নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কথা হয়ে যায়..

নূরুল আলম রাজু, উন্নয়নকর্মী! একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত।

রাজু নূরুল

রাজু নূরুল › বিস্তারিত পোস্টঃ

এই লেখাটা রাজনৈতিক!

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:০৬

বহুদিন ধরে সমুদ্রে যাওয়ার শখ সরকারি ঠিকাদার নুরুজ্জামান সাহেবের! তার নিজের যতটা না ইচ্ছে, তার চেয়ে বেশি বায়না দশম শ্রেণী পড়ুয়া মেয়ে মাইশা’র। ছোট্ট মেয়েটার বায়না মেটাতে স্ত্রীসহ কক্সবাজার গিয়েছিলেন। তার স্ত্রী অর্ধমৃত হয়ে ফিরেছেন। কিন্ত মাইশা আর তার বাবা ফিরেনি! না ভুল হলো। তারাও ফিরেছেন। ফিরেছে ঘুমন্ত বাপ-মেয়ের পুড়ে কঙ্কাল হয়ে যাওয়া শরীর! তিন তারিখ ভোরে, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে, তাদের সাথে আরো ৯ জন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। নুরুজ্জামানের কাছে পৌঁছে দিতে পারি ইংলিশ লেখক রেডক্লিফের একটা লাইন, ’সন্তানের উপস্থিতিতে মৃত্য অনেক সান্ত্বনাদায়ক!’

ক’দিন আগে বিভিন্ন পত্রিকা, সামাজিক গণমাধ্যমে একটা ছবি সবার হাতে হাতে ঘুরেছে। কেউ চোখ ফেরাতে পারেনি খবরের শিরোনামটা থেকে, ‘ভাই, আগায়া আসেন। আগুনটা নেভান’! একজন অসহায় ট্রাকের মালিক, নিজের পুড়তে থাকা, বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল, ট্রা্কটার সামনে বসে আহাজারি করছেন। তার আগে নিশ্চয় সামনে যা কিছু খড়কুটো পেয়েছেন, ধুলা-বালি, বাঁশের লাঠি, সব কিছু দিয়ে আগুন নেভাতে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এইভাবে আগুন নেভেনা।

গত ২৭ দিনে ৫০ জনের বেশি মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। যাদের ৪৭ জন সাধারণ মানুষ। যারা রাজনীতি নামের এই বিষধর সাপের ধারেকাছেও নেই। শুধুমাত্র ঢাকা মেডিকেল থেকে ১৩৫ জন পুড়ে যাওয়া মানুষ চিকিৎসা নিয়েছেন, এখনো ভর্তি আছেন ৬৫ জন। এখন শোনা যাচ্ছে, বিভিন্ন হাসাপাতালে আরো বার্ণ ইউনিট বাড়ানো হবে। ঢাকায় নতুন দু’টি ইউনিট বসানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তার মানে, এইভাবে আগুনে পুড়তে থাকা আমাদের ভবিতব্য? আমরা ভাবছি পুড়ে যাওয়া মানুষের চিকিৎসা কীভাবে নিশ্চিত করা যায়। এটিও আমাদের যাপিত জীবনের অংশ হয়ে যাচ্ছে, হরতাল-অবরোধ আর বাকি সব সহিংসতার মতো? কই এই বোমাবাজি, মানুষ হত্যা বন্ধের কোন লক্ষণতো দেখা যাচ্ছেনা? অথচ আমরা জানি, কারা করছে এসব।

কী করে আমরা ভাববো, এই পেট্রোল বোমা বানানো থেকে, মানুষের ওপর নিক্ষেপ, সবই করছে এই দেশেরই কিছু মানুষ! এই মানুষগুলো কারা? টিভির রিপোর্ট থেকে এইসব প্রশ্নের কিছু কিছু অংশের জবাব পাওয়া গেল: প্রতি ককটেল পিছু ভাড়া ৩০০ - ৫০০ টাকা। আর পেট্রোল বোমা মারলে মাথা পিছু ভাড়া ৭০০ - ১০০০ টাকা। খবর থেকে আরো জানা যায়, ককটেল বহন এবং বানানো বেশ ব্যয়বহুল এবং ঝুঁকিপূর্ণও বটে! সে তুলনায় পেট্রোল বোমা অনেক সহজলভ্য, খরচ কম। উপকরণ পাওয়া সহজ এবং বহণযোগ্য! করছে একবারে তরুন কর্মীরা; যাদেরকে দল থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে, যদি এসব কাজ না করে। এসবের প্রতিকার কী নেই?

ইতোমধ্যে এই অচলাবস্থার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা তৈরি হচ্ছে। আমরা প্রকল্প এলাকায় যেতে পারছিনা, সব স্থবির হয়ে ওঠছে। ব্যবসায়ীরা উদ্বেগের কথা জানাচ্ছেন। রাস্তায় নামছেন। বিনিয়োগকারীরা আতংকে আছে। রপ্তানি আয় কমছে। ভরা মৌসুমে কৃষক তার সবজির দাম পায়নি। কিন্তু সবচেয়ে যে জিনিসটা বড় হয়ে সামনে আসছে সেটা ‘ভয়’। এই ভয়টা দূর করা ভীষণ দরকার। বড্ড দেরি হয়ে যাচ্ছে। গত ক’দিন আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে পুড়ে যাওয়া মানুষদের ছবি দেখাচ্ছিলেন। নিজেই দেখছিলাম টিভিতে। খুবই কষ্ট হচ্ছিল। বিশ্বাস করি, এখানে কোন রাজনীতি নেই। বিশ্বাস করতে চাইনা, কেউ মানুষ মারছে আর কেউ মৃত মানুষকে নিয়ে রাজনীতি করবে। এই ছবিগুলো এখন আর কেউ দেখতে চাইছেনা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। সবাই চাইছে, এই অবস্থার অবসান। কেউ আর পুড়ে যাওয়া মানুষ দেখতে চায়না। হত্যাকারী, বোমাবাজের সর্বোচ্চ সাজা চায়!

পৃথিবীখ্যাত শিল্পী বব ডিলানের একটা লাইন আছে, ‘জন্মের পর যার ব্যস্ততা থাকেনা, তাঁর ব্যস্ততা থাকে মৃত্যুর জন্য’! যে ৫০ জন মানুষ গত ২৭ দিনে পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে, একজনেরও মৃত্যুর জন্যে ব্যস্ততা ছিলনা, ব্যস্ততা ছিলো বেঁচে থাকার জন্য, ভাল থাকার জন্য, দু পয়সা রোজগার করার জন্য! ব্যস্ততা ছিলো প্রিয় সন্তান, স্ত্রী, স্বামী, বাবা-মায়ের বিস্তৃত হাসিটা দেখার জন্য। এই দেশে এখন কেউ হাসছেনা। ঘোর রাজনীতিক হলেও! গত ক’দিনে যতজনের সাথে কথা হয়েছে, যেখানে-সেখানে, সবার মনটা ভীষণ খারাপ! সবাই কাঁদছে। সবার বুকের ভেতর থেকে গোঙানির শব্দ শুনতে পাচ্ছি।

এই হাসিটা কেড়ে নিয়েছেন আপনারা। এই কান্নার কারণও আপনারা! রাজনীতিবিদগণ। যারা পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে, ৫০ ভাগ পুড়ে যাওয়া শরীর নিয়ে লড়ছে যারা, তাদের মুখে কখনোই আর হাসি ফিরে আসবেনা জানি। আর একটা মুখের হাসিও যেন ফুরিয়ে না যায়, সেই দায়িত্বটাতো নিতে পারেন। দায়িত্ব আপনাদেরকেই নিতে হবে।

কেননা জনগণের দায়িত্ব আপনারা নিয়েছেন। জনগণের কাছ থেকে। সুকৌশলে। ছিনিয়ে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.