নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কথা হয়ে যায়..

নূরুল আলম রাজু, উন্নয়নকর্মী! একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত।

রাজু নূরুল

রাজু নূরুল › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘ভাবি শুধু এখানেই থাকবো, চলে যেতে মন নাহি চাইছে……’

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৮


বহুদিন বাদে, জানুয়ারির ৯ তারিখে, জাহাঙ্গীরনগর তার আপন রঙে মেতেছিল!

প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনী। সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলোতেই টের পাওয়া যাচ্ছিল প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা কীভাবে মুখিয়ে আছে প্রিয় ক্যাম্পাসটাকে রাঙাবার জন্য। তাদের উচ্ছ্বাস ছিলো চোখে পড়ার মতো! সেই উদ্দাম সত্যি হলো। সব বাধা বিপত্তি পেরিয়ে, সব আশংকাকে দূরে ঠেলে, হাজার হাজার প্রাক্তন শিক্ষার্থী যোগ দিলো প্রিয় ক্যাম্পাসে। পূণর্মিলনীতো কেবল উপলক্ষ্য, আসল উদ্দেশ্যটা পরিস্কার। বহুদিন বাদে, প্রিয় ক্যাম্পাসে পদচারণা, প্রিয় সব মুখগুলোকে কাছে পাওয়া, জড়িয়ে ধরা, সারা ক্যাম্পাসজুড়ে চষে বেড়ানো আর গলা ছেড়ে গান!

কে আসেনি এই মিলনমেলায়? প্রথম ব্যাচ থেকে বর্তমান, প্রায় সবারই খোঁজ পাওয়া গেলো! সারা পৃথিবী থেকে এসে যোগ দিয়েছে। এমেরিকা, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, দেশের নানা প্রান্ত থেকে যোগ দিয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। কোন বিপত্তিই আটকাতে পারেনি তাদের! প্রথম ব্যাচের এক ভাই (নামটা মনে করতে পারছিনা এখন) যখন মঞ্চে এলেন, এই ভেবে শিহরিত হচ্ছিলাম যে এই মানুষটা ৪৩ বছর আগে এই ঝোপ-জঙ্গলের আখড়ায় কোন আশায় এসেছিলেন? কী করে জানতেন, এই ক্যাম্পাস একদিন স্বপ্নের চারণভূমি হবে?

এই পুনর্মিলনী সব মান-অভিমান ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছে। যাদের সাথে, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কত-শত অভিমান ছিল, কথা হয়নি নানা কারণে, সবাই সবকিছু ভুলে বসে আছে, দেখা হওয়ামাত্রই জড়িয়ে ধরেছে, দীর্ঘ সময় একসঙ্গে থেকেছে, হেঁটেছে। কোথায় সম্ভব এসব, জাহাঙ্গীরনগর ছাড়া?

মূল অনুষ্ঠান মুক্তমঞ্চকে ঘিরে হলেও, সারা ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়েছিলো প্রাক্তনরা! তাদেরই দখলে ছিল চৌরঙ্গী, পুরাতন কলা ভবন, শহীদ মিনার, অমুর একুশের পাদদেশ, লাইব্রেরীর চত্ত্বর, মেহের চত্ত্বর, ক্যাফেটেরিয়ো, সেন্ট্রাল মাঠ, সমাজ বিজ্ঞান এবং ট্রান্সপোর্ট। কাউকে কাউকে দেখা গেল মেয়েদের হলের ওদিকটায় ঘুরপাক খাচ্ছে। একজন টিপ্পনি কাটলো, ‘পুরনো অভ্যাসটা ভুলতে পারেনি বোধহয়!’ অমুর একুশের গোড়ায় দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎই এক ভাই এসে জিজ্ঞেস করলেন, কী? কোন ব্যাচ? বলতেই উত্তর দিলেন, আচ্ছা! মানিব্যাগ ডিপার্টমেন্ট? জানা গেল তিনি পঞ্চম ব্যাচের শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ! কী তরুন এখনো! কোমরে প্যাঁচানো রঙ-বেরঙের স্যুয়েটার, কপালে তোলা সানগ্লাস, পুড়ে যাওয়া জিন্স! জাহাঙ্গীরনগরের পোলাপাইনের বয়স বাড়েনা!

বটতলায় খাবারের দোকানে ভিড় দেখে, প্রশ্ন জাগলো মনে, এতো এতো শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করেনি? আসল ঘটনা অন্য। অনেকেই রেজিস্ট্রেশন করেছে, কিন্তু একবেলার জন্যে বটতলায় খাওয়ার সুযোগটা ছাড়বে কেন? নতুন আর পুরনোদের ফুটবল ম্যাচে, পুরনোরা যেভাবে, দাপটের সাথে জিতলো! কে বলবে বয়স বেড়েছে? ওল্ড ইজ অলয়েজ গোল্ড!!!

সন্ধ্যা পড়ে গেছে তখন! মুক্তমঞ্চে আসর বসেছে। নেতৃত্বে রাজু ভাই! পুরো জাহাঙ্গীরনগরটা জমা হয়েছে দর্শক সারিতে! কে নেই সেখানে? বর্তমান উপাচার্য, সাবেক উপাচার্য, শিক্ষক-ছাত্র-ছাত্রী, সাবেক-বর্তমান, সব! ২২ ব্যাচের রাসেল ভাই যখন ধরলো, ‘ভাবি শুধু এখানেই থাকবো, চলে যেতে মন নাহি চাইছে’, গলাটা ধরে আসছিলো যেন! চলে যেতে যে মন চায়না!

যজ্ঞ শেষ হয়েছে। পাখি তার ঘরে ফিরেছে! অংশ হয়েছে যাপিত জীবনের! অথচ হ্যাংওভার কেটেছে কী? সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো যেন এক খন্ড জাহাঙ্গীরনগর হয়ে আছে! একজন স্ট্যাটাস দিয়েছে, ‘নাহ্.... পেয়ে বসেছে.... শুধুই জাহাঙ্গীরনগর।’ ১০ তারিখ সকালে একজনের স্ট্যাটাস, ‘ঘুম ভাঙলো, সব খালি খালি লাগছে, কতজন রেজিস্ট্রেশন করলো, এই কাজ, সেই কাজ, এখন কিছুইতো করার নেই! মনে হচ্ছে, আমার কিছু করার নেই!’

৯ তারিখকে মাথায় রেখে পারভেজ চৌধুরী’র স্ট্যাটাসটা শেয়ার না দিলেই নয়। ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসটা আমার কাছে এক সুবর্ণ গ্রাম। এখানে কত যে বিষাদের অভিমানী মুখ থাকে! বিকালের রোদ। আনমনা মেঘ ভেসে ভেসে নিরুদ্দেশে যায় তবুও সেখানে বৃষ্টি হয় । বৃষ্টি ধোয়া গাছের প্রতিটি পাতা উজ্বল চকচকে যেন এক একটি স্মৃতিভোজী আয়না। ক্যাম্পাস জীবনটা ছিলো নির্জন বনে কেবলই আগুন ধরিয়ে যাওয়া । সবকিছু বদলে যায়। সেইজন্যে কম যাওয়া হয়। এক একবার যাওয়া মানে দূরে সরে যাওয়া এক অন্য ক্যাম্পাসে । চারপাশ থেকে ঘিরে ধরে হিচককের দ্যা র্বাডস এর সেই দূর্বিণীত পাখিদের মত হারানো সময়। ভালো থেকো আরণ্যক, প্রিয়ভূমি, ধ্রুপদী আকাশ আর বোকা উদ্ভিদ’

ভাল থেকো প্রিয় জাহাঙ্গীরনগর। মন খারাপের বিকালে। ভেঙ্গে পড়লে, মন ভেঙ্গে গেলে। সব কিছু যখন ক্লান্তিময় লাগে, জানি তোমার বুকে পা রাখলে সতেজ হই!

এইভাবে আগলে রেখো।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.