নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইবনে শামস

রায়হানা তনয় দা ফাইটার

আমি। কেউ না। তবে মাঝে মাঝে আমার দুষ্ট মনটা কানে কানে এসে বলে, তুমি মহাকালের উচ্ছল সমুদ্রে ভেসে বেড়ানো এক কচুরিপনা । কালের ঊর্মিমালার সাথে সাথে নাচা ছাড়া তোমার আর কোন কাজই নেই.....

রায়হানা তনয় দা ফাইটার › বিস্তারিত পোস্টঃ

যেখানে স্বপেড়বরা মেলেছে ডানা...

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৩৫

সবে মাত্র পড়া-লেখা শেষ করেছেন। শ্যমল বরণ চেহারার উপর কালো দাঁড়ি। বোঝা যায়, মাদরাসার ছাত্র। ভ্রমনে তাঁর প্রবল ঝোঁক। তাই পড়া-লেখা শেষ করে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরে বেড়ানোর প্ল্যান করেছিলেন। পরিচয়টা জানলে, নামটা না হয় পরেই জানবে। অপেক্ষার ফল যে খুবই মিষ্টি। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। গ্রাম বাংলার রূপমাধুর্য অবলোকন করতে বেরিয়ে গেলেন। অনেক দিন পরে বাসায় ফিরছেন। হয়তো সময়ের সমীকরণ এক মাসে দাঁড়াবে। রূপমাধুর্যে মোহিত হৃদয়ে আনন্দের চেয়ে বেদনার রেখাপাত লক্ষনীয়। তিনি নিদারুন মর্মাহত। দেশের মানুষের কথা ভেবে। কী হবে তাদের কিয়ামতের স্বার্থপর মাঠে? যেখানে চিত্তে চিত্তে অনুরণিত হবে শুধু ইয়া নফসী, ইয়া নফসী। নিজের পরিণতির ভাবনা মানুষের মনে আলোড়িত হবে বারংবার। কীভাবে দেখাবে মুখ রাসূলে তিনি? রাত-দুপুর। ঘরে বসে আছেন নিরবে। জানালা খুলে দিলেন। সাথে সাথে এক ঝাপটা ধমকা হাওয়া মৃদু আঘাত করে গেল সর্বাঙ্গে। দরাজ আকাশের বুকে ঘুরে বেড়ানো পূর্ণিমার চাঁদ এক গাল হেসে মুহুর্তে কোথায় যেন মিলিয়ে গেল? হয়তো বা কৃষ্ণমেঘের আড়ালে। তাঁর মনও খারাপ হতে শুরু করল দ্রুত। সফরে একমাসের তিক্ত সব অভিজ্ঞতা, কাহিনি স্মৃতির পাতায় ভাস্মরিত হচ্ছে μমশ:। তবে সবচেয়ে বেশী মন আলেঅড়িত করলো দু’টো বিক্ষিপ্ত ঘটনা। এক. ঢাকার একটি অভিজাত এলাকায় এসে তিনি পুরোপুরি পর্যুদস্ত হলেন। ওখানের সবাই “হুমায়ুন আযাদ, শামসুর রহমান” এসব লেখকের পুস্তক নামের বুলেট গিলছে। এগুলোকে পুস্তক না বলার যথেষ্ট যুক্তি আছে। গ্রন্থ বলতে সেগুলোকেই বোঝায় যা মানুষের মুষ্যত্বের বিকাশে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। আর মনুষ্যত্বের প্রকৃত বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদানটা ধর্মের। অথচ ওসব লেখকের পুস্তক পড়ে মানুষের ধর্ম ঝড়ো কাকের চেয়েও দারুণ বিপর্যস্ত। ওদের জীবনের অদূর ভবিষ্যতের বিপর্যয় কাটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আমাদেরই পালন করতে হবে। মানুষের হাতে নাস্তিকসব লেখকের বদলে মুসলিম লেখকের বই তুলে দিতে না পারলে ভবিষ্যত খুবই অন্ধকার জাতির। মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে আমাদেরই জবাবদিহি করতে হবে। আমাদের সিলেবাসে বাংলা, ইংরেজী আনতে হবে। বিশেষকরে বাংলা সাহিত্যে প্রভাব বিস্তার করা অতীব প্রয়োজন। নতুবা অপেক্ষা করতে হবে চরম দুর্দিনের... দুই. অভিজ্ঞতাটা তাঁর নিজের পরিবারেই প্রবল। অন্যান্যদের কথা বাদই দিলাম। দূর সম্পর্কের এক বড় ভাই এসে জানতে চাইল, ইসলামী জ্ঞান কী শুধু ছেলেদের জন্য? নারীদের কী ইসলামী জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব ভবানীতে? তিনি উত্তরে বল্লেন, না, তা হবে কেন? সবারই জ্ঞান অর্জন করা কর্তব্য।

- তাহলে আমার বোনদের স্কুলে পড়াতে হয় কেন? এমন কোন ইসলামিক শিক্ষা প্রতিষ্টান নেই কেন? যেখানে আমার বোনেরা বিশুদ্ধ ইসলামিক জ্ঞান অর্জন করবে।

এ দু’টো জঠিল সমস্যার মাঝে তাঁর ডুবু ডুবু অবস্থা। মৃদু একটা ডাকে তাঁর চিন্তায় আঘাত হানলেন শ্রদ্ধেয় বাবা। বাবার ডাক শুনে দৌঁড়ে বাবার কাছে আসলেন। আদর করে পাশে বসালেন। হাল-তবিয়ত জানার পর পরবর্তী পদক্ষেপের কথা জানতে চাইলেন। তিনি বাবাকে সকল সমস্যার কথা খুলে বল্লেন। এবং জানালেন, “ আমি এমন একটি শিক্ষা নিকেতন করতে চাই যেখানে আরবীর পাশাপাশি বাংলা ও ইংরেজীও পাঠ্য হবে। ছাত্ররা বাংলা, ইংরেজীতে দক্ষতা অর্জন করে দেশ-

ছোটগল্প

রায়হানা তনয়

বিদেশে দ্বীনের খেদমত করবে। এখানে শিক্ষা বঞ্চিত নারীদের জন্যেও আলাদা ব্যবস্থা থাকবে।” বাবা ছেলের কথা শুনে খুব আনন্দিত হলেন। মাথায় হাত রেখে দোয়া করলেন, আল্লাহ তোমার সদিচ্ছা পূরণ করুক। জীবনের সুদীর্ঘ, কণ্টকময় পথে এ এক দারুন পাথেয়। জীবনের মহৎ উদ্দেশ্য সাধনের নিমিত্তে বেরুলেন। কোথায় প্রতিষ্টান করা উচিৎ? প্রতিষ্টানের নাম কী হবে? কেমন হবে শিক্ষা নিকেতনটি? এসব প্রশেড়বর উত্তর খুঁজতে দেশের বুযুর্গানে দ্বীনের কাছে ধর্ণা দিলেন। কেউ সমালোচনা আর কেউবা হয়ে গেলেন তাঁর পরম শত্রু। এসবের মাঝে আচমকা সংবাদ পেলেন মা খুব অসুস্থ। আর সময় নষ্ট না করেই মায়ের কাছে ছুটে আসলেন। আসতে আসতে গভীর রাত হলো। আজও ভরা পূর্ণিমা। ঝির ঝির ঝরছে জো¯ড়বা প্রপাত। এসেই মাকে জড়িয়ে ধরলো। মা-ছেলের তৃপ্তির মিলনের চি হ্ণটুকু নিয়ে গড়িয়ে পড়লো অশ্রু। -তুই কাঁদছিস কেন? - মা, তোমার শরীর যে বড়্ড় খারাপ দেখাচ্ছে। আর আপনি কাঁদছেন কেন? - আমার অসুস্থতার কথা শুনেই চলে এসেছো। এত ভালো ছেলে পেটে ধরেছি এই সুখেই চোখে পানি চলে এলো। মা-ছেলের অনেক গল্প হলো। তাদের কতো অজানা তত্বইনা আজ তারা জোছনায় ¯ড়বান করতে করতে চাঁদকে জানিয়ে দিল। আর চাঁদও শনেছে মন দিয়ে... পরদিন মাকে নিয়ে একজন ভাল ডাক্তারের কাছে গেলেন। ডাক্তার তাঁকে আলাদা একটা রুমে নিয়ে মৃদু স্বরে বল্লেন, তোমার মায়েরতো ক্যান্সার অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। তিনি কেঁদে দিলেন। ইতস্তত ভঙ্গিতে জানতে চাইলেন, আমার মা ভাল হবে তো? ডাক্তার জানালেন, একটা অপারেশন করতে হবে। এতে প্রচুর খরচ। তিনি বল্লেন, যত টাকায় লাগবে আমি জোগাড় করছি। আপনি মায়ের অপারেশন শুরু করুন। বেরিয়ে পড়লেন টাকার সন্ধানে। টাকার মূল্য আজ তিনি হাঁড়ে হাঁড়ে ঠের পাচ্ছেন। মাকে সুস্থ করতে প্রচুর টাকার প্রয়োজন। এসব ভাবনাকে তিনি মনের আরেক ভাবনা দিয়েই ঢেকে দিলেন। আল্লাহ তায়ালা সব কিছুর ব্যবস্থা করে দিবেন। এই পরম বিশ্বাসটুকুই তার একমাত্র সম্বল। বিভিনড়ব রকমের কাজ কর্ম করে তিনি যে টাকাগুলো জমিয়েছিলো তা দেওয়ার পরও হলো না। এবার অনেক ঋন করলেন। কোনমতে পুরো টাকা জোগাড় হলো। আল্লাহর কাছে শোকরানার নামায আদায় করে দোয়া করলেন মায়ের আরোগ্যের জন্য। মা মেডিকেলের বেডে শুয়ে আছেন। কিছুক্ষন পর তাঁকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হবে। পাশে মায়ের সুযোগ্য ছেলে বসে কাঁদছে। মনের অজান্তেয় বিড় বিড় করে বলছে, মা তুমি ভাল হয়ে যাবে। আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করেছি। সারারাত তোমার জন্যে তার দরবারে বসে ছিলাম। মা ছেলের কথাগুলো শুনে আর অশ্রু ধরে রাখতে পারলেন না। কেঁদে ফেল্লেন অঝোরে। মা বল্লেন, বাবা, আমার জন্য এতো কষ্ট, এতো খরচ করছো কেন? আমিতো নাও বাঁচতে পারি। ছেলে অভিমান করে বলছে, মা এমন কথা আর বলো না। তুমি ছাড়া এ জগতে আমার পরম আপন আর কেউ নেই। অন্য কেউ আমার জন্যে দোয়া করলে তা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু তোমার দোয়া আমার কাছে আবেহায়াতের ছেয়েও দামী। আমরা জন্যে করা তোমার দোয়া আল্লাহর আরশ পর্যন্ত পৌঁছুবেই। আমি তোমাকে যত দিন আমার কাছে পাবো তত দিন তোমার খেদমত আরো বেশী করতে পারবো। আর তবেই তো তোমার মন আমার জন্যে দোয়া করবে। এ কথাগুলো শুনে মা আরো বেশি কাঁদলেন। তার মাথায় হাত রেখে দোয়া করলেন, আল্লাহ তোমাকে কবুল করুক। এই একটা বাক্যের জোর কত প্রবল তা বলা বাহুল্য।

ছোটগল্প

রায়হানা তনয়

অনেক দিন পরের কথা। মা সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরলেন। তাঁর ছেলেও বেড়িয়ে পড়লো কাজে। মা ছেলের প্রতিক্ষায় থাকেন। খোদার কাছে দু’হাত তুলে মুনাযাত করেন। মায়ের প্রতিক্ষার পহরের অবসান ঘটলো। মায়ের আদরের দুলাল বাড়ি ফিরলো। তিন এখন অনেক বড় হয়েছেন। সফলতার সর্বোচ্ছ সোপানে আরোহন করেছেন। বিশ্ব জোড়া তার খ্যাতি হলো। বিদেশ থেকে শেখ ও আল্লামা ইত্যাদি অভিধায় নিয়ে ফিরলো। শেখ ও আল্লামা কোন ছোট খাটো উপাধি নয়। যারা জ্ঞান-সমুদ্রের তলানি থেকে মুক্তো সংগ্রহ করে মুক্তোর মালা গাথেন। মানব কল্যানে নিজেদের অর্জিত জ্ঞান নিয়ে মহৎ কাজে আত্মনিয়োগ করেন শুধু তাদেরই বলা হয় আল্লামা ও শেখ। তিনি একটা জঙ্গলকে আবাদ করলেন। সেখানে গড়ে তুলেন বালক-বালিকা ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়। তিনি দেশের ধনী-গরীব নির্বিশেষে সকল নারীদের জন্যে ইসলামী জ্ঞানার্জনের ব্যবস্থা করলেন। প্রত্যেক নর-নারী যাতে ইসলামী শিক্ষার আদলে নিজেদের জীবন সাজাতে পারে তার ব্যবস্থা করলেন। ইসলামী শিক্ষার রেঁনেসাকে আরো যুগোপযগী করে উপস্থাপন করলেন মানুষের সামনে। মাদ্রাসার সিলেবাসে অন্তর্ভূক্ত করলেন বাংলা, অংক ও ইংরেজী। যা ছিল মাদরাসার ছাত্রদের কাছে কল্পানারও কল্পনা। এ মাতা-পিতার করা দোয়ার অপ্রতুল ফসল। এতক্ষনে নিশ্চয় সবাই বুঝে ফেলেছো আমি কোন জীবন্ত মনীষীর গল্প করছিলাম। তিনি সকলের অলক্ষে ইসলামের খেদমত করে যাওয়া এক মহা মানব। যিনি ইসলামী তাহযীব-তমদ্দুনের ঝান্ডা নিয়ে বাংলার পরতে পরতে চষে বেড়িয়েছিলেন। নাম যার শেখ আল্লামা আব্দুল মালেক হালিম...

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:১৬

বৃশ্চিক রাজ বলেছেন:
ছোট ছোট গল্পগুলো পড়তে দারুণ লাগল।

গুড লাক ফর ইউ ব্রাদার।

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৫২

রায়হানা তনয় দা ফাইটার বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.