নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্পেস-টাইম

there is no problem in the heavens and earth ;) problem lies in three places... beneath, between and within the hells.

গোলাম দস্তগীর লিসানি

বুলি বলে শুনতে পাই, রূপ কেমন তা দেখি নাই, ভীষম ঘোর দেখি।। পোষা পাখি চিনলাম না, এ লজ্জা তো যাবে না, উপায় কী করি, আমি উপায় কী করি।।

গোলাম দস্তগীর লিসানি › বিস্তারিত পোস্টঃ

লাইলাতুল ক্বদরের উপলব্ধি: কী কেন ও কীভাবে

১৪ ই জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৭



আসুন, সরাসরি ঝাঁপিয়ে পড়ি মহান রজনীর গভীর উপলব্ধিতে, যেহেতু এ রাত উপলব্ধির রাত, এ রাত অণ্বয়ের রাত, এ রাত অনেক অণ্বেষণের পর তৃষিত হৃদয় প্রশান্ত হওয়ার রাত... আমরা লাইলাতুল ক্বদরকে বুঝতে পারি না, আমরা লাইলাতুল ক্বদরের মূল কারণ উপলব্ধি করতে পারি না, তাহলে আমরা কী করে এ রাতে হাজার রাতের চেয়েও উত্তম অর্জন করব?

ক্বদর শব্দটা ভাগ্য'র সাথে জড়িত। তাই লাইলাতুল ক্বাদরি মানে সৌভাগ্য রজনী। এ রাতের নামেই আমরা বুঝতে পারি, এ রাতে ফজর পর্যন্ত ইবাদাতকারীদের জন্য শুধুই সৌভাগ্য, শান্তিই শান্তি, সমর্পণই সমর্পণ (সালামুন হিয়া হাত্তা মাতলাইল ফাজর)। তাই এ রাত সমর্পণের (ইসলাম, সালাম) রাত। আল্লাহর কাছে নিজেকে সঁপে দেয়ার রাত। একইভাবে শান্তিরও রাত। আবার এ রাত যেহেতু ক্বদর বা সৌভাগ্য-রজনী, সেহেতু এ রাতে আমাদের তাকদীরও আল্লাহ পরিবর্তন করে দিতে পারেন। একে তাই আমরা তাকদীর পরিবর্তনের এক বিশেষ রাতও বলতে পারি। অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাতও বলতে পারি নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য।

এ রাতের মর্যাদা ও প্রকৃত উপলব্ধি পড়াও এ রাতের শ্রেষ্ঠ অর্জন হতে পারে। কেননা, যে সমুদ্রের গভীরতা আমরা জানি না, সেখান থেকে মুক্তা কী করে আনব? এ রাতের গভীরতা উপলব্ধি করতে হবে, অন্যকে উপলব্ধি করাতে হবে। যখনি অন্য কেউ এ রাতের গভীরতা উপলব্ধি করবে, তখন তার অর্জন হবে হাজার রাত বা ৮৩ বছরের চেয়েও বেশি, এবং যেহেতু আমাদের জানানোর জন্য এ উপলব্ধি হল, সেহেতু আমরাও নিজেরটুকু বাদেই প্রত্যেকের জন্য ৮৩ বছরের ইবাদাতের মর্যাদা পাবো এবং এভাবে হয়ত আমরা এক রাতে হাজার হাজার বছরের ইবাদাতের মর্যাদা পেতে পারি। এমনকি এক রাতে আমরা কী করে একাই হাজার বছরের ইবাদাতের মর্যাদা্ পাবো সেই আলোচনাও আমরা এ লেখাতে করব। তাই এ লেখাটুকু পড়া, বিশেষ করে কপি করে নতুন স্ট্যাটাস দেয়ার মাধ্যমে অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দেয়ার মাধ্যমে আমরা লক্ষ বছরের ইবাদাতের সমান মর্যাদা সওয়াব পেতে পারি এবং এভাবে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল দ.'র নৈকট্য অর্জন করতে পারি।

১. নুবুয়্যত-উৎসবের রাত:

লাইলাতুল ক্বদর হল নুবুয়্যত-রিসালাত উৎসবের রাত। এ রাত আমাদের দয়াময় কামলিওয়ালার রাত। যিঁনি বিশ্বজগতের সকল ভুবনের প্রতি আাল্লাহর একক রহমত, তাঁর রাত। এ রাতে রাসূলেপাক দ. নুবুয়্যত পেয়েছেন বলেই তিনি আমাদের নবী, এ রাত এ কারণেই হাজার রাতের চেয়ে উত্তম, কেননা, এ রাতে আমরা রাহমাতাল্লিল আলামীনকে নবী রূপে পেয়েছি। তাঁর নুবুয়্যত আগেও ছিল, সৃষ্টির আদি থেকেই ছিল, কিন্তু আমাদের কাছে প্রকাশিত হয়েছে এ রাতে। যিঁনি রাহমাতাল্লিল আলামীন, যাঁর একবারের শাফায়াতে ৪৯০ কোটি মুমিন জান্নাতে যাবে, এ হল তাঁর নবী হওয়ার রাত! আমরা এ মর্যাদা ভুলে গিয়ে যতই নামাজ পড়ি আর কুরআন পড়ি, কোন লাভ নেই- কেননা, মূল অনুভূতি যেখানে আছে মর্তবা সেখানেই। এজন্যই বলা হয়েছে, নিয়্যতের উপর আমল। আমাদের নিয়্যত যদি নবী দ. কেন্দ্রীক হয়, এবং এ রাতকে নবী দ.'র রিসালাত উৎসবের রাত মনে করে পালন করি, তবেই আমাদের রাত হাজার রাত তথা ৮৩ বছরের চেয়েও অধিক উত্তম রাত হতে পারে, অন্যথায় নয়।

তাই এ রাতে বিশেষভাবে নবীপাক দ. কে স্মরণ করুন। কেননা, আল্লাহ বলেছেন, ওয়ারা ফা'না লাকা যিকরাক, অর্থ: এবং আমি আপনার যিকর (স্মরণ) কে ফা'না (আমার সাখে বিলীন) করে অতি সুউচ্চ করে দিয়েছি। তাই মহান রাসূল দ.'র স্মরণ হল সুউচ্চতম ইবাদাত, এবং যে রাত তাঁর নুবুয়্যতের জন্য রিসালাতের জন্য এসেছে সে রাতে তাঁকে স্মরণ করার মত ইবাদাত আর হতে পারে না।

রাসূল দ. কে স্মরণ করার সবচে উৎকৃষ্ট পথ হল তাঁর প্রতি সালাত ও সালাম তথা দরুদ আদায় করা। যেহেতু এক সাহাবা রা. কে তিনি দ. বলেছেন, তোমার দৈনন্দিন ওয়াজিফা (যিকর-আমল) এর মধ্যে কিছু সময় তুমি দরুদ রেখেছ, এটা তোমার জন্য ভাল। তোমার জন্য আরো ভাল হতো, যদি তুমি আরো বেশি রাখতে। সাহাবা রা. বললেন, তবে অর্ধেক শুধু দরুদ রাখছি। রাসূল দ. বললেন, দারুণ। আরো বেশি রাখতে পারলে তোমারই জন্য আরো ভালো হতো। তখন সাহাবা রা. বললেন, হে রাসূল দ. আমি পূর্ণ সময়ই তবে দরুদ রাখছি। রাসূল দ. বললেন, এটাই তোমার জন্য সবচে ভাল।

আর রাসূল দ. বলেছেন, দরুদে ইব্রাহিম আ. তিনি সালাতে পড়েন এবং আমাদেরও তিনি তা পড়তে বলেছেন। এছাড়াও তিনি দ. দরুদে ইব্রাহিম আ. কে শ্রেষ্ঠ দরুদ বলেছেন। এখানে লক্ষ্যণীয়, আমরা দরুদে ইব্রাহিম আ. এর মাধ্যমে ইব্রাহিম আ. থেকে শুরু করে রাসূল দ. পর্যন্ত রাসূল দ.'র সকল পূর্বপুরুষের উপর সালাত ও সালাম আদায় করি এবং রাসূল দ.'র সকল বংশধরদের উপরও সালাত ও সালাম আদায় করি। তাই যা করছি, তা যদি জেনে করি, তবে তার মর্যাদা হবে সত্যিকার। কেননা, জানলেই নিয়ত ঠিক রাখা যায় এবং নিয়ত যত গভীর হয় তার আমল তত সঠিক হয়।

আমরা যেন এ রাতে কোন দরুদে ইব্রাহিম মিস না করি কোনও সালাতে, সালাতের বাইরেও যেন তা রয়।

এছাড়াও যেহেতু এ রাত রাসূল দ.'র নুবুয়্যত-রিসালাতের রাত, সেহেতু রাসূল দ.'র মহিমাণ্বিত জীবন এবং তাঁর মহান মর্যাদা পাঠ করা ও অন্যদের জানানো এ রাতের হক্ব আদায় করতে পারে।

২. কুরআনের রাত:

"নিশ্চই আমি নাজিল করেছি এটা (কুরআন) সৌভাগ্য-রজনীতে।" কুরআন হল হুদাল্লিন না-স। কুরআন হল আন্ নূর। কুরআন হল মহান স্রষ্টা আমাদের মত সামান্য মানুষদের কাছে যে মহিমাণ্বিত ভালবাসায় ভরা চিঠি পাঠিয়েছেন সেই চিঠি। হায়, আমার মাওলা আমার উদ্দেশ্যে চোদ্দশ বছর আগে ভালবাসায় ভরা চিঠি পাঠিয়েছেন, আমি কীভাবে মনোজগত এবং বহির্জগত তৈরি করব, সেই নির্দেশনা দিয়েছেন! এ রাতে অর্থ না বুঝে কুরআন পড়লেও অনেক মর্যাদা, তারচে বেশি মর্যাদা অর্থ বুঝে কুরআন পড়তে পারলে। তারচে বেশি মর্যাদা নিজে বুঝে তা অন্তত এক বা একাধিক মানুষের সাথে মৌখিকভাবে শেয়ার করতে পারলে, কেননা, রাসূলপাক দ. বলেছেন, সেই শ্রেষ্ঠ যে কুরআন শেখে এবং শেখায়।

এ রাতে আমরা অবশ্যই নামাজ পড়ব, কিন্তু এ রাতে যেন আমরা কুরআন থেকে কিছুটা নিজে উপলব্ধি করি এবং অন্যকে তা উপলব্ধি করাই। কেননা, যেহেতু কুরআন যে অন্যকে শেখায় সেই শ্রেষ্ঠ, শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি কেন আমরা হব না শ্রেষ্ঠ রাতে?

৩. "ইক্বরা"র রাত:

এ রাতেই নাযিল হয়েছে, "পড়ুন! পড়ুন আপনার প্রতিপালকের নামে, যিঁনি সৃষ্টি করেছেন..." তাই এ রাত জ্ঞান (ইলম), প্রজ্ঞা (হিক্বমাহ্), বিশ্লেষণ (তাফাক্কুর), প্রশ্ন ও অনুসন্ধান (তালিব-তলব) এর রাত। যেহেতু কুরআন মহাপুস্তক, তাই এ রাত হল মহান বিষয়ে শেখা ও শেখানোর রাত। এ রাত ইসলাম, মানবতা, তৌহিদ, রিসালাত, ইতাআত শেখার রাত। এ রাতে রাসূলপাক দ.'র চল্লিশ বছরের প্রতীক্ষা ও ১৫ বছরের সাধনার সফল অবসান হয়েছিল। তাই এ রাতে সবচে বড় ইবাদাত হতে পারে, ধর্ম বিষয়ে আমাদের যেসব জিজ্ঞাসা আছে তা জেনে নেয়ার মাধ্যমে। যেসব কনফিউশন আছে তা ক্লিয়ার হওয়া ও অপরকে করার মাধ্যমে। তাই এ রাতের সবচে বড় ইবাদাত হতে পারে জ্ঞান অর্জন ও নিজের বিষয়গুলো উপলব্ধি করে সময় দেয়ার মাধ্যমে। নামাজ তো আমরা পড়বই, কিন্তু জ্ঞান অর্জনের চেয়ে বড় কোন ইবাদাত নাই। আর যে রাতকে নির্ধারিত করা হয়েছে জ্ঞান অর্জনের জন্য সে রাতে কু্রআন ও হাদীসের জ্ঞান-প্রজ্ঞা অর্জন ও বিলি করাই সবচে বড় ইবাদাত।

৪. ধ্যানের রাত:

রাসূল দ. জাবালে নূরের হেরা গুহায় পনের বছর কী করেছেন? আমরা সবাই জানি, গভীর ধ্যান করেছেন।
যে রাতে ওয়াহয়ি আসে, সেই রাতে রাসূল দ. ওই গুহায় কী করছিলেন? আমরা সবাই জানি, ধ্যান করছিলেন।
রাসূল দ. নুবুয়্যতের তেইশ বছরও ধ্যান করা বন্ধ করেননি, কেননা তিনি বলেছেন, রাতের এমন একটা সময় আছে, হে আয়িশা রা.! যে সময়ে আপনারাও আমার নৈকট্য পাবেন না, কেননা, তা শুধু আমার ও আমার মহান রবেরই জন্য।

তো যে রাতে ধ্যান করছিলেন রাসূল দ.! যে রাতে সমগ্র মুসলিম জাতির উপর ফরজ (কিফায়া) যে তাদের নিজ নিজ অঞ্চল থেকে অন্তত একজন মসজিদে ধ্যানমগ্ন-মৌনসাধনারত (ই'তিকাফ) থাকবেন, যে রাতে নুবুয়তের তেইশ বছরও রাসূল দ. ধ্যান (ই'তিকাফ) রত ছিলেন, সে রাতে আমরা ধ্যান করব না তো কোন্ রাতে করব?

তাই, এ রাতের সবচে বড় সুন্নাহ্ হল নির্জনে গভীর ধ্যানমগ্ন থাকা। এ সময় ধ্যানমগ্ন থেকে রাসূলপাক দ. কী পন্থা অবলম্বন করতেন, সেই পন্থা অবলম্বন করা। হে আল্লাহ্, তুমি কে, তুমি আমাদের কতো ভালোবাসো, তোমার সাথে আমাদের সম্পর্ক কীরূপ? এই নির্যাতিত মানবতাকে কীভাবে উদ্ধার করা যায়, কী করে মানুষে মানুষে ভালবাসা মায়া মমতা সৌহার্দ্য শান্তি রক্ষা করা যায়? মানুষের সাথে কীরূপ সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে? মানুষ তো মানুষ, একটা পিঁপড়া একটা ঘাসেরও এ জগতে অধিকার আছে- কী করে তা পালন করা যায়? কোনটা সেই মধ্যপন্থা, যা নিজে অবলম্বন করেছেন রাসূল দ. এবং অন্যকে অবলম্বন করতে বলেছেন? কী করে নিজেকে চিনব? নিজের মনের হিংসা, ঘৃণা, রিয়া, নিফাক, মিথ্যা, পরচর্চা থেকে কী করে নিজেকে ও পরবর্তীতে সমাজকে মুক্ত করব?

রাসূল দ. মুক্তির দূত, কিন্তু কোন্ মুক্তির? মানুষের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি। একটা পাখির বাচ্চাও হরণ হওয়া থেকে মুক্তি। একটা গাছও অকারণে কর্তন হওয়া থেকে মুক্তি।

এই মুক্তিকে কী করে নিজের ভিতরে ধারণ করব এবং যেহেতু আমরা খলিফাতুল্লাহ্, এই ভালবাসা ও দান-দয়া-সহাবস্থান প্রাকৃতিকতা প্রকৃতি-রক্ষার পথে শান্তির পথে কী করে এই মুক্তিকে সারা বিশ্বের সামনে তুলে ধরব? এই ভাবনাই হল প্রকৃত ধ্যান। এই ভাবনা যখন মানুষ ঘুমের চেয়েও গভীরে গিয়ে করে তখন তা হয় ধ্যান।

"এক প্রহরের (কিছু সময়ের) গভীর ধ্যান সত্তর বছরের ইবাদাতের চেয়ে উত্তম", তাহলে রমজানে আধঘন্টা-একঘন্টার ধ্যান ৪,৯০০ বছরের ইবাদাতের সমান। আর লাইলাতুল ক্বদরে সে হিসাবে একটা গভীর ধ্যান চার লক্ষ ছয় হাজার সাতশো বছরের ইবাদাতের সমান। এ রাতে আধঘন্টার তিনটা মুরাক্বাবা, মুশাহিদা, তাফাক্কুর করলে তা হতে পারে বারো লক্ষ বিশ হাজার বছরের ইবাদাতের সমান। এবং যদি দশজন মানুষও এ রাতে তিনবার ধ্যান করে আপনার দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে, তবে তাদের সম্মিলিত সওয়াব- মর্যাদা- খোদার নৈকট্য আপনিও অবশ্যই পাবেন কেননা তা রাসূল দ.'র ওয়াদা।

মাওলা যদি এ এক রাতের জন্যও উপলব্ধির জগতে কবুল করেন, আমাদের উচ্চতা দেখে ইনশাআল্লাহ্ হাশরে ফেরেশতারাও অবাক হবে।
আসুন, সরাসরি ঝাঁপিয়ে পড়ি মহান রজনীর গভীর উপলব্ধিতে, যেহেতু এ রাত উপলব্ধির রাত, এ রাত অণ্বয়ের রাত, এ রাত অনেক অণ্বেষণের পর তৃষিত হৃদয় প্রশান্ত হওয়ার রাত... আমরা লাইলাতুল ক্বদরকে বুঝতে পারি না, আমরা লাইলাতুল ক্বদরের মূল কারণ উপলব্ধি করতে পারি না, তাহলে আমরা কী করে এ রাতে হাজার রাতের চেয়েও উত্তম অর্জন করব?

ক্বদর শব্দটা ভাগ্য'র সাথে জড়িত। তাই লাইলাতুল ক্বাদরি মানে সৌভাগ্য রজনী। এ রাতের নামেই আমরা বুঝতে পারি, এ রাতে ফজর পর্যন্ত ইবাদাতকারীদের জন্য শুধুই সৌভাগ্য, শান্তিই শান্তি, সমর্পণই সমর্পণ (সালামুন হিয়া হাত্তা মাতলাইল ফাজর)। তাই এ রাত সমর্পণের (ইসলাম, সালাম) রাত। আল্লাহর কাছে নিজেকে সঁপে দেয়ার রাত। একইভাবে শান্তিরও রাত। আবার এ রাত যেহেতু ক্বদর বা সৌভাগ্য-রজনী, সেহেতু এ রাতে আমাদের তাকদীরও আল্লাহ পরিবর্তন করে দিতে পারেন। একে তাই আমরা তাকদীর পরিবর্তনের এক বিশেষ রাতও বলতে পারি। অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাতও বলতে পারি নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য।

এ রাতের মর্যাদা ও প্রকৃত উপলব্ধি পড়াও এ রাতের শ্রেষ্ঠ অর্জন হতে পারে। কেননা, যে সমুদ্রের গভীরতা আমরা জানি না, সেখান থেকে মুক্তা কী করে আনব? এ রাতের গভীরতা উপলব্ধি করতে হবে, অন্যকে উপলব্ধি করাতে হবে। যখনি অন্য কেউ এ রাতের গভীরতা উপলব্ধি করবে, তখন তার অর্জন হবে হাজার রাত বা ৮৩ বছরের চেয়েও বেশি, এবং যেহেতু আমাদের জানানোর জন্য এ উপলব্ধি হল, সেহেতু আমরাও নিজেরটুকু বাদেই প্রত্যেকের জন্য ৮৩ বছরের ইবাদাতের মর্যাদা পাবো এবং এভাবে হয়ত আমরা এক রাতে হাজার হাজার বছরের ইবাদাতের মর্যাদা পেতে পারি। এমনকি এক রাতে আমরা কী করে একাই হাজার বছরের ইবাদাতের মর্যাদা্ পাবো সেই আলোচনাও আমরা এ লেখাতে করব। তাই এ লেখাটুকু পড়া, বিশেষ করে কপি করে নতুন স্ট্যাটাস দেয়ার মাধ্যমে অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দেয়ার মাধ্যমে আমরা লক্ষ বছরের ইবাদাতের সমান মর্যাদা সওয়াব পেতে পারি এবং এভাবে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল দ.'র নৈকট্য অর্জন করতে পারি।

১. নুবুয়্যত-উৎসবের রাত:

লাইলাতুল ক্বদর হল নুবুয়্যত-রিসালাত উৎসবের রাত। এ রাত আমাদের দয়াময় কামলিওয়ালার রাত। যিঁনি বিশ্বজগতের সকল ভুবনের প্রতি আাল্লাহর একক রহমত, তাঁর রাত। এ রাতে রাসূলেপাক দ. নুবুয়্যত পেয়েছেন বলেই তিনি আমাদের নবী, এ রাত এ কারণেই হাজার রাতের চেয়ে উত্তম, কেননা, এ রাতে আমরা রাহমাতাল্লিল আলামীনকে নবী রূপে পেয়েছি। তাঁর নুবুয়্যত আগেও ছিল, সৃষ্টির আদি থেকেই ছিল, কিন্তু আমাদের কাছে প্রকাশিত হয়েছে এ রাতে। যিঁনি রাহমাতাল্লিল আলামীন, যাঁর একবারের শাফায়াতে ৪৯০ কোটি মুমিন জান্নাতে যাবে, এ হল তাঁর নবী হওয়ার রাত! আমরা এ মর্যাদা ভুলে গিয়ে যতই নামাজ পড়ি আর কুরআন পড়ি, কোন লাভ নেই- কেননা, মূল অনুভূতি যেখানে আছে মর্তবা সেখানেই। এজন্যই বলা হয়েছে, নিয়্যতের উপর আমল। আমাদের নিয়্যত যদি নবী দ. কেন্দ্রীক হয়, এবং এ রাতকে নবী দ.'র রিসালাত উৎসবের রাত মনে করে পালন করি, তবেই আমাদের রাত হাজার রাত তথা ৮৩ বছরের চেয়েও অধিক উত্তম রাত হতে পারে, অন্যথায় নয়।

তাই এ রাতে বিশেষভাবে নবীপাক দ. কে স্মরণ করুন। কেননা, আল্লাহ বলেছেন, ওয়ারা ফা'না লাকা যিকরাক, অর্থ: এবং আমি আপনার যিকর (স্মরণ) কে ফা'না (আমার সাখে বিলীন) করে অতি সুউচ্চ করে দিয়েছি। তাই মহান রাসূল দ.'র স্মরণ হল সুউচ্চতম ইবাদাত, এবং যে রাত তাঁর নুবুয়্যতের জন্য রিসালাতের জন্য এসেছে সে রাতে তাঁকে স্মরণ করার মত ইবাদাত আর হতে পারে না।

রাসূল দ. কে স্মরণ করার সবচে উৎকৃষ্ট পথ হল তাঁর প্রতি সালাত ও সালাম তথা দরুদ আদায় করা। যেহেতু এক সাহাবা রা. কে তিনি দ. বলেছেন, তোমার দৈনন্দিন ওয়াজিফা (যিকর-আমল) এর মধ্যে কিছু সময় তুমি দরুদ রেখেছ, এটা তোমার জন্য ভাল। তোমার জন্য আরো ভাল হতো, যদি তুমি আরো বেশি রাখতে। সাহাবা রা. বললেন, তবে অর্ধেক শুধু দরুদ রাখছি। রাসূল দ. বললেন, দারুণ। আরো বেশি রাখতে পারলে তোমারই জন্য আরো ভালো হতো। তখন সাহাবা রা. বললেন, হে রাসূল দ. আমি পূর্ণ সময়ই তবে দরুদ রাখছি। রাসূল দ. বললেন, এটাই তোমার জন্য সবচে ভাল।

আর রাসূল দ. বলেছেন, দরুদে ইব্রাহিম আ. তিনি সালাতে পড়েন এবং আমাদেরও তিনি তা পড়তে বলেছেন। এছাড়াও তিনি দ. দরুদে ইব্রাহিম আ. কে শ্রেষ্ঠ দরুদ বলেছেন। এখানে লক্ষ্যণীয়, আমরা দরুদে ইব্রাহিম আ. এর মাধ্যমে ইব্রাহিম আ. থেকে শুরু করে রাসূল দ. পর্যন্ত রাসূল দ.'র সকল পূর্বপুরুষের উপর সালাত ও সালাম আদায় করি এবং রাসূল দ.'র সকল বংশধরদের উপরও সালাত ও সালাম আদায় করি। তাই যা করছি, তা যদি জেনে করি, তবে তার মর্যাদা হবে সত্যিকার। কেননা, জানলেই নিয়ত ঠিক রাখা যায় এবং নিয়ত যত গভীর হয় তার আমল তত সঠিক হয়।

আমরা যেন এ রাতে কোন দরুদে ইব্রাহিম মিস না করি কোনও সালাতে, সালাতের বাইরেও যেন তা রয়।

এছাড়াও যেহেতু এ রাত রাসূল দ.'র নুবুয়্যত-রিসালাতের রাত, সেহেতু রাসূল দ.'র মহিমাণ্বিত জীবন এবং তাঁর মহান মর্যাদা পাঠ করা ও অন্যদের জানানো এ রাতের হক্ব আদায় করতে পারে।

২. কুরআনের রাত:

"নিশ্চই আমি নাজিল করেছি এটা (কুরআন) সৌভাগ্য-রজনীতে।" কুরআন হল হুদাল্লিন না-স। কুরআন হল আন্ নূর। কুরআন হল মহান স্রষ্টা আমাদের মত সামান্য মানুষদের কাছে যে মহিমাণ্বিত ভালবাসায় ভরা চিঠি পাঠিয়েছেন সেই চিঠি। হায়, আমার মাওলা আমার উদ্দেশ্যে চোদ্দশ বছর আগে ভালবাসায় ভরা চিঠি পাঠিয়েছেন, আমি কীভাবে মনোজগত এবং বহির্জগত তৈরি করব, সেই নির্দেশনা দিয়েছেন! এ রাতে অর্থ না বুঝে কুরআন পড়লেও অনেক মর্যাদা, তারচে বেশি মর্যাদা অর্থ বুঝে কুরআন পড়তে পারলে। তারচে বেশি মর্যাদা নিজে বুঝে তা অন্তত এক বা একাধিক মানুষের সাথে মৌখিকভাবে শেয়ার করতে পারলে, কেননা, রাসূলপাক দ. বলেছেন, সেই শ্রেষ্ঠ যে কুরআন শেখে এবং শেখায়।

এ রাতে আমরা অবশ্যই নামাজ পড়ব, কিন্তু এ রাতে যেন আমরা কুরআন থেকে কিছুটা নিজে উপলব্ধি করি এবং অন্যকে তা উপলব্ধি করাই। কেননা, যেহেতু কুরআন যে অন্যকে শেখায় সেই শ্রেষ্ঠ, শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি কেন আমরা হব না শ্রেষ্ঠ রাতে?

৩. "ইক্বরা"র রাত:

এ রাতেই নাযিল হয়েছে, "পড়ুন! পড়ুন আপনার প্রতিপালকের নামে, যিঁনি সৃষ্টি করেছেন..." তাই এ রাত জ্ঞান (ইলম), প্রজ্ঞা (হিক্বমাহ্), বিশ্লেষণ (তাফাক্কুর), প্রশ্ন ও অনুসন্ধান (তালিব-তলব) এর রাত। যেহেতু কুরআন মহাপুস্তক, তাই এ রাত হল মহান বিষয়ে শেখা ও শেখানোর রাত। এ রাত ইসলাম, মানবতা, তৌহিদ, রিসালাত, ইতাআত শেখার রাত। এ রাতে রাসূলপাক দ.'র চল্লিশ বছরের প্রতীক্ষা ও ১৫ বছরের সাধনার সফল অবসান হয়েছিল। তাই এ রাতে সবচে বড় ইবাদাত হতে পারে, ধর্ম বিষয়ে আমাদের যেসব জিজ্ঞাসা আছে তা জেনে নেয়ার মাধ্যমে। যেসব কনফিউশন আছে তা ক্লিয়ার হওয়া ও অপরকে করার মাধ্যমে। তাই এ রাতের সবচে বড় ইবাদাত হতে পারে জ্ঞান অর্জন ও নিজের বিষয়গুলো উপলব্ধি করে সময় দেয়ার মাধ্যমে। নামাজ তো আমরা পড়বই, কিন্তু জ্ঞান অর্জনের চেয়ে বড় কোন ইবাদাত নাই। আর যে রাতকে নির্ধারিত করা হয়েছে জ্ঞান অর্জনের জন্য সে রাতে কু্রআন ও হাদীসের জ্ঞান-প্রজ্ঞা অর্জন ও বিলি করাই সবচে বড় ইবাদাত।

৪. ধ্যানের রাত:

রাসূল দ. জাবালে নূরের হেরা গুহায় পনের বছর কী করেছেন? আমরা সবাই জানি, গভীর ধ্যান করেছেন।
যে রাতে ওয়াহয়ি আসে, সেই রাতে রাসূল দ. ওই গুহায় কী করছিলেন? আমরা সবাই জানি, ধ্যান করছিলেন।
রাসূল দ. নুবুয়্যতের তেইশ বছরও ধ্যান করা বন্ধ করেননি, কেননা তিনি বলেছেন, রাতের এমন একটা সময় আছে, হে আয়িশা রা.! যে সময়ে আপনারাও আমার নৈকট্য পাবেন না, কেননা, তা শুধু আমার ও আমার মহান রবেরই জন্য।

তো যে রাতে ধ্যান করছিলেন রাসূল দ.! যে রাতে সমগ্র মুসলিম জাতির উপর ফরজ (কিফায়া) যে তাদের নিজ নিজ অঞ্চল থেকে অন্তত একজন মসজিদে ধ্যানমগ্ন-মৌনসাধনারত (ই'তিকাফ) থাকবেন, যে রাতে নুবুয়তের তেইশ বছরও রাসূল দ. ধ্যান (ই'তিকাফ) রত ছিলেন, সে রাতে আমরা ধ্যান করব না তো কোন্ রাতে করব?

তাই, এ রাতের সবচে বড় সুন্নাহ্ হল নির্জনে গভীর ধ্যানমগ্ন থাকা। এ সময় ধ্যানমগ্ন থেকে রাসূলপাক দ. কী পন্থা অবলম্বন করতেন, সেই পন্থা অবলম্বন করা। হে আল্লাহ্, তুমি কে, তুমি আমাদের কতো ভালোবাসো, তোমার সাথে আমাদের সম্পর্ক কীরূপ? এই নির্যাতিত মানবতাকে কীভাবে উদ্ধার করা যায়, কী করে মানুষে মানুষে ভালবাসা মায়া মমতা সৌহার্দ্য শান্তি রক্ষা করা যায়? মানুষের সাথে কীরূপ সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে? মানুষ তো মানুষ, একটা পিঁপড়া একটা ঘাসেরও এ জগতে অধিকার আছে- কী করে তা পালন করা যায়? কোনটা সেই মধ্যপন্থা, যা নিজে অবলম্বন করেছেন রাসূল দ. এবং অন্যকে অবলম্বন করতে বলেছেন? কী করে নিজেকে চিনব? নিজের মনের হিংসা, ঘৃণা, রিয়া, নিফাক, মিথ্যা, পরচর্চা থেকে কী করে নিজেকে ও পরবর্তীতে সমাজকে মুক্ত করব?

রাসূল দ. মুক্তির দূত, কিন্তু কোন্ মুক্তির? মানুষের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি। একটা পাখির বাচ্চাও হরণ হওয়া থেকে মুক্তি। একটা গাছও অকারণে কর্তন হওয়া থেকে মুক্তি।

এই মুক্তিকে কী করে নিজের ভিতরে ধারণ করব এবং যেহেতু আমরা খলিফাতুল্লাহ্, এই ভালবাসা ও দান-দয়া-সহাবস্থান প্রাকৃতিকতা প্রকৃতি-রক্ষার পথে শান্তির পথে কী করে এই মুক্তিকে সারা বিশ্বের সামনে তুলে ধরব? এই ভাবনাই হল প্রকৃত ধ্যান। এই ভাবনা যখন মানুষ ঘুমের চেয়েও গভীরে গিয়ে করে তখন তা হয় ধ্যান।

"এক প্রহরের (কিছু সময়ের) গভীর ধ্যান সত্তর বছরের ইবাদাতের চেয়ে উত্তম", তাহলে রমজানে আধঘন্টা-একঘন্টার ধ্যান ৪,৯০০ বছরের ইবাদাতের সমান। আর লাইলাতুল ক্বদরে সে হিসাবে একটা গভীর ধ্যান চার লক্ষ ছয় হাজার সাতশো বছরের ইবাদাতের সমান। এ রাতে আধঘন্টার তিনটা মুরাক্বাবা, মুশাহিদা, তাফাক্কুর করলে তা হতে পারে বারো লক্ষ বিশ হাজার বছরের ইবাদাতের সমান। এবং যদি দশজন মানুষও এ রাতে তিনবার ধ্যান করে আপনার দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে, তবে তাদের সম্মিলিত সওয়াব- মর্যাদা- খোদার নৈকট্য আপনিও অবশ্যই পাবেন কেননা তা রাসূল দ.'র ওয়াদা।

মাওলা যদি এ এক রাতের জন্যও উপলব্ধির জগতে কবুল করেন, আমাদের উচ্চতা দেখে ইনশাআল্লাহ্ হাশরে ফেরেশতারাও অবাক হবে।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৫:১১

শতদ্রু একটি নদী... বলেছেন: চমৎকার পোষ্ট। ভালো লিখছেন। ++

২| ০১ লা আগস্ট, ২০১৫ রাত ৯:১৪

অন্ধবিন্দু বলেছেন: পড়ছি কোথায় ! ভাবছি কোথায় !
শুধু দৌড় ...দৌঁড়....

৩| ০২ রা আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১:০৯

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী সুবহানাল্লাহিল আজিম... আসসালাতু আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসুলাল্লাহ সা: সালাতুন ইয়া পাক পাঞ্জাতন..সালাতুন ইয়া মুর্শিদিন, সালাতুন ইয়া আওলিয়াতুল্লাহ কারিমুন!

প্রিয়তে তো অবশ্যই। এবং শেয়ার ও ছাপার অনুমতি চাইলাম !

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.