নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনের আবোলতাবোল চিন্তাগুলো সাজিয়ে গল্পে পরিনত করতে চাই। কখোনও গল্প হয়। আবার কখোনও হয় না। ভাল লিখতে জানি না।তবুও লিখি। কারন এটা শখ হয়ে গেছে। আরর এই শখ জেকে বসেছে।

পাবনার তাঁরছেড়া বালক

মনের আবোলতাবোল চিন্তাগুলো সাজিয়ে গল্পে পরিনত করতে চাই। কখোনও গল্প হয়। আবার কখোনও হয় না। ভাল লিখতে জানি না।তবুও লিখি। কারন এটা শখ হয়ে গেছে। আরর এই শখ জেকে বসেছে।

পাবনার তাঁরছেড়া বালক › বিস্তারিত পোস্টঃ

মনের তৃপ্তি

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৫৬

নেহাল অনেক্ষন অপেক্ষা করার পরে মায়ের কাছ থেকে পঁচিশ শো টাকা পেয়ে মনটা খুশি হয়ে গেল। কয়েকদিন ধরে বলার পরে ইদের শপিং করার জন্য টাকা পেল।
.
নেহাল টাকা পেয়েই ছুটলো ঈদের শপিং করার জন্য। রিক্সা নিয়ে যাচ্ছে আর ভাবছে কি কি কিনবে? সাথে মনের মধ্যে আনন্দ আআছেই তো।
.
পরশু মায়ের কাছে নেহাল বলেছিল
-মা আমার ঈদের শপিং করার জন্য টাকা দিতে হবে।
-কত টাকা?
-তিন হাজার।
-এত টাকা!!
-মা তুমি দেবে নাকি বলো।
-আচ্ছা পরশু দিন নিস।
আজ পেল পঁচিশ শত টাকা। তবুও সে খুশি।
.
নেহাল রিক্সা থেকে নেমে মার্কেটে ঢুকতে যাবে এমন সময় পিছন থেকে কে যেন জামা টেনে ধরলো। নেহাল পিছনে তাকিয়ে দেখে একটা বাচ্চা তার জামা ধরে টানছে।
.
নেহাল পিছন ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল
-কি ব্যাপার জামা টানছো কেন?
-সাহেব। পাঁচ টাকা দেন।
-পাঁচ টাকা দিয়ে কি করবে?
-মায়ের জন্য কাপড় কিনবো।
-পাঁচ টাকায় কি কাপড় হয়?
-অনেকজন দিলে কাপড় হয়।
-তুমি তোমার মায়ের জন্য কাপড় কিনবে। আর তোমার জন্য কিনবে কে?
-আমার লাগবে না। মায়ের হলেই হবে।
-আচ্ছা এই নাও দশ টাকা।
.
বাচ্চাটিকে টাকা দিয়ে নেহাল চিন্তা করতে থাকলো টাকা না পাওয়ায় মায়ের সাথে কত খারাপ ব্যাবহার করেছে। আর ছেলেটি মায়ের কাপড় কেনার জন্য ভিক্ষা করছে। নেহাল নিজের কাজে নিজেই অনুতপ্ত হচ্ছে।
.
মার্কেটে ঢুকতে গিয়ে নেহালের মনেহল ছেলেটিকে ডাক দেওয়া দরকার। পিছনে ফিরে দেখে ছেলেটি এখনও যায় নি অন্য একজনের কাছে টাকা চাচ্ছে। কেউ টাকা দিচ্ছে আর কেউ গালি দিচ্ছে।
.
নেহাল ছেলেটিকে ডেকে বলল
-এদিকে আসো।
-কি সাহেব?
-তোমার মায়ের কাপড় কেনার জন্য কত টাকা পেয়েছ?
-অল্পকিছু টাকা পেয়েছি।
-তোমাকে আর কারো কাছে ভিক্ষা করতে হবে না। তোমার মায়ের কাপড় আমি কিনে দিচ্ছি।
-আপনি দিবেন!!
-হ্যা। আমার সাথে আসো।
.
দোকানে ঢুকে ছেলেটিকে বলল
-তোমার মায়ের জন্য কোন কাপড় নিবে?
-আপনি যেটা দিবেন।
-এই দুইটা নেই?
-দুইটা কেন সাহেব?
-একটা তোমার মায়ের আর একটা আমার মায়ের।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
.
ছেলেটির মায়ের জন্য কাপড় কিনে দেওয়ার পরে ছেলেটি খুশি হয়ে চলে যাচ্ছিল। নেহাল ডেকে বলল
-তোমার ঈদের জামা কিনেছ?
-আমার লাগবে না।
-লাগবে না মানে!! আসো আমি কিনে দিচ্ছি।
.
ছেলেটির আর ওর মায়ের কাপড় কেনার পরে ছেলেটি খুব খুশি। গরিবরা খুব সামান্য পেয়েই খুশি হতে জানে। ছেলেটিও তেমন মায়ের আর নিজের ঈদের কাপড় পেয়েই খুব খুশি। নেহাল ছেলেটিকে বলল
-আমাত জন্য তোমার মাকে দোয়া করতে বলবে। আর তুমিও তোমার মায়ের অবাধ্য হবে না।
-আচ্ছা।
.
কাপড় কিনে নেহাল দেখলো পকেটে আর মাত্র এক হাজার টাকা আছে। এই টাকা দিয়ে তেমন ভাল কিছু হবে না। তবুও এর মধ্যেই কিছু একটা কিনতে হবে।
.
অনেক খুঁজাখুঁজির পরে ছয় শত টাকা দিয়ে প্যান্ট আর চার শত টাকা দিয়ে যেমন তেমন একটা শার্ট কিনলো। এই কিনে নেহাল বাসায় চলে আসলো।
.
আজ ঈদের দিন। সবাই নতুন কাপড় পরছে। আর নেহালও ঠিক তাই পরেছে। আজ নেহাল মায়ের জন্য কেনা শাড়িটা মাকে দিয়েছে। মায়ের শাড়ি দিতেই মা বলল
-আমি কি আমার শাড়ি কেনার জন্য তোকে টাকা দিয়েছি!!
-কিনতে ইচ্ছা করেছে তাই কিনলাম।
-এক থাপ্পড় দেব। নিজের জন্য না কিনে আমার জন্য কিনেছে। খুব মুরব্বি হয়ে গেছে।
-নিজের জন্য কিনেছি তো। আর আমি তো তোমার বাপ। তাহলে তোমার মুরব্বি।
-আচ্ছা আমার বাপ।
.
বিকেলবেলা সবাই ঘুরতে যাচ্ছে। নেহালও ভাবলো ঘুরতে যাবে। কিন্তু একা একা গেলে কেমন হয়? পাশের বাসার রুমির সাথে গেলে খুব ভাল হয়। আর সাগরের সাথে গেলেও হয়।
.
বাসা থেকে বেড়িয়ে দেখে সাগর যাচ্ছে। নেহাল সাগরকে ডেকে বলল
-কিরে কোথায় যাচ্ছিস?
-ঈদের দিনে একটু ঘুরি।
-চল যাই।
.
সাগর, রুমি আর নেহাল হাটছে। হঠাৎ সাগর নেহালকে বলল
-কিরে আমার প্যান্টটা কেমন লাগছে?
-ভালই লাগছে।
-লাগবেই তো। অনেক দাম দিয়ে কেনা।
-তাহলে তো ভাল হবেই।
-আর তোর প্যান্ট কত দিয়ে কেনা?
-কিনেছি।
-দেখে তো মনে হচ্ছে অল্প দাম দিয়ে কেনা। দেখতেও তেমন ভাল লাগছে না। কত দিয়ে কেনা?
.
নেহাল কিছু না বলেই বাসায় চলে আসলো। নেহাল জানে সাগর নেহালকে ছোট করতেই এই কথাটি বলেছে। নেহাল দামি প্যান্ট কেনার জন্য টাকা নিয়েছিল। কিন্তু কিনতে পারে নি।
.
নেহাল মন খারাপ করে বসে আছে। নেহালের মা এসে বলল
-কিরে? ঈদের দিনে এভাবে মন খারাপ করে বসে আছিস কেন?
-এমনি। ভাল লাগছে না।
-গেলি তো রুমির সামনে হিরো সাজার জন্য। কিন্তু জিরো হয়ে চলে এলি কেন?
.
নেহাল মায়ের কাছে সবকিছু বলল। নেহালের মা শুনে মাথায় হাত দিয়ে বলল
-বাপরে আজ তুই দামি প্যান্ট কিনতে না পারলেও দামি মনের পরিচয় দিয়েছিস। যেটা দামি প্যান্ট কেনার চেয়ে বেশি ভাল। দোয়া করি তুই অনেক বড় হ।
.
তারপরে অনেক সময় অনেক বছর কেটে গিয়েছে। এখন নেহাল ভাল একটা চাকরি করে। এবার ঈদে অনেক টাকা বোনাস পেয়েছে।
.
আজ আর মা নেই। কিন্তু মায়ের কথাগুলো নেহালের মনে আছে। তাই নেহাল চাকরির বেতনের সাথে পাওয়া বোনাস দিয়ে দামি কোন কাপড় কিনে না। আবার অন্য দিকেও খরচ করে না।
.
আজও নেহাল ঈদের সময় এলে অসহায় মানুষদের ঈদের পোশাক কিনে দেওয়ার জন্য খুঁজতে থাকে। কারন নিজে ঈদের পোশাক কেনার চেয়ে এই লোকদের কাপড় কিনে দিয়ে নেহাল মনের ভেতরে বেশি তৃপ্তি পায়। যেটা নেহাল সেই ছোটবেলায় পেয়েছিল।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.