নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বলতে ভয় লাগে

অন্ধকারে কালো

এখানে কিছু লেখার ইচ্ছা নাই

অন্ধকারে কালো › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি ধাঁধাঁ, এন্থ্রাক্সের টিকা দেয়ার গল্প ও সিটি কর্পোরেশনের মশা মারা অভিযান

২২ শে জুলাই, ২০১৭ সকাল ১১:২৭

আমি সুন্দর করে গুছিয়ে লিখতে পারি না, এ জন্য প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
প্রথমে ধাঁধাঁ (ধাঁধাঁ গুলোতে শুধু চোখ বুলিয়ে যান, উত্তর দেয়ার জন্য চেষ্টা করাটা জরুরী না)
ধাঁধাঁর জন্য নিচে দুটো ছবি দেয়া হল। ঢাকাতে যারা থাকেন, কমবেশি সবাই এ ধরনের দৃশ্যের সাথে পরিচিত। একটি হল বাসার সামনে রাস্তা, আরেকটি ছবি হল বাসার পিছনে দুই সারি বাসার মাঝখানে যে ফাঁকা অংশটুকু থাকে যেটি সাধারনত Sewerage Passage নামে পরিচিত। ধাঁধাঁর উত্তর দেয়ার সময় ছবি দুটি আপনাদের নিজেদের এলাকার ছবি হিসেবে কল্পনা করুন।
ধাঁধাঁ ১ –ছবি দুটো দেখে বলতে হবে কোন ছবিটিকে মশার আদর্শ প্রজনস্থল ও অভয়ারণ্য হিসেবে গণ্য করা উচিত




ধাঁধার প্রথম ছবিঃ (একই স্থানের দুইটি ছবি, উপর থেকে ও সামানে থেকে তোলা) সিটি কর্পোরেশনের চোখে মশার অভয়াশ্রম


ধাঁধার দ্বিতীয় ছবিঃ মশার প্রকৃত অভয়াশ্রম

ধাঁধাঁ ১ (ক) – মশার আগ্রাসন রোধ করতে হলে ছবি দুটোর কোনটিতে বেশি করে মশা মারার বিষ/ ঔষধ স্প্রে করা উচিত?
ধাঁধাঁ ১ (খ) – চিকুনগুনিয়ার অজুহাতে ইলেক্ট্রনিক ও কাগুজে সংবাদমাধ্যমসমূহ তাদের মুল্যবান কাগজ ও সময় নষ্ট করার ফলে ইতোমধ্যে অনেকেই নিজ নিজ এলাকাতে মশা মারার বিষ/ ঔষধ স্প্রে করতে দেখেছেন। যদি দেখে থাকেন তবে ছবি দুটোর কোনটিতে আপনি স্বচক্ষ্যে স্প্রে করতে দেখেছেন?

উত্তর বিশ্লেষণ করার পূর্বে একটি অগোছালো গল্পঃ
কোনো এক ধনাঢ্য ব্যক্তি শহরে রাজকীয় হালে থাকেন। তার গ্রামের বাসায় গরু ছাগলের বিশাল খামার রয়েছে। হঠাৎ করে ওই এলাকাতে এন্থাক্সের আগমন ঘটলো। একদিন খামারের ম্যানেজার মালিককে (ঐ ধনাঢ্য ব্যক্তি) ফোন করে বললেন যে এন্থাক্সের আক্রমনে দুইটি গরু মারা গিয়েছে, ১৫-২০ টি আক্রান্ত, খামারের বাকি ১৫০০ গরু এখন পর্যন্ত সম্পূর্ণ সুস্থ আছে তবে সেগুলোতেও এন্থাক্স আক্রমনের ঝুঁকিতে।
এ রকম একটি ভয়ানক খবর শুনে মালিক তৎক্ষণাৎ দেশের সবচেয়ে ভালো স্বনামধন্য পশু ডাক্তারের সাথে মিটিং এ বসলেন। ডাক্তারের পরামর্শমত পর্যাপ্ত পরিমানে দেশের সবচেয়ে ভালো মানের এন্থাক্স প্রতিরোধী টিকা নিয়ে পরের দিন ভোরেই খামারের মালিক সেই স্বনামধন্য পশু ডাক্তারকে নিয়ে খামারে হাজির হলেন। (যদিও প্রকৃতপক্ষ্যে এন্থাক্স প্রতিরোধী টিকা আছে কি না আমার জানা নেই, তবে গল্পের প্রয়োজনে ধরে নিলাম এ রকম টিকা পাওয়া যায়)। পশু ডাক্তার হাতে কলমে ম্যানেজার ও খামারের কর্মীদের শিখিয়ে দিলেন কিভাবে গরুদের টিকা দিতে হবে। মালিক খামার থেকে ফিরে আসার সময় ম্যানেজারকে বলে আসলেন ম্যানেজার যেন আগামী ১০ দিনের মধ্যেই সব গরুকেই টিকা দিয়ে দেন এবং কোনদিন কয়টি টিকা দেয়া হল তা যেন প্রতিদিন রাতে মালিককে রিপোর্ট করা হয়।
খামারের মালিক চলে আসার পর ম্যানেজার কর্মীদেরকে টিকা দেয়ার দায়িত্ব বুঝিয়ে দিলেন, সাথে বলে দিলেন কোন কর্মী দিনে কয়টি টিকা দিল তা যেন ম্যানেজারকে জানানো হয়। কর্মীরা যার যার কাজে চলে গেল আর ম্যানেজারও তার কাজ করার জন্য নিজের অফিসের দিকে হাঁটা দিলেন। তার কত্তো কাজ, এখন আবার নতুন করে টিকার রিপোর্টিং ফরম্যাট বানাতে হবে।
কর্মীরা গরুকে টিকা দেয়ার সময় আবিষ্কার করল যে অধিকাংশ গরুই দুষ্ট প্রকৃতির, ১০ টি গরুকে টিকা দিতে গেলে গড়ে ৮ টি গরু সজোরে লাথি মারে। অর্থাৎ গরুকে টিকা দেয়া প্রায় অসম্ভব একটি কাজ, আর মালিক যে সময় বেধে দিয়েছেন তার মধ্যে টিকা দেয়া শেষ করা তো তাদের পক্ষ্যে কল্পনাতীত। এভাবেই হাতে গোনা কয়েকটি গরুকে টিকা দিতে না দিতেই খামার কর্মীরা মজার জিনিস আবিষ্কার করল। খামারের ছাগলের অনেক নিরীহ প্রকৃতির, এদেরকে টিকা দেয়া খুবই সহজ। কদাচিৎ দুই-একটি ছাগল লাথি মারলেও তা মারাত্মক নয়। সবচেয়ে বড় বিষয় হল গরুর তুলনায় ছাগলেকে টিকা দিতে অনেক কম সময় লাগে, এ কাজে কোনো ঝামেলা নাই – অনেক আরামেই টিকা দেয়ার কাজ শেষ করে ফেলা যাবে। এভাবেই খামার কর্মীরা তাদের টিকা প্রদান কার্যক্রম চালাতে লাগল আর দিনশেষে নিয়মিতভাবে ম্যানেজার কে রিপোর্ট করতে লাগল। ম্যানেজার সব কর্মীদের রিপোর্ট কমপাইল করে প্রতিদিন মালিককে রিপোর্ট করতে লাগল। মালিক চমৎকার রিপোর্ট পেয়ে দেখল যে এভাবে চলতে থাকলে তার দেয়া সময়ের আগেই টিকা দেয়া কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। মালিক ব্যাপক খুশি ও পুলকিত হয়ে নিশ্চিন্তে দিন পার করতে লাগল। তবে মাস তিনেক পরে খামারের ম্যানেজার মালিককে ফোন দিয়ে বলল যে খামারের অর্ধেক গরু এন্থাক্সে আক্রান্ত হয়ে ইহলোক ত্যাগ করেছে, বাকিগুলোও পরলোক ভ্রমণে প্রস্তুতি নিচ্ছে। সব টিকা দেয়ার পরেও শেষ পর্যন্ত খামারের গরুর এই দুর্দশা কেন হল আশা করি তা এখন সহজেই বোধগম্য।

এবার সিটি কর্পোরেশনের মশা মারার ঘটনা। চিকুনগুনিয়ার মহামারী নিয়ে পেপার-পত্রিকা সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার ফলে দুই সিটি কর্পোরেশন ঘটা করে মশা মারার অভিযানে নেমেছে এবং তার ছবি ভিডিও প্রকাশ করা হচ্ছে। অনেকে ইদানীং নিজের এলাকাতেও তা স্বচক্ষে তা প্রত্যক্ষ্য করেছেন। কিন্তু এতে প্রকৃতপক্ষ্যে সফলতা কতটুকু আসবে? সমগ্র ঢাকার কথা জানি না, আমি শুধু আমার নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে চাই।
আমি থাকি ঢাকার মোহাম্মদপুরে। আমার এলাকায় এর আগেই মাঝে মাঝে মশা মারার বিষ/ ঔষধ স্প্রে করতে দেখেছি। ইদানীং তার হার (frequency/ rate) বেড়েছে, প্রায় প্রতি সপ্তাহে দুই-তিনদিন। কিন্তু যেভাবে মশা মারার বিষ/ ঔষধ স্প্রে করা হয় তা আমার কাছে সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় এবং ক্ষেত্র বিশেষে অত্যন্ত ক্ষতিকর মনে হয়েছে।
মশা মারতে হলে তো সেখানেই স্প্রে করতে হবে যেখানে মশা থাকে এবং যেখানে সহজেই মশারা বংশ-বৃদ্ধি করে। সমগ্র ঢাকাতে এরকম মশার অভয়াশ্রম অগণিত। ঢাকাতে সাধারণত এ অভয়াশ্রমগুলো হল বিভিন্ন ডোবা, নর্দমা, ড্রেন প্রভৃতি। আরেকটি মশার অভয়াশ্রম হল বাসার পিছনে দুই সারি বাসার মাঝখানে যে ফাঁকা অংশটুকু থাকে যেটি সাধারনত Sewerage Passage নামে পরিচিত, কারণ এই স্থানটি সব সময় ভেজা স্যাঁতস্যাঁতে ও ময়লা আবর্জনায় ভরপুর থাকবে। কিন্তু আমি আমার পাঁচ বছর মোহাম্মদপুরে থাকা অবস্থায় কখনও এসব জায়গাতে মশা মারার বিষ/ ঔষধ স্প্রে করতে দেখলাম না। বরঞ্চ ফগার ম্যানরা স্প্রে করে সাধারণত (আমার নিজের দেখার আলোকে, অন্যান্য জায়গায় পরিস্থিতি ভিন্নও হতে পারে) সোজা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাস্তার উপরে যেখানে মশার বংশ-বৃদ্ধি তো দূরের কথা, মশা খুঁজে বের করাও দুষ্কর। আরো ভয়ংকর হল এই ফগার ম্যানরা বাজারের মধ্যে এমনভাবে স্প্রে করে যেন বাজারের দ্রব্যাদি সমূহ তাদের প্রধান লক্ষ্য। তাদের এই স্প্রে করার ফলে বাজারের সমগ্র খোলা কাচা শাক সবজি এই স্প্রের ধোঁয়ায় আচ্ছাদিত হয়ে যায় (কারো সন্দেহ হলে নিজে মোহাম্মদপুর এর টাউন হল কাচা বাজারের রাস্তার দু পাশে যে কোনো সবজি বিক্রেতাকে জিজ্ঞাসা করে দেখতে পারেন)। অনেকেই হয়তো এই সবজি কিচ্ছুক্ষন পরেই কিনে নিয়ে রাতে খাবেন। সুতরাং মশা মারার বিষ/ ঔষধ দ্বারা স্প্রে করা সব্জি শরীরের জন্য কতটুকু আশীর্বাদ স্বরূপ তা আলোচনা করা নিষ্প্রয়োজন। মশার প্রকৃত অভয়াশ্রমে স্প্রে না করে লোক দেখানো হাজার কোটি টাকা খরচ করে স্প্রে করতে থাকলে তার ফলাফল হবে উপরের খামার মালিকের গল্পের মত।
এভাবে স্প্রে করতে থাকলে ঢাকাতে মশা কমবে না কি মানুষই কমে যাবে তা গবেষণার বিষয়।
হুম, চিকুনগুনিয়া কিংবা ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশা তো সভ্য, তারা থাকে পরিষ্কার পানিতে। এরকম নর্দমা, ডোবা ময়লা পানিতে তো আর এডিস মশা বংশ-বৃদ্ধি করে না। আবার আমাদের সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ যেমন ঘরে ঘরে মশা টানাতে পারে না তেমনি তাদের দ্বারা ঘরে ঘরে জমে থাকা টবের পানিও পরিষ্কার করা সম্ভব নয়, এর জন্য দরকার ব্যাপক গণসচেতনতা।
যদি টার্গেট শুধু এডিস মশাই হয়ে থাকে, তাহলে মশা মারার পিছনে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করার উদ্দেশ্য কি !!!!!!

এবার নিজে নিজে গরু-ছাগলের খামারের গল্পের সাথে মশা মারার অভিযানের সম্পর্ক খূঁজে নিন।
আর উপরের ধাঁধাঁগুলো এখন নিজে থেকেই পর্যালোচনা করুন।


ছবি ১- রাস্তাতে মশা মারার বিষ/ ঔষধ স্প্রে করা হচ্ছে


ছবি ২- রাস্তাতে মশা মারার বিষ/ ঔষধ স্প্রে করা হচ্ছে


ছবি ৩- একটি প্রাইভেট কার মশা মারার বিষ/ ঔষধ স্প্রে দ্বারা ঢেকে যাচ্ছে। চাইলে এই ছবি থেকে ঠিকানাটা দেখে নিতে পারেন।


ছবি ৪- একটি হোটেল/ রেষ্টুরেন্ট এর সামনে স্প্রে করা হচ্ছে। ঢাকাতে এ ধরনের রেষ্টুরেন্ট এ সাধারনত হোটেল এর বাইরে রাস্তার পাশে ফুটপাথের উপর খোলা ভাবে রুটি-পরোটা, চাপ, গ্রিল, কাবাব বিরিয়ানী প্রভৃতি বানানো হয়। এই ছবির হোটেলটিও তার ব্যতিক্রম নয়। ফলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই সমস্ত খাবার মশা মারার বিষ/ ঔষধ এর সংস্পর্শে চলে আসে যেগুলো অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই হোটেল এর কাষ্টমারদের কাছে পরিবেশন করা হয়, সেটাই তো স্বাভাবিক।


ছবি ৫- দুই-তিন সেকেন্ডের মধ্যেই সমস্ত হোটেল এর আশপাশ মশা মারার বিষ/ ঔষধ স্প্রে দ্বারা আচ্ছাদিত হয়ে পড়ে।

পোষ্ট অনেক লম্বা হয়ে গেছে। আর নয়।
ভুল-ত্রুটি মার্জনীয়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.