নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চেতনায় বদর-ওহোদ-কারবালা ।

রাসেল সরকার

প্রিয়নবীর প্রেমহীন আত্মামৃত, সর্ব মিথ্যার অন্ধকারে নিমজ্জিত ।

রাসেল সরকার › বিস্তারিত পোস্টঃ

মণি সিংহের টংক আন্দোলন ।

০৩ রা জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫৫



পূর্ব কথা : অষ্টাদশ এবং ঊনবিংশ শতাব্দীতে সুস্বং জমিদারদের আয়ের প্রধান উৎস ছিল গাবো পাহাড় । জমির খাজনা থেকে আয় হতো খুবই সামান্য । কেননা তালুকদারি, নিস্কর প্রভৃতির কারণে সমতল ভূমির এক বড় অংশ তাদের দখলে ছিল না । গারো পাহাড়ে প্রচুর কয়লা এবং মূল্যবান খনিজ পদার্থ পাওয়া যেত । মূল্যবান কাঠ এবং বাঁশও সেখানে প্রচুর পরিমাণে জন্মাত । পাওয়া যেত আগর নামক এক প্রকার সুগন্ধি কাঠ । কস্তুরির মতো সুগন্ধি ছড়াত এই কাঠ । এই কাঠ থেকে চোলাই করে তৈরি হতো সুগন্ধি তৈল । আগর কাঠ থেকে জমিদাররা প্রচুর অর্থ আয় করত । তাছাড়া পাহাড়ে ছিল বন্যহাতি । আঠারো এবং উনিশ শতকে হাতির ছিল অভাবনীয় কদর । সুসং রাজারা খেদা (হাতি ধরার ফাঁদ) দিয়ে হাতি ধরে ওগুলোকে পোষ মানিয়ে দিল্লি, আগ্রা, পাটনা ও মর্শিদাবাদসহ ভারতের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে প্রচুর অর্থ আয় করত । খেদা দিয়ে হাতি ধরার কাজে ব্যবহার করত হাজং শ্রমিকদের । হাজংরা ছিল খুবই সাহসী, শক্তিশালী এবং দুধর্ষ । হাতি ধরার কাজে তারা ছিল অত্যন্ত পুটু । বন্য হাতি ধরতে গিয়ে অনেক হাজং শ্রমিককে অকালে প্রাণ দিতে হতো । কিন্তু হাতি ধরতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের ওপর চালানো হতো অমানুষিক নির্যাতন, শত নির্যাতন সহ্য করে নাম মাত্র পারিশ্রমিক পেয়েও যুগ যুগ ধরে তারা হাতি ধরার কাজ করেছে । উনিশ শতকের শেষের দিকে ব্রিটিশ সরকারের দৃষ্টি পড়ে গারো পাহাড়ের ওপর । সরকার গারো পাহাড়কে সরকারী অধিগ্রহণে আনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে । ব্রিটিশ সরকার জমিদারদের নোটিশ দিয়ে জানিয়ে দেয়, পাহাড়ের ওপর জমিদারদের আইনগত কোন অধিকার নেই । জমিদাররা সরকারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে । মঘল আমলের সনদ ছিল তাই মামলায় হাইকোর্টে জমিদাররা জয়লাভ করে । সরকার প্রিভি কাউন্সিলে আপিল করে । ব্রিটিশ সরকার যখন জানতে পারে মামলায় জমিদাররাই জিতে যাবে তখন গারো হিল এক্ট নামে ১৮৮৫ সালে একটি আইন করে পাহাড়ের ওপর থেকে জমিদারদের স্বত্ত্ব কেড়ে নেয় । আরও আইন করে, এই এক্টের বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে না । ফলে গারো পাহাড় জমিদারদের হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার ফলে তারা আয়ের বিকল্প পথ খুঁজতে থাকে । তারা জমির খাজনা আদায়ে বিশেষ মনোযোগী হয়ে ওঠে । প্রবর্তন করে টংক প্রথার । টাকার পরিবর্তে ধান দিয়ে যে খাজনা, পরিশোধ করা হতো তার নাম টংক ।
টংক সম্পর্কে কমরেড মণি সিংহ বলেন, (কমরেড ইংরেজী শব্দ এর বাংলা হল ঘনিষ্ঠ সঙ্গী) টংক মানে ধান কড়ারি খাজনা, জমিতে ধান হোক বা না হোক জমিদারদেরকে কড়ার মতো ধান দিতে হবে । টংক জমির ওপর কৃষকদের কোন স্বত্ত্ব ছিল না । ময়মনসিংহ জেলার উত্তরে কলমা কান্দা, দুর্গাপুর, হালুয়া ঘাট, নালিতা বাড়ী ও শ্রীবর্দ্দি থানায় এই প্রথা প্রচলিত ছিল । বিশেষ করে সুস্বং জমিদারী এলাকায় এর প্রচলন ছিল ব্যাপক । কেন টংক নাম হলো, জানা যায় না । এটা স্থানীয় নাম । সুস্বং এলাকায় যে টংক ব্যবস্থা ছিল তা ছিল খুবই কঠোর । সোয়া একর জমির জন্য ধান দিতে হতো বছরে ৭ থেকে ১৫ মণ । অথচ এই সময়ে জোত জমির খাজনা ছিল সোয়া একরে ৫ থেকে ৭ টাকা । এই সময়ে ধানের দর ছিল প্রতি মণ সোয়া দুই টাকা । ফলে প্রতি সোয়া একরে খাজনা দিতে হতো সতের টাকা । এই প্রথা শুধু জমিদারদের ছিল তা নয়, মধ্যবিত্ত ও মহাজনরাও টংক প্রথায় লাভবান হতো । একমাত্র সুস্বং জমিদাররাই টংক প্রথায় দুই লাখ মণ ধান সংগ্রহ করত । সুস্বং জমিদাররা গারো পাহারের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে সম্ভবত এই প্রথা প্রবর্তন করে । জোত স্বত্ত্বের জমির বন্দোবস্ত নিতে হলে সোয়া একরে একশত টাকা থেকে দুইশত টাকা নজরানা দিতে হতো । গরিব কৃষক এই নজরানার টাকা দিতে সমর্থ ছিল না, টংক প্রথায় কোন নজরানা লাগত না । কাজেই গরিব কৃষকের পক্ষে টংক নেয়াই ছিল সুবিধাজনক । টংকের হার প্রথমে এত বেশী ছিল না । কৃষকরা যখন টংক জমি নেয়ার জন্য এগিয়ে আসে তখন প্রতি বছর জমির হার নিলামে ডাক হতো । ফলে তা ক্রমে ক্রমে বেড়ে যায় । যে কৃষক বেশি ধান দিতে রাজি হতো তাকেই অর্থাৎত পূর্বের ডাককারী কৃষকের কাছ থেকে জমি ছাড়িয়ে নতুন সর্বোচ্চ ডাককারীর কাছে হস্তান্তর করা হতো । এভাবে নিলামে ডাক বেড়ে ক্রমে ১৯৩৭ সাল থেকে সোয়া একরে ১৫ মণ পর্যন্ত ওঠে ।
আন্দোলনের প্রথম পর্যায় ঃ সুসংজমিদারী এলাকার চাষীদের অনুরোধে টংক আন্দোলনের নেতৃত্ত্ব দিতে এগিয়ে আসেন জমিদার বংশেরই এক সন্তান বিশিষ্ট কমিউনিষ্ট নেতা ‘কমরেড মনি সিংহ’ । তিনি কৃষকদের সংঘবদ্ধ করে জমিদারদের বিরুদ্ধে শুরু করেন আইনসঙ্গত অহিংস আন্দোলন । আন্দোলনের স্লোগান ছিলঃ-
১। টংক প্রথার উচ্ছেদ চাই ।
২। টংক জমির সত্ত্ব চাই ।
৩। জোত স্বত্ত্ব নিরিখে টংক জমির খাজনা ধার্য্য কর ।
৪। বকেয়া টংক মওকুফ চাই ।
৫। জমিদারী প্রথার উচ্ছেদ চাই ।
৬। সাম্রাজ্যবাদ ধ্বংস হোক ।

মণি সিংহ এই আন্দোলনের সূচনা করেন ১৯৩৭ সালের নভেম্বর মাসে । অল্পদিনের মধ্যে এ আন্দোলন দাবানলের মতো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে । মুসলিম হাজং ও গারো চাষীরা আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ে । এ আন্দোলনে মণি সিংহের পাশে দাড়ান হাজং উপজাতির একজন প্রধান নেতা ললিত সরকার । ক্ষেতের ধান কাটা হলেও চাষীরা জমিদারদের টংক ধান দেয়া বন্ধ করে দেয় । জমিদাররা চোখে সর্ষেফুল দেখতে থাকে । ভয়, ভীতি ও শক্তি প্রদর্শন করেও জমিদাররা টংক আদায়ে ব্যর্থ হয় । আন্দোলনের বিস্তৃতি দেখে সরকারের টনক নড়ে । সরকার গারো পাহাড়ের পাদ দেশের ৫টি থানায়ঃ কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, হালুয়া ঘাট, নালিতা বাড়ী ও শ্রীবর্দির জমির উৎপাদন জরিপ করে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে । ফলে অনেক জায়গায় টংক ধানের হার অর্ধেক নেমে যায় । কোন কোন জায়গায় অর্ধেকেরও কম । তাছাড়া যারা বছরে যে টংক খাজনা আছে তার সমপরিমাণ বেশির পক্ষে ৮ কিস্তিতে পরিশোধ দিলে জমির স্বত্ত্ব চাষীর হয়ে যাবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় । টংক প্রথা সম্পূর্ণ উচ্ছেদ না হলেও যেটুকু সংশোধন করা হয় তা আন্দোলনকারীদের প্রাথমিক বিজয় । এই সংশোধিত পদ্ধতি চালু হয় ১৯৪০ সালে ।
টংক আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়ঃ দ্বিতীয় দফায় টংক আন্দোলন শুরু হয় ১৯৪৬ সালে । আন্দোলনের প্রস্তুতি হিসেবে ১ জানুয়ারী সুসং দুর্গা পুর মাঠে ডাকা হয় এক বিশাল জনসভা । এই জনসভায় মুসলিম হাজং ও গারো নারী-পুরুষ দলে দলে যোগদান করে । এই সভায় মণি সিংহ চাষীদের টংক প্রথা উচ্ছেদের দাবীতে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার উদাত্ত আহ্বান জানান । চারদিকে শুরু হয় তুমুল আন্দোলন । অন্যদিকে পুলিশও হয়ে ওঠে বেপরোয়া । পুলিশ টংক আন্দোলনের স্থানীয় নেতা কলমা কান্দার খরিনে ইউনিয়নের রাণী গাও গ্রামের ললিত সরকারের বাড়ী আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় ।
হাইস্কুল মাঠে টংক উচ্ছেদের প্রস্তুতি সভার পরেই সরকারের কড়া নজর পড়ে । টংক এলাকার বেশ ক’টি স্থানে সরকার পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করে দুর্গা পুরে । দুর্গা পুরের বিরিশিরিতে একটি পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হয় । সরকারের পক্ষ থেকে গুলির নির্দেশ দানের জন্য একজন ম্যাজিষ্ট্রেটকেও এখানে পাঠানো হয় । পুলিশ বাহিনী বিদ্রোহী কৃষকদের খুঁজতে শুরু করে । ৩১ ডিসেম্বর বিরিশিরি থেকে ৪ মাইল দূরের বহেরাতলী গ্রামে ঘটে যায় এক মর্মান্তিক হত্যাকান্ড । পুলিশ আন্দোলনকারী নেতৃস্থানীয় ক’জনকে তাদের বাড়ীতে খুঁজে না পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে লস্কেশ্বর হাজংয়ের সদ্য বিবাহিত স্ত্রী কমুদিনী হাজংকে ধরে এক খেলার মাঠের মধ্য দিয়ে বিরিশিরি ক্যাম্পের দিকে রওনা দেয় । টংক আন্দোলনের প্রধান নেতা মণি সিংহ এ ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে- এই সময় আমাদের জনাচল্লিশ ভলান্টিয়ার একদল (৩০জন পুরুষ ও ১০জন মহিলা) এই মাঠ দিয়ে আসছিল । কুমুদিনীকে নিয়ে যাচ্ছে দেখে রাশিমনি নামের একজন মধ্য বয়ষ্কা মহিলা দৌড়ে গিয়ে তাকে ছাড়িয়ে আনতে চেষ্টা করে । মুহুর্তে পুলিশ তাকে গুলি করে হত্য করে । এরপর সুরেন্দ্র নামে একজন এগিয়ে গেলে তাকেও গুলি করে হত্যা করা হয় । অন্যরা তখন ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশের দিকে বল্লম ছুড়তে থাকে । সশস্ত্র পুলিশ তখন নদীর দিকে ছুটে যায় । এদিকে দু’জন পুলিশ তখন নদীর দিকে যাওয়ার জন্য আলাদাভাবে অগ্রসর হয় । এখানে কিছু ঝোপঝাড় ছিল । ওই দু’জন পুলিশ বরাক বাশেঁর এক বেড়ায় আটকা পড়ে যায় । উচুঁ বেড়া পার হওয়ার চেষ্টা করার সময় আমাদের ভলান্টিয়াররা তাদের আক্রমণ করে । ফলে ওই দু’জন পুলিশ বল্লমের আঘাতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় । অন্য পুলিশ সব পালিয়ে যায় । এদিকে দুই পুলিশ মরে পড়ে আছে । সেদিকে তাদের ভ্রুক্ষেপও ছিল না । লাশ দুটি দীর্ঘ সময় এখানেই পড়েছিল । পরে গভীর রাতে পুলিশ মিশনারীদের নিয়ে ওই দুটি লাশ নিয়ে যায় । আমাদের টংক এলাকায় প্রথম ইহধাম ত্যাগ করেন রাশিমণি ও সুরেন্দ্র । স্ত্রী বিয়োগ বেদনা সহ্য করতে না পেরে রাশিমণির মৃত্যুর এক মাস পরেই তার স্বামী পাঞ্জি হাজং আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে । ইতিহাসের পাতায় চির অম্লান হয়ে আছে রাশিমণির নাম । হাজং সম্প্রদায়ের কাছে নিঃসন্তান এই মহিয়সী নারী হাজং মাতা হিসেবে খ্যাত । দীর্ঘ ৫৮ বছর পর ২০০৪ সালের জানুয়ারীতে রাশিমণির নামে বহেরাতলী গ্রামে নির্মিত হয় রাশিমণি স্মৃতিসৌধ । টংক আন্দোলনে তাদের স্মরণে সুসং দুর্গাপুরে ১৯৯৩ সালে নির্মাণ করা হয় টংক স্মৃতিসৌধ । এই হৃদয় বিদারক ঘটনার পর বহেরাতলীসহ পাশের হাজং অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে সরকার শুরু করে চরম অত্যাচার । নেতৃস্থানীয় হাজংদের মামলা দিয়ে সরকার শুরু করে হয়রানি । অনেকেই ফেরারী জীবন যাপন করতে থাকে । অনেককেই খাটতে হয় জেল । এরপরও আন্দোলন থেমে থাকেনি ।
আন্দোলনের শেষ পর্যায়ঃ ১৯৪৮ সালের ডিসেম্বর মাসে হালুয়া ঘাটের নাগের পাড়ায় কমিউনিষ্ট পার্টির ময়মনসিংহ জেলা কমিটির মিটিং ডেকে পুনরায় টংক আন্দোলন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় । পুনরায় টংক আন্দোলন করার জন্য দিকে দিকে প্রচার চালানো হয় খুব দ্রুত গতিতে । এই আন্দোলন ছিল খুব জঙ্গি । এলাকাজুড়ে গড়ে ওঠে সশস্ত্র সংগ্রাম । চারদিকে আওয়াজ ওঠে টংক প্রথার উচ্ছেদ চাই, জান দেব তবু ধান দিব না, লাঙ্গল যার জমি তার, জমিদারী প্রথার উচ্ছেদ চাই । পাহাড় এলাকার সব চাষী জঙ্গী আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ে এবং টংক বন্ধ করে দেয় । তার পর ঘটে যায় একে একে অনেক ভয়াবহ ঘটনা ।
প্রথমেই চৈতন্যনগর থেকে নীলচাঁদ হাজংয়ের ২০ মণ টংকের ধান জোর করে নিয়ে যাওয়ার সময় গ্রামবাসীরা ওই ধান কেড়ে নিয়ে নীলচাঁদকে ফেরত দেয় । ১৯৪৯ সালের ১৫ জানুয়ারী কলমাকান্দা থানার বটতলায় ২০ মণ টংক ধান আটক করা হয় । পরদিন গরুর গাড়িতে করে জোড় করে ধান নিয়ে যেতে চাইলে কৃষকরা গাড়ির পথরোধ করে দাড়ায় । পুলিশ লাঠি চালিয়ে ক’জনকে আহত করে । পাল্টা আঘাত হয় পুলিশের ওপর । পাল্টা আক্রমণে টিকতে না পেরে পুলিশ পালিয়ে যায় । এরপর ২৬ ফেব্রুয়ারী চৈতন্যনগরে জমিদারের কাচারী দখল করা হয় । পুড়িয়ে দেয়া হয় জমিদারের প্রয়োজনীয় সব কাগজ পত্র । কাচারির কর্মচারীদের মেরে তাড়িয়ে দেয়া হয় । এর দুই দিন পর কালিকা পুরের ২ জন জঙ্গি মহিলা দুই গাড়ি টংকের ধান আটক করে । ২৮ ফেব্রুয়ারী দু’জন বন্ধুকধারী সিপাইকে ভালুকা পাড়া গির্জার সামনে বিপ্লবীরা হত্যা করে । ১৯৪৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারী মঙ্গল সরকারের নেতৃত্ত্বে একদল ভলান্টিয়ার লেঙ্গুরা বাজারে মিছিল করে য়খন টংক বিরোধী স্লোগান দিতে থাকে, ক্যাম্পের পুলিশ তাদের লক্ষ করে গুলি চালায় । এতে ঘটনা স্থলেই নিহত হয় মঙ্গল সরকার, নগেন্দ্র ও সুরেন্দ্র । এই সংবাদ গ্রামে পৌছাঁলে স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে গ্রামের আবাল-বৃদ্-বনিতা এই হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ছুটে আসে । পুলিশ অনবরত গুলি করতে থাকে । পরশমণি, রেবতি, জোগেনি, স্বারাজসহ মোট ১৯ জন প্রাণ হারায় । গ্রেফতার হয় অশ্বমণি ও ভদ্রমণি । তাদের ১২ বছর সাজা হয় । ১২ বছর ব্যাপী এই টংক আন্দোলনে প্রায় শতাধিক হাজং নেতাকর্মী প্রাণ হারান ।
অবশেষে ১৯৫০ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্থানের মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিন সুসং দুর্গাপুরে এসে টংক প্রথা উচ্ছেদ ও কুষকদের জমির স্বত্ত্ব দেওয়ার আশ্বাস দেন । অন্যদিকে হাজং এলাকায় সশস্ত্র পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করে । তারা হাজং কৃষকদের ঘরে ঘরে লুটতরাজ চালায়, নারীদের সম্রমহানি ও শতশত পুরুষকে ধরে জেলে দেয় । কিন্তু আন্দোলন কিছুতেই স্তিমিত হচ্ছিল না । অবশেষে ১৯৫০ সালের মাঝামাঝিতে মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিন জমিদারী ও টংক প্রথা উচ্ছেদের সরকারী ঘোষণা দেন । অতঃপর ১৯৫০ সালেই প্রাদেশিক পরিষদে জমিদারী উচ্ছেদ আইন পাশ হয় । এই আইনের বলে বাংলাদেশ থেকে চিরদিনের জন্য জমিদারী প্রথার উচ্ছেদ ঘটে । সেই সঙ্গে টংক প্রথার হয় চির অবসান ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.