নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চেতনায় বদর-ওহোদ-কারবালা ।

রাসেল সরকার

প্রিয়নবীর প্রেমহীন আত্মামৃত, সর্ব মিথ্যার অন্ধকারে নিমজ্জিত ।

রাসেল সরকার › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাত মাসের গর্ভ, তবুও খদ্দেরের আশায় রাস্তায়

২৭ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১:১৩



স্বাধীনতার সাজ। রাজধানী বিজয় সরণি সিগনালের রূপ যেন জ্বলজ্বল করছে। রূপ ফুটেছে ওপারের সিগনালেও। লাল-নীল রঙের ঝাড়বাতিগুলো যেন এ আনন্দের রাতের অতন্ত্র প্রহরী হয়ে আছে। সড়কের দু’ধারে সারি সারি লাল-সবুজের পতাকা পতপত করে উড়ছে।
মধ্য রাতের সড়ক। সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে খানিকটা বিশ্রাম নেয়ার ভঙ্গিতে নিঃশাস ফেলছে। তবে সে নিঃশ্বাস ফের লেপ্টে দিয়ে যাচ্ছে রাতের যন্ত্রগুলো। তেমনি একটি যন্ত্র থেকে (প্রাইভেটকার) উচ্চস্বরে ভেসে এলো ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা’ শিরোনামের গানের সুর।

এদিকে এমন গান আর সুরেও ‘ওদের’ মন গললো না। সন্ধ্যার পর থেকেই নাকি পুলিশ তাড়া করছে। এ বেলায় যে ওরা ভারি বিরক্ত, ক্লান্ত তা চোখের তির্যক চাহনিতেই প্রকাশ পাচ্ছিল। পুলিশের তাড়া খেয়ে অন্যেরা চলে গেছে। তবে রঙিন বাতিগুলোর সঙ্গ নিয়ে ‘ওরা’ তিনজন দাঁড়িয়ে আছে।
ওদের একজন লিমা। কড়া মেকআপ আর ছলনাময়ী অঙ্গ সাজের কারসাজিতে বয়সের সঠিক সীমা দেয়া যাচ্ছিল না। কোন বেলায় পান খেয়েছিল, তা কে জানে? তবে পানরস শুকিয়ে গেলেও ঠোঁট খানিকটা লাল রয়েছে এ বেলাতেও। পাশ দিয়ে ছুটে চলা গাড়িগুলোর হেডলাইটের আলো যখন ওর মুখে গিয়ে পড়ছে, তখন পানমাখা ঠোঁট দুটো বেশ রক্তিম হয়ে উঠছে। ঠোঁটের নিচে লেগে থাকা এক চিমটি শুকনো চুনও সুভ্রতা ছড়াচ্ছিল অমন আলোতে।
গাছে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে। খানিকটা আনমনা বটে, তবে পথচারী পুরুষেরা ওর দৃষ্টি এড়াতে পারছে না। চোখ ঢুলুঢুলু। কিছুটা লালচেও। যে গাছে ভর করে দাঁড়িয়ে লিমা, তা যে একেবারেই সরু এমনটিও নয়। তবুও আড়াল করতে পারছে না লিমা নিজেকে। শরীর থেকে তার পেট যেন বেরিয়ে আসছে।
কাছে গিয়ে পরিচয় দিয়ে কথা বলতেই ওড়না দিয়ে পেট আড়াল করার চেষ্টা। কিছুটা সংযতও বটে। কিন্তু পুরো পেট ঢাকার চেষ্টা বৃথাই রইল। ওড়নার বাকি অংশ দিয়ে মাথা ঢেকে নেয় লিমা।
কথা বলায় প্রথমে অস্বস্তি ছিল, তবে আলাপের সৌজন্যে মুহূর্তেই জড়তা কেটে যার ওর। এ পথে আসা আরও দশজন যৌনকর্মীর মতোই লিমার জীবন কথা। সমাজ, পরিবার থেকে নিজেকে বাঁচাতে অনেক সময় ওদের কথায় অসচ্ছতা থাকে, থাকে সত্যের সঙ্গে মিথ্যার সংমিশ্রণও। হয়ত লিমাও তার ব্যতিক্রম নয়।
সত্য-মিথ্যার মাপকাঠিতে ওর জীবনকথা মূল্যায়ন করা না গেলেও জীবনযুদ্ধে যে এক পরাজিত সৈনিক তা সহজেই বোঝা যাচ্ছিল। না হলে মধ্যরাতে খদ্দেরের আশায় এমন শরীরে কেউ রাস্তায় দাঁড়ায়!
বাড়ি ময়মনসিংহের ভালুকায়। কৈশোরের সীমা না পেরুতেই এক আত্মীয়ের মাধ্যমে ঢাকায় আসেন অন্যের বাসায় কাজের বুয়া হিসেবে। ভালোই কাটছিল সে সময়। কিন্তু ভাগ্য বিড়ম্বনায় সে সুখ স্থায়ী হয়নি তার। বাসার মালিক বিদেশ চলে যাওয়ার পরে ছন্দ পতন ঘটে লিমার জীবনে।
পাশের বাসার আরেক বুয়ার সঙ্গে পরিচয় হয়েই জীবনের স্রোত বিপরীত মুখে প্রবাহিত হয় তার। ১৪ বছর বয়স থেকেই ফার্মগেটের হোটেলে দেহ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন এ কিশোরী। প্রায় ১৩ বছর ধরে রয়েছেন এ পেশায়। আলোর পথে ফেরার চেষ্টা ছিল। তবে তা আর হয়ে ওঠেনি।
রূপ আর গতরে ভাটা পড়ার পর ছাড়তে হয়েছে হোটেল আঙ্গিনা। এখন রোজ রাস্তায় দাঁড়িয়েই পুরুষের সঙ্গী হয় লিমা। দিনে ঘুমান ফামর্গেট পার্কে। আর নিশি কাটে বিজয় সরণীর সড়কে খদ্দেরের পথ চেয়ে।
সুখ টানে নয়, সিগারেটের ধোয়ার সঙ্গে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলেন লিমা। বলেন, ‘স্বাধীনতা নাকি কিসের দিন আইজ! আগ রাইত থেহে (থেকে) পুলিশে জ্বালাতন করতাছে। ভোরে ভিআইপি যাইব বলে আমাগো আর দাঁড়াইতে দিচ্ছে না। দৌড়ানি খায়া অনেকেই চলে গেছে।’
পেটের উপর অসহায়ত্বের হাত বুলিয়ে বলেন, ‘আমি আছিই। দুটি কাজ করেছি। কন (বলেন) তো এমন ড্যাবড্যাবা (টানটান) প্যাট (গর্ভবতী) নিয়া কেউ রাস্তায় খাড়ায়! কি করুম? সবই কপাল। নইলে ভাতারের (স্বামী) নেশার ট্যাকা (টাকা) পামু কই? দুঃখ ভুলতে নিজেও তো খাই।’
উৎসঃ জাগো নিউজ

মন্তব্য ২১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১:২৫

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: স্বাধীনতার অর্থ একেজনের কাছে, একেক রকম।।

২৭ শে মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৩:০০

রাসেল সরকার বলেছেন: পরিস্থিতি অনেক কিছুই বাধ্য করে । দায় এড়ানোর সুযোগ নেই ।

২| ২৭ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১:৩৪

কানিজ রিনা বলেছেন: কত মেয়ে গার্মেন্সে চাকুরী করে সংশার
চালায়। এদের ইচ্ছার অবনতি।

২৭ শে মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৩:০২

রাসেল সরকার বলেছেন: এর দায় রাষ্ট্রের ।

৩| ২৭ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১:৪৪

মুশি-১৯৯৪ বলেছেন:
এই মেয়েগুলি জীবনের চরমতম গ্লানীর মুহুর্তগুলি কিভাবে গ্রহন করছে,- খুব জানতে ইচ্ছে করে ।
অনেকবার ভেবেছি, এদের কাউকে নিয়ে পার্কের বেঞ্চিতে বসে তাদের দুঃখের কথাগুলো শুনব । মনে হয় সম্ভব না । আমরা অসম্ভবের জগতে বাস করি না ।

২৭ শে মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৩:০৪

রাসেল সরকার বলেছেন: উপলব্দি যথার্থ । মানুষ হিসেবে মানুষের দুঃখ দুর্দশা শোনা এবং সমাধানের লক্ষ্যে এগিয়ে আসা মানবিক দায়িত্ত্ব । ধন্যবাদ

৪| ২৭ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১:৫১

রোকসানা লেইস বলেছেন: আহা স্বাধীনতা

২৭ শে মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৩:০৭

রাসেল সরকার বলেছেন: স্বাধীনতা সাম্রাজ্যবাদী স্বৈরতন্ত্রের কারাগারে বন্ধী । উদ্ধার ও মুক্তির একমাত্র পথ মানবতার রাজনীতি তথা ইনসানিয়াতের রাজনীতি ।

৫| ২৭ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১:৫৪

মামুন ইসলাম বলেছেন: চমৎকার ভাবে লিখছেন।

২৭ শে মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৩:০৭

রাসেল সরকার বলেছেন: ধন্যবাদ

৬| ২৭ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ৭:৪১

জাহিদ অনিক বলেছেন: করুণ , বেশ করুণ । আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে কি হবে !

২৮ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১২:৪৭

রাসেল সরকার বলেছেন: কোথাও নেই স্বাধীনতা । পরাধীনতার গ্লানি সর্বত্র ।

৭| ২৭ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ৯:০৭

মাইজদী কোট বলেছেন: আপনি তাদের স্বাধীনতায় হাত দিতে য়াচ্ছেন কেন ।এটা তাদের স্বাধীনতার ব্যবহার,চাকুরী বা সংসার তাদের কাছে পরাধীনতা সুতরাং,,,,,,,,,,,,

৮| ২৭ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ৯:২৫

খায়রুল আহসান বলেছেন: কোন অজুহাতেই এ পেশাকে গ্রহনযোগ্য বলে মনে করি না। যতক্ষণ দুটো হাত সচল আছে, অন্য অনেক কিছু করে খেটে খাওয়া যায়।

৯| ২৭ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ১০:০৯

রক বেনন বলেছেন: খায়রুল আহসান বলেছেন: কোন অজুহাতেই এ পেশাকে গ্রহনযোগ্য বলে মনে করি না। যতক্ষণ দুটো হাত সচল আছে, অন্য অনেক কিছু করে খেটে খাওয়া যায়।
একমত! আমাদের এখানে একজন মহিলাকে দেখি রিক্সা চালায়! পুরুষদের সাথে পাল্লা দিয়েই রিক্সা চালিয়ে জীবন কাটাচ্ছে। উনাকে নিয়ে পত্রিকায় লিখালিখি ও হয়েছে।

১০| ২৭ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ১০:৩৩

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: কঠিন বাস্তবতা। কষ্ট পেলাম।

১১| ২৭ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:১৫

ধ্রুবক আলো বলেছেন: জীবন অনেক কঠিন, তবে এ পেশায় লিপ্ত হওয়ার কোনো অবকাশ নেই। আল্লাহর সদা ভরসা রাখতে হয়, আল্লাহ অবশ্যই ভালো কোনো উপায় বান্দাকে দান করবেন।
আমিও খায়রুল আহসান ভাইয়ে সাথে একমত।

১২| ২৭ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:৪০

অগ্নি সারথি বলেছেন: লিমার গল্পটায় কোন মন্তব্য করবার দুঃসাহস করতে পারছি না কারন লিমা এবং তার ভবিষ্যত সন্তানের এমন দূর্ভোগের জন্য আমিও যে সমান অপরাধী।

২৮ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১২:৪৫

রাসেল সরকার বলেছেন: সুন্দর উপলব্দি । ধন্যবাদ

১৩| ২৭ শে মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১২:৩১

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: যারা কাজের নামে তাদের মানসিকতা প্রশ্নবিদ্ধ করছেন তাদের সবিনয় জানাতে চাই- সুশীল চক্রটা আপনাদের ভবনার মতো সরল হলে পৃথিবীতে অনেক মন্দই থাকত না!
সেই নির্যাতন, সেই বিক্রি হয়ে যাওয়া নারীর উপর খালা নামের সর্দারনীর অত্যাচার, পালাতে গিয়ে ধরা পড়ে নির্যাতনের মাত্রা বৃদ্ধি,
আর তাদের কষ্টের টাকার ভাগ লাখপিত কাোটিপতি হওয়া সুশীল ভেকধারীদের আমরা কতইনা তোয়াজ করি, নিন্দার নোংরা সব তাদের মানসিকতার উপর ঢেলে!

এটা রাষ্ট্রের ব্যর্থতা। গত শীতে আমেরিকার মেয়র পথের ভিখিরিদের জণ্য ফাইভ ষ্টার হোটেল বুক করেছে- নাগরিক দায় থেকে!
আমরা ফকিরনির টাকা কেড়ে নিয়ে পতিতা বানিয়ে ফাইভষ্টারে মৌজ করি। এই পার্থক্যটুকু দূর করতে হবে আগে।
তারপর না হয় তাদের পথে পেলে তিরস্কার করি! কি বলেন?

২৮ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১২:৪৩

রাসেল সরকার বলেছেন: সহমত

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.