নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিরোনামহীন....

আমার স্বপ্নের কথা বলতে চাই

পথেরদাবী

সাংস্কৃতিক কর্মী শিল্প তৈরি করতে পারেন আবার নাও করতে পারেন..... তবে শিল্পীর শিল্প তৈরি হওয়া চাই-ই-চাই.......সাংস্কৃতিক কর্মীর মূল কাজ শিল্পীর তৈরি শিল্পকর্ম এবং জনগনের মধ্যে মেল বন্ধন অর্থাৎ সহজ ভাষায় বললে, সেতু তৈরি করা..... আর এই সেতু তৈরির কাজ সাংস্কৃতিক কর্মীর করা চাই ই-চাই....এখানে ফাঁকিবাজির সুযোগ নাই.....সুযোগ নাই শিল্পীর মতো ব্যক্তি কেন্দ্রিক চিন্তা করার..... সাংস্কৃতিক কর্মীকে তাই মাঝে মাঝে শিল্পীর চাইতে সংগঠকের ভুমিকায় বেশি অবতীর্ণ হন...... এতে দোষের কিছু দেখি না....সব ঠিকঠাক থাকলে সাংস্কৃতিক কর্মী নামক শব্দের উৎপত্তি ঘটতো না..... সবাই শিল্প চর্চাই করতো.....শিল্প চর্চা করতে এসে কেউ বিপ্লবের কথা বলতো না..... যেহেতু বিপ্লব একটি কঠিন সত্য...... বিপ্লব দীর্ঘজিবী হোক.....\\\\\\\\\\\\\\\\n(১৪ মার্চ ২০১৫, পল্টন ...........)

পথেরদাবী › বিস্তারিত পোস্টঃ

"একজন উদ্বাস্তুর গল্প…."

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১:২০

ব্যবসা বানিজ্য বেশ ভালোই যাচ্ছে রুপমের। রুপম তার ব্যবসা আরো সম্প্রসারণ করবে বলে মনস্থির করেছে মাস দু’য়েক হলো। আমদানি-রপ্তানির ব্যবসা। বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পার করেই এই ব্যবসা শুরু করে রুপম। ব্যবসা শুরু করেছে প্রায় দশ বছর হয়েছে। তবে গত বছর পাঁচেক ব্যবসা ফুলে ফেঁপে বিশাল আকার ধারণ করেছে তার। এর মধ্যে বিয়ে, সন্তান সব হয়েছে রুপমের। হারিয়েছে বাবা মাকে। বলা চলে গত কয়েক বছরে রুপমের জীবনে পতনের চাইতে উত্থান হয়েছে ভালোই। এবার তথ্য প্রযুক্তির ব্যবসা করবে বলেই নতুন করে পুঁজি বিনিয়োগ করার জন্য বাবার গ্রামের যে সত্তুর বিঘা জমি আছে সেটা বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে। এখান থেকে প্রায় দশ কোটি টাকার মতো পাওয়া যাবে। জমিটা সে বিক্রি করবে ফয়সালের কাছে। রুপমদের পাশের বাড়ির গোফরান চাচার ছেলে ফয়সাল আমেরিকা গিয়ে অনেক টাকার মালিক হয়েছে। ফয়সাল রুপমের ছোট বেলার বন্ধু। আর এখন যেহেতু টাকা পয়সার দিক থেকে ফয়সাল আর রুপমও বেশ কাছাকাছি, তাই বন্ধুত্ব এখন আরো গভীর। প্রায় সময়ই সুদূর আমেরিকা থেকে ফোনে আলাপ হয় তাদের। ফয়সালদের যখন খূব আর্থিক অস্বচ্ছলতা চলছিলো তখন রুপমের বাবার কাছে গোফরান চাচা এই সত্তুর বিঘার একটা বিশাল অংশ বিক্রি করেছিলেন। প্রবাসী ফয়সাল আমেরিকা পাড়ি দেবার আগে তার বাবাকে বলেছিলো এই জমি সে একদিন ফেরত আনবে। হয়তো সেকারনেই রুপম থেকে প্রস্তাবটা পেয়ে কোন দরকাষাকষি না করেই এক কথায় রাজি হয়ে যায় সে। তো সে উদ্দেশ্যেই ফয়সালের এক সপ্তাহ আর রুপমের দু’দিনের জন্য গ্রামের বাড়িতে আসা।

রুপমের ছোট বেলা থেকে টুকটাক লেখালেখির অভ্যাস আছে। অনেকগুলো ছোট গল্প আছে তার। মুলতো খুব মনোযোগ দিয়ে লেখালেখি শুরু করে প্রেমিকাকে হারানোর পর থেকে। তবে কখনো সেগুলো ছাপানোর তাড়না কাজ করেনি তার মধ্যে। কেননা সে বরাবরই চেয়েছে একজন সফল ব্যবসায়ী হবে। শুধু ব্যবসায়ী হয়ে বিশাল ধন দৌলতের মালিকই নন, তাকে চিনবে দেশ বিদেশের বহু মানুষ এমন একটি মনোবাসনা ছিলো তার সব সময়। এখন আর তেমন লেখালেখি করে না রুপম। তবে তার প্রথম গল্প লেখার ঘটনাটা জানা থাকলে আমাদের জন্য ভালো। প্রথম গল্পটা লিখেছিলো তার প্রাক্তন প্রেমিকার যেবার দুবাই ফেরত এক বিশাল ভুড়িওয়ালা লোকের সাথে বিয়ে হয়। সুমাইয়্যাদের টাকা পয়সা তেমন ছিলো না। অপর দিকে রুপমরা তখন এলাকার মোটামুটি জমিদার ঘোচের পরিবার। তাই সব মিলিয়ে বাংলা সিনেমার ওমর সানি আর মৌসুমির মতো বড় লোক বাবার সৌখিন ছেলের শ্রেনী বিভেদ ঘুচিয়ে স্কুল মাস্টারের মেয়েকে বিয়ে করার পরম সৌভাগ্য তার আর হলো না। সুমাইয়্যা এখন তিন সন্তানের মা। বেশ মুটিয়ে গেছে শোনা যায়। বাতের ব্যাথা, উচ্চ রক্তচাপ আর স্বামীর পাঠানো ভরি ভরি স্বর্ণ গহনা এই তিন পদের যন্ত্রনা বা সুখ গায়ে নিয়ে সে এখন খুব খারাপ নাই আবার ভালোও নাই। সে যাই হোক আজকের গল্প সুমাইয়্যা আর রুপমের প্রেম কাহিনী নিয়ে নয়। আমরা আমাদের মুল গল্পে ফিরে যাই।

যেহেতু রুপমের লেখালেখির অভ্যাস আছে তাই সে এবার জমি বিক্রির টাকার পাশাপাশি গ্রাম থেকে একটা গল্প নিয়ে ঢাকা ফিরবে বলে ঠিক করেছে। কিন্তু কি নিয়ে গল্প লিখবে তা সে ঠিক করতে পারেনি। বহু বছর পর গ্রামে এসে সব নতুন দেখছে রুপম। সবচেয়ে নতুন যে বিষয়টি সে দেখছে তা হলো, তার যে চাচাত ভাই রাকিব সে এখন বেশ বদলে গেছে। এলাকার এমন কোন বাজে কাজ ছিলো না যেখানে একসময় রাকিবের নাম শোনা যেতো না। গ্রামের সবাই ছিলো তার উপর ভিষণ ক্ষিপ্ত। কিন্তু কি যেনো ভেবে এতোটাই পরিবর্তন যে তাকে আর আগের রাকিব বলা রুপমের জন্য ভুল হবে। গরু মুরগির বিশাল খামার করেছে। পুকুরে মাছ চাষ করছে। সবজি আর ধান চাষতো আছেই। রাকিবের এমন পরিবর্তনে রুপম বেশ খুশি। পিঠ চাপড়ে বলেই উঠে, যাক মানুষ হয়েছিস এতো দিনে। হেসে দেয় রাকিব। হেসে বলে, দাদা সব সময় কি আর এক থাকা যায়? আর অন্ধকার তো অন্ধকারই। রাকিব আদর করে রুপমকে সব সময় দাদা ডাকে। এই দাদা ডাকটা শেখে রাকিব তার বাবার কাছে। কেননা রুপমের বাবাকে রাকিবের বাবাকে দাদা বলে ডাকতেন।

শীতকাল। তাই ধান ক্ষেতে ইরি ধানের চারা রোপনের মৌসুম। ইরির চারা রোপন করে রাকিব গরুকে খাবার দিতে খড় কাটতে বের হয়েছে। যদিও তার খামারে এখন চারজন কাজ করে। কিন্তু রাকিব সব সময় নিজে হাত লাগায়। এসব দেখে রুপমের ছোট বেলার কথা মনে পড়ে। সে রাকিব কে বলে, মনে আছে আমরা যে গরু চরাতে গিয়ে লুকিয়ে সিগারেট খেতাম। একবার চাচা দেখে ফেলেছিলো। সেবার কি মার খেলাম দু’জন। রাকিব হাসে। রুপম হঠাৎ বলে ওঠে, চল আজ মাছ ধরি। যেই কথা সেই কাজ, বিকেলে রাকিব আর রুপম নেমে পড়ে বাড়ির পাশের নালায়। রুপম একদম লুঙ্গিতে গোছা মেরে নেমে গেছে। যেসব নালায় পানি কম সেখানে হাত দিলেই মাছ ধরা যায়। ওদিকে পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে তার মেয়ে অনন্যা। অনন্যা একটা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ক্লাস ফোরে পড়ে। মেয়েও আবদার করে সে নামবে। ওদিকে শহরের অভিজাত পরিবারের মেয়ে শ্যামা অর্থাৎ রুপমের স্ত্রী বাঁধ সাধে মেয়েকে যেনো নোংরা পানিতে না নামায়। কিন্তু রুপম সেদিকে নজর দেয় না। সে চেচিয়ে বলে তুমি না সচিবের মেয়ে? তুমি এসব বুঝতে এসো না। "আমার মেয়েতো আমার মেয়ে" বলেই অট্টো হাসিতে ফেটে পড়ে। এ বিষয় নিয়ে রাতে খাবার আগ পর্যন্ত রুপম আর শ্যামার মধ্যে চরম তর্কযুদ্ধ চলে। পাশের ঘরে শুয়ে থাকা তার চাচা আর চাচি সব শুনতে পায়। আর তারা যে সব শুনেছে তা বোঝা যায় খাবার সময়। চাচা চাচি আর রুপমের লজ্জিত চোখ আড়াল করতে চাওয়াই বলে দিচ্ছিলো সব। তবু প্রায় বছর পাঁচেকপর চাচির হাতে রান্না করা লবন ইলিশ, রুই মাছের মাথা দিয়ে মুরিঘন্ট, বিকেলে নালা থেকে ধরা ছোট মাছের ‘মরিচ খোলা’ যেটি কালাপাতায় বিশেষ ভাবে পুড়িয়ে তৈরি করা সুস্বাদু এক বিশেষ ধরনের তরকারি যেগুলো চোখের সামনে এতোদিনপর দেখে রুপম কিছু মুহুর্তের লজ্জিত ভাবটা ভুলে যায়।

রাতের খাবার শেষে রুপম রাকিবকে বলে আসার পর থেকে কোনো চাচার ঘরেই যাওয়া হয়নি। কাল তো আবার ব্যস্ত থাকবো কাজে। চল একটু ঘুরে আসি ঘরগুলো থেকে। রুপমের কথা মতো তারা রওনা দেয় বাদবাকি চাচাদের ঘরের উদ্দেশ্যে। কিন্তু হঠাৎ রুপমের মনে হয় সেঝ চাচা কি বেঁচে আছেন? আবার সে ভাবে এ আমি কি ভাবছি? রুপমের বাবারা মোট ছয় ভাই ছিলেন। রুপমের হিসেব মতে তার ছোট চাচা ছাড়া আর কেউ বেঁচে নেই। মানে সে নিশ্চিত। আর ভূল করার কোন কারনও সে দেখছে না। কিন্তু আবার একটা কারনও আছে যেটা রুপম উড়িয়ে দিতে পারে না। কারনটা হলো, গত কয়েক বছরে সে একবারের জন্যও গ্রামে আসেনি। কারো কোনো খোঁজ খবরই সে রাখেনি। খবর নিবে নিবে করে কারো খবরই নেয়নি। কখনো কখনো নিতে চেয়েছে কিন্তু কাজের চাপে সে কাউকে আর স্মরণ করতে পারেনি। শুধু হঠাৎ হঠাৎ বাড়ি থেকে রাকিব ফোন করে মৃত্যুর খবরগুলো নিয়ম করে দিতো। আর রুপম জানাতো সে আসতে পারবে না। কিছূ টাকা পয়সা অবশ্য পাঠাতো। এই যা।

তো সেঝ চাচা বেঁচে আছেন কিনা তা ভাবতে ভাবতে প্রথমে বড় চাচার ঘরে প্রবেশ করে রুপম। সেখানে তাকে দেখে বড় চাচি বুকে জড়িয়ে কেঁদে দেন। বলতে থাকেন নানা অভিযোগ, কেনো বাড়ি আসে না। কেনো খোঁজ খবর নেয় না ইত্যাদি। দেখা হয় বড় চাচার বড় ছেলে অর্থাৎ পরিবারের সবচেয়ে বড় ভাইর সাথে। তার খোঁজ খবর নেয়। এভাবে মেঝ চাচার ঘর শেষ করে যখন সেঝ চাচার ঘরে প্রবেশ করে তখন সে দেয়ালে টানানো সেঝ চাচার ছবি দেখে নিশ্চিত হয় সেঝ চাচা মারা গেছেন। কারণ প্রতিটা ঘরেই চাচাদের ছবি টানানো আছে। এছাড়া বড় এবং মেঝ চাচা যে মৃত এটা নিয়ে তার কোন সংশয় না থাকা এবং সেসব ঘরে টানানো ছবি আর সেঝ চাচার ঘরের ছবি তাকে নিশ্চিত করে সেঝ চাচা নেই। তাছাড়া চাচা বেঁচে থাকলে নিশ্চই তাকে এই রাতে ঘরে দেখা যেতো। কিন্তু সেঝ চাচাতো নেই। সেঝ চাচি রুপমের খোঁজ খবর নেয়। রুপমও তাদের খোঁজ নেন। এবং কথা দেন এখন থেকে নিয়মিত আসবে বাড়িতে। কিন্তু সেঝ চাচা নিয়ে কেউ কথা বলে না। রুপম আরো নিশ্চিত হয়।

গত কয়েক বছরে পরিবারের অনেক মানুষের মৃত্যুর খবরের কারনে রুপম এখনো মনে করতে পারছেনা সেঝ চাচার মৃত্যুর সংবাদ সে পেয়েছিলো কিনা? আবার একই সাথে সে ভার মুক্ত হয় ছবিটা দেখে। বারবার ছবিটা দেখে। কিন্তু সে আবার এটাও ভাবে যদি সেঝ চাচা মারা গিয়ে থাকেন তবে তার মৃত্যুর খবর আমাকে দেয়া হয়নি কেনো। সে মনে মনে ভিষণ রাগ করে কেনো তাকে জানানো হলো না। পরোক্ষনে সে ভাবে আমাকে জানিয়েইবা কি হবে আমি তো আসতে পারি না। এমন দ্বিধা দ্বন্দ নিয়ে সে ছোট চাচার ঘরে ফিরে আসে। সারারাত সে ভাবতে থাকে সেঝ চাচা কি বেঁচে আছেন। সে কারো কাছে জানতেও সাহস পাচ্ছে না যে সেঝ চাচা বেঁচে আছেন কিনা। কেননা মৃত হোক অথবা জীবিত, এই প্রশ্নের মাধ্যমে পরিবারের সাথে তার যে বিশাল দুরুত্ব তা সবার সামনে উন্মুক্ত কোনোভাবেই করা যাবে না। তাই সে এক নিরব পীড়নের মধ্যে পড়ে যায়।

রুপম সেই ছবিটার কথা মনে করে। ছবিটা যেনো তার ঢাকার বাসায় ঝুলিয়ে রাখা বাবার ছবির মতো। কেনোনা রুপমের সকল বাবা চাচার চেহারা প্রায় কাছাকাছি। ছবিটার পাশাপাশি সে তার বাবার কথা মনে করে সারা রাত। কালো মতোন মানুষ। ছোট খাটো শরীর, একই চেহারা। এই ছবিটার কারনে হঠাৎ আজ রুপমের মনে হলো বহুদিন কাউকে আব্বা বলে ডাকে না। হঠাৎ একবার মনে করে পাশের ঘর থেকে চাচাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে আব্বা বলে ডাকবে। আবার মনে করে সেই ছবিটা সামনে এনে আব্বা বলে চিৎকার করে কাঁদবে। রুপম নিজেকে আর মানুষ মনে করতে পারছে না। সে ভাবছে ঢাকা শহরে বসবাসের ফলে সে মাছ ধরা ভুলে গেছে, গরুকে ঘাস খাওয়ানো ভুলে গেছে। ভুলে গেছে সুমাইয়্যার কথা। সুমাই্য়্যার কথা মনে পড়তেই তার মনে হয় পাশে শুয়ে থাকে ধানমন্ডির মতো অভিজাত এলাকায় বড় হওয়া সচিবের মেয়ে শ্যামা তার পাশে আজ বড্ড বেমানান। তার পাশে হয়তো আজ সুমাইয়্যার ঘুমাবার কথা ছিলো। একবার মনে করছে দুবাই গিয়ে সুমাইয়্যার ভুড়িওয়ালা স্বামীটাকে খুন করে আসতে পারলে ভালো হতো। আবার ভাবে কি ভাবছে এসব। নিজের ভাবনায় নিজেই বিরক্ত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। রুপম আরো মনে করে তারা চাচাত ভাই যে আজ ভিষণ বদলে গেছে, আগামী বছরের শুরতে যে বিয়ে করতে যাচ্ছে সে হয়তো সুমাইয়্যার মতো গ্রামের কোন মেয়েকে বিয়ে করবে। তারা হয়তো এতো টাকার পেছনে ছুঁটবে না। গরু, মুরগী, মাছের খামার নিয়ে তারা খুশি থাকবে। তারা সকল আত্মীয়র খোঁজ খবর রাখবে। সবচেয়ে সাধারণ আর সুন্দর জীবন যাপন বোধহয় তারাই করবে। নিজেকে বড় বেমানান মনে হয় রুপমের এই গ্রামে। উদ্বাস্তু মনে হয়। যেনো এখানে তার কেউ নেই। যেমনটা সে প্রায়ই অনুভব করে তার শহুরে জীবনে। কিন্তু শহরে এমন চিন্তা হলে সে এই বলে শান্তি পেতো যে গ্রামে তার সব আছে। কিন্তু একি ঘটলো আজ, রুপম নিজেকে একদমই উদ্বাস্তু মনে করছে। কেউ যেনো নেই তার। এবং এই হাহাকারের জন্য সে নিজেকেই দোষী ভাবছে এখন। এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে রুপম।

খুব সকালে ফজরের আযানের পরপর রুপম আর রাকিব রেজিস্ট্রি অফিসে যাবার উদ্দেশ্যে বের হয়। রেজিস্ট্রি অফিস শহরের দিকে। গ্রাম থেকে শহরে যেতে প্রায় ঘন্টা দু’য়েকের পথ। সেখানে গিয়ে নাস্তা সেরে অফিস খোলার সাথে সাথেই কাজটা সেরে নিবে তাই এতো তাড়াহুড়ো। গাড়ি যখন মসজিদের কাছাকাছি তখন দুরে কি যেনো একটা দেখতে পেয়ে রুপম চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছে না। রুপম ভাবছে সে ভুল দেখছে আবার ভাবছে ঠিক। সে দেখছে দুর থেকে তারা বাবা হেঁটে আসছেন। এদিকে রাকিব গাড়িতে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। রুপম রাকিবকে জাগায় না। লোকটা যতো ঘনিয়ে আসছেন রুপম তত স্পষ্ট হচ্ছে এই ভেবে যে যিনি হেটে আসছেন তিনি তার বাবা না তবে বাবার মতোন কেউ একজন। লোকটা তার কাছাকাছি আসতেই ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বলে। গাড়ি থেকে নেমে সে যাকে দেখে তাতে সে যতোটা না খুশি হয় তারচেয়ে বেশি লজ্জিত হয় এবং হাহাকার আরো বাড়ে তার। সে ভাবে যাকে মৃত ভেবে গতরাতে এক প্রকার সিদ্ধান্তে পৌছে গেছে সেই মৃত চাচা আজ জীবিত। এবং চাচা বেঁচে আছেন কিনা এমন প্রশ্ন উত্থাপন না করাতে হয়তো পৃথিবীর কারো সামনেই আর অপমানিত হতে হয়নি তবে নিজেকে সে কি জবাব দেবে সেটাও ভাবছে।

চাচা তাকে দেখে প্রথমে চিনতে পারে না। শীতের দিন তাই চাদর, কানটুপি, হাতমোজা, পা মোজা সব দিয়ে গা ঢাকা মেঝ চাচাকে রুপম যখন পরিচয় দিয়ে পা ছুঁয়ে সালাম করে কপাল উপরে তোলে তখন রুপম বোধ করে তার কপালে কয়েক ফোঁটা পানি এসে পড়েছে। সে প্রথমে ভাবে হয়তো শিশির পড়েছে গাছের পাতা থেকে। পরে দেখে না, এবারও ভুল। কোনো গাছের পাতা থেকে গড়িয়ে পড়া শিশির নয়, তার চাচার চোখের পানি। তিনি বলেন এতো বছর পর কোথা থেকে এলি। আরো জানতে চান, তোর চাচির কাছে রাতে শুনেছি তুই ঘরে গিয়েছিলি আমি তখন এশার নামাজ পড়তে গিয়েছিলাম। তুই কেমন আছিস, নাতনী কতোটুকু হলো, বউ কেমন আছে? রুপম কোনো উত্তর দেয় না। তার ঠোঁট কেঁপে ওঠে। সে সেঝ চাচাকে জড়িয়ে ধরে অঝরে কাঁদতে থাকে আর বারবার আব্বা বলে ডাকতে থাকে। সেঝ চাচা কিছু বোঝে না। তিনি পিঠ মুছে দেন। আর বলেন কাজ শেষ করে তার ঘরে এক বেলা ভাত খেয়ে যেনো তারপর ঢাকা যায়। তবে রুপমকে ছাড়ার আগে তিনি জানতে চান বাড়িতে কেনো এসেছে, রুপম উত্তরে বলে গল্প লিখতে, একজন উদ্বাস্তুর গল্প। সেঝ চাচা রুপমের মুখের দিকে চেয়ে থাকেন। রুপম অবশেষে গল্পটা পেয়ে যায়।

(১১, ১২, ১৩ অক্টোবর ২০১৫, আমানউল্লাহপুর, নোয়াখালি/ পল্টন, ঢাকা)

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:২৫

আরভিন বলেছেন: চাচা তাকে দেখে প্রথমে চিনতে পারে না। শীতের দিন তাই চাদর, কানটুপি, হাতমোজা, পা মোজা সব দিয়ে গা ঢাকা মেঝ চাচাকে রুপম যখন পরিচয় দিয়ে পা ছুঁয়ে সালাম করে কপাল উপরে তোলে তখন রুপম বোধ করে তার কপালে কয়েক ফোঁটা পানি এসে পড়েছে। সে প্রথমে ভাবে হয়তো শিশির পড়েছে গাছের পাতা থেকে। পরে দেখে না, এবারও ভুল। কোনো গাছের পাতা থেকে গড়িয়ে পড়া শিশির নয়, তার চাচার চোখের পানি

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.