নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ভাল , আমাকে বাসবেন না :প

নিশা মাহমুদা

নিশা মাহমুদা › বিস্তারিত পোস্টঃ

বুদ্ধিজীবি হত্যা এবং রাও ফরমান আলী

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:২৯

মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলি সরকারি একটি নথিতে লিখেছিলেন, ‘দি গ্রিন অব ইস্ট পাকিস্তান উইল হ্যাভ টু বি পেইনটেড রেড’। অর্থাৎ সবুজ পূর্ব পাকিস্তানকে রক্তে রঞ্জিত করে দেওয়ার কথাই বলেছিল সে।
রাও ফরমান আলী ছিল পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণরের উপদেষ্টা। মুক্তিযুদ্ধের সময় বুদ্ধিজীবি হত্যার প্রধান রূপকার হিসাবে চিহ্নিত। এই হত্যাকান্ড হয়েছিল ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১।
২৫ মার্চ রাতে অপারেশন সার্চলাইটের পরিকল্পনার সাথে একসাথেই বুদ্ধিজীবীদের হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। পাকিস্তানী সেনারা অপারেশন চলাকালীন সময়ে খুঁজে খুঁজে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করতে থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষককে ২৫শে মার্চের রাতেই হত্যা করা হয়। তবে, পরিকল্পিত হত্যার ব্যাপক অংশটি ঘটে যুদ্ধ শেষ হবার মাত্র কয়েকদিন আগে। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী এবং তাদের প্রশিক্ষিত আধা-সামরিক বাহিনী আল-বদর এবং আল-শামস বাহিনী একটি তালিকা তৈরি করে, যেখানে এই সব স্বাধীনতাকামী বুদ্ধিজীবীদের নাম অন্তর্ভূক্ত করা হয়। স্বাধীনতার পর ধ্বংসপ্রাপ্ত বঙ্গভবন থেকে মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলির স্বহস্তে লিখিত ডায়েরী পাওয়া যায় যাতে অনেক নিহত ও জীবিত বুদ্ধিজীবীর নাম পাওয়া যায়। এছাড়া আইয়ুব শাসন আমলের তথ্য সচিব আলতাফ গওহরের এক সাক্ষাৎকার হতে জানা যায় যে, ফরমান আলীর তালিকায় তার বন্ধু কবি সানাউল হকের নাম ছিল। আলতাফ গওহরের অনুরোধে রাও ফরমান আলি তার ডায়েরীর লিস্ট থেকে সানাউল হকের নাম কেটে দেন। এছাড়া আলবদরদের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা তিনিই করেছিলেন বলে তার ডায়েরীতে একটি নোট পাওয়া যায়।
গভীর বেদনা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয়ের ঠিক দুই দিন আগে আসে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। বাংলাদেশ যেন মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে মেধা ও মননে, সে জন্য বেছে বেছে হত্যা করা হয়েছিল জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। আসন্ন পরাজয়ের প্রতিহিংসা আগাম চরিতার্থ করতে তারা বেছে নিয়েছিল ঘৃণ্য এই কৌশল।
১৪ই ডিসেম্বরের হত্যাকাণ্ড ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে এক জঘন্য বর্বর ঘটনা, যা বিশ্বব্যাপী শান্তিকামী মানুষকে স্তম্ভিত করেছিল। ঘাতক-দালাল চক্র এই পৈশাচিক-নির্মম নিধন যজ্ঞের পর ঢাকার মিরপুর, রায়েরবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে বুদ্ধিজীবীদের লাশ ফেলে রেখে যায়। ১৬ই ডিসেম্বর পাক-বাহিনীর আত্মসমর্পণের পরে আত্মীয়-স্বজনেরা মিরপুর ও রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে তাঁদের লাশ খুঁজে পায়। ঘাতকবাহিনী আমাদের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের পৈশাচিকভাবে নির্যাতন করেছিল। একজন প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা-
”আর একটু এগিয়ে যেতেই বাঁ হাতের যে মাটির ঢিপিটি ছিল তারই পাদদেশে একটি মেয়ের লাশ। মেয়েটির চোখ বাঁধা। গামছা দুটো আজও অখানে পড়ে আছে। পরনে কালো ঢাকাই শাড়ী ছিল। এক পায়ে মোজা ছিল। মুখ ও নাকের কোন আকৃতি নেই।কে যেন অস্ত্র দিয়ে তা কেটে খামচিয়ে তুলে নিয়েছে।যেন চেনা যায় না।মেয়েটি ফর্সা এবং স্বাস্থ্যবতী।স্তনের একটা অংশ কাটা। লাশটা চিৎহয়ে পড়ে আছে।বিভৎস চেহারার দৃশ্য বেশীক্ষণ দেখা যায়না। তাকে আমি চিনতে পারিনি। পরে অবশ্য সনাক্ত হয়েছে যে ,মেয়েটি সেলিনা পারভীন। ’শিলালিপি’র এডিটর।তার আত্মীয়রা বিকেলে খবর পেয়ে লাশটি তুলে নিয়ে গেছে।”
আরেকটি বর্ণনা,”পাশে দুটো লাশ, তার একটির হৃৎপিন্ড কে যেন ছিঁড়ে নিয়েছে। সেই হৃৎপিন্ড ছেঁড়া মানুষটিই হল ডঃ রাব্বী। —————-ডঃ রাব্বীর লাশটা তখনও তাজা। জল্লাদ বাহিনী বুকের ভেতর থেকে কলিজাটা তুলে নিয়েছে।তারা জানতো যে তিনি চিকিৎসক ছিলেন। তাই তার হৃৎপিন্ডটা ছিঁড়ে ফেলেছে।”
এমনি আরো অজস্র লোমহর্ষক ঘটনার বিবরণ পাওয়া যায় প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায়। সেইসব মর্মান্তিক ঘটনার শুনে বারবার শিউরে উঠতে হয়। এই ঘাতকদালালচক্রের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করার মতো উপযুক্ত ভাষা পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়না। যুদ্ধকালীন সমস্ত সময় জুড়েই বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হলেও ১৪ই ডিসেম্বরের মতো একসাথে এত বুদ্ধিজীবীকে এর আগে হত্যা করা হয়নি ,এজন্যই এই দিনটিকেই “শহীদ বুদ্ধীজীবী দিবস” রূপে পালন করা হয়। বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ ১৪ই ডিসেম্বরকে ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস” বলে ঘোষণা দেন। প্রতি বছর এই দিনটিতে আমরা আমাদের অকাল-প্রয়াত শ্রেষ্ট সন্তানদের আবেগ-আপ্লুত হয়ে স্মরণ করলেও আজ স্বাধীনতার ৪৩ বছরেও এ ক্ষতি পুরন হবার নয়। তবুও বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি সকল শহীদ বুদ্ধিজীবিদের।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৫০

প্রবাসী পাঠক বলেছেন: বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি সকল শহীদ বুদ্ধিজীবিদের।

২| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৪৮

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: এই মানুষগুলো বেঁচে থাকলে আজকে আমাদের দেশের চিত্রই পালটে যেত!!!

৩| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৪৫

আলম দীপ্র বলেছেন: কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: এই মানুষগুলো বেঁচে থাকলে আজকে আমাদের দেশের চিত্রই পালটে যেত!!!
একদম ঠিক কথা ।

সকল শহিদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি আমার বিনম্র শ্রদ্ধা ।

৪| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৫

শাহ আজিজ বলেছেন: ওই নিধন প্রক্রিয়া এখনো চালু আছে । আরবের অর্থ দিয়ে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য ছোট ছোট দল । এরাই ঠিক করে কাকে কোথায় এবং কি ভাবে হত্যা করতে হবে। এদের কি লাভ? একটি তথাকথিত ইসলামি সমাজ ব্যাবস্থা কায়েম করার উদ্দেশ্যে এবং রাষ্ট্র ক্ষমতা হস্তগত করার তীব্র ইচ্ছায় এরা ৭১এর নিধন প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে। পাক গোয়েন্দা বাহিনী ৯১এর পর তীব্র শক্তি নিয়ে এদেশে গেড়ে বসে ৭১এর পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে। তবে আমি বিশ্বাস করি এইসব স্বপ্ন ওদের কখনোই পুরন হবেনা। দেশের ৯৫% মানুষ গোলযোগ পূর্ণ অবস্থার বিরুদ্ধে । ১৯৭১ সালে অদক্ষ মুক্তিসেনারা কিভাবে পাকি সেনাদের ব্যারাকে পাঠিয়েছিল ! এইসব কুলাঙ্গার বাংলার খায় বাংলার পরে আর গায় পাক সার জমিন সাদ বাদ----। হত্যার বদলে হত্যা , ছাত্রলীগ কি আল্বদর হয়ে গেছে নাকি? ঝাপিয়ে পড় , শেষ কর এই জঞ্জালদের !!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.