নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনটা নাকি একদমই কথা শুনতে চায় না,তবে নিজে প্রচুর কথা বলতে চায়।আর সেসব কথাই রক্ত হয়ে বের হত আগে কলম ফুঁড়ে।এখন নাহয় আঙুলের ডগার কুচকাওয়াজে কীবোর্ডে উঠুক মনের ধূলিঝড়,ক্ষতি কী?\n\nলেখালেখিটা তাই এখন একটা ভাইরাসের মতন হয়ে গেছে।সরল মানুষের মতন তাই মনের কথা শুনি

অভ্র তুষার

নিভৃতচারী এক বোহেমিয়ান আবেগী যুবক।

অভ্র তুষার › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি টিপিক্যাল লুতুপুতু গল্প

২৬ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ২:৪৬


তারপর আমাদের বিয়েটা হয়েই গেল।এরেঞ্জড ম্যারেজ,মেয়েটাও খুব একটা সুন্দরী নাহ-সাদামাটা ধরনের।বিশেষত্ব হল লম্বা চুল আর ভরা চোখ।বিয়ে নিয়ে আর মাথাব্যাথা ছিল না আমার তেমন,তবু এই দুটো জিনিস দেখেই আমি কেন জানিনা ‘হ্যা’ বলে দিয়েছিলাম।মনে হয়েছিল,মেয়েটার ভেতর ক্লাসিক্যাল একটা ব্যাপার আছে।এতটাই নির্লিপ্ত ছিলাম আমি এ ব্যাপারে যে বিয়ের আগে মেয়েটার সাথে কথা বলারও প্রয়োজন বোধ করিনি।
মেয়ে আমার মন মতন না আসলে,তাই বিয়ে করতে হয় বলেই বিয়েটা করছিলাম।তত দিনে যথেষ্ট টাকা করেছি আমি,আর্থিক কষ্ট আর নেই বলা চলে।কিন্তু ভাগ্যকে দোষ দিতাম,সুখ বুঝি আর হল না কপালে।কেমন যেন হয়ে গেছি আমি।কত কবিতা লিখেছি এক সময়,তা কি সব এর জন্যে?

আমি যেন ভাবতেই পারিনা।কী দিয়ে কী হয়ে গেল,আমি প্রথম রাতেই অপমান করে বসলাম ওকে।টু শব্দটি পর্যন্ত করেনি মেয়েটা।বিয়ের সময় পাওয়া ওর নরম হাতও যেন আমার মন নরম করতে পারেনি একটুও।তখন বুঝতে পারিনি যে মেয়েটার চোখ জলে ভরা ছিল,আমি আরেক দিকে ফিরে শুয়ে পড়েছিলাম। মাঝরাতে ফোপানির আওয়াজ শুনেছিলাম। খারাপ লাগছিল হঠাৎ।আমি মানুষটা এত খারাপ হয়ে গেলাম কবে থেকে? বের হয়ে আসতে গিয়েও শেষে বের হলাম না আর ঘর দিয়ে।

পরদিন আমার অফ-ডে ছিল।তখনও ঘুমোচ্ছিলাম।ঘুম ভাঙল একটা মিষ্টি গলা শুনে। চোখ মেলতেই দেখি ‘নিমি’।ও ওর নাম ‘নিমি’।নামটার মতন স্মার্ট তাকে আমার মনে হয়নি যদিও।আমি ভেবেছিলাম হয়ত স্বপ্ন দেখছি।কিন্তু স্বপ্ন না বুঝতে পেরে আর ওকে দেখে হঠাৎ রাগ চড়তে যাচ্ছিল যেন মাথায়।কিন্তু আগের রাতের কথা মনে পড়তেই শান্ত হলাম খানিকটা।বলেও বসলাম, “সরি”।শুনে ও বলল, “আপনি কেন সরি বলছেন?যা বলেছেন ওসব তো আমার প্রাপ্য ছিল।”

আমি বিস্মিত এবং বিমূঢ় হয়ে গেলাম ওর কথা শুনে।এই মিষ্টি গলাটা ওরই ছিল এবং কী অভিমানী প্রতিবাদ। আমি রেগে যাচ্ছিলাম প্রায় কিন্তু তখনই ও আচলে মুখ ঢাকায় মনে হল আবারো মেয়েটার চোখে জল এসেছে। কী মারাত্মক ভুল। আমি আজও এমন ভুল করি??
এক সাথে দুটো প্রাণী থাকি,ও বউয়ের মতন সব করে যায়..আমি দেখি..আমরা আপন হতে পারিনি।মাঝে মাঝে মনে হত ইগো ভেঙে বেরিয়ে আসি,কিন্তু পারিনি আসলে।দিন যাচ্ছিল এভাবেই।

কোনো এক বৃষ্টির দিনে আমি ওকে বলেছিলাম, “ তুমি গান কর?” ও বলেছিল,"নাহ"। আমি জানতাম মিথ্যে বলছে। সেটা ধরিয়ে দিতেই বলল... “করতাম,হয়ত করার ইচ্ছেটা আছে এখনো।জানিনা করা হবে কিনা আদৌ। আপনি বুঝলেই হয়ত হত করা।” আমি হেয়ালী বুঝিনি সেদিন। চেয়ার ছেড়ে উঠে গিয়েছিলাম।

আমার পোস্টিং পাল্টেছে,নিমি ততদিনে আমার অভ্যেস হয়ে গেছে। না ভালবাসিনা,তবুও কেমন যেন লাগে। ছেড়ে যেতে হবে। মেয়েটা সব গুছিয়ে দিয়েছে।বার বার করে সব বলে দিয়েছে যা যা আমি রোজ করি। আমি বিরক্ত হচ্ছিলাম।খানিকটা কি মায়াও হচ্ছিল? কে জানে। গেট থেকে বাড়ির দরজা দেখা যায়। আমি একবার যেন ফিরে চাইলাম। দেখি ও আরেক দিকে তাকিয়ে কাঁদছে। আমি অবাক হচ্ছিলাম!! আমার দিকে চোখ পড়তেই ছুটে ঘরে চলে গেল।

আমার বরাবরই মনে থাকেনা অনেক জরুরী কিছু। নতুন জায়গায় এসে যেন ভারি মুশকিলে পড়লাম। নিয়ম উল্টাপাল্টা হতে লাগল,অনিয়ম করলাম লাগাতার। শেষে জ্বরে পড়লাম। এই প্রতিটা দিন আমি নিমি কে মিস করেছি। অবাক হতাম আমি!! প্রেমে পড়ালাম নাকি ওর? কিন্তু না না,ও তো পিউলির মতন একদমই নয়। শালা অভ্যাস সত্যিই বড্ খারাপ জিনিষ।

এক সময় খুব খারাপ লাগছিল।ফোন করলাম নিমি কে...এত গুলো দিনে একবারও করিনি। ও নিজে থেকে কিচ্ছু জিজ্ঞেস করেনি।আমি বলতেই যেন বাঁধ ভেঙে পড়ল। কী কী বলেছিল মনে নেই...শুধু মনে আছে এই কথাটা-"আপনি কি নিজেকেও ভালবাসতে জানেন নাহ? এতটাই অপছন্দ করেন আমায় যে একটা কথাও শুনে চলেননি? এভাবে প্রতিশোধ নিচ্ছেন বুঝি?"

মেয়েটা এত কাটাকাটা কথা কীভাবে বলে? কিন্তু বড্ড অভিমান মাখা! ও কি ভালবাসে আমায়? জানিনা,বাসতে পারে। তবে ওর অভিযোগ সত্যি নয়। তবে আমি রাগ করতে পারিনি...কারণ আমি জানি ওপাশে মেয়েটা হয়ত আবারো কাঁদছে। আমি ঘরেই এনেছিলাম বুঝি ওকে কাঁদাতে। ভারি সুন্দর দুটি চোখ,কাঁদলেও হয়ত ভাল লাগে। কাঁদো নিমি কাঁদো,আমি তো ভালবাসিনা তোমায়। নাকি বাসি? আমি জানিনা...কেমন যেন দুর্বল লাগছে। শরীরের জন্যে কী নাকি মনেই কিছু গন্ডগোল?

আমি বুঝলাম আমার কিছু একটা হয়েছে...আমার সব কিছুর পিণ্ডি চটকে যাচ্ছে। কিছুতে মন দিতে পারছি নাহ। বড় কথা,মিস করছি আমি নিমি কে।শালা প্রেমে পড়লাম নাকি ওর? ওকে উপহার পাঠিয়েছিলাম সেদিন একটা। বুঝিনি এটা সামনের দিনগুলোর বারোটা বাজাবে আমার এভাবে।

বাড়ি ফিরে এসেছি আমি...শরীর, মন কিচ্ছু টেকেনি। আবারো নিজের পুরোনো জায়গায়। ওকে জানাইনি যে আসছি। ভাবলাম সারপ্রাইজ হবে। কী অদ্ভুত! আমি এসবও ভাবি আজকাল!!

কলবেল বাজাতেই কেউ দরজা খুলল নাহ। একটু দেরি হল...দরজা খুলে আমাকে দেখে মেয়েটা যেন খানিকটা টলে উঠল...নিমেষে কারো চোখে জল আসতে আমি এভাবে দেখিনি..কিন্তু ও দেখি হাসছে। আরো অদ্ভুত আমায় জড়িয়ে ধরতে আসছে।জড়িয়ে ধরে হুহু করে কাঁদছে এবার। সব কান্না যেন একবারেই কাঁদছে এখন। স্বাস্থ্যবতী মেয়েটা একদম যেন শুকিয়ে গেছে এত দিনে। ভালবাসার এমনও রি-একসন হয়,জানতাম না তো।

নিমি প্রথম আমায় তুমি করে বলল... আজ প্রথমবার আমার মনে হল 'পিউলি' বলে কেউ নেই,ছিল না-থাকা উচিৎ নয়।বুঝলাম সবই ঐ গিফট এর কেরামতি!! কিন্তু আমিও যে ফিরে আসতে পারছি না আর। সরিয়ে দেব ওকে বুক থেকে? আস্ত একটা ঝাড়ি দিয়ে দেব আগের মতন? কিন্তু আমিও কি আজীবন এমন ভালবাসা চাইনি? সে সাধ্য কি আছে আমার যে এই সরল কিন্তু প্রচণ্ড আবেগকে অস্বীকার করি?

পুরুষের চোখের জল বাঘের দুধের মতই দুষ্প্রাপ্য। তাই যখন ঝরে বুঝতে হবে ব্যাপারটা স্পেশাল তো বটেই।আমারো ঝরল যখন 'মিমি'র মুখ দেখলাম। সে খুশি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। ওর মার মতন বড় বড় চোখ দুটো দিয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছিল আমার রাজকন্যা। জীবনে এমন আবেগী আর কবে হয়েছি মনে পড়েনা। ও! আমি নিমিকে ভালবেসেছিলাম অবশেষে।

যেদিন আমি ফিরেছিলাম, সারাটা দিন মেয়েটা মাতিয়ে রেখেছিল। রাতে করেছিল গান। বলেছিল,"বকুরাম,আছে তো শুধু ইগোই তোমার। কখনো বুঝতে চেয়েছ স্বপ্ন ভাঙলে কেমন লাগে?ইচ্ছে ছিল ভালবাসার মানুষ কে শোনাব এ গান যবে পাব তাকে।" সত্যিই কি আমি বকুরাম? আমি কি স্বপ্ন হারাবার বেদনা পাইনি কখনো? কি জানি,হয়ত সরল মেয়ের সুখের জন্য ওরটাকেই বেশি দুঃখের এওয়ার্ড দিলাম নাহয়।

আমি উজাড় করে ভালবেসেছি এরপর ওকে। লোকে আমায় বউ পাগলা বলতে পারে। বললে বলুক,কিচ্ছু যায় আসেনা। আমার বউকে আমি ছাড়া কি পাশের বাড়ির ছোকরাটা ভাল বাসবে? বাসতে এলে নাক ফাটিয়ে দেব নাহ!? তবে এবার কিন্তু শুরু হয়েছিল নিমির অবাক হবার পালা। ওর চোখে আমি এরপরও বহুবার জল দেখেছি। তবে হলফ করে বলতে পারি,এ জল ছিল খুশির,মায়ার, ভালবাসার। আমার মায়াবতী কে অবাক করে দেয়াতেই যেন সুখ ছিল আমার।

'ইচ্ছেমানুষ' গানটার মতন কান্ডকীর্তি করেছি আমরা বহু।তবে যেটা দেখায়নি ওখানে, সেটাই বলি নাহয়। আমি ওকে ছুঁয়ে ঘুমাতাম সব সময় যেন কখনো স্বপ্নটা ভেঙে না যায়। যখন মিমি ওর পেটে এল,বুকে আগলে রেখেছি আমি সব সময়। দুঃস্বপ্ন দেখত যখন,সেসব রাত আমি জেগেই কাটাতাম;ওকে আদর করে করে,চুলে বিলি কেটে।কেপে কেপে উঠতো,সামলাতাম আমি।সময় চমৎকার প্রতিশোধ নিচ্ছিল যেন,মধুর প্রতিশোধ । অবাক আমিও কিছু কম হতাম নাহ-সময় সত্যিই সবাইকে কেমন বদলে দেয়,তাইনা??

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৩:০১

Palash Talukder বলেছেন: একটি চমৎকার লুতুপুতু গল্প। ভাল লেগেছে।

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:১৪

অভ্র তুষার বলেছেন: ধন্যবাদ :)

২| ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৪

সামিয়া বলেছেন: সুন্দর গল্প। বেশ সুন্দর।।

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:১৬

অভ্র তুষার বলেছেন: ভাবিনি ভাল লাগবে ।লুতুপুতু টাইপ কিনা ;)

৩| ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৪

মেহেদী হাসান তামিম বলেছেন: splendid

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:১৭

অভ্র তুষার বলেছেন: ধন্যবাদ :)

৪| ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৩:৫৬

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: খুব সুন্দর এ গল্পের আদলে আরেকটা গল্প পড়েছি কয়েকদিন আগে ফেসবুকে।

সেটা লিখেছিল জোনাইদ নামের এক ভাই -আগে ভুল উচ্ছ্বাস আইডিনামে ছিলো।

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:১৯

অভ্র তুষার বলেছেন: চেনা নেই ওনাকে,তবে জানেনই তো টাইপটা কমন।মিল যা কিছু,সবই কাকতালীয় ;)

৫| ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:১০

বানেসা পরী বলেছেন: অসুখী জীবন গল্পের চেয়ে লুতুপুতু সুখী জীবনের গল্পই ভাল। একটু মনের বিশ্রাম হয়।

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:২২

অভ্র তুষার বলেছেন: দুর্বোধ্য কিন্তু ভাল মানের গল্পের প্রত্যাশা থেকে মুক্তির জন্য কিংবা নেহাত কল্পবিলাস থেকেই লেখা মূলত গল্পটা।ইনবক্সে গল্প শোনাচ্ছিলাম একজনকে।পরে মজা করেই পাবলিশ করা।সাড়া পাবো,আশা করিনি। :)

৬| ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:৩৬

কালীদাস বলেছেন: লেখাটা ভালই তো, আপনার ডিক্লায়ারেশনের চেয়ে কম লুতুপুতু। মন্দ লাগেনি পড়তে :)

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৫

অভ্র তুষার বলেছেন: অন্যের হাতে গলাটা কাটার চেয়ে,নিজের হাতেই ছুরি চালালাম আর কি ;)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.