নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনের আবোলতাবোল চিন্তাগুলো সাজিয়ে গল্পে পরিনত করতে চাই। কখোনও গল্প হয়। আবার কখোনও হয় না। ভাল লিখতে জানি না।তবুও লিখি। কারন এটা শখ হয়ে গেছে। আরর এই শখ জেকে বসেছে।

পাবনার তাঁরছেড়া বালক

মনের আবোলতাবোল চিন্তাগুলো সাজিয়ে গল্পে পরিনত করতে চাই। কখোনও গল্প হয়। আবার কখোনও হয় না। ভাল লিখতে জানি না।তবুও লিখি। কারন এটা শখ হয়ে গেছে। আরর এই শখ জেকে বসেছে।

পাবনার তাঁরছেড়া বালক › বিস্তারিত পোস্টঃ

কৃতজ্ঞতা

০৪ ঠা মে, ২০১৫ বিকাল ৫:৩২

উপকার নাকি কৃতজ্ঞতা

.
চেয়ারে বসে অফিসের একটি ফাইলে চোখ বুলাচ্ছেন বাপ্পি।পিয়ন এসে বলল
-স্যার। একজন লোক আপনার সাথে দেখা করতে চায়।
-কে?
-নাম মনে হয় করিম উদ্দিন। আর বাড়ি দুর্গাপুরে।
-আরে তারাতারি ভেতরে নিয়ে আসো।
.
পিয়ন লোকটিকে ভেতরে ডেকে নিয়ে আসলো। লোকটি ভেতরে আসার পরে বাপ্পি চেয়ার থেকে উঠে সালাম করলো।
নিজের চেয়ার এগিয়ে দিল বসার জন্য।
.
অফিসের সবাই বাপ্পির কাজ দেখে অবাক হয়ে আছে। কেউ একজন বলছে "কে এই লোক?দেখে তো গ্রামের মনে হচ্ছে। স্যার এই লোককে এত সন্মান করছে কেন?
.
কথাটা বাপ্পির কানে গেল। বাপ্পি সবাইকে ডাক দিল। বলল
-আমি আপনাদের স্যার। আর ইনি আমার স্যার। যার কাছে পড়ালেখা করে আমি আজ বাপ্পি এত উপরে উঠেছি।
.
সবাই চলে যাওয়ার পরে করিম স্যার বলল
-কি বেপার তুমি দাড়িয়ে আছ কেন?
-আপনি না বসলে আমি কিভাবে বসি?
-এখন তোমার ছোট বেলার অভ্যাস আছেই। বসো।
-আপনি এসেছেন।আজ আমার খুব ভাল লাগছে।
-আমার বেশি ভাল লাগছে তোমাকে দেখে। তুমি আজ এত বড় পর্যায়ে পৌঁছাতে পেরেছ।
-সবি আপনার দোয়া।
-এর পরের সাপ্তাহে আমার মেয়ের বিয়ে। তুমি আসবে কিন্তু
-অবশ্যই আসবো।
-আচ্ছা বাবা। আজ তাহলে আসি।
-না।স্যার আজকে আপনাকে আমার বাসায় যেতে হবে।
-অন্যদিন যাবো।গিয়ে বৌমার সাথে দেখা করে আসবো।
-স্যার।আমি এখন ও বিয়ে করি নি।
-ও। আচ্ছা। তুমি যাবে কিন্তু।
-অবশ্যই।
-আচ্ছা থাকো।
.

.
বাপ্পি রাস্তার উপরে বসে আছে। আজ মা বকেছে। কারন বাপ্পি কলম কেনার টাকা চেয়েছে। বাপ্পি বোঝে কেম তার মা বকেছে। কলম কিনে দেওয়ার মত টাকা নেই আর লেখাপড়ার খরচ দিতে পারবে না বলে লেখাপড়া বাদ দিতে বলেছে।
.
করিম স্যার রাস্তা দিয়ে স্কুলের দিকে যাচ্ছিলেন। বাপ্পিকে রাস্তার পাশে বসে থাকতে দেখে করিম স্যার বাপ্পিকে বলল
-কি বেপার বাপ্পি।এখানে বসে আছো? স্কুলে যাবে না?
-আমার মা আমার লেখাপড়ার খরচ দিতে পারবে না।তাই পড়ালেখা হবে না আমার।
-স্কুলে আসো তারপরে দেখছি।
.
স্কুলে যাওয়ার পরে করিম স্যার বলল
-বাপ্পি তোমার পড়ালেখার খরচ আমরা দিবো।তুমি পড়ালেখা বাদ দিও না।
-আচ্ছা স্যার।
-আজ থেকে আমার কাছে পড়তে আসবে।
-কিন্তু আমি আপনার বেতন দিবো কিভাবে?
-তোমাকে আমি ফ্রি পড়াবো।
.
আজ বাপ্পির পরিক্ষার ফলাফল দিবে। বন্ধুদের কাছ থেকে নোট নিয়ে রাতে পড়ার পরে দিনে তাকে দিনমজুরের কাজ করতে হয়েছে। তাই তেমন ভাল ফলাফল করার আশা বাপ্পির নেই।
.
যারা ভালভাবে পড়ালেখা করেছে। নিয়মিত স্কুলে এসেছে তাদের পরিক্ষা খারাপ হয়েছে। আর বাপ্পি সেখানে ঠিকমত স্কুলে যায় নি।
.
বাপ্পি আজকে কাজ করার কারনে ফলাফল আনতে যেতে পারে নি।যেটা হওয়ার হবে।
.
দিনশেষে বাপ্পি ফলাফল জানার জন্য করিম স্যারের বাড়িতে গেল।করিম স্যার বাপ্পিকে দেখে বলল
-আরে বাপ্পি কোথায় ছিলে? তোমার ফলাফল বেড়িয়েছে।
-কি ফলাফল?
-তুমি ফার্স্ট ডিভিশন পেয়েছ।
.
ফলাফল শুনে বাপ্পির চোখ দিয়ে পানি বেড়িয়ে গেছে।বাপ্পি স্যারকে সালাম জানিয়ে বাড়িতে গেল মাকে রেজাল্ট জানাতে।
.
বাড়িতে গিয়ে বাপ্পির মাকে রেজাল্ট জানানো হল না। বাড়িতে গিয়ে দেখলো বাপ্পির মা পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেছে।
.
বাপ্পিকে করিম স্যার এসে শান্তনা দিল। করিম স্যার অনেক সাহায্য করলো বাপ্পিকে।
.
বাপ্পিকে আজ সংবর্ধনা দিবে। কারন বাপ্পি তাদের থানার মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। বাপ্পিকে সবাই সংবর্ধনা জানানোর কারনে বেশি খুশি হল করিম স্যার।
.
বাপ্পি হাই স্কুল শেষ করেছে। এবারে কলেজে ভর্তি হতে হবে। কিন্তু কলেজে ভর্তি হওয়ার মত সামর্থ্য নেই।গ্রামে করিম স্যার তাকে সাহায্য করেছে। কিন্তু কলেজ অনেক দুরে সেখানে কে তাকে সাহায্য করবে?
.
বাপ্পি করিম স্যারকে সব বলার পরে করিম স্যার বলল
-তুমি শহরে গিয়ে কলেজে ভর্তি হও।
-কিন্তু...
-সমস্যা নেই। আমি তোমাকে একটা চিঠি লিখে দিচ্ছি। সেখানে তোমার লজিং ঠিক করে দিচ্ছি।ওখানে লজিং থেকে পড়ালেখা করবে।
.
করিম স্যারের দেওয়া চিঠি নিয়ে বাপ্পি শহরে চলে গেল।এক বাড়িতে লজিং থেকে পড়ালেখা করতে থাকলো.......
.
পড়ালেখা শেষ করে অনেক কষ্টে বাপ্পি একটা চাকরি যোগার করলো। সততার কারনে অল্পদিনে উপরে উঠে গেল।
.
এইসব ভাবতে ভাবতে কখন চোখে পানি চলে এসেছে সেটা বাপ্পি বুঝতে পারে নি।পিয়নের ডাকে বাস্তবে ফিরলো।আর বাসায় চলে গেল।
.

.
বাপ্পির কাছে তার পিয়ন এসে বলল
-স্যার আজকে আমাকে তারাতারি ছুটি দিতে হবে।
-কেন?
-আজকে আট তারিখ। আজ।আমার মেয়ের জন্মদিন।
-আজ কয় তারিখ বললে?আজ তো আমার গ্রামে যাওয়ার কথা।
.
গাড়ি নিয়ে দ্রুত গতিতে ছুটে চলল গ্রামের বাড়িতে। বাপ্পি আজকের দিনের কথাও ভুলে গিয়েছে।
.
করিম স্যারের বাড়িতে গিয়ে দেখলো সেই বাড়ি আগের মতই আছে। অনেকে ছাত্রদের প্রাইভেট পড়িয়ে বাড়ি করেছে। কিন্তু করিম স্যার বিনামুল্যে ছাত্র পড়িয়েছে। তাই টাকাপয়সা আয় করতে পারে নি বেশি।
.
বাপ্পিকে দেখে করিম স্যার অনেক খুশি হল।করিম স্যার বাপ্পিকে বিয়ে পড়ানোর ওখানে নিয়ে গেল।...
.
বিয়ে পড়াবে এমন সময়ে বর পক্ষের একজন করিম স্যারকে বলল
-বিয়ে পরে পড়াবো হোক।আগে দেনা পাওনার হিসেব টা মিটিয়ে নেই।
-বলেছি তো এখন ত্রিশ হাজার টাকা দিচ্ছি।আর বাকিটাকা বিয়ের পরে দেওয়া হবে।
-না।সব টাকা এখন দিতে হবে। তাছাড়া বিয়ে পড়ানো হবে না।
-আগে তো এই ধরনের কথা ছিল না।
-এখন এমন কথা। নাহলে আমরা চলে যাবো।
-আমাকে কয়েকদিন সময় দিন।
-কোন সময় দেওয়া হবে না।
.
বাপ্পি সব শুনলো। পকেট থেকে চেকটা বের করলো। আবার পকেটে চেক রেখে দিলো।
বাপ্পি করিম স্যারকে পাশে ডেকে নিয়ে গেলেন।
.
বাপ্পি স্যারকে বলল
-এই ছেলের সাথে আপনার মেয়ের বিয়ে দিবেন না।
-কি বলছো এইসব!!
-এখন ই টাকা নিয়ে এমন করছে। আর ভবিষ্যতে আপনার মেয়ে যৌতুকের কারনে সুখি হবে না।
-তাহলে এখন আমি কি করবো?
-আমি জানি আমি আপনার মেয়ের উপযুক্ত না।তবুও আপনি যদি অনুমতি দেন তাহলে আমি আপনার মেয়েকে বিয়ে করবো।
-কি বলছো!! এটা তো আমার সৌভাগ্য।
-তাহলে আমি আপনার মেয়েকে বিয়ে করবো।
-বাবা।তুমি আমার অনেক উপকার করলে।
-উপকার না।আমি আমার কৃতজ্ঞতা স্বিকার করলাম মাত্র।আপনি শুধু আমার জন্য দোয়া করবেন........
.
-- Pabnar Tarcera Balok

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.