নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কথা হয়ে যায়..

নূরুল আলম রাজু, উন্নয়নকর্মী! একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত।

রাজু নূরুল

রাজু নূরুল › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘অসীম দয়ার শরীর আপনার/ আপনি এসে আমাকে বললেন,/ না, গরিব কথাটা খুব খারাপ/ ওতে মানুষের মর্যাদা হানি হয়।’ অতএব আমি এখন মধ্যবিত্ত!!!

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ সকাল ৮:২০


অফিসের কাজে জাকার্তা এসেছি।

গত পরশু পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই ছিল! কিন্তু গতকাল হুট করেই শুনলাম বাংলাদেশ নাকি মধ্যবিত্ত দেশে উন্নীত হয়ে গেছে! অনেকটা ‘ওঠ ছোড়ি, তোর বিয়ে’ অথবা ‘সকাল বেলায় দরজা খুলে দেখলাম পত্রিকার বদলে কেউ এক বস্তা টাকা রেখে গেছে’ টাইপের মতো অবস্থা! শিওর হওয়ার জন্য বাসায় খোঁজ লাগালাম। শুনলাম সব নাকি ঠিকই আছে। কিচ্ছু বদলায় নাই!

দেশে এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেল, অথচ কোন হইচই হলোনা। র‌্যালি বের হলোনা, জাতীয় গণমাধ্যমেও ভাষণ হলোনা! সাইনবোর্ড-ব্যানার-ফেস্টুন আসতে অবশ্য সময় লাগবে। কিন্তু গণমাধ্যম? সোশ্যাল মিডিয়াতেও কোন সাড়া-শব্দ নাই। ব্লগে ঢু মারলাম। সেখানেও সব চুপচাপ! অবশ্য জণকন্ঠ রিপোর্ট করেছে, ‘সারা দেশে নাকি খুশির বন্যা বয়ে যাচ্ছে?’ বন্যা অবশ্য বইছে। সেটা আসার সময়েই দেখে এসেছি; তবে সেটা খুশির কীনা জানিনা। কারণ এবছর বন্যা দুর্গত এলাকায় যাওয়া হয়নি এখনো।

‘মধ্যবিত্ত দেশ হলে কী লাভ‘ - সাংবাদিকদের এই ‘রসকষহীন’ প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের গড়িমা বেড়েছে! এই ‘আমাদের’ বলতে তিনি কাদেরকে বুঝিয়েছেন, সেটা অবশ্য পরিষ্কার হলোনা। তবে গড়িমা জিনিসটা বুঝতে পেরেছি!

মধ্যবিত্ত দেশে উন্নীত হওয়া নি:সন্দেহে বেশ সুসংবাদ। আমার বেশ অানন্দ লাগছে। এটি আমাদের এগিয়ে যাওয়ার প্রমাণ! কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কতটুকু এগিয়েছি আমরা? একটু দেখার চেষ্টা করি:

এখনো প্রায় ১৭ ভাগ মানুষ দরিদ্র সীমার নিচে বাস করে। মানে হলো, প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ১৭ জনের আয় দিনে ১০০ টাকার আশেপাশে! বাংলাদেশের কোন্ অঞ্চলে ১০০ টাকা রোজগার করে একটা সংসার চালানো যায়? প্রতি ১০০ জনে তিরিশ জন নিজের নামটাই লিখতে পারেনা। প্রতি ১০০ জনে ২৭ জন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও পঞ্চম শ্রেণী পাশ করার আগে ঝরে পড়ে! যারা ৫ম শ্রেণী পাশ করে তাদের ২৭ ভাগ ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হয়না।

শহরে যত মানুষ আছে, তার ৪০ ভাগ বস্তিতে থাকে। যাদের পানি, বাথরুম, খাবার-দাবারের কোন ঠিক নেই! এদেশের ৬ ভাগ মানুষ এখনো খোলা জায়গায় পায়খানা করে। ঠিকই পড়েছেন, খোলা জায়গায়...গরীব মানুষের জন্য কোন স্বাস্থ্য সেবা নাই! অবশ্য তাদেরতো স্বাস্থ্যই নাই!

ঢাকা শহরে ১০ লাখের বেশি শুধু রিকশা চালক। পৃথিবীর অমানবিকতম কাজের অন্যতম। যারা ১০ বছর রিকশা চালায় তার শরীরে আর কোন শক্তি অবশিষ্ট থাকেনা! ৬০-৭০ লাখ গার্মেন্টস কর্মী! যাদের জীবন, মানুষের জীবন নয়! ৬ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ৭২ হাজার ভবন শুধু ঢাকায় ভেঙ্গে পড়বে!

এসব মধ্যম আয়ের দেশের হয়তো নির্দেশক নয়। তবে এসব স্বত্তেও যদি কোন দেশকে শুধু গার্মেন্টস ব্যবসা দিয়ে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, আমার কিছু বলার নাই। গড় মাথাপিছু আয় বাড়লে যে কেবল মধ্যম আয়ের দেশ হয়না, সেটা বুঝা দরকার। বৈষম্য বাড়লেও গড় মাথাপিছু আয় বাড়ে! এই খবর পাওয়ার পর আমি ভেবেছিলাম, প্রিয় প্রধানমন্ত্রী বলবেন, অামি এখনই এসব চাইনা; বরং এই বিষয়গু্লোর সমাধান করি আগে!

সব আশা পূরণ হয়না। তার চেয়ে বরং তারাপদ রায়ের কবিতা শুনি: ‘অসীম দয়ার শরীর আপনার/ আপনি এসে আমাকে বললেন,/ না, গরিব কথাটা খুব খারাপ/ ওতে মানুষের মর্যাদা হানি হয়।’

তবে তাই হোক। আমিও মেনে নিলাম, আমরা আর গরীব নয়। আমরা এখন মধ্যবিত্ত!
চিয়ার্স!!!

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ সকাল ১১:২৬

কলাবাগান১ বলেছেন: আয় বেড়েছে বলেই জার্কাতা থেকে পোস্ট করছেন না হলে তো এখনও ভুড়াংগামারী কলেজ ই বি এ পড়তে হত

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.