নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চেতনায় বদর-ওহোদ-কারবালা ।

রাসেল সরকার

প্রিয়নবীর প্রেমহীন আত্মামৃত, সর্ব মিথ্যার অন্ধকারে নিমজ্জিত ।

রাসেল সরকার › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক-দুই-তিন

২৪ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ২:১৪

এই ২৫ নভেম্বর ১৯৪১ তারিখ মঙ্গলবার “নবযুগ” –এর পূর্বোক্ত ৩৩শ সংখ্যায় প্রকাশিত অন্যতম সম্পাদকীয় নিবন্ধ “এক-দুই-তিন” –এ বিশ্লেষণ করা হয়েছে তখনকার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরিস্থিতি । পরিহাস-ছলে লেখা হয়েছেঃ
“এক হইল- আমেরিকার লিন্ডবার্গ । দুই হইল--- ইংলন্ডের ইডেন ও রাশিয়ার মেইস্কি । তিন হইল—হিটলার, মুসোলিনী ও পেঁতা । ইঁহারা তিন নৌকার খেয়ামাঝি, মনুষ্য সমাজকে তাদের সভ্যতার ভাবনা-চিন্তার গাঁটরী লইয়া নৌকায় চাপিয়া বসিতে বলিতেছেন এবং যাত্রীদের লইয়া ইঁহাদের মধ্যে টানাটানি ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হইয়াছে । বিপদসাগরের-তীরে দাঁড়াইয়া হতভম্ব পৃথিবী কি করিবে, ভাবিবার অবসরও পাইতেছে না । ইচ্ছা থাক বা না থাক, নৌকায় তুলিয়া অকূল পাড়ি দিয়া কূলে পৌঁছাইয়া দিবেই । পাড়ে দাঁড়াইয়া ঢেউ গণিবে বা বোকার মতো সমুদ্রে ঝাঁপ দিবে, খেয়া-মাঝিরা বাঁচিয়া থাকিতে তা হইতে দিবেন না । তবে এত কষ্ট করিয়া নৌকা লইয়া আসিবার তো কোন অর্থই থাকে না । এক, দুই ও তিন নম্বরের তিন খেয়াতরীকে যে কোন ঘাটে পৌঁছাইয়া দিবে, নৌকার নিশানেই তা লেখা আছে ।
এক নম্বর নৌকার মাঝি লিন্ডবার্গ বিমান-বীর, পৃথিবী জুড়িয়া তাঁর খ্যাতি । যান্ত্রিক হৃদযন্ত্র (মেকানিকাল হার্ট) আবিষ্কর্তা বলিয়া বৈজ্ঞানিকও তিনি । সমর ও রাজনীতি বিজ্ঞানে তিনি সব্যসাচী-সদৃশ । ইদানীং সমর-বিশারদগণই রাজনীতির কর্ণধার । তুর্কীর কামাল, পোল্যান্ডের পিলুসুডস্কি, জাপানের টোজো, আফ্রিকার স্মার্ট, চীনের চীয়াং, স্পেনের ফ্রাস্কো, ফ্রান্সের পেঁতা ইত্যাদি আরও অনেকের সম্বন্ধে, এমন কি হিটলার সম্বন্ধেও শোনা যায় যে, মিলিটারী হাই-কমান্ডকেও চালনা করেন । যুদ্ধ বাধিলে যুদ্ধের মাঠেই তাঁর আস্তানা হয় । চার্চিল সম্বন্ধেও জার্মানরা ঠাট্রা করিয়াছিল যে, জেলারেল ষ্টাফকে নির্দেশ দিতে নাকি তিনি যাইয়া থাকেন । এ-যুগের প্রতিভা মানেই যে সামরিক প্রতিভা ইহা স্বীকার করিতে হইবে, অন্তত যতদিন বোমার ভয় আছে ততদিন । লিন্ডবার্গ বলেন-জার্মান ও ইংরাজ দুই ভাইয়ের (কাজিন ব্রাদার) লড়াইতে সভ্যতা নষ্ট হইবে, এবং আরও অনেক কিছুই ক্ষয় হইবে । আর এক ভাইকে (আমেরিকাকে) দলে টানিবার জন্য দুই ভাই-ই হাত বাড়াইতেছে । একজন বলে যোগ দাও, অপরে বলে যেখানে আছ সেখানেই থাক, হাঙ্গামায় আসিও না ।

লিন্ডবার্গ সমস্যা পূরণ করিয়াছেন--- ইংরাজ ও তার সাম্রাজ্য যেমন আছে তেমন থাক, ইউরোপ হিটলারের থাক, ভূমধ্য সাগরে একটা আপোষ হউক আর জার্মানীর কলোনী সম্বন্ধে ইংরাজ সহৃদয় হউক । তারপর রাশিয়াকে এশিয়ায় নির্বাসন দিয়া শ্বেত ও কৃষ্ণ-তাম্র-পীতে গঠিত অশ্বেত জাতির বিরুদ্ধে ইংরাজ-জার্মান-মার্কিন তিন ভাই একত্র হউক এবং পৃথিবীকে মালের মতো এক নম্বর নৌকায় তুলিয়া ফেলুক । এ-প্রস্তাবে হিটলার রাজী হইবেন, তিন নম্বর নৌকা ডুবাইয়া দিয়া তিনি এক নম্বরে চাপিতে পারেন । কিন্তু দুই নম্বর খেয়া নৌকার ইডেন স্বীকৃত হইবেন না । প্রথম, মেইস্কিকে কূলে ফেলিয়া যাইতে হইবে- এ বিশ্বাসঘাতকতা সম্ভব নহে । দ্বিতীয়, যে নৌকায় হিটলার আছেন, সে নৌকায় ইডেন নাই । তার চাইতে সমুদ্র সাঁতরাইয়াই পাড়ি দেওয়া অনেক ভালো । অতএব এক নম্বর খেয়া নৌকা আপতত নোঙ্গর তুলিতে পারিতেছে না ।

দুই নম্বর নৌকার দুই মাঝি দুই দিকে দাঁড় টানিবেন । ইডেন যাইবেন ডেমোক্রেসি ও স্বাধীনতার স্বর্ণ বন্দরে, মেইস্কি যাইবেন শ্রেণী-বিরোধ শুন্য শ্রমিক-কৃষকের রাজ্যে । তবু এক নৌকায় দুই জনের ঠাঁই হইয়াছে । ইউনিয়ন জ্যাক্ ও কাস্তে হাতুড়ীর লাল নিশান নৌকার গলুইতে টানিয়াছেন, তাতে বন্দরের নাম নাই, শুধু আছে ফ্যাসিস্ত ঝাটিকাক্ষুব্ধ তরঙ্গসস্কুল সমুদ্র পাড়ি দিবার সঙ্কেত । অর্থাৎ একই বিপদের টানে বাঘে মহিষে এক ঘাটে আসিয়াছে ।

সমুদ্র শান্ত হইলে ইডেনের কোমরবন্ধ ইউনিয়ন জ্যাক ও মেইস্কির কোমর হইতে লাল নিশান বাহির হইয়া পড়িবে কিনা-কিম্বা তাহা পথেই বিসর্জ্জিত হইয়া বন্দরের আগে একটা আপোষ হইবে তাহা অনিশ্চিত ব্যাপার । কিন্তু নিশ্চিত বিপদ হিটলারের বিরুদ্ধে যাঁরা, তাঁহারা দুই নম্বর নৌকায় আসিতে পারেন । কিন্তু এতে আর দুইখানা খেয়াতরীও যে, ঘাটে থাকিয়া যায়, যাত্রীবিভাগ তখন অনিবার্য । কাজেই এ নৌকাতেও খেয়াপাড়ি হয় না ।

তিন নম্বর নৌকার মাঝি তত সাধাসাধির ধার ধারেন না । ইউরোপকে একবার জোর করিয়া নৌকায় তুলিতে পারিলেই কর্ম ফতে হইবে । সুন্দরী ইউরোপার পিছনে পিছনে বাকী পৃথিবী আপনা হতেই উঠিয়া বসিবে । কান আকর্ষণ করিলে মাথা আর কবে দূরে রহিয়াছে । তাই মুসোলিনীকে সঙ্গে লইয়া হিটলার পিতামহ পেতাঁ সকাশে চালিয়াছেন । ইউরোপকে নৌকায় উঠানো যেটুকু বাকী আছে পেঁতা হাত লাগাইলেই সেটুকু শেষ হয় । তখন নৌঙ্গর তুলিয়া খেয়া নৌকা নূতন পৃথিবীর নূতন শান্তিতে গিয়ে ভিড়িতে পারিবে । পৃথিবী তখন স্বীকার পাইবে যে, বলপ্রয়োগের ব্যখা পাইয়াছে বটে, কিন্তু পরিনামে মঙ্গলও হইয়াছে ।

পূর্ব-ঘাটেও হলদেরংয়ের বেঁটে মাঝির একখানা ডিঙ্গি দেখা যায় । তাহার জন্য ভাবিবার দরকার হইবে না । তিন নম্বর নৌকার পিছনে এ-ডিঙ্গি এক সময় জালিবোটের মত আসিয়া ভিড়িবে, নিপ্পনের সঙ্গে তিন নম্বরের মাঝির এ বন্দোবস্ত হইয়া আছে ।

এক-দুই-তিন-এ অঙ্কের ফল কখনও এক পাওয়া যায় না । এক আর দুই অর্থাৎ লিন্ডবার্গ ও ইডেন মেইস্কির যোগ করিলে তিন পাওয়া যায় । তখন ওদিকেও তিন থাকে, কাজেই প্রতিদ্বন্দিতা রহিয়াই যায় । তিনের সঙ্গে এক যদি যোগ হয়, তবে দুই কাজিন ব্রাদার মার্কিন ও জার্মান মুসোলিনী-পেঁতা সংযোগে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয় বটে, কিন্তু এ নৌকা টিকাইতে হইলে দুই নম্বর নৌকা ডুবানো দরকার । তার সম্ভাবনা নাই । মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাঁর এক ঠ্যাং দুই নম্বরে তুলিয়া দিয়াছেন, বাকী খানা তুলিতে যা দেরী ! যদি তিন আর দুই একত্র হয় তবে একটা এক পাওয়া যায় । কিন্তু এক নৌকাতে হিটলার-ইডেন-মুসোলিনী-পেঁতা ও মেইস্কি, এতবড় তাজ্জব ব্যাপার পৃথিবীর অদৃষ্টে দেখার সৌভাগ্য আছে কি ?

কাজেই এক-দুই-তিন অর্থাৎ পৃথিবীর ঘড়িতে অফুরন্ত দম্ দেওয়া আছে, এক-দুই-তিন টিক্ টিক্ ঘড়ি পূর্বের মতই চলিবে । অনেক খেয়াতরী আসিয়াছে এবং গিয়াছে । এরাও আসিয়াছে এরাও যাইবে । সেই সমস্যা-সমুদ্র-পাড়ের সেই পৃথিবীই টিকিয়া থাকে । সঙ্গে শুধু তাল রাখে অন্তহীন ধ্বনি—এক-দুই-তিন ।“

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ৯:৪৭

সাদী ফেরদৌস বলেছেন: ধন্যবাদ , দুর্লভ একটি লেখা শেয়ারের জন্য ।

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ ভোর ৪:২৩

রাসেল সরকার বলেছেন: আপনার প্রতি অনেক অনেক শুভ কামনা ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.