরবর্তী নির্দেশের অপেক্ষায় আল্লার উপর তাওয়াক্কাল করেই মতিঝিল পরে থাকলেন। আর এটাকে পুঁজি করে কিছু রাজনৈতিক দলের অতি উৎসাহী পান্ডারা ওইসব নোংরামীতে মেতে উঠেছিল।



সবাই জানি; ওই সময়টায় বিদ্যূৎ ও মিডিয়ার উপস্থিতি ছিল না। সূতরাং তখন দোকান-পাটে আগুন দেয়া লুটতরাজ করা সহ কোরান জায়নামাজ পুড়ানো সবই সংঘটিত হয়েছে। সূতরাং অপকর্মের হোতাদের কেউ দেখতে না পেলেও সব দায়ই হেফজতীদের উপরই বর্তায় – আর এভাবেই তারা বলির পাঁঠায় রূপান্তর হন। যা ইতোমধ্যেই বাবুনগরীর ভাষ্যে প্রতিফলিত হয়েছে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.