নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যখন পকেটে টাকা ছিলোনা, বন্ধু বান্ধবরা দলবেঁধে বই মেলায় যেতাম। জাহাঙ্গীরনগর থেকে বাসে চেপে ঢাকা! ঢাকায় আসার পরও প্রথম বছরগুলোতে একই ঘটনা ঘটতো। সারা ফেব্রুয়ারি জুড়ে বেশ ক’বার! কত-শত বই চারিদিকে, অথচ শূণ্য পকেট। বুকটা হাহাকার করতো! লোলুপ দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকতাম বিরাট-দীর্ঘ তালিকার দিকে! ভাবতাম, টাকা হলে একদিন সব কিনে ফেলবো। তারপর আমরা বড় হলাম, পকেটে টাকাও আসলো! বন্ধুরা সব বিত্তবান হলো। অথচ বইমেলায় গিয়ে বই কেনার কথা উঠলে আজকাল ‘হায় হায়’ শব্দ শোনা যায় (কারো জ্বর, কারো পেটে ব্যথা)। বিত্তের সাথে বইয়ের কী তবে বিপরীতার্থক সম্পর্ক?
বই কিনতে রাজি না হলেও, বই ‘চুরি’র ঘটনা বেশ বেড়েছে আজকাল। বই ধার দেয়ার রীতি নেই বলে, কেউ কেউ প্যান্টের ভেতরে গুঁজে চম্পট দেওয়ার সময় হাতেনাতে ধরা পড়ছে। লঘু শাস্তিও দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কেউ আবার পড়ার নামে নিয়ে নানা ধানাই-পানাই! লক্ষণ কিন্তু শুভ…বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বেশ সাহস করে শামসুর রাহমানের শ্রেষ্ঠ কবিতা’র বইটা কিনে ফেলেছিলাম। খুব কাছের একজন ধার নিল! ব্যস...ফেরত দেয়ার নাম নাই! ওই এক বই নিয়ে, শেষেতো বন্ধুত্ব ভেঙ্গে খান খান!!!
ফেব্রুয়ারি মানে আর কিছু না, বাংলা একাডেমীর বইমেলা।
ব্যাপারটা এইরকম না যে, বইমেলা শুরু হলে সারাক্ষণই ওদিকটায় পড়ে থাকা হয়; বরং ব্যাপারটা এরকম যে, সারাক্ষণই মনের মধ্যে একটা ভাবনা কাজ করে। এইদেশে, ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে বড় কিছু একটা হচ্ছে। যেটা অসাম্প্রদায়িক, দলমতের উর্ধ্বে। সবার মুক্ত প্রবেশাধিকার। হাজার হাজার, লাখে লাখে মানুষ দলবেঁধে, সাজগোজ করে বই মেলায় যাচ্ছে। কী অপূর্ব দৃশ্য!
আমি জানিনা, দুনিয়ার আর কোন দেশে, সপ্তাহের ছুটির দিনের বিকেলে, সেদেশের ধনী-দরিদ্র-মধ্যবিত্ত, আপামর জনতা, গোটা পরিবার নিয়ে বিরাট লম্বা লাইনের শেষে এসে দাঁড়িয়েছে বইমেলায় ঢুকবে বলে। সহকর্মীর কাছে গল্প শুনছিলাম, গত শুক্রবারের ঘটনা। মেয়েদেরকে নিয়ে গেছেন বইমেলায়। কিন্তু এত বড় লাইন আর এত ধাক্কাধাক্কি যে, কোনভাবেই সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না গেইটটা পার হবেন কী করে? নাকি ফিরে আসবেন! শেষে নিরাপত্তা রক্ষীকে ম্যানেজ করে বের হবার দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকলেন। বাণিজ্য মেলাতেও কিন্তু এমন উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়না। অনেককে বলতে শুনেছি, আরে ধূর বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার কী আছে? কিন্তু বইমেলায় একবার তো যেতেই হবে...
চারিদিকে শোনা যায়, আমাদের পাঠাভ্যাস অনেক কমে গেছে। কথাটা খানিকটা হলেও সত্য মনে হয়। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে তাকালেও কিছুটা অনুমান করা যায়। সবাই কিছু না কিছু লিখছে! কে কী পড়ছে, নতুন কী পড়লো, সেই প্রসঙ্গে খু্ব বেশি ‘লেখা’ দেখা যায়না।
তবুও কিছু কিছু মানুষ লিখে যাচ্ছে। অবিরাম। কত আগে শুনেছি, কবি হলে না খেয়ে মরতে হবে। এই না খেয়ে থাকার আশংকা নিয়েও কতজন লিখে যাচ্ছে। চেনা-জানা বহুজন লিখছে। তাদের বইয়ের মলাট যখন নানা মাধ্যমে দেখি, মন ভাল হয়ে যায়। মাঝে মাঝে এমন সব কাউকে দেখি, কখনো জানতামও না তিনিও লেখেন। বই মেলায় গেলে এইসব লেখক বন্ধুদের সাথে দেখা হয়ে যায়। বড় ভাই, সহপাঠি অথবা ছোট ভাইয়েরা ছুটিয়ে লিখে যাচ্ছে। এইসব লেখকদের সাথে দেখা হবার লোভে বইমেলায় যাই। দেখা হয়ে যায়।
বুধবারে বইমেলায় গেলাম! কর্মদিবস, সাথে যোগ হয়েছে হরতাল-অবরোধ। মেলা প্রাঙ্গন প্রায় ফাঁকা। আশেপাশে হাঁটছে বা বই উল্টে-পাল্টে দেখছে, এরকম বেশ অনেকজনের কথাই কানে আসছিলো। মূল বক্তব্য একটাই, ‘আরে! বই কেনাতো কোনো ব্যাপার না। কিন্তু পড়ার সময়টা কই?’ এদেশের বর্ধনশীল জিডিপি’র কারণটা জানা গেল! লোকে এতই ব্যস্ত যে, বই পড়ার সময়টুকুও নাই।
এতসবের মাঝেও মেলাটা জমজমাট হচ্ছে দিনে দিনে। আরো প্রসারিত হচ্ছে। গত বছর সোহরাওয়ার্দি উদ্যানেও বেশ ঠাসাঠাসি ছিল। এবারতো বেশ খোলামেলা লাগলো। ভেতরে অনেক জায়গা। আরামে হাঁটা-চলা করা যাচ্ছে। উল্লেখযোগ্য কোন স্টল না থাকলে একাডেমীর মূল প্রাঙ্গনটাই জমজমাট বেশি! ঐতিহ্যের একটা ‘ব্যাপার’ আছে না! তবে ওদিকটায় বোধহয় ‘সেলফি’ও ভাল আসে!!! সোহরাওয়ার্দির দিকটায় কেউ কেউ এমনভাবে স্টল সাজিয়েছেন যে চোখ ফেরানো যায়না। অনেকটা জায়গা জুড়ে! চারদিক খোলা! নান্দনিক! এর সবইতো ভাল লক্ষণ! তারমানে, বইয়ের বেচা-কেনা ভাল! ব্যবসা না হলে বিনিয়োগতো হতো না!
বইমেলা মানে, সারি সারি বই কেনা। সারা বছরের খোরাক সঞ্চার। লোকে ঠিকই বলে, সময়টা আসলেই কমে গেছে। খেয়াল করে দেখলাম, গত বছরের কেনা অনেক বই-ই পড়তে পারিনি এখনো! তবুও জমে স্তুপ হচ্ছে। কয়েকদিন ধরে নতুন বই সারা ঘর জুড়ে গড়াগড়ি খাবে। পাতা উল্টে কাঁচা গন্ধটা নেবো। উল্টে-পাল্টে দেখবো। ফ্ল্যাপটা পড়বো। শুধু কেনা নয়, বই মেলা মানে দু’চারটা বই উপহার পাওয়ার লোভ। এই লোভটার মীমাংসার জন্যেও বোধহয় এক বছরের দীর্ঘ অপেক্ষা!
২| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:৩৭
রাজু নূরুল বলেছেন: ঠিকই বলেছেন প্রোফেসর শন্কু! কথা হলো, ফেসবুকে অস্তিত্ব জানান দেয়াটা নিশ্চয়ই খারাপ নয়, কিন্তু বাকি চর্চাগুলো ঠিকঠাকভাবে না করাটা অন্যায়.।
৩| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৪১
রাজীব নুর বলেছেন: সারা ফেব্রুয়ারি জুড়ে বেশ ক’বার! কত-শত বই চারিদিকে, অথচ শূণ্য পকেট। বুকটা হাহাকার করতো! লোলুপ দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকতাম বিরাট-দীর্ঘ তালিকার দিকে! ভাবতাম, টাকা হলে একদিন সব কিনে ফেলবো।
আমার অবস্থা এখন এই রকম চলছে।
৪| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৩৬
রাজু নূরুল বলেছেন: হাহাহহাহা এই অবস্থা থাকবেনা রাজীব নুর! কেটে যাবে নিশ্চয়ই!!! শুভেচ্ছা ও শুভকামনা!
২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৩৭
রাজু নূরুল বলেছেন: রাজু নূরুল বলেছেন: হাহাহহাহা এই অবস্থা থাকবেনা রাজীব নুর! কেটে যাবে নিশ্চয়ই!!! শুভেচ্ছা ও শুভকামনা!
©somewhere in net ltd.
১| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৫
প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: মানুষ সময় করে উঠতে পারে না বইয়ের জন্য, কিন্তু ফেসবুক-টুইটারে ঘণ্টায় ঘণ্টায় ঠিকই জানান দেয় নিজেদের অস্তিত্ব!
অদ্ভুত!