নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনের আবোলতাবোল চিন্তাগুলো সাজিয়ে গল্পে পরিনত করতে চাই। কখোনও গল্প হয়। আবার কখোনও হয় না। ভাল লিখতে জানি না।তবুও লিখি। কারন এটা শখ হয়ে গেছে। আরর এই শখ জেকে বসেছে।

পাবনার তাঁরছেড়া বালক

মনের আবোলতাবোল চিন্তাগুলো সাজিয়ে গল্পে পরিনত করতে চাই। কখোনও গল্প হয়। আবার কখোনও হয় না। ভাল লিখতে জানি না।তবুও লিখি। কারন এটা শখ হয়ে গেছে। আরর এই শখ জেকে বসেছে।

পাবনার তাঁরছেড়া বালক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভাগ্যের পরিহাস

২৭ শে মে, ২০১৫ রাত ১১:১৬

ভাগ্যের পরিহাস
.
পেটে ক্ষুধা নিয়ে কায়েস কাজের খোজ করছে। কিন্তু খাবার পাবে কোথায়? এক দোকানে গিয়ে বলল
-আমাকে আপনার দোকানে কাজ দেন।আমি সব কাজ করে দেব। আমাকে শুধু ক্ষেতে দিবেন।
-তোকে কাজ দেব। তুই তো চুরি করে পালাবি।
-আমি কথা দিচ্ছি আমি কোন চুরি করবো না।
-খা..কির পোলা।তোর তো জন্মের ঠিক নাই। তোর কথার কি ঠিক থাকবে? ভাগ এখান থেকে।
.
কায়েস আবারো রাস্তা দিয়ে হেটে চলেছে।... একজনের ডাকে পিছনে তাকালো। পিছন থেকে একজন ডেকে বলল
-এই শোন।
-কন।
-আমার গাড়িটা একটু ঠেলে দে। তোকে টাকা দেব।
-টাকা লাগবে না।আমার পেটে অনেক ক্ষুধা। আমাকে ক্ষেতে দেন।
-আমার গাড়ি রুটি আর পানি আছে বের করে দিচ্ছি। তারাতারি খেয়ে নে।
-আচ্ছা।
.
খাওয়ার পরে অনেক শান্তি লাগছে। ক্ষুধা পেটে রুটিও যেন অমৃতর মত লাগলো। খাওয়ার পরে কায়েস বলল
-কন। কি করতে হবে?
-আমার গাড়িটা একটু ধাক্কা দাও।
-ধাক্কা দিচ্ছি।
-ধাক্কা দাও। আমার স্ত্রির বাচ্চা হবে। আজকে রাতে ডেলিভারি ডেট। হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
.
ধাক্কা দিয়ে কায়েস গাড়িটাকে হাসপাতালের কাছাকাছি দিয়ে আসলো। হাসপাতালের কাছে গিয়ে আর বাচ্চা জন্মানোর কথা শুনে কায়েসের জন্মের কথা মনে পরে গেল।
.
কায়েস এর জন্ম হওয়ার সময়েও তার মা এইরকম হাসপাতালে এসেছিল। তাকে জন্ম দেওয়ার জন্য তার মাও কষ্ট করেছিল।
.
কষ্টের পরে কায়েসের জন্ম হয়েছিল। কায়েসের জন্মের দিন চাদনি রাত ছিল। জোসনার মধ্যে কায়েসের মুখটা আলোতে জলজল করছিল।
.
জোসনার আলোতেই কায়েসকে তার মা একটা রাস্তার পাশে ফেলে চলে আসে। কারন কায়েস ছিল তার মায়ের পাপের ফসল। সন্মান বাঁচাতে কায়েসকে রাস্তার পাশে ফেলে আসে।
.
তারপরে কিভাবে কিভাবে এক বুড়ো চাচার কাছে বড় হয়। কয়েকবছর বয়সে কায়েসের চাচা মরে যায়।
.
তারপরে কায়েস মানুষের লাথি গুতা বড় হয়। আর আজ কায়েস এইখানে দাড়িয়ে আছে।
.
ভাবতে ভাবতে কায়েস কখন অন্ধকার গলিতে ঢুকে পরেছে বুঝতে পারে নি।পেটে এখনও ক্ষুধা আছেই।
.
সামনে গিয়ে দেখলো কয়েকজন তার বয়সী ছেলে বসে খাচ্ছে আর কিছু বলছে মনে হয়। কায়েস আরাল থেকে লুকিয়ে সব দেখছিল।
.
হঠাৎ একজন পিছন থেকে ঘাড় ধরে বলল
-কিরে এখানে লুকিয়ে কি দেখছিস?
-কিছু দেখছিনা।
-সত্যি কথা বল।
-ভেতরে ওরা ভাত খাচ্ছে। আমি তাই দেখছিলাম।
-ভাত খাওয়ার আবার কি দেখে?
-আমার অনেক ক্ষুধা লাগছে। তাই তাকিয়ে দেখছিলাম।
-ভাত খাবি??
-হ। খাবো।
-তাইলে কাম করতে পারবি?
-সব কাম করতে পারবো। আপনে শুধু দেখিয়ে দিবেন।
-চল তাহলে।.......
.
ভাত খেয়ে কায়েসের মনটা ভরে গেল। অনেকদিন পরে কায়েস পেট ভরে ভাত খেল। তাও আবার ভাল খাবার।
.
ভাত খাওয়ার পরে লোকটি বলল
-এখন তো তাহলে কাজে যেতে হবে।
-কি কাজ?
-এইটা নিয়ে গিয়ে গাড়িতে মারতে হবে?
-এটা কি?
-এটা বোমা। আগে কোনদিন দেখিস নি?
-এইরকম জিনিস আগে দেখি নি।
-তাহলে এটা মারার পদ্ধতি বলছি। প্রথমে মুখের এই পিনটা খুলবি। তারপরে পাঁচ সেকেন্ড এর ভেতরে ছুড়ে মারবি।
-কোথায় মারবো?
-তোর সাথে একজনকে পাঠাবো। পারবি তো?
-পারলে কি দেবেন?
-আরো খেতে পারবি। পেট ভরে খেতে পারবি আবার টাকাও পাবি।
-কখন যাবো?
-একটু পরে যাবি।
.
ব্যাগে বোমা দিয়ে ব্যাগটা কায়েসের কাধে দিল। আর লোকটি একটা ছেলেকে দেখিয়ে বলল
-ওর নাম ইবু। ও তোর সাথে যাবে। আর সবকিছু করতে ও তোকে সাহায্য করবে।আর শোন খুব সাবধান কিন্তু।
.
কায়েস আর ইবু দুইজন যাচ্ছে। ইবু সামনে আর কায়েস পিছে পিছে যাচ্ছে। ইবু কায়েসকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
.
কিছুদুর যাওয়ার পরে ইবু আর কায়েস এক জায়গায় থামলো। একটা জায়গার আড়ালে দুইজন বসলো যাতে তাদের দেখা না যায়। ইবু ছেলেটি বলল
-ব্যাগ দে।
-এই নেন।
-ব্যাগ থেকে সবকিছু বের কর।
-বের করে কোথায় রাখবো?
-আমার হাতে দে।
-আপনি মারবেন?
-না। আমি তোকে সবকিছু দেখিয়ে দেব। আমার থেকে সবকিছু শিখবি।পারবি তো?
-পারবো।
-এই নে।কালোটা হাতে নে।
-এখনই মারবো?
-একটু দেরি কর।এই মুখে যে একটা পিন এইটা খুলবি। তারপরে ওই যে গাড়ি দেখা যায় এইখানে মারবি।আর শোন দেরি করবি না কিন্তু। দেরি করলেই বিপদ।আর আমি এখান থেকে পিছনে যাবো। তুই একা একা মারবি। দুইজন থাকলে কেউ দেখে ফেলতে পারে।
.
ইবু চলে যাওয়ার পরে কায়েস বোমাটি হাতে নিল। হাতে নিয়ে পিন খুলে মারতে যাবে কিন্তু হাত কাঁপছে। কিছুতেই মারতে পারছে না। জিবনের প্রথম এইরকম কাজ করতে হাত কাঁপছে।
.
ফাটার ঠিক আগ মুহুর্তে কায়েস ছুড়ে মারলো। কিন্তু নিজেকে রক্ষা করতে পারলো না। বোমাটি কায়েসের কাছাকাছি পরলো। আর বোমার আঘাতে কায়েস ছিটকে গিয়ে পরলো।
.
কিছুক্ষনের মধ্যেই আশেপাশের লোক চলে আসলো। কায়েস মাটিতে শুয়ে কাতরাচ্ছে। বোমার আঘাতে শরির ঝলসে গেছে।
.
মুক্তা বেগম গাড়ি নিয়ে যাচ্ছিল। কয়েকজন লোক গাড়ি থামালো। মুক্তা বেগম বলল
-আরে গাড়ি থামালেন কেন আপনারা?
-পাশে একটি মুমূর্ষু অবস্থায় পরে আছে। ছেলেটাকে আপনার গাড়িতে একটু হাসপাতালে এগিয়ে দিন।
-আচ্ছা নিয়ে আসুন।
.
কয়েকজন মিলে কায়েসকে মুক্তা বেগমের গাড়িতে তুলে দিল।ছেলেটাকে দেখে মুক্তা বেগমের মায়া হচ্ছে। মুক্তা বেগম কায়েসকে নিয়ে হাসপাতালের দিকে নিয়ে যাচ্ছে.......
.
কিছুদুর যাওয়ার পরে কায়েস ছটফট করতে লাগলো.......
একসময় ছটফট থেমে গেল। কায়েসের শরিরটা নিস্তেজ হয়ে গেল। নিস্তেজ হওয়ার আগে একবার মা বলে ডেকে উঠলো। আর মা ডাক শুনে মুক্তা বেগমের বুকের কেমন যেন করে উঠলো।মুক্তা বেগমের আজ চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেল। ছেলেটাকে কেন যেন তার আপন মনে হল।
.
কোন এক জোসনা রাতে মুক্তা বেগম তার নব জন্ম নেওয়া ছেলেকে রাস্তার পাশে ফেলে চলে আসে। কারন সেটা ছিল মুক্তা বেগমের পাপের ফসল।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.