নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ঘোরাঘুরি আনলিমিটেড

ঘুড়তে থাকা চিল

আমি ঘুরতে খুব ভালোবাসি,মোটামোটি প্রকৃতির কোলে গিয়ে ঘুমানোর স্বপ্নটাকে জীবনের মুল প্রতিপাদ্য করে নিয়েছি ৷

ঘুড়তে থাকা চিল › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিসর্গের দ্বীপঃ সোনাদিয়া

১০ ই এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১:৩২



এই ব্লগে ঘুরতে থাকা চিলেদের সোনাদিয়া দ্বীপে যাওয়া,আসা ও প্রতিটা দিনের বিস্তারিত লেখা হলো ৷
০৪ তারিখ রাতঃ মেইল ট্রেনে যাত্রা শুরু আমাদের ৭ জনের ৷ ভুল হয়ে গেছে একটা আমাদের ! চট্টগ্রাম এ মাইজভান্ডার নামক কোনো এক উৎসবের কারনে ট্রেনে উপচে পড়া ভিড় ৷ মহিলারা ও জানালা দিয়ে বগি তে প্রবেশ করেছে এদিন ৷ হাজারো মানুষের ভিড়ে রাত টা কাটিয়ে দিলাম আমরা ৷
০৫ তারিখঃ সকাল ৭ঃ১৫ তে আমরা পৌছাই চট্টগ্রাম স্টেশন এ ৷ সেখানে সকালের নাস্তা করে আমরা বাসে করে রওনা হই চকরিয়ার উদ্দেশ্যে ৷ সকাল ১১ টায় আমরা পৌছাই চকরিয়া ৷ সেখান থেকে অটোতে করে চলে যাই ১৯ কিমি দূরে বদরখালি বাজারে ৷ যেখানটায় আমাদের গন্তব্য সেখানে কিছুই পাওয়া যায়না বিধায় আমরা ৪ বেলার বাজার সদাই করে নিলাম ৷ পথ এখনো বহুদূর!!
একটি মাত্র খাল আলাদা করেছে বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ে দ্বীপ মহেশখালি কে বদরখালি থেকে ৷ একটা লেগুনায় চড়ে বসলাম ৷ এবারের গন্তব্য ৩৭ কিমি দূরের ঘটিভাঙ্গা ঘাট,যেখান থেকে আমাদের সোনাদিয়ায় যাওয়ার ট্রলারে উঠতে হবে ৷ ৩ঃ৩০ টা নাগাদ আমরা পৌছাই ঘটিভাঙ্গা ৷ ঘাটে শেষ ট্রলার, চড়ে বসলাম ৷ কিন্তু মহাবিপদ,অতিরিক্ত মানুষ তাই ট্রলার ডুবার সঙ্কা বেশী!! নামতে হলো আমাদের ৷প্রায় ১ ঘন্টা অপেক্ষা করে আমাদের ভাগ্যে জুটলো বৈঠায় টানা একটি ডিঙ্গি নৌকা ৷ কি আর করার! ডিঙ্গি তে ভয়ে ভয়ে উঠে পড়লাম ৷ নদী পেরিয়ে খাল,খাল যেতে যেতু অনেক সরু! অপরুপ পানির রঙ,দু পাশে ম্যানগ্রোভ বন, পানির মধ্যে মহিষের পাল ৷ এদিকে সূর্য ও লাল হতে শুরু করেছে ৷ বিকেল ৫ঃ৩০ নাগাদ আমরা পৌছাই সোনাদিয়ার গ্রাম থেকে কিছুটা দূরের খাল শেষে ৷ সেখান থেকে আরও ৩০ মিনিট হেটে আমরা পৌছাই গন্তব্য সোনাদিয়া গ্রামে ৷
আমাদের জন্য পূর্বে থেকেই অপেক্ষা করছিলো আনসার ভাই ৷ আমরা উনার বাড়িতেই উঠলাম ৷ আতিথেয়তা ভালোই ছিলো ৷ বিন্দুমাত্র অপেক্ষা না করে ছুটে গেলাম সমুদ্রের পাড়ে সবায় ৷ অসাধারন একটা ঝাউবন আর বালুর ভ্যালি পেড়িয়ে পৌছালাম সমুদ্রের পাড়ে ৷ আবহাওয়া টা আজ প্রতিকূলে ৷ আনসার ভাই এর বাড়িতে খিচুড়ি রান্না হলো ৷ ক্ষুধার্ত অসহায় আমরা,জলদি ভরপেট অমৃত খেয়ে নিলাম!! শুরু হলো বৃষ্টি,আজ আর ক্যাম্পিং করা যাবেনা ৷ আনসার ভাই আমাদের কে ব্যাবস্থা করে দিলো একটি ঘরে,হলরুমের মতো বড় ৷ সেখানে আমরা তাবুতে রাত টা কাটালাম ৷ সেখান থেকেই শুরু ভুতুড়ে কার্যকলাপের ৷ ফজরের আযান এর একটু আগে দরজায় জোরে জোরে তিন-চারটা জোরে জোরে থাবার আওয়াজ শুনতে পেলাম ৷ তৎক্ষনাৎ আমি আর জুবায়ের দরজা খুলে কিছুই দেখতে পাইনি!! :-/ যাক দ্বিতীয় দিনের শুরু ৷
০৬ তারিখঃ সকাল হলো আর অপেক্ষা কিসের ! সবায় মিলে দৌড় দিলাম সমুদ্রের দিকে ৷ ৪ ঘন্টার আগে উঠবোনা উদ্দেশ্য ছিলো ৷ যেমন কথা তেমন কাজ!! সকাল ৭ টায় নেমে পানি থেকে উঠেছি ১২ টায়! তার মধ্যেই জীবনের প্রথম কাবাডি খেলা!! ফুটবল খোজার জন্যে যখন সেই বালুর ভ্যালি তে আমি আর জুবায়ের তখন এক মহিলার কিছু কথা শুনতে পেয়েছি যার কোনো কিছুই আমরা বুঝিনি,মহিলা কেও আশেপাশে দেখতে পাইনি ৷ :-/
দুপুরে আনসার ভাইয়ের বাড়িতে সবায় গোসল করে ফ্রেশ হলাম ৷ খাবারে আজ ডাল,ডিম,আলু ভর্তা আর কাকড়া ভাজি ৷ কাকড়া তো আগেও খেয়েছি,তবে ভাতের সাথে এটাই প্রথম ৷ তবে মাছের স্বাধ সেই কুয়াকাটার লেবুচরেই রয়ে গেছে আমার ৷
খেয়ে দেয়ে তাবু সেই বালুর ভ্যালি তেই সেট করি,ঝাউবনে হ্যামক ঝুলিয়ে বিকেল পর্যন্ত আরাম করে নেই আমরা ৷ বিকেল হলো,আমরা হাটতে শুরু করলাম দ্বীপের পশ্চিম দিকে ৷ একপাশে লাল টুকটুকে সূর্য,আরেকদিকে সমুদ্রের নোনা পানির সাদা ফেনা! অদ্ভুত সুন্দর লাগছিলো ৷ প্রায় অনেক্ষন হেটে আবিষ্কার করি সৈকতের মাঝেই একটি গভীর স্বচ্ছ পানির লেক,যার উৎস জোয়ারের সময় সমুদ্র হতে আসা পানি ৷ মাগরিব এর আযান ছুই ছুই ৷ দ্বীপের প্রায় শেষ অংশে এসে মনে হচ্ছিলো দূরেই একটি গ্রাম দেখা যাচ্ছে ৷ কিন্তু না,স্থানীয় একজনের সাথে দেখা হয়ে গেলো ৷ সে বললো সামনে সমুদ্র ছাড়া আর কিছুই নেই! গ্রাম?? তা শুধুই আমাদের চোখের ভ্রম ৷
আমাদের আকরাম ভাই দ্বীপের বালুতেই মাগরিবের নামাজ টা সেড়ে নিলো ৷
সন্ধ্যা হয়েছে,এবার ফেরার পালা ৷ চাঁদনী রাত ,নিজের ছায়া দেখা যাচ্ছে ৷ পুরো দ্বীপের চেহারা একই রকমের ৷ তাই আমরা খুজছিলাম নতুন করা জেটি ঘাট টি,যার পিছনের ঝাউবনেই আমাদের তাবু সেট করা ছিলো ৷ জেটির কাছে পৌছাতে হয়নি,তার আগেই আমরা আমাদের গন্তব্য চিনতে পেরেছিলাম ৷ :-)
তবে যেই ঝাউবনের ভ্যালি দিনের বেলায় অপরুপ,রাতের বেলায় তা ভিদ্ঘুটে! তাবু আনার জন্যে যখন আমরা প্রবেশ করলাম ঝাউবনে তখন সবারই যেনো কেমন ভিদ্ঘুটে লাগছিলো! এইতো আমি লেখার সময় ই তো আমার শরীর ফুলে উঠেছে ৷ এমন একটা পরিবেশ সেখানে ছিলো যে তাবু খুলে নিয়ে আসাটা আমাদের কাছে ভালো ঠেকছিলো না ৷ তাবু ২ জনে হাতে করেই আমরা সবায় সৈকতে চলে আসি ৷ কেমন যেনো একটা হাফ ছেড়ে বাঁচা আরকি! হ্যামক টা যদি ঝুলিয়ে রাখতাম,হয়তোবা সেই হ্যামক একাই দুলতো :-P
রাত ৮ টা,আনসার ভাই আমাদের খাবারের জন্যে ডাকলো ৷ এবারের খাবার অমৃত ৷ ডাল,আলু ভর্তা,ডিম ভাজি, শুকনো মরিচ আর পেয়াজের ভর্তা ৷ পেট পুরে সবায় খেয়েই আবার সৈকতে চলে আসি ৷ ঘুম কী এতো সহজে আসে?? এতো জীবনের শ্রেষ্ঠ একটি রাত!! রাত ১ টা বাজে আমরা সমুদ্রের পানিতে পা দুলিয়ে দুলিয়ে নিঝুমের গানের তালে নেচেছি! হ্যা আমরা ঘুরতে থাকা চিল, আমাদের দ্বারাই সম্ভব ৷ রাত ৩ টে বাজে চাঁদ মামা হারিয়ে গেলো, আমরাও হারিয়ে গেলাম ঘুমের ঘোরে! সমাপ্তি ঘটলো জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দিনের ৷
০৭ এপ্রিলঃ সকালে ঘুমের থেকে উঠেই ৫ মিনিটের একটা গোসল সেড়ে নেই আমরা সবায় ৷ ১০ টায় আমরা স্পিডবোট নিয়ে রওনা হই কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে ৷ জীবনের প্রথম স্পিড বোটের সফর ৷
প্রায় ২০ মিনিট অপরুপ সোনাদিয়ার সৌন্দর্য দেখতো দেখতে পৌছাই কক্সবাজার ৷ বরাবরের মতোই আমি কখনো কক্সবাজারের আবহাওয়ার সাথে মানিয়ে নিতে পারিনা ৷ কেনো জানি কক্সবাজার সৈকত কে আমি অনুভব ই করতে পারিনা ৷ যাই হোক ! বাড়ির জন্য কেনাকাটা করলাম ৷ ৪ টা পর্যন্ত কক্সবাজার থেকে বাসে করে চট্টগ্রাম চলে আসি ৷ রাত ৯ঃ৩০,আমরা তখন চট্টগ্রাম স্টেশন ৷ মেইল ট্রেন এ সিট নেই,পরবর্তী তে খাবার গাড়িতে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে আমরা শুয়ে বসে চলে আসলাম ঢাকা ৷
এভাবেই শেষ হলো ঘুরতে থাকা চিলেদের অসাধারণ সোনাদিয়া ভ্রমন ৷
কিছু ছবিঃ
১)ঘটিভাঙ্গা

২)ঘটিভাঙ্গা থেকে সোনাদিয়ার ট্রলার

৩)সোনাদিয়ার পথে

৪)খাওয়া দাওয়া

৫)এই সেই ভুতুড়ে ঝাউবন

৬)দ্বীপে তাবুবাস

৭)সোনাদিয়ার সৌন্দর্য

৮)লেগুন

৯)দ্বীপটা যে আমাদের

১০)পানিতে লাফালাফি

১১)পথচলা বহুদূরের

১২)ভালোলাগার সোনাদিয়া

১৩)হাতে আঁকা ভুত

১৪)হ্যামকের দুলুনি

১৫)বন্ধুত্বের প্রতীক

১৬)ঝাউবনে আমাদের সুন্দরী নিঝুম!

১৭)সূর্যাস্ত


আগামী পর্বে সোনাদিয়া যাওয়ার সকল রুট এবং খরচপাতির ব্যাপারে বিশদ আলোচনা করবো ৷

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১:৫২

বিজন রয় বলেছেন: আহা!! এত আনন্দ!!

এনজয় ইট।

১০ ই এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১:৫৫

ঘুড়তে থাকা চিল বলেছেন: গেলে আপনিও আনন্দের সাগরে ডুব দিতে পারবেন ভাই ।

২| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ২:২২

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: খুব মজা করেছেন আপনারা। আহা এমন ভাবে ঘুরতে সত্যি অনেক মজার।
ছবি গুলি অনেক সুন্দর।০৯ নং ছবিটি বেশ মজার ।

১০ ই এপ্রিল, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৪

ঘুড়তে থাকা চিল বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

৩| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৫:৪৭

ধ্রুবক আলো বলেছেন: ছবি গুলো দেখে মনে ছুটে যাচ্ছে।
ইচ্ছে মত ঘুরেন, মজা করেন শুভ কামনা

১০ ই এপ্রিল, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৫

ঘুড়তে থাকা চিল বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

৪| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৮:২৮

সুমন কর বলেছেন: ছবিগুলো দেখে গেলাম। সুন্দর এবং মজার।

১০ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৯:৩৭

ঘুড়তে থাকা চিল বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

৫| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:১৮

জাহিদ হাসান বলেছেন: সরাসরি প্রিয় পোষ্টের তালিকায়। ভালো লাগলো ছবিগুলো দেখে।

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১:১০

ঘুড়তে থাকা চিল বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.