নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লেখক নই, কথক।কল্পনা আর বাস্তবতা জোড়া দিয়ে প্রেম অথবা প্রতিবাদের ছবি আঁকা শিখছি।

নোমান প্রধান

লেখক নই, কথক।

নোমান প্রধান › বিস্তারিত পোস্টঃ

বঙ্গ জননীর বীরসন্তানঃ আদি থেকে আজ (পর্ব২)

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:০১



সূর্য সেন

সূর্যকুমার সেন, ডাকনাম কালু। মাস্টারদা নামে সমধিক পরিচিত। ভারত উপমহাদেশেরব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতা হিসেবে পরিচিত ব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশে জন্ম নেয়া এই বাঙালি বিপ্লবী তৎকালীন ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং নিজ জীবন আত্নত্যাগ করেন। ১৯১৬ সালে বহররমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজের ছাত্র থাকাকালীন সময়ে সূর্য সেন সরাসরি রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত হন। তিনি অধ্যাপক সতীশচন্দ্র চক্রবর্তীর সান্নিধ্যে আসেন।সূর্য সেনকে তিনি বিপ্লবের মন্ত্রে দীক্ষা দেন।

১৯২৩-এর ১৩ ডিসেম্বর টাইগার পাস এর মোড়ে সূর্য সেনের গুপ্ত সমিতির সদস্যরা প্রকাশ্য দিবালোকে বেতন বাবদ নিয়ে যাওয়া ১৭,০০০ টাকার বস্তা ছিনতাই করে।১৮ এপ্রিল ১৯৩০, শুক্রবার রাত ৮টা বিদ্রোহের দিন হিসাবে ঠিক হয়। পরে তা দশটা করা হয়।চারটা বাড়ি হতে চারটা দল আক্রমণের জন্য বের হয়। সে রাতেই ধুম রেলস্টেশনে একটা মালবহনকারী ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে উল্টে যায়। একদল বিপ্লবী আগে থেকেই রেল লাইনের ফিসপ্লেট খুলে নেয়। এর ফলে চট্টগ্রাম সমগ্র বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। অন্য একটি দল চট্টগ্রামের নন্দনকাননে টেলিফোন এবং টেলিগ্রাফ অফিস আক্রমণ করে। হাতুড়ি দিয়ে তারা সব যন্ত্রপাতি ভেঙ্গে দেয় এবং পেট্রোল ঢেলে সেখানে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়। আরেকটি দল পাহাড়তলীতে অবস্থিত চট্টগ্রাম রেলওয়ে অস্ত্রাগার দখল করে নেয়। উন্নতমানের রিভলবার ও রাইফেল গাড়ীতে নিয়ে অস্ত্রাগারটি পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগানো হয়। তবে সেখানে কোনো গুলি পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ পরিকল্পনা অনুযায়ী বিপ্লবীরা দামপাড়ায় পুলিশ রিজার্ভ ব্যারাক দখল করে নেয়। এই আক্রমণে অংশ নেয়া বিপ্পবীরা দামপাড়া পুলিশ লাইনে সমবেত হয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। মিলিটারি কায়দায় কুচকাওয়াজ করে সূর্য সেনকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

সূর্য সেন অস্থায়ী বিপ্লবী সরকার গঠনের ঘোষণা দেন। তিনি তার ঘোষনায় বলেন:
"The great task of revolution in India has fallen on the Indian Republican Army. We in Chittagong have the honor to achieve this patriotic task of revolution for fulfilling the aspiration and urge of our nation. It is a matter of great glory that today our forces have seized the strongholds of Government in Chittagong…The oppressive foreign Government has closed to exist. The National Flag is flying high. It is our duty to defend it with our life and blood".

সিরাজ সিকদার



বাংলাদেশের একজন কমিউনিস্ট বিপ্লবী নেতা ছিলেন।১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দের ৮ জানুয়ারি তিনি সমমনা কয়েকজনকে নিয়ে পূর্ব বাংলা শ্রমিক আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করেন যার লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানের উপনিবেশিক শাসন থেকে পূর্ববাংলা'কে মুক্ত করে জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন করা; সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদ অভিমূখে যাত্রা করবার লক্ষ্যে বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা করা।
১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দের ৮ জানুয়ারি সিরাজ সিকদার প্রতিষ্ঠিত পূর্ব বাংলা শ্রমিক আন্দোলনের মাধ্যমে উপস্থিত করেন পূর্ব বাংলার শ্রমিক আন্দোলনের খসড়া থিসিস। এই থিসিসে তিনি পূর্ব বাংলাকে পশ্চিম পাকিস্তানের উপনিবেশ বলে অভিহিত করেন। প্রধান দ্বন্দ্ব নির্ধারণ করেন বর্তমান সামাজিক বিকাশের প্রক্রিয়ায় পূর্ব বাংলার জনগণের সাথে পাকিস্তানি উপনিবেশবাদীদের জাতীয় দ্বন্দ্ব। থিসিসে জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লবের আহ্বান জানানো হয়। থিসিসে আরো বলা হয়, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ বর্তমান বিশ্ব প্রক্রিয়ার কেন্দ্র।

১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে সিরাজ সিকদারের বিপ্লবী পরিষদ বিভিন্ন জেলায় পাকিস্তানী প্রশাসন ও শ্রেণি শত্রুর বিরুদ্ধে গেরিলা অপারেশন চালায়। ঐ বছরের ৮ জানুয়ারি তারা ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ জেলা ও ময়মনসিংহে ওড়ায় স্বাধীন পূর্ব বাংলার পতাকা। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ২ মার্চ এই বিপ্লবী পরিষদ শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগের উদ্দেশে একটি খোলা চিঠি লেখে, যা লিফলেট আকারে সারাদেশে প্রচার করা হয়। এর চার নাম্বার দফাটি ছিল পূর্ব বাংলার দেশ প্রেমিক রাজনৈতিক পার্টি ও ব্যক্তিদের প্রতিনিধি সমন্বয়ে জাতীয় মুক্তি পরিষদ বা জাতীয় মুক্তি ফ্রন্ট গঠন করেন। সিরাজ সিকদারের একটি কবিতার লাইনঃ” আর কয়েকটা শত্রু খতম হলেই তো গ্রামগুলো আমাদের; জনগণ যেনো জল, গেরিলারা মাছের মতো সাঁতরায়…/” মুজিবনগর সরকার ১৭ এপ্রিল শপথ নেওয়ার পর সেই সরকারের প্রতি আরেকটি খোলা চিঠি দেওয়া হয় শ্রমিক আন্দোলনের পক্ষ থেকে। সেখানে যুদ্ধের ময়দানে করণীয় বিষয়ে তুলে ধরা হয়। তবে এবারও প্রবাসী সরকার শ্রমিক আন্দোলনের সেই চিঠিতে কর্ণপাত করেনি।

করেনি।১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তানী বাহিনীর গণহত্যার পর সিরাজ সিকদার বরিশালের পেয়ারা বাগানে ৩০ এপ্রিল তারিখে গড়ে তোলেন জাতীয় মুক্তিবাহিনী। ৩ জুন পার্টির নতুন নাম দেয়া হয় পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবরে সর্বহারা পার্টি দলের গেরিলাদের নির্দেশ দেয় পাকস্তানী বাহিনী, ভারতীয় বাহিনী ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করতে। কারণ সিরাজ সিকদার পাকিস্তানকে উপনিবেশবাদী, ভারতকে আধিপত্যবাদী এবং আওয়ামী লীগকে ভারতপন্থী আধিপত্যবাদী শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। বরিশাল থেকে শুরু করে দেশের কয়েকটি উপকূলীয় অঞ্চল–বিক্রমপুর, মানিকগঞ্জ জেলা, পাবনা, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন এলাকায় সর্বহারা পর্টির গেরিলারা পাক-বাহিনীর সঙ্গে বীরত্বপূর্ণ লড়াই করে।একাত্তর এর পর সিরাজ সিকদার পূর্ব বাংলা তথা বাংলাদেশকে ভারতের উপনিবেশ হিসেবে উল্লেখ করে "পূর্ব বাংলার বীর জনগণ, আমাদের সংগ্রাম এখনও শেষ হয় নি, পূর্ব বাংলার অসমাপ্ত জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন করার মহান সংগ্রাম চালিয়ে যান" নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজণৈতিক দলিল হাজির করেন। যেখানে আওয়ামীলীগকে জাতীয় বিশ্বাস ঘাতক ও বেঈমান হিসেবে উল্লেখ করে তাদের কে ছয় পাহাড়ের দালাল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ১৬ ডিসেম্বরকে কালো দিবস হিসেবে ঘোষনা করা হয়। ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ এ এই দিনে দেশব্যাপী হরতাল পালন করা হলে মাওলানা ভাসানী বিবৃতি দিয়ে তা সমর্থন করেন।

সিরাজ সিকদার গ্রেফতার হন ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের ১ জানুয়ারি এবং পরদিন ২ জানুয়ারি গভীর রাতে তাঁকে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের ১৭ বছর পর ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দের ৪ জুন এই বিষয়ে আদালতে মামলা করা হয়।

আগা মোহাম্মদ বেগ



(ফকির বিদ্রোহ নিয়া আকা ছবি)

ব্রিটিশ কোম্পানীর শাসকরা ফকির সন্ন্যাসীদের এধরণের চলা-ফেরা সংন্দেহের চোখে দেখত। তাই ১৭৭৩ সালের ২১ জানুয়ারি ভারতের বড়লাট ওয়ারেন্ট হেষ্টিংস ফকির সন্ন্যাসীর লাঠি ত্রিশুলসহ ভ্রমণ এবং চাঁদা ও বিক্ষা ইত্যাদি বিষয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। যার ফলে ফকির সন্ন্যাসীরা একপর্যায়ে বিদ্রোহে মেতেউঠেন। অনেক হতাহতির পর ১৮০০ সালের দিগে ভারত বর্ষের ঐতিহাসিক ফকির সন্ন্যাসীর এ আন্দোলন প্রায় স্তিমিত হয়ে আসে। তখন সিলেটে আগা মোহাম্মদ বেগের নেতৃত্বে ফকির সন্যাসীরা উত্তপ্ত হয়ে উঠেন। মোহাম্মদ বেগ ১৭৯৯ সালে কাছার হতে ১২'শ ফকির সন্যাসীসৈন্য সহ সিলেটে প্রবেশ করেন। সাথে সাথে এখানকার জমিন্দারগণ তাকে সমর্থন জানিয়ে ইংরেজকে খাজানা প্রদান বন্ধ করে দেন । ফলশ্রুতিতে ইংরেজরা বিন্দাশায় আগা মোহাম্মদের আস্তানা আক্রন করে প্রথমে পারাজিত হয় । পরবর্তিতে ব্রিটিশ ভারতের রাজকীয় বাহিনীকে যুদ্ধের জন্য পাঠানো হলে, ওদের সাথে যুদ্ধে আগা মোহাম্মদের বাহিনী পেরে ওঠেনি । ফলে প্রাণ দিতে হয় হাজারও সৈন্যকে। এদিকে আগা মোহাম্মদ বেগ উপায়ন্তর না দেখে ত্রিপুরার দিকে পালিয়ে যাওয়ার পথে ইংরেজদের হাতে বন্দি হন এবং ধরা পড়েন তার অনুসারী খাকীশাহ, রামপুর শাহ, নাজির শাহ ও রহিম শাহ সহ অনেক । ইংরেজরা আগা মোহাম্মদের বিচার ঢাকায় না করে কলিকাতায় নিয়ে যায় এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে।

(চলবে)

প্রথম পর্বের লিংক Click This Link

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:৩৯

শুকনো পাতার চুলকানী বলেছেন: বাকি তথ্যের অপেক্ষায় রইলাম.।.।.।.।.।।।

২| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:৩৯

শুকনো পাতার চুলকানী বলেছেন: বাকি তথ্যের অপেক্ষায় রইলাম.।.।.।.।.।।।

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:৫৯

নোমান প্রধান বলেছেন: আস্তে আস্তে পেয়ে যাবেন আশা করি :)

৩| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৩২

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: অনেক কিছু জানা হল। ধন্যবাদ।

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৮

নোমান প্রধান বলেছেন: :)

৪| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:৩৩

হাসান রাজু বলেছেন: চট্রগ্রামে সংঘটিত ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলননের পটভূমিতে ভারতে নির্মিত একটি অসাধারণ মুভি Chittagong । মুভিটিতে অসাধারণ ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মাস্টারদা সূর্য সেন, প্রীতিলতা ও নির্মল সেনদের চরিত্র। মনোজ ভাজপেয়ি, নওয়াজ উদ্দিন সিদ্দিকী 'র মত অভিনেতাদের অভিনয় মুগ্ধ করবে সবাইকে। আগ্রহী হলে দেখতে পারেন। ভালো লাগবে।

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১০

নোমান প্রধান বলেছেন: ধন্যবাদ, অবশ্যই দেখবো

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.