নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনের আবোলতাবোল চিন্তাগুলো সাজিয়ে গল্পে পরিনত করতে চাই। কখোনও গল্প হয়। আবার কখোনও হয় না। ভাল লিখতে জানি না।তবুও লিখি। কারন এটা শখ হয়ে গেছে। আরর এই শখ জেকে বসেছে।

পাবনার তাঁরছেড়া বালক

মনের আবোলতাবোল চিন্তাগুলো সাজিয়ে গল্পে পরিনত করতে চাই। কখোনও গল্প হয়। আবার কখোনও হয় না। ভাল লিখতে জানি না।তবুও লিখি। কারন এটা শখ হয়ে গেছে। আরর এই শখ জেকে বসেছে।

পাবনার তাঁরছেড়া বালক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঈদের খুশি

২১ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:৫১

ঈদের খুশি
.

.
সকাল ১০ টা বাজে। মামুনুর সাহেব সোফায় বসে পেপার পরছেন। দেশের খবর রাখতে পেপারই সবচেয়ে ভাল তার কাছে।
.
প্রথম পাতায় একটি খবর ছেপেছে "চোর সন্দেহে পিটিয়ে সিলেটে রাজন নামের এক বাচ্চার মৃত্যু" খবরটা পড়ে মামুনুর সাহেব গালি দিল তাদের। মানুষ এত খারাপ হয়? কিভাবে মানুষ হয়ে মানুষের উপরে এইরকম অত্যাচার চালায়? এই কথাগুলো মামুনুর সাহেব মনে মনে বলছে।গালি দিয়ে বিস্তারিত পড়তে থাকলো....
.
মামুনুর সাহেবের মেয়ে মিরা এসে বলল
-বাবা। আমার টাকা লাগবে।
-কেন?
-শপিং এ যাব।
-কত টাকা লাগবে?
-পঁচিশ হাজার।
-আচ্ছা নিয়ে যাও।
.
টাকা দিয়ে মামুনুর সাহেব পেপার পাতা বদলাচ্ছে। পাতা উল্টিয়ে দেখলো "কাপড়ের দোকানে উপচে পরা ভির"। কাপড়ের খবর দেখে মামুনুর সাহেবের কাপড় কেনার কথা মনে পরে গেল। যাকাতের জন্য মামুনুর সাহেব কে কাপড় কিনতে হবে।
.
প্রতি বছর মামুনুর সাহেব যাকাত হিসেবে কাপড় দিয়ে থাকেন। এ নিয়ে এলাকায় তার নাম ডাক আছে। তিনি এলাকার মেয়র। আর এই ধরনের কর্মকান্ডে থাকলে মানুষের সন্মান পাওয়া যায়।
.

.
বাছেদ আলি সকাল বেলা রিক্সা নিয়ে বের হতে চেয়েছিল। কিন্তু পারে নি। মেয়েটির কাল থেকে জ্বর। কালকে তেমন খারাপ অবস্থা হয় নি। কিন্তু আজ খারাপ অবস্থা হয়েছিল।
.
সকাল বেলা মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে যাবে। কিন্তু হাতে কোন টাকা নাই। তাই টাকার জন্য মহাজনের কাছে যেতে হয়েছে। অনেক বলার পরে মহাজন টাকা দিয়েছে।রিক্সা চালিয়ে শোধ করে দিতে চেয়েছে। চিন্তায় ঘরের বাইরে বসে আছে।
.
বাছেদ তার স্ত্রি রহিমাকে ডাক দিল। ডাক দিয়ে বলল
-মেয়ের অবস্থা কি এখন?
-এখন একটু ভাল।
-তাহলে আমি রিক্সা নিয়ে বের হই। তুমি মেয়েকে দেখো।
-আমাকেও তো যেতে হবে কাজে।
-তাহলে কি করবে??
-একাই থাকতে পারবে। তুমি যাও।
.
মেয়েকে বাড়িতে রেখেই বাছেদ রিক্সা নিয়ে বের হল। রিক্সা নিয়ে বের না হলে বাছেদ মিয়ার সংসার চলে না।
.
সামনে ঈদ। অনেকেই অনেক টাকা আয় করছে। কিন্তু বাছেদ মিয়া রোজা রেখে বেশি সময় রিক্সা চালাতে পারে না। যেই সময় চালায় সেইসময় ই অনেক।
.
রহিমা মেয়েকে সুস্থ দেখে বাড়ি থেকে বের হল কাজের জন্য। দেরি করলে সাহেবের কাছে অনেক ধরনের অনেক কথা শুনতে হয়। আবার অনেক নির্যাতন ও হয়।
.

.
মামুনুর সাহেব যাকাতের জন্য কাপড় কিনতে যাবে।কোন টাকা নিয়ে যাবে ভাবছে। শেষে সরকারি তহবিলের টাকা নিল। যেই টাকা এলাকার উন্নতির জন্য।
.
এই টাকা দিয়ে কাপড় কিনলে তাতে কি নাম তারই হবে। এইসব কাজ সমাজ উন্নয়নমুলক।তাই এই কাজ করলে জনগনের কাছে জনপ্রিয়তা বেশি পাওয়া যাবে।
.
বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। তাই ছাতা নিয়ে বের হতে হবে। ছাতাটা কোথায়? ছাতার জন্য কাজের লোক রহিমাকে ডাক দিল।
-রহিমা রহিম। এই রহিমা।
রহিমাকে না দেখে আবার ডাকতে থাকলো। না আসতে দেখে বলল
-কোথায় যে থাকে খা.... টা।
খারাপ কথা বলতে গিয়েও বলল না। কারন রোজা রেখেছে।
.
একটু পরে রহিমা এল।রহিমাকে দেখে বলল
-কোথায় থাকিস?
-মেয়েটার অসুখ হয়েছে। তাই আসতে দেরি হয়েছে।
-তোর মেয়ের অসুখ হয়ে মরে গেলে তাতে আমার কি?কাজ করবি ঠিকমত।
.

.
মামুনুর সাহেব কয়েকদিন ধরে কাপড় বিতরন করছে। কালকে ঈদ। আর ঈদের আগে মানুষ কাপড় পেয়ে খুশি হয়েছে।
.
কাপড় গুলো গরিবদের দিচ্ছে বললে ভুল হবে। ভোটারদের দিচ্ছে। যাতে ভোট বারে। মামুনুর সাহেবের কাছে একজন বলল
-অনেক লোককেই তো দিচ্ছেন কাপড়। আপনার বাড়ির কাজের লোককেও দিলে হত।
-আরে চুপ কর। ওকে দিলে কি ভোট বারবে।
.
মামুনুর সাহেব কাপড় দেওয়া শেষ করে গ্যারেজের দিকে যেতে থাকলো। অনেকেই দেশের বাড়িতে চলে যাবে তাই রিক্সা,অটোরিকশা গুলো গ্যারেজে গিয়ে দেখে আসা যাক।
.

.
আজ বাছেদ ভালই আয় করেছে। কালকে ঈদ।তাই মেয়ের জামা কিনতে হবে। জামা কেনার জন্য একটু কষ্ট করতে হয়েছে। তারপরেই টাকা বেশি হয়েছে। তবুও মনে শান্তনা যে মেয়েকে ইদে জামা দিতে পারবে।
.
রিক্সার প্যাডেল আর চলছে না। শক্তি সব ফুরিয়ে গেছে। আজ আর মনেহয় ইফতারের শেষে রিক্সা চালানো হবে না।ষরিরটা অসুস্থ লাগছে। তবুও প্যাডেল মেরে গ্যারেজের দিকে যাচ্ছে।
.
গ্যারেজে কোনরকমে এসে রিক্সা রেখে মহাজনের কাছে গেল। মহাজন বাছেদকে দেখে বলল
-কিরে আজ এত তারাতারি রিক্সা জমা দিচ্ছিস কেন?
-আজ শরির খারাপ লাগছে। আর অনেক টাকাই আয় হয়েছে।
-আচ্ছা যা। আমার ভাড়া পেলেই হল।
.
বাছেদ রিক্সার ভাড়া দিচ্ছিল। মহাজন গ্যারেজের চালককে ডাক দিয়ে বলল।
-সেদিন বললি কে নাকি অগ্রিম টকা নিয়েছে। তার থেকে আর কত পাবি?
-আর পাঁচশো পাওয়া যাবে।
-কে সে?
-আপনার সামনে বাছেদ।
-আচ্ছা টাকা নিয়ে রাখ।
.
মহাজন বাছেদকে বলল
-বাকি পাঁচশো টাকা দিয়ে যা।
-ঈদের পরে দেব।
-ঈদের পরে দিবি মানে!! এখনই দিবি।আজকে টাকা বেশি হয়েছে।
-এই টকা দিয়ে আমার মেয়ের জন্য জামা কিনতে হবে।
-আরে পরে কিনিস।
-কালকে ঈদ।
-কিসের ঈদ? টাকা দে।
.
অনেক বলার পরেও বাছেদের থেকে টাকা নিয়েই নিল।মেয়ের জন্য টাকা রেখেছিল। কিন্তু সে টাকা দিয়ে জামা কেনা হল না।
.
মামুনুর সাহেব পেপারে রাজনের খবর পরে যতই খারাপ লাগার কথা বলুক। প্রতি নিয়ত রাজনের মত কারো উপরে অত্যাচার করে যাচ্ছে। না আছে রাজনের উপরে মমতা না আছে রাজনের মত মানুষদের প্রতি ভালবাসা। পুরোটাই লোক দেখানো।
.
গরিবের রক্ত চুষেই মেয়েকে শপিং এর জন্য পঁচিশ হাজার টাকা দিতে পারছে। তারা রাজনের মত মানুষের উপরেই অত্যাচার চালাচ্ছে।
.

.
বাড়িতে হতাশ হয়ে ফিরতে রহিমা বুঝতে পেরেছে কিছু একটা হয়েছে। তাই সব শুনলো।
.
সব শুনে রহিমা বেগম নিজের জমানো ২৬০ টাকা বাছেদের হাতে দিল মেয়ে জামা কিনতে। কিন্তু এই টাকায় কি জামা হবে?
.
অনেক খোজার পরে ফুটপাতের এক দোকান থেকে একটা জামা কিনে বাড়ি ফিরলো।
.
বাড়িতে এসে মেয়ে যখন ঈদের জামা চাইলো।তখন কমদামী জামাটা দিয়েই মেয়েকে বলল
-মারে।আমি আর এর চেয়ে বেশি দামি জামা দিতে পারলাম না।
-এতেই হবে বাবা। তুমি দিয়েছ। এটাই অনেক বেশি।
.
মেয়ে জামা পেয়ে খুশি হয়ে বস্তির পাশের ঘরে গিয়েছে দেখাতে। রহিমা বাছেদকে বলল
-এবারে ঈদে তোমার জন্য কিছু কিনলে না?
-তোমাকেই তো কিছু দিতে পারলাম না।
-আমাকে না দিলেন।মেয়েকে দিয়েছেন এতেই অনেক।
-তোমার জন্য শাড়ি কিনতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পারলাম না।
-লাগবে না শাড়ি। মেয়েটির অসুখের জন্য অনেক টাকা গেল। তবুও তো ঋন শোধ হয়েছে।
.
এই ঈদেও নতুন কাপড় কেনা হল না। পুরাতন কাপড় দিয়েই কাটবে তাদের ঈদ। তবুও তারা খুশি। কারন এর মধ্যেই তারা সুখ খুজে নিতে পারে।.......
.
-- পাবনার তাঁরছেড়া বালক

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.