নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিরোনামহীন....

আমার স্বপ্নের কথা বলতে চাই

পথেরদাবী

সাংস্কৃতিক কর্মী শিল্প তৈরি করতে পারেন আবার নাও করতে পারেন..... তবে শিল্পীর শিল্প তৈরি হওয়া চাই-ই-চাই.......সাংস্কৃতিক কর্মীর মূল কাজ শিল্পীর তৈরি শিল্পকর্ম এবং জনগনের মধ্যে মেল বন্ধন অর্থাৎ সহজ ভাষায় বললে, সেতু তৈরি করা..... আর এই সেতু তৈরির কাজ সাংস্কৃতিক কর্মীর করা চাই ই-চাই....এখানে ফাঁকিবাজির সুযোগ নাই.....সুযোগ নাই শিল্পীর মতো ব্যক্তি কেন্দ্রিক চিন্তা করার..... সাংস্কৃতিক কর্মীকে তাই মাঝে মাঝে শিল্পীর চাইতে সংগঠকের ভুমিকায় বেশি অবতীর্ণ হন...... এতে দোষের কিছু দেখি না....সব ঠিকঠাক থাকলে সাংস্কৃতিক কর্মী নামক শব্দের উৎপত্তি ঘটতো না..... সবাই শিল্প চর্চাই করতো.....শিল্প চর্চা করতে এসে কেউ বিপ্লবের কথা বলতো না..... যেহেতু বিপ্লব একটি কঠিন সত্য...... বিপ্লব দীর্ঘজিবী হোক.....\\\\\\\\\\\\\\\\n(১৪ মার্চ ২০১৫, পল্টন ...........)

পথেরদাবী › বিস্তারিত পোস্টঃ

”বুড়িগঙ্গায় অ-গল্প…”

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৩১

রিকসা তখন নবাবপুর রোডে। রাস্তার দুই পাশে কতোশত দোকান আছে জানি না, তবে ব্যস্ত এ সড়কের সবগুলো দোকন তখনো বন্ধ। কিন্তু রাস্তার ধার ধরে দাঁড়িয়ে থাকা ল্যাম্পপোস্ট আর বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলোকে আমার খেজুর গাছ মনে হচ্ছিলো সেসময়। মনে হচ্ছিলো এই বুঝি কেউ খেজুরের রসের হাড়ি হাতে তুলে দিয়ে বলবে, ‘যা তোর নানীর কাছে দি আয়, শিন্নী রাঁইনতো ক’।

রিকসা তখনো চলছে। দেখলাম কোর্ট কাচারির শতবর্ষী জেলা পরিষদ ভবনটা ভেঙে এখন সুবিশাল টাওয়ার হচ্ছে। এবার কল্পনা আরো প্রসারিত করি। টাওয়ারটাকে বট গাছ ভাবতে থাকি। পাশ দিয়ে ঘোড়া গাড়ি চলে যায়। ওগুলো আসলে ঘোড়া না খচ্চর বোঝা যায় না তবে গাড়িতে চড়া মানুষগুলোকে নবাব সিরাজুদৌলার বংশধর মনে হচ্ছিলো। সকাল তখন ছয়টা বিশ মিনিট। ধীরে ধীরে মানুষ বাড়ছিলো চারপাশে।

রিকসা থামে সদর ঘাটের যেকোন একটি পন্টুনের মাথায়। একটা টিকেট কেটে ঘাটের ভেতরে ঢুকতেই হাজারো মানুষের কন্ঠের যে তীব্রতা তাতে আমার শরীরের ওম লাগে। আমি আরো ভেতরে ঢুকতে থাকি। মানুষের মাঝে মিশে যাই। আমাকে যাত্রী ভেবে হাত ধরে টানাটানি শুরু হয়। কিন্তু আমি হ্যা না কিছুই না বলে হাঁটতে থাকি। গন্তব্য যেহেতু জানি না তাই এমন কারো কোনো কথার উত্তর দেয়ার প্রয়োজন বোধ করি না। তবে লঞ্চওয়ালাদের এই টানাটানি বেশ উপভোগ করে একটু ভিড় এড়িয়ে ভাসমান দোকন থেকে সিগারেট ধরিয়ে নদীটা দেখতে থাকি।

আমার আসলে নদী পাড়ে যাবার কোন কথাই ছিলো না। এই নদী দেখার পেছনে একটাই কারণ আর সেটা হলো, গ্রাম থেকে আসা বন্ধুদের মধ্যে কাজ করা ‘দেমাগ’। তাদের যেনো দেমাগে মাটিতে পা পড়ে না। তাদের নদীর দেমাগ, গাছের দেমাগ, মাঠের দেমাগ, পুকুর, মাছ, খাল, গরু, ছাগল, ধানক্ষেত আরো আরো কতো কিছুর দেমাগ। কিন্তু আমার এসব কিছুই নেই।

বন্ধুদের এই দেমাগের কথা মনে হলো ফজরের আযানের সময় ঘুম ভাঙার পর। কেননা ঘুমটা ভাঙার পর আমার ইচ্ছে হচ্ছিলো একটু নদীপাড়ে যাই। পাড়ে বসে সকালের শীতটা গায়ে মাখি, চা খাই, সিগারেট খাই সুরমার পাড়ের সৈকতের মতো, কীর্তনখোলার সিদ্দিকের মতো, ব্রহ্মপুত্রের রণির মতো, শীতলক্ষার সাজ্জাদের মতো। মানে আয়েশ করতে মন চাইলো অনেকদিন পর। কিন্তু নদী কই? নদীতো নাই এখানে। মাঠ নাই, গাছ নাই, নৌকা নাই কিছুইতো নাই। নিজের ভেতরে হীনমন্যতা ভীষণভাবে চেপে ধরতে থাকে সেসময়।

ভাবতে ভাবতে হঠাৎ, শোয়া অবস্থাতেই মনে পড়লো আমার নদীটার কথা। আমার নদীটা বেশি দূরে না। বাড়ি থেকে পঞ্চাশ ষাট টাকা রিকসা ভাড়া। নিজ নিজ নদীতে সাঁতার কেটে আসা বন্ধুদের প্রত্যেকের বাড়ী থেকে নদীগুলো যতোদূর আমার নদীটাও অনেকটা ততদূরেই। এদিক থেকে একটা বিষয় মিল পেয়ে হীনমন্যতা কিছুটা কমে। আর যখনই নদীটা পুরোপুরি চোখের সামনে ভাসছিলো তখন আর শুয়ে থাকতে পারলাম না। বেরিয়ে গেলাম নদী দেখবো বলে। ভাবতে থাকলাম আমিও দেমাগ করার মতো অন্তত একটা নদী পেলাম। হোক সে যতোই কালো।

নদী দেখতে একটারপর একটা পন্টুন পেছনে রেখে যখন এগিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন মনে হলো কতোশত বছর পেছনে রেখে এসেছি জানা নাই। কিন্তু এগিয়ে যে যাচ্ছি এর তো শেষ প্রান্ত আছে। এই এগুনোর ফলে যদি পড়ে যাই। ডুবে যাই। ভেসে যাই? এসব ভাবতে ভাবতে সবগুলো পন্টুন পেছনে ফেলে একদম শেষ প্রান্তে যখন চলে আসলাম তখন দেখি অনেক মানুষের জটলা। জটলা ভেদ করে দেখি একটা লাশকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে সবাই। কেউ চিনছে না, কিন্তু চিনতে চাইছে। সবার মুখে একটাই কথা, ‘পোলাডারে না করসিলাম আর আগাইয়েন না, পইড়া যাইবেন’।

লাশটার আরো কাছে গিয়ে ছেলেটাকে চেনার চেষ্টা করি। ওদেরই মতো চিনতে চেষ্টা করি। সবশেষে যা দেখলাম তার বর্ণনা দেবার মতো তেমন কিছু নেই। শুধু ছেলেটা দেখতে অবিকল আমার মতো। অথবা কাছাকাছি। অথবা কোন মিলই নাই। কিন্তু মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমাদের দু’জনের গল্প যে একই ছিলো এতোটুকু নিশ্চিত হওয়া গেছে। কেননা, ছেলেটার পকেটে একটা চিরকুট পাওয়া যায়, তাতে লেখা-

কালো? তা সে যতোই কালো হোক
দেখেছি তার কালো হরিণ চোখ....

(৩০ জানুয়ারি ২০১৬, সদরঘাট)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৫৪

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: চমৎকার গল্প।
আকস্মিক পটপরিবর্তন।
শেষটায় সত্যি চমকে গেছি

২| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:৪৮

সুমন কর বলেছেন: শেষটা অনুমান করা যাচ্ছিল। কিন্তু বর্ণনা আর আবেগ দারুণভাবে ফুঁটিয়ে তুলেছেন।

ভালো লাগা রইলো। প্লাস।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.