নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনিরুদ্ধ বুলবুল

একাধিক মানুষের মেধা রুচি ও মত কখনোই এক হতে পারেনা।

নির্বোধ পাঠক

আসুন - সত্য বলি, সত্য খুঁজি, সত্যকে প্রকাশ করি।

নির্বোধ পাঠক › বিস্তারিত পোস্টঃ

নির্দলীয় তত্বাবধায়ক সরকার ইস্যূতে প্রথম আলো’র জরিপ প্রতিবেদন

১৯ শে মে, ২০১৩ রাত ১:২০

সম্প্রতি প্রথম আলো’র এক জরিপ প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে; ৯০% লোক নির্দলীয় তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পছন্দ করে। এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর আওয়ামী মিত্র হিসাবে পরিচিত প্রথম আলো’র বিরুদ্ধে খোদ আওয়ামী মহল থেকেই ব্যপক সমালোচনা হতে থাকে। তারা এখন প্রথম আলো’কে বাম ঘরাণার পত্রিকা বলে চিহ্নিত করার প্রয়াশ চালাচ্ছেন। বিষয়টা কিছুতেই মাথায় আসছে না। বাম ঘরানার মিত্র ঘাড়ে নিয়েই তো আওয়ামী লীগ এত শক্তিশালী। তো প্রথম আলো বাম ঘরাণার হলে অসুবিধাটা কোথায়? আসল সমস্যা হল; প্রথম আলো পূর্বাপর বিষয়টি খেয়াল না করেই জরিপে প্রাপ্ত ফলাফলটি সরাসরি প্রকাশ করে দেয়(যদিও আওয়ামী দাবী – প্রথম আলো ওটাকে মেনিপুলেশন করেছে)- যা আওয়ামী যুক্তি ও জিদের বিপরীতে কাজ করেছে বলেই তাদের এমন গাত্রদাহ।



মানছি; প্রথম আলো'র জরিপ মানেই সমগ্র জনগনের প্রকৃত মতামতের চিত্র নয়।তবে একটা সরল হিসাব আওয়ামী ভক্তদের না বুঝার কথা নয় (কিন্তু বুঝবেন না, স্বার্থগত কারণেই বুঝতে চাইবেন না)। সাড়ে চার বছর আগে যে নির্বাচন হয় তাতে যদি ৬০% ভোটারও যোগদান করে থাকে আর আওয়ামী লীগ তার মাত্র এক তৃতীয়াংশ ভোট পেয়েও সংখ্যগরিষ্ঠতা পেয়ে থকে সে হিসাবে তারা মোট জনসংখ্যার ১৯.৭৫% ভোট পেয়েছিল।



বাস্তবতা হল; আমাদের দেশে একটা সরকার বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়ে ক্ষমতায় আসার পর নানান কারণেই খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা হারাতে থাকে, আওয়ামী লীগও তার ব্যতিক্রম নয়। বরং সাড়ে চার বছরের নানান অনিয়ম দূর্নীতির পাশাপাশি আওয়ামী নেতা এমপি মন্ত্রীদের স্বেচ্চাচারী ও ভারসাম্যহীন আচরণ (যা খোদ আওয়ামী মহলেই নিন্দিত)এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে গোড়া আওয়ামী ভক্তরাই নিজ দলের উপর বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ, এখন নির্বাচন হলে তারাও আর আওয়ামীলীগকে ভোট দিবেনা।



দ্বিতীয়ত; নতুন প্রজন্মের যে অংশটার ভোট এবারে আওয়ামীলীগকে অনেক এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল তারা কিন্তু খুব সচেতন। শেয়ার বাজার হলমার্ক বিসমিল্লাহ গ্রুপ ডেসটিনী কুইক-রেন্টাল পদ্মাসেতু ইত্যাদি ইস্যূতে সেই মহলটি (প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ) চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ছাড়াও সরকারের বহুবিধ স্বেচ্চাচারিতা ও অগনতান্ত্রিক আচরণে তারা খুবই ক্ষুব্ধ। যেহেতু তারা সুবিধাভোগী রাজনীতিকে ঘৃণা করে; সরল হিসাবেই বুঝা যায় ইতোমধ্যেই সেই ভোটগুলোও মাইনাস হয়ে গেছে।



পরিনামে সরল হিসাবটি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়? মোট জনসংখ্যার মাত্র ১৯.৭৫% এর ভোট পাওয়া দলটি এই সাড়ে চার বছরের ভুলত্রুটি ও স্বেচ্চাচারিতার কারণে যদি ৪০% জনপ্রিয়তাও হারিয়ে থাকে তাদের ব্যাঙ্কে অবশিষ্ঠ ভোট থাকে মাত্র ১০.৫%। আর এই অংশটার বেশীর ভাগই ক্ষমতার সুবিধাভোগী কর্মী ব্যবসায়ী ভাড়ায় খাটা গৃহপালিত দালাল ইত্যাদি শ্রেনীর ভোটার যারা - সরকারের প্রত্যক্ষ মদদ ও অনুগ্রহ পেয়ে নিজেরা তুষ্ট ও পরিপুষ্ট। এটা শুধূ আওয়ামী লীগেরই দোষ নয়, এদেশে যে কোন দলের ক্ষেত্রেই এমনটি হয়ে আসছে।



কাজেই, সেই হিসাবে প্রথম আলো'র জরীপ মূল্যায়ণকে অগ্রহ্য করার কোন কারণ দেখিনা। সকল দলেই দেখা যায়; যুক্তি-বুদ্ধি রহিত বাস্তবতাহীন অন্ধ দলীয় সমর্থকরা বরাবরই জ্ঞানপাপী; তারা জেগে ঘুমায়। তাই তারা ওসব দেখলেও বুঝে না। বলা যায় বুঝতে চায় না বা বুঝতে গেলে তাদের চলেও না। যে কোন মূল্যেই তারা নিজের দলকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। সূতরাং পেটের দায়েই হোক বা অতি লোভেই হোক অথবা উপরে উঠার 'সিঁড়ি'র আশায়ই হোক প্রতিটা দলেই এমন অনেক উচ্ছিষ্টভোগী অন্ধ সমর্থক রয়েছে!



এবার আসা যাক - তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ৯০% লোক চায় কি না? এটা তো সরল হিসাব? যে ১০.৫% লোক আওয়ামী ভোটব্যাঙ্কের খাস ভোটার তারা অবশ্যই চাইবে না যে তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় নির্বাচন হোক। তাহলে যে নির্বাচনে তাদের স্বেচ্চাচারী প্রভাব খাটাতে অসুবিধা হবে? বাদবাকী প্রায় ৯০% ভোটার অবশ্যি চাইবে না যে এমন স্বেচ্চাচারী দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হোক!



দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে যে ওই ক্ষমতাশীন দলটি পূনর্বার ক্ষমতায় যাওয়ার সকল কারু-কাজ খুব নির্বিঘ্নে সম্পাদন করবে না, জনগণের তেমন আস্থা আজ পর্যন্ত কোন দলই অর্জন করতে পারে নি। স্বভাবতঃই সাধারণ জনগণ দলীয় সরকারের অধীন (তা হোক অন্তঃর্বর্তী অথবা শংকর দলীয় সরকার। কারণ, সেখানে যে ক্ষমতাশীনদের প্রভাবই থেকে যাচ্ছে!) জাতীয় নির্বাচনে নির্ভয় হতে পারে না যে তা ক্ষমতার প্রভাব ও কারুকাজ ছাড়া নিবিঘ্নে স্বচ্চতার সাথে সম্পন্ন হবে।



জনগনকে ধোঁকা দিতে উদ্দেশ্যমূলক ভাবেই ইউরোপ আমেরিকার গনতন্ত্র ও তাদের নির্বাচন পদ্ধতির দোহাই দেয়া হয় বটে। আমাদের প্রতিবেশী ভারতেই তো দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচন করতে কেউ অনীহা প্রকাশ করে না তো আমরা করি কেন? আসলে আমাদের দেশে কোন রাজনৈতিক দলই কি সেই গনতন্ত্রের চর্চ্চা করে যে; তাতে জনগনের আস্থা থাকবে? সেই আস্থা ও ভিত্তি তৈরী করার দায়িত্ব সরকার সহ সকল রাজনৈতিক দলের। তারা তো নিজেদের মধ্যেই গনতন্ত্রের চর্চ্চা করে না? তারা সেই আস্থা অর্জন করতে পারলে জনগনের আপত্তি থাকার কথা ছিল না। তাই আমাদের দেশের মেকি গনতন্ত্রে জনগণের আস্থা নেই বললেই চলে।



সেই শংকা থেকেই জাতীয় নির্বাচনের জন্য জনগন যদি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার চায় (যে অপশন মাননীয় আদালতের রায়েও দেয়া হয়েছে) তো দোষ কী? তা না হয় 'তত্ববধায়ক সরকার' নামে না ই হল - কিন্তু নির্দলীয় নিরপেক্ষ হতে বাঁধা কোথায়? প্রথম আলো’র জরিপ প্রতিবেদনে অংশগ্রহণকারী পাঠকের মনের কথারই প্রতিফলন হয়েছে – যা আপামর সচেতন জনগনেরই মনের কথা।



সরকার ঢাক-ঢোল পিটিয়ে বলছে; এ সরকার খুব জনপ্রিয়। জনগন তাদের খুব ভালবাসে - তাহলে তো ভালই? নির্দলীয় সরকারের অধীনে তারা ফ্রি ফেয়ার ইলেকশন দিক না - জনগনের মেন্ডেট তারা পাবেনই? তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থায় তাদের এত জুজুর ভয় কেন?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.