নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনের আবোলতাবোল চিন্তাগুলো সাজিয়ে গল্পে পরিনত করতে চাই। কখোনও গল্প হয়। আবার কখোনও হয় না। ভাল লিখতে জানি না।তবুও লিখি। কারন এটা শখ হয়ে গেছে। আরর এই শখ জেকে বসেছে।

পাবনার তাঁরছেড়া বালক

মনের আবোলতাবোল চিন্তাগুলো সাজিয়ে গল্পে পরিনত করতে চাই। কখোনও গল্প হয়। আবার কখোনও হয় না। ভাল লিখতে জানি না।তবুও লিখি। কারন এটা শখ হয়ে গেছে। আরর এই শখ জেকে বসেছে।

পাবনার তাঁরছেড়া বালক › বিস্তারিত পোস্টঃ

মায়ের ভালবাসা

১১ ই মে, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৮

মায়ের নিঃস্বার্থ ভালবাসা
.
রবিন রুমে ঢুকে দেখলো সাকিব সামনে অনেক খাবার নিয়ে বসে আছে। রবিন সাকিবকে বলল
-কিরে? বাড়িতে গেলি।আর ফিরে এত খাবার সামনে নিয়ে বসেছিস কেন?
-বাড়িতে গিয়েছিলাম বলেই তো এত খাবার। মা পাঠিয়েছে সব খাবার।
-আন্টি তো তোর খুব খেয়াল রাখে।
-এটাই মায়ের ভালবাসা।
.
রবিন আর সাকিব বন্ধু। তারা দুইজন বাসা ভাড়া নিয়ে একসাথে থাকে। দুইজন একসাথে পড়ালেখা করে।
.
রবিন শুয়ে মোবাইল টিপছে আর সাকিব অন্যপাশে বসে উপন্যাস পড়ছে। হঠাৎ মোবাইলটা কেপে উঠলো। রবিন মোবাইল সাকিবের হাতে দিয়ে বলল
-নে ধর।
-আমার হাতে মোবাইল দিচ্ছিস কেন?
-ফোন ধরে কথা বল।
-তোর ফোন তুই কথা বল।
-দেখ কার ফোন।
-আন্টির সাথে কথা বলতে সমস্যা কি?
-তোকে তো বলেছি জ্ঞ্যান দিবি না।তাহলে এখান থেকে চলে যাবো।
-আচ্ছা আর জ্ঞ্যান দিচ্ছি না। ফোনটা দে।
.
সাকিব মোবাইল হাতে নিয়ে কল রিসিভ করলো।কানের কাছে নিয়ে বলল
-আসসালামু আলাইকুম। আন্টি ভাল আছেন?
-ওয়ালাইকুম আচ্ছালাম। ভাল আছি। তুমি আর তোমার বন্ধু কেমন আছে?
-আমি ভালই আছি।আমার বন্ধুও ভাল।
-ও কি আমার সাথে কথা বলবে না?
-বলতে চাচ্ছে না।
-আচ্ছা ওর খেয়াল রেখো। আর টাকা পয়সা লাগলে বলবে আমায়।
-ও তো টিউশানি করে টাকা যোগার করে। আমার থেকে টাকা নেয় না।
-ও।আচ্ছা.....
.
রবিন তার মায়ের সাথে কথা বলে না।মায়ের সাথে রাগ করে বাসা থেকে চলে এসেছে। টিউশানি করে চলে।তবুও মায়ের থেকে টাকা নেয় না।
.
সাকিব আজ রবিনকে নিয়ে হোটেলে গেল খেতে। সাকিব বলল
-কিরে কি খাবি?
-তোর যেটা খুশি।
-আজ তোর পছন্দের খাবার খাওয়াবো।
-কি?
-মাছের মুড়ো।
-তুই জানলি কিভাবে এটা আমার প্রিয়।
-আন্টি বলেছে।
.
খাবার সামনে নিয়ে মুখে দিতেই রবিনের হঠাৎ মায়ের কথা মনে পরে গেল। মাছের মুড়ো খাওয়ায় সময়ে রবিনের মা রবিনকে খাইয়ে দিত। কথাগুলো মনে পরে আবার সেটা ভোলার চেষ্টা করলো।
.
খাওয়া সেড়ে রবিন আর সাকিব রাস্তা দিয়ে হাটছে। হঠাৎ রবিন শুনতে পেল রাস্তার পাশে একজন বলছে।
-সাহেব দুইটা টাকা দেন। আমার মা খুব অসুস্থ।
কথাটা শুনে রবিন ঘুরে তাকালো। রবিন বলল
-কি হয়েছে আপনার মায়ের?
-অনেক বড় অসুখ। চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা লাগবে।
-কিন্তু এই রোদের মধ্যে কষ্ট করছো কেন?
-আমার মা তো আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছে। আর এই কষ্ট তো অতি সামান্য।
-মাকে অনেক ভালবাসেন?
-হ্যা। অনেক ভালবাসি।
.
রবিন চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছিল। সাকিবের ফোন পেয়ে মেসের দিকে রওনা হল।
.
মেসে ফিরে দেখলো সাকিব কাঁদছে। সাকিবের কাদা দেখে রবিন বলল
-কিরে কি হয়েছে?কাঁদছিস কেন?
-বাড়ি থেকে ফোন এসেছিল।
-এতে কাদার কি হল?
-আমার মা আর নেই।
-মানে!!
-আমার মা মারা গেছে।
বলেই সাকিব হাউমাউ করে কেঁদে ফেলল...
.
রবিন আর সাকিব দুইজন সাকিবের বাড়িতে যাচ্ছে। সাকিবের অবস্থা দেখে রবিন তার সাথে এসেছে।
.
রবিন সাকিবের বাড়িতে পৌঁছাতেই সাকিব আরো বেশি কাদা শুরু করলো। পাশে বসে সাকিবের ছোট ভাই কাঁদছে। সাকিব কাঁদছে আর বলছে
-আমি কাকে নিয়ে থাকবো মা? তুমি আমাকে ছেড়ে কেন চলে গেলে?
.
সাকিবের মাকে কবর দেওয়ার পরে সাকিবকে কিছুতেই ধরে রাখা যাচ্ছিল না। মনে হচ্ছে সাকিব পাগল হয়ে যাবে। সাকিবকে ধরে কোনরকমে বাড়িতে নিয়ে আসলো।
.
সাকিবের মা মারা যাওয়ার পরে সাকিব কেমন যেন হয়ে গেছে। সব সময় মনমরা হয়ে থাকে।রবিন সাকিবকে বলল
-এইরকম আর কতদিন থাকবি?
-মায়ের কথা খুব মনে পরছে রে।
-যা হওয়ার হয়েছে। এইএকম থাকলে কিভাবে চলবে?
-তোর তো মা আছে। যেদিন মা থাকবে না সেদিন বুঝবি মা কি জিনিস?
.
কথাটা রবিনের মায়ের কথা মনে পরে গেল। মা থাকতে রবিন মাকে অবহেলা করছে?
.
রবিন সাকিবকে বলল
-আজ খুব মায়ের কথা মনে পরছে।মাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।
-তাহলে যা তোর মায়ের সাথে দেখা করে আয়।
-কিন্তু কোন মুখ নিয়ে মায়ের সামনে যাবো আমি? মা কি আমাকে ক্ষমা করবে?
-সন্তান যতই অপরাধ করুক মা তাকে ক্ষমা করে দেয়।
.
রবিন অতিতের কথাগুলো মনে করছে।.......
রবিন অনেকদিন ধরে মায়ের কাছে একটা বাইক কিনে রেখেছে। বাইক দেখিয়েছে মাকে।কিন্তু কিনে দিচ্ছে না। রবিন মায়ের কাছে গিয়ে বলল
-আমার বাইক কিনে দিবে কবে?
-টাকা হলেই কিনে দিবো।
-এ কথা তো আগে অনেকবার বলেছ।কিন্তু কিনে দাও নি।
-এবারে কিনে দিবো।
-তুমি আমাকে একটুও ভালবাসো না।
-একটা বাইকের কারনে এই কথা বলছিস?
-হ্যা।
-রেগে যাচ্ছিস কেন?
-রেগে যাবো না তো কি করবো?
-আস্তে কথা বল।
-কিসের আস্তে কথা বলবো? যে বাড়িতে আমার কোন মুল্য নেই।সেই বাড়িতে আমি থাকবো না।
-থাকবি না মানে?
-এ বাড়ি থেকে চলে যাবো।
-আচ্ছা যা। দেখ গিয়ে টাকা কত কষ্ট করে রোজগার করতে হয়।
-আমি নিজের টাকা দিয়ে বাইক কিনবো।
.
রবিন সেদিন রেগে বাড়ি থেকে রেগে বেড়িয়ে আসে। তারপরে আর মায়ের সাথে যোগাযোগ করে না।মা যোগাযোগের চেষ্টা করলে অবহেলা করে।
.
রবিন আজ অনুশোচনায় ভুগছে। কারন সে তার মায়ের সাথে অনেক অন্যায় করেছে।
.
রবিন মায়ের সাথে দেখা করার জন্য বাড়ির দিকে রওনা দিল।আজ রবিন তার মায়ের কাছে সব ভুলের জন্য ক্ষমা চাইবে।
.
রবিন বাড়িতে এসে দেখলো একটা সুন্দর বাইক।এটা সেই বাইক যেই বাইক কিনে না দেওয়ায় রবিন তার মায়ের উপরে রাগ করে বাড়ি ছেড়েছিল।
.
বাড়ির ভেতরে গিয়ে রবিন মাকে ডাকা শুরু করলো। রবিনের ডাক শুনে তার মা বেড়িয়ে এল। রবিনের মায়ের চেহারা অনেক বদলে গেছে। চোখের নিচে কালি জমে গেছে। হয়তো ঘুমায় নি। রবিন কিছুই বলছে না। শুধু ঠোট কাঁপছে। আর চোখে পানি জমে গেছে। রবিনের মা বলল
-কেমন আছিস বাবা?
-.....
-কাঁদছিস কেন?
-মা।আমি সরি।
-সরি বলছিস কেন? আর কাঁদছিস কেন?
-আমি তোমার সাথে অনেক অন্যায় করেছি। অনেক ভুল করেছি। আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ।
-ক্ষমা চাচ্ছিস কেন?ক্ষমা চাওয়ার কি আছে?
-তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।
-তুই তো কোন অন্যায় করিস নি।আর যতই ভুল করিস না কেন।সন্তানের কোন ভুল মা মনে রাখে না।
-যেই বাইকের জন্য আমি বাড়ি ছেড়েছিলাম। সেইরকম বাইক বাড়ির সামনে দেখলাম। কার বাইক?
-যদি বলি তোর?
-কি বলছো!!
-তুই যাওয়ার দুইদিন পরে বাইকটা কিনিয়ে এনেছি।তোর কথা মনে পরলে আমি বাইকের সামনে গিয়ে কাদি।
-আজ আমার অনেক খুশি লাগছে মা। তবে খুশিটা বাইকের জন্য না। তোমার জন্য।
-কাঁদছিস কেন তুই?তুই কাঁদলে আমিও কেদে ফেলবো।
-আজ আমি তোমার মত মায়ের ভালবাসা পেয়েই অনেক খুশি।
.
মায়ের ভালবাসা অফুরন্ত। যে ভালবাসা ফুরায় না। মায়ের ভালবাসা নিঃস্বার্থ ভালবাসা। যার মধ্যে কোন ভেজাল নেই।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.