নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চেতনায় বদর-ওহোদ-কারবালা ।

রাসেল সরকার

প্রিয়নবীর প্রেমহীন আত্মামৃত, সর্ব মিথ্যার অন্ধকারে নিমজ্জিত ।

রাসেল সরকার › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইসলামে পর্দার বিধান কি...???

১২ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ২:১৪

মহান স্রষ্টা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের হুকুমত নর-নারীর দেহের অংশবিশেষ কাপড় দ্বারা আবৃত করার নাম পর্দা । আরবী মূল শব্দ হিজাব ও ছিরত এর মোটামুটি ফার্সী ভাষান্তর হল পর্দা । এ দুটি শব্দের মধ্যে পার্থক্য এতটুকু যে, হিজাব মহান প্রিয়নবীর পূন্যাত্মা স্ত্রীদের জন্য যার অর্থ সম্পূর্ণ দেহ মোবারক ঢেকে রাখা । কাজী আয়াজ বলেছেন, হিজাব শুধু প্রিয়নবীর পবিত্র স্ত্রীদের জন্যই ফরজ । তাদের পবিত্র হাত ও মুখ মুবারক কারো সন্মুখে খোলা যাবে না । এমন কি সাক্ষ্য দেয়ার জন্যও না । এত কারো দ্বিমত নেই । ঢাকা থাকা অবস্থায়ও তাদের পবিত্র দেহ কাঠামো প্রকাশ পাওয়া অবৈধ । কিন্তু বিশেষ প্রয়োজনে (পায়খানা, প্রসাব, ভ্রমণ ইত্যাদি) বাহির হইতে পারেন । পবিত্র কোরআনের নির্দেশ মোতাবেক তাদের কাছে কিছু চাইতে হলে পর্দার আড়াল থেকে চাইতে হত । বাহির হলেও হাত মুখ মোবারক ঢেকে বাহির হতেন এবং এমনভাবে ঢাকতেন যেন গঠনও দেখা না যায় । যেমন:- হাদীছে হাফছাতে আছে, হযরত জয়নব রাদ্বিআল্লাহু আনহা ইন্তেকাল করার পর তার পবিত্র দেহ মোবারকের উপর মোটা কাপড় টাঙ্গিয়ে দেয়া হয় যেন তার শরীর মোবারকের গঠন গোচরীভূত না হয় । এটার নাম হিজাব ( শরহে মুসলিম- নববী ২য় খন্ড) । আবু দাউদ বলেছেন, পূর্ণ শরীর মোবারক ঢেকে রাখা প্রিয় নবীর স্ত্রীগণের জন্য খাছ (বজলুল মজহুদ ৫ম খন্ড ৬০ পৃষ্ঠা) ।
..
ছিতর অর্থ পা মুখমন্ডল ব্যতীত সম্পূর্ণ শরীর ঢেকে রাখা । এটা সাধারণ ঈমানদার সাবালিকা মেয়েদের জন্য পর্দা । সাধারণ মেয়েদের হাত (কব্জি পর্যন্ত), মুখ ও পা পর্দা নয় । এর অর্থ এসবের প্রদর্শনী নয় । শরহে লোবাবে আছে, পর পুরুষের নিকট বিনা প্রয়োজনে মুখমন্ডল প্রদর্শন করাও নিষেধ । তানবীর কিতাবে বর্ণিত হয়েছে, পর পুরুষের মাঝে গোলোযোগের আশংকা হলে মুখমন্ডল খোলা রাখা নিষেধ । পর পুরুষগণ মেয়েদের দেখলে অজু নষ্ট হয় না (ফতোয়ায়ে রজবীয়া ৮ম খন্ড, ৪৪৪ পৃষ্ঠা), বরং প্রয়োজনে দেহের উল্লেখিত অংশ খোলা রেখে (গন্ডগোলের সম্ভাবনা না থাকলে) পর পুরুষের সন্মুখে আসা ঘরের বাহিরে যাওয়া বৈধ । যে সকল মেয়েদের বাচ্চা হবার পর মাসিক বন্ধ হয়ে গেছে, বিয়ের আরজু নেই, তারা মুখের ও গায়ের উপরের চাদর ব্যবহার না করলেও ক্ষতি নেই (তাফসীরে জিয়াউল কোরআন, সুরা নূর-৩য় খন্ড, ৩৪৩ পৃষ্ঠা) । তেমনিভাবে বয়স্কদের নিকট পর্দা প্রয়োজনীয় নয় । কিন্তু প্রয়োজনে বা গোলযোগের কারণে মুখমন্ডল ঢেকে রাখা অপরিহার্য (বয়ানুল কোরআন- সূরা নূরঃ ১৫ পৃষ্ঠা) । শরীয়াতসম্মত পর্দা নারীদের প্রকৃত রক্ষাকবচ, ইহাকাল পরকালের উন্নতির চাবিকাঠি এবং সতীত্ত্বের প্রতীক । পর্দা পালন করে মহিলারা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সাহিত্যিক, আলীমা, মুহাদ্দিছা ও অলি আবদালও হতে পারেন ।
রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম বলেছেন, সর্বদা ৪০ মেয়ে আবদাল থাকবে । কোন মেয়ে আবদাল ইন্তেকাল করলে তার স্থানে অন্য মেয়েকে অধিষ্টিত করা হয় (জামেউস সগীর ১২২ পৃষ্ঠা) । এমন কি মহিলারা রাজনৈতিক কর্মকান্ডেও আধিপাত্য বিস্তার করতে পারে । রাসূলে পাকের পবিত্র স্ত্রীগণ তার সাথে যুদ্ধক্ষেত্রে যেতেন । তার ওফাতের পর হযরত মা আয়েশা সিদ্দিকা রাদ্বিআল্লাহু আনহা উষ্ট্রযুদ্ধে গমন করেছিলেন । রাসূলে পাকের খালা উম্মে হারাম হযরত ওসমান রাদ্বিআল্লাহু আনহুর যুগে সাগরের যুদ্ধে জাহাজে গমন করেছিলেন । হযরত উম্মে ছুলাইম হুনাইনের যুদ্ধে অস্ত্র হাতে নিয়ে ঘুরেছিলেন এবং আনসারী মেয়েদের নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে ছিলেন (মুসলিম শরীফঃ ২য় খন্ড ১১৬ পৃষ্ঠ) ।
শালীন পোষাক নিয়ে এখনও মেয়েরা সফর করছেন । হজ্ব ও ওমরা পালন করছেন । পবিত্র মক্কা ও মদিনা শরীফে ইমামের পিছনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামায়াতে আদায় করছেন । প্রিয় নবীর রওজা পাকের জিয়ারত করছেন । ১৯১৯-১৯২১ সন পর্যন্ত মিশরে যে জাগরণ হয়েছিল, তখন শালীন পোষাক পরে মহিলারা রাস্তায় রাস্তায় মিছিলে অংশগ্রহণ করেছিল । ১৯৩০ সনে শালীন পোষাক পরিহিতা মহিলারা ফিলিস্তানে ইহুদী বসতি স্থাপনার বিরুদ্ধে বৃটিশ সরকারের নিকট প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছিল ।
ইসলামী শালীন পোষাক পরিধান করে শিক্ষক, গবেষক, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, বৈজ্ঞানিক, সাংবাদিক ও রাষ্ট্রীয় কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত আছেন । তারা প্রমাণ করেছেন যে, ইসলামে পর্দা প্রগতি, উন্নতির অন্তরায় নয় বরং সহায়ক ।
পর্দা নারীদের নিরাপত্তা সাধন ও প্রায় গোলোযোগের অবসান ঘটায় । বে পর্দার বিশ্বে আজ মেয়েদের অবস্থা খুবই খারাপ । ফলে পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা সন্তান সন্ততির মাতা পিতার স্নেহ মায়া মমতা থেকে বঞ্চিত হওয়া, মা বোনদের ধর্ষনের সংবাদ, তরুণীর প্রতি এসিড নিক্ষেপে মুখমন্ডল ঝলসে যাওয়া আজ নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার । এছাড়া মেয়েরা মিথ্যা প্রেম ও অপহরণের শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত । রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়ছাল্লাম বলেছেন, বেগানা পুরুষদের নিকট খুব সুসজ্জিত হয়ে নির্লজ্জভাবে রং ঢং চলাফেরা করলে হাশরের দিন ঐ মেয়ে অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে (তিরমিজী শরীফ) ।
প্রয়োজনে মহিলাদের বাহিরে যাওয়া বৈধঃ
গৃহের বাহিরে কাজের ব্যাপারে ইসলাম মহিলাদের নিষেধও করেনি আবার বাধ্যও করেনি । প্রয়োজনে মহিলারা ইসলামী পর্দার সাথে তাদের যোগ্যতা অনুসারে সমাজের বিভিন্ন কর্মকান্ডে এমনকি চাকুরীতে অংশ নিতে পারে । জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বা যদি অন্য কোন পন্থা না থাকে তবে চাকুরী বা কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে বাহির হওয়া বৈধ । প্রয়োজনীয় স্থানসমূহে বাহির হওয়ার শর্ত হচ্ছে প্রয়োজনীয় পর্দা করে বের হওয়া অর্থাৎ শরীরের সৌষ্টব, সৌন্দর্য প্রকাশিত না হওয়া (বাংলা মারেফুল কোআনঃ ১০৭৮ পৃষ্ঠা) । স্ত্রী শরীয়তস্মত চলাফেরা করলে স্বামী অসন্তুষ্ট হওয়া ইসলামসম্মত নয় । হযরত মা আয়েশা ছিদ্দিকা রাদ্বিআল্লাহু আনহা তার পিতা ও হযরত বেলাল রাদ্বিআল্লাহু আনহুকে জ্বারাক্রান্ত অবস্থায় দেখতে গিয়েছিলেন (বোখারী শরীফ, ২য় খন্ডঃ ৮৪৪ পৃষ্ঠা) । মেয়েদের পুরুষ রোগী দেখার অধ্যায় ও তার টিকাতে হযরত ইমাম কাছতোলানী রাদ্বিআল্লাহু আনহু লিখেছেন, গোলযোগ না থাকলে পর্দার সাথে মেয়েরা পুরুষদের অসুস্থ অবস্থায় দেখতে যেতে পারে ।
পৃথিবীর কাজে নারীদের অবদান আছেঃ
পৃথিবীর ছোট বড় কাজে পুরুষদের মত নারীদেরও অবদান আছে যে সকল নারীর মহৎ অবদানে পৃথিবী ধন্য হয়েছে, তারা সবাই ব্যক্তিত্ত্ব সম্পন্না, আত্মসচেতনা, সম্ভ্রমশীলা অনন্যসত্ত্বার অধিকারীনী ছিলেন । যেমন হযরত মা আয়েশা ছিদ্দিকা রাদ্বিআল্লাহু আনহার পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা, বিবি জোবাইদা রাদ্বিআল্লাহু আনহার মক্কা মরুভূমির নহর প্রদান ইত্যাদি । বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের ভাষায় "জগতে যা কিছু মহৎ চির কল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর" । সতের শতাব্দীর প্রায় আরম্ভ থেকে পাশ্চাত্যের অনেক অমুসলমান বৈজ্ঞানিক যখন ইসলামের সত্যকে স্বীকার না করে উপায় ছিলনা, ঠিক তখনই আঠার শতাব্দীর মধ্যভাগে অনেক মূর্খ আলেম ইংরেজি ভাষা শিক্ষা হারাম ঘোষণা দিয়ে একদিকে যেমন মুসলমানদের বহু পিছিয়ে দিয়েছিলেন, ঠিক তেমনি মুসলিম মহিলাদের পর্দার সঠিক রূপরেখা উপস্থাপনায় ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছিলেন । সাধারণ মহিলাদের ছিরত এর স্থলে হিজাব প্রয়োগ করে মহিলাদেরকে ঘর থেকে বের হওয়ার ব্যাপারে কঠোর বিধিনিষেধ প্রয়োগ করে । তারা এমন ফতোয়াও দেয় বাহিরের লোক মহিলাদের আওয়াজ শুনলেও জাহান্নামে যেতে হবে । মেয়েরা স্কুল-কলেজে পড়তে পারবে না । তাদের মুরীদ হওয়া যাবেনা যদিও মওলানা রশিদ আহম্মদ গংগুহীর প্রথম মুরীদ একজন স্ত্রীলোক ।
মেয়েদের জন্য লেখাপড়া করা এবং মুরীদ হওয়া বৈধঃ
প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর উপর প্রয়োজনীয় বিদ্যা অন্বেষণ করা ফরজ । তাই পুরুষদের মত মেয়েদেরও শরীয়ত ও তরীকতের প্রয়োজনীয় বিদ্যা আহরণের জন্য পর্দার সাথে পরহেজগার আলেম ও পীরদের নিকট যাওয়া সম্পূর্ণ বৈধ । মৌঃ রশিদ আহম্মদ গংগুহীর প্রথত মুরীদ যার ঘরে হাজী এমদাদ উল্লাহ সাহেব মৌঃ রশিদ আহম্মদ গংগুহীকে নিয়ে তার সামনে ঐ স্ত্রীলোকদেরকে মুরীদ করালেন (ইমদাদুল মুশতাক ২৪ পৃষ্ঠা, তাজকিরাতুল রশিদ, ১ম খন্ডঃ ৫৩ পৃষ্ঠা) । মুরীদ হলেও মেয়েদের কোন পরহেজগার আলেম ও পীরের দরবারে মাছআলা মাছায়েল জিজ্ঞাসা করার জন্যও যাওয়া হারাম বলে ফতোয়া দেয়া হয়েছে (ফতোয়ায়ে রশিদীয়াঃ ২৯১ পৃষ্ঠ) । মোটকথা, পীরের সামনে মুরীদের কোন মতেই আসা নাজায়েজ । এটা মুফতী রশিদ আহম্মদ গংগুহীর নিজস্ব মত । কারণ মুফতী শফী সাহেবের মতে, যদি প্রয়োজনে মেয়েদের চাকুরীতে পর্দার সাথে যাওয়া বৈধ হয়, তবে ইলমে দ্বীন হাছিল করার জন্য পর্দার সাথে বয়স্ক নেকপীরের নিকট যেতে পারবেনা কেন ? নিশ্চয়ই পারবে । মৌঃ রশিদ আহম্মদ গংগুহী তার ফতোয়াতে লিখেছেন চাচাত ভাই, জেঠাত ভাই, ভগ্নিপতি, দেবর (যা মৃত্যুর মত) ইত্যাদির সামনে ভয় না থাকলে মুখমন্ডল খোলা রাখা যায় । এতে কোন অসুবিধা নেই । আমাদের দেশের মেয়েরা নিজের পীরকে পিতা থেকেও বেশী মর্যাদা দিয়ে থাকে- এটাই শরীয়াত । পীরের সামনে শালীন হয়ে আসলে কেন নাজায়েজ হবে ? মেয়ে মুরীদ বে- পর্দায় পীরের সামনে আসা অবৈধ (ফতোয়ায়ে রজবীয়া ৫ম খন্ডঃ ২২৬ পৃষ্ঠা) । প্রয়োজনে পর্দার সাথে আসলে অবৈধ হবে না । তাই ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে শালীনতা বজায় রেখে যুগে যুগে বড় বড় অলির দরবারে যাওয়া আসা করতেন এবং তাদের মুরীদও হতেন । যেমন, হযরত রাবেয়া বছরী রাদ্বিআল্লাহু আনহা হযরত হাছান বসরী রাদ্বিআল্লাহু আনহুর নিকট বহু সময় অতিবাহিত করেন- ইমাম আহমদ রেজা খান রাহমাতুল্লাহে আলাইহিকে প্রশ্ন করা হল যে, যদি কেউ স্বীয় পীর ও মুর্শিদের পায়ে তার বুজুর্গীর কারণে চুমু খেয়ে নেয় তবে জায়েজ হবে কিনা ? উত্তরে তিনি বলেন, জায়েজ হবে । আবু দাউদ ইত্যাদি বহু হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণীত (ফতোয়ায়ে রজবীয়া, ৯ম খন্ড ঃ ১০২ পৃষ্ঠা) । আমলদার আলেম কামেল অলীর মুরীদ হলে তার থেকে ধর্মীয় জ্ঞান ও মারেফাত অর্জনের জন্য তার নিকট যেতে স্বামীর আদেশের প্রয়োজন হয় না । স্বামী নিষেধ করলেও তা পালন করা তার জন্য অপরিহার্য নয়, যদি হকের মধ্যে কোন প্রকার ত্রুটি না হয় । যেমন, বাহার, নহর, দ্বোর ইত্যাদি কিতাবে এটা বর্ণিত হয়েছে । কিন্তু খুব বেশী প্রয়োজনীয় নয়, এমন মাছআলা শিক্ষার জন্য স্বামীর আদেশ ছাড়া পীরের বাড়ী যাওয়া যাবে না । স্বামীর মাধ্যমে শিখতে পারলে তার আদেশ ছাড়া যেতে পারবে না । বরং পর পুরুষের নিকট শরয়ী প্রয়োজন ব্যতীত স্বামীর আদেশও যাওয়া যাবে না (ফতোয়ায়ে রজবীয়া, ৯ম খন্ডঃ ১০২ পৃষ্ঠা) ।
তথাকথিত মৌলভীদের স্ব-বিরোধীতার কারণে অমুসলিমগণ ইসলামে অনুপ্রবেশের সুযোগ পেয়েছে । কিছু মৌলভীর মনগড়া ফতোয়ার স্ব-বিরোধীতার কারণে পাশ্চাত্যের তথাকথিত প্রগতিশীল চিন্তার ধারক বুদ্ধিজীবিরা আমাদের নতুন প্রজন্মকে অর্বাচীনের মত ক্ষেপিয়ে তুলেছে । বর্তমানে এইডস এর মত মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়েও তারা ইসলামী পর্দার বৈজ্ঞানিক দিকটা উপলব্দি করতে পারল না । কিছু নারী পুরুষের প্রত্যাশা পূরণের সামগ্রী ও বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনের পণ্যে পরিণত হয়েছে । এমনকি নারীজাতির নিরাপত্তা বিলু্প্ত করার জন্য তাদেরকে অশ্লীলভাবে টিভিপর্দায় উপস্থাপনা করা হচ্ছে । নারী মুক্তির নামে নারীদের উপর নির্যাতন নিপীড়ন চালানো হচ্ছে । নারীদের শুধু ভোগ বিলাসের সামগ্রীতে পরিণত করা হচ্ছে । কিন্তু তরুণী এতে সাময়িকভাবে আনন্দিত হলেও তারা ব্যক্তিগত ও সামাজিক উভয় দিকেই ক্ষিতগ্রস্ত হচ্ছে, যা বলার অপেক্ষা রাখেনা ।
পর্দার তাৎপর্যঃ
পর্দার মূল উদ্দেশ্য হল পরিবার ও সমাজকে ব্যাভিচার ও অশ্লীলতা হতে রক্ষা করা । তাই কারো কামভাব উদ্রেক হবার আশংকা থাকলে তার জন্য অন্য মেয়েতো দূরের কথা, আপনা মা-বোনদের দিকে দেখাও সম্পূর্ণ হারাম । ঔরশজাত সন্তান, অন্য স্ত্রীর দুগ্ধপান, বৈবাহিক সম্পর্ক বা জিনার দ্বারা সন্তান ইত্যাদি যাদের সাথে বিবাহ হারাম, কামভাব জাগ্রত হবার সম্ভাবনা দেখা দিলে তাদের ছোয়া, দেখাও হারাম । সুন্দর ১৩/১৪ বছরের কম বয়সের ছেলের প্রতি কুদৃষ্টি দেয়াও হারাম (ফতোয়ায়ে আলমগিরী, ৫ম খন্ডঃ ৩৬৫ পৃষ্ঠা) ।
পর্দার সীমাঃ
পুরুষের জন্য তার স্ত্রী ও দাসী ছাড়া কারো প্রতি কাম দৃষ্টি ও স্পর্শ করা সম্পূর্ণরূপে হারাম । কামভাব জাগ্রত হবার সম্ভবনা না থাকলে মুখমন্ডল, কব্জিসহ দু'হাত, দু'পা দেখা বৈধ । অর্থাৎ এসব পর্দার অন্তভূক্ত নয় বলে বার বার দৃষ্টি পড়লেও পাপ হবে না । ছেলেরা বা মেয়েরা ছেলেদের নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত ব্যতীত বাকী সব দেহ দেখতে পারে । মেয়েরা মেয়েদের নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত ব্যতিত বাকী সব শরীর দেখতে ও স্পর্শ করতে পারে । কিন্তু পুরুষেরা মেয়েদের স্পর্শ করতে পারবে না । অবশ্য বয়স্ক স্ত্রীলোকদের সাথে করমর্দন করা জায়েজ । বুড়ীদের জন্য যাদের সাথে মিশলে গোলোযোগের সম্ভবনা নেই, তাদের মুখ খোলা রাখা করমর্দন করা, স্পর্শ করায় ক্ষতি নেই (ফতোয়ায়ে রজবীয়া, ৯ম খন্ডঃ ১০২পৃষ্ঠা) । এভাবে বুড়ীদের গায়ে মোটা কাপড় থাকলে তাদের সাথে কোলাকুলিও বৈধ (ফতোয়ায়ে আমগিরী, ৫ম খন্ডঃ ৩৬৫ পৃষ্ঠা) । স্ত্রী-পুরুষ উভয়ে খুব বয়স্ক হলে তারা মোসাফাহ বা করমর্দন করতে পারে (ক্ষতির সম্ভবনা না থাকার কারণে) । বর্ণিত আছে যে, রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম বয়স্ক মহিলাদের সাথে করমর্দন করতেন (বাদআয়ে, ৫ম খন্ডঃ ১২৩ পৃষ্ঠা, জামেউস ছগীরঃ ১১৮ পৃষ্ঠা) । একাও তাদের সাথে থাকা ব্যয় (বাহারে শরীয়ত ১৬ খন্ডঃ ৭৮ পৃষ্ঠা) । রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম বায়াত করার সময় কোন মেয়ের হাত স্পর্শ করেননি (জামেউস ছগীরঃ ৩১৩ পৃষ্ঠা) । মেয়েদের মুখমন্ডল, দু'পা এবং দু'হাতের কব্জি পর্যন্ত পর্দা নয় । কেননা সাধারণ মেয়েরা বেচাকেনা, লেনদেন ইত্যাদি স্বাভাবিক কাজকর্মে সাধারণত হাত-পা, মুখমন্ডল খোলা রাখা ব্যতীত চলা সম্ভব নয় (বাদআয়ে ৫ম খন্ড ১২১ পৃষ্ঠ) । যুবতী মেয়েদের মুখমন্ডল বিভিন্ন আক্রমনাত্মক ভয়ের কারণে বা গোলোযোগের আশংকা থাকলে খোলা না রাখাই উত্তম । যদিও খোলা শরীয়ত অনুযায়ী বৈধ, তাদের স্পর্শ করা অবৈধ, বয়স্কদের ব্যাপার স্বতন্ত্র । অন্যায়ের সম্ভবনা না থাকলে তার হাত স্পর্শ করা ও করমর্দন করা বৈধ (শামী ১ম খন্ডঃ ৩৭৭ পৃষ্ঠা) । খারাপীর সম্ভবনা না থাকার কারণে বয়স্ক মহিলাদের সাথে মুছাফাহ বা স্পর্শ করা বৈধ । হযরত আবু বক্কর ছিদ্দীক রাদ্বিআল্লাহু আনহু বয়স্ক মহিলাদের সাথে করমর্দন করতেন । বয়স্ক মহিলাদের সেবা করার প্রয়োজনে তাদের শরীর স্পর্শ করাও অবৈধ নয়, তবে পরস্ত্রীর প্রতি কামভাব নিয়ে ধরা ছোয়া সম্পূর্ণ নিষেধ । প্রয়োজনে সৎ, সাধু, ডাক্তার, কবিরাজ রোগীনির শরীরের কোন অংশ দেখতে দেখতে পারে, যদি চিকিৎসার জন্য তা প্রয়োজনীয় হয় । মেয়েদের সৎ পরহেজগার ও নেককার ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত । যদি কোন মেয়ে পানিতে ডুবতে থাকে বা শরীরে আগুন লাগে, তাকে বাচানোর জন্য তাকে স্পর্শ, তার শরীরের কোন স্থানে হাত লাগান কিম্বা তার প্রতি তাকান অবৈধ নয় (তফসীরে জিয়াউল কোআন-সূরা নূর, ৩য় খন্ডঃ ৩১৬ পৃষ্ঠা) । অশালীনতার আশংকা থাকলে স্পর্শ ও করমর্দন জায়েয নেই । মোট কথা স্পর্শ করার জন্য নারী পুরুষ উভয়ে কামভাবহীন ও বয়স্ক হতে হবে । অন্য আর এক ফতওয়া মতে দুজনের একজন কামভাবহীন বয়স্ক হলেই স্পর্শ করা বৈধ হবে । কেননা উভয়ের একজন কামভাবহীন হলে স্পর্শ দ্বারা ক্ষতির আশংকা নেই । যেমন দুজনের মধ্যে একজন অপ্রাপ্ত বয়স্ক হলে গোলযোগ হয় না, তাই নারী পুরুষ উভয়ের একজন নাবালেগ বা কামভাবহীন হলে স্পর্শ ও মুছাফাহ জায়েজ (বাহরুর রায়েক, ৮ম খন্ডঃ ১৯২ পৃষ্ঠ) । কিতাবের সঠিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মেয়েদের কণ্ঠস্বর পর্দা নয় । তবে তার অর্থ এই নয় যে, চিৎকার করে গান গাইবে ও বেপরোয়া শব্দ করে চলবে । বরং অর্থ হল প্রয়োজনে মেয়েরা বাইরের লোকের সাথে কথা বলতে পারবে, তবে শালীনতা বজায় রেখে চলবে । প্রয়োজনে শালীন পোষাক নিয়ে মাসআলা মাসায়েল জানার জন্য কোন ছুন্নী আলেম ও পীর মাশায়েখ এর নিকট গিয়ে জানতে পারে (ফতওয়ায়ে রজবীয়া, ৯ম খন্ড, ১০২ পৃষ্ঠা) ।
প্রয়োজনে বয়স্কদের মেয়েরা সেবা করতে পারে ঃ
হযরত আবদুল্লাহ বিন জোবাইর রাদ্বিআল্লাহু আনহু অসুস্থতার কারণে খিদমতের জন্য একজন বয়স্কা স্ত্রী লোককে টাকা দিয়ে রেখেছিলেন । সেউ স্ত্রী লোক তার পা মোবারক টিপে দিতেন এবং মাথার খুশকী্ ও উকুন বেছে দিতেন (হিদায়া ৪র্থ খন্ডঃ ৪৪৩ পৃষ্ঠা) । শরীয়ত মতে, মেয়েদের শরীরের যে অংশ দেখা জায়েজ; তা স্পর্শ করাও জায়েজ (বাহারে শরীয়ত, ১৬ খন্ডঃ ৭৫ পৃষ্ঠা) । অনাবৃত পা টিপে দেওয়াও বৈধ (আলমগীর ৩য় খন্ড ৩৬৪ পৃষ্ঠা) । বয়স্কা স্ত্রী লোকদের সাথে করমর্দনে কোন আপত্তি নাই এবং বয়স্কা স্ত্রী লোক বয়স্ক পুরুষের সেবা করবে, এতেও অসুবিধা নেই (আলমগীর ৩য় খন্ডঃ ৪৪৪পৃষ্ঠা) । যে মেয়ের কামভাব হয় নাই, বয়স ৯ বছর থেকে কম অথবা দুর্বল বুড়ী দেখতে সুন্দর নয় এমন মেয়েদের দ্বারা বৈধ সেবা গ্রহণ করা জায়েজ, যদি নির্জনে এই সেবা গ্রহণ করা হয় তাও হারাম নয় । বর্ণিত এ দুই প্রকারের মহিলা ব্যতীত অঘটনের সম্ভবনা থাকায় নির্জনতায় অন্য মেয়ের সেবা গ্রহণ করা হারাম । যদি নির্জনতা ব্যতীত রুটি পাকান ইত্যাদি প্রয়োজনীয় কাজে নিয়োজিত থাকে তবে অসুবিধা নেই, কিন্তু নির্জনতায় পা টিপা, রঙ্গালাপ করা হারাম (ফতওয়ায়ে রেজবিয়া-৯ম খন্ডঃ ১৩৮ পৃষ্ঠা) । নেককার বয়স্ক পুরুষের হাত, পা, মাথা প্রয়োজন বশতঃ টিপে দেওয়া বয়স্ক মহিলাদের জন্য অন্যায়ের ভয় না থাকায় নিঃসন্দেহে জায়েজ । বাহারে শরীয়তে যে গুনাহের কাজ বলা হয়েছে, তা তার নিজস্ব মত । পীর ও মুরীদ বা অন্য কেউ উভয়ে যদি যুবক- যুবতী হয়; তবে গুনাহের কাজ হবে, অন্যথায় নয় । কেননা মাওলানা আমজাদ সাহেব বয়স্কা স্ত্রী লোক ও বয়স্ক পুরুষের করমর্দন জায়েজ বলেছেন । কোরআনে পাকের আয়াত "আবিত্তা বেইনা গাইরী উলিল ইরাবাতে মিনার রিজাল" এর তফছিরে রুহুল মা আনীতে লিখা হয়েছে, যে সমস্ত খুব বয়স্কলোক যাদের কামভাব নেই, প্রয়োজনে তাদের সাথে মেলামেশা করতে কোন আপত্তি নেই (রুহুল মাআনী, ৯ম খন্ডঃ ১৪৪ পৃষ্ঠা) । যে সমস্ত লোকের নারীর প্রতি কোন আগ্রহ নেই, প্রয়োজনে তাদের কাছে যাওয়া জায়েজ (মা'আরিফ: ৯৪ পৃষ্ঠা) এ আয়াতে সৎ বয়স্কদের বুঝানো হয়েছে । পবিত্র কোরআনে আলো উল্লেখিত আছে, ঈমানদার বয়স্ক সৎলোকদের কাছে প্রয়োজনে মেয়েরা আসতে পারে (কাশশাফ- সূরা নূরঃ ৯১ পৃষ্ঠা) । যে সমস্ত পুরুষের মেয়েদের প্রতি আগ্রহ নেই (জাচ্ছাছ) যেমন- নপুংশক (পুরুষত্ত্ব হীন) ইত্যাদি যাদের মেয়েদের প্রয়োজন নেই; তাদের কাছে প্রয়োজনবোধে যেতে কোন অসুবিধা নেই (তফসীরে জিয়াউল কোরআন সূরা নূর, ৩য় খন্ড: ৩১৯ পৃষ্ঠ) । সাধারণ মেয়েদের মুখমন্ডল পর্দা নয় (বোখারী শরীফের টিকা ২য় খন্ডঃ ৭২০ পৃষ্ঠা, ফতহুল বারী ১১ খন্ডঃ ৮ পৃষ্ঠা) । সাধারণ মেয়েদের মুখ মন্ডল, দু'হাত ও দু'পা কে পর্দার বাহিরে রাখা হয়েছে এর অর্থ এসবের প্রদর্শনী নয়, বরং এগুলো সরাসরি পর্দার আওতায় নয়, কিন্তু গোলোযোগের সম্ভবনা থাকলে পরোক্ষভাবে তা ঢেকে রাখা কর্তব্য । অন্যথায় কোন স্ত্রীলোক যার বিয়ের কোন আশা নেই, তিনি অতিরিক্ত পোষাক দ্বারা মুখ ইত্যাদি ঢেকে না রাখলেও পাপ হবে না (বয়ানুল কোরআন- সূরা নূরঃ ২৯ পৃষ্ঠ, তফসিরে জিয়াউল কোআন- সূরা নূর ৩য় খন্ডঃ ৩৪৩ পৃষ্ঠা) । হানেফী, শাফেয়ী, মালেকী এবং অধিকাংশ হাম্বলীগণের মতে বিয়ে করার জন্য ছেলে মেয়ে একে অপরকে দেখতে পারে । মনে কামভাব হলেও দেখাটা বৈধ । কেননা মুখমন্ডল, হাত (কব্জি পর্যন্ত) ও পা পর্দার আওতার বাইরে (শরহে বেকায়- ১ম খন্ডঃ ১৫৬ পৃষ্ঠা) । হাতের উপরিভাগও নির্ভরযোগ্য ফতওয়া মতে পর্দা নয় (কাজী খান) । ইমাম আবু ইউছুফের ফতওয়া মতে মেয়েদের বাহুর দিক দিয়ে তাকান অবৈধ (হিদায়া ৪র্থ খন্ডঃ ৪৪৩ পৃষ্ঠা ) । অর্থাৎ যদি যুবতী হয় তবে কাম দৃষ্টি করা অবৈধ । বয়স্কদের প্রতি কামদৃষ্টি হয় না বলে তাদের বাহুর দিকে তাকান অবৈধ নয় । রোগীনি, মৃত ধৌয়ানী ও ধাত্রী বেগানা পুরুষের নিকট যেতে পারে (মূল ফুজ্জাত আহমদ রেজা খানা রহমতুল্লাহ আলাইহে ১ম খন্ডঃ ৮০ পৃষ্ঠ) । উপরোক্ত প্রমাণাদির পরিপ্রেক্ষিতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, মেয়েদের পর্দার সাথে প্রয়োজনে হাট বাজার করা বৈধ । বিদ্যাশিক্ষার জন্য শালীন পোষাক পরিধান করে বিদ্যালয়ে যাওয়া বৈধ । বয়স্ক পুরুষ বা মহিলার সাথে করমর্দন বৈধ; এক রেওয়ায়েত মতে গোলোযোগের সম্ভবনা না থাকলে যে কোন একজন বয়স্ক হলেও বৈধ । প্রয়োজনে মেয়েদের দ্বারা বয়স্কদের সেবা করা, প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে মেয়েদের ঘরের বাহিরে চাকুরী করাও বৈধ । পরস্পর বিয়ে হতে পারে; এমন যুবক যুবতীর অবাধ মেলামেশা অবৈধ ।
মেয়েদের কবর জিয়ারতে যাওয়া বৈধঃ
ফতোয়ায়ে রশিদীয়াতে মৌলবী রশিদ আহম্মদ গংগুহী লিখেছেন, মেয়েদের কবর জিয়ারতে যাবার ব্যাপারে আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে । প্রায় আলেমগণ গোলযোগের কারণে নিষেধ করেন । কিন্তু যদি গোলোযোগ না হয়; তবে অধিকাংশ আলেমদের মতে মেয়েদের কবর জিয়ারতে যাওয়া বৈধ । মক্কা শরীফ ও মদিনা শরীফে লোকদের আমল বৈধতার উপর আছে (ফতোয়ায়ে রশিদীয়ঃ ২৯১ পৃষ্ঠা ) । আমাদের হানাফী সঠিক মাজহাব ইমাম করুখী ইত্যাদির মতে কবর জিয়ারত নারী পুরুষ উভয়ের জন্য নির্দেশিত (ফতোয়ায়ে আফ্রিকী ইমাম আহমদ রেজা খানঃ ৬৮ পৃষ্ঠা) । কবর জিয়ারত কর-এই আদেশ দ্বারা রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম মোমেন মোমেনাত (নারী পুরুষ) উভয়কে অনুমতি দিয়েছেন (মিশকাত কবর জিয়ারতের অধ্যায়; ১৫৪ পৃষ্ঠা ) । রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলেন প্রাথমিক অবস্থায়, পরবর্তীতে আবার জিয়ারত করার অনুমতি দিয়েছেন । বর্তমানে মহিলারা নিষেধের আওতায় আছে কিনা; তা নিয়ে আলেমদের মাঝে মতভেদ রয়েছে । তবে বিশুদ্ধ মতে, মহিলারা আদেশের আওতায় এসেছে । অর্থাৎ মহিলাদের জন্য কবর জিয়ারত করা বৈধ (বাহারুর রায়েক) । কিন্তু যুবতী মেয়েদের নিষেধ রয়েছে, যেমন তাদের জন্য মসজিদে নামাজ পড়তে যাওয়া নিষেধ । মনে রাখতে হবে, কান্নাকাটি করার জন্য মহিলাদের কবরস্থানে যাওয়া হারাম । আবার আমাদের মহান প্রিয়নবী রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম অধিক কবর জিয়ারত কারীনিদের অভিশম্পাত দিয়েছেন, যদিও এই হাদীছ শরীফটি মওজু অর্থাৎ দুর্বল (ফতোয়ায়ে আফ্রিকীঃ ৬৬ পৃষ্ঠা) ।
যুবতীদের রাতে বাহিরে যাওয়া মোটেই উচিত নয় । প্রয়োজনবোধে মেয়েদের ঘর থেকে বের হওয়ার অনুমতি দেওয়া আছে । পর্দার আয়াত নাযিল হওয়ার পরও রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম এর আমলও স্বাক্ষ্য প্রদান করে যে, প্রয়োজনীয় স্থলে মেয়েদের ঘর থেকে বের হওয়ার অনুমতি রয়েছে । যেমন হজ্ব ও ওমরার সময় প্রিয়নবীর সাথে তার পবিত্র বিবিগণের গমনের কথা বহু বিশুদ্ধ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণীত রয়েছে । অনূরূপভাবে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম এর সাথে তার পূণ্যবতী স্ত্রীগণের যুদ্ধে গমন করাও প্রমাণীত হয়েছে । আবার অনেক রেওয়ায়েতে এ প্রমাণও পাওয়া যায় যে, নবীজির পূণ্যবতী স্ত্রীগণ পিতামাতা ও অন্যান্য মুহরিম আত্মীয়দের সাথে স্বক্ষাতের উদ্দেশ্যে বাড়ী থেকে বের হতেন, শোক অনুষ্ঠান প্রভৃতিতে অংশগ্রহণ করতেন । এছাড়া প্রিয়নবীর সাথে ও তাঁর সময়ে ঘটেনি; বরং রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম এর ওফাতের পরও হযরত ছাওদা রাদ্বিআল্লাহু আনহা ও জয়নব রাদ্বিআল্লাহু আনহা ব্যতীত অন্যান্য স্ত্রীগণের হজ্ব ও ওমরার উদ্দেশ্যে গমন করার প্রমাণ রয়েছে । আর এ সম্পর্কে সাহাবায়ে কেরামও কোন আপত্তি তোলেননি । সারকথা এই যে, কোরআনে পাকের ইঙ্গিত, নবীজির আমল ও সাহাবায়ে কেরামগণের ইজমা অনুসারে প্রয়োজন স্থলসমূহ "ওয়াজকুরনা ফী বুযুতীকুন্ন" আয়াতের মর্মের অন্তর্গত নয়; হজ্ব, ওমরাও যার অর্ন্তভূক্ত । আর স্বাভাবিক প্রয়োজনাদি, নিজের পিতামাতা, মোহরেম আত্মীয়দের সহিত স্বাক্ষাত, অসুস্থ থাকা অবস্থায় সেবা- শুশ্রুষা অনূরূপভাবে যদি কারো জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রয়োজনীয় সামান বা অন্য কোন পন্থা না থাকে তবে চাকুরী ও কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে বের হওয়াও এই আয়াতের আওতাভূক্ত । প্রয়োজনস্থলসমূহে বের হওয়ার শর্ত হল অঙ্গসৌষ্ঠব ও সৌন্দর্য্য প্রদর্শন করে বের না হওয়া । বরং বোরখা বা চাদর পরে বের হওয়া (তাফছীরে মারেফুল কোরআনঃ ১০৭৮ পৃষ্ঠ) । প্রিয়নবী বলেছেন, যে সৎ থাকতে চায় মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাকে সৎ রাখেন । আর যে অন্য কারো মুখাপেক্ষী হয় না মহান আল্লাহকে তার জন্য যথেষ্ট মনে করেন তিনি তার জন্য যথেষ্ট হন (আহমেদ নিছায়ী) ।
সূত্রঃ জালেমের জিঘাংসা, অলি-সাথী কারবালা সমাচার ।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৫ ভোর ৫:৩০

নতুন বলেছেন: ইমাম আহমদ রেজা খান রাহমাতুল্লাহে আলাইহিকে প্রশ্ন করা হল যে, যদি কেউ স্বীয় পীর ও মুর্শিদের পায়ে তার বুজুর্গীর কারণে চুমু খেয়ে নেয় তবে জায়েজ হবে কিনা ? উত্তরে তিনি বলেন, জায়েজ হবে । আবু দাউদ ইত্যাদি বহু হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণীত (ফতোয়ায়ে রজবীয়া, ৯ম খন্ড ঃ ১০২ পৃষ্ঠা)


পীর ও মুর্শিদের পায়ে তার বুজুর্গীর কারণে চুমু খেয়ে নেয় তবে জায়েজ হবে কিনা ? উত্তরে তিনি বলেন, জায়েজ হবে । :|


আমলদার আলেম কামেল অলীর মুরীদ হলে তার থেকে ধর্মীয় জ্ঞান ও মারেফাত অর্জনের জন্য তার নিকট যেতে স্বামীর আদেশের প্রয়োজন হয় না । স্বামী নিষেধ করলেও তা পালন করা তার জন্য অপরিহার্য নয়, যদি হকের মধ্যে কোন প্রকার ত্রুটি না হয় । যেমন, বাহার, নহর, দ্বোর ইত্যাদি কিতাবে এটা বর্ণিত হয়েছে । কিন্তু খুব বেশী প্রয়োজনীয় নয়, এমন মাছআলা শিক্ষার জন্য স্বামীর আদেশ ছাড়া পীরের বাড়ী যাওয়া যাবে না । স্বামীর মাধ্যমে শিখতে পারলে তার আদেশ ছাড়া যেতে পারবে না । বরং পর পুরুষের নিকট শরয়ী প্রয়োজন ব্যতীত স্বামীর আদেশও যাওয়া যাবে না (ফতোয়ায়ে রজবীয়া, ৯ম খন্ডঃ ১০২ পৃষ্ঠা) ।

স্বামীর আদেশের প্রয়োজন হয় না । স্বামী নিষেধ করলেও তা পালন করা তার জন্য অপরিহার্য নয়, যদি হকের মধ্যে কোন প্রকার ত্রুটি না হয় । :|

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:২৭

রাসেল সরকার বলেছেন: সন্দেহের কোন অবকাশ নেই ....... । নিজকে জানার জন্য, মহান প্রিয়নবীর প্রেম ভিত্তিক জীবন গড়ার জন্য, ঈমান-দ্বীনকে বুঝার জন্য....কেউ পরামর্শ দিলে ভাল কিন্তু নিষেধ করলেও তা জানতে হবে, মানতে হবে ।

২| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:০৮

এ আর ১৫ বলেছেন: পুরুষের জন্য তার স্ত্রী ও দাসী ছাড়া কারো প্রতি কাম দৃষ্টি ও স্পর্শ করা সম্পূর্ণরূপে হারাম------ !!! ?????? একটু ব্যাখা করুন !!! সৌদি আরবে মেইডদের সাথে এই ভাবে যৌন হয়রানির খবর বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে ।

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:২০

রাসেল সরকার বলেছেন: সৌদী আরব নামে কোন রাষ্ট্র নেই ....... । কেননা ১৯৩২ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর ইবনে সৌদের অনুসারীরা একটা গণহত্যা, রক্তপাত, ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে এবং সাম্রাজ্যবাদী বৃটেনের সহযোগীতায় "পবিত্র আল-আরব" এর নাম পরিবর্তন করে "সৌদী আরব" নাম করণ করে, শান্তি, মুক্তি ও মানবতার ধর্ম ইসলামকে সবদিক থেকে বিকৃত করে ফেরাউনের মত ত্রাসের রাজত্ত্ব কায়েম করে ।

পবিত্র হাদিছ শরীফ থেকে যা জানা যায়, .... কারো যদি দাস বা দাসীর প্রয়োজন হয়, সেই ক্ষেত্রে দাস বা দাসীর সমস্ত ভরণ পোষণের দায়-দায়িত্ত্ব গ্রহণ করতে হবে । দাস বা দাসীর উপর কোন প্রকার অমানবিক আচরণ করা যাবে না ...................। আরো বিস্তারিত জানার জন্য বোখারী শরীফ দেখার অনুরোধ রইল ।

৩| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:০১

নতুন বলেছেন: ইমাম আহমদ রেজা খান রাহমাতুল্লাহে আলাইহিকে প্রশ্ন করা হল যে, যদি কেউ স্বীয় পীর ও মুর্শিদের পায়ে তার বুজুর্গীর কারণে চুমু খেয়ে নেয় তবে জায়েজ হবে কিনা ? উত্তরে তিনি বলেন, জায়েজ হবে । আবু দাউদ ইত্যাদি বহু হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণীত (ফতোয়ায়ে রজবীয়া, ৯ম খন্ড ঃ ১০২ পৃষ্ঠা)


পীর ও মুর্শিদের পায়ে তার বুজুর্গীর কারণে চুমু খেয়ে নেয় তবে জায়েজ হবে কিনা ? উত্তরে তিনি বলেন, জায়েজ হবে ।

মানুষের পায়ে চুমু দেওয়া জায়েজ??

১৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১:৪৬

রাসেল সরকার বলেছেন: মেওয়াতী তবলীগ জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা ইলিয়াছ মেওয়াতীর পীর "মৌঃ রশিদ আহম্মদ গংগুহী" তার স্বীয় কিতাব ফতোয়ায়ে রশিদীয়াতে বলেন, পরহেজগারীর কারণে কোন ব্যক্তির হাতে পায়ে চুমু দেওয়া জায়েজ ।

৪| ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৪৪

নতুন বলেছেন: কেউ রাসুল সা: এর পায়ে চুমু খেয়েছিলো কিনা?

তারচেয়ে পরহেজগার মানুষ তো এখন নাই...

১৬ ই জুন, ২০১৬ ভোর ৪:০২

রাসেল সরকার বলেছেন: পরহেজগারীর কারণে যে কোনো মানুষের হাতে পায়ে চুমু দেওয়া জায়েজ ।

৫| ২০ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ২:২৩

সোহাগ আহসান বলেছেন: হুম

২০ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ৩:১০

রাসেল সরকার বলেছেন: হ্যাঁ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.