নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চেতনায় বদর-ওহোদ-কারবালা ।

রাসেল সরকার

প্রিয়নবীর প্রেমহীন আত্মামৃত, সর্ব মিথ্যার অন্ধকারে নিমজ্জিত ।

রাসেল সরকার › বিস্তারিত পোস্টঃ

এজিদকে কাফের বলা যাবে কিনা (আলকাউলুচ্ছাদীদ ফি কুফরে এজিদ)

১০ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১:১২

কিছু ওলামায়ে কেরাম এজিদকে মালাউন বা কাফের বলতে অনিশ্চুক । বরং যারা লানতী বলছে, তাদের উক্তি শুদ্ধ নয় বলেও ঘোষণা দিয়েছে (ছাইফুল আতাঃ ১৭৬ পৃষ্ঠা) । কিন্তু আমি বলছি এজিদের উপর লানত করাটা কোরআন-হাদিছ সম্মত । কাজী সানাউল্লাহ পানিপথী লিখেছেন, ইমাম আহমদের ছেলে জনাব সালেহ বলেছেন, আমি আমার পিতা হযরত ইমাম আহমদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে এজিদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম । উত্তরে তিনি বললেন, কোন ঈমানদারই এজিদকে ভালবাসতে পারে না । এজিদের উপর আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে লানত দিয়েছেন । আমি বলেছিলাম, কোরআনের ভাষায় আল্লাহপাক তার উপর অভিশষ্পাত দিয়েছেন । “ক্ষমতা লাভ করলে সম্ভবত তোমরা দুনিয়াতে অনর্থ সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে । এদের প্রতি আল্লাহপাক অভিষ্পাত করেন । অতঃপর আল্লাহপাক তাদেরকে বধির ও দৃষ্টিশক্তিহীন করেন (সূরা মুহাম্মদ ২২-২৩ আয়াত, তফছীরে মাজহারী ৮ম খন্ডঃ ৪৩৪ পৃষ্ঠা) । ইবনে হাজার মক্কী লিখেছেন, ইমাম আহমদ এও বলেছেন, ইমাম হোসাইনের হত্যাকান্ড হতে বড়ই হৃদয় বিদারক, মর্মন্ত্দ ঘটনা ইসলামের ইতিহাসে আর কী হতে পারে । বুঝা গেল ইমাম আহমদও এজিদকে লানত করেছেন । এতে এটাও প্রমাণিত হয়, এজিদই ইমাম হোসাইনের হত্যার জন্য দায়ী ছিল (সাওয়ায়েকে মুহরেকাঃ ২১২ পৃষ্ঠা) । সাহেবের রুহুল মাআনী আল্লামা আলুসি লিখেছেন, এজিদের কুফরী ও অভিশপ্ত হওয়া সম্পর্কে পরিস্কার সুনিশ্চিত ঘোষণা অনেক আলেম দিয়েছেন । বর্তমানে হাফেজ ইবনে জুজী এবং তারও আগে কাজী আবু ইয়াআলা এবং আল্লামা তাফতাজানী বলেছেন, আমরা এজিদের শান বা ঈমানে বিশ্বাস করি না । বরং তার ঈমান নেই । এতে কোন সন্দেহ নেই । তাকে সাহায্যকারীর উপর আল্লাহর লানত ও অভিশষ্পাত বর্ষিত হোক । আল্লামা জালালুদ্দিন সয়ূতী তার উপর লানত দেয়ার পক্ষপাতি । আবুল ওয়র্দি স্বীয় ইতিহাসে উল্লেখ করেছেন, যখন আওলাদে রাসূলদের বন্দী করে সিরিয়ায় উপস্থিত করা হল, তখন এজিদ আওলাদে রাসূলদের দেখে বলেছিল, আমি রাসূল থেকে স্বীয় ঋণ উসূল করলাম । আল্লামা মাহমুদ আলুসি স্বীয় মতামত ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেছেন, খবিছ এজিদ প্রিয়নবীর রিসালাত স্বীকার করত না । সে মক্কা ও মদীনা শরীফে আওলাদে রাসূলের অসম্মানী করেছে, মুসলমানদের হেয় করেছে । মুসলমানগণ ধৈর্য ধারণ করেছেন । খবিছ এজিদ হতে আল্লাহ প্রতিশোধ নেয়ার অপেক্ষা করেছেন । তিনি আরো বলেন, আমি শুধু এজিদের উপর লানত করছি না । বরং ওবাইদুল্লাহ ইবনে জিয়াদ, ইবনে সাদ এবং তাদের দলের উপর অভিসষ্পাত করছি (২৬পারা, পৃষ্ঠাঃ ৭৩) । আল্লামা তাফতাজানী লিখেছেন, এজিদ হযরত হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর হত্যায় সন্তুষ্ট ছিল এবং হযরত হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর হত্যার সংবাদ প্রাপ্তি সে চেয়েছিল । হযরত হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর হত্যার প্রত্যেক ঘটনায় প্রমাণিত হয় যে, এজিদ হযরত হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও আওলাদে রাসূলের অসম্মান করেছে । তার শান ও ঈমান সম্পর্কে আমরা চুপ থাকতে পারি না তার উপর ও তার সাহায্যকারীদের উপর আল্লাহর লানত বর্ষিত হোক । আল্লামা ইবনে এমাদ হাম্বলী লিখেছেন, আমরা এজিদের শানে বরং কুফরী ও ঈমানে চুপ থাকব না । অর্থাৎ তাকে কাফের বলব । তার উপর তার সাহায্যকারীদের আল্লাহর লানত হোক (শজরাতুজ্জাহার ১ম খন্ডঃ ৬৯ পৃষ্ঠা) । আল্লামা জামেরী বলেছেন, আলী বিন মুহাম্মাদুল কায়া আল ফেরাসী আল ফকীহ, আশশাফেঈ বলেছেন, এজিদের উপর লানত করা সম্বন্ধে আগেকার আলেমদের মধ্যে ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মালেক ও ইমাম আহমদ বিন হাম্বলের দু’টি মত আছে । এই মতদ্বয়ের একটি পরিস্কারভাবে বর্ণিত, অপরটি ইঙ্গিতে বর্ণিত । আমরা শাফেয়ীদের কথা পরিস্কার যে, এজিদ মদ্যপ, চিতাবাঘ শিকারী, জুয়াড়ী ছিল বলে সে পরিস্কার মালাউন । কিন্তু ইমাম আবু হানিফা ও মালেক একমতে পরিস্কার মালাউন বলেছেন এবং অপর রেওয়ায়েতে ইঙ্গিতে মালাউন বলেছেন (হায়াতুল হাইওয়ান, ২য় খন্ডঃ ২২৫ পৃষ্ঠা) । আল্লামা ইবনে খালকানও এ অভিমত প্রকাশ করেছেন (ওয়াকআতুল আয়ান ৩য় খন্ডঃ ২৮৭ পৃষ্ঠা) । হাফেজ ইবনে কাসীর লিখেছেন, হাফেজ ইবনে জুজী এই বিষয়ে একটি স্বতন্ত্র পুস্তক লিখেছেন, যাতে এজিদের উপর পরিস্কারভাবে লানত করাটা শুদ্ধ বলে প্রমাণ করেছেন (আল বেদায়া ওয়ান্নেহায়া ৮ম খন্ডঃ ২২৩ পৃষ্ঠা) । কাজী মুহাম্মদ জাহেদ ফজলে দেওবন্দী লিখেছেন, আমরা এজিদের শানে বরং তার ঈমানেও কোন প্রকারে নিরব ছিলাম না । এজিদ ও তার সাহায্যকারীদের উপর আল্লাহর লানত হোক (আহসানুল ফাওয়ায়েদঃ ১৮১ পৃষ্ঠা) । কাজী সানাউল্লাহ পানিপথী লিখেছেন, এজিদ ও সাথীগণ আল্লাহর নিয়ামতের সাথে কুফরী করেছে । আওলাদে রাসূলের সাথে দুষমনী তাদের লক্ষ্যবস্তু ছিল । হযরত হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে অত্যাচার করে তারা প্রিয়নবীর ইসলামের সাথে কুফরী করেছে । এজিদ হযরত হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদাতের পর কিছু কবিতা আওড়াচ্ছিল, যার শেষ পংক্তি ছিল-

“মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম যা কিছু আমাদের পূর্ব পুরুষদের সাথে বদরের মধ্যে করেছে, যদি আমি আহমদের সন্তানদের থেকে প্রতিশোধ না নেই, তবে আমি জন্দব গোত্রের লোক নই । এজিদ শরাবকে হালাল ঘোষণা দিয়ে বলছে……….

শরাব দ্বীনে আহমদে হারাম হলেও কিছু আসে যায় না, তবে খৃষ্টান ধর্ম অনুযায়ী শরাব হালাল মনে করে পান কর । এজিদীগণ আওলাদে রাসূলদের মিম্বরে দাঁড়িয়ে প্রকাশ্যে গালাগালি করেছে । শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তাদেরকে প্রতিশোধে নিশ্চিহ্ন করেছেন । এখন তাদের চিহ্নও নেই (তফছীরে মাযহাবী, ৫ম খন্ডঃ ২৭১ পৃষ্ঠা) ।

সাহেবে নিবরাজ এজিদকে লানত দেয়া ও কাফের বলাটা শরিয়তদৃষ্টে শুদ্ধ নয় বলে যে মত দিয়েছে, তা সঠিক নয় । কেননা নিবরাজের টীকা লিখক আল্লামা বরখুরদ্বার মুলতানী লিখেছেন, নিবরাজের একথা সম্পূর্ণ বাতিল । কারণ, বড় বড় বরণীয় আলেমগণ এজিদের উপর লানত করেছেন । যেমন ইমাম আহমদ ও তার অনুসারীরা এজিদের নাম ধরে তার উপর অভিশাপ দিয়েছেন । আল্লামা আল কায়াসী ফকীহ শাফেয়ীর মত, ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মালেক, ইমাম শাফেয়ীদের অনুসারীদের অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে, এজিদের নাম ধরে তার উপর লানত করা শরীয়তসম্মত । আল্লামা ইবনে জুজী, আল্লামা তফতজানী, আল্লামা জালাল উদ্দিন সয়ূতী, আল্লামা কাছতোলানী, আল্লামা ওহিদুজ্জামান লা-মাজহাবী এবং অন্যান্য বরেণ্য আলেমদের মতামত এই যে, এজিদের নাম ধরে অভিশষ্পাত করা বৈধ । আল্লামা আলুসি বাগদাদী ও কাজী সানাউল্লাহ পানিপথীসহ অনেকে এজিদকে কাফের বলেছেন । সাহেবে নিবরাজের অভিমত শুদ্ধ নয় । কেননা তিনি তার কিতাবে সিবাবুল মুসলিমে ফুসুকুন ওয়া কিতালুহু কুফরুন এর প্রথম বাক্য উল্লেখ করে দ্বিতীয় বাক্য ওয়া কিতালুহু কুফরুন অর্থাৎ মুসলমানদের হত্যা করা কুফরী এ অংশটুকু বাদ দিয়ে ধৃষ্টতা পোষণ করেছেন । আরেক রেওয়ায়েতে, লতাসুবুল আমওয়াতে উল্লেখ করেছেন, অর্থাৎ মৃতদের গালি দিও না এর ব্যাখ্যায় আল্লামা মূলতানী লিখেছেন, মৃত যদি কাফের হয় বা ফাসেক হয়, তবে মন্দ বলা বৈধ । কেননা এই হাদিছের ব্যাখ্যায় আল্লামা কাসতোলানী লিখেছেন, কাফের ও ফাসেকের দোষত্রুটি প্রকাশ্য বর্ণনা করা বৈধ (নিবরাজ টীকাঃ ২-৩, পৃষ্ঠাঃ ৫৫৫) । এতে প্রমানিত হল, নিবরাজ ভুল লিখেছেন । এমনিভাবে ইমাম গাজ্জালী ইয়াহ উলুমে লিখেছেন যে, তার নিকট প্রমানিত না হলেও অন্য বিজ্ঞ আলেমদের নিকট হযরত হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদাতের উপর এজিদের সন্তুষ্ট হওয়াটা প্রমাণিত এবং এটাই সত্য (নিবরাজের টীকাঃ ২, ৫৫৫ পৃষ্ঠা) । হাফেজ ইবনে কাসীর লিখেছেন, ইবনে জিয়াদ যখন ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এবং তাঁর সাথীদের শহীদ করে, তাঁদের মস্তকসমূহ (হযরত ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর মাথা মুবারকসহ) এজিদের নিকট পৌঁছে দিলে এজিদ এ দৃশ্য দেখে খুশী হয়েছিল এবং ইবনে জিয়াদের দাম বাড়িয়ে দিয়েছিল । হাফেজ ইবনে কাসীর আরো লিখেছেন, এজিদ হযরত হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও তাঁর সাথীদেরকে ওবাইদুল্লাহ ইবনে জিয়াদের হাতে হত্যা করিয়েছিল (আল বেদায়া ওয়ান্নেহায়া ৮ম খন্ডঃ ২২২ পৃষ্ঠা) । এর দ্বারা প্রমাণিত হল যে, এজিদ হযরত হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদাতে শুধুমাত্র সন্তুষ্ট নয়, বরং সে ইবনে জিয়াদকে হযরত হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে হত্যার আদেশও দিয়েছিল । সুতরাং হযরত হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর হত্যার মূলহোতা ছিল এজিদ । অনেক আলেম এজিদকে প্রকাশ্যেত অভিশষ্পাত করেছেন । কেননা সে হযরত ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে হত্যার আদেশ দিয়ে কুফরী করেছে (শরহে আক্বায়েদ কানজুল ফারায়েদঃ ১৫৩ পৃষ্ঠা) । হযরত সৈয়দা সখিনা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেছিলেন, এজিদ কাফের (নিবরাজঃ ৫৫৪ পৃষ্ঠা, ৫ম টীকা) । মোটকথা বড় বড় আলেমগণ যখন এজিদকে কাফের বলেছেন এবং নাম ধরে তার উপর লানত করেছেন । এতে প্রমাণিত হয় যে, ইমাম গাজ্জালীর কথা শুদ্ধ নয় (আল-ইত্তেহাদ, ৬৮ পৃষ্ঠা) । এভাবে আল্লামা শামীও বলেছেন, নাম ধরে এজিদকে লানত দেয়া যাবে না । মৌলানা আব্দুল আজিজ সাহেবও নিবরাছে তার শিশুসুলভ আচরণ করেছেন । মুফতি আহমদ ইয়ার খান সাহেব আল্লামা শামীর অনুকরণে লিখেছেন, এজিদের উপর লানত করা বৈধ নয় । একথাসমূহ ভুল তথ্যের উপর নির্ভরশীল । আল্লামা সাবরাবী ও আল্লামা মূলতানীর কথামত শামী ও মুফতী আহমদ ইয়ার খানের কথা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, অশুদ্ধ ও অলিক । ইমাম গাজ্জালীর কথা এজন্য মানা যায় না যে, তিনি শাফেঈদের একজন বড় আলেম এবং ফকীহ কায়া আল হারাসী বলেছেন, আমরা শাফেঈগণ এজিদকে পরিস্কারভাবে অভিশষ্পাত দিই । এটা ইমাম গাজ্জালীর নিজস্ব মত, শাফেঈদের মত নয় । তাই ইমাম গাজ্জালীর এজিদকে লানত না করার সুপারিশ ধর্তব্য নয় (নিবরাছঃ ৫৫১ পৃষ্ঠা, ৫ম টীকা দ্রষ্টব্য) ।

সূত্রঃ শাহাদাতে কারবালা জালেমদের জিঘাংসা
লেখকঃ শায়খুল হাদিছ, হাফেজ ক্বারী হযরত আল্লামা
সৈয়দ ছাইফুর রহমান নিজামী শাহ ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৫ ভোর ৫:৫৫

নাবিক সিনবাদ বলেছেন: অনেক কিছু জানলাম, ধন্যবাদ।

১১ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ২:০০

রাসেল সরকার বলেছেন: সত্য প্রকাশে উৎসাহিত করার জন্য, অশেষ শুকরিয়া ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.