নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ঘোরাঘুরি আনলিমিটেড

ঘুড়তে থাকা চিল

আমি ঘুরতে খুব ভালোবাসি,মোটামোটি প্রকৃতির কোলে গিয়ে ঘুমানোর স্বপ্নটাকে জীবনের মুল প্রতিপাদ্য করে নিয়েছি ৷

ঘুড়তে থাকা চিল › বিস্তারিত পোস্টঃ

পথের প্রেমে ( মানালি থেকে লেহ যাত্রা)

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:৩১


মানালি ঘুরা শেষ করে এবারে আমাদের লেহ যাওয়ার পালা। প্রথমেই হোঁচট খাই যখন জানতে পারি মানালি থেকে লেহ যাওয়ার বাস আগের দিনই যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। পরে প্রায় ৩ গুন বেশি টাকা দিয়ে আমরা একটি সুমো ঠিক করে ফেলি। দিনটা ছিলো মঙ্গলবার, সকাল ৯ টায় আমরা যাত্রা শুরু করি।

সেই চেনা পথ,গতকাল বিকেলটা তো এই পথ ধরেই রোহতাং পাস গিয়েছিলাম। মঙ্গলবার আবার রোহতাং পাস দর্শক দের জন্নে বন্ধ থাকে। আমাদের ড্রাইভার সানি স্পেশাল পারমিসন নিয়েছে আমাদের জন্নে। দুপুর নাগাদ পৌঁছাই রোহতাং পাস এ, আজকের দৃশ্য টা সম্পূর্ণ ভিন্ন। জনমানবহীন রোহতাং পাসে শুধু আমরা গুটি কয়েক জন মানুষ। আবহাওয়া ও গতকাল থেকে অনেক খানি পরিষ্কার।

রোহতাং পাস ছাড়িয়ে আরো ভিতরে চলছে আমাদের গাড়ি। পাহাড়ের সিমানা ও বড় হচ্ছে। পাহাড়ের চুড়া গুলো দেখেই বুঝা যাচ্ছিলো গতরাতে ভালোই বরফ নেমেছে এই অঞ্চলে।

একের পর এক বাক পেরুচ্ছেই , যেদিকে তাকাই শুধু ধু ধু প্রান্তর! বিকেল নেমেছে কেলং এ। কেলং ছোট একটি গ্রাম, বাস দিয়ে আসলে এখানেই আমাদের আজকের যাত্রা বিরতি নিতে হতো।

কিন্তু মাত্র বিকাল নেমেছে তাই সিদ্ধান্ত নিলাম আরো কিছুদুর চলে যাই আজ ই। এই পথে আসলে উচ্চতার সমস্যা বেশি হিট করে যেকোনো মানুষ কে। কারন মানালি শহর একটি ভ্যালি তে যার উচ্চতা ২০৫০ মিটার, সেখান থেকে খুব অল্প সময়ে রোহতাং পাস পেরুতে হয় যার উচ্চতা ৩৯৭৮ মিটার। উচ্চতার সাথে মানিয়ে নিতেই এই পথে আসলে অবশ্যই পথিমধ্যে ১ টি রাত কোথাও বিশ্রাম নিতে হয়। আমরা জিস্পা পেরিয়ে আরো কিছুদুর সামনে দারচা ভ্যালি তে আজকের বিরতি দেই। ৪৭৬ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে ১৪৮ কিলোমিটার পথ পার করি আজকের দিনে।

দারচা তে গাড়ি থেকে নেমে বুঝতে পারি কঠিন শীত বাইরে, তার উপর ভ্যালি তে নদির তীব্র স্রোতে সৃষ্ট বাতাস আরো খারাপ অবস্থা করে রেখেছে। কিছুতেই মাথায় আসছিলো না কিভাবে আজ রাত টা পার করবো। কিন্তু ক্যাম্প তো করতেই হবে, তাই একটা যায়গা সিলেক্ট করে টেন্ট গুলো পিচ করে নেই আমরা। রাতে খাই ভেড়ার মাংস দিয়ে পরটা, এক কথায় অসাধারণ ছিলো সেই খাবার।

রাতে তাবুর সেখান থেকে এক অন্যরকম পৃথিবী তে আছি মনে হচ্ছিলো। আকাশে কয়েক কোটি তারা তো হবেই, গুনে শেষ করতে হয়তো আরো কয়েক কোটি বছর চলে যাবে। সাথে স্পষ্ট ছায়াপথ তো আছেই।

রাতে ঘুমাতে অনেক বেশি কস্ট হয়েছিলো, কতক্ষন পর পর পুরো শরীর কেপে উঠতো শীতে। কোনোমতে ৩ টা পর্যন্ত তাবুর মধ্যে কাটিয়ে দোকানের কাছে চলে আসি। পরবর্তীতে জানতে পারি সে রাতের তাপমাত্রা ছিলো -৮।
ভোর ৪ টায় আমরা আবার উঠে বসি গাড়িতে। গাড়ি যাচ্ছে আরো উচুতে। প্রচণ্ড শীতে আমাদের মধ্যে ২ জনের কিছুটা সমস্যা হয়েছিলো। পথিমধ্যে আরো একটি উচু পাস বারালাচা পেরিয়ে সকাল ৮ টা নাগাদ পৌছাই আমরা সারচু তে। সারচু থেকে শুরু হয়ে যায় অক্সিজেন এর কমতি। সারচু সমতল থেকে প্রায় ৪২৯০ মিটার উচুতে অবস্থিত। সারচু তেই হিমাচল প্রদেশ শেষ হয়ে জাম্মু ও কাশ্মীর শুরু হয়।

সারচু তে সকালের নাস্তা করে আমরা ছুটে চলি আবারো। সারচুর পর থেকে পথ ও ক্রমশ ভয়ঙ্কর হতে লাগলো। কিছু কিছু জায়গা ছিলো যেখান থেকে নিচে তাকালেও শরীর বিচলিত হয়ে উঠবে।

পথে আরো একটি উচু পাস পরেছিলো লুংগালাচা( ৫০০৩ মিটার) ।

পাং এ এসে পোছাই ১১ টার সময়। পাং সমতল থেকে ৪৬০০ মিটার উচুতে। পাং এ ভারত আর্মির একটি ক্যাম্প আছে যা পৃথিবীর সরবোচ্চ আর্মি ক্যাম্প। পাং পেরিয়ে আমরা পৌঁছায় অদ্ভুত এক যায়গায়। মোরা প্লেইন্স( স্থানীয় নাম চুহা গ্রাঊন্ড) এর এক পাশে বিশালাকার এক টি খাদ, গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন ও বলা চলে। মোরা প্লেইন্স থেকেই ট্রেক করে যেতে হয় বিখ্যাত সো কার লেকে।

এখান থেকে শুরু হয় দীর্ঘ ৪৮ কিলোমিটার এর ভ্যালি। হাতের ডান পাশে বিশাল প্রান্তর পেরিয়ে সুউচ্চ পাহাড়। এই ভ্যালি টা আজিবন মনে থাকবে,অশাধারন ছিলো তার রুপ। তার মধ্যে আমাদের সুপারস্টার সানি হয়ে উঠেছিলো গতি দানব। এই পথে ১২০ এ চালাচ্ছিলো আর এক এক করে আর্মি দের গাড়ি গুলো অভারটেক করছিলো। মনে হচ্ছিলো গেমস চলছে,আমরা সন্ত্রাসি ।


মোরা প্লেইন্স পেরিয়ে এসেছিলো ছোট একটা গ্রাম দেব্রিং। দেব্রিং থেকে আবারো শুরু হয় উচুতে উঠা। প্রায় দুপুর নাগাদ আমরা পৌছাই তাগলাং লা(৫৩৫৯ মিটার) নামক একটা পাসে। জানতে পারি এটাই ভারতের দ্বিতীয় মটোরেবল উচু পাস এবং পৃথিবীর তৃতীয় । তাগলাং লা পাসে আমাদের সবারই মোটামুটি নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা হয়েছিলো। কিন্তু মারাত্মক কোনো সমস্যা হয়নি,অনেকের ই এইখানে নাক ফেটে রক্ত বের হয়ে যায়।

তাগলাং লা পাস পেরিয়ে প্রায় আরো বহু পথ পেরিয়ে আমরা পৌঁছাই রুমসে নামক জায়গায়। এখান থেকে দৃশ্য কিছুটা ভিন্ন হতে লেগেছিলো। কিছুটা গাছের দেখা মিলছিলো, পাহাড়ের রং ধূসর থেকে বদলে লালচে হয়েছিলো।

প্রায় বিকাল ৩ টা নাগাদ আমরা পৌছাই উপসি তে, উপসি ব্রিজ টা পেরুলেই লেহ শহরের সিমানা শুরু।

ইন্দু নদির তীরবর্তী কারু ও চোগ্লামসার পেরিয়ে আমরা লেহ শহর পৌছাই বিকেল ৪ টায়।

চলবে....
পরবর্তী পর্বে থাকবে আমাদের লাদাখ ঘুরার গল্প।

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:৫২

রাজীব নুর বলেছেন: দারুন।

কবে যে মানালি যাবো!

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:০০

ঘুড়তে থাকা চিল বলেছেন: মানালি থেকে লেহ বোধহয় অনেক বেশি সুন্দর, ও অসাধারন।

২| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১২

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: তাবুর ছবি দুটি দেখে সেন মনে হচ্ছে আমি স্বপ্ন দেখছি.........যাওয়ার পরিকল্পনা আছে আমারও।

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:০২

ঘুড়তে থাকা চিল বলেছেন: সেই রাত অসাধারন ছিলো ভাই।

৩| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১৫

জাহিদ হাসান বলেছেন: অসাধারন ভ্রমন কাহিনী।

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:০৩

ঘুড়তে থাকা চিল বলেছেন: আসলেই অসাধারন ভাই।

৪| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:১২

পার্থ তালুকদার বলেছেন: সুন্দর সব ছবি !!

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:০৪

ঘুড়তে থাকা চিল বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

৫| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:০৩

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: ছবি গুলো সত্যি অসাধারন!
সামনের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:০৬

ঘুড়তে থাকা চিল বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

৬| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:২১

সামিয়া বলেছেন: অসাধারণ

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:০৬

ঘুড়তে থাকা চিল বলেছেন: ধন্যবাদ আপু।

৭| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৪

নিয়াজ সুমন বলেছেন: চমৎকার ঝরঝরে ভ্রমণ বর্ণনা সাথে অসাধারণ ছবি!!!
আগামী পর্ব দেখার অপেক্ষায় রইলাম-

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:১৫

ঘুড়তে থাকা চিল বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

৮| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:৫৫

অবনি মণি বলেছেন: কবে যে যাব.....

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:১৫

ঘুড়তে থাকা চিল বলেছেন: অবশ্যই যেতে পারবেন আশা করি।

৯| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:০৮

খসরুল আলম বলেছেন: লেহ লাদাখ যাওয়ার স্বপ্ন কবে যে ফুল ফিল হবে !

২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:০২

ঘুড়তে থাকা চিল বলেছেন: হয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.