নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাতৃভূমিকে সাজাই সার্বজনীন মানবাধিকার রক্ষার যুক্তিনির্ভর মঞ্চ করে।

রাহমান বিপ্লব.

মাতৃভূমিকে সাজাই সার্বজনীন মানবাধিকার রক্ষার যুক্তিনির্ভর মঞ্চ করে।

রাহমান বিপ্লব. › বিস্তারিত পোস্টঃ

নাস্তিকরাও মৌলবাদী কেন!?

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪১

(ছবি- শিশুদের রাজনৈতিক ব্যবহার নিয়ে শুধু প্রতিপক্ষকেই বিতর্কিত করা হয়।)

১-
মূলত, মৌলবাদী শব্দের বিপরীত দুইটা ব্যাক্ষা আছে।
অজ্ঞতাকে গোড়ামী নিয়ে ধরে রাখা।
আর মূলনীতিতে অটুট থাকা।
মৌলবাদ বলতে এখানে নাস্তিকদের দ্বারা বহুল ব্যবহৃত 'মৌলবাদ' তথা নেগেটিভ অর্থের মৌলবাদ-কে বুঝানো হয়েছে।

২-
সাধারনত নাস্তিক ও ইসলাম বিরোধী গ্রুপ গুলো মৌলবাদী শব্দটিকে গোঁড়ামী অর্থেই প্রয়োগ করে। বিশেষত ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসীদের জন্যই শব্দটিকে নেগেটিভ সেন্সে যখন বিশেষ ভাবে নির্দিষ্ট করা হয় তখন এটা বুঝা যায়, ইসলামের বিরোধীতায় উগ্র ইসলাম বিরোধী গ্রুপ গুলো প্রায় সবাইই অন্ধ বা 'মৌলবাদ' দ্বারা আক্রান্ত হয়ে ওঠে। হোক সে বিধর্মী আস্তিক বা নাস্তিক।
সকল মৌলবাদীতা মুক্ত হবার ঘোষণা দিয়েই নাস্তিকতার আবির্ভাব। সেক্ষেত্রে নাস্তিকতায় মৌলবাদ থাকাটা আশ্চর্যের বিষয় বলেই গন্য হবার কথা। উপরন্তু সেই শব্দের প্রয়োগেই!!

৩-
কিভাবে বুঝবেন নাস্তিক ব্যাক্তিটি মৌলবাদী?

ক- ইসলামের কোন বিধান যখন বৈজ্ঞানিক ভাবে মানুষের জন্য কল্যাণকর বলে প্রতীয়মান হবে। ঠিক তখন যেসব নাস্তিক বিষয়টাকে গৌণ করে উপস্থাপনের চেষ্টা করবেন কিংবা গোপন রাখতে তৎপর হবেন। অথবা ঐ কাজটির প্র্যাকটিসে কটু মন্তব্য করবেন বুঝে নিবেন নাস্তিক ব্যাক্তিটি 'মৌলবাদে' আক্রান্ত।

খ- ভদ্রতার সমর্থন করেও ইসলাম ও মুসলিমদের চুড়ান্ত কটুক্তিতেও যারা নিরব আনন্দ পান, কিংবা নিশ্চুপ হয়ে থেকে সহয়তা দেন, অথবা বিভিন্ন অশ্লীল ও মানহানিকর শব্দ তৈরিতে পারদর্শিতা প্রদর্শন করেন তখনই বুঝবেন ব্যাক্তিটি মৌলবাদী হয়ে উঠেছেন।

গ- নিজে কখনও গালি ও মানহানির শিকার হলে প্রতিবাদ করেন, আত্মমর্যাদার উনুভূতি ও তার অধিকার প্রকাশ করেন, কিন্তু যখন সম্মিলিত ভাবে মুসলিম জনগোষ্ঠীকে আঘাত করা হয় ঠিক তখন তিনি আপত্তি ছুড়ে দেন- 'ধর্মানুভূতিতে আঘাতের সংজ্ঞা প্রণয়নের'!

ঘ- নাস্তিক ব্যাক্তিটি তার শ্রদ্ধেয় ব্যাক্তির প্রতি অসীম শ্রদ্ধাশীল এবং তার কটুক্তিতে গারান্বিত হন! এই রাগান্বিত হওয়াকে 'বৈজ্ঞানিক উপায়ে' ব্যাক্ষ্যাও করতে পারেন, কিন্তু যখন দেখবেন শ্রদ্ধেয় মুহাম্মাদ সাঃ এর অশ্রদ্ধায় উদ্ভূত ক্ষোভকে তিনি যুক্তি দিয়ে অস্বাভাবিক প্রমাণ করতে চান- তখন বুঝবেন লোকটি 'গোঁড়া অর্থে' মৌলবাদী নাস্তিক।

ঙ- পোশাকের ব্যাপারে তিনি খুবই স্বাধীনচেতা! এমনকি লজ্জাস্থানের প্রকাশ ও লজ্জা জনক ড্রেসেও তার অপত্তি নেই। কেউ পরিধান করলে সেখানে তিনি উদ্যোগী হয়ে ব্যাক্তি স্বাধীনতা খুঁজে দেন। যখনই ঐ ব্যাক্তিটিই কোন মুসলিমকে পাঞ্জাবি বা বোরকা/হিজাব পড়তে দেখেন তখনই তার অপত্তি শুরু হয়! -নিশ্চিন্ত থাকুন উনি গোঁড়া নাস্তিক।

চ- মানবাধিকারের পক্ষ শক্তি। হেন কোন মানবাধিকার কর্ম নেই উনি করেন না। এমনকি পথের কুকুর না খেয়ে মারা পড়লেও উনি তীব্র প্রতিবাদ করেন। জীবন বাঁচাতে ব্যাকুল থাকেন। সকল যুক্তির ওপর তার মনে হয় 'জীবন বাঁচানোই' ঐসময়ের সবচেয়ে বড় যুক্তি। কিন্তু যখন তিনি হালের মুসলিম উদবাস্তু সমস্যা কিংবা চিরন্তন ফিলিস্তিনি আক্রমনের সমস্যার সময় মুসলিম দেশ গুলোর নিশ্চুপ অবস্থান বা মুসলিম দেশগুলোর ভূমিকা নিয়ে তর্কের ঝড় তোলেন, তখন বুঝে নিন তার মাঝে 'জীবন রক্ষার' সেই যুক্তিটি আর সেভাবে কাজ করছেনা। তিনি চূড়ান্ত মৌলবাদী নাস্তিক হয়ে উঠেছেন।



৪-
এবার দেখি 'ছুপা' মৌলবাদী নাস্তিক চেনার কিছু উপায়-

এরা আরও গভীরে গিয়ে নাস্তিকতার মৌলবাদ চর্চা করেন। অনেকটাই চুপি চুপি থাকেন, নিরবে কার্য উদ্ধার করেন বলে প্রায়ই এদেরকে মানবতাবাদী নাস্তিক ভেবে ভুল হয়। বিশেষ মুহুর্তে এদের পরিচয় জানা যায়।

ক- নাস্তিক মৌলবাদী ব্লগারদের মৌলবাদ চর্চায় এরা নিশ্চুপ থাকেন। কখনই প্রতিবাদ করেন না। নিজেদেরকে কার্যকর মুক্তমনা হিসেবে প্রকাশ করেন। ফলে নিজে কখনও ধর্মীয় আঘাত বা কটুক্তি করেননা, তাতে অংশও নেননা। সম্পূর্ণ নিশ্চুপ থাকেন। কিন্তু যখনই বিপথগামী কারো দ্বারা তারা হত্যার শিকার হয়, তখনই তারা ঝাপিয়ে পড়েন। তাদেরকে শহীদ, বিশিষ্ট ব্লগার, মুক্তমনের প্রতীক ইত্যাদি অভিধা দিয়ে নিজেদের অবস্থান প্রকোট প্রকাশ ঘটান। অথচ একটি বারের জন্যও তাদের ধারাবাহিক কার্যকলাপের দিকটি তুলে ধরেন না। অথবা অন্যদের বিরত থাকতে আহবানও করেননা।

খ- যখন তার সামনে কোন নাস্তিক মৌলবাদী অপরাধ মূলক কাজ করে বা মানবাধিকার লঙ্ঘন ও মানুষের সম্মানে আঘাত করে তখন তিনি কখনই নাস্তিক্যবাদের মানবাধিকার ধারনা দিয়ে এসব অপরাধের প্রতিবাদ/প্রতিরোধ করেন না। বা সংশোধনে উদ্যোগী হতে উৎসাহ বোধ করেন না।

গ- বিরোধী দর্শনের রাজনীতিকে অপরাধমূলক কার্যক্রমের দ্বারা দমন পীড়ন করা হলে তারা চুপ করে থাকেন। মার্ডার, ধর্ষণ, গুম, খুন, অমানবিকতা... সব অপরাধকেই তারা নিজ আদর্শের শর্তে সীমাবদ্ধ করে নিয়ে অপরাধ সাব্যস্ত করেন। অর্থাৎ নিজ আদর্শের বিপরীত কেউ এসবের শিকার হলে তার আপত্তি থাকেনা। এরা মূলত বিপরীত আদর্শের ব্যাক্তি বা সংস্থাকে মানুষের মর্যাদা দেন না। এখানেও এদের চরম মৌলবাদীতা প্রকাশ ঘটে। তবে এটা নিশ্চুপ অবস্থানের প্রকাশ বলে প্রায়ই মানুষেরা বুঝতে পারেন না।


ঘ- নাস্তিক আদর্শের দ্বারা প্রভাবিত লোকদের নেতৃত্বে গঠিত/পরিচালিত মানবাধিকার সংস্থা, নারী আন্দোলন, শিশু অধিকার আন্দোলন ও এনজিও গুলো যখন তাদের বিপরীত আদর্শের মানুষদের অধিকারকে কার্যকর ভাবে অস্বীকার করে চুপ থাকে। দেশজুড়ে আলোচিত নির্যাতনের সময়ও যখন তাদের উপস্থিতি অদৃশ্য হয়ে যায়। আবার এর মাঝেই যখন বিশেষ গোত্রের বা গোষ্ঠীর ঠুংকো নির্যাতনেও তারা প্রবল প্রতিবাদ প্রদর্শন করেন। তখন বুঝে নিন নাস্তিক প্রভাবিত ঐসব সংস্থাগুলো মূলত নাস্তিক মৌলবাদীতার চর্চা করেন।


ঙ- বিপরীত আদর্শের বিশেষ সংগঠনকে বিতর্কিত করার জন্য শিশুদের রাজনীতিতে ব্যবহারের বিরুদ্ধে সোচ্চার কন্ঠ তোলেন, অথচ নিজেদের সাপোর্ট দেয়া সংগঠনে শিশুদের রাজনৈতিক ব্যবহারের ক্রমধারায় নিরবতা পালন করেন। তাহলে বুঝবেন তারা মৌলবাদী নাস্তিক। 'শিশু অধিকার' নামক মানবীয় দিকটিকেও তারা তাদের আদর্শের পক্ষে নোংরা ব্যবহার করছেন মাত্র। তারা শিশু অধিকারকামী ব্যাক্তি নন। বরং এইসব ব্যাপারকে শর্ত স্বাপেক্ষে হাইলাইটস করে থেকেন।


চ- নিজেদের গড়া জাতীয় গুরুত্ব পূর্ণ বিষয়ের আন্দোলনকে যখন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল বাংলাদেশী মানুষের জন্য এক্সেস দেননা, শর্ত স্বাপেক্ষে নির্দিষ্ট আদরশের নেতা-কর্মী দ্বারা সংগঠন গড়ে তুলেন, তখন বুঝবেন ঐ আন্দোলন দেশের জন্য বা জাতীর জন্য নয়। তারা তাদের মৌলবাদ চর্চার মাধ্যম হিসেবে 'জাতীয় সমস্যাকে' ব্যবহার করছেন মাত্র।

ছ- দেশের জন্য মানবতার ভিত্তিতে কাজ করেন। অথচ দেশের বিশাল একটি জনগোষ্ঠী, যারা তাদের বিপরীত আদর্শ লালন করেন, তাদের সাথে কখনই তারা সৌহার্দ গড়েন না। শত্রুতাকে বিভিন্ন অমানবিক কায়দায় স্পষ্ট করেন মাত্র। এদের বাঁচার অধিকার, শিক্ষা লাভের অধিকার, জীবন ধারনের অধিকার, সম্মান নিয়ে বাঁচার অধিকারকে তুচ্ছ ভাবে হেয় করেন! ঠাট্টা-মশকরার পাত্র হিসেবে প্রকাশ করেন! তাহলে বুঝে নিন, এই নাস্তিকরা মূলত মানবাধিকার চর্চা বা তা প্রতীষ্ঠায় কাজ করেননা। বরং বিপরীত আদর্শের কারনে একটা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অমানবতা পূর্ণ চিন্তা ও কার্যকলাপ পরিচালনা করেন। এরাও মানবাধিকার এর মত বিষয়কেও নিজেদের মৌলবাদ চর্চায় দলিত ও অপমানিত করেন। সাথে সাথে অপব্যাক্ষ্যা ও অপমানের কার্যকর ধারা তৈরিতে নিযুক্ত হন।



৫-
ধারনা দেয়া হয় যে, নাস্তিকতা এমন একটি চিন্তার প্রতিফলন; যা ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, দল, উপদল নির্বিশেষে সকল মানুষের অধিকার রক্ষায় সাধারন কাজে লিপ্ত করে। এরা সকল মানসিক প্রতিবন্ধকতা হতে মুক্ত হতে 'মুক্তচিন্তার' অধিকারী হবার কথা বলেন। সকল ধর্মগুলোর আন্তধর্মীয় বিভেদ থেকে মানুষ মাত্রকেই মুক্তি দেয়ার যুক্তিকে নাস্তিকতা গ্রহনের অন্যতম মৌলিক যুক্তি হিসেবে অনেক নাস্তিকই তুলে ধরেন।

অথচ, নাস্তিকতা আন্তধর্মের বিরোধীতার বাইরে গিয়েও কারো কারো নিকট আরেকটি ধর্ম হিসেবেই প্র্যাকটিস হয়ে আসছে। অনেকটা গার্বেজ স্পেসের মত যেন, স্ব স্ব ধর্ম বিদ্বেষীরাই এখানে এসে মানবিকতার চর্চা ভুলে, নিছক ধর্ম বিরোধীতা ও অমানবিকতার আরেকটি প্লাটফর্ম হিসেবেই একে ব্যবহার করছে। এরাই নেতৃত্ব দিচ্ছে। ফলে একে কার্যকর মানবিকতা চর্চার স্থান হিসেবে গড়ে তোলাটা বাধা গ্রস্থ হচ্ছে একেবারে মূল থেকেই।

নাস্তিকতা তখনই মানবিকতার দাবী করতে পারবে, যখন তার নেতৃত্ব সকল ক্ষোভ-বিভেদ-শত্রুতা কে মানবিকতার আড়ালে কবর দিতে স্বক্ষম হবে। মৌলবাদ চর্চা থেকে নিরত হতে এবং নাস্তিকদেরকে নিরত করতে স্বক্ষম হবে।

তানাহলে বিভিন্ন ধর্ম উদ্ভূত মৌলবাদের বিরোধীতায় নামার নামে নিজেকেই আরেকটি স্বতন্ত্র 'মৌলবাদী' চর্চার ক্ষেত্রই বানাবে নাস্তিকতা। যেটা আরও ভয়াবহ মৌলবাদ!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.