নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইবনে শামস

রায়হানা তনয় দা ফাইটার

আমি। কেউ না। তবে মাঝে মাঝে আমার দুষ্ট মনটা কানে কানে এসে বলে, তুমি মহাকালের উচ্ছল সমুদ্রে ভেসে বেড়ানো এক কচুরিপনা । কালের ঊর্মিমালার সাথে সাথে নাচা ছাড়া তোমার আর কোন কাজই নেই.....

রায়হানা তনয় দা ফাইটার › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিবৃতে স্বপ্নভঙ্গ (অনুগল্প)

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৩:২৩

বলতে বলতে ঈদ এসে উঁকি মারছে। পেছনে ফিরে থাকালাম। ছ্যাঁ! তেমন কোন ঈদের কথা আমার মনে পড়ছে না। তার মানে স্মৃতির ফ্রেমে বেঁধে রাখার মতো স্মরণীয় কোন ঈদ নেই আমার ঝুলিতে! নিজের উপর প্রচন্ড অভিমান হলো। তাই এবারের ঈদটা স্মরণীয় করে রাখবোই এমন চিন্তা চক্কর খাচ্ছে হরদম। ইচ্ছে থাকলেও কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছিনা। কী করা যায়? অবশেষে ছোট্ট একটা উপায় এসে কড়া নাড়লো মনের দরজায়। তাহের মানিক। আমার বিশ্বাসী বন্ধুদের অন্যতম। শ’বারের উপরে বেচারা বাড়িতে যাওয়ার দাওয়াত করেছে। দূরত্বের দোহায় দিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো না। এবারের ঈদের ছুটিতে ও সাফ জানিয়ে গেল, “ঈদের পর দিন যদি আমার বাড়িতে না এসেছিস তো তোর সাথে জম্মের আঁড়ি।” জানি যাওয়াটা অসম্ভব। পারিবারিক চাপ প্রকোষ্টের কড়া নজরদারি বলে কথা। তবু হ্যাঁ বলে দিলাম। পাকাপাকি কথা না দিলে যে ও ছাড়ছেইনা।

ঈদের পরদিন। টুকটাক কাজ গতকালই শেষ করেছি। কাক ডাকা ভোরে শহরের অনিমেষে পা বাড়ালাম। কাউকে জানালাম না। খাল কেটে কুমির কেই বা আনতে চায়? টিভিতে গ্রামিণ ফোনের “প্রিয় টিউন” এ্যাডটা দেখেছেন? ওখানের পরিবার হলো আমার পরিবারের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। মাঝে মাঝে মনতো গুনগুনিয়ে গেয়ে ফেলে, আমি বন্দী কারাগারে....। কারাগারের দেয়াল ভাঙতে হবে। এ ছিল আজকের ভোরের শপথ। আর আমি ভোরের শপথ ভাঙিনা কখনো। দেয়ালের ওপাশে কী রঙ্গ চলছে তা দেখতেই হবে।

কাক ডাকা ভোর। হাঁটতে দারুণ লাগছে। বাড়ি থেকে কিছুটা দক্ষিনে হাাঁটার পরই মূল সড়ক। মুর্হুমূহু হিমেল হাওয়ার আলিঙ্গন। সারা শরীরে সুখের সুড়সুড়ি দেয়। মূল তোরণে উঠেই বিপদ পথ আগলে দাঁড়ালো। বাবা নামাজ পড়ে মসজিদের বারান্দায় পায়চারি করছে। হাতে তসবিহর ছড়া। বটবৃক্ষের আঁড়ালে চলে আসি। বৃক্ষটি যিনি লাগিয়েছেন তার জন্য দোয়া করলাম। প্রায় আধঘন্টা অস্থিরতায়। বাবা এশরাকের নামাজের নিয়্যত বাঁধলেন। তাড়াতাড়ি একটি সিএনজি করে সোজা চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন। ট্রেন ছাড়ার দুই মিনিট বাকি আছে। ভূ দৌড়ে ট্রেনে উঠতে যাবো এমন সময় মৃদু এক ধাক্কায় ছিটকে পড়ি। সামান্য ব্যাথা। ব্যাথার দগদগে অনুভূতির উপর সুখের প্রলেপ লেপে দিলো কোমল স্পর্শ। কারো ধাক্কায় যে এতো সুখ সুষুপ্ত তা আজই প্রথম উদ্ঘাটন করলাম। চিবুক, অধর-যুগল, আপেল রঙা ঠোটের অন্তরালে চিকচিক করা দাঁত, সুউজ্জ্বল ভ্রুকুটি আর কানে ঝুলানো দুলের অবাধ্য নৃত্যন সবকিছুই অসম্ভব রকমের সুন্দর।স্টাইলে বাঁধা চুলের কথা বাদই দিলাম। সরি সরি বলে হাত বাড়িয়ে দিলো। চোখের পাতার অবাধ্য লাফালাফি আর অতিযতেœ লাগানো কাজল আমাকে মোহিত করে রেখেছে। নো প্রবলেম বলে ট্রেনে উঠে পড়ি। পেছনে তাকানোর পাজি ইচ্ছেটাকে কোনমতে সামলালাম। অমরণী গাছের মতো ইচ্ছেটা বার বার জেগে উঠছে। অজানা অদ্ভূদ এক আকর্ষনে নেমে পড়ি অšে¦ষায়। হন্যে হয়ে খুঁজছি চারপাশে। এ সময়ে জ্বালায় কে? মোবাইল হাতে নিই। মানিক মিস দিয়েছে। উফ্ ব্যালেন্সই নেই। রিচার্জ করে ফিরছি। আবার ফোন বাজছে। নিশ্চয় মানিক। অপরিচিত নাম্বার! হয়তো ওর ব্যালেন্স নেই। রিসিভ করি। ওপাশ থেকে মেয়েলি কণ্ঠ ভেসে আসলো।

-একটু পেছনে তাকান, প্লিজ।

আমি পেছনে ফিরে থ বনে যাই। চোখ বন্ধ করে নিলাম। হ্যালোজিনেশন নাতো? নাকি দিবাস্বপ্ন! আস্তে আস্তে চোখ খুলি। স্বর্গের অপ্সরী আমার দিকে তাকিয়ে রহস্যভরা হাসি দিলো। গুটিগুটি পায়ে আমার দিকে এগুচ্ছে। মনে সুখের বদলে ভয় বাসা বাঁধা শুরু করেছে। সব ভয়কে সিন্দুকে পুরে মুখোমুখি দাঁড়ালাম। হাত বাড়িয়ে বলল, আমি মৃদুলা।

-আমি হৃদ্ধি।

-আপনি কোথায় যাবেন?

-কুমিল্লা। আপনি?

- আমি কুমিল্লা থেকে এসেছি। ঘুরতে। বাসার কাউকে না জানিয়ে। অনেকদিন ধরে মিনি বাংলাদেশ দেখার ইচ্ছে মনে পুষছি। প্রথমে বাসার সবাইকে অনুরোধ করেছিলাম। কেউ রাজি হয়নি। তায় না বলেই চলে এসেছি। কী বলেন ভাল করিনি?

এতোক্ষন ওর মুখের দিকে তাকিয়েছিলাম। অসাধারণ তার কথা বলার ধরন। জাদুর মতো আকর্ষণ করে। মাথা ঝাকিয়ে বললাম, খুব ভাল করেছো। কিন্তু আমার যে তেরটা বাজিয়ে দিলে?

-মানে?

রুদ্ধশ্বাসে ছুটে চলা ট্রেনকে হাতের ইশারায় দেখালাম। ও মুখে হাসির আভা জ্বালিয়ে বলল, আরে সমস্যা নেই। আজকের দিনটা আমরা এখানেই পাস করি। কাল ভোরে একসাথে কুমিল্লায় যাবো। আমিও উপায় না দেখে রাজি হয়ে যায়।

স্টেশন থেকে বেরিয়ে আসি। আকাশে সূর্য বত্রিশ দাঁত দেখিয়ে খিলখিলিয়ে হাঁসছে। সি এন জি নিয়ে ওকে ভেতরের সীটে বসালাম। আমি ড্রাইবারের সীটে বসতেই ও চেচিয়ে উঠলো, এই তুমি ভেতরে এসো। আমি মৃদুস্বরে বল্লাম, আমি এখানেই ঠিক আছি। গাড়ি চলছে। কদ্দুর না যেতে আবার গাড়ি থামালো ও। পেছন ফিরে বল্লাম, কী হলো? ও গাড়ি থেকে নেমে পড়লো। আমিও নেমে যায়।

-কি সমস্যা বলো?

ও কিছু না বলেআমার হাত ঝাপটে ধরে আমাকে গাড়ির ভেতরে ঢুকালো। আমি অবাক বিষ্ময়ে শুধু ভাবাছি। এ কার পাল্লায় ফেলেছো খোদা?

গাড়ি ছুটা আরম্ভ করলো। ও এখনো আমার হাত ধরে আছে। হৃদয়ের গভীরে অনুভূতিগুলো ভয়ে কাঁপছে। দু’হাত দিয়ে আমার ডান হাত চেপে ধরে বল্লো, সামনে বসে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখার কি আছে? এখন পাশে বসে ইচ্ছে মতো দেখে নাও। আমি নিজের অজান্তে আওড়ালাম, এভাবে তোমার চোখে চোখ রেখে পুরোজীবন পার করে দিতে পারবো। তুমি পারবে? দুজনেই লোচন আড়াল করে নিলাম। নিরব হয়ে গেছে ও। আমার হাতের উপর এসে পড়লো অশ্রুনীর। হাত সরিয়ে নিলাম। বাইরে খুব ফাঁকা। ও কি করছে বুঝতে পারছিনা। কিছুক্ষন পর গন্তব্যে পৌঁছে যায়। ভাড়া ও দিলো। টিকিট কেটে ভেতরে ঢুকছি। দুজনের মাঝে এক হাত দূরত্ব। ভেতরে অনবরত হাঁটছি। কারো মুখে কোন কথাই সরছেনা। প্রায় এক ঘন্টা কেটে গেলো এভাবে। মৃদুলা নিরবতা ভেঙে বলল, কফি নাও। আমি ওর দিকে না তাকিয়ে কফি হাতে নিলাম। মন চায়ছে ও আমার পাশঘেষে বসুক। অনেক্ষন হয়ে গেলো। ও বসছেনা। ও হয়তো চায়ছে আমি ওকে বসতে বলি। অবশেষে পাশে বসলো। সাথে সাথে আমার মনে বিদ্যুৎবেগে শান্তির পয়গাম ছড়িয়ে পড়ে। ও আমার থুথনি ধরে ওর দিকে ফেরালো। গম্ভীর গলায় শুধালো, অল্পেতে তোমাকে বিশ্বাস করেছি। অনেক বেশী বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে তোমাকে। করছিও। তুমি সে বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতে পারবে তো?

-তোমাকে দেখেই ভাল লেগেছে। তায় উচ্ছে করে ট্রেন মিস করেছি। বিশ্বাস আমিও তোমাকে করি। না হলে অচেনা,অজানা মেয়ের সাথে দিন কাটাতে রাজি হয়েছি কোন লজিকে? আমিও না পুরো পাগল। রোমান্টিক কথা বলে তোমার মুডটাই নষ্ট করে দিয়েছি। অনেক্ষন ধরে তুমি হাসছো না। আমি চাই তোমার মুখে সর্বদা হাসি লেগে থাকুক। ও আস্তে আস্তে আমার পাশ ঘেষছে। জড়িয়ে ধরতে গিয়ে আবার হাত ফিরিয়ে আনলো। কাঁধে মাথা রাখলো। চোখ বন্ধ হয়ে আসলো আমার। নিদারুন সুখে সারা শরীর কাঁপছে।

- হৃদ্ধি, ভয় করছে তোমার?

- হ্যাঁ, খুব ভয় করছে। তোমার?

- আমারো করছে। তবে খুব একটা না। তুমি পাশে আছো তায়। কোন কবিতা মুখস্ত আছে?

-না, কবিতা মুখস্ত রাখতে পারিনা। তোমার মুখস্থ আছে?

- হ্যাঁ। তবে বিখ্যাত কোন কবির নয়। অখ্যাত কবি। আমার এক ফ্রেন্ড। তাসমিয়া। ওর ফ্রেন্ড লিস্টে পেয়েছিলাম ঐ কবির আইডি। শুনবে?

- তোমার মুখে অখ্যাত কেন কুখ্যাত মানুষের গালিও আমার হৃদয়ে অবিনশ্বর কবিতা হয়ে গাঁথবে। শুনাও..

- একটু চিমটি কাটোতো? / কেন? হঠাৎ! কী হয়েছে? / বুঝতে পারছিনা স্বপ্ন কিনা? / নিশ্বাস দূরত্বে বসে তুমি আমি গল্প করছি। / জোনাকিরা আলোর পসরা সাজিয়ে অভিবাদন জানাচ্ছে আমাদের। / ঠান্ডা বাতাস তোমাকে জড়িয়ে ধরতে অনুরুধ করছে। / রাতের নিকষ কালো আঁধার / জনমানবের অভদ্র নয়নের আড়াল করছে আমাদের। / আজ ইচ্ছে করছে, এই সুখের ছায়ায় প্রাণ ত্যাগ করতে। / যদি স্বপ্নের মতো নিদ ঠুঠার পর / তোমাকে আর খুঁজে না পায়? / ও ব্যাথার আঘাত সহ্য করার হিম্মত আমার নেই। / তার চেয়ে বরং তোমার বাহুডোরে চিরনিদ্রার আয়োজন সেরে নিই।

চোখ ঝাপসা হয়ে এসেছে। ও লুকিয়ে ওড়নার আচলে অশ্রুনীর মুছতে ব্যস্ত। সব ভয় আর ভাবনা দূরে ঠেলে দিয়ে ওঠে পড়ি। হাতে হাত রেখে ব্যস্ত নগরীর পীচঢালা পথে বেরুলাম। চারপাশের বিকট, বিশ্রী শোরগোল উপেক্ষা করে মৌন-ভালবাসার আবেগে ঝড় বয়ছে হৃদয়ে। জানি আমার মতো ওর হৃদয়েও সুখকর এক ব্যাথা বিরাজ করছে।

-রাত কোথায় কাটাবা? মৃদুলা মাটির বুকে চোখ রেখে বলল।

-নৌকায়।

-কী?

-হ্যাঁ, চলো কর্ণফুলী নদীর পাড় থেকে নৌকা ভাড়া করবো। পুরো রাত ওখানে কাটাবো।

--না না । আমার ভয় করছে।

- আমার উপর আস্থা আছে?

-তাতো আছে।

-তাহলে আজ রাতটা চোখ বন্ধ করে আমার সাথে চলো। আমার জান্নাত দেখাতে মন চাইলে তা দেখাবো আর যদি ইচ্ছে করে তোমাকে নিয়ে জাহান্নামের আগুনে পুড়বো তাহলে তাই করবো।অ

এবার মৃদুলা চোখ তুলে তাকাল। মনে হলো কেউ হৃদয়ে বর্শা গাঁথছে। আমার বাঁ হাত ধরে আরো কাছে টেনে নিলো। স্বর্গীয় সুখের মহরত চলছে আমার জীবনে। অনেক্ষন দাঁড়ানোর পরও কোন নৌকা পেলামনা। মাগরিবের পর একটা জুটলো। দেখতে বেশ চমৎকার। মৃদুলা খুব পছন্দ করেছে এই বড় কথা। আমি লাফিয়ে উঠে পড়ি। ওকে তুলতে গিয়ে বেগ পেতে হলো। মৃদুলা ভয়ে কুঁকড়ে গেছে। নৌকায় পা দিতেই আমাকে আঁকড়ে ধরে। অ™ভুত এক অনুভূতি সারা গায়ের লোমগুলোকে দ্রোহী করে তুলেছে। জীবনের প্রথম কোন মেয়ের আলিঙ্গনে। সিনা ব সিনা আলিঙ্গন যাকে বলে। আমার শার্ট ওর চোখের জলে সিক্ত। নয়নাশ্রুকে আটকে রাখতে পারিনি নিজেও। বাঁধবাঙা নদীর জলের মতো গড়িয়ে পড়ছে। দুজনে মুখোমুখি বসলাম। সুখ-দুখের অনেক গল্প করি। এখনই ওকে জানালাম আমিও বাড়ির কাউকে না জানিয়ে এসেছি। মৃদুলা ওর জীবন-গপ্পের ঝুলি থেকে এক এক করে আমায় শুনাচ্ছে। আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো চেয়ে আছি। ভাল লাগছে খুব। মনে হচ্ছে এভাবেই সারাটা জীবন কাটিয়ে দিতে পারলে ভালো হতো।

-মৃদুলা তোমার কি আর কোন কবিতা মনে আছে?

-না, তবে একটা কাজ করা যায়।

-কী

-আমার ফেইসবুকে অখ্যাত কবিটার কবিতা আছে অনেক। ওখান থেকে আবৃত্তি করতে পারি।

- ওকে। ওখান থেকেই শুনাও।

-ঠিক আছে। শুনো-

“ এ কি করছো? এসব কী? / চুপ! একটা কথাও না। / আজ আমি বলবো; তুমি শুনবে। / আমি দেখাবো; শুধু দেখবে তুমি। / আর হৃদয় দিয়ে অনুভব করবে। / এতো ভয় পাচ্ছো কেন? / তোমাকে র‌্যাপ করবো না। / তোমাকে ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছেও নেই আমার।/ তোমার চোখে চোখ রেখে, / মায়াবী হাসিতে মুগ্ধ হয়ে / সারাজীবন পার করে দিতে পারবো। / এক এক করে শার্টের সব বোতাম খুলে / অনাবৃত পিঠ ওর নয়নের সম্মুখে ধরলাম। / ও চমকে উঠে মুখ চেপে ধরলো / মেহেদী রাঙা হাতের আঁড়ালে। / সেই চমকের আভা এখনো তার নির্মল ওজুদে চমকাচ্ছে। / গুনে দেখো, সাড়ে চারশো বেতের দাগ। / বন্ধুকে দিয়ে গুনিয়েছি। / নিঁখুত গণনা তার। / ভাল করে দেখো । / সে দাগগুলোর উপর লেপ্টে আছে আরো দাগ। / দাগের উপরও দাগ। / গুনে শেষ করতে পারবে না। / প্রতিটি দাগ কী বলছে শুনছো? / চিৎকার করে তোমার প্রতি আমার / অকৃত্রিম, নিঁখাদ আর অগাধ ভালবাসা বয়ান করছে। / কী বলো এসব? / কে করেছে তোমার এই বেহাল দশা? / শুনতে চাও? শুনো তাহলে; / শুধুকে তোমাকে ভালবাসি বলে / মা-বাবা-ভাই সকলে পালা বদল করে ধুনেছে। / ওদের প্রতি বেত্রাঘাতের সাড়া দিয়েছে অবুঝ অনুভূতিরা।/ নিরবে কেঁদেছি। বালিশ ভিজিয়েছি।/ আমি ফেরদৌসি নই, নই রবীন্দ্রনাথ। / জীবনানন্দের পাশ ঘেষার যোগ্যতা নেই।/ নজরুল তো বহুত দূর কী বাত। / তায় এসব কষ্টকে কলমের আঁচড়ে / অক্ষরের ফ্রেমে বেঁধে রাখতে পারিনি।/শুধু বাতাসে মিশে আছে অশ্রু হয়ে।/কান পেতে শুনো। বাতাসের প্রতিটি প্রবাহে/ বিরহ-বিলাপ আর আমার দুঃখ-গাথা শুনবে।

কবিতা শেষ করে উলঙ্গ নদীর বুকে তাকালো। আর আমি ওর দিকে অপলক চেয়ে আছি। হঠাৎ ও আমাকে জড়িয়ে ধরলো। খুব জোরে। অনেক্ষন এভাবে নিশ্চুপ পড়ে রইলাম দুজনে। কখন যে নয়নে নিদ্রা আসলো বুঝতেই পারলাম না।

মাঝির ডাকাডাকিতে ঘুম ভাঙল। মুখ হাত ধুয়ে বসলাম। ভীষণ ক্ষিদে পেয়েছে। গতরাতে আনা তিনটা বিরানির একটাও খুঁজে পেলামনা। মাঝি লজ্জিত মুখে বল্লো, ভাই রাতে আপনাদের বহুত ডেকেছি। জাগেননি। খরগোশ ঘুম দিলেন এক্কান। আমার খুব ক্ষিদে পেয়েছিলো। তিনোটায় ভরে নিয়েছি।...” আমি ঠিক আছে বলে মৃদুলাকে নিয়ে নেমে পড়লাম। এখনও আবছা আধার। রাস্তায় তেমন যানবাহন নেই। স্টেশনে পৌঁছলাম। সাথে যেতে ইচ্ছে করছিলো। কিন্তু পরিবারের সবার কথা মনে পড়ে। খুব খারাপ লাগছে। ওর দিকে তাকিয়ে বল্লাম, আমার সময় শেষ। তোমার সাথে যাওয়া হবেনা। বাড়ির সবায় চিন্তায় থাকবে। ও কোন রা কাড়ছেনা। টিকিট কেটে ওকে সিটে বসিয়ে আমি বেরিয়ে আসি। কদ্দুর আসার পর পিছুটান অনুভাব করলাম। সহজে পা ফেলতে পারছিনা। এগুতে কষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে, সাত গাধার বোঝা একাই বইছি। আমার পুরো জীবন ট্রেনে তুলে দিয়ে নিথর দেহ নিয়ে ফিরছি। মৃদুলাকে আরেকবার দেখার ইচ্ছে জাগলো। জানি হাজার বার দেখেও শেষ করতে পারবো না। তারপরও দেখতে চায় এ মন। ঘাড় ফেরাই। মৃদুলা ট্রেন থেকে নেমে আমার দিকে ধেয়ে আসছে।

-হৃদ্ধি, তোমাকে একটা জিনিস দিতে ভুলে গেছি। ও ব্যাগ থেকে একটা কার্ড বের করে আমার হাতে ধরিয়ে দিলো। জড়িয়ে ধরে রাখলো পাঁচ মিনিটের মতো। আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম। জিজ্ঞেস করলাম, কিসের কার্ড দিলে? খুলে দেখো জানতে পারবে- বলে চলে গেলো। আমি খুলে দেখলাম। অবিশ্বাসের ঢোক গিল্লাম আখি মুদে। হৃৎপিন্ডটা কে যেন টেনে ছিঁড়ে ফেলছে। দুদিন পর মৃদুলার বিয়ে! এ কিভাবে সম্ভব? ওর দিকে তাকালাম। মৃদুলা এক পা ট্রেনে তুলে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। গন্ডদেশ পেরিয়ে মাটির বুকে জায়গা করে নিচ্ছে অশ্রু। প্রথম দেখাতে ওর মুখে যে হাসি দেখেছিলাম। কষ্টের মেঘপুঞ্জ তা গিলে নিয়েছে। অমনি ট্রেন ছুটা আরম্ব করলো। দূরে ছিটকে পড়লো মৃদুলা। রক্ত ঝরছে মাথা থেকে। দৌঁড়ে তার মাথা কোলে তুলে নিই। ও দু’হাতে আমার কোমর আঁকড়ে ধরে। আমার দিকে অপলক চেয়ে আছে। আমিও তাকিয়ে আছি তার দিকে। অবচেতন তার দেহের অবিনাশী টান আমার ভেতরে দারুণভাবে নীল রঙের পসরা সাজাচ্ছে।



মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৫:৩৪

বদিউজ্জামান মিলন বলেছেন: পুরাই বাংলা সিনেমা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.