নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনের আবোলতাবোল চিন্তাগুলো সাজিয়ে গল্পে পরিনত করতে চাই। কখোনও গল্প হয়। আবার কখোনও হয় না। ভাল লিখতে জানি না।তবুও লিখি। কারন এটা শখ হয়ে গেছে। আরর এই শখ জেকে বসেছে।

পাবনার তাঁরছেড়া বালক

মনের আবোলতাবোল চিন্তাগুলো সাজিয়ে গল্পে পরিনত করতে চাই। কখোনও গল্প হয়। আবার কখোনও হয় না। ভাল লিখতে জানি না।তবুও লিখি। কারন এটা শখ হয়ে গেছে। আরর এই শখ জেকে বসেছে।

পাবনার তাঁরছেড়া বালক › বিস্তারিত পোস্টঃ

মায়ের মুল্য

০৭ ই মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪২

একজন মায়ের মুল্য
.
রিফাত হাসপাতালে এসেছিল একজনের সাথে দেখা করতে। একজন মহিলাকে দেখে তার চেনা চেনা লাগলো।কাছে গিয়ে দেখলো নজুর মা।
.
রিফাত কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো
-আরে চাচি।আপনি এখানে কেন?কি হয়েছে?
-ডাক্তাররা ভর্তি নিচ্ছে না।তাই বসে আছি।
-আমার সাথে আসুন।
.
রিফাত সকালে নজুর মাকে হাসপাতালে ভর্তি করে এসেছে। এখন দেখতে যাওয়া উচিত।
ফলমূল কিনে নিয়ে নজুর মাকে দেখতে গেল।
.
নজুর মা এখন অনেকটা সুস্থ। রিফাত নজুর মায়ের কাছে গিয়ে নজুর কথা জিজ্ঞেস করলো। প্রথমে নজুর কথা বলতে না চাইলেও পরে বলল
-নজু আমাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে।
-কেন?
-কি আর বলবো বাবা....
-সব খুলে বলেন তো।
নজুর সবকিছু রিফাতকে বলতে থাকলো।
.
নজরুল তার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান।তাই আদর করে ডাকতো নজু।
.
নজুর বাবা শহরে একটি ছোটখাটো অফিসে চাকরি করে।যেই বেতন পায় সেটা দিয়ে সংসার খারাপ চলে না।
.
একদিন কাজ শেষে বাসায় ফিরছিলো নজুর বাবা। রাস্তায় একটা এক্সিডেন্ট হয়। আর সেই এক্সিডেন্ট এ নজুর বাবা মারা যায়।
.
পরিবারে অভাব দেখা দেয়। আর নজুর পড়ালেখাও বন্ধ হওয়ার পথে। তখন নজু ক্লাস নাইনে পড়ে।নজুর লেখাপড়ার খরচ জোগার করতে নজুর মা হিমশিম খেয়ে যায়।
.
বাধ্য হয়ে চলে যায় গ্রামে গিয়ে নজুর বাবার জমি বিক্রি করে। জমির ভেতরে ছিল শুধু বাড়ি। বাড়ি বিক্রি করার জন্য নজুর মা মন্ডল সাহেবের কাছে গেল।মন্ডল সাহেব বলল
-বাড়ির জায়গা বিক্রি করলে কোথায় থাকবে?
-পড়ালেখা করে আমার নজু আমাকে বাড়ি কিনে দিবে।আর আমার দুঃখ থাকবে না।
.
বাড়ি বিক্রি করে সব টাকা নজুর নামে ব্যাংকে রাখলো।আর কোনরকমে সংসার চলতে থাকলো।
.
সংসারের অভাবের কারনে নজুর মা কাজ খুঁজতে থাকলো।
.
অনেক খোজার পরে এক বাসা বাড়িতে কাজ পেল। কাজ তেমন কঠিন না।তাই কোন সমস্যা হয় না।
.
নজুর মা আজ কাজ করে আসতে দেরি হয়ে গেছে। এসে দেখে নজু বসে আছে।এখন ও খায় নি।নজুর মা জিজ্ঞেস করলো
-কিরে বাবা। এখন ও খাস নি কেন?
-তুমি না খাওয়ালে আমি কোনদিন খাই?
-এতবড় হয়েছিস।তবুও মুখে তুলে খাওয়াতে হয়?
-বড় হয়েছি তো কি হয়েছে। তোমার হাতে খাবার না খেলে আমার ভালই লাগে না।
-যেদিন আমি থাকবো না।সেদিন কি করবি?
-তোমাকে কোথাও যেতে দিব না।সারাজিবন আমার কাছে রাখবো।
-পাগল ছেলে।
.
পরিক্ষা শেষ হওয়ার পরে নজুর পরিক্ষার রেজাল্ট দিল।নজু পরিক্ষায় ভাল ফলাফল করলো।
.
নজু মায়ের কাছে এসে বলল
-মা কলেজ পাশ করলাম এবারে তো ভার্সিটি তে ভর্তি হতে হবে।
-সমস্যা কি? ভর্তি হ।
-কিন্তু টাকা পয়সা...
-বাড়ি বিক্রি করা কিছু টাকা এখন ও তো আছে।ওই টাকা হলে হবে না?
-হবে। কিন্তু ওই টাকাই তো সম্পদ। ওই টাকা শেষ করলে ভবিষ্যতে কি হবে?
-ভবিষ্যতের চিন্তা করছিস কেন?তুই চাকরি পেলে আমার ভবিষ্যত দেখবি।
.
অনেক চেষ্টার পরে নজু ভার্সিটিতে পড়ার সুযোগ পেল। নজুর চেয়ে নজুর মা আজ বেশু খুশি।কারন অন্যের বাসায় কাজ করে হলেও নজুকে পড়ালেখা করিয়েছে।
.
আজ নজু ভার্সিটিতে চলে যাবে।কারন এখানে থেকে ভার্সিটিতে যাওয়া সম্ভব না।
নজু যাওয়ার সময় কাঁদতে কাঁদতে বলল
-মা।আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।
-আমিও তোকে ছাড়া থাকতে পারবো না।তবুও মেনে নিতে হবে।
-আমার জন্য দোয়া করো।
-ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করিস। আর নিজের প্রতি খেয়াল রাখিস।
.
ছেলেকে বিদায় দিয়ে নজুর মায়ের আজ অনেক কষ্ট লাগছে। মনে হচ্ছে কিছু একটা সে হারিয়ে ফেলছে।
.
বাড়ির জিবন ছেড়ে নজু নতুন জগতে প্রবেশ করলো।ভাল ছাত্র হওয়ায় অনেক ছেলে মেয়ের সাথে বন্ধুত্ত হয়ে গেল। বন্ধুবান্ধব নিয়ে আর ভার্সিটির জিবন নিয়ে নজুর ভালই দিন কাটছে। এলজন প্রেমিকাও জুটেছে তার।
.
অনেকদিন পরে নজু আজ বাড়িতে এসেছে। নজুর মা খুশিতে আজ কেদে ফেলেছে। আজ নজুর সব প্রিয় খাবার রান্না করেছে। নজুকে খাওয়াবে বলে নজুর মা টাকা জমিয়েছে।
.
নজু এখন আগের মত বাড়িতে আসে না।নজুর মা বললে বলে "এখন পড়ালেখার চাপ বেশি। তাই বাড়িতে আসতে পারি না।
.
এরপরে কেটে গেছে ৪ বছর......
.
আজ নজুর মা কাজ থেকে একেবারে ছুটি নিবে। কারন তার ছেলে এখন চাকরি পেয়েছে।এখন নজুর মাকে আর কাজ করতে হবে না।চাকরির খবর নজু না দিলেও অন্য কারো মাধ্যমে পেয়েছে।
.
সব হিসেব মিলিয়ে টাকা পয়সা নিয়ে নজুর মা নজুর ঠিকানা অনুযায়ী গেল।
.
বাড়ির সামনে গিয়ে নজুর মার চোখ জুড়িয়ে গেল।নজু এই বাড়িতে থাকে?
বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করে দারোয়ান ঢুকতে দিচ্ছে না।এক পর্যায়ে তর্কাতর্কি শুরু হয়ে গেল।
.
হঠাৎ একটা গাড়ি এসে থামলো।গাড়ির কাচ নামাতে নজুকে দেখা গেল। নজুকে দেখামাত্র নজুর মা বলল
-বাবা নজু দেখ।দারোয়ান আমাকে ঢুকতে দিচ্ছে না।
নজু গাড়ি থেকে নামলো। নজু বলল
-তুমি আমার সাথে আসো।
-কেমন আছিস বাপ?এখন তো আমাদের বাড়িতে যাস না।
-আসলে সময় পাই না।
-এই বাড়িতে তুই থাকিস?
-আমি এই বাড়ির মালিক।
-তুই এই বাড়ির মালিক!!!
-আজ থেকে তুমি আমাদের সাথে থাকবে।
-তোদের সাথে মানে? আর কে কে থাকে তোর সাথে?
-তোমার বউ মা।
-তুই বিয়ে করেছিস আর আমাকে জানালি না।
-জানাতে পারি নি।ভুল হয়ে গেছে।
কথা বলতে বলতে দুইজন বাড়ির ভেতরে চলে এসেছে।নজু তার বউয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল।
.
নজুর বউ নজুর মাকে চা আনতে বলল।কারন তার এক বন্ধু বাড়িতে এসেছে।
.
নজুর মা চা বানিয়ে নিয়ে আসলো। এসে দেখে নজুর বউ আর তার বন্ধু আপত্তিকর অবস্থায় বসে আছে। নজুর মা দেখে বলল
-কি করছো বউ মা?আমার ছেলে যদি জানতে পারে।
-কি বললি? তোর ছেলে জানবে?
নজুর বউ নজুর মায়ের গায়ে হাত তুলল।
.
নজুর মা রাগে আর দুঃখে কিছুই বলল না।শুধু চোখের পানি ফেলল।
.
নজু রাতে ফেরার পরে নজুর বউ বলল
-তুমি তোমার মাকে কালকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসবে।
-কি বলছো এইসব?
-হ্যা। তোমার মায়ের কারনে আমার অনেক অসুবিধা হচ্ছে।
-কিন্তু মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রাখা যাবে না।
-তাহলে কাজের লোক হিসেবে রেখে দাও।
.
নজুর মা ভেবেছিল এখন আর তাকে কাজ করতে হবে না।কিন্তু এখন আরো বেশি কাজ করতে হচ্ছে। তবুও নজুর মায়ের দুঃখ নেই।কারন সে অন্যের বাসায় কাজ করছে না।নিজের ছেলের বাসায় কাজ করছে।
.
দুপুর বেলা সব চাকর বাকর ঘুমাচ্ছে। নজুর মা ভাবলো একটু ছেলের ঘরে গিয়ে ঘুরে আসা যাক।ছেলের ঘর টা নিজের হাতে সাজিয়ে দেওয়া উচিত।
.
ছেলের ঘরের দরজা খোলা।হয়তো বউমা ঘুমাচ্ছে। দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকতেই নজুর মা দেখলো তার বউ মা অন্য একটা ছেলের সাথে শুয়ে আছে।যেভাবে স্বামির সাথে শোয়া যায়।
নজুর মা ছেলেটিকে বলল
-কুত্তার বাচ্চা। তোর লজ্জা করে না।বিবাহিত একজন নারির সাথে এমন করতে। বের হ এখান থেকে।আমার ছেলের বাড়ি থেকে বের হ।
নজুর এই কথা শুনে নজুর মাকে মারা শুরু করলো। আর মারতে মারতে বাইরে নিয়ে আসলো।
.
মারার এক পর্যায়ে নজু আসলো। নজু আসার সাথে নজুর বউ যা বলার বলল। নজুর মা নজুকে বলল
-দেখ নজু।তোর বউ আমাকে কিভাবে মারছে?
-নজু না নজরুল আহমেদ।
-তোকে তো আমি এই নামে ডাকি।
-এখন আর এই নাম না।
-আমি তোর বউকে......
-সব শুনেছি আমি।এমন করতে তোমার লজ্জা করলো না?এখন আমার বাড়ি থেকে বের হ।
-কি বললি!!!
-বের হও।নাহলে মারতে মারতে বের করবে।
.
নজুর মা গায়ে ব্যাথা নিয়ে নজুর বাড়ি থেকে হাসপাতালে চলে আসে....
.
সব কথা শুনে রিফাতের চোখ দিয়ে কখন পানি বের হয়েছে বুঝতে পারে নি।রিফাত সব শুনে বলল
-চাচি।আজ থেকে আপনি আমাদের বাসায় থাকবেন।
-না বাবা।আমি এখন আগের মত কাজ করতে পারি না। তাহলে তোমাদের বাসায় কাজ করবো কিভাবে?
-আপনাকে কোন কাজ করতে হবে না।
.
রিফাত নজুর মাকে বাড়িতে নিয়ে গেল। কারন রিফাত একজন মায়ের মুল্য বোঝে। ছোটবেলায় রিফাতের মা মারা যাওয়ার পরে নজুর রিফাতকে বড় করেছে।নিজের পেটে না ধরলেও আপন মায়ের চেয়ে কোন অংশ কম করে নি।
.
নজু একজন মায়ের মুল্য না বুঝলেও রিফাত একজন মায়ের মুল্য বোঝে। আর একজন মাকে সন্মান দিতে জানে।
.
-- Pabnar Tarcera Balok

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.