নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনের আবোলতাবোল চিন্তাগুলো সাজিয়ে গল্পে পরিনত করতে চাই। কখোনও গল্প হয়। আবার কখোনও হয় না। ভাল লিখতে জানি না।তবুও লিখি। কারন এটা শখ হয়ে গেছে। আরর এই শখ জেকে বসেছে।

পাবনার তাঁরছেড়া বালক

মনের আবোলতাবোল চিন্তাগুলো সাজিয়ে গল্পে পরিনত করতে চাই। কখোনও গল্প হয়। আবার কখোনও হয় না। ভাল লিখতে জানি না।তবুও লিখি। কারন এটা শখ হয়ে গেছে। আরর এই শখ জেকে বসেছে।

পাবনার তাঁরছেড়া বালক › বিস্তারিত পোস্টঃ

আপনজনের মায়ায়

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ ভোর ৬:৪৩

আপনজনের মায়া
.

.
সকাল হয়ে গেছে তাই আশিকের ঘুম ভেঙে গেল। আশিকের মত ছেলেদের ঘুম ভাঙার জন্য এলার্ম বাজতে হয় না বা মোরগের ডাক শুনতে হয় না। পেটে ক্ষুধা থাকলে এমনিতেই ঘুম ভেঙে যায়।
.
ঘুম থেকে উঠে দাত ব্রাশ করতে গিয়ে দেখে টুথপেস্ট শেষ হয়ে গেছে। ব্যাপার নাহ এর মধ্যে পানি দিয়ে আরো দুইবার চালানোর অভ্যাস আছে। একটু কষ্ট করতে হবে তাই।
.
দাত ব্রাশ করেই আশিক জাবেদ চাচার হোটেলের দিকে ছুটলো। কারন এখানে মাত্র বিশ টাকায় দের প্লেট খিচুরি পাওয়া যায়। আর সাথে তরকারি তো ফ্রি আছেই। অনেকে এই খাবার খেতে পারে না। কিন্তু আশিকের মত ছেলেরা খুব ভালভাবেই এই খাবার খায়।
এখানে ব্যাচেলর ছেলেরাই বেশি খায় বলে এটাকে অনেকে আবার ব্যাচেলর খানাও বলে।
.
জাবেদ চাচার দোকানে গিয়ে জাবেদ চাচাকে হাসতে দেখা যায়। জাবেদ চাচার মুখে সবসময় হাসি দেখা যায়। কেউ জাবেদ চাচাকে হাসিমুখ ছাড়া দেখে নি। যদি জাবেদ চাচাকে জিজ্ঞেস করলে
-চাচা এত হাসেন আপনার মনে কি শুধু সুখ? দুঃখ নেই মনে?
জাবেদ চাচা হাসিমুখে জবাব দেয়
-আরে বাপু। না হাসলে তো আমি মইরা যাবো। আর আমার তো কোন দুঃখ নেই। নদির ভাঙনে সবকিছু হারিয়ে এখনও বেচে আছি। এর চেয়ে আর সুখের কি আছে?
.
মানুষ বড়ই আজব এত দুঃখের মাঝেও কত হাসিখুশি থাকতে পারে। আর সেটা জাবেদ চাচাকে দেখে বোঝা যায়। পরিবার হারিয়ে শহরে পরে আছে। তবুও দুঃখ নেই। আশিক এসব ভাবতে ভাবতে জাবেদ চাচার হোটেল থেকে ফিরছে।
.

.
কলেজ থেকে বের হয়ে দিশা তার বান্ধবিকে দেখে বলল
-কিরে কোথায় যাস?
-আমার বয়ফ্রেন্ড এর সাথে দেখা করতে।
-নিয়মিত কি দেখা করতে হয় নাকি? কালকে তো দেখা করলি।
-আরেহ এটা আরেকটা।
-তোর কয়টা বয়ফ্রেন্ড?
-আছে কয়েকটা।
-আচ্ছা যা।
.
দিশা কিছু মানুষের কাজগুলো দেখে অবাক হয়ে যায়। ভালবাসা কে এরা কি ভাবে? আর বয়ফ্রেন্ড কয়টা লাগে তাদের? ভালবাসা কি এতই সস্তা!!
.
এসব ভাবতে ভাবতে দিশা রিক্সা ডেকে রিক্সায় উঠলো। রাস্তায় পানি জমে আছে মাঝে মাঝে। রিক্সা তবুও তার মতই চলছে। মাঝে মাঝে পানি ছিটে যাচ্ছে। তবুও রাস্তায় গাড়ি মোটামুটি আছে। কিছুদিন তো গাড়িই দেখা যেত না। কারন শহরে পানি জমে ছিল নদির মত।
.
বাসার সামনে এসে রিক্সা থেকে নেমে রিক্সাওলাকে একশো টাকার নোট দিল। রিক্সাওলা বলল
-ভাঙতি নাই।
-বলেন কি!! মাত্র একশো টাকা ভাঙতি নেই?আমার কাছেও তো নেই। দাঁড়ান ব্যাবস্থা করি।
.
আশিক বাসায় সামনে এসে দাঁড়িয়ে গেল কারন পিছন থেকে কেউ একজন তাকে ডাকছে। আশিক কাছে গিয়ে বলল
-জি বলেন।
-আপনার কাছে একশো টাক ভাঙতি আছে?
-কেন?
-রিক্সাওলাকে দেব।
-ভাড়া কত হয়েছে?
-ষাট টাকা।
-তাহলে একশো টাকাই দিলে কি হয়? যখন শপিং এ গিয়ে অনেক চল্লিশ টাকা দিয়ে আসেন তখন মায়া লাগে না। আর এখন মায়া লাগছে?
-জানেন আমি কে?
-কে আপনি?
-আমি কমিশনারের বোন।
-তো আপনাকে কি কমিশন দিতে হবে?
.
দিশা কথা না বাড়িয়ে একশো টাকা দিয়ে দিল।
.

.
আশিক আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আকাশে আজ তারাও দেখা যাচ্ছে। আশিক ছোটবেলায় মায়ের কাছে শুনতো প্রিয় মানুষগুলো দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলে আকাশের চাঁদ হয়ে যায়। তাহলে কি আশিকের মাও আজ চাঁদ হয়ে গেছে।
.
আশিক ছাদে যাচ্ছে। কারন জানালা দিয়ে খোলা আকাশ ভালভাবে পরোখ করে দেখা যায় না। ছাদে দাড়িয়ে একটা তারার দিক্র তাকিয়ে বলছে
-মা। তুমি তো আকাশের তারা হয়ে ভালই আছো। কিন্তু আমি ভাল নেই। তুমি যাওয়ার পরে বাবা আমার জন্য একটা নতুন মা নিয়ে এসেছে। সেই মায়ের আগে সৎ শব্দ লাগানো।
কিন্তু তোমার মত ভাল হয় নি। আমার সাথে খারাপ ব্যাবহার করে বলে আমি বাড়ি থেকে চলে এসেছি। মা আমার কথাগুলো তুমি শুনতে পাও না?
.
আশিক কথাগুলো মনে মনে বলছিল কিন্তু চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছে না। কারন আশিকের চোখে এখন আর পানি আসে না। দুঃখ তাকে ছুয়ে গেলেও কান্না পায় না।
.
পিছন থেকে একজন বলল
-আপনি এই সময়ে ছাদে কেন?
-আরে আপনি মিস কমিশনারের বোন।
-আমার নাম কমিশনারের বোন না। আমার নাম দিশা।
-ও।
-তখন আপনি ঠিকই বলেছিলেন। তাই রিক্সাওলাকে একশো টাকাই দিয়েছিলাম।
-সেটাই বলতে এসেছেন?
-নাহ। আমার আজ মন খারাপ তাই ছাদে এসেছি।
-ও মন ভাল করতে?
-হবে হয়তো। আপনার মন খারাপ হয় না?
-হয়ই তো।
-আপনার দুঃখ আছে?
-আমি দুঃখের সাথেই বাস করি। আপনার মন খারাপ কেন?
-জানি না। আপনি ছাদে এলে আপনার মন ভাল হয়?
-হয়। কারন আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে মায়ের সাথে কথা বলি।
-আপনার মা কোথায়?
-আমাকে রেখে পরপারে চলে গেছে।
-ও
.

.
দিশা ছেলেটার মোবাইল নাম্বার নিয়ে এসেছে। ছেলেটার নামও জেনে এসেছে। কারন ছেলেটার সাথে কথা বলে দিশার ভাল লেগেছে। দিশার প্রিয় মানুষগুলোর তালিকা ছোট। কারন কারো সাথে কথা বলে ভাল না লাগলে সে দিশার প্রিয় হয় না।
.
আশিকের নাম্বারে দিশা ফোন করে যাচ্ছে। কিন্তু ফোন ধরছে না। দিশা ভাবলো হয়তো ঘুমিয়ে পরেছে। তাই সকালে যাবে ছেলেটার মেসে। দিশা বাড়ির মালিকের বোন বলে কেউ কিছু বলবে না।
.
দিশা সকাল বেলা আশিকের মেসে গিয়ে হাজির হল। আশিককে গিয়ে বলল
-তোমার ফোন ধরো না কেন?
-আমার ফোন কোথায় থাকে সেটাই তো জানি না।
-কেন তোমার ফোন আসলে ধরো না?
-আমার তো ফোনই আসে না।
-আজ থেকে আমি ফোন করবো। ফোন কাছে রাখবে।
-তুমি ফোন করবে কেন?
-আমার কথা বলতে হবে বলেই তো।
.

.
আশিক আজ বাড়ির পথে পাড়ি দিল। আশিকের ইচ্ছা ছিল আশিক আর বাড়ি যাবে না। কিন্তু আজ মনেহল বাবাকে দেখতে যাওয়া উচিৎ। কারন যতই হোক বাবা তো।
.
আশিক বাড়িতে এসে দেখে বাবা বসে আছে। আশিককে দেখে চোখের ভেতরে পানি টলমল করছে। আশিক কাছে গিয়ে বলল
-কেমন আছো বাবা?
-তুই আমার খবর নিস নি কেন? তুই কি আমার পর?
-বাবা।
-তোর মা নেই তো কি আমি তো আছি।
-আমার ভুল হয়ে গেছে বাবা।
.
অনেকদিন পরে আশিক আজ কাঁদলো। আর বাবাকে জড়িয়ে ধরে আজ অনেক কাঁদলো। যেই কান্না মনে চাপা ছিল।
.
দিশার ফোন পেয়ে ফোন ধরে বলল
-তুমি কোথায়?
-আমার গ্রামের বাড়িতে।
-শহরে আসবে কবে?
-জানি না।
-তারাতারি আসো। তোমাকে কিছু বলতে হবে।
-আচ্ছা আসলে বলতে পারবে।
-তত সময় আমি অপেক্ষা করতে পারবো না। এখনইই বলি। আমি তোমাকে ভালবাসি। তোমার একাকিত্বের সঙ্গি হতে চাই।
-হুম।
-হুম কি?
-হতে পারো।
.
আশিক আর কিছু না বলে ফোন রেখে দিল। আশিক আবার শহরে ফিরে যাবে বলে ভাবছে। কারন আশিকের মনে হচ্ছে মায়ের অত্যাচার আবারও শুরু হবে। এবারে গেলে মাঝে মাঝে তবুও আসবে বাবাকে দেখতে। কারন সে তার আপনজন। আর ওদিকে দিশা তো আছেই। যে তার আপন হয়ে থাকতে চায়।
আপনজনের মায়ায় ছুটে যেতে হয় অনেক সময়ে।
.
-- Jubaer Hasan Rabby (পাবনার তাঁরছেড়া বালক)

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:৫২

আশেকুল আরেফিন বলেছেন: মেয়েরা এত তাড়াতাড়ি কে্উ কে ভালবাসতে পারে কিনা জানিনা। তবে পড়ে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.