নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

opolok-polok

অপলক

তত্ত্ব, তথ্য ও অনুভূতি ভাগাভাগি করা আমার অভিপ্রায়। কারও যদি ইচ্ছে হয় তবে যে কেউ আমার এই ব্লগের যে কোন কিছু নিজের সংগ্রহে রাখতে পারে।

অপলক › বিস্তারিত পোস্টঃ

Walton Fusion 125cc রিভিউ এবং আমার কিছু কথা

০৭ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:১০

মটরসাইকেল প্রথম চালাই যখন ক্লাস সেভেন এ। সবুজ কালারের ফিফটি হোন্ডা। আব্বার অফিসের ছিল ওটা। এরপর চালালাম অটোগিয়ারের ৮০সিসি। ব্রান্ডের নাম মনে নেই। এরপর সিডি ৮০। সবগুলোই আব্বার অফিসের। তারপর অনেক গ্যাপ, প্রায় ১০ বছর। পড়াশোনার অজুহাতে বাইরে। তারপর হাতে এসে পড়ল এখন যেটা চালাই Walton Fusion 125cc।

যখন বাইকটা পেলাম, তখন অনেকটাই বিদ্ধস্ত। পুরা বডি ঝাজরা। শুধু ইঞ্জিনটার অব্স্থা ভাল। দেড় বছরের মধ্যে নিউ বাইকের এ অবস্থা করেছে ছোট ভাই। স্টান্ট করা থেকে শুরু করে উড়াধুরা চালানো, ৩-৪ নিয়ে চালানো। কয়েকবার এক্সিডেন্টও করেছে। সেদিকে আর যাচ্ছি না।

আব্বা মোটামুটি ঠিক করে পাঠাল। প্রথম বছর ৫০ এর কম স্পিডের নিচেই চালালাম। ততদিনে মোটামুটি পার্টসগুলোর ব্যাপারে জানি। টুকিটাকি কাজ নিজেই করি। যেমন, স্পার্ক প্লাগ ক্লিন করা, নাট বল্টু টাইট দেয়া। ফিল্টার ক্লিন করা। ব্রেক সু এ্যাডজাস্ট করা এইসব আরকি।

আমার হাতে আসার পর সার্ভিসিং খুব কমই করিয়েছি। গত চার বছরে ফুল সার্ভিসিং ২ বার মাত্র। শুধু ই্ঞ্জিন ওয়েল চেন্জ করি আর হয়তবা ব্রেক সু চেন্জ করি। ৪-৫ মাস পর পর ব্যাটারি চার্জ দেই। এই হল মেকারের কাছে আমার দর্শন দেয়া।


রিভিউ এ ঠিক কি কি আসা উচিত সেটা ভাল আইডিয়া নেই। তবে লিখব আমার মত করে। আশাকরি ভাল লাগবে।

১. মডেল : Walton Fusion 125cc প্রথম মডেল।
২. মাইলেজ: প্রথম দিকে ছিল ৫৫+কিমি/লিটার। পরে কমতে কমতে এখন ৪০-৪২কিমি/লি। তবে আমার হাতে আসার পর থেকে ৪০-৪২ পাচ্ছি। আমি চালাচ্ছি প্রায় ৪ বছর হল।
৩. মেক্সিমাম স্পিড: ১১০ আমার ভাইয়ের হাতে। আমার হাতে ৯৫কিমি./ঘন্টা। তবে দুবারই সাথে প্যাছেন্জার ছিল। স্পিড টেস্ট ভিন্ন ভিন্ন বছরে নেয়া।
৪. এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৪,০০০কিমি রান হয়েছে। হাইওয়েতে কখনও কোন সমস্যায় পরিনি। একবার ভোলাগঞ্জ যাবার সময় মিটারের তার খুলে পড়ে গেছে। টেংরাটিলা যাবার পথে চেন কাভারের আর রেয়ার স্পোর্কেটের নাট খুলে গেছে। এছাড়া তেমন কিছু হয়নি। এই দু রোড কিন্তু আমার দেখা জঘন্যতম রাস্তা।
৫. ব্রেকিং এবং কন্ট্রোলিং: ১০ এ ৫ পয়েন্ট দিব। কারন টায়ার চিকন থাকায় আমার ভাই প্রায়ই স্লিপ করত। আমি হার্ড ব্রেক যখনি করতাম, স্কিড করত। এখন মোটা টায়ার লাগানোয় তেমনটি আর হয় না। হাইড্রেলিক ব্রেক অতটা জোস না। তবে আমার জন্যে যথেস্ট। আমি দুব্রেক এক সাথে ব্যালেন্স করে চাপি। দুচাকার মাঝের দূরত্বটা আর ১-২ ইঞ্চি বেশি হলে ভাল হত। চালিয়ে আরাম হত।
৬. লঙ্গ জার্নি: আমি সিলেট - দিনাজপুর (৭০০+কিমি) জার্নি করেছি একদিনে। আবার ফিরেও এসেছি, তবে অন্য দিনে। আল্লার ইচ্ছায় কোন সমস্যায় পড়িনি। এটাই একটানা সর্বোচ্চ। আর ৩০০-৪০০ কিমি এর জার্নি মাঝে মাঝেই করেছি।
৭. বডি কিট: মরকা টাইপের ভঙ্গুর প্লাস্টিক। নাট বেশি টাইট দিলে ভেঙ্গে যায়, আর নরমাল রাখলে কিছু কিছুদিন পর লুজ হয়ে সাউন্ড করে। মার্কেটে এগুলা সচারাচর পাওয়া যায় না। গেলেও তুলনামূলক ভাবে দামি।
৮. বডি মেটেরিয়ালস: রডগুলো, সাইলেন্সার পাইপ প্রায়ই মরিচা ধরে। কিছু কিছু নাট বল্টু নিম্ন মানের। জঙ্গ ধরে বা প্যাচ কেটে যায়।

এখন পর্যন্ত যা যা পরিবর্তন করেছি:
১. স্পার্গ প্লাগ: ২টি
২. চেইন: ফুল সেট চেন্জ। তিন নাম্বারটা রানিং (কম্পানিরটা অর্জিনালটা ১৭০০০কিমি চলেছিল।)
৩. টায়ার: তিন নাম্বারটা রানিং (কম্পানিরটা গাজি টায়ার ছিল। ১৮,০০০ কিমি চলেছে)
৪. হুইল বিয়ারিং: ১ বার ফ্রন্ট + রেয়ার (কম্পানিরটা অর্জিনাল জাপানি ছিল। আমি একটু অবাক হয়েছিলাম। )
৫. ব্যাটারী: ৩ নং রানিং(এখন গ্রীন লাগিয়েছি)। কম্পানিরটা ২ বছরের মত চলেছে।
৬. সিগনাল লাইট: অর্জিনাল গুলোর মধ্যে ২টা এখনও চলছে। বাকি দুটা চেন্জ করেছি এক্সিডেন্টে ভেঙ্গে গেছে তাই। হেডলাইট বাল্ব ২ বার চেন্জ করেছি। তবে এখন LED light লাইট ব্যবহার করছি। ব্যাক লাইট একবার।
৬. ক্লাসপ্লেট: কম্পানিরটা প্রায় ৩৫,০০০ চলেছে। তারপর পালসারের ক্লাসপ্লেট লাগিয়েছি। তবে আগের মত ভাল না।
৭. সাইলেস্সার : লঙ্গ জার্নির পর খেয়াল করলাম সাউন্ড ঝ্যান ঝ্যান করছে, তখন মেকার জানাল, পাইপের ভেতরের ঝালায় ছুটে গেছে। এটা নাকি সব বাইকেরই হয়। সেটা পুরাটা কেটে ঠিক করতে হয়েছে।
৮. হেন্ডেল : এক্সিডেন্টের কারনে হেন্ডেল বাকা হওয়ায় এখন পালসারের একটা সেকেন্ড হ্যান্ড হেন্ডেল লাগিয়েছি।
৯. লুকিং গ্লাস: অর্জিনালটা অনেকদিন গেছে। এরপর হিরো হোন্ডার গ্লাস প্রায় ৩বার লাগিয়েছি।
১০. মিটার কেবল : কম্পানিরটা ২০,০০০ কিমি মত গেছে। এরপর দুবার পরিবর্তন করেছি। এখনও চলছে।
১১. পা দানির রাবার: শুধু সামনের দুটা একবার চেন্জ করেছি।
১২. ফুয়েল কয়েল: কম্পানিরটা ২০,০০০ কিমি মত গেছে। তারপর আর ঠিক করা হয়ে ওঠেনি।
১৩. CDI : কম্পানিরটা আমার ভাই হাইড্রেলিক হর্ন লাগানোর পর পর নষ্ট হয়েছে। পরেরটা এখনও চলছে।
১৪. ওয়ারিং কেবল: কেবলগুলো উন্নত মানের না। তবুও আমারটায় কম্পানিরটা দিয়ে চলছে এখনও।
১৫. হর্ন: কম্পানির দেয়া হর্ন প্রায় ২ বছর চলেছে। এখন আবার ওয়াল্টন সার্ভিস সেন্টার থেকে কিনেছি। অনেক সাউন্ড। তবে মনে হয়, এই কৃতিত্বের জন্যে Green 7AMp ব্যাটারী কিছুটা দায়ী।
১৬. ফিউজ: আমার ভাইয়ের হাতে দুবার ফিউজ কটেছে। আমার হাতে একবারও নয়।
১৭. ক্লাসের কেবল: তিনবার রিপ্লেস করতে হয়েছে।
১৮. মিটারের আরপিএম কেবল: দুবার চেন্জ করেছি।
১৯. সিট কাভার: দু বার চেন্জ করেছি।
২০. রেয়ার ব্রেক সুইচ: ব্রেক পেডেলের নিচে একটা সুইচ থাকে, সেটা একবার চেন্জ করেছি।
২১. মিটার: অর্জিনাল মিটার দুর্ঘটনায় পুরোপুরি নষ্ট হওয়ায় নতুন করে লাগাতে হয়েছে।
২২. কার্বুরেটর: বাইকের সাথে যেটি ছিল, তাতে সমস্যা থাকায় কম্পানি থেকে রিপ্লেস করে দেয়।

খারাপ লেগেছে:
১. ফুয়েল কয়েল যেটা ট্যাঙ্কির ভেতর থাকে, খুব কম সময়ে নষ্ট হয়েছে।
২. হেন্ডলটা কম্ফরটেবল ছিল না।
৩. ব্যাক সাইড লুকিং ভাল লাগে না।
৪. সিটটা লঙ জার্নির জন্যে সুবিধাজনক না। অনেক হার্ড।
৫. বডি কিট গুলো মরকা ধরনের এবং মার্কেটে সাপলায় কম।
৬. ৫০-৬০কিমি স্পিডে ইঞ্জিন ভাইব্রেট করে। ৬০+ স্পিডে স্মুথ হয়ে যায়।
৭. অভ্যাস না থাকলে ফাস্ট গিয়ারে বাইক যেন ছিটকে ফেলে দেয়। এটা খারাপও লাগে আবার ভালও লাগে। শুনেছি সাধারণত জাপানি বাইকগুলোতে একই অবস্থা। তবে পাহাড়ি রাস্তা যেমন জাফলঙ বা চা বাগানের টিলা রাস্তায় বা নদীর চরে, আমি নিশ্চিন্ত থাকি। মনে হয় ফাস্ট বা সেকেন্ড গিয়ার আছে না!
৮. জ্যামের ভেতর ইঞ্জিন খুব হিট হয়। বাইকে লোড থাকলে, আর ভীড়ের ভেতরে ক্লাস পারফরমেন্স কিছুটা চেন্জ হয়।
৯. যত ভাল ইঞ্জিন ওয়েল ব্যবহার করিনা কেন, ১০০০কিমির পর থেকেই জানান দিতে থাকে।
৯. খারাপ লেগেছে মানুষের নাক সিটকানো কথা বার্তা।
১০. আর শুরুর দিকে ওয়াল্টনের সার্ভিস সেন্টারের সার্ভিস।

যা যা করি এই বাইকে:
১. দুজনে যেতে হবে এমন যে কোন জায়গায় যাওয়া আসা।
২. বাজার হাট। এমনকি চালেও বস্তা, ফলের বড় কার্টুন এসবও আনা নেয় করেছি। আপনারা জানবেন, সিলেটে পকেটে টাকা থাকলেও আপনি আপনার বাড়ি পর্যন্ত গাড়ি ভাড়া নাও পেতে পারেন।
৩. আমার ভাই স্ট্যানট শিখেছে এই বাইকেই।
৪. এক কথায় গরিবের ঘোড়া না থাকলে গাধা দিয়ে যা যা করে, তার সবই করি।


এটা শুধু আমার অভিঞ্জতা থেকে লেখা আমার ব্যবহার করা মেশিনটা নিয়ে। জানিনা এখনকার প্রোডাক্টগুলো কতটা ভাল বা মন্দ। স্পেসিফিকেশান আলাদা করে লিখছি না। নিচের লিঙ্কে পেয়ে যাবেন।
Walton Fusion 125cc স্পেসিফিকেশান:

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.