নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\"I am not too much bad as you think and I am not too much good as you think.\"

মোঃ ইমতিয়াজ আহমেদ ইমন

অন্যরকম মানুষ!

মোঃ ইমতিয়াজ আহমেদ ইমন › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক পলক!

১৩ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১০:০৯

ভালোবাসা........ সকল চাহিদার, সকল চাওয়া পাওয়ার উর্দ্ধে। মনের অনুভূতিকে মগজে গেঁথে রাখা। এসবের সাথে পরিচিত ছিলনা রূপম। পরক্ষণে দেখেও মনে হয়না পরিচিত। হৃদয়ের লিখা গুলো ক'জনেই পড়তে পারে।

কলেজে একদিন সিঁড়ি দিয়ে উঠার সময় সবার সামনে হোঁচট খেয়ে পড়েছিল রূপম। উপস্থিত সবাই দেখেছিল সেদিন রূপমের হোঁচট খাওয়াটা। শুধু দেখেনি সে যাকে দেখে হোঁচটটা খেয়েছিল রূপম।

সেদিনকার হোঁচট খাওয়ার যথেষ্ট কারণ ছিল। ঠোঁটের কিনারের সবচে সুন্দর হাসিমাখা চেহারার অনুররণে যেখানে হৃদয়টাকেই কাপিয়ে দেয়, সেখানে পা কেপে পড়ে যাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছুনা। তারচেয়ে বড় কথা, দুচোখের মায়াবী কালোতে অালো খুজতে গেলে এটা স্বাভাবিকই। সত্যি বলতে কি... ঐশীকে ঠিক মতো ঐদিন রূপম দেখেনি। তবে সেদিন প্রথমবার সে তার কানে হাসির আওয়াজ বাজতে দেখেছিল। চোখ দুটোকে পলকহীন মনে হয়েছিল। তবে কাউকে কিছু বুঝতে দিলনা সে।

একটু খবর নিয়ে দেখলো, ওদের ডিপার্টমেন্টেই পড়ে ঐশী। ক্লাস আলাদা হয় বলে হয়তো চিনেনা। ওকে দেখাটাও টাফ। কিংবা দেখা যাবে কিনা তাও অনিশ্চিত। বলে রাখা ভালো, মেয়েদের সেকশনে গিয়ে কাউকে দেখে আসার মতো ছেলে রূপম না। নিরবতার শিষ্য রূপম।
আচ্ছা, সেদিন কেন রূপম ঐশীকে দেখতে পাবে কিনা তা নিয়ে ভাবছিল?
কেন সেদিন অন্যরকম শিহরণের কাটাতারে বাঁধা ছিল ও?
উত্তরটা জানা ছিলনা।
ঐদিন আর দেখতে পায়নি ঐশীকে। এরপরের এক সপ্তাহে ঐশীকে দেখলো না রূপম। এক স্বাভাবিক চেহারায় চেপে থাকা অস্থিরতা ছিল। তবে অনেক সুপ্ত অপেক্ষার পর দেখেছিল ঐশীকে কয়েকটা সেকেন্ডের জন্য... মনে যেন রূপমের আতশের ঝলকানি। এরপর থেকে দু এক দিনে একবার করে কিছু মুহূর্তের জন্য দেখতে পেত ওকে। তাতেই খুশি ছিল রূপম। কেন যেন রূপম আসলে চাইছিলো না প্রেম ভালোবাসায় জড়াতে। তাই এসব কিছুকে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে চাইছিলো। কিন্তু ভালোলাগাটা কখন যে ভালোবাসাতে পরিণত হয়েছে তা রূপম বুঝতেই পারেনি।

এভাবেই চললো কিছুদিন; মন চাইছে তো মগজ বাধা দিচ্ছে। রূপমের ভালোলাগার কথাটা রাফিদ জানতো। রাফিদের বান্ধবী রূপা আবার ঐশীর ফ্রেন্ড। রাফিদ রূপাকে রূপমের ঐশীকে ভালোলাগার কথা বললো। স্বভাবতই ঐশীর কানের কথাটা রূপার মাধ্যমে গেল। সব কাহিনী শুনে ঐশী কেন যেন বিরক্ত না হয়ে মুচকি একটা হাসি দিল। রূপম এসবের কিছুই জানেনা। একদিন রাফিদ কথাটা রূপমকে বললো। রূপম রাফিদের প্রতি কাজটাতে খুব বিরক্তই হয়েছিল। কিন্তু রাফিদকে ও কিছু বলেনি। কি যেন এক অক্ষমতা।

রূপম এখন হাজারবার ভাবে ঐশীর কথা। ভাবে অন্যভাবে, অন্য মায়ায়, অন্য নিঃস্বার্থপরতায়। ফাঁকে ফাঁকে ঐশীর মুখটা দেখে, হাসির ঝরণার আওয়াজে সব অনুভূতি আরো প্রাণবন্ত হয়। বারংবার ইচ্ছা করে ওর সামনে গিয়ে বলতে, ভালোবাসি ঐশী।

নাহ.... রূপম এমনটা করেনা। ঐশীর ঠোঁটের হাসিটাকে নিজের ঠোঁটে নিয়ে আসার চেষ্টা করেনা। তবে সে একটা জিনিস পারে........
হুম... সে ঐশীর হাসিতে নিজের মতো করে নিজের হাসিটাকে মন থেকে নিঃসৃত করতে পারে।

ঐশী অনেকবার চেষ্টা করেছিল রূপমকে দেখার। কিন্তু রূপম দেখতে দেয়নি। ঐশীকে তার প্রতি কোনো আগ্রহের জন্ম দিতে দেয়নি রূপম। ঐশীও আর বেশি ঘাটঘাটি করেনি বিষয়টা নিয়ে। রূপমও তার ভালোবাসাটা কাউকে জানাতে দেয়না। প্রথমাবস্থায় রাফিদ যা জানতো, এখন রাফিদও কিছু বুঝতে পারেনা। হুম.... এক সমুদ্র নিরবতা...... তবুও রূপম ঐশীকে দেখে। স্বর্গের দুয়ারটার মত করে। স্বর্গের পবিত্রতা সহকারে। আর অবশ্যই মুখে একটু হাসিমেখে। সে আবারও দেখে, তবে তার দেখাটাকে ঐশীকেও দেখতে দেয়না। অনুভূতিটা এভাবেই থাকুক।


এইচএসসির পরে সবাই সবার রাস্তায়। রূপম তখন ঢাবিতে। ঐশী ডিএমসিতে। রূপম সময় পেলেই কাউকে না বুঝতে দিয়ে একটা সুন্দর মুহূর্তের জন্য এশীকে দেখে আসে। আর সেই অনুভূতিটাকে নিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করে, হাসির অনুররণে।


৮মাস চলছে রূপমের এই অনুভূতির বয়স। আর তখনই সবার চোখে হঠাৎ করে পৃথিবী থেকে একজন রূপম কমে গেল। আসলে ব্যাপারটা হঠাৎ করে না। রূপম ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিল। বিষয়টা ও আর ওর পরিবার ছাড়া কেউই জানতো না। যে কয়টা দিন বাঁচার আশা ছিল সে ক'টা দিন স্বাভাবিকভাবে, নিঃস্বার্থ ভাবে বাঁচতে চেষ্টা করেছে রূপম। কাউকে নিজের সাথে জড়ায়নি। এতটাই নিঃস্বার্থ ছিল যে, তার প্রতি ঐশীর বিন্দুমাত্র আগ্রহের সৃষ্টি হতেও দেয়নি, সে নিজেও বেশি কিছু চায়নি, চেয়েছিল শুধু অনুমতিহীন গোপনে দেখা একফালি হাসি এবং সেটা সে পেয়েছে, সেটা নিয়েই সন্তুষ্ট থেকেছে। সীমাবদ্ধ অনুভূতি গুলোকে অসীম যত্নে রেখেছে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.