নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কথা হয়ে যায়..

নূরুল আলম রাজু, উন্নয়নকর্মী! একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত।

রাজু নূরুল

রাজু নূরুল › বিস্তারিত পোস্টঃ

মোহাম্মদপুর...

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:০৯


মোহাম্মদপুর ছেড়েছি, তাও বছর দু’য়েক হতে চলল।
২০০৮ এর মার্চের কোন একদিন,
একটাই মাত্র ট্যাক্সি ক্যাবে, আমার গোটা সংসার নিয়ে উঠেছিলাম মোহাম্মদপুরে..
সম্বল কেবল, কাথ বালিশ আর শ’কয়েক বই।

একটা রিসার্স অর্গানাইজেশনের ইন্টার্ন’র তখন মাসিক বেতন সর্ব সাকুল্যে দশ হাজার টাকা।
শের শাহ্ সুরি রোডের মসজিদের সাথে লাগোয়া পুরনো গো-ডাউন কাম ভাঙ্গাচোরা চেহারার বাড়িটায়;
দোতলায় দুটো মাত্র রুম।
এবড়ো-থেবড়ো,
পলেস্তরা খসে পড়া, অসমান মেঝে,
বাসার সামনে লোহা ঝালাইয়ের দোকান থেকে রাতদিন শাঁ শাঁ শব্দ...
ভাড়া ছত্রিশ ‘শ!

চার হাজারের কমে হতোনা...ব্যবহার ভাল বলে চার’শ টাকা ছাড়!
আর তাছাড়া, আপনার মাকে নিয়ে থাকবেন!
দ্বিতীয় লাইনটা বানিয়ে বলা;
অনেক চেষ্টা-চরিত করেও, সম্ভাব্য বৌ আর বর্তমানের প্রেমিকাকে দেখিয়েও একটা বাসা ম্যানেজ করা গেলোনা...
অনেক বুঝিয়ে-সুঝিয়ে, গলার স্বরে একটা করূণ ভাব ফুটিয়ে,
আওয়াজ যথাসম্ভব নিচে নামিয়েও চেষ্টা করে দেখেছি,
ব্যাচেলরের জন্য কোন বাসা নেই।
...এবং মুখের উপর সপাট করে দরজাও লাগিয়ে দিয়েছে কেউ কেউ...
আমিও দরজায় লাগানো, টু-লেট বিজ্ঞাপন থেকে-
নম্বরটা টুকে এনে, চালিয়েছি খিস্তি-খেউড়!
সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া তরুণের বড্ড কাঁচা মুখ তখনো!!

তারপর,
এই মোহাম্মদপুর আমার দু:খ-সুখের জীবনের সাক্ষী..
ভোরের সকাল,
প্রাণের স্পন্দন, কোলাহলে মুখর সন্ধ্যে,
মেগাসিটির গোঁ গোঁ শব্দ,
মধ্যরাতে ক্রমশ: শরীরটা অবশ হয়ে আসা,
একশ তিন ডিগ্রী জ্বর নিয়ে আবোল-তাবোল, আর একাকী বকবক....

বাসা পাল্টানোর ঝক্কি....
লোড শেডিংয়ে পিষ্ট হয়ে,
অবসন্ন শরীর নিয়ে-
টাউন হলের মাঠে একটু শান্তির আশ্বাস....
মসজিদ মার্কেটের ছাদে, বাতাসের টানে, কত সন্ধ্যা....
আমার মোহাম্মদপুর...

খুব ভোরে ঘুম ভেঙ্গে গেল যখন,
এপাশ-ওপাশ বিছানা ছেড়ে, বড় মসজিদের সিড়িতে একলা বসে সকাল হতে দেখা,
প্রায় প্রতিদিনই, অফিস থেকে ফেরার পথে,
গ্রীণ হোটেলের, অথবা মোস্তাকিমের, অথবা নাদিমের কাবাবের
লোভ সামলাতে না পেরে - আবার রিকশা ফেরানো....

ছুটির দিনের বিকেলে,
সেই উত্তর মসজিদ লাগানো দোকানটার
গরম গরম জিলিপি...
তখন আমার সর্ব সাকুল্যে কুড়ি হাজার.....
উন্নয়ন অধ্যয়নের ক্লাস শেষে,
এই মোহাম্মদপুরে ফিরতাম যখন,
মধ্য রাত ছুঁই ছুঁই,
তারপর, এক মুঠো চাল সেদ্ধ আর একটা আলু পোড়া মুখে তুলতে তুলতে.
ঘড়ির কাটা তখন রাতের দ্বিতীয় ভাগে....
সুগভীর ঘুম....
আহ! বেচে থাকা এত আনন্দের!!

আজমেরী ড্রাই ক্লিনার্সের নাম ভুলে যাওয়া সেই ছেলেটা,
পরিচিত সেই বিহারি সেলুন...
সিড়ির তলায় কাকার পত্রিকার দোকান,
মসজিদ মার্কেটের মিরাজ ভাই - কত দু:সময়ের সহযাত্রী,
অথচ সেই একই হাসিমুখ, সুখি বিস্তৃত চেহারা...
মোটা গড়নের সেই বেয়ারার একটু বেশি খাতির...
গ্রীণ হোটেলে বসে,
এক টুকরো চাপের সাথে, দুই পিস পরাটা...
বেশিরভাগ অংশ, আমিই সাবাড় করেছি...
তুমি সঙ্গ দিয়েছো কেবল,
সঙ্গে আআআট টাকায় প্রতি কাপ চা...

মোহাম্মদপুরে, তোমার সাথে রিকশায় সঙ্গী,
পাশাপাশি, তোমার আঙুলে আঙুল...
মোহম্মদপুর থেকেই, মাথায় পাগড়ি পড়ে.....কবুল...
এখানেই আমার বাসর...

মোহাম্মদপুর ছেড়েছি, তাও বছর দুয়েক হ’ল,
কষ্টটা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেনি, সে কথা বলবনা....
সময় কুলোয়নি....
এত প্রাণ, এই শহরের কোথায় পাবে বল?
অনেক দিন বাদে,
আজ মোহাম্মদপুরে...
রাত্রি যাপন, রিকশায় ঘুরে বেড়ানো, এবং টাউন হলের বাজার...
গ্রীণ হোটেল, চেনা বেয়ারার কুশল জিজ্ঞেস...
গলিতে পচা-গলার স্তুপ,
মোড়ে মোড়ে আডডা,
চিপচিপে গড়নের মেয়েটাকে নিয়ে হুশ করে বেড়িয়ে যাওয়া রিকশা,

মোহাম্মদপুর, অজস্র মানুষের প্রাণ, জীবন-সংসার, কোলাহল;
মোহাম্মদপুর, দু’চোখের কোনায় জমা, দু’ফোটা অশ্রু জল!

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:১৫

নিয়ামুল ইসলাম বলেছেন: আমার মোহাম্মদপুর এতই ভালো লেগেছে যে এপার্টমেন্ট কিনেই রয়ে গেলাম। সেই ২০০৮ এ প্রথম কাটাসুরে আত্মিয়দের বাসায় বেরাতে আসা ২০১০ এ কাদেরাবাদে ব্যচেলর বাসায় উঠা উত্তরা থেকে এসে। কেন জানি অন্যান্য ধনী এলাকা থেকে এই মোহাম্মদপুরের মানুষদেরই আপন মনে হয়।

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:২১

রাজু নূরুল বলেছেন: ঠিকই বলেছেন নেয়ামুল! মোহাম্মদপুরের একটা ব্যাপার আছে..ছাড়া যায় না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.